দ্য ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেসনস্ অ্যান্ড দ্য রিমেকিং অব ওয়ার্ল্ড অর্ডার - স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন
দ্য ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেসনস্ অ্যান্ড দ্য রিমেকিং অব ওয়ার্ল্ড অর্ডার - স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন
স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাবার্ট জে III, ওয়েদারহেড প্রফেসর ছিলেন। সেখানে তিনি জন এম. ওলিন ইনস্টিটিউটের স্ট্র্যাটিজিক স্টাডিজ বিভাগের পরিচালক এবং হার্ভার্ড অ্যাকাডেমি ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড এরিয়া স্টাডিজ -এর চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন। কার্টার-প্ৰশাসনের সময় সিকিউরিটি প্ল্যানিং ফর দি ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল-এর পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘ফরেন পলিসি’-এর যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। তিনি “আমেরিকান পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশ”-এর সভাপতি ছিলেন। তিনি বহু পুস্তক এবং পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও গবেষণামূলক প্রবন্ধের লেখক। ২০০৯ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
প্রারম্ভিক বক্তব্য
স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন নিম্নলিখিত কৈফিয়ত তুলে ধরেছেন:
১৯৯৩ সালের গ্রীষ্মে Foreign Affairs-এ "The Clash of Civilizations?” শীৰ্ষক একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। Foreign Affairs, জার্নালের সম্পাদকের মতে এই প্ৰবন্ধটি টানা তিন বৎসর সবচেয়ে বেশি মানুষকে আলোচনায় প্ৰমত্ত করেছিল যা জার্নলটির ১৯৪০-এর দশকে প্রকাশের শুরু থেকে অদ্যাবধি অন্যকোনো প্ৰবন্ধের বেলায় দেখা যায়নি । এটিও সত্য, গত তিন বৎসর ধরে এ লেখাটি নিয়ে মানুষের মধ্যে যে প্রবল আগ্রহ লক্ষ করেছি তা আমার অন্যকোনো লেখার ক্ষেত্রে দেখিনি । প্রায় প্রত্যেক মহাদেশ এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশ থেকেই লেখাটি সম্পর্কে মতামত ও সাড়াশব্দ পেয়েছিলাম । আমার লেখাটির ওপর মানুষ মুগ্ধ, উৎসুক, নিষ্ঠুরতা, যুদ্ধংদেহী, সন্দেহের বাণ নিক্ষেপণ-এ সবই করেছেন । প্রবন্ধে সেই বিপদজ্জনক দিকটি তুলে ধরা হয়েছিল যার কেন্দ্রীয় বিষয় হচ্ছে : আবির্ভূত বৈশ্বিক রাজনীতি হয়ে উঠবে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সভ্যতার মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিভেদের কারণে সংঘাতময় । সে যেভাবেই হোক না কেন বলা যায়, এ লেখাটি প্রত্যেক সভ্যতার মানুষকে আন্দোলিত করতে পেরেছে।
অনেক ক্ষেত্রেই আমার লেখাটির অপব্যাখ্যা লক্ষ করা গিয়েছে । এ লেখাটি যে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে, তা নিরসনে লেখাটি নিয়ে পুনরায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার নিমিত্তে আমার মধ্যে তীব্ৰ অভিপ্ৰায় সৃষ্টি হয় । লেখাটিকে একটি প্রাগ-অনুমানের ওপর স্থাপন করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য স্থির করা দরকার ছিল । একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়ে লেখাটির শিরোনাম নির্ধারণ করা হলেও সাধারণভাবে তার প্রতি