Saturday 13 May 2017

সিপাহি বিদ্রোহ ১৮৫৭


সিপাহি বিদ্রোহ ১৮৫৭

আখতার হামিদ খান :
 মেজর জেনারেল হিইয়েট ১৮৫৭ সালের ৯ মে মীরাট সেনানিবাসে ৮৫তম ভারতীয় সিপাহিকে হাতে পায়ে লোহার শক্ত বেড়ি পরিয়ে সমস্ত সৈন্য দলের সামনে লাঞ্ছিত করেছিলেন। সেদিন নিরুপায় ভারতীয় সিপাহিলা দাঁড়িয়ে দেখেছিল তাদের সঙ্গীদের এই অবমাননা। তাদের মুখে ছিল না প্রতিবাদ, কিন্তু চোখে ছিল আগুন। সে আগুন সহজে নেভেনি। পরদিন রোববার। সন্ধ্যার প্রাক্কালে আসন্ন রজনীর ঈষৎ অন্ধকার নামল মীরাটের ছাউনিতে। ব্রিটিশ সৈন্যরা তৈরি হয়েছে মার্চ–প্যারেডের জন্য। ভারতীয় সৈন্যরা করছে কী? বোধ হয় বিশ্রাম। এমন ময় অকস্মাৎ আওয়াজ এলো– গুড়ুম– পদাতিক বাহিনীর সিপাহিরা অস্ত্র ঘুরিয়ে ধরেছে ব্রিটিশ সেনানায়কদের ঠিক ললাটে। বন্দুকের ঘোড়া টিপছে ক্লিক, ক্লিক, ক্লিক। আকাশ, বাতাস, প্রাচীর ও প্রান্তর কাঁপিয়ে ধ্বনিত হচ্ছে গুড়ুম। গুড়ুম!! গুড়ুম!!! উত্তর ভারতে সিপাহি যুদ্ধের সেই হলো প্রারম্ভ।

নেতৃত্ববিহীন অসংঘবদ্ধ পরিচালনা, পরিকল্পনাহীন পদ্ধতি, বিভিন্ন অংশে যোগাযোগশূন্যতা এবং কেন্দ্রীয় নির্দেশের অভাবে ব্যর্থ হলেও একথা আজ স্বীকার করতে হয় যে, ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটাবার ও স্বরাষ্ট্র গঠনে ভারতীয়দের সেই প্রথম উদ্যোগ। মীরাটের সিপাহিরা শাহ তখন দিল্লীর মসনদে। বাবরের বিক্রম, আকবরের ব্যক্তিত্ব বা আওরঙ্গজেবের রণকুশলতার লেশমাত্র ছিল না এই বৃদ্ধ মুঘল সম্রাটের চরিত্রে। সিপাহিদের শৌর্য, শক্তি ও যুদ্ধোপকরণ কাজে লাগাবার ক্ষমতা ছিল না তার। জনসাধারণের সংগ্রামোন্মুখ ব্রিটিশ বিদ্বেষকে সফল পরিণতি দান করতে পারেন না তিনি।

দিল্লীর পরিধি সাত মাইল। অধিবাসীরা উত্তেজিত। ইংরেজের শিবিরে শিক্ষিত ও ইংরেজরই অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ৪০ হাজার রণনিপুণ সিপাহি। তার পাহারা নগর প্রাচীরের উপরে ১৪টি বৃহদাকার কামান। দুর্গাভ্যন্তরে বৃহত্তম বারুদখানা। তাছাড়া আরও ৬০টি ছোট ছোট কামান। আছে বহু সুদক্ষ গোলন্দাজ– বেশির ভাগই দু–দিন পূর্বে ছিল ব্রিটিশ সৈন্যদলভুক্ত। তারা যুরোপীয় যুদ্ধরীতিতে সুশিক্ষিত, সুনিপুন এবং সুশৃঙ্খলাবদ্ধ। দিল্লী দুর্গকে সুরক্ষিত করেছে ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারেরা যারা আধুনিকতম ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞান লাভ করেছে ইংরেজের সেনাবাহিনীতে। দিল্লী অধিকারের ক্ষীণতম আশার কারণ ছিল না ‘রীজে’ সমবেত ব্রিটিশ বাহিনীর মনে। লেশমাত্র যুক্তিযুক্ত সম্ভাবনা ছিল না দুর্গপশনের। কিন্তু তবুও সিপাহিরা হারল। দিল্লী দখল করল ইংরেজ। ভারতে মুসলিম রাজত্বের ঘটল সমাপ্তি। শতবর্ষ পূর্বে নির্মিত সম্রাট শাহজাহানের লাল কেল্লার শীর্ষে উত্তোলিত হলো ব্রিটিশ পতাকা।

