বসনিয়ায় মুসলিম গণহত্যা ও নির্যাতনের নির্মম ইতিহাস।
বসনিয়ার পরিচিতি:
মুসলিম বসনিয়ায় গণহত্যা মানব ইতিহাসে মুসলিম জাতি নিধনের উদাহরণ হিসেবে সর্বকালে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস হতাশা ক্রন্দন ও বিচারের মুখোমুখি হয়ে নিরীহ, নিরস্ত্র মুসলিম বসনিয়ানরা সারা বিশ্বের দিকে চেয়েছিলো কিন্তু কেউ কোন সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। বরং আক্রমণকারীদেরই সুযোগ দেয়া হয়েছে।
কেন এই অবস্থায় ইউরোপীয়ান খ্রিস্টান দেশসমূহের দৃষ্টিতে মুসলিম বসনিয়ার জনগণ অপরাধী এবং তাদের অপরাধ তারা মুসলমান, মুসলিম জাতি। ভূতপূর্ব যুগোস্লাভ প্রজাতন্ত্রে বাস করে কয়েকটি জাতি। এদের মধ্যে সার্ব (গোঁড়া খ্রিস্টান) ৩৬.৫%, ক্রোট (রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান) ১৯.৭% এবং মুসলমান ৮.৯%। বাকীরা অন্যান্য জাতি।
জনসংখ্যার দিক থেকে অত্র এলাকায় সার্ব ও ক্রোটদের সংখ্যাই বেশী। এই দু’টি জাতির প্রধান আবাসস্থল সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থান করছে বসনিয়া। কিন্তু বসনিয়াতে মুসলমান সংখ্যা বেশী হলেও সমগ্র পূর্ব যুগোস্লাভ এলাকার সার্ব ও ক্রোটদের তুলনায় কম। ফলে ইউরোপের বুকে মুসলমান নামক একটি জনগোষ্ঠীকে তারা মেনে নিতে পারছেনা। শুধু বসনিয়াতে মুসলমান ৪৩%, বসনীয় সার্ব ৩৩% এবং বসনীয় ক্রোট ১৭%। বসনিয়ার যুদ্ধ ছিল প্রকৃতপক্ষে মুসলমান জাতি নিধনের মাধ্যমে মানচিত্র গঠনের যুদ্ধ।
১ম বিশ্বযুদ্ধ:
১৯১২-১৩ সালে প্রথম মহাযুদ্ধের সময় এ অঞ্চলে ১৩০০০ মুসলমানকে জোরপূর্বক খ্রিস্টান হতে বাধ্য করা হয় পরে অবশ্য তারা আবার ইসলামে ফিরে আসে। ১৯১৪ সালে বসনিয়ার এক গ্রামে জঘণ্যতম হত্যাকান্ড- সংঘটিত হলে এক রাত্রেই ৬০০ শিশু ও মহিলা হত্যা করা হয়।
২য় বিশ্বযুদ্ধ:'
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বসনিয়ায় ১ লাখ ২০ হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়। ১৯৪৪-৪৫ সালে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়, সেটা ছিল বসনিয়ার ২৫০ বছরের ইতিহাসে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সবচেয়ে পরিকল্পিত ঘটনা। বহু নারীর মুখের চামড়া উঠিয়ে নেয়া হয়েছিলো। মুসলমান নারীরা যে পর্দা করতো তাকে ব্যাঙ্গ করে এ কাজটি করা হয়েছিলো। নারী ও শিশুদের দ্রিনা নদীতে হত্যা করে মুসলমানদের বোঝানোর চেষ্টা করে যে তোমাদের পালাবার পথ নেই।
স্রেব্রেনিসা গণহত্যার সূত্রপাত:
স্রেবরেনিসার অতীত ইতিহাস বড় করুণ ও মর্মন্তুদ। সেব্রেনিসার গণহত্যা বসনিয়ার গণহত্যাগুলোর একটি অংশ মাত্র। জাতিসংঘ এ গণহত্যাকে "বংশ নিধনযজ্ঞ বা জাতিগত শুদ্ধি অভিযান" হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বসনিয়ার যুদ্ধে প্রায় দুই লাখ বসনিয় মুসলিম নিহত ও প্রায় বিশ লাখ শরণার্থী হয়েছে। ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে সাবেক ইয়োগোস্লাভিয়া থেকে গণভোটের মাধ্যমে বসনিয়ার স্বাধীনতা অর্জন করে। ওই স্বাধীনতা বানচালের জন্য উগ্র সার্বরা বসনিয়ার মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। তবে এ যুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যাগুলোর মধ্যে সেব্রেনিসার গণহত্যা বা জাতিগত শুদ্ধি অভিযানই ছিল সবচেয়ে নৃশংস ও ভয়াবহ।
বহুজাতিক বসনিয়া ও হারজেগোভিনাতে মুসলমান (৪৪%), অরথোডক্স সার্ব (৩১%) ও ক্যাথলিক ক্রোট (১৭%) ছিল। ঈসায়ী ১৯৯১ সালের ১৫ অক্টোবর জাতীয় সার্বভৌমত্ব ঘোষণার পর প্রাক্তন যুগোস্লোভিয়া ভেঙ্গে যেতে শুরু করে। ১৯৯২ সালের ২৯ফেব্রুয়ারী স্বাধীনতার জন্য গণভোট হয়েছিল।