যথাযথ সুবিচার করা সম্ভব হয়নি । এই পুস্তকে আরও পরিপূর্ণ আরও গভীর এবং আরও বিস্তারিতভাবে প্রবন্ধে উত্থাপিত বিষয়গুলো তথ্যসমৃদ্ধ করা হয়েছে, যাতে করে নানা ধরনের প্রশ্নের উত্তর এ থেকে পাওয়া যায় । এই বই-এ আমি যে শুধু বিগত প্ৰবন্ধটির বিস্তারিত আলোচনা করেছি তাই নয়, সেসঙ্গে নতুন কিছু চিন্তার উদ্ভাবন ও তা সংযোজন করতে চেষ্টা করেছি, এবং তা আরও বিস্তারিত, পরিমার্জনসহ আগের ধারণার পরিপূরণ ও তার আরও স্ববিস্তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ প্রদান করতে চেয়েছি।
তাই স্বভাবত এখানে আরও অনেক অধ্যায় সংযোজিত করা হয়েছে, যা কেবলমাত্র বিগত প্রবন্ধের প্রয়োজনেই নয় । পুস্তকটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে : সভ্যতার ধারণা, সর্বজনীন সভ্যতার প্রত্যয়, ক্ষমতা এবং সংস্কৃতির সম্পর্ক সভ্যতাসমূহের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের অদলবদল; অপাশ্চাত্য সমাজে সাংস্কৃতিক দেশীয়করণ প্রক্রিয়া; সভ্যতার সঙ্গে সম্পর্কিত রাজনৈতিক কাঠামো, পাশ্চাত্য সভ্যতার সর্বজনীনতা নিয়ে উত্থাপিত সংঘাত, মুসলমানদের মারমুখিতা, চীনের দৃঢ়োক্তি, চীনের ক্ষমতা বিন্যাসে ভারসাম্যমুখী ও তাঁবেদারিত্ব প্রবণতা; ফাটলরেখা বরাবর যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি ও তার কারণ, পশ্চিমা বিশ্ব ও সমগ্র বিশ্বব্যাপী সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ । প্রবন্ধে অনুপস্থিত অথচ অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেমন জন্মহার বৃদ্ধি ও এ-সম্পর্কিত অস্থিরতা এবং শক্তির ভারসাম্যের ওপর তার প্রভাব সম্পর্কে বর্তমান বইতে আলোচনা করা হল । প্রবন্ধে অনুপস্থিত আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা পুস্তকের শিরোনামের সংক্ষেপ হিসেবে শেষ বাক্যে উল্লেখ করা হল, যেমন- ‘সভ্যতার সংঘাত বিশ্বশান্তির প্রশ্নে সবচেয়ে বড় বিপদ’।
অথচ "সভ্যতার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নিয়মানুবর্তিতাই হল বিশ্বযুদ্ধের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় ও সুনিশ্চিত রক্ষাকবচ” । এই পুস্তকটি সমাজবিজ্ঞানের বই হিসেবে লেখার ইচ্ছা ছিল না। বরং বিশ্লেষণের নিমিত্তে এটি লেখা হয়েছে । পুস্তকটিতে বৈশ্বিক রাজনীতির গতিপ্রকৃতি অর্থবহভাবে বুঝে ওঠার জন্য একটি ‘নির্মাণ কাঠামো’ (ফ্রেমওয়ার্ক)-এর ‘প্যারাডাইম’ উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে বিজ্ঞজন ও নীতিনির্ধারকরা উপকৃত হতে পারেন। তবে বর্তমান বৈশ্বিক রাজনীতির পরিপূর্ণ স্বাদ পেতে বা ব্যাখ্যা করতে যা-কিছু দরকার, তার সকল কিছুই এখানে পাওয়া যাবে এমন নয় । আসল কথা হল, এখানে এমন একটি ব্যবহারযোগ্য ও অর্থবহ ‘লেন্স’। উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে, যে ‘লেন্সের’ ভেতর দিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার অগ্রগতি অন্যকোনো বিকল্প প্যারাডাইমের চাইতে উত্তমরূপে প্ৰত্যক্ষ করা যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি । উপরন্তু, বলা চলে, কোনো প্যারাডাইমই সকল দিক থেকে পরিপূর্ণ বা সিদ্ধ নয়। বৈশ্বিক রাজনীতি উপলব্ধি করতে সভ্যতাকেন্দ্রিক অভ্যাগমা (এ্যাপ্রোচ) বিংশ শতাব্দীর শেষপর্যায় থেকে আরম্ভ করে একবিংশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত ব্যবহার-উপযোগী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে; এর অর্থ কিন্তু এই নয় যে, বিগত বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি কিংবা একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যায়ে এর আবেদন ছিল বা থাকবে।
