Friday 17 June 2016

বদরুদ্দীন উমর ও বাংলাদেশের ‘হিন্দু’ প্রশ্ন


ফরহাদ মজহার
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০১৬, ০০:০০:০০
অ-অ+
বদরুদ্দীন উমর সম্প্রতি বেশ কয়েকটি লেখায় বাংলাদেশে হিন্দু প্রশ্ন ও সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গ তুলেছেন। তার দুটো লেখা গুরুত্বপূর্ণ। ‘এটা কি সাম্প্রদায়িকতা?’, লিখেছেন ২৫ মে ২০১৪ সালে, যুগান্তরে; দ্বিতীয় লেখাটি হচ্ছে, ‘বাংলাদেশে প্রকৃত সংখ্যালঘু কারা?’। এটিও ছাপা হয়েছে যুগান্তরে সম্প্রতি, ৫ জুন ২০১৬ তারিখে। দেখলাম তার এই লেখাগুলো বাম বলে পরিচিত অনেকে পছন্দ করেনি। যাদের মধ্যে তার পুরনো অনুসারী, এমনকি এখনকার অনুরাগীরাও রয়েছে।

অথচ যে দুটো প্রশ্ন বদরুদ্দীন উমর তুলেছেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাকে আমরা সাম্প্রদায়িকতা বলব? কীভাবে সেটা নির্ধারিত হবে? দ্বিতীয় প্রশ্ন, যদি আমরা সংখ্যালঘু নিয়ে কথা বলতে চাই তাহলে প্রকৃত সংখ্যালঘু কারা? কেন আমরা ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর অস্তিত্ব ভুলে যাচ্ছি? প্রকৃত সংখ্যালঘু নির্ণয়ের পদ্ধতিও বা কীভাবে ঠিক হবে?

বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর সাম্প্রতিককালে নির্যাতন বেড়েছে, উমর তা অকপটে স্বীকার করেন। কিন্তু তাকে তিনি সাম্প্রদায়িকতা দিয়ে ব্যাখ্যা করতে রাজি নন। কীভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে সে বিষয়ে বিভিন্ন সময় ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভূমিকা সম্পর্কে তার লেখালিখি থেকে বুঝে নিতে হবে। শুধু এই দুটি লেখা থেকে বোঝা যাবে না। তাছাড়া বদরুদ্দীন উমর ভালোই জানেন যে, এখন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জনগণকে খেয়ে না খেয়ে ‘সাম্প্রদায়িক’ প্রমাণ করার পেছনে খুবই সুনির্দিষ্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনীতি কাজ করে। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ফলে বাংলাদেশের হিন্দু প্রশ্ন মীমাংসার ক্ষেত্রে তিনি আমাদের চিন্তার অভিমুখ পদ্ধতিগতভাবে বদলানোর প্রস্তাব করছেন। এই প্রস্তাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি তার লেখা নিয়ে তর্ক আন্তরিক ও ইতিবাচক দিকেই আমাদের নেবে। তার লেখা পড়ে বামদের মতো আমাদের ভিরমি খাবার এবং তাকে অন্যায়ভাবে সমালোচনা করার কোনো দরকার নাই।

