বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা প্রসঙ্গে
আহমদ ছফা
অধ্যাপক আহমদ শরীফ ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে আহমদ ছফা সম্পর্কে বলেছিলেন, দৃষ্টি তার স্বচ্ছ, বাক্য তার ঋজু, বক্তব্য স্পষ্ট, উদ্দেশ্য তার সাধু। মাটি ও মানুষের প্রতি প্রীতিই তার কল্যাণকামিতা ও কর্মপ্রেরণার উৎস এবং তার প্রাণ শক্তির আকর। এ জন্যেই ক্ষতির ঝুঁকি নিয়ে সে সত্য কথা বলার সৎসাহস রাখে। এবং গুণই তাকে আজকের লিখিয়ে বলিয়েদের সমাজে অনন্য করেছে… সুবিধাবাদীর ‘Life is a compromise’ তত্ত্বে ছফার আস্থা নেই। আজকের বাঙলাদেশে এমনি পষ্ট ও অপ্রিয়ভাষী আরো কয়েকজন ছফা যদি আমরা পেতাম, তাহলে শ্রেয়সের পথ স্পষ্ট হয়ে উঠত।’ আহমদ শরীফের মতো একজন মনিষীর এমন মন্তব্যের পরে আহমদ ছফা’র মেধা, মনন, প্রজ্ঞা সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলা সঙ্গত বলে মনে হয় না। আহমদ ছফা’র সমাজ চেতনা, রাষ্ট্র ও সমাজের অবিচার, অনাচার এবং বুদ্ধিজীবী নামধারী চাটুকারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, প্রতিবাদ করার সক্ষমতা, দৃঢ়তা এবং ঋজু চরিত্রের কথাও বয়ান করার কিছু নেই। তার জন্ম ১৯৪৩ সালের ৩০ জুন, আর প্রয়াণ ২০০১ সালের ২৮ জুলাই।
মহান, কৃর্তিমান ও সাহসী আহমদ ছফা’র প্রতি আমাদের অসীম শ্রদ্ধা। শ্রদ্ধা জানানোর জন্য অন্য পথে না গিয়ে প্রাচ্যবিদ্যা প্রকাশনী’র ১৯৯৭ সালে আহমদ ছফা’র ‘সাম্প্রতিক বিবেচনা : বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ বইটির সাম্প্রতিক ভাবনা অংশটি প্রকাশক ড. লেনিন আজাদের অনুমতি নিয়ে ঈষৎ সংক্ষেপিত আকারে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস শীর্ষক প্রবন্ধ ও মূল বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে। যে রচনাটি ধারাবাহিকভাবে ছাপার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার পেছনে যে যুক্তি কাজ করেছে তাহলো : সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ ও সৃষ্টিশীল লেখক মাত্রই ভবিষ্যতকে যে আগেভাগেই বুঝতে এবং উপলব্ধি করতে পারেন, এ লেখাটি তারই একটি উদাহরণ। আহমদ ছফা সেদিন যেমন প্রাসঙ্গিক ছিলেন, ১৯৯৭ সালে আর আজও তেমনি প্রাসঙ্গিক রয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন – সম্পাদক]
সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে জাতীয় মধ্যশ্রেণীভুক্ত বুদ্ধিজীবীরা সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতা এই রাষ্ট্রীয় চতুঃস্তম্ভের জয়ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত করে ফেলেছিলেন। রেডিও টেলিভিশনে তোষামোদ, চাটুকারিতা, নির্লজ্জ আত্মপ্রচার মানুষের সুস্থ কাণ্ডজ্ঞানকে এক রকম মুছে ফেলতে উদ্যত হয়েছিল। সন্ত্রাস, গুম, খুন, ছিনতাই, দস্যুতা, মুনাফাখোরী, কালোবাজারি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্বিচার