এখনও থেমে নেই পলাশীর সেই
ষড়যন্ত্র
|
মোহাম্মদ আবু নোমান
পলাশী এক রক্তাক্ত ইতিহাস। পলাশী পরাধীনতার ইতিহাস, ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। পলাশী মুক্তিসংগ্রামীদের পরাজয়ের ইতিহাস, ট্রাজেডি ও বেদনাময় এক শোক স্মৃতির ইতিহাস। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশীর আমবাগানে যুদ্ধের নামে মীর জাফর আর জগৎশেঠদের মতো কিছু ক্ষমতালিপ্সু, স্বার্থান্বেষীর চরম বিশ্বাসঘাতকতায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পরাজিত হন বাংলা-বিহার ও উড়িষ্যার নবাব সিরাজুদ্দৌলা। প্রায় ২০০ বছরের জন্য বাংলা স্বাধীনতা হারায়। এই ঘটনার মাধ্যমে কলকাতা কেন্দ্রিক একটি নতুন পুঁজিপতি শ্রেণি ও রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটে। ইংরেজ ও তার এ দেশীয় দালালগোষ্ঠী দেশবাসীর ওপর একের পর এক আগ্রাসন চালায়। ফলে দেশীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও সামাজিক জীবনে ব্যাপক বিপর্যয় নেমে আসে।
ভারতে বিভিন্ন সময়ে ব্রিটেনের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ এবং শত্রুতামূলক নানা নীতির কারণে কোটি কোটি বাঙালিসহ অন্তত ১০ কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। দেশীয় শিল্প, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, শিক্ষা ও সমাজ-ব্যবস্থারও হয়েছে অপূরণীয় ক্ষতি। বিশেষ করে, মুসলমানরা হয়ে পড়ে সবচেয়ে দরিদ্র ও অনগ্রসর।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর উদ্যোগে প্রথম পলাশী দিবস উদযাপিত হয় কলকাতায়। সাথে ছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং মওলানা আকরম খাঁ। প্রতি বছর ২৩ জুন পলাশী দিবস হিসেবে পালিত হয়। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্যদিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয় এ দিন। সাথে সাথে এদেশের আকাশে নেমে আসে দুর্যোগের ঘনঘটা, দুর্ভেদ্য অমানিশা। মানুষের উপর চেপে বসে পরাধীনতার জগদ্দল পাথর। তাই প্রতি বছর জুন মাস আসলেই এদেশের স্বাধীনচেতা মানুষের অন্তরে জেগে উঠে পলাশীর আম্রকাননের বিভীষিকা।
ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত, ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল বিশ্বাসঘাতক জগৎশেঠ, মাহতাব চাঁদ, উমিচাঁদ, মহারাজা স্বরূপচাঁদ, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র, রায়দুর্লভ, মীর জাফর, ঘষেটি বেগম, রাজা রাজবল্লভ, নন্দকুমারসহ ধূর্ত কৌশলী চক্র। ওইদিন মুর্শিদাবাদ থেকে ১৫ ক্রোশ দক্ষিণে ভাগিরথী নদীর তীরে পলাশীর আম্রকাননে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যাসহ পুরো উপমহাদেশের স্বাধীনতার কবর রচিত হয়, অস্তমিত হয় বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। পরাজয় ও নবাবের বেদনাদায়ক মৃত্যু হলেও উপমহাদেশের মানুষ স্বাধীনতার অতন্দ্রপ্রহরী, মুক্তি সংগামের প্রথম সিপাহসালার নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং তার বিশ্বস্ত সেনাপতি মীরমদন ও প্রধান আমাত্য মোহনলাল কাশ্মিরীকে আজও শ্রদ্ধা জানায়। জাতীয় বীর সিরাজউদ্দৌলাকে স্মরণ করে অনুপ্রাণিত হয়, ব্যথিত হয়। একথা সত্য, নবাব সিরাজ ইতিহাসের এক ভাগ্যাহত বীর, দেশপ্রেমিক। চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রে তার করুন পরিণতি ঘটে।