স্বাধীনতার পক্ষে অধিক ভোট আসলেও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বকারী বসনিয়ান সার্বেরা সে ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান ও বয়কট করে। ১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল ইউরোপীয়ান কমিউনিটি বসনিয়া ও হারজেগোভিনা প্রজাতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেয় এবং পরের দিন যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি প্রদান করে। স্বাধীনতার ঘোষণার পর স্লবোদান মিলোসেভিচের সারবিয়ান সরকারের সহায়তায় বসনিয়ান সার্ব ফোর্স এবং যুগোস্লাভ’স পিপলস আর্মি (JNA) সার্ব অঞ্চলকে নিরাপদ ও একত্রিত করার জন্য বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার নিরীহ, নিরস্ত্র মুসলমানদের উপর নিষ্ঠুরভাবে হামলা চালায়। সার্ব নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে নন-সার্ব বিশেষ করে মুসলমানদের এ নিধনকে তারা ‘Ethnic cleansing’ নাম দেয়।
মুসলমান হত্যাকারী পাপীষ্ঠ
স্লোবোদন মেলোসেভিচ হচ্ছে সেই ঘৃণিত, কুখ্যাত ব্যক্তি যে যুগোশ্লাভিয়ার উগ্র সার্ব জাতীয়তাবাদী রাজনীতির জন্ম দিয়ে ১৯৯২ সালে বসনিয়ার সার্বদের মাধ্যমে বসনিয়ার মুসলিমদের উচ্ছেদ করার প্রয়াস চালায়। ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চলে Ethnic Cleansing-এর নামে নারকীয় মুসলিম হত্যাকাণ্ড। মেলোসেভিচ সার্ববাহিনী দিয়ে তিন বছর বসনিয়া হারজেগোভিনাকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা
১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ বসনিয়ার ৬টি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাকে নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছিল। এগুলো হচ্ছে পূর্ব বসনিয়ার স্রেবরেনিসা, জেপা ও গোরাজদে, উত্তরের তুজলা, উত্তর পশ্চিমের বিহাচ ও রাজধানী সারায়েভো। জাতিসংঘ এলাকাটির নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছিল। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষীদের মোতায়েন করা হয়েছিল ওই শহরে।
সেখানে মোতায়েন জাতিসংঘের সেনারা ছিল হল্যান্ডের নাগরিক। ফলে ১৯৯২-১৯৯৫ সালের মধ্যে বসনিয় গৃহযুদ্ধের সময় সেব্রেনিৎসা শহরটি "নিরাপদ অঞ্চল" হিসেবে ঘোষিত হওয়ায় লাখ লাখ বসনিয় মুসলমান জীবন রক্ষার জন্য ওই শহরে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু ১৯৯৫ সালের ১১ জুলাই বসনীয় সার্ব সেনাবাহিনী জাতিসংঘের নিরাপত্তা বলয় ভেঙ্গে ফেলে। আন্তর্জাতিক আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সার্বরা তাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জাতিসংঘ ঘোষিত নিরাপদ এলাকা স্রেবরেনিসায় মাত্র পাঁচ দিনেই হত্যা করা হয় প্রায় আট হাজার মানুষকে। নিহত ও গৃহহীনদের অধিকাংশই ছিল মুসলমান।
হল্যান্ডের শান্তিরক্ষীদের বিশ্বাসঘাতকতা
সার্বদের হামলার আশঙ্কা আঁচ করতে পেরে সেখানকার মুসলমানরা ওই শহর ও নিজেদের রক্ষার জন্য সশস্ত্র হতে চেয়েছিল। কিন্তু জাতিসংঘের ডাচ শান্তি রক্ষীরা তাদের ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। জঙ্গি সার্বরা হল্যান্ডের ১৪ জন সেনাকে অপহরণ করায় শান্তি রক্ষীরা স্বদেশী ওই ১৪ শান্তিরক্ষীকে মুক্ত করার জন্য তাদের ঘাঁটিতে আশ্রয় নেয়া প্রায় ৫ হাজার বসনিয় মুসলমানকে জঙ্গি সার্বদের হাতে তুলে দেয়।
জঙ্গিরা হল্যান্ডের শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং এর বিনিময়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা জঙ্গিদের ওপর বিমান হামলা চালাবে না বলে কথা দেয়। নীল টুপি পরা হল্যান্ডের শান্তিরক্ষীরা সার্বদের হামলা ঠেকানোর জন্য হল্যান্ড সরকারের বা ন্যাটোর সহায়তা চাইতে পারত। কিন্তু তারা তা না করে সেব্রেনিৎসা শহরটির নিরস্ত্র মুসলমানদেরকে বর্ণবাদী সার্বদের হাতে ছেড়ে দেয়। শান্তিরক্ষীরা মুসলমানদের রক্ষার জন্য বিন্দুমাত্র চেষ্টা চালায়নি। এমনকি হল্যান্ডের শান্তি রক্ষী বাহিনীর প্রধান সার্বদের হাতে ওই শহর দখলকে "যৌক্তিক পদক্ষেপ" বলে মন্তব্য করেছিলেন। হল্যান্ডের ওই কর্নেল ও তার অধীনস্থ সেনারা স্বদেশে ফিরে যাওয়ার পর সেখানে ব্যাপক অভ্যর্থনা পায় এবং তাদের পুরস্কারও দেয়া হয়!
