সিরাজ-উদ-দৌলা ও পলাশীর যুদ্ধ
আখতার হামিদ খান:
দেখিয়ে হৃষ্ঠ হইতেন। রাজীব লোচনের মত ঐতিহাসিকদের অভাব কোন দিনই ছিল না। তাতের কেউ প্রভু ইংরেজদের অনুগ্রহ লাভে ইতিহাস না লিখে কল্প-কাহিনী ফেদেছেন। কেউবা সমস্ত ঘটনা বিচার করেছেন সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে। আবার ক্ষমতায় চেপে বসা বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরের বংশধররাও ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন নিজেদের মত করে। যেমন- মীরজাফর পুত্র মীরনের বংশধর রেজা আলী খান লিখেছেন- “মুর্শিদাবাদ এন্ড নাজিমস, ইতিহাস গ্রন্থ, যাতে মীরজাফরকে দেখানো হেেছ দেশপ্রেমিক হিসাবে। আর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা অত্যাচারী শাসক।
যার করুণ পরিণতির জন্য তিনি নিজেই দায়ী।
কিন্তু এসব সত্ত্বেও বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে গোটা উনিশ শতক জুড়ে “নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা”- এই নাম প্রেরণা হিসাবে। বারবার মানুষকে উজ্জীবিত করেছে। বিংশ শতাব্দিতে ভারত থেকে বৃটিশদের বিদায় পর্যন্ত “সিরাজ কাল্পনিক শক্তির অপার। তাই ইতিহাসে যারা সিরাজকে খলনায়ক বানাতে চেয়েছেন তারাই চিহ্নিত হয়েছেন মিথ্যাবাদী হিসাবে। আর ক্রামান্বয়ে সাধারণ মানুষের কাছে সিরাজ পরিণত হয়েছেন জাতীয় বীর-এ।
পলাশি বিপর্যয়ের দু’শ সাইত্রিশ বছর অতিক্রম হয়েছে। আজ এ বৃটিশরা নেই। বাংলা ভাগ হয়েছে।
এর বৃহত্তর অংশ আজকের বাংলাদেশ। অন্য অংশ পশ্চিমবঙ্গ ভারতভুক্ত। আর ওই ভারতীয় অংশেই পড়েছে সেদিনকার রাজধানী মুর্শিদাবাদ। পলাশী প্রান্তর তা-ও মুর্শিদাবাদ সংলগ্ন নদীয়া জেলাতে। আজ বাংলাদেশের বহু মানুষের জানতে আগ্রহ-সেই পলাশী প্রান্তর, যেখানে বাংলার স্বাধীনতা অস্তমিত হয়েছিল, তার অবস্থা এমন কেমন? হতভাগ্য নবাব সিরাজ যেখানে ঘুমিয়ে আছেন, সেই সমাধির অবস্থা-ই বা কি? সত্যিকার কি ঘটেছিল সেদিন পলাশীর আমবাগান? আর ওপার বাংরার মানুষেরই বা সিরাজ এবং তার পরিবার সম্পর্কে কতটুকু আগ্রহ?