পৃথিবীর ইতিহাসে, বিশেষ করে উপমহাদেশের ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধ একটি মোড় পরিবর্তনকারী যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। এ যুদ্ধের রাজনৈতিক ফলাফল ছিল ধ্বংসাত্মক ও সুদূরপ্রসারী। মূলত পলাশীর যুদ্ধে বিজয়ই ইউরোপীয়দের হটিয়ে ভারতে ইংরেজ আধিপত্য বিস্তারের পথ তৈরি করে দেয়। পলাশীর যুদ্ধে জয়ের খবরে লন্ডনে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শেয়ারের দাম নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। কারণ বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারছিলেন বাংলার সম্পদে কোম্পানিটি এখন হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠবে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের সেবাদাসদের সাহায্যে এভাবেই বাংলায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। এরপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দীর্ঘ ১৯০ বছর এদেশে শাসন শোষণ চালায়। কোটি কোটি টাকার অর্থ সম্পদ ইংল্যান্ডে পাচার করে। বাংলাদেশ থেকে লুটকৃত পুঁজির সাহায্যে ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব ঘটে। আর এককালের প্রাচ্যের স্বর্গ সোনার বাংলা পরিণত হয় বিশ্বের দরিদ্রতম দেশে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পলাশীর যুদ্ধের ফল ভিন্ন হলে ইংল্যান্ড নয় বাংলাই বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিতে পারত।
পলাশীর যুদ্ধের অব্যবহিত পর ইংরেজরা সাম্রাজ্য বিস্তারের চিন্তা করেনি। যে কদিন ক্ষমতার দাপট আছে, সে কদিন যা পাওয়া যায়, তা লুটেপুটে নিয়ে নিজেদের অর্থ ও বিত্তের ভা-ার পরিপূর্ণ করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। ফলে লর্ড ক্লাইভের নেতৃত্বে কায়েম হয় লুটপাটের একচেটিয়া রাজত্ব। টাকা আদায়ের জন্য দেওয়ানি হাতে নিয়ে ক্লাইভ চালু করেন দ্বৈত শাসন। তার এই শাসনের ৫ বছরের মধ্যেই শুরু হয় বাংলাজুড়ে প্রচ- দুর্ভিক্ষ। ইংরেজদের এই অর্থলোভের সূত্র ধরে ভেঙে চুরমার হয় পুরোনো রাষ্ট্রীয় ও বৈষয়িক কাঠামো।
১৭১৯ সালে মুর্শিদকুলী খাঁ বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হন। তার মৃত্যুর পর ওই বছরই সুজাউদ্দিন খাঁ বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার সিংহাসন লাভ করেন। এই ধারাবাহিকতায় নবাব আলীবর্দী খাঁর কোন পুত্র সন্তান না থাকায় তিনি মৃত্যুর পূর্বেই তার কনিষ্ঠ কন্যার পুত্র সিরাজুদ্দৌলাকে ১৭৫৬ সালের ১০ এপ্রিল বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার পরবর্তী নবাব মনোনীত করে যান। তখন তার বয়স মাত্র ২২ বছর। শৈশব থেকেই সিরাজউদ্দৌলা অত্যন্ত সুদর্শন, বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান ছিলেন। আলিবর্দি তাকে খুব বেশি আদর করতেন এবং সব সময় সঙ্গে রাখতে চাইতেন। এ জন্য সিরাজের দুই খালা তার প্রতি ভীষণ ঈর্ষান্বিত ছিলেন এবং সব সময় তার অমঙ্গল কামনা করতেন। রাজনীতিতে তার খালা, বিশেষ করে ঘসেটি বেগমের প্রভাব ছিল। ইংরেজদের সাথে তারা যোগাযোগ স্থাপন করে নবাবের বিরুদ্ধে নীলনকশা পাকাপোক্ত করেন।
এ ষড়যন্ত্রের নেপথ্য নায়ক যে মীরজাফর, তা আঁচ করতে পেরে নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাকে প্রধান সেনাপতির পদ থেকে অপসারণ করে আব্দুল হাদীকে অভিষিক্ত করেন। কূটচালে পারদর্শী মীর জাফর পবিত্র কোরআন শরিফ ছুঁয়ে শপথ করায় নবাবের মন গলে যায় এবং মীর জাফরকে প্রধান সেনাপতি পদে পুনর্বহাল করেন। ঐতিহাসিকরা বলেন, এই ভুল সিদ্ধান্তই নবাব সিরাজের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