সেব্রেনিৎসার গণহত্যায় নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজন ওই গণহত্যা প্রতিরোধে নিস্ক্রিয়তা ও গণহত্যায় সহায়তার জন্য দায়ী ডাচ শান্তি রক্ষীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার উদ্যোগ নিলেও হেগের আদালত ওই মামলা গ্রহণ করেনি। বসনিয়ার গণহত্যা শেষে সেখানকার জাতিগত শুদ্ধি অভিযান সম্পর্কে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে সেব্রেনিৎসায় গণহত্যা ঠেকানোর ব্যাপারে হল্যান্ড সরকার ও জাতিসংঘের অবহেলার কথা স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু ওই মারাত্মক দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য এ পর্যন্ত হল্যান্ড এবং জাতিসংঘের তৎকালীন কোনো কর্মকর্তাকে কখনও বিচারের সম্মুখীন করা হয়নি।
আজ থেকে সতের বছর আগে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ জুলাই খ্রিস্টান সার্বরা ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট বর্বরতা চালিয়ে দখল করে নেয় বসনিয়ার স্রেবরেনিসা। আট হাজার মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে ঠাণ্ডা মাথায় তারা হত্যা করে। সার্বদের নির্বিচার গুলিতে নিহত ৭৭৫ বসনিয় মুসলমানের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে সম্প্রতি। স্রেবরেনিসার অদূরে পোটোচারি কবরস্থানে দেহগুলো পুনরায় সমাহিত করা হয়। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা গত কয়েক বছরে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রায় ৭০টি স্থানে এসব গণকবরের সন্ধান পান। বসনিয়ান সার্ব সেনাবাহিনীর কমান্ডার রাতোক মালডিককে এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা বলে মনে করা হয়। বসনিয়ান সার্বদের স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করছিল রাদোভান কারাদজিক। সে এক সাময়িকীতে বলেছিল, “সার্ব ও মুসলমানেরা হচ্ছে বিড়াল ও কুকুরের মত। তারা কখনও একসাথে শান্তিতে বাস করতে পারে না। এটা অসম্ভব”।
গণহত্যার নির্মমতা:
সার্ববাহিনী জাতিসংঘের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্রেবরেনিসা দখল করে নেয় বৃষ্টির মতো মর্টার বর্ষণ করে। ৪০ হাজার মুসলিম আদিবাসীকে উৎখাত করা হয় স্রেবরেনিসা থেকে এবং আট হাজার মুসলমানকে জবাই করা হয় পশুর মতো। হত্যার পর তড়িঘড়ি করে মৃতদের গণকবর দেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা গোপন করতে পরে গণকবর থেকে মৃতদেহগুলো তুলে আলাদা ৭০টি স্থানে পুঁতে ফেলে সার্ব সেনারা। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করে ৩,৭৪৯ জনকে আগেই পোটোচারি কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছিল। বিশেষ অনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে নতুন ৭৭৫টি দেহাবশেষগুলোকে তাদের সঙ্গী করা হলো।
২০ জুলাই সার্ব দস্যুরা জাতিসংঘ শান্তিবাহিনীর নাকের ডগায় অপর নিরাপদ অঞ্চল জেপা দখল করে নেয়। এবার গোলার আঘাতে বিধ্বস্ত করে দেয় ৫০ হাজার মুসলিম-অধ্যুষিত গোরাজদে শহর। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত চলা বসনিয়া সংঘাতে প্রায় দুই লাখ মানুষ নিহত হয়। গৃহহারা হয় ৪০ লাখ মানুষ। ১৫,২০০ মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের পরিবার এখনো তাদের সন্তান ও স্বজনদের প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছেন। খ্রিস্টান ইউরোপের সমর্থনপুষ্ট সার্বীয় বাহিনী তিন বছর যাবৎ বসনিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখে। বসনিয়ার তিন চতুর্থাংশ এলাকা দখল করে নেয় সার্বরা। ক্রুসেডের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ইতিহাসের এ-বর্বরতম পৈশাচিকতায় সার্বীয় আগ্রাসী বাহিনী জাতিসংঘের ত্রাণবাহী কনভয়কে ছিটমহলে প্রবেশ করতে দেয় নি। রাজধানী সারায়েভো অসংখ্য মসজিদে ভরা। এজন্য সারায়েভোকে মিনারের শহর (The City of Minerates) নামে অভিহিত করা হয়। প্রতি মিনিটে নিক্ষিপ্ত মর্টার ও কামানের গোলার বিস্ফোরণে আযানের শব্দ ধ্বনিত হয় নি বহুদিন, সারায়াভোর মসজিদে ১৮ মাস নামাযের জামায়াত হতে পারে নি। ইগম্যান পার্বত্য এলাকার পরিবেশ এখনো স্বজন হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটা ছিল ইউরোপের সর্ববৃহৎ নারকীয় ও নৃশংস গণহত্যা। সে সময় স্রেবরেনিসার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ডাচ সেনারা। কিন্তু ভারী অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত সার্বদের কাছে ডাচ সেনারা নতিস্বীকার করে। এ কারণে সেদিনের নিরস্ত্র মানুষকে রক্ষা করতে না পারার জন্য ডাচদেরও ব্যাপকভাবে অভিযুক্ত করা হয়।
বন্দি শিবির:
সার্বদের হাতে বন্দি বসনীয় মুসলমান সৈনিক ও যুবকদের বিভিন্ন যায়গায় স্থাপিত বন্দি শিবিরে রেখে নির্যাতন করা হত। বন্দুকের নলের মুখে একজন পুরুষের সাথে অন্য পুরুষকে এমনকি শিবিরে রাখ অন্য প্রাণীদের সাথে অশ্লীল কাজ করতে বাধ্য করা হত। কনকনে শীতে হালকা কাপড় জড়িয়ে রাত্রি যাপন করতে দিতো। (একজন বন্দি রাতে মারা যায় কিন্তু তার সাথীকে সকালে মৃত্যুর খবর দেয়। রাত্রে তার কম্বল জড়িয়ে সে শীতের প্রকোপ থেকে নিজেকে রক্ষা করে।)
গণহত্যা