হত্যা এগুলো একান্তই নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মানুষের হনন প্রবৃত্তি, লোভ রিরংসার এ রকম নির্লজ্জ আত্মপ্রকাশের সিংহ দুয়ার খুলে দেয়ার ব্যাপারে তৎকালীন সরকার মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। অন্যরা সরকারি কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করতে গিয়ে একই রকম নিষ্ঠুর অমানবিক কর্মকাণ্ডের অনুষ্ঠান করেছে। এই ধরণের একটি মাৎস্যন্যায় পরিস্থিতিতে বুদ্ধিজীবীদের অবশ্যই একটি পালনীয় ভূমিকা ছিল, একটা দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তাঁরা সেদিন তাঁদের ওপর আরোপিত দায়িত্ব কর্তব্য বিস্মৃত হয়ে যাবতীয় অমানবিক কর্মকাণ্ডে সরকারের মদদ দিয়ে নিজেদের আখের গুছাবার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সামগ্রিক পরিস্থিতির এরকম অবনতির বহুবিধ গভীরতরো কারণ নিশ্চয়ই বর্তমান ছিল এবং সেগুলোর উৎসও ছিল জাতীয় রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতির ধারাবাহিক ইতিহাসের গভীরে প্রোথিত।
আমি চারদিকে যা ঘটছে খোলা চোখে দেখে প্রতিক্রিয়াগ্রস্থ হয়ে আমার শঙ্কা, সন্দেহ এবং আতঙ্কের অভিব্যক্তি ছাপার হরফে প্রকাশ করেছিলাম। আমি যা লিখেছিলাম, তার একটা বাক্যও আমাকে গবেষণা করে আবিষ্কার করতে হয়নি। আমার চারপাশে যা ঘটছে দেখে, চারপাশের মানুষের মুখের কথা শুনে আমার বয়ানটুকু তৈরি করেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল এ অবস্থা চলতে পারে না, এই মিথ্যার পাহাড় এক সময়ে ধ্বসে পড়তে বাধা। আমি এই বইটিতে যে সকল সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলাম, তার প্রতিটি বাক্য অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেছে।
শেখ মুজিবুর রহমান বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পথ পরিহার করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা আরোপ করলেন এবং সর্বময় ক্ষমতার কর্তা হয়ে বসলেন। সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদ এই চারটি প্রতীতিকে জাতীয় মূলনীতি হিসেবে নির্ধারণ করলেন বটে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেগুলো একদলীয়, আরো সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে এক ব্যক্তির শাসন ত্রাসনের হাতিয়ারে পরিণত হলো। তার মর্মান্তিক পরিণতি এই হলো যে, শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নিহত হতে হলো। রাষ্ট্রক্ষমতা বেসামরিক একনায়কের হাত থেকে সামরিক একনায়কের হাতে হস্তান্তরিত হলো। একের পর এক সমর নায়কেরা সমাজের পাতাল প্রদেশ থেকে পশ্চাদপদ ধ্যান ধারণা, ধর্মান্ধতা শুধু জাগিয়ে তুলে ক্ষান্ত হননি, সেগুলোর আইনগত স্বীকৃতি দান করে আমাদের জাতীয় জীবনের গন্তব্য অধিকতরো ধোঁয়াটে এবং কুয়াশাচ্ছন্ন করে তুলেছেন। স্বাধীনতার শুরু থেকেই বুদ্ধিজীবীরা একজোট হয়ে শেখ মুজিবের অগণতান্ত্রিক একদলীয় শাসনের বিরুদ্ধে যদি রুখে দাঁড়াতেন তাহলে আমাদের জাতিকে এতোটা পথ পশ্চাত প্রত্যাবর্তন করতে হতো না।