ঐতিহাসিকগণ পলাশীর প্রান্তরে সংঘর্ষকে ‘যুদ্ধ’ বলতে নারাজ। তাদের মতে, এটা ছিল যুদ্ধের প্রহসন। পলাশীতে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও লর্ড ক্লাইভের মধ্যে এক যুদ্ধ নাটক মঞ্চায়িত হয়। যেখানে নবাবের পক্ষে ছিল ৫০ হাজার সৈন্য আর ইংরেজদের পক্ষে মাত্র ৩ হাজার সৈন্য। কিন্তু প্রাসাদ ষড়যন্ত্রকারী ও কুচক্রী মীরজাফর, রায় দুর্লভ ও খাদেম হোসেনের অধীনে নবাব বাহিনীর একটি বিরাট অংশ পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধে অংশগ্রহণই করেনি। আগেই সন্ধি হয়েছিল, যুদ্ধে সিরাজ পরাজিত হলে বাংলার নবাব হবেন মীরজাফর। পবিত্র কোরআন শরিফ ছুঁয়ে তিনি শপথ করেছিলেন, এই যুদ্ধে তার দলবল নিয়ে তিনি নিষ্ক্রিয় থাকবেন। হয়েও ছিল তা-ই। এই কুচক্রীদের চক্রান্তে যুদ্ধের প্রহসন হয়েছিল।
ওইদিন মীর মর্দান, মোহন লাল, খাজা আব্দুল হাদী খান, নব সিং হাজারী প্রমুখের অধীন নবাব সেনা বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ চালায়, অন্যদিকে মীরজাফর, ইয়ার লতিফ এবং রায় দুর্লভরামের অধীন নবাবের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সেনা নিষ্ক্রিয়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে ও পরিস্থিতি অবলোকন করে। এর পরেও লর্ড ক্লাইভ চরম প্রতিরোধের মুখে পরে রাতের অন্ধকারে কলকাতা পালিয়ে যাওয়ার চিন্তা করছিলেন। কিন্তু এরমধ্যে কামানের গোলায় মীর মর্দানের মৃত্যু হয়। মীর মর্দানের মৃত্যুতে হতভম্ব নবাব মীরজাফরকে ডেকে পাঠান এবং তার জীবন ও সম্মান রক্ষার জন্য তাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করেন। মীরজাফর নবাবকে কূটকৌশলে ওই দিনের মতো যুদ্ধ বন্ধ করতে এবং পরদিন সকালে নতুন উদ্যমে যুদ্ধ শুরু করার পরামর্শ দেয়। আর এ খবর ধ্রুতই ক্লাইভের নিকট পৌঁছানো হয়। পরামর্শমত নবাবের সৈনিকরা পিছুতে থাকলে ইংরেজ সেনারা নতুন করে প্রচ- আক্রমণ চালায়, ফলে অপ্রস্তুত নবাব বাহিনী বিশৃঙ্খলভাবে যত্রতত্র পালিয়ে যায়।
মূলত পলাশীর বিয়োগান্ত ঘটনা কোন কাকতালীয় বিষয় ছিল না। এটি ছিল ব্রিটিশ বেনিয়াদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার চূড়ান্ত পরিণতি। প্রথম থেকেই যদি জগৎশেঠের মতো এদেশের নামিদামি ধনাঢ্য এবং পরবর্তীতে ক্ষমতালোভী কিছু মীরজাফর ইংরেজদের সহযোগিতা না করত, তাহলে কোন দিনই ইংরেজরা এদেশের মানুষদের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে সমর্থ হতো না। এসব বিশ্বাসঘাতক কখনই উপলব্ধি করতে পারেননি যে, নবাব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয় শুধু তার একার পরাজয় নয়, শুধু বাংলার পরাজয় নয়, বরং সমগ্র ভারতবাসীর পরাজয়। অবশ্য অতি অল্প সময়ের ব্যবধানেই, তারা এই চরম সত্য মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।
পলাশীর দুর্বিপাক এবং সিরাজের উৎখাতের সাথে যেসব বিশ্বাসঘাতক জড়িত ছিল তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই অপঘাত ও চরম লাঞ্চনাকর মৃত্যু হয়। জীবনকালেই নানা মানহানী, কেলেঙ্কারি, গঞ্জনা-লাঞ্ছনার ঘূর্ণিপাক তাদের গ্রাস করেছিল। বিশ্বাস-হন্তারকদের পরিণতি শুভ হয় না কখনো। দেশ এবং দেশের মানুষকে যারা প্রতারিত করে আখেরে তারা নিজেরাই প্রতারণার ফাঁদে আটকা পড়ে।
মীরজাফর খ্যাত হতে চেয়েছিলেন ‘মহবৎ জঙ্গ’ নামে, কিন্তু তার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে ‘ক্লাইভের গাধা’ হিসেবে। ইংরেজদের প্রতিশ্রুত খাজনা ৩ কোটি টাকা দিতে অসমর্থ হওয়ায় তার তহবিল শূন্য হয়ে পরে। জওয়ানরা মাইনে না পেয়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠে। মীরজাফর রাজকার্যে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ভাং সেবন করে টাল হয়ে থাকতেন। লোকে তার ছোট ছেলে মীরনকে ‘ছোট নবাব’ বলে ডাকত। বেঁচে থাকা পর্যন্ত এই নিষ্ঠুর প্রকৃতির নবাবজাদাই চালাতেন রাজকার্য। এদিকে ইংরেজদের টাকার খাঁই মেটাতে না পেরে মীরজাফর মসনদচ্যূত হন। অতি ঘৃণ্য মীর জাফরের কুষ্ঠরোগে মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে ইংরেজদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনারা কি ভাবেন টাকার বৃষ্টি হয়’? কিন্তু তার এই প্রশ্ন নিষ্ফল আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