বিহা এলাকার ক্লুচ নাকম স্থানে ৫ হাজার লোকের এক গণ কবর আবিস্কৃত হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর প্রথম বছরেই ১,৩০,০০০ মুসলমানকে শহীদ করা হয়। ১৭০০০ শিশুসহ নিহত মুসলমানের সংখ্যা তিনলাখে পৌঁছেছে। সেব্রেনিৎসা ছিটমহলটি পতনের পর ৪০০০ মুসলমান সৈনিককে দিয়ে তারা কবর খুড়িয়ে পরে সবাইকে গুলি করে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়। কমিউনিস্ট শাসনআমলে ৬০০০ মুসলমানকে হত্যা করা হয়। ধর্মীয় আদালত এবং স্কুলসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। ইসলামী পত্রিকাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। হাজার হাজার মুসলমানকে দেশান্তরিত করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণের নামে মুসলমানদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া হয় যাতে ঐক্যবদ্ধতা গড়ে উঠতে না পারে।
নারী নির্যাতন
নারী নির্যাতন বা নারী ধর্ষণ যে কোন যুদ্ধের একটি স্বাভাবিক পার্শ্ব ফল হলেও বসনিয়ার মুসলমান নারীদের উপর এ বিষয়টি যেভাবে পরিচালিত হয়েছে তাতে মনে হয় এটি ছিল সু-সরিকল্পিত ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিষয়। ২৭ শে জুন ১৯৯৫ সালে এক সাক্ষাৎকারে বসনিয়ার প্রধানমন্ত্রী তার দেশে প্রায় ১২০০০ মুসলমান নারী সার্বদের হাতে ধর্ষিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। মুসলমান বাচ্চা মেয়েদের পর্যন্ত যুদ্ধ ফ্রন্টে সার্বদের নিকট পৌছে দেয়া হত। শুধু সম্ভ্রমহানীর জন্য ১৭টি ক্যাম্পের খোঁজ পাওয়া যায়।
৫০,০০০ হাজার নারী গর্ভবতী হয়। মুসলমান নারীদের উপর এই নির্যাতন যে পরিকল্পিত তার প্রমাণ পাওয়া যায় খ্রিস্টান পোপ জন পল এর উক্তিতে: শ্লীলতাহানীতে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত না ঘটিয়ে সন্তানধারণের জন্য সে পরামর্শ দেয়। এবং শ্লীলতাহানীর কুকর্মটিকে স্নেহ ভালবাসায় রূপান্তরিত করার জন্য বলে। অর্থাৎ এই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমান নারীদের মাধ্যমে যারয সন্তানের জন্ম দেয়া যেন তারা প্রকৃত মুসলমান হয়ে কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। আবার গর্ভধারণে উৎসাহ দেয়ার জন্য কঠিন নির্যাতন চালাতো নারীদের উপর আর গর্ভবর্তী হয়ে গেলে শাস্তি মওকুফ করতো। পূর্ব বসনিয়ায় ২৫ হাজার মুসলিম বালিকা ও মহিলা গণ ধর্ষণের শিকার হন। বহু মহিলাকে বিজলুবাক, পোপরোজি, ফোকা বন্দি কেন্দ্রে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আটক রাখা হয়। ওখান থেকে সার্ব সৈন্য ও পুলিশ মহিলাদের বাছাই করে বাইরে নিয়ে যায় ধর্ষণের উদ্দেশ্যে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বহু বালিকা ও মহিলার মৃত্যু হয়েছে। বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী সার্ব-সৈন্যরা গণধর্ষণের মাধ্যমে ৬০ হাজার মুসলিম মহিলার গর্ভে জন্ম দেয় খ্রিস্টান সন্তান।
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিনাশ:
ধর্ষণ, নিপীরণ ও গণহত্যার ন্যায় বসনীয় মুসলমানদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়। যুদ্ধ শুরুর প্রথমদিকে ৮০০ এর অধিক বেশী মসজিদ সার্ব ও ক্রোটরা ধ্বংস করে। ১৫৮৩ সালে নির্মিত ফরহাদিয়া জামীয়া মসজিদকে ১৯৯৩ সালের প্রথম দিকে ডিনামাইটের সাহায্যে ধ্বংস করা হয়। ফোসা নামক এলাকায় ১৫০১ সালে নির্মিত সুলতান বায়েজীদ রাজকীয় মসজিদ ১৫৫০ সালে নির্মিত আলাদজা মসজিদসহ সাতটি মসজিদ বিস্ফোরকের সাহায্যে, জেভরনিক এলাকায় ১৬টি মসজিদকে বুলডোজারের সাহায্যে ধ্বংস করা হয়। বিভিন্ন মসজিদ ভেঙ্গে সেখানে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, শুকর জবাইখানায় রূপান্তর করা হয়। (নাঊযুবিল্লাহ)। অনেক মসজিদের ভেতর মুসলমানদের প্রবেশ করিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়।
মুসলমান অধ্যুষিত ট্রাভেনিকের মেয়র মুহম্মদ সুরাচ বলেন, “বসনিয়ার যুদ্ধ সমগ্র মুসলিম শহরগুলিকে হত্যা করেছে। তাদের সংস্কৃতিকে হত্যা করেছে। ইতিহাসকে হত্যা করেছে, মান মর্যাদাকে হত্যা করেছে, অর্থনীতিকে হত্যা করেছে এক কথায় এ যুদ্ধ সার্বিকভাবে গণহত্যা পরিচালনা করেছে।
অত্যন্ত আক্ষেপের বিষয়, সতের বছর আগে যখন সার্বীয় বাহিনী নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুকে নিধন করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের কোন কার্যকর ভূমিকা দেখা যায় নি। তাদেরকে দেয়া হয়েছিল হালকা অস্ত্র। নিরস্ত্র মুসলমানের রক্ষা করার জন্য তারা ছিল একেবারে শক্তিহীন। বসনিয়া-সংকট খ্রিস্টান ইউরোপের মুসলিম-বিদ্বেষী চরিত্র এবং জাতিসংঘের লজ্জাজনক নির্লিপ্ততাকে প্রকট করে তুলে। কোন অসহায় মানুষকে, কোন আহত শিশুক এবং কোন ধর্ষিতা মহিলাকে নিরাপত্তা দিতে জাতিসংঘ শোচণীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়ায় পরোক্ষ মদদে সার্বীয় ও ক্রোশীয় খ্রিস্টানরা বসনিয়ার রক্তের হোলি খেলায় মাতাল।
চিত্রঃ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত একটি বাড়ি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পূর্ব ইউরোপে একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন গড়ে উঠলেও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে পূর্ব জার্মানি, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, চেকোশ্লোভাকিয়া ও রুমানিয়ায় গণঅভ্যূত্থানের সূচনা হয় এবং সমাজতন্ত্রের নামে একদলীয় স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। মিলোসেভিচের পতনের মধ্য দিয়ে পূর্ব ইউরোপের সর্বশেষ স্বৈরশাসকের বিদায় ঘণ্টা ধ্বনিত হয়।
১৬ বছর বয়স্ক আমিরা হ্যালিলোডিক বলে, আমরা কখনোই আমাদের ঘর এবং দেশ হারাবার ক্ষতি মেনে নেবো না যেখানে মায়েরা তাদের সন্তান হারিয়েছে। আমি কখনোই সার্বদের ক্ষমা করবো না। আমি কখনো এই যুদ্ধের অর্থ বুঝতে পারবো না। একি আমাদের প্রাপ্য ছিল? তারা আমাদের প্রতি এমন করলো কেন?
