Sunday 16 July 2017

বসনিয়ার মুসলিম ছিটমহল স্রেব্রেনিসার পতন ও মুসলিম গণহত্যায় পশ্চিমাদের ভূমিকা


srebrenica-massacre
বসনিয়ার মুসলিম ছিটমহল স্রেব্রেনিসার পতন ও মুসলিম গণহত্যায় পশ্চিমাদের ভূমিকা:
স্রেব্রেনিসা থেকে পালিয়ে আশা শত শত মুসলমান শহরটি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে আশ্রয় নেয়। জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর শিবিরে। জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর হল্যান্ডের সেনারা (গাড়িতে বসা) সেখানে উপস্থিত থাকলেও তারা উদ্বাস্তুদের নিরাপত্তা বিধান না করে
স্রেব্রেনিসা থেকে পালিয়ে আশা শত শত মুসলমান শহরটি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে আশ্রয় নেয়। জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর শিবিরে। জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর হল্যান্ডের সেনারা (গাড়িতে বসা) সেখানে উপস্থিত থাকলেও তারা উদ্বাস্তুদের নিরাপত্তা বিধান না করে

২০ বছর আগে বসনিয়ায় স্রেব্রেনিসা শহরের পতন এবং এর ফলে সংঘটিত গণহত্যা ছিল তিন পশ্চিমা শক্তি ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের অনুসৃত কৌশলের অন্যতম মূল উপাদান। এটি কিছুতেই আকস্মিক ঘটনা ছিল না, যেমনটি দীর্ঘ দিন ধরে উল্লেøখ করা হয়েছে। জার্মানির নাৎসি বাহিনীর পর ওটাই ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা।
১৯৯৫ সালের জুনে শহরটি ঘেরাও করার পর সার্ব সৈন্যরা চার দিনে আট হাজার পুরুষ ও বালককে হত্যা করে। যদিও এর আগে জাতিসঙ্ঘ মিশনের সৈন্যদের অধীনে শহরটিকে নিরাপদ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। হেগের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে ওই ঘটনাকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং সার্ব নেতা রাদোভান কারাদজিক ও জেনারেল রাতকো লাদিককে ওই গণহত্যার নির্দেশ দেয়ার জন্য বিচারের রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে ডাচ্ সৈন্যদের বিরুদ্ধেও। তারা তাদের সদর দফতরের কাছে আশ্রয় নেয়া কয়েক হাজার উদ্বাস্তুকে উচ্ছেদ করে এবং সার্ব সৈন্যরা যখন পুরুষদের থেকে নারী ও শিশুদের আলাদা করছিল (হত্যার জন্য), তখন তারা তা দেখছিল।
তবে এই গণহত্যার নতুন একটি তদন্তে এমন কিছু তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে, যাতে দেখা গেছে স্রেব্রেনিসা শহরের পতনের সাথে আরো বড় কোনো শক্তি জড়িত ছিল। প্রকাশিত তারবার্তা, এক্সকুসিভ সাক্ষাৎকার এবং ট্রাইব্যুনালের সাক্ষ্য থেকে দেখা যায়Ñ ব্রিটিশ, মার্কিন এবং ফরাসি সরকার মেনে নিয়েছিল যে, রাতকো লাদিক দখল নেয়ার আগে স্রেব্রেনিসাসহ নিরাপদ এলাকা ঘোষিত জাতিসঙ্ঘের অধীনে থাকা তিনটি শহর ছিল অচল এবং তারা যেকোনো মূল্যে শান্তি স্থাপনের জন্য সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোসেভিচের প্রত্যাশিত মানচিত্রের অংশ হিসেবে শহরটি তার কাছে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত ছিল।