বাংলাদেশের যেসব বাম তাকে অন্যায়ভাবে সমালোচনা করছে, তাদের মূল সমস্যা হচ্ছে চরম হীনমন্যতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক অসততা। এদের ধারণা, দেশকে সাম্প্রদায়িক প্রমাণ করতে না পারলে বুঝি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে হিন্দু বা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের আর কোনো ব্যাখ্যা দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের সমাজকে দোষী সাব্যস্ত করে আন্তর্জাতিক কাঠগড়ায় না তুলে তারা স্বস্তি পায় না। হিন্দু যে কারণেই নির্যাতিত হোক তাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের হাতে সংখ্যালঘু হিন্দুর অত্যাচার-নির্যাতন হিসেবে ব্যাখ্যা করতেই হবে। এই এক বিচিত্র ও বিকৃত মানসিকতা। স্বীকার না করলে বুঝি হিন্দুর ওপর নির্যাতন অস্বীকার করা হয়! মোটেও তা নয়। বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ। বামদের হীনমন্যতার কারণে তারা মনে করে বাংলাদেশে ‘সাম্প্রদায়িকতার সামাজিক ভিত্তি নাই’ বলা মানে এ দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের অকূল সাগরে ভাসিয়ে দেয়া, তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ বাদ দেয়া। এখানেই বুদ্ধিবৃত্তির চরম অসততা ও দীর্ঘদিনের চিন্তার আবর্জনা সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে বামেরা বয়ে বেড়ায়। অথচ দুটো লেখারই প্রধান একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, অত্যাচার-নির্যাতন, মন্দির ভাঙা, জমি-সম্পত্তি দখল করে নেয়া ইত্যাকার দুর্বৃত্তপনা ও লুণ্ঠনবাজি আমরা রুখব কী করে?

উমর বলছেন, উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের কারণে ‘হিন্দুরা বাংলাদেশীদেরই অংশ। হিন্দুরা ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু হলেও জাতিগতভাবে সংখ্যাগুরু। কাজেই যে বাঙালিরা বাংলাদেশে শাসনক্ষমতায় রয়েছে তাদের মধ্যে বাঙালি হিন্দুরাও আছে। এটা মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশে মুসলমানদের শাসন বলে যদি কিছু থাকে তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল বাঙালিদের শাসন।’ শাসন ক্ষমতার চরিত্র বিচার করলে বাংলাদেশে মুসলমানরা শাসক নয়, বাঙালিরাই শাসক আর হিন্দুরা শাসক শ্রেণীর অংশ। ‘এদিক দিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। বাঙালিরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতি এবং সাঁওতাল, গারো, হাজং, রাখাইন ইত্যাদি জাতিগত সংখ্যালঘু ও উর্দুভাষী অবাঙালি সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনকারী। বাংলাদেশের সর্বত্র যে শোষণ-নির্যাতন চলে সে শোষণ-নির্যাতন ধর্ম নির্বিশেষে হিন্দু-মুসলমান বাঙালিরা একত্রেই করে থাকে।’ তাহলে জাতিবাদী বাঙালি শাসকদের অংশ হিন্দুরা স্রেফ ধর্মের পার্থক্যের কারণে বাংলাদেশে ‘প্রকৃত সংখ্যালঘু’ হতে পারে না। বাঙালি জাতির অংশ হিসেবে তার সম্প্রদায়গত অবস্থান বরং নিপীড়কের, নির্যাতিতের নয়। এদেশের আদিবাসী বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তাই ‘প্রকৃত সংখ্যালঘু’। বদরুদ্দীন উমর যেভাবে সিদ্ধান্ত টেনেছেন তার পর্যালোচনা হতে পারে; কিন্তু সেক্ষেত্রে তার তোলা প্রশ্নের গভীরতার সঙ্গে পর্যালোচনার দূরদৃষ্টির সম্মিলন ঘটা জরুরি।

উমর বলছেন, এই পরিস্থিতিতে ‘সাম্প্রদায়িকতার কারণ ও রাজনৈতিক চরিত্র বিষয়ে যারা অজ্ঞ, তারাই কোনো সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর যে কোনো ধরনের আক্রমণকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিয়ে থাকে। মতলববাজরা যে এ কাজ করে থাকে এটা সবারই জানা।’ তার লেখা মতলববাজদের বিরুদ্ধে। মতলববাজরা হচ্ছে ‘আওয়ামী ঘরানার কিছু বুদ্ধিজীবী’, সংবাদপত্র ও কিছু কিছু ব্যক্তির বক্তৃতা-বিবৃতি ও প্রচারণা। তিনি স্বীকার করেন, ‘হিন্দুসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ আগের থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে।’ কিন্তু তার কারণ সাম্প্রদায়িকতা নয়। তার বক্তব্য হচ্ছে, সাম্প্রদায়িকতা কোনো হাওয়াই জিনিস নয়, তার ‘সুনির্দিষ্ট সামাজিক ভিত্তি’ থাকে। সেটা ব্রিটিশ ভারতে ছিল, পাকিস্তানের প্রথম দিকে থাকলেও তা ধীরে ধীরে অপসারিত হয়। ‘অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিকশিত হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির মাধ্যমে তার সামাজিক ভিত্তি বিনষ্ট হয়।’ অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চর্চার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আবির্ভাবে উমরের কাছে প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার আর্থ-সামাজিক ভিত্তি নাই। সাম্প্রদায়িকতার কোনো আর্থিক ভিত্তি না থাকলে উমর তাকে সাম্প্রদায়িক বলতে নারাজ।

