বাংলার মুসলিম শাসন বিলুপ্তির পশ্চাৎ পটভূমি।
বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস বই থেকে ।
একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মোগল সাম্রাজ্যের অধঃপতনের পর ভারতীয় মুসলমানদের জীবনে নেমে এসেছিল চরম দুর্যোগ। নামেমাত্র একটি কেন্দ্রীয় শাসন দিল্লীতে অবশিষ্ট থাকলেও তা ছিল অত্যন্ত দুর্বল যার সুযোগে বিভিন্ন স্থানে মুসলমান শাসকগণ একপ্রকার স্বাধীনতা ভোগ করছিলেন। তাঁরা জমিদার-জায়গীরদার ও ধনিক-বণিক শ্রেণীর সন্তুষ্টি সাধনের আপ্রাণ চেষ্টা করেন। ফলে তাঁরা হয়ে পড়েছিলেন স্বভাবতঃই হীনমন্যতার শিকার। সুযোগ সন্ধানী বিজিত জাতি এ সুযোগে মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাস ও তামাদ্দুনিক ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশের সাহস পায়। বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় হিন্দু ধর্মশাস্ত্রের অনুবাদ, প্রচার ও প্রসার, শ্রীচৈতন্যের বৈষ্ণব ধর্ম প্রবর্তন, বৈষ্ণব সমাজের নোংরা, অশ্লীল ও যৌন উত্তেজনামূলক ক্রিয়াকলাপ মুসলমান সমাজকে অধঃপতনের অতল তলে নিমজ্জিত করে দেয়। শত্রুকে সম্মুখ সমরে পরাজিত করার উপায় না থাকলে তার ধর্মবিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রাধান্য বিস্তার করতে পারলে তাকে সহজেই পরাজিত করা যায়। ভারতের এবং বিশেষ করে বাংলার সুচতুর হিন্দুজাতি তাদের কয়েক শতাব্দীর পুঞ্জিভূত বিক্ষোভের প্রতিশোধ এভাবেই নিয়েছে। উপরন্তু ইতিহাসের বিভিন্ন স্তরে তারা মুসলিম জাতির অধঃপতন ত্বরান্বিত করে তাদের অভীষ্ট সাধনের জন্যে তাদেরই একান্ত মনঃপূত নামধারী একজন মুসলমানকে নির্বাচন করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছে। এই কাষ্ঠপুত্তলিকার দ্বারা তারা তাদের স্বার্থ ষোলআনা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। তার সাথে ইসলমী ঈমান আকীদাহর মধ্যে কুফর ও পৌত্তলিকতার অনুপ্রবেশ এবং মুসলিম সংস্কৃতির উপর হিন্দুজাতির প্রাধান্য মুসলমানদেরকে তাদের মানসিক গোলামে পরিণত করেছে। তার অতি স্বাভাবিক পরিণাম যা হবার তাই হয়েছে।
ডঃ এ, আরব, মল্লিক তাঁর গ্রন্থে মন্তব্য করেনঃ
“Thus long years of association with a non-Muslim people who far outnumbered them, cut off from original home of Islam, and living with half converts from Hinduism, the Muslims had greatly deviation from the faith and had become Idianised. This deviation from the faith apart, the Indian Muslims in adopting the caste system of the Hindus, had given a disastraous bloe to the Islamic conception of brotherhood and equality in which their strength had rested in the past and presented thus in the 19th century the picture of a distrupted society, degenerated and weakened by division and sub-division to a degree, in seemed, beyond the possibility of repair. No wonder, Sir Mohammad Iqbal said, surely we have out-Hindued the Hindu himself, -we are suffering and social caste system –religios caste system, sectarian and social caste system –which we have either learned or inherited from the Hindus. This is one of the quiet ways on which the conquered nation revenged themselves on their conquerors.” (British Policy and the Muslims in Bengal –A.R. Mallick)
-“মুসলমানগণ ইসলামের মূল উৎসকেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভারতের আধা ধর্মান্তরিত মুসলমানসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলমানদের সাথে বহু বৎসর যাবত একত্রে বসবাস করে মূল ধর্মবিশ্বাস থেকে সরে পড়েছিল এবং হয়ে পড়েছিল ভারতীয়। অধিকন্তু এই ভারতীয় মুসলমানগণ হিন্দুদের বর্ণপ্রথা অবলম্বন করে- অতীতের যে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের মধ্যে তাদের শক্তি নিহিত ছিল –তার প্রতি চরম আঘাত হানে। ফলে উনবিংশ শতাব্দীতে তারা বহু ভাগে বিভক্ত, ছিন্নভিন্ন ও অধঃপতিত জাতি হিসাবে চিত্রিত হয়, যার সংশোধনের কোন উপায় থাকে না। তাই স্যার মুহাম্মদ ইকবালের এ উক্তিতে বিস্ময়ের কিছু নেইঃ
নিশ্চিতরূপে আমরা হিন্দুদেরকে ছাড়িয়ে গেছি। আমরা দ্বিগুণ বর্ণপ্রথার রোগে আক্রান্ত –ধর্মীয় বর্ণপ্রথা, ফের্কা-উপফের্কা এবং সামাজিক বর্ণপ্রথা, যা আমরা শিক্ষা করেছি, অথবা হিন্দুদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। যেসব নীরব পন্থায় বিজিতাদের প্রতিশোধ গ্রহণ করে থাকে, এ হলো তার একটি”।
এ এক অনস্বীকার্য সত্য যে, বাংলা তথা ভারতের হিন্দুজাতি মুসলিম শাসন কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা মুসলিম সংহতি সমূলে ধ্বংস করার জন্যে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নীরবে কাজ করে গেছে। তাদের প্রচেষ্টায় তারা পরিপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। মুসলমানদেরকে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে ও তাদের তাহজিব তামাদ্দুনে পৌত্তলিকতার কলুষ কালিমা লেপন করেছে। তাদেরকে হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত না করে হিন্দু ভাবাপন্ন মুসলমান বানিয়ে তাদের দ্বারা হিন্দুস্বার্থ চরিতার্থ করা যে অতিসহজ –এ তত্বজ্ঞান তাদের ভালো করেই জানা ছিল এবং এ কাএজ তারা সাফল্য অর্জণ করেছে পুরাপুরি।
No comments:
Post a Comment