সন্ত্রাসী বৌদ্ধদের হিংস্রতায় বার্মার মুসলমানরা আজ মৃত্যু পথযাত্রী ॥
সূফি বরষণ
বার্মায় চলছে মুসলিম নিধন,॥॥
নিজ পৈত্রিক ভূমি থেকে বিতাড়িত বার্মার মুসলমানরা বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের প্রতিহিংসার শিকার ॥ বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের আগ্রসী দমন নীতির ফলে আমার মুসলিম ভাইয়েরা আজ সর্বস্ব হারিয়ে পড়েছে উভয় সংকটে॥ যাকে বলে জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ॥ তারা না পারছে থাকতে না পারছে নিজেদের বসত ভিটায় ফিরতে ?? আর না পারছে একজন মানুষ হিসেবে তার মৌলিক অধিকার নিজে বাঁচতে ॥ বার্মার মুসলমানরা গরীব বা অশিক্ষিত ছিল না॥
তারা শিক্ষা দীক্ষায় ব্যবসা বাণিজ্যে ছিল উন্নত ॥ দেশের সামরিক সরকার আর হিংস্র সন্ত্রাসী বৌদ্ধরা কেড়ে নিয়েছে মুসলমানদের সব কিছুই ॥
॥আজ পৃথিবীতে সবচেয়ে নির্যাতিত নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর নাম রোহিঙ্গা
মুসলিম ॥
দেশটিকে এক সময় আমরা বাংলায় বলতাম ব্রহ্মদেশ। আর ইংরেজিতে বলতাম বার্মা (Burma)। ফারসিতে বলা হতো বারহামা। এই বারহামা নাম থেকেই ইংরেজিতে উদ্ভব হতে পেরেছিল বার্মা নামটি। ‘ম্রনমা’ শব্দটার মানে হলো মানুষ, যাদের আমরা এক সময় বলতাম বর্মি, তারা নিজেদের বলেন ‘ম্রনমা’। মিয়ানমার নামটি এসেছে ম্রনমা নাম থেকে। ১৯৮৯ সালে ১৮ জুন থেকে বার্মার সরকারি নাম রাখা হয়েছে মিয়ানমার। ম্রনমা ভাষায় ‘র’-এর উচ্চারণ করা হয় না। যদিও তা লেখা হয়। তাই ম্রনমা ভাষায় দেশটির নাম দাঁড়ায় উচ্চারণগতভাবে মিয়ানমা।
মুসলিম বসতি ঃ
আরাকান এখন মিয়ানমারের অংশ। কিন্তু আরাকান (যাকে এখন বলা হচ্ছে রাখাইন প্রদেশ) তা ছিল গৌড়ের সুলতানদের সামন্তরাজ্য। আরাকানের এক রাজা (মেং সোআম্উন) পালিয়ে আসেন গৌড়ে। কারণ দক্ষিণ বার্মার এক রাজা দখল করেন তার রাজত্ব। গৌড়ের সুলতান জালাল-উদ্দীন মুহম্মদ শাহ তাকে তার রাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য সৈন্যসামন্ত দিয়ে সাহায্য করেন। এবং তিনি তার রাজত্ব পুনরুদ্ধার করতে পারেন গৌড়ের প্রদত্ত সৈন্যসামন্ত দিয়ে, যাদের বলা হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলমান, তারা প্রধানত হলেন এদের বংশধর। আরাকানের রাজা গৌড় থেকে যাওয়া মুসলমান সৈন্যসামন্তকে তার রাজ্যের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য রেখে দেন আরাকানে। আরাকানের রাজা নতুন রাজধানী স্থাপন করেন, যার নাম দেন রোহং। রোহংকে বাংলায় বলা হতে থাকে রোসঙ্গ নগর। এক সময় গোটা আরাকানকেই বাংলায় বলা হতো রোসাঙ্গ দেশ। আরাকানের সব মুসলমানই অবশ্য রোহিঙ্গা নন। যদিও আরাকানবাসী মুসলমানেরা সাধারণভাবে এখনো রোহিঙ্গা নামেই পরিচিত। কিন্তু পুরো উত্তর আরাকানে এক সময় চলেছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা। আরাকানের উত্তরাঞ্চলে চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে বহু মুসলমান গিয়ে উপনিবিষ্ট হয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আরাকানসহ পুরো বার্মা চলে যায় জাপানের দখলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আরাকানে মুসলমানদের সমর্থন পাওয়ার জন্য ব্রিটেন বলে, আরাকান আবার তারা ফিরে পেলে উত্তর আরাকানকে পৃথক করে গড়া হবে একটি পৃথক প্রদেশ। এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করবে ॥ কিন্তু ইংরেজরা ওয়াদা ভঙ্গ করে॥