এসব প্রশ্নের অনেকখানিই হয়ত জানেন অনেকেই। কিছু আছে ইতিহাসে আবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাই হয়ত ইতিহাসে নেই। এই জানা-অজানা অকে ঘটনা অনুসন্ধানে গত বছরের (১৯৯৩) মে মাসে পলাশী প্রান্তরে যাওয়া মুর্শিদাবাদ, নবাব সিরাজের সমাধি খোশবাগ ও পরিদর্শন করা হয় সে সময়।
কলকাতা থেকে সোজা উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িগামী জাতীয মহাসড়ক চলে গেছে পলাশী প্রান্তরের উপর দিয়ে। সড়ক পথে কলকাতা থেকে পলাশীর দূরত্ব ১শ’ ৭২ কিলোমিটার। অন্যদিকে ফারাক্কাগামী রেলপথও পলাশীর উপর দিয়ে চলে গেছে। কলকাতার শিয়ালদহ রেলস্টেশন থেকে ১শ’ ৫০ কিলোমিটার পলাশী। পলাশী নামে একটি রেলস্টেশনও রয়েছে পলাশীতে। পলাশী নদীয়া জেলার একেবারে উত্তরপ্রান্তে। এরপরই শুরু হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা। পলাশী থেকে মুর্শিদাবাদ পঞ্চাশ কিলোমিটার উত্তরে।
অষ্টাদশ শতাব্দির গোড়াতেই পলাশী প্রান্তর আমবাগানের জন্য বিখ্যাত। এখানে একসময় পলাশ গাছের আধিক্য ছিল। সেজন্য নাম হয় পলাশী। অবশ্য অষ্টাদশ শতাব্দির গোড়াতে পলাশীতে পলাশ গাছের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। এই বিশাল প্রান্তর ছিল নাটোরের জমিদার রানী ভবানীর সম্পত্তি। লালবাগ নামেও এর পরিচয় ছিল। প্রান্তরটি সে সময় ছিল উত্তর-দক্ষিণে প্রায় সাত কিলোমিটার। আর সাড়ে তিন কিলোমিটার পূর্ব-পশ্চিমে। উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত ভাগীরথী নদীর পূর্ব পাশেই পলাশী।
পলাশী যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল সিরাজের বিরুদ্ধে ইংরেজদের ষড়যন্ত্রের দরুন। আর এ ষড়যন্ত্রে যোগ দিয়েছিলেন মীর জাফর, রায় দুর্লভ, জগৎ শেঠ, মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র, ইয়ার লতিফ, মহারাজ নন্দকুমার, ঘসেটি বেগমসহ অনেকেই। নবাব আলীবর্দী ছিলেন অপুত্রক। যে কারণে তার ভগ্নিপতি মীরজাফরের ইচ্ছা ছিল নবাব হবার। কিন্তু আলীবর্দী যখন সিরাজ-উদ-দৌলাকে নবাব হিসাবে মনোনয়ন দেন তখন থেকেই শুরু হয় মীরজাফরের ষড়যন্ত্র।
খালা ঘসেটি বেগমও সিরাজকে নবাব হিসাবে মনোনয়ন প্রদান মেনে নিতে পারেননি। এ সময় রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণ বল্লভকে নিয়ে সদ্য ক্ষমতায় আসীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার প্রত্যক্ষ সংঘাত শুরু হয়। অপরিমিত সরকারী রাজস্ব লুণ্ঠন করে নবাবের ভয়ে ভীত কৃষ্ণবল্লব আশ্রয় নিয়েছিলেন কলকাতায় ইংরেজদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন কৃষ্ণ বল্লভকে ফেরৎ পাঠান। ইংরেজরা আগ্রাহ্য করেন নবাবের আদেশ। সিরাজ-উদ-দৌলা ক্ষুব্ধ হয়ে কাশিমবাজার কুঠির ও কলকাতা আক্রমণ করেন এবং তা দখল করে নেন। এ সময় “অন্ধকূপ” হত্যাকা- নামে একটি ঘটনা প্রচার করে নবাবের চরিত্রে কালিমা লেপন করা হয়।