যারা উমরের সমালোচনা করেছেন, তাদের কাছে এ জায়গাটি হচ্ছে সবচেয়ে আপত্তির জায়গা। উমরের বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে তারা বলতে চান রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িকতা আছে। অতএব উমর ঠিক বলেননি। কিন্তু পুরো সমাজ নিয়ে উমর কথা বলছেন। হিন্দুর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন কিংবা হিন্দুর জমি দখল ইত্যাদি বাংলাদেশের সমাজ আদৌ সঠিক গণ্য বা বরদাশত করে কি? তাহলে একে অন্যের জমি লুণ্ঠনকারী বা ভূমিদস্যুদের কাজ না বলে এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি না করে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন বলছি কেন? দুর্বৃত্ত ও ভূমিদস্যুদের বিরোধিতা না করে কেন তার ওপর সাম্প্রদায়িকতার রঙ চড়ানো? হাওয়ায় তলোয়ার ঘুরানো কেন, সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন। তদুপরি মূল ইস্যু ও বাস্তব সমস্যা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার জন্য জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের রাজনীতির যারা বিরোধী, তাদের দোষারোপ করাই বা কেন? এদের সঙ্গে প্রতিক্রিয়াশীলতার লড়াইয়ের চরিত্র ভিন্ন। জামায়াতে ইসলামীকে হিন্দুর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে দেখা যায়নি, শুরু থেকেই তাদের আক্রমণের লক্ষ্য গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও সমাজতান্ত্রিক শক্তি। জামায়াতের আক্রমণের যারা মূল লক্ষ্যবস্তু তাদের বিপুল ও অধিকাংশ মানুষই মুসলমান পরিবারের সদস্য। হিন্দু না। কিন্তু তারা ইসলামী শাসন এবং ইসলামী আইন প্রবর্তন ও কার্যকর করার বিরোধী। তাহলে হিন্দু নির্যাতনের অপরাধ জামায়াতে ইসলামীর ওপর চাপিয়ে দেয়া মূলত গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও সমাজতান্ত্রিক শক্তির বাস্তব লড়াইয়ের চরিত্র অস্বীকার করা। লক্ষ্য করেছি, যারা উমরের সমালোচনা করেছেন তারা এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি এড়িয়ে গিয়েছেন। এখানেও বামদের বুদ্ধিবৃত্তিক অসততা ধরা পড়ে।

প্রশ্ন হচ্ছে, হিন্দুসহ অন্য ধর্মাবলম্বীদের বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান তাদের সমাজের অন্তর্গত মনে করে কি? নাকি তাদের দুশমন গণ্য করে। দুশমনির মাত্রা কতটুকু হলে পুরো সমাজকে আমরা সাম্প্রদায়িক বলে চিহ্নিত করতে পারি? বিশ্বজিতকে যখন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের খুনিরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করল, তাকে কীভাবে বিচার করব? বিশ্বজিৎ বারবার বলেছিল, আমি হিন্দু; তারপরও তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাহলে কি আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন একটি সাম্প্রদায়িক দল?