সূত্রঃ
১) http://www.martinfrost.ws/htmlfiles/srebrenica_massacre.html
২) http://en.wikipedia.org/wiki/Srebrenica
৩) http://en.wikipedia.org/wiki/Srebrenica_massacre
৪) http://www.historyplace.com/worldhistory/genocide/bosnia.htm
৫) http://www.ppu.org.uk/genocide/g_bosnia.html
৬) বিভিন্ন বাংলা ব্লগ
৭) http://en.wikipedia.org/wiki/Bosnian_Genocide
বসনিয়ার পরিচিতি:
মুসলিম বসনিয়ায় গণহত্যা মানব ইতিহাসে মুসলিম জাতি নিধনের উদাহরণ হিসেবে সর্বকালে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস হতাশা ক্রন্দন ও বিচারের মুখোমুখি হয়ে নিরীহ, নিরস্ত্র মুসলিম বসনিয়ানরা সারা বিশ্বের দিকে চেয়েছিলো কিন্তু কেউ কোন সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। বরং আক্রমণকারীদেরই সুযোগ দেয়া হয়েছে।
কেন এই অবস্থায় ইউরোপীয়ান খ্রিস্টান দেশসমূহের দৃষ্টিতে মুসলিম বসনিয়ার জনগণ অপরাধী এবং তাদের অপরাধ তারা মুসলমান, মুসলিম জাতি। ভূতপূর্ব যুগোস্লাভ প্রজাতন্ত্রে বাস করে কয়েকটি জাতি। এদের মধ্যে সার্ব (গোঁড়া খ্রিস্টান) ৩৬.৫%, ক্রোট (রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান) ১৯.৭% এবং মুসলমান ৮.৯%। বাকীরা অন্যান্য জাতি।
জনসংখ্যার দিক থেকে অত্র এলাকায় সার্ব ও ক্রোটদের সংখ্যাই বেশী। এই দু’টি জাতির প্রধান আবাসস্থল সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থান করছে বসনিয়া। কিন্তু বসনিয়াতে মুসলমান সংখ্যা বেশী হলেও সমগ্র পূর্ব যুগোস্লাভ এলাকার সার্ব ও ক্রোটদের তুলনায় কম। ফলে ইউরোপের বুকে মুসলমান নামক একটি জনগোষ্ঠীকে তারা মেনে নিতে পারছেনা। শুধু বসনিয়াতে মুসলমান ৪৩%, বসনীয় সার্ব ৩৩% এবং বসনীয় ক্রোট ১৭%। বসনিয়ার যুদ্ধ ছিল প্রকৃতপক্ষে মুসলমান জাতি নিধনের মাধ্যমে মানচিত্র গঠনের যুদ্ধ।
১ম বিশ্বযুদ্ধ:
১৯১২-১৩ সালে প্রথম মহাযুদ্ধের সময় এ অঞ্চলে ১৩০০০ মুসলমানকে জোরপূর্বক খ্রিস্টান হতে বাধ্য করা হয় পরে অবশ্য তারা আবার ইসলামে ফিরে আসে। ১৯১৪ সালে বসনিয়ার এক গ্রামে জঘণ্যতম হত্যাকান্ড- সংঘটিত হলে এক রাত্রেই ৬০০ শিশু ও মহিলা হত্যা করা হয়।
২য় বিশ্বযুদ্ধ:'
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বসনিয়ায় ১ লাখ ২০ হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়। ১৯৪৪-৪৫ সালে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়, সেটা ছিল বসনিয়ার ২৫০ বছরের ইতিহাসে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সবচেয়ে পরিকল্পিত ঘটনা। বহু নারীর মুখের চামড়া উঠিয়ে নেয়া হয়েছিলো। মুসলমান নারীরা যে পর্দা করতো তাকে ব্যাঙ্গ করে এ কাজটি করা হয়েছিলো। নারী ও শিশুদের দ্রিনা নদীতে হত্যা করে মুসলমানদের বোঝানোর চেষ্টা করে যে তোমাদের পালাবার পথ নেই।
স্রেব্রেনিসা গণহত্যার সূত্রপাত:
স্রেবরেনিসার অতীত ইতিহাস বড় করুণ ও মর্মন্তুদ। সেব্রেনিসার গণহত্যা বসনিয়ার গণহত্যাগুলোর একটি অংশ মাত্র। জাতিসংঘ এ গণহত্যাকে "বংশ নিধনযজ্ঞ বা জাতিগত শুদ্ধি অভিযান" হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বসনিয়ার যুদ্ধে প্রায় দুই লাখ বসনিয় মুসলিম নিহত ও প্রায় বিশ লাখ শরণার্থী হয়েছে। ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে সাবেক ইয়োগোস্লাভিয়া থেকে গণভোটের মাধ্যমে বসনিয়ার স্বাধীনতা অর্জন করে। ওই স্বাধীনতা বানচালের জন্য উগ্র সার্বরা বসনিয়ার মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। তবে এ যুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যাগুলোর মধ্যে সেব্রেনিসার গণহত্যা বা জাতিগত শুদ্ধি অভিযানই ছিল সবচেয়ে নৃশংস ও ভয়াবহ।
বহুজাতিক বসনিয়া ও হারজেগোভিনাতে মুসলমান (৪৪%), অরথোডক্স সার্ব (৩১%) ও ক্যাথলিক ক্রোট (১৭%) ছিল। ঈসায়ী ১৯৯১ সালের ১৫ অক্টোবর জাতীয় সার্বভৌমত্ব ঘোষণার পর প্রাক্তন যুগোস্লোভিয়া ভেঙ্গে যেতে শুরু করে। ১৯৯২ সালের ২৯ফেব্রুয়ারী স্বাধীনতার জন্য গণভোট হয়েছিল।