কলকাতায় ইংরেজদের বিপর্যয়ের খবর পৌঁছায় ইংরেজদের মাদ্রাজ কুঠিতে। সে সময় মাদ্রাজ থেকে কলকাতায় পাঠান হয় এ্যাডমিরাল ওয়াটসন ও কর্নেল ক্লাইভকে। তারা কলকাতা পুনর্দখল ও হুগলি অধিকার করে নেন। ১৭৫৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ইংরেজদের সাথে নবাবের এক সন্ধি হয়। নিরপেক্ষ ঐতিহাসিকদের মতে ইংরেজরা আসলে তখন চাচ্ছিলেন নিরাপদে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে। এর জন্য তারা নবাবের কাছে থেকে সুযোগ সুবিধা প্রত্যাশী ছিলেন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিরাজ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্ররোচনায় ইংরেজরা ফরাসীদের কাছ থেকে দখল করে নিলেন চন্দননগর। হুগলির ফৌজদার মহারাজ নন্দকুমার যোগ দিলেন ইংরেজদের সাথে। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা বুঝতে পারলেন-তাদের পরবর্তী লক্ষ্য মুর্শিদাবাদ। ফলে, তিনিও সসৈন্যে অগ্রসর হলেন পলাশী অভিমুখে।
ইংরেজ বাহিনী ক্লাইভের নেতৃত্বে ১৬ জুন ১৭৫৭ তারিখে পাটুলিতে এসে উপস্থিত হন। ১৭ জুন তারা কাটোয়া দখল কনে নেয়। ২২ জুন ভাগীরথী নদী পার হয়ে ইংরেজ বাহিনী আশ্রয় নেয় পলাশীর আ¤্রকুঞ্জে।
নবাব বাহিনী মুর্শিদাবাদ থেকে প্রথমে মনকরা এবং এরপর দাদপুর উপস্থিত হন। ক্লাইভ বাহিনীর বারো ঘণ্টা আগেই নবাব বাহিনী শিবির স্থাপন করেন পলাশীর উত্তর প্রান্তে।
২৩ জুন সকালে নবাব বাহিনীর পরাজিত হয়েছিলেন।” ১৯০৯ সালে লর্ড কার্জনের অনুমতিক্রমে আরও একটি মনুমেন্ট ও ডাকবাংলা নির্মিত হয়।
তবে পলাশী প্রান্তরে গর্ব করার মত একটি জিনিস আছে। তা হল-নবাব সিরাজ-উদ-দৌলের সেনাপতি মীরমদনের স্মৃতি-স্তম্ভ। এখানে আছে আরও দুটি স্মৃতি স্তম্ভ। নাউ-ই সিংহ হাজারি ও বাহাদুর আলী খানের স্মৃতিস্তম্ভ।
পলাশী মাঠের প্রান্তেই ভারতের প্রখ্যাত শিল্পপতি গ্রুপ খৈতানরা একটি চিনিকল স্থাপন করেছে। ওই চিনিকল গোটা পরিবেশকেই নষ্ট করে দিয়েছে। চিনি কলের বর্জ্য পদার্থের জন্য বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়াও কষ্ট। এই চিনিকল সম্প্রসারণের এক অনুষ্ঠানে কয়েক বছর আগে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। জ্যোতি-বসু তার জন্য পলাশী স্টেশন থেকে চিনিকল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি তোরণ নির্মিত হয়। ওইসব তোরণের গায়ে লেখা ছিল “খৈতাননগর”। অনুষ্ঠানে পৌঁছে জ্যোতিবসু প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে বিক্ষোভও দেখান কিছু লোক। জ্যোতিবসু বলেন- ‘পলাশি একটি ঐতিহাসিক স্থান। এখানে বাংলার স্বাধীনতা অস্তমিত হয়েছিল। কারও অধিকার নেই এর নাম পরিবর্তন করার।”
কিন্তু পলাশীর অনেক সাধারণ মানুষই জানেন না, ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন এখানে কি ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছিল। এলাকার বেশ কয়েকজন মানুষের সাথে কথা হয়। তারা বলেন যে, পলাশীতেই একটি মিউজিয়াম থাকা উচিত। যেখানে ওই যুদ্ধের ইতিহাস থাকবে। থাকবে প্রামাণ্য অনেক কিছু। যাতে মানুষ জানতে পারে সেদিনকার সঠিক ইতিহাস। তাদের মতে মুর্শিদাবাদে আজ হাজার দুয়ারী প্রাসাদে যে ইতিহাস সঠিক ইতিহাস। তাদের মতে মুর্শিদাবাদে আজ হাজার দুয়ারী প্রাসাদে যে ইতিহাস সংরক্ষিত করা হচ্ছে, তা প্রকৃত মীরজাফরের বংশধরদের ইতিহাস। সেখানে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার প্রবণতা লক্ষণীয়। পলাশীর