প্ৰবন্ধটি এবং এ পুস্তকটি ১৯৯২ সালের অক্টোবর মাসে ব্রাডলি বক্তৃতাকালে ‘আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট ইন ওয়াশিংটন'-এ প্রথম জনসম্মুখে প্ৰকাশ করা হয় । তারপর ‘ওলিন ইনস্টিটিউট’-এর 'দি চেনজিং সিকিউরিটি এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড আমেরিকান ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’ (স্মিথ রিচার্ডসন ফাউন্ডেশন) শীৰ্ষক প্রকল্পের জন্য অনিয়মিতভাবে প্ৰস্তুত করা হতে থাকে ৷ প্ৰবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে আমি অগণিত সেমিনার ও সভায় ‘সংঘাতের বিষয়’ তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি, যেখানে অ্যাকাডেমিক, সরকারি লোকজন, ব্যবসায়ীসহ সমগ্ৰ আমেরিকাব্যাপী অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষজন উপস্থিত থাকতেন । উপরন্তু, আমি সৌভাগ্যবান এজন্য যে, আমি প্ৰবন্ধ ও পুস্তকটির বিষয়বস্তু নিয়ে অন্যান্য দেশ, যেমন আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রেট ব্রিটেন, কোরিয়া, জাপান, লুক্সেম্বার্গ, রাশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড এবং তাইওয়ানে বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নিয়েছি । এসব দেশের আলোচনায় আমি হিন্দুধর্ম ব্যতীত অন্যান্য প্রধান প্রধান সভ্যতা সম্পর্কে জানার ও বোঝার সুযোগ পেয়েছিলাম । ১৯৯৪ এবং ১৯৯৫ সালে আমি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতলযুদ্ধোত্তর বিশ্ব সম্পর্কে পাঠদান করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অনেক মূল্যবান ধারণা ও সমালোচনা পেয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করে নেবার উৎসাহ ও উদ্দীপনা লাভ করেছি। এ কাজটি করতে গিয়ে আমি হার্ভার্ড-এর জন এস ওলিন ইনস্টিটিউট স্ট্র্যাটেজি স্টাডিজ সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স-এর নিকট থেকে সমর্থন পেয়েছি ।
মাইকেল মি, ডিচু রবার্ট ও কেওহানি, ফরিদ জাকারিয়া এবং আর স্কট জিমেরম্যান এ পুস্তকের পাণ্ডুলিপি আগাগোড়া পাঠ্যপূর্বক আমাকে যে মূল্যবান উপদেশ প্রদান করেছেন, তা গ্ৰহণ করে আমি পুস্তকটির বিষয়বস্তু ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ের উন্নতি ঘটাতে পেরেছি। পুস্তকটি রচনার সকল সময়ব্যাপী স্কট জিমেরম্যান গবেষণার কাজে অপরিহার্য সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করে দিয়েছিলেন; তাঁর শক্তি, মেধা ও আন্তরিক ও নিবেদিতপ্রাণ সাহায্য ব্যতীত এ পুস্তকটি সময়মতো প্রকাশ করা সম্ভব ছিল না । আমাদের স্নাতক পর্যায়ের গবেষণা সহকারী পিটার জান এবং ক্রিস্টিনা ব্রিগস গঠনমূলকভাবে আমাকে সাহায্য করেছেন । গ্রেস ডি ম্যাজিস্ট্রিস পাণ্ডুলিপির প্রথম অংশ কম্পোজ করেছেন এবং ক্যারল এডওয়ার্ডস তাঁর দৃঢ় প্রতিশ্রুতি এবং দক্ষতা দিয়ে পাণ্ডুলিপি বহুবার পুনঃলিখন কাজে সহযোগিতা করেছেন । ডেনিস স্যানন লুনা কক্স, জর্জেস বরাচার্ডত এবং রবার্ট আসাহিনা, রবার্ট বেনাডার এবং জোয়ানা লি এবং