হিন্দুরা সম্প্রদায় হিসেবে বিশেষভাবে নির্যাতিত হচ্ছে সেটাও ভুল। উমর বলছেন, ‘দেশে সাধারণভাবে যে নৈরাজ্য এবং আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, তাতে সম্প্রদায় নির্বিশেষে মানুষকে নির্যাতন করা হচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা বিপন্ন হচ্ছে, অনেকে আওয়ামী লীগ ও তাদের সরকারি লোকদের দ্বারা অপহৃত এবং নিহত হচ্ছেন। এদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যাটি সব থেকে বেশি, কারণ দেশে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে তারাই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু হিন্দুরা বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি অংশ, শতকরা নয়-দশ ভাগের মতো। কাজেই সাধারণভাবে দেশে সরকারি-বেসরকারি ক্রিমিনালদের দ্বারা মানুষের ওপর যে নির্যাতন হচ্ছে, তার দ্বারা জনগণের অংশ হিসেবে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে এটাও বলা দরকার যে, হিন্দুদের জনসংখ্যার তুলনায় এ সংখ্যা অল্প। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যা লক্ষ করার বিষয় তা হচ্ছে, মুসলমানরা অনেক অধিক সংখ্যায় ক্ষতিগ্রস্ত, এমনকি নিহত হলেও কেউ বলে না যে, মুসলমানরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বা সাম্প্রদায়িকভাবে মুসলমানদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। কিন্তু কোনো হিন্দু এভাবে নির্যাতনের শিকার হলেই কিছু লোক সমস্বরে বলতে থাকে, ‘হিন্দুদের’ ওপর নির্যাতন হচ্ছে!’’ সাধারণভাবে বাংলাদেশের জনগণ যেভাবে নিপীড়িত, গুম-খুন হচ্ছে তাকে ধামাচাপা দিয়ে হিন্দুর ওপর নির্যাতনের প্রচারকে উমর অশনিসংকেত হিসেবে দেখেছেন।

উমরের লেখা থেকে যা বুঝেছি তা হল, তিনি কোনো পরিভাষা বা সংজ্ঞা ব্যবহারের আগে তাকে কোন অর্থে কী বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহার করছেন সে বিষয়ে পরিচ্ছন্ন থাকতে চান। এর মূল কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে প্রমাণ করার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিপদ সম্পর্কে তিনি সজ্ঞান ও সতর্ক। বাস্তবে সাধারণ মানুষের ওপর যে নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চলছে এবং হিন্দুদের ওপর নির্যাতন, উভয়ই বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে যুক্ত, আলাদা কিছু নয়। তুলনায় যারা তার সমালোচনা করেছেন তাদের কাছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতা গৌণ। তাদের সমালোচনা উমরের কথাই প্রমাণ করে। তারা বাস্তবে কী ঘটছে তা বিচার না করে কোনো সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর যে কোনো ধরনের আক্রমণকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিয়ে থাকে। তারা ‘মতলববাজ’। দিল্লি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নই তাদের লক্ষ্য। উমরের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিত ও আঞ্চলিক আন্তর্জাতিক বাস্তবতা এড়িয়ে ‘সাম্প্রদায়িকতাকে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক একটা তাৎপর্য দিয়েই ব্যাখ্যা করা যায় না’ বলে যারা উমরের সমালোচনা করছেন, তারা মতলববাজদের দলেই ভিড়লেন। তারা দাবি করছেন, ‘সাম্প্রদায়িকতা এখানে শক্তিশালীভাবেই দৃশ্যমান।’ কিন্তু সেটা বাস্তবে নাকি প্রচার প্রোপাগান্ডার ফলে, তাদের লেখা থেকে সেটা বোঝার কোনো উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে তারা হিন্দুর সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের দুর্বলতার কথা বলছেন। তাদের এ দাবির ভিত্তি দুর্বল। কারণ বাংলাদেশে ক্ষমতার চরিত্রে বাঙালি জাতি ও জাতীয়তাবাদের আধিপত্য এবং আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে হিন্দুত্ববাদী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের হিন্দুর শক্তির সম্পর্ক বিচার করলে সম্প্রদায় হিসেবে, এমনকি ব্যক্তি হিসেবেও বাংলাদেশে হিন্দু শক্তিশালী ও শাসকশ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

