Thursday 22 June 2017

নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও পলাশীর যুদ্ধ


নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও পলাশীর যুদ্ধ

তানভীর আহমেদ
বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন নবাব আলীবর্দী খাঁর দৌহিত্র। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে সংঘটিত যুদ্ধে পরাজয় এবং পরবর্তী সময়ে তার মৃত্যুর পর ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের সূচনা ঘটে। তাই ঐতিহাসিকভাবে নবাব আলীবর্দী খাঁ ও নবাব সিরাজউদ্দৌলার শাসনকাল এবং পলাশীর যুদ্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বলে বিবেচিত। প্রকৃতপক্ষে পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে ভারতবর্ষের ইতিহাসের মোড় ঘুরে যায়। প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা, ক্ষমতার প্রতি মোহ, অর্থের প্রতি লোভ ও চারিত্রিক অধঃপতন ছিল নবাবপরিবারের বৈশিষ্ট্য। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হলো যে, শঠতা ও কূটচালের মাধ্যমে নবাব আলীবর্দী খাঁ যেভাবে নবাব সরফরাজ খাঁকে পরাজিত ও হত্যা করেছিলেন, ঠিক একইভাবে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ক্ষমতা ও পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

নবাব আলীবর্দী খাঁর শাসনকালে তিনি অধিকাংশ সময় ব্যয় করেছিলেন মারাঠাদের আক্রমণ মোকাবিলায়। নিজের পরিবারের প্রতি তিনি উদাসীন না হলেও অনেক অযাচিত ঘটনার সম্মুখীন তাকে হতে হয়েছিল। এর মধ্যে সিরাজউদ্দৌলা কর্তৃক আজিমাবাদ-পাটনা অবরোধ অন্যতম। মাতামহ আলীবর্দী দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলাকে তার উত্তরাধিকারী ঘোষণা করে দৌহিত্রের এ অবাধ্যতার সমাপ্তি ঘটান। কিন্তু এ ঘোষণা সিরাজকে মসনদপ্রত্যাশী অন্যদের কাছে চক্ষুশূল করে তোলে। এছাড়া রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও ষড়রিপুর জন্য খ্যাত সিরাজকে পরবর্তী উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করার ঘোষণা পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের আতঙ্কিত করে তোলে। তবে এ সময় এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যায়; যার ফল সিরাজকে ভোগ করতে হয়েছিল। নবাব আলীবর্দী খাঁ তার জ্যেষ্ঠ জামাতা নওয়াজিশ মোহাম্মদ খানকে জাহাঙ্গীরনগরের নায়েবে নাজিম নিযুক্ত করেছিলেন। এছাড়া তাকে সহায়তার জন্য আলীবর্দী খাঁ হোসেনকুলী খান নামে তার একজন দক্ষ সভাসদকে নিযুক্ত করেন।

 নওয়াজিশ মোহাম্মদ খানের স্ত্রীই ছিলেন আলীবর্দী খাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা মেহের-উন-নিসা, যিনি ঘসেটি বেগম বলে পরিচিত। হোসেনকুলী খান জাহাঙ্গীরনগরে না থেকে মুর্শিদাবাদে অবস্থান করে তার দাফতরিক কাজ চালাতেন। কিন্তু নায়েবে নাজিমের সঙ্গে সুসম্পর্কের পাশাপাশি তিনি (হোসেনকুলী খান) নায়েবে নাজিমের স্ত্রী ঘসেটি বেগমের সঙ্গেও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তোলেন, যা শালীনতার সীমা অতিক্রম করে। পরবর্তী সময়ে এ সম্পর্ক সিরাজের মা আমিনা বেগম পর্যন্ত গড়ায়। বিষয়টি নিয়ে নবাব আলীবর্দী খাঁ ও তার স্ত্রী শরফ-উন-নিসা খুব বিচলিত হয়ে পড়েন। নবাবপরিবারের এ কলঙ্ক মোচনের দায়িত্ব আলীবর্দী খাঁ সিরাজউদ্দৌলাকে দেন। সিরাজ জাহাঙ্গীরনগরের রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে হোসেনকুলী খানকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় সিরাজের শত্রু ও মিত্রপক্ষ নির্ধারিত হয়ে যায়।