লোক-নাথপুরের স্কুল শিক্ষক বিনয়কৃষ্ণ দাস বললেন- আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি। তারা যেন পলাশিতে মিউজিয়াম তৈরি করেন। কিন্তু এনিয়ে এখনও পর্যন্ত সরকার কোন উদ্যোগ নেয়নি। পশ্চিম বঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার সঠিক ইতিহাস নিয়ে গবেষণা ও তার লেখার ব্যবস্থাও করছেন। কিন্তু পলাশী যুদ্ধ ও নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে নিয়ে এখনও তারা তেমন কোন প্রকল্প গ্রহণ করেননি।
পলাশী ছেড়ে মুর্শিদাবাদ যাই। একদিন যে শহর ছিল বাংলা বিহার উড়িষ্যার রাজধানী, তা একটি উপেক্ষিত শহর আজ। নামে মুর্শিদাবাদ জেলা। কিন্তু এর জেলা সদর বহরমপুরে। আর গাছে লালবাগ। এটিই মুর্শিদাবাদের আগে বড় শহর। তবে নবাবী আমলের অসংখ্য কীর্তি চিহ্ন বুকে ধারণ করে আছে মুর্শিদাবাদ। এখানে সর্বত্রই রয়েছে মীরজাফরদের বংশধর। বাইরের কেউ এসে যদি মুর্শিদাবাদে সিরাজের প্রশংসা করেন তবে ক্ষুব্ধ হন মীরজাফরের অধস্তন পুরুষরা। ছোট ছোট পুস্তিকা, যা মুর্শিদাবাদ গাইড হিসাবে পরিচিত, তাতে সিরাজকে অত্যাচারী দুর্বিনীত শাসক হিসাবেই দেখান হয়েছে। বলাবাহুল্য এসব পুস্তিকা লেখা মীরজাফরের বংধশরদের হাতেই।
মুর্শিদাবাদের জাফরগঞ্জ প্রাসাদে রয়েছে মীরজাফর ও তার বংশধরদের কবর। মীরজাফরের কবর দেশ বড় করেই বাধান। কাল পাথর দিয়ে তৈরি যতই ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা হোক না কেন, সাধারণ মানুষের কাছে মীরজাফর যে বিশ্বাসঘাতক, তা তার সমাধির কাছে গেলেই প্রমাণ পাওয়া যায়। দর্শনার্থীরা সুযোগ পেলেই ওই বিশ্বাসঘাতকের কবরে থুতু নিক্ষেপ করে। গালিগালাজও দেয়। আমাদের উপস্থিতিতেই মেদিনীপুর থেকে আসা কয়েক যুবক সমাজ গালিগালাজ করে চলছিল মীরজাফরকে। দর্শনার্থীদের সাথে তার তর্ক-বিতর্ক হয়। মীরজাফরের এক বংশধর কিছুটা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন- কি আর করব আমরা, যে কালিমা লেপন করা হয়েছে আমাদের বংশের উপর, তা আর কখনও মুছে ফেলা যাবে না।
জাফরগঞ্জ প্রাসাদ, যা নিমকহারাম দিউড়ি বলে পরিচিত, সেখানকারই একটি কক্ষে সিরাজকে হত্যা করা হয়েছিল। ইতিহাস বলে, সিরাজকে আটক করার পর জাফরগঞ্জ প্রাসাদে এনে রাখা হয়। ২ জুলাই-১৭৫৭ সালের গভীর রাতে মোহম্মদী বেগ ওই কক্ষে প্রবেশ করে এবং অস্ত্রের আঘাতে হতভাগ্য নবাবের দেহ ছিন্নভিন্ন করে দেয়। এই মোহাম্মদী বেগই প্রতিপালিত হয়েছিল, নবাব আলীবর্দীর কাছে।
সিরাজকে হত্যার পর মীরনের আদেশে তার দেহ হাতির পিঠে চাপিয়ে সমস্ত মুর্শিদাবাদ ঘোরান হয়। এরপর লাশ ফেলে দেয় মুর্শিদাবাদ শহরের পথপাশে আবর্জনা স্তূপের কাছে। মীরন আদেশ দেয় কেউ যেন ওই লাশ সৎকার না করে। কিংবা ওখান থেকে সরিয়ে না নেয়। মীরনের ভয়ে সেদিন কেউ সিরাজের লাশের কাছ যেতে পারেনি। কিন্তু একজন ছিলেন ব্যতিক্রমী। মীর্জা জয়নাল আবেদীন তাঁর নাম। অত্যন্ত বুজর্গ ব্যক্তি। মুর্শিদাবাদের সবাই তাঁকে সমীহ করতেন। রাজনীতির সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন না।