দুই

তবে বদরুদ্দীন উমর পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের কালপর্বে বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যে অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে তৈরি হওয়া বিভেদ, বিভাজন ও সামাজিক বিখণ্ডিভবন নিয়ে কিছু লিখেছেন বলে আমার চোখে পড়েনি। তার উত্থাপিত প্রশ্নের সঠিক বিবেচনার জন্য সেদিকটিও বিবেচনায় নেয়া জরুরি। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি নিছকই ধর্ম বিশ্বাসজাত পরিচয় নয়। ধর্মীয় পরিচয়ের মধ্যে তাদের ঐতিহাসিক তাৎপর্য সীমাবদ্ধ নয়। যদিও ধর্মবিশ্বাসীরা ইতিহাস থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন গণ্য করে অনৈতিহাসিকভাবেই নিজেদের নিয়ে ভাবতে অভ্যস্ত। ইংরেজিতে একটা পরিভাষা আছে- নিজের আত্মপরিচয়কে ‘এসেনশিয়ালাইজ’ করা। অর্থাৎ ঐতিহাসিকভাবে আত্মপরিচয়ের উদ্ভব ও বিবর্তন বিচার না করে ধর্মীয় পরিচয়ের দ্বারা নির্ণিত পরিচয়কেই চিরায়ত, পূর্বনির্ধারিত ও স্বতঃসিদ্ধ সত্তা গণ্য করা। উপমহাদেশে বিভিন্ন ধর্ম এবং ধর্ম সম্প্রদায় থেকে সঞ্জাত পরিচয় সম্পর্কে আমরা এভাবেই ভাবতে অভ্যস্ত।

অন্যদিকে সংখ্যাগুরু/সংখ্যালঘু বিভাজনও বিভ্রান্তি তৈরি করে। সামাজিক মানুষ ও তাদের সমাজকে নিছকই সংখ্যা দিয়ে বিবেচনার রীতি আধুনিক রাষ্ট্র এবং ভোটের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ফলে প্রসঙ্গের বাইরে বিমূর্তভাবে ‘সংখ্যালঘু’ কথাটিরও অপব্যবহার ঘটে। আধুনিক রাষ্ট্রে ক্ষমতা তৈরি ও বৈধ করার প্রক্রিয়ার বিচার ছাড়া ‘সংখ্যালঘু’ বর্গটির যথেচ্ছ ব্যবহার প্রোপাগান্ডা ও প্রচারের কাজেই বেশি ব্যবহার করা হয়।

