Sunday 16 July 2017

১১ জুলাই ছিল বর্বর সার্ব দ্বারা সংঘটিত বসনিয়ার মুসলিম গণহত্যা দিবস ।

srebrenica-massacre
১১ জুলাই ছিল বর্বর সার্ব দ্বারা সংঘটিত বসনিয়ার মুসলিম গণহত্যা দিবস ।
বসনিয়া স্মরণ করছে সেব্রেনিৎসা গণহত্যা ।
বসনিয়া স্মরণ করছে সেব্রেনিৎসা গণহত্যা, ১৯৯৫ এর ১১ জুলাই বিমান-কামান-বন্দুক চালিয়ে প্রায় ৮ হাজার মুসলমান বেসামরিক বসনিয়ানকে হত্যা করা হয়।
১৯৯২-৯৫ এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ নিরাপরাধ বসনিয়ান নারী-শিশু এবং পুরুষ মুসলমানকে হত্যা করে সার্ব বাহিনী।
জাতিসংঘ নির্লজ্জ্বের মত অস্ত্র বিরতি চুক্তির নামে বসনিয়ার স্বাধীনতাকামীদের অস্ত্র কেড়ে নেবার উদ্যোগ নেয় কিন্তু ঠিকই যুদ্ধের নামে হত্যা একপক্ষীয় তালে চলতে থাকে, রূপ নেয় গণহত্যায়। ডাচ শান্তিরক্ষীদেরকে সরিয়ে দিয়ে ১১ জুলাই বিভৎস গণহত্যা চালানো হয় সারাদিন-রাত জুড়ে। মসজিদ আর বাড়িগুলোতে শুধু ব্রাশফায়ার করা হয়, বাজারগুলো পরিণত হয় নিরব কবরস্থানে। সার্ব সেনা এবং মিলিশিয়ারা ধর্ষণ করে হাজার হাজার মুসলিম নারীকে। সার্ব সেনা অফিসাররা নির্দেশ দিত যেন প্রতিটা মুসলিম নারি গর্ভে সার্বদের সন্তান ধারনে বাধ্য হয়। ইউরোপে হিটলার ছাড়া এত নৃশংসতা আর হত্যা আর কেউ চালায়নি, হিটলার চালিয়েছিল গোপনে আর সার্বরা চালায় প্রকাশ্যে। প্রায় দিনই কোন কোন গ্রামে একসাথে ২০০/৩০০ মানুষকেও তারা হত্যা করে, গ্রামের পর গ্রাম গণকবরে পরিণত করে বলকানের কসাই খ্যাত স্লোবদান মেলোসেভিচ এবং রাতকো ম্লাদিচের বাহিনী।
বসনিয়ার এই গণহত্যায় প্রায় ৮০% মুসলমান জনসংখ্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, প্রায় বিভিন্ন এলাকার মাটি খুড়লে লাশের হাড়-খুলি বের হয়ে আসে এখনও।
বরাবরের মতই সেসময়ও তামাশা দেখেছে মানবাধিকার রক্ষার তথাকথিত সংগঠনগুলো আর জাতিসংঘ। আর ইউরোপের সমস্ত খৃষ্টান দেশ যারা মানবতার বুলি আউড়িয়ে বেড়ায় আজকের দিনে তাদের প্রত্যেকের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সার্বদের গণহত্যার পরও যারা কোনরকম বেঁচে ছিল ১৯৯৪ এর শেষের দিকে প্রচন্ড শীত আর দূর্ভিক্ষে তাদেরও বেশীরভাগ মারা যায়।
১৯৯৫ এ এসে আমেরিকা নড়েচড়ে বসে, যুগোস্লাভ আর রাশিয়ার বিপরীতে আমেরিকা নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ মজবুত করতে আর আন্তর্জাতিক মহলকে দেখিয়ে ইউরোপের একটা মুসলিম দেশকে নিজের জোটে টেনে নিতে বসনিয়ার জীবিত কিছু কংকালের পাশে দাড়ানোর উদ্যোগ নেয় হোয়াইট হাউস। জাতিসংঘে বিভিন্ন নাটক এবং সারায়েভাতে জাতিসংঘের গরু মেরে জুতো দান টাইপ রুটি বিতরণ চলতে তাকে। অবশেষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দাবীর মুখে NATO ৩ সপ্তাহ ধরে বিমান হামলা চালায় বসনিয়ায় সার্বদের মিলিটারী পজিশনগুলোতে। অবরোধ আরোপ করা হয় সরকারের উপরে। ১৯৯৫ এর শেষের দিকে আমেরিকার মধ্যস্থতায় বসনিয়া আলাদা হয়ে যায় সার্বদের থেকে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেদের কলঙ্ক মুছতে ব্যবস্থা নিতে সার্বিয়াকে যখেষ্ট চাপ প্রয়োগ করে এবং বিভিন্ন সুবিধার লোভ দেখিয়ে সার্বিয়াকে রাজি করানো হয় কিছু কাসাইকে আদালতে তোলার জন্য। সার্বিয়া পৃথিবীকে তাদের অনুশোচনা দেখানোর জন্য তাদের সাবেক কোন কোন কসাইকে গ্রেপ্তার করে তুলে দেয় জাতিসংঘের হাতে। নেদারল্যান্ডসের হেগে বসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, প্রায় ১৬০ জনের বিরুদ্ধে চার্জ আনা হয় যদিও তা মূল অপরাধীদের সংখ্যায় কিছুই না। চার্জ আনা অপরাধীদের মধ্যে বসনিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামীও কেউ কেউ ছিল তবে বেশীরভাগই ছিল সার্ব।