যেকোনো দেশের বুদ্ধিজীবীরা যদি রাষ্ট্রযন্ত্রের অনাচার অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে অসম্মত হন সেই দেশটির দুর্দশার অন্ত থাকে না। বাংলাদেশ সেই রকম একটি দুর্দশাগ্রস্থ দেশ। এই দুর্দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উদ্যোগ, কোনো প্রয়াস কোথাও পরিদৃশ্যমাণ নয়।
বর্তমানে সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা যে ভূমিকাটি পালন করছেন, তা কিছুতেই বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত সময়সীমার মধ্যে আওয়ামী বাকশালী বুদ্ধিজীবীরা যে কাপুরুষোচিত ভূমিকা পালন করেছেন, তার চাইতে বেশি আলাদা নয়। তাঁদের কথাবার্তা শুনে মনে হয় বাহাত্তর তেয়াত্তর সাল থেকে টাইম মেশিনে চড়ে তাঁরা এই সাতানব্বই সালে পদার্পণ করেছেন। বাহাত্তর সালে তাঁরা যেভাবে যে ভাষায় অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলতেন, বাঙালি সংস্কৃতির কথা বলতেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতি অঙ্গীকার প্রকাশ করতেন, এই সাতানব্বই সালেও তাঁরা একই ভঙ্গিতে একই ভাষায় সেই পুরানো বাঁধাবুলিগুলো উচ্চারণ করে যাচ্ছেন।
পরিবর্তন যেটুকু হয়েছে তাঁদের কণ্ঠস্বর এখন অধিকতরো দ্বিধা এবং জড়িমাহীন। অনেকটা স্বৈরাচারী অবস্থানে দাঁড়িয়ে তাঁরা এই প্রত্যয়সমূহ উচ্চারণ করে যাচ্ছেন। সাজানো মঞ্চে দাঁড়িয়ে মাইনেভোগী নটনটীর মতো সেই পুরোনো কথা বলে যাচ্ছেন। তাঁদের কণ্ঠস্বর থেকে অনুভব কিংবা উপলব্ধির কোনো তড়িৎ সঞ্চারিত হয় না। তাঁদের উচ্চারণ থেকে কোনো গাঢ় প্রত্যয়ের দীপ্তি জনমানসে বিকীরিত হয় না।
বাংলাদেশের মধ্যশ্রেণীভুক্ত এই ভাড়াখাটা বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে সকলের না হলেও কারো কারো অল্পস্বল্প শৈল্পিক অঙ্গীকার এবং সামাজিক সুকৃতি ছিল। কিন্তু শাসক দলের চালকলা খেকো বামুনের ভূমিকা পালন করতে গিয়ে তাঁদের সমস্ত অঙ্গীকার এবং সুকৃতি প্রায় নিঃশেষ করে ফেলেছেন। বর্তমানে তাঁদের অবস্থা অনেকটা ‘জয় জয় করিয়া বাড়ে রাজার ব্রাহ্মণের’ মতো। সরকারি বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ এক সময়ে শিল্পকলার নানা বিষয়ে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। সরকারি সুবিধার বলয়ে প্রবেশ করার পর সর্বত্র তাঁদের কণ্ঠস্বর ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে থাকলো। প্রদর্শন করার যতোগুলো মাধ্যম আছে সবখানে তাঁদের পবিত্র মুখমন্ডল আলো করে জ্বলতে থাকলো। সংবাদপত্রের পাতায় পাতায় অমৃতবর্ষী বাণী ছড়িয়ে দিতে লেগে গেলেন।