নগরপ্রান্তে ‘রীজে’র ইংরেজ–শিবিরের সৈন্য সংখ্যা ছিল ১৪ হাজারের সামান্য কিছু বেশি। এর সবই ইউরোপীয় নয়। প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ছিল ভারতীয় সেপাই। আড়াই হাজার সৈন্য– বলাবাহুল্য, তারাও ভারতীয়– পাঠিয়েছিলেন ইংরেজানুরাগী দেশীয় রাজন্যবর্গ। তাদের জন্য আজ একুশ, এগারো বা পাঁচ সাত করে তোপধ্বনি বিধি আছে।

কর্নাল থেকে গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোডে ব্রিটিশ বাহিনী এসে শিবির স্থাপন করল ‘রীজে’, যেখানে এখন দিল্লী ইউনিভার্সিটি। বর্তমান সবজিমণ্ডিতে ঘটেছে দীর্ঘকালব্যাপী অনেক খণ্ড যুদ্ধ। ইংরেজ সৈন্যদের সেই অস্থায়ী আবাসভূমিতে পরে রচিত হয়েছে পুরাতন ভাইসরিগ্যাল লজ। সেখানে বসে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যার্থীরা ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি বা ইকনমিক্সের নোট টোকে। তারই অনতিদূরবর্তী একটি ভবনে ১৯২৪ সালে তিনি সপ্তাহের অনশন করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী–দিল্লীর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রতিবাদকল্পে। প্রথম সর্বদল মিলনের প্রচেষ্টায় সম্মেলন আহ্বান করেছিলেন পণ্ডিত মালবীয়জি।

ইংরেজ জানত, অনতিবিলম্বে দিল্লী অধিকার করতে না পারলে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ধূলিসাৎ হবে চিরতরে। তাই সর্বস্ব পণ করল তারা। জিতি তো বাদশাহ, হারি তো ফকির। ব্রিগেডিয়ার আর্কডেল উইলসন তখন ব্রিটিশ শিবিরের অধিনায়ক। তিনি জয় সম্পর্কে আশান্বিত ছিলেন না।

গ্রীষ্ম গেল, বর্ষা অতীত, শরতের প্রথমার্ধও বিগতপ্রায়। অর্ধেকের উপর ইংরেজ সৈন্য জ্বর, উদরাময় ও অন্যান্য ব্যাধিতে রুগ্ন। পাঞ্জাব থেকে সেনাপতি লরেন্স ক্রমাগত উৎকণ্ঠিত পত্র পাঠাচ্ছেন– আর কতদিন? দিল্লী বিজয়ে আর বিলম্ব কত? সমগ্র ভারতবর্ষে একমাত্র পঞ্জাবের সিপাহিরা তখনও আছে অনুগত, আম্বালার সেনানিবাসে দেখা দেয়নি বিক্ষোভ। কিন্তু আর বেশি দিন শান্তি রক্ষা কঠিন হবে। দিল্লী, দিল্লী, দিল্লীর উপরেই নির্ভর করছে ভারতবর্ষে জন কোম্পানির ভাগ্য।

অবশেষে সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে ফিরোজপুর থেকে হস্তীপৃষ্ঠে বাহিত প্রচুর গোলা–বারুদ ও অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র এসে পৌছল ‘রীজে’র ছাউনিতে। ব্রিটিশ সেনানায়কদের প্রাণে ফিরে এলো ভরসা, মনে এল সাহস। সেনাপতি উইলসনকে অতিক্রমে করে যুদ্ধ পরিচালনার ভার গ্রহণ করল জন নিকলসন।