ইতিহাসের খবর নেয়া বেশ পরিশ্রমের কাজ বটে। সেই খবর নিতে হলে প্রাচীন আর্য বনাম অনার্যের দ্বন্দ্ব, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও অনার্যদের পরাজয়, বর্ণাশ্রম প্রথাভিত্তিক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা কায়েম এবং তার বিরুদ্ধে হাজার বছরের নিু জাতের মানুষের লড়াই, ঔপনিবেশিক শাসন পদ্ধতির মধ্যে হিন্দু-মুসলমান ভেদ নীতি, উপমহাদেশে মুসলমানদের আগমন, সাম্রাজ্য ও সুলতানি প্রতিষ্ঠা, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে জমিতে বিশেষ চরিত্রের ব্যক্তিগত সম্পত্তি কায়েম এবং তার ওপর হিন্দু জমিদার এবং মহাজন শ্রেণী গঠন, ঔপনিবেশিক কলকাতা ও বাংলার নবজাগরণ নামক বর্ণহিন্দুর ভাষা, সংস্কৃতি ও ধ্যান-ধারণার আধিপত্য, বাংলা ভাগের ইতিহাস এবং কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের রাজনীতি- ইত্যাদি নানান বিষয় নিয়ে গবেষণা ও ভাবনাচিন্তার দরকার আছে। ফলে হিন্দু নিজেকে শাশ্বত কাল থেকেই হিন্দু মনে করে। মুসলমান নিজেকে বাবা আদমের সময় থেকেই মুসলমানভাবে। উপমহাদেশে তার সুনির্দিষ্ট ইতিহাস জানতে সে বিশেষ আগ্রহী নয়। এমনকি হিন্দু কীভাবে নিজেকে অন্য সম্প্রদায়, বিশেষত মুসলমানের বিপরীতে নিজের পরিচয় নির্ণয় বা নির্মাণ করে সে বিষয়েও হিন্দু সচেতন নয়। তেমনি মুসলমানও নয়। মুসলমান যা কিছুকে পৌত্তলিকতা কিংবা তার ধর্মের বিপরীত চর্চা হিসেবে দেখে, তার বিপরীতেই নিজেকে মুসলমান হিসেবে উপলব্ধি করে। কিন্তু নির্মাণ করে বলেই তারা সাম্প্রদায়িক হয়ে যায় না। পরস্পরের মধ্যে পার্থক্য ও বৈচিত্র্য নানা ধরনের দ্বন্দ্ব তৈরি করতেই পারে। সেই দ্বন্দ্বের সুনির্দিষ্ট চরিত্র বিশ্লেষণ করা ও বোঝা দরকার। উমর বলছেন, ‘হিন্দুদের ওপর আক্রমণ করে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করার যে চেষ্টা বিভিন্ন জায়গায় এখন দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সম্পর্ক নেই। এ আক্রমণকে দেশে বিরাজমান লুটপাট, ভূমিদস্যুতা এবং অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতেই বিচার করতে হবে।’ একে তিনি সবার মতোই অবশ্যই সমস্যা হিসেবে দেখছেন। কোনো ফারাক নাই। কিন্তু অন্যদের সঙ্গে তার দেখার ফারাক হল, তিনি এটাকে আদৌ হিন্দু সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িকতার সমস্যা হিসেবে দেখছেন না। তার ক্যাটাগরি খেয়াল করতে হবে। হিন্দুদের ওপর হামলা নির্যাতন মানেই তা সাম্প্রদায়িক নয়। মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মসহ হিন্দুদের ওপর আক্রমণকে তিনি সাম্প্রদায়িক বলে মানতে রাজি নন। পরিষ্কার বলছেন। ‘এক্ষেত্রে এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এ ধরনের আক্রমণ শুধু হিন্দুদের ওপরই হচ্ছে না, এটা আরও বড় আকারে হচ্ছে মুসলমানদের ওপর, যার রিপোর্ট প্রতিদিনই সংবাদপত্রের পাতায় দেখা যায়। হিন্দুরা বাংলাদেশের সমগ্র জনসংখ্যার একটি অংশ। কাজেই দেশজুড়ে ব্যাপকভাবে জনগণের ওপর যে আক্রমণ হচ্ছে, তার অংশ হিসেবে হিন্দুদের ওপরও আক্রমণ হচ্ছে।’ তাছাড়া আক্রমণ শুধু হিন্দুদের ওপরই হচ্ছে না। আরও অনেক বেশি করে হচ্ছে বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিসত্তার লোকজনের ওপর। ‘উত্তর বাংলার সাঁওতালদের ওপর এই আক্রমণ হচ্ছে। এছাড়া রাখাইন, গারোসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জাতিসত্তার লোকদের ওপরও এটা হচ্ছে।’