সরকারি প্রচারযন্ত্রের অংশে পরিণত হওয়ার পর এই সকল সৃষ্টিশীল মানুষ সম্পূর্ণরূপে সুকুমার অনুভূতি এবং কল্পনাশক্তি রহিত রোবটে পরিণত হয়েছেন। তাঁদের অবস্থা দলীয় ক্যাডারের চাইতে অধিক শোচনীয়। কারণ ক্যাডারের কাজ চিন্তা করা নয়, নেতা বা দলের হুকুম তামিল করা। কিন্তু একজন বুদ্ধিজীবীকে চিন্তা করতে হয়। কিন্তু চিন্তার বদলে যদি তিনি চিন্তা করার ভান করেন পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে বাধ্য। তাই সরকারি বুদ্ধিজীবীরা যখন বলেন আমরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ সাধন করছি, মৌলবাদ ঠেকাচ্ছি এবং বাঙালি সংস্কৃতির নিঃশর্ত বিকাশ সুনিশ্চিত করছি, তাঁদের এই উচ্চারণগুলো সত্য বলে মেনে নেয়ার কোনো যুক্তি নিজেরাও দাঁড় করাতে পারবেন না। সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন বলেই যত্রতত্র তাঁরা তোতা পাখির মতো এ বুলিগুলো উচ্চারণ করছেন। তাঁদের রচনার মধ্যেই মানসিক বন্ধ্যাত্বের চিহৃ যে কেউ খুঁজে বের করতে পারেন।
তাঁরা যখন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কথা বলেন, শুনে মনে হয় আবাহনী মোহামেডান টিমের ভাড়া করা বিদেশী খেলোয়াড়দের মতো, তাঁদেরও ভাড়া করে আনা হয়েছে। তাঁরা যখন বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলেন শুনে মনে হবে, টেক্সট বই থেকে কথাগুলো মুখস্থ করে হাজেরান মজলিশের শ্রোতাদের সামনে বমি করে দিচ্ছেন। তাঁরা যখন মৌলবাদের বিরুদ্ধে হুঙ্কার তোলেন, সেটাকে গোদা পায়ের লাথির সঙ্গে তুলনা করা যায়। হুঙ্কার দিয়ে কি মৌলবাদ প্রতিরোধ সম্ভব? তাঁদের মধ্যে স্বচ্ছ চিন্তা কোথায়? চিন্তার সমর্থনহীন ঢোলা উচ্চারণ এবং শোরগোল কি মৌলবাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিষেধক বিবেচিত হতে পারে? এই সকল বুদ্ধিজীবীদের অতীত অত্যন্ত ঘৃণ্য এবং কলঙ্কিত। পাকিস্তান আমল থেকেই রাষ্ট্রশক্তির সহায়তায় তাঁরা ননী–মাখন লুট করে এসেছেন।
তাঁদের অতীতদিনের কর্মকাণ্ড ঘেঁটে আসল পরিচয় উদঘাটন করা হলে যে কেউ বুঝতে পারবেন, তাঁরা কিছুতেই আমাদের জনগণের বন্ধু হতে পারেন না। তাঁদের উচ্চ কণ্ঠ চিৎকারের মধ্যদিয়ে নির্লজ্জ সুবিধাবাদ ছাড়া অন্য কোনো প্রত্যয়ই ধ্বনিত হয় না। বাহাত্তর সালে তাঁরা যা করেছেন, জোরের সঙ্গে তার পুনরাবৃত্তি করে চলেছেন মাত্র।
বাহাত্তর সাল আর ছিয়ান্নব্বই সাল এক নয়। বাহাত্তর সালে প্রতিক্রিয়ার শক্তি ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। মৌলবাদের অবস্থান ছিল তখন টলটলায়মান। এখন প্রতিক্রিয়ার শক্তি অনেক বেশি সুসংহত এবং সংগঠিত। মৌলবাদ অক্টোপাশের মতো ক্রমাগতভাবে আমাদের সমাজকে চারপাশ থেকে বেস্টন করে ফেলছে। যাঁরা মৌলবাদী তারা শতকরা একশো ভাগ মৌলবাদী। কিন্তু যাঁরা প্রগতিশীল বলে দাবি করে থাকেন তাঁদের কেউ কেউ দশ ভাগ প্রগতিশীল, পঞ্চাশ ভাগ সুবিধাবাদী, পনেরো ভাগ কাপুরুষ, পাঁচ ভাগ একেবারে জড়বুদ্ধিসম্পন্ন।