সিমন অ্যান্ড সুসটার পেশাগত দৃষ্টিতে পাণ্ডুলিপি প্রকাশের বিষয়টি দেখাশুনা করেছেন । আমি সর্বতোভাবে তাদের সকলের নিকট ঋণী । তাদের সাহায্য-সহযোগিতার ফলেই এটি আজ পুস্তকাকারে পাওয়া যাচ্ছে। তাঁদের শ্রমসাধ্য বলেই পুস্তকটি পূর্ণতা পেয়েছে । পুস্তকের অন্যান্য ঘাটতির দায়দায়িত্ব আমার নিজের। আমার এ বইটি প্রকাশের যাবতীয় আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য আমি জন এস ওলিন এবং স্মিথ রিচার্ডসন ফাউন্ডেশন-এর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি । তাদের এ অবদান ব্যতীত বইটি প্রকাশ পেতে হয়তো আরও এক বৎসর অপেক্ষা করতে হত । অন্যান্য ফাউন্ডেশন যেখানে ঘরোয়া বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশের মধ্যে তাদের কাজকর্ম সীমিত রাখে, সেখানে ওলিন এবং স্মিথ রিচার্ডসন ফাউন্ডেশন আমার যুদ্ধ ও শান্তি সম্পর্কিত জাতীয় এবং আন্তর্জািতক বিষয়ে গবেষণায় দৃঢ়তার সঙ্গে সহযোগিতা করে গিয়েছে ।
স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন
আমার কথা
স্যামুয়েল পি. হান্টিংটনের বিগত শতাব্দীর শেষ হতে শুরু করে অদ্যাবধি সমগ্র বিশ্বব্যাপী অন্যতম আলোচিত ‘The Clash of Civilizations and the Remaking of world order' is এটি হুবহু বা আক্ষরিক কোনো অনুবাদ নয়; এ কাজটিতে হান্টিংটনের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বের চল্লিশটির অধিক ভাষায় বইটি অনূদিত হয়েছে। ইংরেজিভাষার স্বকীয়তা, শৈলী এবং এর গতিধারা ঠিক রেখে সেসঙ্গে বিশ্বরাজনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, চলমান ইতিহাস ও কূটনৈতিক তৎপরতা, সমরবিদ্যা সংক্রান্ত সভ্যতার সংঘাতভিত্তিক এ গ্রন্থটির তথ্যাদি ও প্রবণতা ঠিক রেখে আমাকে অতি সতর্কভাবে এগুতে হয়েছে। কাজটি করতে গিয়ে হান্টিংটনের প্রতি আমি যথাসাধ্য সুবিচার করার চেষ্টা করেছি। সতর্কতার পরও কোনো কোনো স্থানে সামান্য বিচূতি বা ছন্দেপতন হয়ে থাকতে পারে। এজন্য পাঠকসমাজের নিকট ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এই বহুলালোচিত পুস্তকটির বক্তব্য মাতৃভাষায় নিয়ে আসার প্রবলবােধ আমাকে প্ৰায় এক দশক থেকে তাড়িত করলেও বইটি হাতে আসতে অনেক বিলম্ব হয়েছে। অবশেষে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি পুস্তকটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শান্তি ও সংঘর্ষ’ বিভাগের সেমিনারকক্ষ থেকে ড. ডালেম চন্দ্ৰ বৰ্মন ও বিভাগীয় সভাপতি ড. রফিক-এর সৌজন্যে প্রাপ্ত হই ।
আমি উপলব্ধি করতে পারি যে, কাজটি যত সহজ ভেবেছিলাম আসলে তত সহজ নয়। তবুও আমার সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে পাঁচ মাস সময়ের ব্যবধানে এটি এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে পেরেছি। আমার সহকমী জনাব মো. আনিছুর রহমান, মেহেরুন নেসা, খান মো. মনোয়ারুল ইসলাম প্রমুখ এমনভাবে আমার পেছনে লেগে ছিলেন যে, কাজটি শেষ না করে আমার আর গত্যন্তর ছিল না । আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ড. ডালেম চন্দ্ৰ বৰ্মন পাণ্ডুলিপির প্রায় পুরোটাই পাঠ করে তাঁর মূল্যবান মতামত দিয়েছেন এবং আমি সে-মতো সংশোধন, পরিমার্জন করে নিতে চেষ্টা করেছি। তাঁর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা থাকল।
বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আমি আমার শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হান্টিংটনের সরাসরি শিক্ষার্থী এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ড. রওনক জাহান এর সঙ্গে আলোচনা করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরেটাস এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একসময়ের আমার সহকর্মী ড. আনিসুজ্জামান-এর সঙ্গে দু-একটি বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল মোমিন চৌধুরী, ড. আহমেদ আবদুল্লাহ জামাল, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম-এর সঙ্গে কিছু ইস্যু নিয়ে আলোচনা করে পরিষ্কার করে নিতে চেষ্টা করেছি। তাদের সবার প্রতি আমার ঋণ থাকলে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, ড. নূরুল আমিন বেপারী, ড. গিয়াসউদ্দীন মোল্লা, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো, সাজাহান মিয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আব্দুল হাকিম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. নূরুল ইসলাম মঞ্জ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান, ত্রিশাল নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শামসুর রহমান আমাকে কাজটি সমাপ্ত করতে উৎসাহিত করেছেন। আমার সহকর্মী মেহেরুন নেসা আমাকে পুস্তকে ব্যবহৃত কিছু ফরাসি শব্দ ভাষান্তরে সাহায্য করেছেন। তাছাড়া তিনি কয়েকটি অধ্যায়ের পাণ্ডুলিপি পাঠ্যপূর্বক গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংশোধনী দিয়েছেন যা আমি গ্ৰহণ করেছি। আমার অপর সহকমী সায়মা আহমদ, পাণ্ডুলিপির তিনটি অধ্যায় বিস্তারিতভাবে পাঠ করেছেন এবং ভাষা ও সন্টাইল বিষয়ে সংশোধনী দিয়েছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ড. মোবাশ্বেরা খানম আমাকে কিছু লাটিন শব্দের অর্থ উদ্ধারে সহযোগিতা করেছেন এবং কাজটির অগ্রগতির খোঁজখবর নিয়েছেন। আমি তাদের সকলের নিকট আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
বইটির কিছু প্রুফ দেখে সহযোগিতা করেছেন আমার সাবেক সহকর্মী জনাব জি.এম তারিকুল ইসলাম। তবে চূড়ান্তভাবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে প্রািফ দেখেছেন জনাব সেলিম আলফাজ। পুস্তকটি কম্পেজ এবং
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বইটির প্রকাশক মাে. আফজাল হােসেন-কে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার প্রয়াত কথা সাহিত্যিক বন্ধু শহীদুল হক (শহীদুল জহির) কথা দিয়েছিল, কাজটি সে সম্পাদনা করবে, কিন্তু তার আগেই পরপারের ডাকে তাকে চলে যেতে হল। এজন্য আমি তাঁর স্মৃতির উদ্দেশে বইটি উৎসর্গ করছি । গ্রন্থটি ছাত্র-শিক্ষক, গবেষক ও সুধীমহলে সমাদৃত হলে আমার শ্রম সার্থক বলে মনে করব। গ্রন্থটির পরিমার্জন, উন্নতি সাধন ও ভুলত্রুটি সংশোধনে যে-কারো পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করব। বইটির তৃতীয় সংস্করণ প্রমাণ করিয়ে দেয় যে বইটি পাঠক সমাজকে আকৃষ্ট করার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এ কারণে আমার শ্রমকে আমি কিছুটা হলেও স্বার্থক মনে করছি।
১০ জানুয়ারি ২০১৬
ড. মোহাম্মদ আবদুর রশীদ
প্রফেসর (রাষ্ট্রবিজ্ঞান)
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর-১৭০৫
Amarboi.com
No comments:
Post a Comment