একে মোকাবেলার জন্য বদরুদ্দীন উমর জনগণকে নিয়ে ‘প্রকৃত প্রতিরোধ’ গড়ে তুলতে চান। ভূমিদস্যু, লুটপাটকারী দুর্বৃত্তদের কথা না বলে পুরো সমাজকে সাম্প্রদায়িকতার দোষে অভিযুক্ত করা ও কুৎসা রটনার মধ্যে উমর ভয়ানক বিপদ দেখেন। তখন এ হামলার বিরুদ্ধে কোনো প্রকৃত গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলাও সম্ভব হবে না। তার প্রস্তাব : ‘প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে অসাম্প্রদায়িক জনগণের বিরুদ্ধে নয়, এটা করতে হবে ভূমিদস্যু ও লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে।’ একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে উমর খুবই দরকারি কাজের কথা বলছেন, কোনো বিমূর্ত তত্ত্ব নয়। এখানেই তার সঙ্গে অন্য বামদের পার্থক্য। সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে তার যে সংজ্ঞা ও বিবেচনা, তা সুনির্দিষ্টভাবে ভূমিদস্যু ও লুণ্ঠনকারী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক। এ ক্ষেত্রে তাকে সমর্থনই সঠিক ও কর্তব্য।

তিন

বদরুদ্দীন উমর হঠাৎ এ প্রশ্ন তোলেননি। বাংলাদেশকে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রেখে ক্রমাগত সীমান্তে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে দিল্লি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তকে দুনিয়ার সবচেয়ে রক্তাক্ত সীমান্তে পরিণত করেছে। দিল্লিকে চিনতে আমাদের আর অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। দিল্লির আগ্রাসনের চরিত্র উপমহাদেশের রাজনীতি ও ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি নির্ণয়ের গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই আগ্রাসন, বলা বাহুল্য, নিত্য নিত্যই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সুযোগ নেয়, নিচ্ছে ও নেবে। সেক্ষেত্রে হিন্দু নির্যাতন, সাম্প্রদায়িকতা, মন্দির-মঠ ভাঙা ইত্যাদি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রচারের মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠে। দুনিয়াব্যাপী ইসলামভীতি ও ইসলামবিদ্বেষের কারণে বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে প্রমাণ করা সহজ হয়ে ওঠে। আইএসের নামে কুপিয়ে হত্যাকেও কেবল হিন্দুদের ওপর আক্রমণ বা সাম্প্রদায়িক সমস্যা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা চলছে। এসব উদ্দেশ্যমূলক। এসবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি নতুন মাত্রা পাচ্ছে এবং নতুন পর্বে প্রবেশ করেছে। সেসব নজর করা দরকার। অন্যদের সঙ্গে হিন্দুদের ওপরও হামলাকে ‘সাম্প্রদায়িক’ না বলতে পারলে হীনমন্যতার কিছু নাই। হিন্দুদের ওপর হামলা মানেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। সাম্প্রদায়িক না বললে সমস্যা বা সংকট মোকাবেলা করা যাবে না তাও নয়। বরং আসলে কারা এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের আড়াল করা হচ্ছে। দিল্লির আগ্রাসনের অজুহাত ও ভিত্তিকেই বরং মজবুত করা হচ্ছে।

দিল্লিতে হিন্দুত্ববাদী ক্ষমতার অধিষ্ঠান সাময়িক নয়, ফলে ভারতে শক্তিশালী হিন্দুত্ববাদী ক্ষমতার আগ্রাসন কমবে না। বাড়বে। ভারতে হিন্দুত্ববাদের অধিষ্ঠানকে যারা সাময়িক ভাবেন, তারা গোলকায়নের সঙ্গে হিন্দুত্ববাদের ঐতিহাসিক ও অনিবার্য মৈত্রীকে আড়াল করেন। আধুনিক রাষ্ট্র ও রাজনীতির অনুষঙ্গে সিপিএম বা কংগ্রেস মার্কা রাজনীতির পোশাক আধুনিক ভারতে হিন্দুত্ববাদকে আড়াল করে রাখতে পেরেছিল। পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের এই যুগে নব্য হিন্দুত্ববাদের সেটা আর লুকিয়ে রাখার দরকার নাই। ভারতের সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতির এই গুণগত রূপান্তরের আলোকে বাংলাদেশের হিন্দু প্রশ্নের মীমাংসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।

