Sunday 16 July 2017

মুসলিম জাতি নিধনে ষড়যন্ত্র এবং ইহুদীদের স্বার্থ।

08c55-images2b2528442529
মুসলিম জাতি নিধনে ষড়যন্ত্র এবং ইহুদীদের স্বার্থ।

মুসলিম বসনিয়ায় গণহত্যা মানব ইতিহাসে মুসলিম জাতি নিধনের উদাহরণ হিসেবে সর্বকালে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস হতাশা ক্রন্দন ও বিচারের মুখোমুখি হয়ে নিরীহ, নিরস্ত্র মুসলিম বসনিয়ানরা সারা বিশ্বের দিকে চেয়েছিলো কিন্তু কেউ কোন সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। বরং আক্রমণকারীদেরই সুযোগ দেয়া হয়েছে। কেন এই অবস্থায় ইউরোপীয়ান খ্রিস্টান দেশসমূহের দৃষ্টিতে মুসলিম বসনিয়ার জনগণ অপরাধী এবং তাদের অপরাধ তারা মুসলমান, মুসলিম জাতি। ভূতপূর্ব যুগোসøাভ প্রজাতন্ত্রে বাস করে কয়েকটি জাতি। এদের মধ্যে সার্ব ৩৬.৫% ক্রোট ১৯.৭% এবং মুসলমান ৮.৯%।
বাকীরা অন্যান্য জাতি। জনসংখ্যার দিক থেকে অত্র এলাকায় সার্ব ও ক্রোটদের সংখ্যাই বেশী। এই দু’টি জাতির প্রধান আবাসস্থল সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থান করছে বসনিয়া। কিন্তু বসনিয়াতে মুসলমান সংখ্যা বেশী হলেও সমগ্র পূর্ব যুগোসøাভ এলাকার সার্ব ও ক্রোটদের তুলনায় কম। ফলে ইউরোপের বুকে মুসলমান নামক একটি জনগোষ্ঠীকে তারা মেনে নিতে পারছেনা। শুধু বসনিয়াতে মুসলমান ৪৩%, বসনীয় সার্ব ৩৩% এবং বসনীয় ক্রোট ১৭%। বসনিয়ার যুদ্ধ ছিল প্রকৃতপক্ষে মুসলমান জাতি নিধনের মাধ্যমে মানচিত্র গঠনের যুদ্ধ।
১৯১২-১৩ সালে প্রথম মহাযুদ্ধের সময় এ অঞ্চলে ১৩০০০ মুসলমানকে জোরপূর্বক খ্রিস্টান হতে বাধ্য করা হয় পরে অবশ্য তারা আবার ইসলামে ফিরে আসে। ১৯১৪ সালে বসনিয়ার এক গ্রামে জঘণ্যতম হত্যাকা- সংঘটিত হলে এক রাত্রেই ৬০০ শিশু ও মহিলা হত্যা করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বসনিয়ায় ১ লাখ ২০ হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়। ১৯৪৪-৪৫ সালে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়, সেটা ছিল বসনিয়ার ২৫০ বছরের ইতিহাসে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সবচেয়ে পরিকল্পিত ঘটনা। বহু নারীর মুখের চামড়া উঠিয়ে নেয়া হয়েছিলো। মুসলমান নারীরা যে পর্দা করতো তাকে ব্যাঙ্গ করে এ কাজটি করা হয়েছিলো। নারী ও শিশুদের দ্রিনা নদীতে হত্যা করে মুসলমানদের বোঝানোর চেষ্টা করে যে তোমাদের পালাবার পথ নেই।
বন্দি শিবির: সার্বদের হাতে বন্দি বসনীয় মুসলমান সৈনিক ও যুবকদের বিভিন্ন যায়গায় স্থাপিত বন্দি শিবিরে রেখে নির্যাতন করা হত। বন্দুকের নলের মুখে একজন পুরুষের সাথে অন্য পুরুষকে এমনকি শিবিরে রাখ অন্য প্রাণীদের সাথে অশ্লীল কাজ করতে বাধ্য করা হত। কনকনে শীতে হালকা কাপড় জড়িয়ে রাত্রি যাপন করতে দিতো। (একজন বন্দি রাতে মারা যায় কিন্তু তার সাথীকে সকালে মৃত্যুর খবর দেয়। রাত্রে তার কম্বল জড়িয়ে সে শীতের প্রকোপ থেকে নিজেকে রক্ষা করে।)
গণহত্যা ও নারী নির্যাতন: বিহা এলাকার ক্লুচ নাকম স্থানে ৫ হাজার লোকের এক গণ কবর আবিস্কৃত হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর প্রথম বছরেই ১,৩০,০০০ মুসলমানকে শহীদ করা হয়। ১৭০০০ শিশুসহ নিহত মুসলমানের সংখ্যা তিনলাখে পৌঁছেছে। সেব্রেনিৎসা ছিটমহলটি পতনের পর ৪০০০ মুসলমান সৈনিককে দিয়ে তারা কবর খুড়িয়ে পরে সবাইকে গুলি করে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়। কমিউনিস্ট শাসনআমলে ৬০০০ মুসলমানকে হত্যা করা হয়। ধর্মীয় আদালত এবং স্কুলসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। ইসলামী পত্রিকাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। হাজার হাজার মুসলমানকে দেশান্তরিত করা হয়। কৃষি স¤প্রসারণের নামে মুসলমানদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া হয় যাতে ঐক্যবদ্ধতা গড়ে উঠতে না পারে।