রায়দুর্লভ ছিলেন পলাশী ষড়যন্ত্রের শীর্ষচূড় নায়কদের অন্যতম। মীরজাফর ও মীরনের অচিরেই সন্দেহ হলো রায়দুর্লভ বুঝি সিরাজের ছোট ভাই মির্জা মেহেদিকে সিংহাসনে বসানোর ষড়যন্ত্র করছেন। মীরন মেহেদিকে কালবিলম্ব না করে হত্যা করেন। রায়দুর্লভকে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে হত্যা করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। ক্লাইভের কল্যাণে রায়দুর্লভ প্রাণে বেঁচে গেলেও হারালেন তার দেওয়ানি। প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গেলেন কলকাতায়। আর মহারাজা নন্দকুমারকে ইংরেজরাই ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল জালিয়াতির মামলা ঠুকে দিয়ে। ইংরেজদের তলে তলে সাহায্যকারী নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের মৃত্যুর পর তার বংশধরেরা তার জমিদারি ধরে রাখতে পারেননি। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সূর্যাস্ত আইনে সব নিলাম হয়ে যায়। ক্লাইভ নিজের হাতে ক্ষুর চালিয়ে আত্মহত্যা করেন। কারণ, ভারত থেকে ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে উঠতে থাকে একের পর এক দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ। সেই জ্বালা সহ্য করতে না পেরেই এই আত্মহননের পথ বেছে নেন তিনি। আর ইংরেজ সেনাপতি স্ক্রাফটন মারা যান জাহাজডুবিতে।
পলাশী বিপর্যয়ের পর শোষিত বঞ্চিত শ্রেণি একদিনের জন্যও স্বাধীনতা সংগ্রাম বন্ধ রাখেনি। ফকির বিদ্রোহ, ফরায়েজি আন্দোলন, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লাকেন্দ্রিক আন্দোলন, ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ইত্যাদি বিদ্রোহের মাধ্যমে এ দেশের মুক্তিকামী মানুষ বারবার তাদের অবস্থান জানান দিয়েছে। ফলে দীর্ঘ দুইশ’ বছর ধরে আন্দোলন সংগ্রামের পর ব্রিটিশরা লেজ গুটাতে বাধ্য হয়। পরে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র জন্মলাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
বর্তমানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র চলছে। তাই সকল জাতীয়তাবাদী ইসলামিক মূল্যবোধের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আজও থেমে নেই পলাশীর সেই ষড়যন্ত্র। এখনো ভিন্ন নামে মীরজাফর, ঘষেটি বেগম, জগৎশেঠরা দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা আর ন্যায্যপ্রাপ্তি নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। পলাশীর ইতিহাস তাই আমরা ভুলে যেতে পারি না। পলাশী ফিরে আসে বারবার নতুনরূপে। ষড়যন্ত্রকারী-চক্রান্তকারীরা তৎপর। সুতরাং আমাদের সজাগ ও তৎপর হতে হবে। যে কোনো মূল্যে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বাতন্ত্র্য সুরক্ষা করতে হবে।
বাংলাদের ট্রাজেডি এই যে, প্রচ- ক্ষমতালোভী ও জাতীয়তাবিরোধী মীর জাফরের প্রেতাত্মারা বারবার গোর থেকে উঠে আসে। ধারাবাহিকতা রক্ষায় তাদের উত্তরসূরীরাও একই আচরণ অব্যাহত রাখে। তারা এ দেশকে ‘কলোনি’ বানাবার স্বপ্নে বিভোর। তাই পলাশীর চেতনার নির্যাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।
https://www.dailyinqilab.com/article/24973/এখনও-থেমে-নেই-পলাশীর-সেই-ষড়যন্ত্র
No comments:
Post a Comment