বাংলার মসনদে রাজা, সুলতান, সুবেদার ও নবাবসহ যতজন শাসক আরোহণ করেছিলেন, নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন তাদের সবার মধ্যে ব্যতিক্রম। কারণ রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ কম বয়সী সিরাজের দেশপ্রেমে কোনো ঘাটতি ছিল না। এছাড়া সিংহাসনে আরোহণ করার পর তিনি নিজেকে পুরোপুরি পাল্টে ফেলেন। মাতামহ আলীবর্দী খাঁ মৃত্যুশয্যায় তাকে যেসব নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলেন, তা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে কিছু নির্দেশনা তার বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একমাত্র মাতামহের নির্দেশনার জন্যই সিরাজ তার নিজ পরিবারের বিশ্বাসঘাতক সদস্যদের বিরুদ্ধে সঠিক সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হন। বাংলার মোগল সুবেদার শাহ সুজার কাছ থেকে কৌশলে ইংরেজরা ১৬৫১ সালে বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অনুমতি আদায় করার পর থেকে তারা বাংলায় একচেটিয়া বাণিজ্য করতে থাকে।

 এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বাংলার সুবেদারদের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধ তৈরি হয়। এ বিরোধ পরবর্তীকালে সংঘর্ষ ও শেষে যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায়। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব ইংরেজদের ক্ষমা করে আবার বাণিজ্য করার অনুমতি দিলে ইংরেজরা সাম্রাজ্য বিস্তারের স্বপ্ন দেখা শুরু করে।
১৭৫৬ সালের ১৫ এপ্রিল নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাংলার মসনদে আসীন হন এবং তার পূর্ণ নাম ও পদবি হয় নবাব মনসুর-উল-মুলক মির্জা মোহাম্মদ শাহ কুলী খান সিরাজউদ্দৌলা হজরত জঙ বাহাদুর। সিংহাসনে আরোহণ করেই সিরাজ বুঝতে পারেনÑ বাইরের শত্রুর আগে তাকে ঘরের শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।

 এদের মধ্যে ছিলেন খালা ঘসেটি বেগম, খালা মোমেনা বেগমের ছেলে পূর্ণিয়ার শাসনকর্তা শওকত জঙ ও আলীবর্দী খাঁর বৈমাত্রেয় বোনের স্বামী মীর জাফর আলী খান। এখানে উল্লেখ্য যে, আলীবর্দী খাঁ রাস্তা থেকে তুলে এনে মীর জাফরকে নিজের বোনের সঙ্গে বিয়ে দেন। এছাড়া তাকে উড়িষ্যার নায়েবে নাজিম নিয়োগ করা হলে কাপুরুষতার কারণে তিনি সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন। এর পর তাকে সেনাবাহিনীর প্রধান বখশি ও প্রধান সেনাপতি পদে নিযুক্ত করা হয়। আলীবর্দী খাঁর জীবদ্দশায় মীর জাফর তার বিরুদ্ধে একাধিকবার বিদ্রোহ করে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। ফলে আলীবর্দী খাঁ তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। কিন্তু পরে নবাবপরিবারের সদস্যদের অনুরোধে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করেন তিনি। এখানে লক্ষণীয়, দূরদর্শী আলীবর্দী খাঁ আবেগকে প্রশ্রয় না দিয়ে যদি হোসেনকুলী খানের মতো একই ব্যবস্থা মীর জাফরের বিরুদ্ধেও নিতেন, তাহলে পরে বাংলার ইতিহাস পাল্টে যেত।

সিরাজউদ্দৌলা মসনদে বসেই প্রশাসনে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসেন। মীর জাফরকে সেনাবাহিনীর প্রধান বখশির পদ থেকে সরিয়ে মীর মদনকে সেখানে নিয়োগ দেন। এছাড়া মোহনলালকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করা হয়। এরপর সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের কলকাতায় অবস্থিত কাশিমবাজার কুঠির ব্যাপারে মনোযোগী হন। কারণ সিরাজউদ্দৌলা তাদের এ দেশে শুধু বণিক ছাড়া আর কিছু ভাবেননি। এ কারণে ১৭৫৬ সালের ২৯ মে কাশিমবাজার কুঠি অবরোধ করা হয়। ফলে ইংরেজরা নবাবের হাতে যুদ্ধাস্ত্র তুলে দিয়ে মুচলেকার মাধ্যমে এ যাত্রায় মুক্তি পায়। কলকাতার নাম বদল করে নবাব আলীবর্দী খাঁর নামানুসারে আলীনগর রাখা হয়।