১৪ই সেপ্টেম্বর। রাত্রি প্রায় নিঃশেষিত, যদিও আলোর রেখা দেখা দেয়নি আকাশে। ইংরেজ বাহিনী আক্রমণ করল দিল্লী দুর্গ। পূর্ববর্তী ছয়দিন দিবারাত্রিব্যাপী গোলাবর্ষণের দ্বারা নগর প্রাচীর বিধ্বস্ত করা হয়েছে ধীরে ধীরে– মূল আক্রমণের মুখবন্ধরূপে। কাশ্মীরী গেটের দিকে খণ্ড খণ্ড দলে হানা দিল ইংরেজের সৈন্য। দুই পক্ষের কামান গর্জনে দুরু দুরু কম্পিত হল দূর দূরান্তের গৃহগবাক্ষ, তাদের অগ্নিবর্ষণের রক্তিম আভায় সীমন্তিনীর সিথির মত রঞ্জিত হলো প্রভাতের বিস্তীর্ণ আকাশ। এই মরণপণ যুদ্ধ চলল প্রহরের পর প্রহর। অবশেষে বিকট শব্দে কাশ্মীরী গেটের রুদ্ধ দ্বার বিধ্বস্ত হয়ে পড়ল ধুলায়।

ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের ক্ষুদ্র একটি দল সরীসৃপের মতো বেয়ে উঠেছে প্রাচীরে। বিস্ফোরকে অগ্নিসংযোগের দ্বারা বিচূর্ণ করেছে সুদৃঢ় কাশ্মীরী গেট। তাদের অমানুষিক সাহসের ফলেই জয়লাভ সম্ভব হলো ইংরেজের। ইংরেজ ঐতিহাসিকেরা স্বীকার করেছেন, এই দলের মধ্যে আটজন ছিল ভারতীয়।

সেই ভগ্নদ্বার পথে জয়দৃপ্ত ব্রিটিশ বাহিনী প্রবেশ করল ভীমবেগে। বিপক্ষকে আক্রমণ করল দ্বিগুণ তেজে। উন্মুক্ত তরবারি হস্তে সেনাপতি নিকলসন পরিচালনা করছিলেন সেই সৈন্যদল। জনৈক সিপাহি নিশানা করল তাকে। মুহূর্তে আর্তনাদ করে ধুলায় লুটিয়ে পড়লেন নিকলসন। গুলী লেগেছিল তার কপালে। পরাজিত বৃদ্ধ বাহাদুর শাহ পলায়ন করলেন দুর্গ থেকে। আত্মগোপন করলেন দিল্লী প্রাসাদের চার মাইল দক্ষিণে হুমায়ুনের সমাধিসৌধে। সেখানে এক মুসলমান ফকিরের আশ্রম নিলেন। জনশ্রুতি এই যে, সেই ফকিরই তাকে ধরিয়ে দিলেন ইংরেজের গুপ্তচর বিভাগের এক তরুণ কর্মচারী হডসনের হাতে।

হামা আজ দন্তে

শাদী, আজ দস্তে

খেশতান ফরিয়াদ!

(নিজের হাতই যখন নিজের গালে চড় বসিয়ে দেয়, তখন হে শাদী, অপরের হাতে মার খাওয়া নিয়ে আর খেদ করে লাভ কী!)

বন্দী সম্রাটকে হডসন পালকি করে নিয়ে এল দিল্লীতে। সেখানে বিচার হলো তার! দন্ড হলো নির্বাসন। ব্রহ্মদেশে। সেখানে পাঁচ বছর পরে বন্দীদশায় জীবনান্ত ঘটল তার। হতভাগ্য বাহাদুর শাহ– ভারতের শেষ মুসলিম সম্রাট!