এই রকমের একটি সমীকরণের মধ্যে ফেললে বর্তমান সরকার দলীয় বুদ্ধিজীবীদের চিহিৃত করা সম্ভব। দিনে দিনে প্রতিক্রিয়ার শক্তি যে হারে সংহত হচ্ছে এবং মৌলবাদের প্রতাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তথাকথিত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা তার বিরুদ্ধে কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরোধ রচনাই করতে পারেননি। আমাদের জনগণ তাঁদেরকে চরিত্রহীন, ভ্রষ্ট সুযোগ সন্ধানী এবং আগ্রাসী শক্তির সহায়ক হিসেবে এরই মধ্যে চিহিৃত করে ফেলেছেন। মুখে তাঁরা যাই বলুন না কেন, আমাদের জনগণকে মুক্তির দিগন্তে পরিচালিত করার কোনো অনুপ্রেরণা তাঁরা দিতে পারেন না যেমন তেমনি আমাদের জাতিকে আপনি মেরুদন্ডের ওপর থিতু হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াবার কোনো কর্মপন্থার নির্দেশ করতেও তাঁরা সত্যি সত্যি অক্ষম। সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবীরাই দেশের একমাত্র বুদ্ধিজীবী নন। যে সকল বুদ্ধিজীবী প্রধান বিরোধী দলটির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে মাঠে ময়দানে হুঙ্কার তুলছেন, যখন তখন যেকোনো উপলক্ষে জমায়েত হচ্ছেন, ভাগে কম পড়ার বেদনাই চিৎকার করে তাঁরা প্রকাশ করে থাকেন। তাঁদের মনন এবং চিন্তা পদ্ধতি আরো সেকেলে, আরো ভয়ানক।
সরকারি বুদ্ধিজীবীদের সামনের দিকে তাকানোর সাহস নেই। কিন্তু এই সকল বুদ্ধিজীবীদের চোখ এবং পা দুই–ই পেছনের দিকে ফেরানো। এক কথায় রাষ্ট্রযন্ত্রের এপাশে ওপাশে যে সমস্ত বুদ্ধিজীবীর অবস্থান তাঁরা জাতি এবং সমাজকে কিছু দেন না, বরং গবাদি পশুর গায়ের এটুলি পোকার মতো সমাজের মানুষের রক্তপান করে নিজেরা মোটা তাজা হতে থাকেন।
দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল এবং ছদ্মবেশী প্রগতিশীল এই উভয় গোষ্ঠিতে পরাজিত করতে না পারলে আমাদের দেশে প্রগতিশীল সংস্কৃতি এবং রাজনীতির উত্থান অসম্ভব। আমাদের দেশের প্রগতিশীল রাজনীতির যে অবস্থা তার সঙ্গে খাটে শোয়া মুমূর্ষূ রোগীর তুলনা করা চলে যার অস্তিত্ব আছে বলে শোনা যায়, কিন্তু তার নড়াচড়া নেই। বামপন্থী রাজনীতির এই করুণ পলায়মান এবং জরাজীর্ণ দশা আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বাঙ্গীন দুর্ভাগ্যের ইঙ্গিত নির্দেশ করে। সুতরাং বর্তমান অবস্থা থেকে প্রগতিশীল রাজনীতি এবং সংস্কৃতিকে উঠে আসতে হলে ছদ্মবেশী প্রগতিশীল এবং মৌলবাদী উভয় গোষ্ঠিকেই পরাজিত করতে হবে। কিন্তু কাজটি সহজ নয়। এই সময়ের মধ্যে আমাদের সমাজ অনেক জটিল হয়ে পড়েছে, বিরাজমান রাজনীতি, অর্থনৈতিক সংগঠন, রাষ্ট্রের চেহারা, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য, ধর্মীয় সামাজিক বদ্ধমত এবং সংস্কারের অনেক কিছু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে সংগ্রামের গতিপথটি ছকিয়ে নিতে হবে।।
(চলবে…)
সূত্র
আমাদের বুধবার
সম্পাদক ও প্রকাশক: আমীর খসরু
ঢাকা, বাংলাদেশ।
ইমেইল: amaderbudhbar@gmail.com
No comments:
Post a Comment