আরাকানে মুসলমানদের বসতি হাজার বছরেরও বেশি পুরনো, তার পেছনে দলিল রয়েছে। সে দলিল রয়েছে খোদ মিয়ানমারে। সেখানে মুসলমান বসতির সূত্রপাত প্রসঙ্গে বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ড. মুহাম্মদ এনামুল হক আরাকানের জাতীয় ইতিহাসবিষয়ক গ্রন্থ ‘রাজোয়াং’ থেকে নিম্নোক্ত বিবরণটি উদ্ধৃত করেছেন : “খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর শেষ পাদে যখন আরাকান রাজ মহতৈং চন্দয় (গধযধঃড়রহম ঞংধহফুধ- ৭৮৮-৮১০ অ.উ.) রাজত্ব করছিলেন, তখন কতকগুলো মুসলমান বণিক জাহাজ ভাঙিয়া যাওয়ার ফলে আরাকানের দক্ষিণ দিকস্থ ‘রনবী’ (আধুনিক রামরী) দ্বীপে উঠিয়া পড়েন। তাঁহারা আরাকানীগণ কর্তৃক ধৃত হইয়া রাজার সম্মুখে নীত হয়েছিলেন। রাজা তাঁহাদের দুরবস্থা দেখিয়া দয়াপরবশ হইয়া তাঁহাদিগকে স্বীয় রাজ্যে গ্রামে গিয়া বসবাস করিতে আদেশ দিয়াছিলেন।” ড. এনামুল হক মনে করেন যে, “রাজোয়াংএ উল্লিখিত এ সব মুসলমান বণিক আরব দেশীয় ছিলেন এবং চাটগাঁ থেকে উপকূল বেয়ে দক্ষিণ মুখে যাবার পথে, কিংবা দক্ষিণ উপকূল হয়ে উত্তরে চাটগাঁর দিকে এগুবার সময়ই ঝঞ্ঝাতাড়িত হয়ে সম্ভবত তারা রামরী দ্বীপে গিয়ে আশ্র্য় নিয়েছিলেন।” সুপ্রাচীন আরবীয় ঐতিহ্য অনুসারে একই সাথে জীবিকা অর্জন ও ধর্ম প্রচারের সুমহান চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসলমানেরা দলে দলে নৌ ও স্থলপথে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এরই অংশ হিসেবে খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীর প্রারম্ভে বার্মায় মুসলিম উপনিবেশ গড়ে ওঠে। জীবন-জীবিকার অনিবার্য প্রয়োজনে স্থানীয় মহিলাদেরকে বিবাহ-শাদি করে তারা সেখানে ধনে-জনে বর্ধিত হতে থাকে।
মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর ভয়াবহ হামলার কথা নিয়ে প্রচ্ছদ কাহিনী লেখা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক Time পত্রিকায় (১ জুলাই ২০১৩ সংখ্যায়)। টাইম পত্রিকা মুসলিমদের দিয়ে কোনোভাবেই প্রভাবিত নয়। তার প্রতিবেদনকে তাই গ্রহণ করতে হয় যথেষ্ট বস্তুনিষ্ঠ হিসেবে। শুধুমাত্র টাইম ম্যাগাজিন নয় বার্মার মুসলমানদের উপরে গণহত্যার চিত্র আল জাজিরাসহ সব মিডিয়া প্রচারিত হয়েছে এবং হচ্ছে ॥
মিয়ানমারে ১৯৬২ সাল থেকে চলেছে সামরিক শাসন। সেখানে নেই কোনো গণতন্ত্র। মিয়ানমারের সামরিক শাসকেরা বৌদ্ধ পুরোহিতদের সমর্থনে চালাতে চেয়েছেন দেশকে। উগ্র বৌদ্ধবাদীদের এরা দিয়েছেন আশকারা। যার ফলে বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পেরেছে। এতে মিয়ানমারের হিন্দুরা আক্রান্ত হচ্ছেন না। কারণ তাহলে তাদের পড়তে হবে ভারতের আক্রোশে। কিন্তু মুসলমানদের হত্যাসহ বৌদ্ধ ধর্মের জয়গান করে বার্মার সামরিক জান্তা যেন পেতে চাচ্ছে সে দেশের বিরাট জনসমর্থন। মুসলমানেরা সে দেশে হয়ে উঠেছেন বিশেষ ঘৃণাবস্তু। রাজনৈতিক পরিভাষায় ইংরেজিতে যাকে বলে Hate-object এমন ঘৃণাবস্তু সৃষ্টি করে রাজনীতি করার ঘটনা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মোটেও বিরল নয়। বলা হয়, বৌদ্ধ ধর্মের মূল কথা হলো, অহিংসা পরম ধর্ম। কিন্তু ধর্মের নামে বৌদ্ধরা হয়ে উঠছেন যথেষ্ট হিংস্র। বৌদ্ধ ধর্মের মর্মবাণী বৌদ্ধদের হাতে হতে পারছে অস্বীকৃত।
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ
No comments:
Post a Comment