ঠিক যেখানে বাহাদুর শাহ ধৃত হন, হুমায়ুন’স টম্বেই পরদিন হডসন গ্রেফতার করল আর তিনটি পলাতক। বাহাদুর শাহের দুই পুত্র ও এক পৌত্র। তারা স্বেচ্ছায়ই ধরা দিয়েছিলেন। তাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছিল যে, তাদেরও বিচার হবে বাহাদুর শাহের মতো।
হডসন তাদের একটি ঘোড়ার গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে এল দিল্লীতে। দিল্লী গেটের কাছে এসে হডসন থামাল সে গাড়ি। বন্দুক নিয়ে নিজ হাতে পরপর গুলী করল বন্দীদের ঠিক বুকের মাঝখানে। রাজরক্ত ঝর ঝর ধারায় গড়িয়ে পড়ল দিল্লীর ধূলিধূসর পথে। মৃতদেহ নিয়ে চাঁদনীচকের উন্মুক্ত প্রান্তরে প্রকাশ্য প্রদর্শনী রূপে রাখা হল তিন দিন। সম্রাটবংশধরদের বিকৃত মৃতদেহ দেখে শিউরে উঠল পথচারীর দল, বারংবার অশ্রুসিক্ত চক্ষু মার্জনা করল নিঃশব্দে।

ব্যারাকপুরের বিদ্রোহী মঙ্গল পান্ডে

ব্যারাকপুরে নিযুক্ত ৩৪নং নেটিভ ইনফ্যান্ট্রির তরুণ সিপাহি মঙ্গল পান্ডে ১৮৫৭ সালের ২ মার্চ বিকেল ৫টায় সিপাহিদের কাছে বিদ্রোহের আহ্বান জানান। খবর পেয়ে রেজিমেন্টের সার্জেন্ট মেজর হিউসন ও একটু পরে অ্যাডজুট্যান্ট, লেফটেন্যান্ট বগ ছুটলেন তাকে গ্রেফতার করতে। মঙ্গল পান্ডের গুলীতে বগ আহত হন– হিউসনেরও আঘাত লাগে কিছুটা। এদের পালটা আঘাতে মঙ্গল পান্ডেও আহত হন। ৬ এপ্রিল ১৮৫৭–য় মঙ্গল পান্ডেকে সামরিক আদালতের সামনে হাজির করা হলো। সেদিনই তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হলো।

১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ

সাধারণ ‘সিপাহি বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত ১৮৫৭ সালের ঘটনা যে শুধু সিপাহিদেরই বিদ্রোহ নয়, সেটি যে এ দেশের ব্যাপক ভূখন্ড জুড়ে ‘হিন্দু–মুসলমানের এক মিলিত জাতীয় বিদ্রোহ’ (National Revolt of Hindus and Muslims)- এ কথাটি ঐ অভ্যুত্থানের সময়েই কার্ল মার্কস লিখেছিলেন তার রচনায়। সিন্ধিয়ার মতো রাজন্যবর্গের অপদার্থতার নিন্দা করলেও তার প্রতি তুলনায় তিনি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন অযোধ্যার সাধারণ মানুষের ভূমিকায়।

Bahadur-Shah-Zaforবৃদ্ধ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর মোটের উপর প্রতীক হিসেবেই অধিষ্ঠিত ছিলেন মহাবিদ্রোহের নেতৃত্বের ভূমিকায়। তবে বিদ্রোহ দমনের পর বন্দী সম্রাটকে রেঙ্গুকে পাঠাবার সময়ে (বন্দী অবস্থাতেই সেখানে তার মৃত্যু হয়) তাকে প্রাণভিক্ষা চাইতে বলায় তিনি দৃপ্তকণ্ঠে উত্তর দেন:

গাজিও মে বু রহেগি যব তলক ইমান কি, তব তো লন্ডন তক চলেগি তেগ হিন্দুস্তান কি॥

(আত্মসম্মানে সৌরভ যতদিন যোদ্ধাদের অন্তরে থাকবে ততদিন ভারতের দাপট একদিন না একদিন পৌঁছবে লন্ডনে)।

মহাবিদ্রোহের অন্যতম প্রধান নেতা, নানা সাহেবকে জীবিত বা মৃত অবস্থায় হাজির করতে পারলে লাখ টাকা ইনাম ঘোষণা (হিন্দি ও উর্দুতে) ইস্তেহাবে প্রকাশ করে ব্রিটিশ সরকার। বিদ্রোহ দমনের পর নানা সাহেব আশ্রয় নেন নেপালে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ অসমসাহসিক যুদ্ধ চালিয়ে নিহত হন ইংরেজ বাহিনীর হাতে। বন্দী হন মহাবিদ্রোহের শ্রেষ্ঠ সেনানায়ক তাতিয়া টোপি। তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। নানা সাহেবের বাহিনীর সেনাপতি, জওলাপ্রসাদেরও ফাঁসি হয়।