স্বাধীনতার পক্ষে অধিক ভোট আসলেও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বকারী বসনিয়ান সার্বেরা সে ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান ও বয়কট করে। ১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল ইউরোপীয়ান কমিউনিটি বসনিয়া ও হারজেগোভিনা প্রজাতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেয় এবং পরের দিন যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি প্রদান করে। স্বাধীনতার ঘোষণার পর স্লবোদান মিলোসেভিচের সারবিয়ান সরকারের সহায়তায় বসনিয়ান সার্ব ফোর্স এবং যুগোস্লাভ’স পিপলস আর্মি (JNA) সার্ব অঞ্চলকে নিরাপদ ও একত্রিত করার জন্য বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার নিরীহ, নিরস্ত্র মুসলমানদের উপর নিষ্ঠুরভাবে হামলা চালায়। সার্ব নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে নন-সার্ব বিশেষ করে মুসলমানদের এ নিধনকে তারা ‘Ethnic cleansing’ নাম দেয়।
মুসলমান হত্যাকারী পাপীষ্ঠ
স্লোবোদন মেলোসেভিচ হচ্ছে সেই ঘৃণিত, কুখ্যাত ব্যক্তি যে যুগোশ্লাভিয়ার উগ্র সার্ব জাতীয়তাবাদী রাজনীতির জন্ম দিয়ে ১৯৯২ সালে বসনিয়ার সার্বদের মাধ্যমে বসনিয়ার মুসলিমদের উচ্ছেদ করার প্রয়াস চালায়। ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চলে Ethnic Cleansing-এর নামে নারকীয় মুসলিম হত্যাকাণ্ড। মেলোসেভিচ সার্ববাহিনী দিয়ে তিন বছর বসনিয়া হারজেগোভিনাকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা
১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ বসনিয়ার ৬টি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাকে নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছিল। এগুলো হচ্ছে পূর্ব বসনিয়ার স্রেবরেনিসা, জেপা ও গোরাজদে, উত্তরের তুজলা, উত্তর পশ্চিমের বিহাচ ও রাজধানী সারায়েভো। জাতিসংঘ এলাকাটির নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছিল। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষীদের মোতায়েন করা হয়েছিল ওই শহরে।
সেখানে মোতায়েন জাতিসংঘের সেনারা ছিল হল্যান্ডের নাগরিক। ফলে ১৯৯২-১৯৯৫ সালের মধ্যে বসনিয় গৃহযুদ্ধের সময় সেব্রেনিৎসা শহরটি "নিরাপদ অঞ্চল" হিসেবে ঘোষিত হওয়ায় লাখ লাখ বসনিয় মুসলমান জীবন রক্ষার জন্য ওই শহরে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু ১৯৯৫ সালের ১১ জুলাই বসনীয় সার্ব সেনাবাহিনী জাতিসংঘের নিরাপত্তা বলয় ভেঙ্গে ফেলে। আন্তর্জাতিক আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সার্বরা তাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জাতিসংঘ ঘোষিত নিরাপদ এলাকা স্রেবরেনিসায় মাত্র পাঁচ দিনেই হত্যা করা হয় প্রায় আট হাজার মানুষকে। নিহত ও গৃহহীনদের অধিকাংশই ছিল মুসলমান।
হল্যান্ডের শান্তিরক্ষীদের বিশ্বাসঘাতকতা
সার্বদের হামলার আশঙ্কা আঁচ করতে পেরে সেখানকার মুসলমানরা ওই শহর ও নিজেদের রক্ষার জন্য সশস্ত্র হতে চেয়েছিল। কিন্তু জাতিসংঘের ডাচ শান্তি রক্ষীরা তাদের ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। জঙ্গি সার্বরা হল্যান্ডের ১৪ জন সেনাকে অপহরণ করায় শান্তি রক্ষীরা স্বদেশী ওই ১৪ শান্তিরক্ষীকে মুক্ত করার জন্য তাদের ঘাঁটিতে আশ্রয় নেয়া প্রায় ৫ হাজার বসনিয় মুসলমানকে জঙ্গি সার্বদের হাতে তুলে দেয়।
জঙ্গিরা হল্যান্ডের শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং এর বিনিময়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা জঙ্গিদের ওপর বিমান হামলা চালাবে না বলে কথা দেয়। নীল টুপি পরা হল্যান্ডের শান্তিরক্ষীরা সার্বদের হামলা ঠেকানোর জন্য হল্যান্ড সরকারের বা ন্যাটোর সহায়তা চাইতে পারত। কিন্তু তারা তা না করে সেব্রেনিৎসা শহরটির নিরস্ত্র মুসলমানদেরকে বর্ণবাদী সার্বদের হাতে ছেড়ে দেয়। শান্তিরক্ষীরা মুসলমানদের রক্ষার জন্য বিন্দুমাত্র চেষ্টা চালায়নি। এমনকি হল্যান্ডের শান্তি রক্ষী বাহিনীর প্রধান সার্বদের হাতে ওই শহর দখলকে "যৌক্তিক পদক্ষেপ" বলে মন্তব্য করেছিলেন। হল্যান্ডের ওই কর্নেল ও তার অধীনস্থ সেনারা স্বদেশে ফিরে যাওয়ার পর সেখানে ব্যাপক অভ্যর্থনা পায় এবং তাদের পুরস্কারও দেয়া হয়!
