স্ম র ণ : সাইয়েদ আহমদ বেরেলভি
উপমহাদেশের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ইতিহাসে ৬ মে একটি স্মরণীয় দিন। ১৮৩১ সালের এই দিনে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের বালাকোট প্রান্তরে শাহাদতবরণ করেন সাইয়েদ আহমদ বেরেলভি ও শাহ ইসমাইলসহ ১৩৫ জন মুজাহিদ। মুসলিম বাহিনীর পক্ষে ছিলেন মাত্র ৯০০ মুজাহিদ, অন্য পক্ষে ছিল আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ও প্রশিক্ষিত ২০ হাজার সৈন্যসংবলিত শিখবাহিনী এবং স্থানীয় বিশ্বাসঘাতক চক্র।
বালাকোট যুদ্ধের প্রধান নায়ক ছিলেন সাইয়েদ আহমদ বেরেলভি।
তিনি ১৭৮৬ সালের ২৯ নভেম্বর উত্তর প্রদেশের রায় বেরেলিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮০৪ সালে দিল্লি গিয়ে শাহ আবদুল কাদেরের কাছে আরবি-ফারসি ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। একপর্যায়ে নবাব আমির খানের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন; কিন্তু কয়েক বছর পর আমির খান ইংরেজদের সাথে সন্ধি সূত্রে আবদ্ধ হওয়ায় তিনি শাহ আবদুল আজিজের খেদমতে হাজির হন। তিনি আধ্যাত্মিক সাধনায় অনেক উচ্চশিখরে আরোহণ করেছিলেন। আবদুল আজিজের ভ্রাতুষ্পুত্র শাহ ইসমাইল ও জামাতা আবদুল হাই তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। তার দাওয়াতে প্রায় ৪০ হাজার হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ইসলাম গ্রহণ করেন। ১৮২২ সালে তিনি ৭৫৩ জন যাত্রী নিয়ে পবিত্র মক্কা নগরীতে যান।
হজ করে ১৮২৪ সালে রায় বেরেলি ফিরে আসেন।
মুসলিমসমাজে যেসব কুসংস্কার, গোঁড়ামি, অনৈসলামিক রীতি-রেওয়াজ ঢুকে পড়েছিল; সেগুলো দূর করে ইসলামি রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন। সীমান্ত প্রদেশের নওশেরায় স্থানীয় শাসক, সরদার ও সাধারণ জনতা তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। ৯০০ মুজাহিদ একটি বৃহৎ শিখবাহিনীকে পরাজিত করেন। এতে মুজাহিদ বাহিনীর প্রভাব চার পাশে ছড়িয়ে পড়ে। দিন কাটত তাদের যুদ্ধের ময়দানে আর রাত কাটত জায়নামাজে। কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হতে পেরেছিলেন। সর্বদাই তারা একমাত্র আল্লাহর ওপরই নির্ভর করতেন।
বালাকোটের যুদ্ধ পর্যন্ত ১১টির অধিক যুদ্ধে মুজাহিদ বাহিনী শত্রুর মোকাবেলা করেছিল। মুসলিম বাহিনী ৩০ হাজার শিখ সৈন্যের এক বিশাল বাহিনীকে পরাজিত করে। প্রায় এক লাখ স্থানীয় মুজাহিদ সাইয়েদ আহমদের পতাকাতলে সমবেত হন। কিন্তু শিখ সেনাপতি বুধ সিংহের প্রলোভনে পেশোয়ারের সরদারেরা ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। তারা সাইয়েদ আহমদকে বিষপানের মাধ্যমে হত্যা করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালায়। সম্মুখসমরেও তারা শিখদের সাথে যোগ দেয়। ফলে মুজাহিদ বাহিনী পরাজিত হয়।
সাইয়েদ আহমদ বেরেলভি আন্দোলনের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল এ উপমহাদেশকে ব্রিটিশ শাসনমুক্ত করা। তাদের পথ ধরেই স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছেন উপমহাদেশের মানুষ। অবশেষে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা এ দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। অথচ উপমহাদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবনদানকারী এ মহান শহীদেরা আজো উপেক্ষিত।http://m.dailynayadiganta.com/detail/news/217660
No comments:
Post a Comment