Sunday, 7 June 2015

বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি_ বুদ্ধদেবর মূল দর্শন হতে বিচ্যুত বৌদ্ধরা আজ সন্ত্রাসী হিংস্র জানোয়ারে রূপ লাভ করেছে ॥


বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি_
বুদ্ধদেবর মূল দর্শন হতে বিচ্যুত বৌদ্ধরা আজ সন্ত্রাসী হিংস্র জানোয়ারে রূপ লাভ করেছে ॥

সূফি বরষণ
বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি - আমি বুদ্ধের শরণ নিলাম। বোধি লাভ জীবনের মূখ্য উদ্দেশ্য। বুদ্ধত্ব মানে পূর্ণ সত্য, পবিত্রতা, চরম আধাত্মিক জ্ঞান ॥ বুদ্ধের দর্শনের প্রধান অংশ হচ্ছে দুঃখের কারণ ও তা নিরসনের উপায়। বাসনা হল সর্ব দুঃখের মূল। বৌদ্ধমতে সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে মুক্তিই হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য- এটাকে নির্বাণ বলা হয়॥ মানে জাগতিক লোভ লালসা  ক্রোধ হিংসা বিদ্বেষ মোহসহ সকল প্রকার কামনা বাসনা হতে মুক্ত হয়ে বা দূরে রেখে আত্মার মুক্তি ও পরিশুদ্ধতা লাভে আশায় নির্বাণ অর্জনের সাধনায় মগ্ন থাকা ॥  বুদ্ধদের দর্শনের আলোকে ৩১ প্রকার লোকভুমির উপরে সর্বশেষ স্তর হচ্ছে নির্বাণ ( পরম মুক্তি) ॥ প্রিয় পাঠক উল্লেখ যে, এখানে আর একটি বিষয় হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্ম পুনঃজন্মবাদে বিশ্বাসী ??!!!! আপনাদের অন্তরে একটি প্রশ্ন রাখছি, বুদ্ধদেবের দর্শন হতে বিচ্যুত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা আজ ধর্মের পোশাক পড়ে হিংস্র সন্ত্রাসীতে পরিণত হয়েছে ॥ আর তাদের দর্শন অনুযায়ী পুনরায় জন্মের সময় কি মানুষকে গণহারে
হত্যা নির্যাতন ধর্ষণ লুটের কারণে কুকুর কিংবা তারচেয়ে নিকৃষ্ট কীট হয়ে জন্মাবে না ???
এবার কিছু কথা দেশ সম্পর্কে বলি:
মায়ানমার, প্রাক্তন নাম বর্মা বা বার্মা, প্রাচীন নাম ব্রহ্মদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। মায়ানমারের আনুষ্ঠানিক নাম হল মায়ানমার প্রজাতন্ত্র (বর্মী: ပြည်ထောင်စု သမ္မတ မြန်မာနိုင်ငံတော် প্যিদাউঞ্জু থান্মাদা ম্যামা নাইঙ্গান্দাউ)। মায়ানমারের রাজধানী ইয়াঙ্গুন। 
১৯৮৯ সালে ১৮ জুন থেকে বার্মার সরকারি নাম রাখা হয়েছে মিয়ানমার। ম্রনমা ভাষায় ‘র’-এর উচ্চারণ করা হয় না। যদিও তা লেখা হয়। তাই ম্রনমা ভাষায় দেশটির নাম দাঁড়ায় উচ্চারণগত ভাবে মিয়ানমা। 
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বর্মি ভাষা যে অক্ষরে লেখা হয়, তার উদ্ভব হয়েছে ব্রহ্মীলিপি থেকে। বাংলা অক্ষর আর বর্মি দেখতে অনেক আলাদা হলেও উচ্চারণগত ভাবে তাই খুঁজে পাওয়া যায় মিল। ম্রনমা ভাষা চীনা ভাষা পরিবারভুক্ত। কিন্তু লেখা হয় না চীনা ভাষার মতো চিত্রাক্ষরে। লেখা হয় আমাদের মতো ধ্বনি ও শব্দাংশের (Syllabic) ধারায়। ম্রনমা ভাষাকে বৃহৎ চীনা পরিবারভুক্ত ভাষা হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ বৃহৎ চীনা পরিবারভুক্ত ভাষায় বিভক্তি প্রত্যয় ও উপসর্গ থাকে না। একই শব্দ কিছুটা উচ্চারণের ধরন অনুসারে বাক্যের অর্থ প্রকাশ করে। ম্রনমা ভাষা আর বাংলা ভাষা কাছের ভাষা নয়। যদিও মিয়ানমার হলো আমাদের প্রতিবেশী দেশ। বার্মার সবচেয়ে বড় নদী ইরাবতী। ইরাবতী নামটি পালি ভাষার। ম্রনমা ভাষার নয়। ইরাবতী নামে নদী ভারতের পাঞ্জাবেও আছে। বৌদ্ধধর্ম দু’টি বড় ভাগে বিভক্ত : মহাযান ও হীনযান। চীন হলো মহাযান