তবে স্রেব্রেনিসা সার্বদের হাতে তুলে দিলেও পশ্চিমা শক্তিগুলো এ ব্যাপারে পূর্ণ সচেতন ছিল যে, সার্বিয়ান ‘ডিরেক্টিভ সেভেন’ সৈন্যবাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল জাতিসঙ্ঘের ‘নিরাপদ এলাকা’ ঘোষিত শহরটি থেকে বসনিয়ান মুসলমানদের পুরোপুরি উৎখাত করার। তারা এ-ও জানত লাদিক সার্ব সেনাবাহিনীকে বলেছেন, ‘আমার নির্দেশ, তাদের পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করতে হবে’। কারাদজিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার বাহিনী শহর দখল করলে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া হবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত মার্কিন কূটনীতিক রবার্ট ফ্রাসিউর ওয়াশিংটনে পাঠানো এক রিপোর্টে জানান, ‘নিরাপদ এলাকা’ সার্বদের হাতে হস্তান্তর না করলে মিলোসেভিচ শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন না। এরপর মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা এন্থনি লেক একটি সংশোধিত শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করেন যাতে স্রেব্রেনিসা শহর তাদের হাতে তুলে দেয়ার রূপরেখা ছিল। মার্কিন নীতিনির্ধারক কমিটি জানায়, জাতিসঙ্ঘের সৈন্যদের সরিয়ে নেয়া হবে।
মার্কিন প্রতিরক্ষমন্ত্রীর সাথে একমত প্রকাশ করে ফ্রান্স ও ব্রিটেন। লাদিকের সৈন্যরা যখন স্রেব্রেনিসার দিকে অগ্রসর হয়, পশ্চিমারা তখন শহরটির আসন্ন পতনের সতর্কবার্তা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়। অবজারভার পত্রিকার সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে হল্যান্ড প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জেনারেল ভ্যান ডার উইন্ড বলেছেন, ‘গণহত্যার স্থানে যাতায়াত ও লাশ গণকবরে রাখার জন্য জাতিসঙ্ঘ ৩০ হাজার লিটার পেট্রল সরবরাহ করেছে।’ হত্যাকাণ্ড যখন পুরোদমে চলে তখন শীর্ষস্থানীয় পশ্চিমা মধ্যস্থতাকারীরা লাদিক ও মিলোসেভিচের সাথে সাক্ষাৎ করলেও গণহত্যা নিয়ে কোনো কথা বলেননি। যদিও প্রকাশিত মার্কিন তারবার্তায় জানা গেছে, সিআইএ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সেই হত্যাকাণ্ড সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে।
স্রেব্রেনিসা শহর সার্বদের হাতে তুলে দেয়ায় লন্ডন, ওয়াশিংটন ও প্যারিসের শীর্ষ মহলের সম্মতির বিষয়টি ফোরেন্স হার্টমান নামক সাবেক লা মন্ডে পত্রিকার একজন প্রতিনিধি বিগত ১৫ পনের বছর যাবত সংগ্রহ করেছেন। তার ‘দ্য স্রেব্রেনিসা অ্যাফেয়ার : দ্য ব্লাড অব রিয়েল পলিটিকি’ নামক বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে। হার্টমান ২০০০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সাবেক যুগোস্লøাভিয়ার জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন। ২০০৭ সালে প্রকাশিত তার পূর্ববর্তী বই ‘পিস অ্যন্ড পানিশমেন্ট’-এ বসনিয়ার সরকার গণহত্যার জন্য সার্বিয়াকে হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযুক্ত করার চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর বসনিয়া সরকারের কাছে গণহত্যার গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রকাশ না করার জন্য ট্রাইব্যুনালের বেশ কিছু সিদ্ধান্তের কথা উল্লেøখ করা হয়েছে।
২০০৮ সালের আগস্টে ট্রাইব্যুনাল হার্টমানকে গোপনীয়তা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করে বিচারের মুখোমুখি করে। পরের বছর সেপ্টেম্বরে এই নারী সাংবাদিককে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে সাত হাজার ইউরো জরিমানা করা হয়। ফ্রান্সের একটি ব্যাংক হিসাবে তিনি এই জরিমানার টাকা জমা দেন; কিন্তু আদালত জরিমানা অপরিশোধিত উল্লেøখ করে তাকে সাত দিনের কারাদণ্ড দিয়ে ফ্রান্স সরকারকে আদেশ দেন তাকে আটক করে হেগে পাঠানোর জন্য। যদিও ফ্রান্স সরকার ওই আদেশ পালন করেনি। দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে
http://m.dailynayadiganta.com/?/detail/news/36514

No comments:

Post a Comment