সেব্রেনিৎসার গণহত্যায় নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজন ওই গণহত্যা প্রতিরোধে নিস্ক্রিয়তা ও গণহত্যায় সহায়তার জন্য দায়ী ডাচ শান্তি রক্ষীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার উদ্যোগ নিলেও হেগের আদালত ওই মামলা গ্রহণ করেনি। বসনিয়ার গণহত্যা শেষে সেখানকার জাতিগত শুদ্ধি অভিযান সম্পর্কে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে সেব্রেনিৎসায় গণহত্যা ঠেকানোর ব্যাপারে হল্যান্ড সরকার ও জাতিসংঘের অবহেলার কথা স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু ওই মারাত্মক দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য এ পর্যন্ত হল্যান্ড এবং জাতিসংঘের তৎকালীন কোনো কর্মকর্তাকে কখনও বিচারের সম্মুখীন করা হয়নি।
আজ থেকে সতের বছর আগে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ জুলাই খ্রিস্টান সার্বরা ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট বর্বরতা চালিয়ে দখল করে নেয় বসনিয়ার স্রেবরেনিসা। আট হাজার মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে ঠাণ্ডা মাথায় তারা হত্যা করে। সার্বদের নির্বিচার গুলিতে নিহত ৭৭৫ বসনিয় মুসলমানের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে সম্প্রতি। স্রেবরেনিসার অদূরে পোটোচারি কবরস্থানে দেহগুলো পুনরায় সমাহিত করা হয়। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা গত কয়েক বছরে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রায় ৭০টি স্থানে এসব গণকবরের সন্ধান পান। বসনিয়ান সার্ব সেনাবাহিনীর কমান্ডার রাতোক মালডিককে এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা বলে মনে করা হয়। বসনিয়ান সার্বদের স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করছিল রাদোভান কারাদজিক। সে এক সাময়িকীতে বলেছিল, “সার্ব ও মুসলমানেরা হচ্ছে বিড়াল ও কুকুরের মত। তারা কখনও একসাথে শান্তিতে বাস করতে পারে না। এটা অসম্ভব”।
গণহত্যার নির্মমতা:
সার্ববাহিনী জাতিসংঘের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্রেবরেনিসা দখল করে নেয় বৃষ্টির মতো মর্টার বর্ষণ করে। ৪০ হাজার মুসলিম আদিবাসীকে উৎখাত করা হয় স্রেবরেনিসা থেকে এবং আট হাজার মুসলমানকে জবাই করা হয় পশুর মতো। হত্যার পর তড়িঘড়ি করে মৃতদের গণকবর দেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা গোপন করতে পরে গণকবর থেকে মৃতদেহগুলো তুলে আলাদা ৭০টি স্থানে পুঁতে ফেলে সার্ব সেনারা। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করে ৩,৭৪৯ জনকে আগেই পোটোচারি কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছিল। বিশেষ অনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে নতুন ৭৭৫টি দেহাবশেষগুলোকে তাদের সঙ্গী করা হলো।
২০ জুলাই সার্ব দস্যুরা জাতিসংঘ শান্তিবাহিনীর নাকের ডগায় অপর নিরাপদ অঞ্চল জেপা দখল করে নেয়। এবার গোলার আঘাতে বিধ্বস্ত করে দেয় ৫০ হাজার মুসলিম-অধ্যুষিত গোরাজদে শহর। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত চলা বসনিয়া সংঘাতে প্রায় দুই লাখ মানুষ নিহত হয়। গৃহহারা হয় ৪০ লাখ মানুষ। ১৫,২০০ মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের পরিবার এখনো তাদের সন্তান ও স্বজনদের প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছেন। খ্রিস্টান ইউরোপের সমর্থনপুষ্ট সার্বীয় বাহিনী তিন বছর যাবৎ বসনিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখে। বসনিয়ার তিন চতুর্থাংশ এলাকা দখল করে নেয় সার্বরা। ক্রুসেডের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ইতিহাসের এ-বর্বরতম পৈশাচিকতায় সার্বীয় আগ্রাসী বাহিনী জাতিসংঘের ত্রাণবাহী কনভয়কে ছিটমহলে প্রবেশ করতে দেয় নি। রাজধানী সারায়েভো অসংখ্য মসজিদে ভরা। এজন্য সারায়েভোকে মিনারের শহর (The City of Minerates) নামে অভিহিত করা হয়। প্রতি মিনিটে নিক্ষিপ্ত মর্টার ও কামানের গোলার বিস্ফোরণে আযানের শব্দ ধ্বনিত হয় নি বহুদিন, সারায়াভোর মসজিদে ১৮ মাস নামাযের জামায়াত হতে পারে নি। ইগম্যান পার্বত্য এলাকার পরিবেশ এখনো স্বজন হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটা ছিল ইউরোপের সর্ববৃহৎ নারকীয় ও নৃশংস গণহত্যা। সে সময় স্রেবরেনিসার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ডাচ সেনারা। কিন্তু ভারী অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত সার্বদের কাছে ডাচ সেনারা নতিস্বীকার করে। এ কারণে সেদিনের নিরস্ত্র মানুষকে রক্ষা করতে না পারার জন্য ডাচদেরও ব্যাপকভাবে অভিযুক্ত করা হয়।
বন্দি শিবির:
সার্বদের হাতে বন্দি বসনীয় মুসলমান সৈনিক ও যুবকদের বিভিন্ন যায়গায় স্থাপিত বন্দি শিবিরে রেখে নির্যাতন করা হত। বন্দুকের নলের মুখে একজন পুরুষের সাথে অন্য পুরুষকে এমনকি শিবিরে রাখ অন্য প্রাণীদের সাথে অশ্লীল কাজ করতে বাধ্য করা হত। কনকনে শীতে হালকা কাপড় জড়িয়ে রাত্রি যাপন করতে দিতো। (একজন বন্দি রাতে মারা যায় কিন্তু তার সাথীকে সকালে মৃত্যুর খবর দেয়। রাত্রে তার কম্বল জড়িয়ে সে শীতের প্রকোপ থেকে নিজেকে রক্ষা করে।)
গণহত্যা
বিহা এলাকার ক্লুচ নাকম স্থানে ৫ হাজার লোকের এক গণ কবর আবিস্কৃত হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর প্রথম বছরেই ১,৩০,০০০ মুসলমানকে শহীদ করা হয়। ১৭০০০ শিশুসহ নিহত মুসলমানের সংখ্যা তিনলাখে পৌঁছেছে। সেব্রেনিৎসা ছিটমহলটি পতনের পর ৪০০০ মুসলমান সৈনিককে দিয়ে তারা কবর খুড়িয়ে পরে সবাইকে গুলি করে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়। কমিউনিস্ট শাসনআমলে ৬০০০ মুসলমানকে হত্যা করা হয়। ধর্মীয় আদালত এবং স্কুলসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। ইসলামী পত্রিকাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। হাজার হাজার মুসলমানকে দেশান্তরিত করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণের নামে মুসলমানদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া হয় যাতে ঐক্যবদ্ধতা গড়ে উঠতে না পারে।
