বালাকোটের চেতনা উজ্জীবিত হোক
মোহাম্মদ আবু নোমান।
মরদে মুজাহিদ সাইয়েদ আহমদ বেরলভি রহ:কে নিয়ে রেনেসাঁর কবি র্ফরুখ আহমদ তার কালজয়ী কবিতায় ‘রায় বেরেলীর জঙ্গি পীর’ আখ্যা দিয়ে লিখেনÑ ‘সবাই যখন আরাম খুঁজে/ ছুটে ঘরের পানে। জঙ্গি পীরের ডাক শোনা যায়/ জঙ্গের ই ময়দানে। সবাই ভাবে পীরের কথা/ শুনেছি তো ঢের। এমন পীরের কথা তো ভাই/ পাইনি কভু টের।’
বেরলভি রহ: [জন্ম-২৯ নভেম্বর ১৭৮৬] শুধু তসবি হাতে ও জায়নামাজে থেকে মুরিদানকে নিয়ে খানকায় বসে থাকেননি। নিজের সুখ-শান্তি ত্যাগ করে যুদ্ধের ময়দানে এসে একদল বিশুদ্ধ আত্মার নিবেদিতপ্রাণ কর্মী বাহিনী নিয়ে সিংহের মতো গর্জে উঠেছেন।
১৮৩১ সালের ৬ মে ঐতিহাসিক বালাকোট প্রান্তরে ইংরেজ ও শিখ মিত্রবাহিনীর সাথে লড়াই করে এক অসম যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের আজাদি আন্দোলনের অকুতোভয় সিপাহসালার, ঈমানি চেতনার প্রাণপুরুষ হজরত সাইয়েদ আহমদ শহীদ বেরলভি রহ: এবং তার কিছু সহযোদ্ধা। তার শাহাদত ছিল ব্রিটিশ এবং তাদের মিত্র শিখদের অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রথম সংগ্রামের নজরানা। বেরলভির প্রতিষ্ঠিত তরিকা, তরিকায়ে মোহাম্মদিয়া মানুষকে দেখিয়েছে একটি আলোকোজ্জ্বল পথ।
এ কথা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত কারবালার সূত্র ধরেই বালাকোটের শহীদদের প্রেরণায় ভারতে মুসলমানেরা আজাদি আন্দোলনের মাধ্যমে পৃথক আবাসভূমি লাভে উজ্জীবিত হয়েছিলেন।
পরাধীন ভারতবাসীর কেউই তখনো ব্রিটিশদের শাসন ও শোষণ থেকে রার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেনি। সাধারণ মানুষ কখনই ভাবত না তারা ব্রিটিশদের জুলুম, নির্যাতন ও শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে পারবে। এমনই এক সময় বেরলভির আবির্ভাব ঘটেছিল, যখন ভারতের মুসলমানদের ওপর ইংরেজ, শিখ ও বর্ণবাদীদের অত্যাচারের মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
সৈয়দ আহমদের বাহিনীর সাথে বালাকোটের আসা কয়েকটি যুদ্ধে শিখ ও ব্রিটিশ বাহিনী পরাজিত হয়। সম্মুখ সমরে মুজাহিদ বাহিনীর সাথে টিকে ওঠা সম্ভব নয়, এ ভেবে ব্রিটিশ ও শিখ নরপতিগণ কূটকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে। মুসলমান সমাজে বিশ্বাসঘাতক তথা মুনাফেকদের অভাব কোনোকালেই ছিল না। সীমান্তের প্রধান জমিদার ও গোত্রপতিগণকে ইংরেজ ও শিখ শাসকেরা বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে বশীভূত করে ফেলে। তারা মুজাহিদদের যাবতীয় তথ্য ইংরেজ ও শিখদের কাছে গোপনে সরবরাহ করতে থাকে এবং সুসংগঠিত মুজাহিদ বাহিনীর মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ভাঙন সৃষ্টি করে।
প্রকৃতপক্ষে সৈয়দ সাহেবকে ইউরোপীয়দের মোকাবেলা করতে হয়েছে এমন এক সময়, যখন তাদের সূর্য মধ্যগগনে। প্রায় সমগ্র বিশ্ব তারা কব্জা করে ফেলেছিল। এর বাইরে সেখানে ছিল স্বার্থপর, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও বিশ্বাসঘাতক সরদার ও তাদের অনুসারীরা। ফলে এভাবেই ক্ষুদ্র অথচ পর্বতসম ঈমানি শক্তিতে বলীয়ান মুজাহিদ বাহিনীর বিপর্যয় ঘটে।
সৈয়দ বেরলভি পাঠান নেতা সুলতান মুহাম্মদ খাঁ ও তার ভাইদের বিশ্বাস করে পেশোয়ারের প্রশাসক বানান। তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে হুকুমতের কাজী, তহসিলদারসহ বহু উঁচুস্তরের মুজাহিদকে এক রাতে শহীদ করেছিল। এ ছাড়াও কিছু পাঠান সংগ্রাম করার চেয়ে লুটপাটে বেশি আগ্রহী ছিল। দরিদ্র ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন পাঠানরা অনেক েেত্র ইনসাফভিত্তিক আইনের চেয়ে স্থানীয় কবিলার প্রচলিত আইন পালন করত বেশি।
সৈয়দ বেরলভি এগুলো সম্পর্কে ফয়সালা দিলেও পাঠানদের মনঃপূত হতো না।
ভারতকে স্বাধীন করার ল্েয ইসলামবিরোধী ও ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীদের কবল থেকে উদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছিলেন বেরলভি রহ:। তিনি বিদেশী আগ্রাসী শক্তি ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের করালগ্রাস থেকে জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে উপমহাদেশের মজলুম জনতাকে মুক্ত করতে আজাদি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজো তার ত্যাগ ও কোরবানি মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস। বর্তমান সামগ্রিক প্রোপটে সমগ্র মুসলমানদের বালাকোটের চেতনায় উজ্জীবিত হওয়া জরুরি।
abunoman72@ymail.com
http://m.dailynayadiganta.com/detail/news/217661
No comments:
Post a Comment