এর পরই সিরাজউদ্দৌলা তার খালাতো ভাই পূর্ণিয়ার শাসনকর্তা শওকত জঙের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হন। কারণ মসনদপ্রত্যাশী শওকত জঙ কৌশলে তৎকালীন মোগল সম্রাটের প্রধানমন্ত্রী মীর শিহাব-উদ-দীন উমাদ-উল-মুলকের কাছ থেকে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার সুবেদারির সনদ লাভ করে নিজেকে নবাব হিসেবে ঘোষণা দেন এবং সিরাজউদ্দৌলাকে মসনদ ত্যাগে হুমকি দিতে থাকেন। ফলে সিরাজউদ্দৌলা তার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। এ অভিযানেই শওকত জঙের মৃত্যু ঘটে। এদিকে কলকাতার শাসনকর্তা মানিক চাঁদের বিশ্বাসঘাতকতায় ১৭৫৭ সালের ১ জানুয়ারি ইংরেজরা কলকাতা পুনরুদ্ধার করে। ফলে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলাকে আবার অভিযান পরিচালনা করতে হয়। কিন্তু এ অভিযান পুরোপুরি সফল হয়নি। সিরাজউদ্দৌলা ১৭৫৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ইংরেজদের সঙ্গে সন্ধি স্থাপনে বাধ্য হন, যা আলীনগরের সন্ধি বলে খ্যাত। এরই মধ্যে ইংরেজরা নবাবপরিবারের অন্তর্দ্বন্দ্ব সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল হয়ে যায়। এ ষড়যন্ত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন জগৎশেঠ। উল্লেখ্য, এ জগৎশেঠের পরিবারই বিশ্বাসঘাতকতা করে নবাব সরফরাজ খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আলীবর্দী খাঁকে সহায়তা করেছিলেন।

ইংরেজরা জগৎশেঠের মাধ্যমে মীর জাফরকে মসনদে বসানোর চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে ফেলে। পরিকল্পনায় আরও যোগ দেন ঘসেটি বেগম, মীর জাফরের ছেলে মীরন, মীর জাফরের জামাতা মীর কাশিম, রাজা দুর্লভ রায়, উমিচাঁদ, রাজা রাজবল্লভ, মীর খোদা ইয়ার খান লতিফ প্রমুখ। ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে ১৭৫৭ সালের ৫ জুন মীর জাফরের একটি গোপন চুক্তি সম্পাদিত হয়, যার ফসল ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। চুক্তি সম্পাদনের পরই রবার্ট ক্লাইভ পলাশীর প্রান্তরে সেনা সমাবেশ ঘটান। সিরাজউদ্দৌলাও তার সেনাবাহিনী নিয়ে অগ্রসর হন। কিন্তু এ সময় মীর মদনের পরামর্শ উপেক্ষা করে মীর জাফরের কোরআন শরিফে হাত রেখে শপথের বিনিময়ে তাকে পূর্বপদে বহাল করেন। ইংরেজদের সঙ্গে গোপন চুক্তির বিষয়ে সিরাজউদ্দৌলা অবগত হলেও মীর জাফরের অনুগত সেনাদের সংখ্যা ও যুদ্ধাস্ত্রের পরিমাণ বিবেচনা করে তার বিরুদ্ধে তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

এর ফলে সবচেয়ে মূল্যবান মুহূর্তে সিরাজউদ্দৌলা সাহসিকতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হন। অবশেষে ঐতিহাসিক পলাশী যুদ্ধের ক্ষণ ঘনিয়ে আসে। রবার্ট ক্লাইভ ৩ হাজার সেনাসহ অগ্রসর হতে থাকেন। অন্যদিকে নবাব সিরাজউদ্দৌলা প্রায় ৫০ হাজার সেনাসহ অগ্রসর হন। কিন্তু সংঘর্ষের প্রথম পর্যায়েই বিশ্বস্ত সেনাপতি মীর মদনের মৃত্যু সিরাজউদ্দৌলাকে হতভম্ব করে দেয়। বার বার অনুরোধ, অনুনয় ও শেষে নিজের পাগড়ি মীর জাফরের পায়ের কাছে সমর্পণ করেও সিরাজউদ্দৌলা মীর জাফরকে যুদ্ধে সক্রিয় করতে ব্যর্থ হন। ফলে বাধ্য হয়ে সিরাজউদ্দৌলা মীর জাফরের পরামর্শে যুদ্ধ স্থগিতের নির্দেশ দেন। যার কারণে ইংরেজদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টিকারী বিশ্বস্ত সেনাপতি মোহনলাল যুদ্ধ শিবিরে ফিরে আসতে বাধ্য হন। এতে সিরাজউদ্দৌলার সেনাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ সুযোগ ইংরেজ সেনারা গ্রহণ করেন। এভাবে পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ঘটে। সিরাজউদ্দৌলা কিছু বিশ্বস্ত অনুচর নিয়ে রাজধানীতে ফিরে যান। কিন্তু ২৯ জুন তাকে পলাতক অবস্থায় স্ত্রী ও কন্যাসহ আটক করা হয়। এর পর ৩ জুলাই মীর জাফরের ছেলে মীর সাদিক আলী খান মীরনের নির্দেশে মোহাম্মদী বেগ সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করেন। উল্লেখ্য যে, অনাথ মোহাম্মদী বেগ আলীবর্দী খাঁর স্ত্রী শরফ-উন-নিসার গৃহে লালিত-পালিত হয়েছিলেন এবং প্রচুর ধনসম্পদ দান করে তিনি তাকে বিত্তশালী করেছিলেন।

সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বাংলার স্বাধীনতার সূর্যও অস্তমিত হয়। সিরাজের স্ত্রী লুৎফ-উন-নেসা ও তার একমাত্র মেয়ে উম্মে জোহরা জাহাঙ্গীরনগরের জিঞ্জিরায় বন্দি জীবন শেষে ৮ বছর পর মুর্শিদাবাদে ফিরে যান। বহু অনুরোধের পর তিনি খোশবাগে অবস্থিত তার স্বামীর কবর তত্ত্বাবধানের সুযোগ পান। কিন্তু তিনি বেশি দিন বাঁচেননি। এর কিছু দিন পর তাকে তার স্বামীর কবরের পাশে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় এবং তাকে সেখানেই সমাহিত করা হয়। সিরাজের মেয়ে উম্মে জোহরার সঙ্গে সিরাজের ভাই ইকরাম-উদ-দৌলার ছেলে মুরাদ-উদ-দৌলার বিয়ে হয় এবং তাদের চার মেয়ে থেকেই সিরাজের বংশ প্রসারিত হতে থাকে। তবে সম্প্রতি ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় ইতিহাসের অধ্যাপক ড. অমলেন্দু দে তার ‘সিরাজের পুত্র ও বংশধরদের সন্ধানে’ শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, মোহনলালের বোন মাধবী ওরফে হীরা ওরফে আলেয়ার গর্ভে সিরাজের একটি পুত্রসন্তান জন্ম নেয়। পলাশীর যুদ্ধের পর মোহনলাল ওই ছেলেটিকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে ময়মনসিংহে আশ্রয় নেন।

 ময়ময়সিংহের জমিদার শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরী ছেলেটিকে দত্তক গ্রহণের মাধ্যমে আশ্রয় দিতে সম্মতি জানান। পরবর্তী সময়ে শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র কৃষ্ণগোপাল চৌধুরী ছেলেটিকে দত্তক নিয়ে নামকরণ করেন যুগলকিশোর রায় চৌধুরী। কিন্তু কৃষ্ণগোপাল দত্তক নেয়ার সময় জানতেন না, সে সিরাজের ছেলে।
পলাশীর যুদ্ধের বিশ্বাসঘাতকদের পরিণতি ছিল সিরাজউদ্দৌলার চেয়েও করুণ। মীর জাফরের মৃত্যু হয় দুরারোগ্য কুষ্ঠরোগে। সিরাজের হত্যাকারী মোহাম্মদী বেগের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে। একপর্যায়ে তিনি কূপে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। মীরনকে ইংরেজরা হত্যা করে গুজব রটিয়ে দেনÑ মীরন বজ্রপাতে মারা গেছেন। ঘসেটি বেগমের মৃত্যু হয় নৌকাডুবিতে। জগৎশেঠকে গঙ্গা নদীতে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়। রাজা দুর্লভ রায়ের মৃত্যু হয় কারাগারে ভগ্নস্বাস্থ্যের কারণে। উমিচাঁদের মৃত্যু হয় কারাগারে। পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা পরোক্ষভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উপনিবেশে পরিণত হয়। এর পর ক্রমেই পুরো ভারতবর্ষ ব্রিটিশদের শাসনাধীনে চলে যায়। মসনদলোভী কিছু ব্যক্তির জন্য পুরো ভারতবর্ষবাসীকে ১৯০ বছর ব্রিটিশদের অধীনে শাসিত হতে হয়। এজন্য পলাশীর যুদ্ধ পুরো ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। হ


বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট
অব কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড
পাবলিকেশন্সের সহকারী পরিচালক

http://www.alokitobangladesh.com/todays/details/184481/2016/06/23

No comments:

Post a Comment