বৌদ্ধধর্মের মাধ্যমে প্রভাবিত। কিন্তু মিয়ানমার হলো থেরাবাদী বা হীনযান বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। যেমন হলো শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের কিছু অংশের মানুষ। তবে মিয়ানমারে হিন্দুধর্মের দেবদেবীর মূর্তিও পাওয়া গেছে। আর পাওয়া গেছে মহাযান বৌদ্ধধর্মেরও পূজিত বধিসত্ত্বের মূর্তি। তবে এখন ম্রনমারা হলেন হীনযান বা থেরাবাদী বৌদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে এরা অনেক রকম আত্মার পূজা করেন। যাদের বলা হয় নাথ। ধর্মের কথা বলতে হচ্ছে, কারণ ধর্ম নিয়ে মিয়ানমারে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। মিয়ানমারে চলেছে মুসলিম নিধন। ধর্মের দিক থেকে একটি পুরনো হিসাব অনুসারে মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার ৮৪ শতাংশ হলেন থেরাবাদী বৌদ্ধ। পাঁচ শতাংশ হলেন প্রেতাত্মার পূজারি (Animists), চার শতাংশ হলেন মুসলমান, চার শতাংশ হিন্দু আর তিন শতাংশ হলেন খ্রিষ্টান। মিয়ানমারে যে কেবল ধর্ম নিয়ে বিরোধ আছে, তা নয়; ভাষাগত জাতিসত্তা নিয়েও আছে বিশেষ বিরোধ। এখানে একটি
নাতিদীর্ঘ  আলোচনা তুলে ধরলাম ॥ এখানের একটি শব্দও আমি নিজে বানিয়ে লিখি নাই ॥ বৌদ্ধ ধর্মের কথা যেভাবে বলা হয়েছে আমি তাই লিখেছি॥ আপনি পরীক্ষা করেও দেখতে পারেন ॥ এটা পরিষ্কার সত্য বৌদ্ধরা আজ নিজেদের ধর্ম দর্শন হতে বিচ্যুত হয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসীতে পরিণত হয়েছে বলতে দ্বিধার কোনো কারণ নাই॥॥
বুদ্ধের দর্শনঃ
বুদ্ধের দর্শনের প্রধান অংশ হচ্ছে দুঃখের কারণ ও তা নিরসনের উপায়। বাসনা হল সর্ব দুঃখের মূল। বৌদ্ধমতে সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে মুক্তিই হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য- এটাকে নির্বাণ বলা হয়। নির্বাণ শব্দের আক্ষরিক অর্থ নিভে যাওয়া (দীপনির্বাণ, নির্বাণোন্মুখ প্রদীপ), বিলুপ্তি, বিলয়, অবসান। কিন্তু বৌদ্ধ মতে নির্বাণ হল সকল প্রকার দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ। এই সম্বন্ধে বুদ্ধদেবের চারটি উপদেশ যা চারি আর্য সত্য (পালিঃ চত্বারি আর্য্য সত্যানি) নামে পরিচিত। তিনি অষ্টবিধ উপায়ের মাধ্যমে মধ্যপন্থা অবলম্বনের উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন।
পরকালঃ
বুদ্ধ পরকাল সম্বন্ধে অনেক কিছুই বলে গেছেন, পরকাল নির্ভর করে মানুষের ইহ জন্মের কর্মের উপর । মৃত্যুর পর মানুষ ৩১ লোকভুমির যে কোনো একটিতে গমন করে। এই ৩১ লোকভুমি হছে ৪ প্রকার অপায় : তীর্যক (পশু-পাখি কুল), প্রেতলোক (প্রেত-পেত্নী), অসুর (অনাচারী দেবকুল), নরক (নিরয়)। ৭ প্রকার স্বর্গ : মনুষ্যলোক, চতুর্মহারাজিক স্বর্গ, তাবতিংশ স্বর্গ, যাম স্বর্গ, তুষিত স্বর্গ, নির্মানরতি স্বর্গ, পরনির্মিত বসবতি স্বর্গ। রুপব্রম্মভূমি (১৬ প্রকার) = ১৬ প্রকার রুপব্রম্মভূমি । অরুপব্রম্মভূমি ( ৪ প্রকার) = ৪ প্রকার অরুপব্রম্মভূমি । মোট ৩১ প্রকার । এই ৩১ প্রকার লোকভুমির উপরে সর্বশেষ স্তর হচ্ছে নির্বাণ ( পরম মুক্তি ) [৩]যেমন : ইহজন্মে মানুষ যদি মাতৃহত্যা , পিতৃহত্যা , গুরুজনের রক্তপাত ঘটায় তাহলে মৃত্যুর পর সেই মানুষ চতুর অপায়ে ( তীর্যক, প্রেতলোক, অসুর, নরক) জন্মগ্রহণ করে, আর ইহজন্মে মানুষ যদি ভালো কাজ করে তাহলে মৃত্যুর পর সেই মানুষ বাকি ২৮ লোকভুমিতে গমন করে।