গণহত্যার নায়কদের মধ্যে, ২০০১ সালে সাবেক সার্ব প্রেসিডেন্ট স্লোবদান মেলোসেভিচকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ২০০৬ এ সে জেলেই মারা যায়। এছাড়া তৎকালীন সার্ব আর্মি চীফ এবং এবং সুপ্রিম কমান্ডার রাতকো ম্লাদিচ এবং রাদোভান কারাদিচকেও হাজির করা হয় হেগে যারা এখন কারাবন্দী আছে।
শুরুর ঘটনাটা কি আসলে ?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বলকান রাজ্য Bosnia-Herzegovina (বস নিয়া-হার্জেগোভিনা), Serbia (সার্বিয়া), (Montenegro) মন্টেনিগ্রো, (Croatia) ক্রোয়েশিয়া,(Slovenia) স্লোভেনিয়া, (Macedonia) ম্যাসেডোনিয়া;
যুগোস্লাভিয়ার অন্তর্ভূক্ত বলে বিবেচিত হয়।১৯৮০ সালে যুগোস্লাভিয়ার অবিসংবাদিত নেতা Josip Broz Tito এর মৃত্যুর পরে যুগোস্লাভিয়ার বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে সুসম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে । এই প্রক্রিয়া আরো তরান্বিত হয় যখন অত্যাচারী সার্বিয়ান নেতা Slobodan Milosevic ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন।
কারণ, তিনি সার্বদের প্রাধান্য দিয়ে অন্যদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরন করতেন।১৯৯১ সালে Slovenia,Croatia,Macedonia নিজেদেরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষনা করে।
অবিসংবাদিত নেতা Josip Broz Tito এর মৃত্যুর পরে যখন সার্বরা অন্যদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় মনোযোগি ;তখন শান্তিপ্রিয় বসনিয়ান জনগন চাচ্ছিলেন জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বসনিয়ার অস্তিত্ব রক্ষা করতে।
বসনিয়ান নেতা Alija Izetbegovic নেতৃত্বে Coalition সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।১৯৯২ সালের এপ্রিল মাসে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার স্বাধীনতা ঘোষনা করা হয়। এই স্বাধীনতা ঘোষনায় ভয়ংকর হিংস্র হয়ে ওঠে সার্ব সরকার এবং সেনাবাহিনী। শুরু হয় বসনিয়ানদের উপরে নীপিড়ন-হত্যা আর বর্বরতা। অস্ত্র বিরতি চুক্তির নামে বসনিয়ার স্বাধীনতাকামীদেরকে দূর্বল করার চেষ্টা করা হয়। যুগোস্লাভিয়ার পূর্ণ সমর্থন নিয়ে সেই সুযোগেই মানব লাশের ক্ষুধা নিবারণে মেতে ওঠে সার্ব কসাইরা।
বসনিয়া গণহত্যা বলিউডের সিনেমায়: Behind Enemy Lines এবং In the Land of Blood and Honey র মত কিছু সিনেমাতে কিছুদিক দিয়ে চিত্রায়িত হয়েছে বসনিয়ার গণহত্যা, যদিও এসব সিনেমা বিতর্ক মুক্ত নয়। Sami Yusuf সেই গণহত্যার স্মরণে We will never submit...we will never forget... কিংবা সারায়েভা... শিরোনামে বেশ কিছু গান করেছেন এবং সারায়েভাতে কবছর আগে কনসার্টও করেছিলেন।
এখনও প্রতিবছর গণকবর থেকে বহু মানুষের লাশ তুলে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পরিবার-পরিচয় সনাক্ত করে নতুনভাবে দাফন করা হয়।
সেব্রেনিতসা গণহত্যার কিছু ছবি : http://bit.ly/1m2KDyf
সেব্রেনিতসা গণহত্যার কিছু ভিডিও : http://bit.ly/1r5kXsQ
স্ট্যাটাস লিখার ক্ষেত্রে উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন মিডিয়া/বসনিয়ান সাইটে প্রকাশিত তথ্যের সহায়তা নেওয়া হয়েছে
http://www.aljazeera.com/video/europe/2014/07/bosnians-mark-19th-anniversary-srebrenica-2014711165913196326.html

No comments:

Post a Comment