‘ফৈজাবাদের মৌলভি’ নামে সুপরিচিত মৌলভি আহমদুল্লাহ দৃঢ় চরিত্রের নেতা এবং দক্ষ সেনাপতি ও সংগঠন ছিলেন। এক বিশ্বাসঘাতক রাজার হাতে আহমদুল্লাহ নিহত হন। তার রক্তাক্ত মুণ্ডু জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে বিশ্বাসঘাতক রাজা ৫০,০০০ টাকা বখসিস আদায় করে।

বিহারে জনদীশপুরের বিদ্রোহী জায়গীরদার, কুয়র সিং এর ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ আহত অবস্থায় মৃত্যু হয়। ছোটনাসপুর, সিংভূমেও যে বিদ্রোহ ঘটে তাতে বেশ কিছু অফিসার ও ২০০–র বেশি ভারতীয় সিপাহি নিহত ও বিদ্রোহী নেতার ফাঁসি হয়।

হরিয়ানার বিদ্রোহী জায়গীরদার, রাও তুলারাম বিদ্রোহীদের পরামর্শে রাশিয়া থেকে অস্ত্র ও অর্থ সাহায্যের সন্ধানে তিন সঙ্গী নিয়ে গোপনে ‘ইরান ও আফগানিস্তানের পথে পাড়ি দেন। দীর্ঘ ও দুর্গম যাত্রাপথের কষ্টে শেষ পর্যন্ত কাবুলে তার মৃত্যু হয় (১৮৬২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর)। আফগান সরকার সেখানে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যবস্থা করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। তার সম্মানে কাবুলে একটি স্মৃতিস্তম্ভ প্রতিষ্ঠিত হয়।

ওড়িশার সম্বলপুরের বিদ্রোহী নেতা, সুরেন্দ্র সাঁই (১৮০৯–৮৪) ১৮৪০ সাল থেকে ব্রিটিশ বিরোধী তৎপরতার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহকালে বিদ্রোহীদের সাহায্যে মুক্তিলাভ করেই তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করেন। পরাস্ত হয়ে তিনি ১৮৬১ সাল অবধি আত্মগোপন করে থাকেন। পরে গ্রেফতার হয়ে আবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। ১৮৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অন্ধ অবস্থায় জেলেই তার মৃত্যু হয়। তার দুই ভাইও মারা যান জেলখানাতেই।

১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের ‘চক্রান্তে’ লিপ্ত থাকার অপরাধে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হন অসমেয়র মণিরাম দেওয়ান ও পিয়ালী বড়ুয়া।
যে ইংরেজ সরকারের সৈন্যবাহিনী সেদিন হাজার হাজার ভারতীয়কে নির্বিচারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে ১৮৫৭–৫৮ সালের মহাবিদ্রোহ দমন করেছিল, সেই ইংরেজের দেশের শ্রমিক শ্রেণীর বিখ্যাত ‘চার্চিস্ট আন্দোলনের’ নেতা, আর্নেস্ট জোন্স তাকে অভিনন্দিত করেছিলেন ঐ ১৮৫৭ সালেই প্রকাশিত তার Revolt of Hindustan কাব্যগ্রন্থে।

১৮৫৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে Illustrierte Zeitung পত্রিকায় অভ্যুত্থান দমনে ইংরেজের পাশবনীতির বিরুদ্ধে রচনা ও ছবি প্রকাশিত হয়। রাশিয়ায় চার্নিয়েশেভিস্কি, ডব্রোলিউবভ প্রমুখ বিখ্যাত মনীষী মহাবিদ্রোহ দমনে ব্রিটিশনীতির তীব্র নিন্দা করেন।
মহাবিদ্রোহ দমনের পর ইংরেজ ভারত শাসনের ভার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে সরাসরি নিজের হাতে তুলে নেয় এবং প্রতিষ্ঠা করে এক তথাকথিত ‘ভারত সরকার।’
https://amin20002000us.wordpress.com/2016/03/05/সিপাহি-বিদ্রোহ-১৮৫৭/

No comments:

Post a Comment