বৌদ্ধধর্মের মূলনীতিঃ
চতুরার্য সত্য: দুঃখ নিরোধের পথ
অষ্টাঙ্গিক মার্গ:
সম্যক ধারণা/ চিন্তাসম্যক সংকল্পসম্যক বাক্যসম্যক আচরণসম্যক জীবনধারণসম্যক মননসম্যক ধ্যানসম্যক সমাধি॥
এই আটটি উপায়কে একত্রে বলা হয় আয্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ, যার দ্বারা জীবন থেকে দুঃখ দূর করা সম্ভব।
ত্রিশরণ মন্ত্র:
আর্যসত্য এবং অষ্টবিধ উপায় অবলম্বনের পূর্বে ত্রিশরণ মন্ত্র গ্রহণ করতে হয়।
এই মন্ত্রের তাৎপর্য:
বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি - আমি বুদ্ধের শরণ নিলাম। বোধি লাভ জীবনের মূখ্য উদ্দেশ্য। বুদ্ধত্ব মানে পূর্ণ সত্য, পবিত্রতা, চরম আধাত্মিক জ্ঞান।
ধম্মং শরণং গচ্ছামি - আমি ধর্মের শরণ নিলাম। যে সাধনা অভ্যাস দ্বারা সত্য লাভ হয়, আধ্যাত্মিকতার পূর্ণ বিকাশ হয় তাই ধর্ম।
সঙ্ঘং শরণং গচ্ছামি - আমি সঙ্ঘের শরণ নিলাম। যেখানে পূর্ণ জ্ঞান লাভের জন্য ধর্মের সাধনা সম্যক্ ভাবে করা যায় তাই সঙ্গ ॥

বুদ্ধ দুঃখ কি, দুঃখের কারণ, দুঃখ দূর করার উপায় সম্বন্ধে উপদেশ দিয়েছেন। তাঁর মতে জীবন দুঃখপূর্ণ। দুঃখের হাত থেকে কারও নিস্তার নেই। জন্ম, জরা, রোগ, মৃত্যু সবই দুঃখজনক। মানুষের কামনা-বাসনা সবই দুঃখের মূল। মাঝে মাঝে যে সুখ আসে তাও দুঃখ মিশ্রিত এবং অস্থায়ী। অবিমিশ্র সুখ বলে কিছু নেই। নিবার্ণ লাভে এই দুঃখের অবসান ঘটে। কামনা-বাসনার নিস্তারের মাঝে অজ্ঞানের অবসান ঘটে। এতেই পূর্ণ শান্তি অর্জিত হয়।

ধর্মগ্রন্থ

"ত্রিপিটক" বৌদ্ধদের ধর্মীয় গ্রন্থের নাম যা পালি ভাষায় লিখিত। এটি মূলত বুদ্ধের দর্শন এবং উপদেশের সংকলন। পালি তি-পিটক হতে বাংলায় ত্রিপিটক শব্দের প্রচলন। তিন পিটকের সমন্বিত সমাহারকে ত্রিপিটক বোঝানো হয়েছে। এই তিনটি পিটক হলো বিনয় পিটক , সূত্র পিটক ও অভিধর্ম পিটক। পিটক শব্দটি পালি । এর অর্থ - ঝুড়ি, পাত্র , বক্স ইত্যাদি। অর্থাৎ যেখানে কোনো কিছু সংরক্ষন করা হয়।বৌদ্ধদের মূল ধর্মীয় গ্রন্থ ॥
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ



No comments:

Post a Comment