আন্তর্জাতিক নজরুল
কাজী নজরুল ইসলামের সৈনিক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের সর্বক্ষেত্রে কমবেশি আন্তর্জাতিক চেতনা উজ্জীবিত ছিল। এ লেখায় আমরা তাঁর কবিতার বিষয় ও দৃষ্টিভঙ্গিতে সমসাময়িক আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি কীভাবে প্রভাব বিস্তার করছে, তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা করব।
কাজী নজরুল ইসলাম (২৪ মে ১৮৯৯—২৯ আগস্ট ১৯৭৬), প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল
কাজী নজরুল ইসলাম (২৪ মে ১৮৯৯—২৯ আগস্ট ১৯৭৬), প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল
প্রথম মহাযুদ্ধের সূচনাপর্বে ১৯১৭ সালে নজরুল ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৪৯ নম্বর বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করেন এবং ১৯২০ সালের মার্চ মাস অবধি করাচি সেনানিবাসে সৈনিক জীবন যাপন করেন। নজরুলের সৈনিক-জীবন আগাগোড়া করাচি সেনানিবাসে অতিবাহিত হলেও তাঁর তখনকার রচিত গল্প-উপন্যাস পড়ে মনে হতে পারে যে তিনি নওশেরা আফগানিস্তান, মেসোপটেমিয়া বা ইরাক, এমনকি ফ্রান্স ও জার্মানির রণক্ষেত্রে ছিলেন। কিন্তু করাচি সেনানিবাসে বসেই তিনি প্রথম মহাযুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় রণক্ষেত্রের চিত্র অঙ্কন করেছিলেন। এভাবেই একজন সৈনিকের ইতিহাস-চেতনা আন্তর্জাতিক ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।
প্রথম মহাযুদ্ধে একদিকে ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র; অপর দিকে জার্মানি ও অটোমান তুরস্ক। ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী ইংরেজদের পক্ষে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে, এমনকি রুশ বিপ্লবের (১৯১৭-১৯) পরে প্রতিবিপ্লবীদের সমর্থনে মধ্য এশিয়ায় যুদ্ধ করেছিল। এসব রণক্ষেত্রের কল্পিতচিত্র নজরুলের সৈনিক-জীবনের বিভিন্ন গদ্য রচনায় পাওয়া যায়। প্রথম মহাযুদ্ধের আগে প্রায় সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য বা আরব দেশগুলো ছিল অটোমান তুর্কি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত; আর তুরস্কের সুলতান ছিলেন ইসলামের শেষ খলিফা, অথচ এই তুরস্কের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষ করে মেসোপটেমিয়ায় ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীকে লড়তে হয়েছিল, যে সেনাবাহিনীতে অনেক মুসলমান সৈনিক ছিলেন। তাঁরা ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইতালিকে প্রায় সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য তাঁদের উপনিবেশে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রক্ত দিয়ে সাহায্য করতে বাধ্য হচ্ছিলেন। প্রথম মহাযুদ্ধে জার্মানি ও তুরস্কের পরাজয়ের পর ১৯১৯ সালের ভার্সাই সন্ধি অনুসারে তুরস্ক সাম্রাজ্যের মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় অঞ্চল কেড়ে নেওয়া হয়। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন আরব দেশ, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি প্রভৃতি ইউরোপীয় দেশের উপনিবেশে পরিণত হয়। প্রথম মহাযুদ্ধে পৃথিবীর মানচিত্রে, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের এই পরিবর্তন ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৪৯ নম্বর বেঙ্গল রেজিমেন্টের কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার কাজী নজরুল ইসলামকে গভীরভাবে মর্মাহত করেছিল। সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লব ও সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের উদ্ভব তাঁকে গভীরভাবে উদ্দীপিত করেছিল।