নারী নির্যাতন: নারী নির্যাতন বা নারী ধর্ষণ যে কোন যুদ্ধের একটি স্বাভাবিক পাশ্ব ফল হলেও বসনিয়ার মুসলমান নারীদের উপর এ বিষয়টি যেভাবে পরিচালিত হয়েছে তাতে মনে হয় এটি ছিল সু-সরিকল্পিত ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিষয়। ২৭ শে জুন ১৯৯৫ সালে এক সাক্ষাৎকারে বসনিয়ার প্রধানমন্ত্রী তার দেশে প্রায় ১২০০০ মুসলমান নারী সার্বদের হাতে ধর্ষিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। মুসলমান বাচ্চা মেয়েদের পর্যন্ত যুদ্ধ ফ্রন্টে সার্বদের নিকট পৌছে দেয়া হত। শুধু সম্ভ্রমহানীর জন্য ১৭টি ক্যাম্পের খোঁজ পাওয়া যায়। ৫০,০০০ হাজার নারী গর্ভবতী হয়। মুসলমান নারীদের উপর এই নির্যাতন যে পরিকল্পিত তার প্রমাণ পাওয়া যায় খ্রিস্টান পোপ জন পল এর উক্তিতে: শ্লীলতাহানীতে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত না ঘটিয়ে সন্তানধারণের জন্য সে পরামর্শ দেয়। এবং শ্লীলতাহানীর কুকর্মটিকে সে ¯েœহ ভালবাসায় রূপান্তরিত করার জন্য বলে। অর্থাৎ এই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমান নারীদের মাধ্যমে যারয সন্তানের জন্ম দেয়া যেন তারা প্রকৃত মুসলমান হয়ে কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। আবার গর্ভধারণে উৎসাহ দেয়ার জন্য কঠিন নির্যাতন চালাতো নারীদের উপর আর গর্ভবর্তী হয়ে গেলে শাস্তি মওকুফ করতো।
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিনাশ: ধর্ষণ, নিপীরণ ও গণহত্যার ন্যায় বসনীয় মুসলমানদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়। যুদ্ধ শুরুর প্রথমদিকে ৮০০ এর অধিক বেশী মসজিদ সার্ব ও ক্রোটরা ধ্বংস করে।
১৫৮৩ সালে নির্মিত ফরহাদিয়া জামীয়া মসজিদকে ১৯৯৩ সালের প্রথম দিকে ডিনামাইটের সাহায্যে ধ্বংস করা হয়। ফোসা নামক এলাকায় ১৫০১ সালে নির্মিত সুলতান বায়েজীদ রাজকীয় মসজিদ ১৫৫০ সালে নির্মিত আলাদজা মসজিদসহ সাতটি মসজিদ বিস্ফোরকের সাহায্যে, জেভরনিক এলাকায় ১৬টি মসজিদকে বুলডোজারের সাহায্যে ধ্বংস করা হয়। বিভিন্ন মসজিদ ভেঙ্গে সেখানে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, শুকর জবাইখানায় রূপান্তর করা হয়। (নাঊযুবিল্লাহ)। অনেক মসজিদের ভেতর মুসলমানদের প্রবেশ করিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়। মুসলমান অধ্যুষিত ট্রাভেনিকের মেয়র মুহম্মদ সুরাচ বলেন, “বসনিয়ার যুদ্ধ সমগ্র মুসলিম শহরগুলিকে হত্যা করেছে। তাদের সংস্কৃতিকে হত্যা করেছে। ইতিহাসকে হত্যা করেছে, মান মর্যাদাকে হত্যা করেছে, অর্থনীতিকে হত্যা করেছে এক কথায় এ যুদ্ধ সার্বিকভাবে গণহত্যা পরিচালনা করেছে।
১৬ বছর বয়স্ক আমিরা হ্যালিলোডিক বলে আমরা কখনোই আমাদের ঘর এবং দেশ হারাবার ক্ষতি মেনে নেবো না যেখানে মায়েরা তাদের সন্তান হারিয়েছে। আমি কখনোই সার্বদের ক্ষমা করবো না। আমি কখনো এই যুদ্ধের অর্থ বুঝতে পারবো না। একি আমাদের প্রাপ্য ছিল? তারা আমাদের প্রতি এমন করলো কেন?
মৌলবাদী আপসারন-এর ব্লগ
https://www.amarblog.com/dhakia/posts/104592

No comments:

Post a Comment