আসলে ‘প্রকৃত সংখ্যালঘু কারা?’ -এ লেখায় বদরুদ্দীন উমর ঠিক এ আশংকা ব্যক্ত করেই তার লেখা শুরু করেছেন। তিনি বলছেন, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও তাদের পিতৃসংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) জন্য খুব বেশি দরকার। চরমপন্থী সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে ভারতে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী রাখার জন্যই এটা তাদের দরকার। কাজেই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা বলতে যা বোঝায় সেটা না থাকলেও সেই পরিস্থিতি তৈরির জন্য বিজেপি বেশ পরিকল্পিতভাবেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামায় বাংলাদেশ ও ভারতের হিন্দুত্ববাদী শক্তি তৎপর। এই বিপদ মোকাবেলা শুধু মুখে নিজেকে অসাম্প্রদায়িক দাবি করার মধ্যে কুলাবে না। বাংলাদেশে হিন্দু প্রশ্ন মীমাংসার সঙ্গে কীভাবে পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের মধ্যে পরিগঠিত উপমহাদেশের নব্য হিন্দুত্ববাদ ও আঞ্চলিক সাম্রাজ্যবাদী উপশক্তি হিসেবে দিল্লির উত্থান ও রক্তাক্ত আগ্রাসনের প্রশ্ন জড়িত তার বিবেচনা ও মীমাংসা এ কারণেই জরুরি। সে কারণে সাম্প্রদায়িকতা মানে কী, প্রকৃত সংখ্যালঘু কারা এসব প্রশ্ন স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্নভাবে তুলে বদরুদ্দীন উমর বাস্তবোচিত ও অগ্রসর চিন্তার নজির রাখলেন। তার লেখার আন্তরিক ও ঘনিষ্ঠ পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশে হিন্দু প্রশ্নের মীমাংসাকে আরেকটি গুণগত পর্যালোচনা স্তরে উন্নীত করতে পারি। কিন্তু যেসব বামপন্থী, এমনকি যারা এককালে তার অনুসারী ছিল, তারা তার লেখার প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করতে গিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল সমালোচনার অধিক কিছু করতে সক্ষম হয়নি।

নদীতে বাঁধ দিয়ে ও পানি সরিয়ে বাংলাদেশকে শুকিয়ে মারার নীতি, ইসলামী জঙ্গি মোকাবেলার নামে দিল্লি ও পাশ্চাত্য শক্তি যেভাবে ক্ষমতাসীনদের দ্বারা বাংলাদেশে একটি যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় তার কুফল পুরো উপমহাদেশে ছড়াবে। বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের সেই যুদ্ধের উপাদান ও দাহ্য পদার্থ হিসেবে ব্যবহারের পরিণতি শুভ হতে পারে না। অনিবার্য পরিণতি হিসেবে চিরতরে বাংলাদেশের জনগণকে দিল্লির পদানত রাখার পরিকল্পনা কাজ করবে বলা যায় না; কিন্তু উপমহাদেশকে প্রবল অস্থিতিশীলতার দিকেই দিল্লি ঠেলে দিচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হয়। ভারতে নিশ্চয়ই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের অভাব নাই। তারা আশা করি এসব বিষয়ে ভাববেন। বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের সচেতন ও সজ্ঞান মানুষদের অবিলম্বে সচেতন হয়ে ওঠা জরুরি। এসব বাস্তবতা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো উপমহাদেশের জন্যই ভয়ংকর বিপদ তৈরি করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের সহিংসতা, যুদ্ধবিগ্রহের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে বিপদ ত্বরান্বিত করার জন্য দিল্লি ও বিজেপির তৎপরতা কতটুকু, সে প্রশ্ন উহ্য রেখেই বলতে হয়, তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার তাগিদ থেকেই বদরুদ্দীন উমর প্রশ্নগুলো তুলেছেন। এখানেই তার লেখার গুরুত্ব।

১৭ জুন ২০১৬। ৩ আষাঢ় ১৪২৩। শ্যামলী।

No comments:

Post a Comment