মীর্জা জয়নাল আবেদীন সিরাজের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে ব্যথিত হন। আরও ব্যথিত হন তার লাশ সৎকার না হওয়ায়। তিনি ছুটে যান মীরজাফরের কাছে। তাঁকে বলেন- “মীরজাফর, তোমার যা উদ্দেশ্য ছিল তা তো সফল। তুমি অন্তত সিরাজের লাশটি আমাকে সৎকার করতে দাও।” জয়নাল আবেদীন সিরাজের লাশ গোসল করিতে কাফন পরিয়ে ভাগীরকথী নদীর ওপারে (পশ্চিম) খোশবাগে নিয়ে যান। প্রাণভয়ে সেদিন জানাজাতেও কেউ শরিক হতে পারেননি। জয়নাল আবেদীন সন্তারে মত অত্যন্ত যত্ন সহকারে খোশবাগে নবাব আলীবর্দীর কবরের কাছে সিরাজের লাশ সমাহিত করেন।
বাগান ঘেরা খোশবাগ নবাব আলীবর্দী নিজে তৈরি করেছিলেন। এটিও আজ মুর্শিদাবাদের দর্শনীয় স্থান। ভারতীয় পুরাকীর্তি বিভাগ ১৯১৫ সালে খোশবাগ অধিগ্রহণ করে। আলীবর্দী ও সিরাজ ছাড়াও লুৎফর কবর আছে খোশবাগে। আর আছে সিরাজের ভাই মীর্জা মেহেদীর কবর। মীর্জা মেহিদীকেও সিরাজ হত্যার পর পরই মীরনের আদেশে হত্যা করা হয়। আরও আছে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের ১৭টি কবর। সিরাজের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার ওই ১৭ অনুরাগী রাজমহল থেকে এসেছিলেন খোশবাগে সিরাজের কবর জিয়ারতে। মীরন তাদেরক হত্যা করে। খোশবাগের আরও দু’টি কবরকে অনেকে ঘসেটি বেগম ও আসিনা বেগমের কবর হিসাবে চিহ্নিত করে থাকেন। এ নিয়ে অবশ্য ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদে আছে। প্রচলিত ইতিহাস অনুযায়ী ঘসেটি বেগম ও সিরাজ মাতা আমিনা বেগমকে ঢাকাতে নদীবক্ষে ঢুবিয়ে হত্যা করা হয়। আবার কেউ কেউ বলেন যে, তাদেরকে হত্যার পর লাশ আনা হয়েছিল মুর্শিদাবাদে এবং তাদেরকে কবরস্থ করা হয় খোশবাগেই।
প্রকৃতপক্ষে আজ মুর্শিদাবাদে সিরাজ-উদ-দৌলার বংশের কেউ-ই নেই। তার সমস্ত সম্পত্তি ও দখল করেছিল মীরজাফরের বংশধরেরা। সিরাজের স্মৃতি চিহ্ন যাতে মুর্শিদাবাদে না থাকে এ জন্য, তার তৈরি হীরাঝিল প্রাসাদ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। পরে বলা হয় যে তা ভাগীরথী গর্ভে বিলীন হয়েছে। সিরাজের তৈরি ইমাম করাও পুড়িয়ে দেয়া হয়।
পলাশী যুদ্ধের ২শ’ ৩৭ বছরের মাথায় মুর্শিদাবাদে আজও সিরাজের স্মৃতি রক্ষায় কার্যত কিছুই করা হয়নি। হাজার দুয়ারি প্রাসাদে সিরাজের স্মৃতিসংবলিত অনেক কিছুই আছে সত্য, তবে তা সিরাজের প্রকৃত পরিচয়, তার চরিত্র ও আত্মত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরত যথেষ্ট নয়। সিরাজের নামে আলাদা মিউজিয়ামও প্রয়োজন ছিল মুর্শিদাবাদে।
খোশবাগ থেকে নৌকায় ভাগীরথী পার হয়ে লালবাগে ফেরার সময় সহযোগী ছিলেন মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গার নুরুল ইসলাম। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তিনি। বললেন, সিরাজকে যতই আড়াল করার চেষ্টা হোক না কেন, আমাদের কাছে তিনিই বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। আর মীরজাফররা বিশ্বাসঘাতকই।
See more at: http://shomoy24.com/%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C-%E0%A6%89%E0%A6%A6-%E0%A6%A6%E0%A7%8C%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%AA%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6/#sthash.MNMjZPAy.dpuf
No comments:
Post a Comment