প্রথম মহাযুদ্ধের পর বিশের দশক থেকে ভারতবর্ষ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদবিরোধী স্বাধীনতাসংগ্রামের সূচনা হয়েছিল। অপর দিকে প্রায় সমগ্র মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছিল। ঘটনাক্রমে মধ্যপ্রাচ্যের আরব ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশ মুসলমান-অধ্যুষিত। নজরুলের বিশের দশকের বিভিন্ন রচনায় আন্তর্জাতিক বিশ্বের এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি বর্ণিত হচ্ছিল, যা তদানীন্তন ভারতীয়, বিশেষত বাংলা সাহিত্যে ছিল এক অভাবনীয় ব্যাপার।
নজরুল বিশ শতকের বিশের দশকে সৈনিক জীবন শেষে করাচি থেকে কলকাতায় প্রত্যাবর্তনের পর সাংবাদিক ও সাহিত্যিক জীবনের সূচনাপর্বে যে কবিতাটি লিখে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, সেটি হলো ‘শাত্–ইল্–আরব’। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় এই শাত্–ইল্–আরব নদীর তীরে তীরে তুর্কি ও ইংরেজ বাহিনীর তীব্র লড়াই চলেছিল। ইংরেজ বাহিনীতে ছিলেন ভারতীয় সেনারা, যাঁদের অনেকেই ছিলেন মুসলমান। এই যুদ্ধে তুরস্ক পরাজিত হয় এবং সমগ্র মেসোপটেমিয়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উপনিবেশে পরিণত হয়। নজরুলের কবিতায় ইংরেজ পদানত ভারতের এক কবি ইরাকের পরাধীনতায় গভীর বেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। ‘শাত্–ইল্–আরব’ কবিতা বাংলা সাহিত্যে প্রথম পাশ্চাত্য-সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ উচ্চারণ এবং নজরুলের আন্তর্জাতিক সচেতনতার প্রামাণ্য দলিল।
প্রথম মহাযুদ্ধে অটোমান তুর্কি সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তূপের ওপর মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইতিহাসের প্রথম সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষ তুর্কি প্রজাতন্ত্র। তখন একদিকে ঘরের শত্রু বিভীষণ পরাজিত তুর্কি সুলতান বা রাজবংশ এবং তাদের আজ্ঞাবহ গোঁড়া ইসলামি মৌলবাদী সম্প্রদায়, যারা মোস্তফা কামালকে ‘নাস্তিক’ ফতোয়া দান করে; অন্যদিকে একদা-উপনিবেশ গ্রিস তুরস্ক দখলের জন্য অভিযান চালায়। গ্রিসের সাহায্যে ব্রিটিশ, ফরাসি ও মার্কিন নৌবহর তুরস্কে অবতরণ করে, কিন্তু সাকারিয়া যুদ্ধে মোস্তফা কামালের তুর্কি বাহিনী গ্রিসকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করলে পাশ্চাত্য নৌবহরগুলো প্রত্যাহার করা হয়। যে মৌলবাদীরা মোস্তফা কামালকে কাফের ফতোয়া দিয়েছিল, তারাই আবার তাঁকে ‘গাজি’ উপাধি দেয়। মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের এই অভাবিত সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে নজরুল রচনা করেছিলেন তাঁর সুবিখ্যাত ‘কামাল পাশা’ কবিতাটি, যে কবিতা আসলে একটি কাব্যনাট্য এবং সমকালীন ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে রচিত। রুশ বিপ্লব নজরুলকে শ্রেণিবিহীন সমাজ গঠনে আর নব্য তুর্কি বিপ্লব তাঁকে ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী সমাজ গঠনের আদর্শে অনুপ্রাণিত করেছিল।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ভারতবর্ষে তার শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করার পর তিন-তিনবার আফগানিস্তান আক্রমণ ও দখল করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়। তৃতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধে প্রায় আট হাজার ব্রিটিশ ভারতীয় সেনা আফগান বাহিনীর হাতে পরাজিত ও কাবুল দুর্গে বন্দী হয়েছিলেন। এই বন্দীদের দুর্গ থেকে বের করে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এই আফগানিস্তানকে যিনি আধুনিকায়নের চেষ্টা করেছিলেন, বাদশা আমানউল্লাহ, যাঁকে নিয়ে নজরুলের কবিতা রয়েছে। আমানউল্লাহ ভারত সফরে এলে নজরুল তাঁকে ‘খোশ আমদেদ’ জানিয়ে কবিতাটি রচনা করেছিলেন।