নারী নির্যাতন
নারী নির্যাতন বা নারী ধর্ষণ যে কোন যুদ্ধের একটি স্বাভাবিক পার্শ্ব ফল হলেও বসনিয়ার মুসলমান নারীদের উপর এ বিষয়টি যেভাবে পরিচালিত হয়েছে তাতে মনে হয় এটি ছিল সু-সরিকল্পিত ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিষয়। ২৭ শে জুন ১৯৯৫ সালে এক সাক্ষাৎকারে বসনিয়ার প্রধানমন্ত্রী তার দেশে প্রায় ১২০০০ মুসলমান নারী সার্বদের হাতে ধর্ষিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। মুসলমান বাচ্চা মেয়েদের পর্যন্ত যুদ্ধ ফ্রন্টে সার্বদের নিকট পৌছে দেয়া হত। শুধু সম্ভ্রমহানীর জন্য ১৭টি ক্যাম্পের খোঁজ পাওয়া যায়।
৫০,০০০ হাজার নারী গর্ভবতী হয়। মুসলমান নারীদের উপর এই নির্যাতন যে পরিকল্পিত তার প্রমাণ পাওয়া যায় খ্রিস্টান পোপ জন পল এর উক্তিতে: শ্লীলতাহানীতে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত না ঘটিয়ে সন্তানধারণের জন্য সে পরামর্শ দেয়। এবং শ্লীলতাহানীর কুকর্মটিকে স্নেহ ভালবাসায় রূপান্তরিত করার জন্য বলে। অর্থাৎ এই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমান নারীদের মাধ্যমে যারয সন্তানের জন্ম দেয়া যেন তারা প্রকৃত মুসলমান হয়ে কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। আবার গর্ভধারণে উৎসাহ দেয়ার জন্য কঠিন নির্যাতন চালাতো নারীদের উপর আর গর্ভবর্তী হয়ে গেলে শাস্তি মওকুফ করতো। পূর্ব বসনিয়ায় ২৫ হাজার মুসলিম বালিকা ও মহিলা গণ ধর্ষণের শিকার হন। বহু মহিলাকে বিজলুবাক, পোপরোজি, ফোকা বন্দি কেন্দ্রে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আটক রাখা হয়। ওখান থেকে সার্ব সৈন্য ও পুলিশ মহিলাদের বাছাই করে বাইরে নিয়ে যায় ধর্ষণের উদ্দেশ্যে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বহু বালিকা ও মহিলার মৃত্যু হয়েছে। বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী সার্ব-সৈন্যরা গণধর্ষণের মাধ্যমে ৬০ হাজার মুসলিম মহিলার গর্ভে জন্ম দেয় খ্রিস্টান সন্তান।
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিনাশ:
ধর্ষণ, নিপীরণ ও গণহত্যার ন্যায় বসনীয় মুসলমানদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়। যুদ্ধ শুরুর প্রথমদিকে ৮০০ এর অধিক বেশী মসজিদ সার্ব ও ক্রোটরা ধ্বংস করে। ১৫৮৩ সালে নির্মিত ফরহাদিয়া জামীয়া মসজিদকে ১৯৯৩ সালের প্রথম দিকে ডিনামাইটের সাহায্যে ধ্বংস করা হয়। ফোসা নামক এলাকায় ১৫০১ সালে নির্মিত সুলতান বায়েজীদ রাজকীয় মসজিদ ১৫৫০ সালে নির্মিত আলাদজা মসজিদসহ সাতটি মসজিদ বিস্ফোরকের সাহায্যে, জেভরনিক এলাকায় ১৬টি মসজিদকে বুলডোজারের সাহায্যে ধ্বংস করা হয়। বিভিন্ন মসজিদ ভেঙ্গে সেখানে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, শুকর জবাইখানায় রূপান্তর করা হয়। (নাঊযুবিল্লাহ)। অনেক মসজিদের ভেতর মুসলমানদের প্রবেশ করিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়।
মুসলমান অধ্যুষিত ট্রাভেনিকের মেয়র মুহম্মদ সুরাচ বলেন, “বসনিয়ার যুদ্ধ সমগ্র মুসলিম শহরগুলিকে হত্যা করেছে। তাদের সংস্কৃতিকে হত্যা করেছে। ইতিহাসকে হত্যা করেছে, মান মর্যাদাকে হত্যা করেছে, অর্থনীতিকে হত্যা করেছে এক কথায় এ যুদ্ধ সার্বিকভাবে গণহত্যা পরিচালনা করেছে।
অত্যন্ত আক্ষেপের বিষয়, সতের বছর আগে যখন সার্বীয় বাহিনী নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুকে নিধন করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের কোন কার্যকর ভূমিকা দেখা যায় নি। তাদেরকে দেয়া হয়েছিল হালকা অস্ত্র। নিরস্ত্র মুসলমানের রক্ষা করার জন্য তারা ছিল একেবারে শক্তিহীন। বসনিয়া-সংকট খ্রিস্টান ইউরোপের মুসলিম-বিদ্বেষী চরিত্র এবং জাতিসংঘের লজ্জাজনক নির্লিপ্ততাকে প্রকট করে তুলে। কোন অসহায় মানুষকে, কোন আহত শিশুক এবং কোন ধর্ষিতা মহিলাকে নিরাপত্তা দিতে জাতিসংঘ শোচণীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়ায় পরোক্ষ মদদে সার্বীয় ও ক্রোশীয় খ্রিস্টানরা বসনিয়ার রক্তের হোলি খেলায় মাতাল।
চিত্রঃ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত একটি বাড়ি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পূর্ব ইউরোপে একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন গড়ে উঠলেও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে পূর্ব জার্মানি, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, চেকোশ্লোভাকিয়া ও রুমানিয়ায় গণঅভ্যূত্থানের সূচনা হয় এবং সমাজতন্ত্রের নামে একদলীয় স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। মিলোসেভিচের পতনের মধ্য দিয়ে পূর্ব ইউরোপের সর্বশেষ স্বৈরশাসকের বিদায় ঘণ্টা ধ্বনিত হয়।
১৬ বছর বয়স্ক আমিরা হ্যালিলোডিক বলে, আমরা কখনোই আমাদের ঘর এবং দেশ হারাবার ক্ষতি মেনে নেবো না যেখানে মায়েরা তাদের সন্তান হারিয়েছে। আমি কখনোই সার্বদের ক্ষমা করবো না। আমি কখনো এই যুদ্ধের অর্থ বুঝতে পারবো না। একি আমাদের প্রাপ্য ছিল? তারা আমাদের প্রতি এমন করলো কেন?
সূত্রঃ
১) http://www.martinfrost.ws/htmlfiles/srebrenica_massacre.html
২) http://en.wikipedia.org/wiki/Srebrenica
৩) http://en.wikipedia.org/wiki/Srebrenica_massacre
৪) http://www.historyplace.com/worldhistory/genocide/bosnia.htm
৫) http://www.ppu.org.uk/genocide/g_bosnia.html
৬) বিভিন্ন বাংলা ব্লগ
৭) http://en.wikipedia.org/wiki/Bosnian_Genocide
No comments:
Post a Comment