প্রথম মহাযুদ্ধোত্তর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে, বিশেষত মিসরে ব্রিটিশ-সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রাম চলেছিল। পশ্চিমা দেশগুলো আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে পূর্ব দেশের উপনিবেশগুলোয় জাহাজযোগে আসার পরিবর্তে মিসরের সুয়েজ খাল খনন করিয়েছিল। প্রেসিডেন্ট নাসের এই সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করলে ব্রিটেন ও ফ্রান্স মিসর আক্রমণ করেছিল, কিন্তু সোভিয়েত আক্রমণের হুমকিতে তারা সুয়েজ দখলে রাখতে পারেনি। মিসরের সাবেক বাদশাহ ফারুক এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের রাজতন্ত্রগুলো ছিল বিভিন্ন পাশ্চাত্য দেশের আজ্ঞাবহ ক্রীড়নক। এ ছাড়া লরেন্স অব অ্যারাবিয়া নামের ব্রিটিশ সেনাপতি জর্ডান কর্তৃত্ব করেছে বহুদিন। তবে ব্যতিক্রমও ছিল। মিসরের জাতীয়তাবাদী নেতা জগলুল পাশা পাশ্চাত্য প্রভুত্বের বিরুদ্ধে ছিলেন আপসহীন। সে জন্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী কর্তৃপক্ষ তাঁকে নির্বাসনদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল। এই জগলুল পাশার মৃত্যু নিয়েও নজরুলের কবিতা রয়েছে ‘চিরঞ্জীব জগলুল’, যেমন রয়েছে সাব-সাহারা দেশ মরক্কোর রিফ সর্দার আবদুল করিমকে নিয়ে, যিনি স্পেনের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিলেন।
কেবল মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর উপনিবেশবাদবিরোধী নেতাদের নিয়েই নজরুল কবিতা রচনা করেননি, সঙ্গে সঙ্গে ভারতের ব্রিটিশবিরোধী খেলাফত আন্দোলনের নেতা মওলানা মোহাম্মদ আলী ও মওলানা শওকত আলী, অর্থাৎ আলী ভ্রাতৃদ্বয়কে নিয়েও নজরুল কবিতা লিখেছেন। শুধু মুসলিম বিশ্বের নয়, আইরিশ স্বাধীনতাসংগ্রাম নিয়েও তাঁর লেখা রয়েছে। মোট কথা, প্রথম মহাযুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে যেখানেই সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদবিরোধী সংগ্রাম হয়েছে, সেসব স্বাধীনতাকামী সংগ্রাম ও সংগ্রামী নেতাদের আদর্শায়িত করে তিনি কবিতা রচনা করেছেন, যা থেকে ভারতের মহাত্মা গান্ধী বা বাংলার দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশও বাদ পড়েননি।
প্রথম মহাযুদ্ধে লন্ডভন্ড অটোমান তুর্কি সাম্রাজ্যভুক্ত মুসলিম দেশগুলো বিভিন্ন পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদের উপনিবেশে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়ায় যে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাম শুরু হয়, তার পেছনে প্রেরণা জুগিয়েছিল জামালউদ্দিন আল আফগানি প্রচারিত প্যান ইসলামিক ভাবধারা, যা ছিল সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের মন্ত্র। স্মরণীয় যে এই প্যান ইসলামিক আন্দোলন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চরিত্রের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা লেনিন ও স্টালিনের সমর্থন পেয়েছিল। এ কথা জানা যায় তদানীন্তন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট র্যাডিকেল হিউম্যানিস্ট এম এন রায়ের স্মৃতিকথা থেকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদবিরোধী যে জাগরণ দেখা দিয়েছিল, নজরুলের একটি গানের নিম্নোক্ত উদ্ধৃতি থেকে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। ‘দিকে দিকে পুন জ্বলিয়া উঠেছে দীন-ই-ইসলামী লাল মশাল/ ওরে বে– খবর, তুইও ওঠ জেগে, তুইও তোর প্রাণ-প্রদীপ জ্বাল/ গাজী মোস্তফা কামালের সাথে জেগেছে তুর্কি সূর্খ–তাজ,/ রেজা পহলবী-সাথে জাগিয়েছে বিরান মুলুক ইরানও আজ/ গোলামী বিসরি, জেগেছে মিসরী, জগলুল সাথে প্রাণ মাতাল/ ভুলি গ্লানিলাজ জেগেছে হেজাজ নেজদ আরবে ইবনে সউদ/ আমানুল্লার পরশে জেগেছে কাবুলে নবীন আল–মাহমুদ/ মরা মরক্কো বাঁচাইয়া আজি বন্দী করিম রীফ–কামাল/ জাগে ফয়সল্ ইরাক আজমে, জাগে নব হারুন-আল-রশীদ,/ জাগে বয়তুল মোকাদ্দাস রে, জাগে শাম, দেখ্ টুটিয়া নিদ্/ জাগে নাকো শুধু হিন্দের দশ কোটি মুসলিম বে–খেয়াল।’
তবে নজরুলের আন্তর্জাতিক চেতনা যে বিশ্বের সর্বহারাদের বিপ্লবের প্রতি কতটা আগ্রহী ছিল, তা বোঝা যায় ১৩৩৪ সনের পয়লা বৈশাখের সাপ্তাহিক গণবাণী পত্রিকার জন্য রচিত তিনটি গানের বাণী থেকে, যার প্রথমটি রেডফ্ল্যাগ বা রক্তপতাকার গান—‘ওড়াও ওড়াও লাল নিশান/ দুলাও মোদের রক্তপতাকা/ ভরিয়া বাতাস জুড়ি বিমান/ ওড়াও ওড়াও লাল নিশান/...চিরবসন্ত যৌবন করে ধরা শাসন/ নহে পুরাতন দাসত্বের ঐ বদ্ধমন’।
দ্বিতীয় গানটি হলো, কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের প্রথম বঙ্গানুবাদ অন্তর ন্যাশনাল সংগীত, ‘জাগো অনশন-বন্দী, ওঠ রে যত/ জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যহত/ যত অত্যাচারে আজি বজ্রহানি/ হাঁকে নিপীড়িত জন-মন-মথিত-বাণী’...আর তৃতীয় গানটি হলো, ‘জাগর-তূর্য’ (শেলির ভাব অবলম্বনে)—‘ওরে ও শ্রমিক, সব মহিমার উত্তর-অধিকারী/ অলিখিত যত গল্প-কাহিনী তোরা যে নায়ক তারি’/ ...নিদ্রোত্থিত কেশরীর মত/ ওঠ্ ঘুম ছাড়ি নবজাগ্রত/ আয় রে অজেয় আয় অগণিত দলে দলে মরুচারী/ ঘুমঘোরে ওরে যত শৃঙ্খল/ দেহ–মন বেঁধে করেছে বিকল/ ঝেড়ে ফেল সব, সমীরে যেমন ঝরায় শিশির-বারি/ উহারা ক’জন? তোরা অগণন সকল শক্তি-ধারী।’
শ্রমিকশ্রেণি হচ্ছে সর্বহারা বিপ্লবের ভ্যানগার্ড বা অগ্রপথিক। নজরুল ওয়াল্ট হুইটম্যানের ও পাইওনিয়ার অবলম্বনে ‘অগ্রপথিক’ কবিতায় লিখেছেন—‘রৌদ্রদগ্ধ মাটিমাখা শোন্ ভাইরা মোর,/ বসি বসুধায় নব অভিযান আজিকে তোর!/ রাখ তৈয়ার হাথেলিতে হাথিয়ার জোয়ান,/ হান রে নিশিত পাশুপতাস্ত্র অগ্নিবাণ!/ কোথায় হাতুড়ি কোথা শাবল?/ অগ্রপথিক রে সেনাদল,/ জোর কদম্ / চল রে চল।’
সর্বপরিসর এই নিবন্ধে নজরুলের আন্তর্জাতিক চেতনার যে সামান্য পরিচয় তুলে ধরা হলো, আশা করি তাতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হবে যে বিশ শতকের প্রথম মহাযুদ্ধোত্তর আধুনিক বাঙালি কবিদের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলামই ছিলেন সবচেয়ে অগ্রসরমাণ 1 চেতনাসম্পন্ন মানবতাবাদী কবিপুরুষ।
প্রথম আলো
শিল্প ও https://www.google.co.uk/amp/www.prothom-alo.com/amp/art-and-literature/article/303994/%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%25A8%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25A4%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%259C%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25A4%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%2595-%25E0%25A6%25A8%25E0%25A6%259C%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25B2
প্রচ্ছদশিল্প ও সাহিত্যনিবন্ধ
No comments:
Post a Comment