Friday 10 June 2016

বাংলাদেশ নিয়ে তিন গোয়েন্দার গল্প পর্ব তিন । ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হালখাতা ।

বাংলাদেশ নিয়ে তিন গোয়েন্দার গল্প পর্ব তিন  ।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের  হালখাতা ।

সূফি বরষণ
গত ৬৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম মোসাদের কোনো  ‘এজেন্ট’ গ্রেফতার হলো তাও আবার বাংলাদেশে। পৃথিবীর সর্বকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, সবচেয়ে দুর্ধর্ষ, সবচেয়ে শক্তিশালী এবং অত্যন্ত দক্ষ একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টকে চ্যাংদোলা করে গ্রেফতার করার মাধ্যমে দুটো জিনিস প্রমাণ হয়ে গেল- এক. মোসাদ নামক গোয়েন্দা সংস্থাটির সব কিছুর মান এতই নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, গত ৬৮ বছরের মধ্যে সর্বপ্রথম অধঃপতনটি তাদের কপালে জুটল বাংলাদেশের মতো একটি রাষ্ট্রে! দুই. বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা ইদানীংকালে মোসাদকেও ছাড়িয়ে গেছে!। আবার অপদিকে হাসিনা ছেলে জয় ইসরায়েলের উচ্চ পদস্হ কর্মকর্তা সাথে বৈঠক হয়েছে বলে বিবিসির সংবাদ থেকেই জানা যায়।

পৃথিবীর এক সন্ত্রাসী গোয়েন্দা সংস্হার নাম মোসাদ। অতি কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের সমন্বয়ে গড়া এই সংস্হার ক্ষীপ্রতা ও দুঃসাহিকতা শত্রু মিত্র উভয়ের কাছেই রুপকথার মতো। মোসাদের ভয়ংকর কিছু অপারেশান কল্প কাহিনীকেও হার মানায়। ১৯৪৯ সালে মোসাদের জন্ম হলেও ১৯৯৬ পর্যন্ত কেউই জানতোনা এই সংস্হাটার প্রধান কে। ১৯৯৬ সালে যখন সাবতাই কে অপসারন করে ডেনি ইয়াতমকে নিয়োগ দেওয়া হয় এক ঘোষনার মাধ্যমে, তখন এই প্রথম বিশ্ববাসী জানতে পারে এই সংস্হাটার প্রধান কে। কিডনাপ করা ও গুপ্তহত্যায় এই সংস্হাটা বিশ্বে অদ্বিতীয়। ডেভিড বেনগুরিয়ান মুলত এই সংস্হাটার প্রতিষ্ঠাতা। মোসাদের বেশীরভাগ লোকই সাবেক সন্ত্রাসী সংগঠন হাগানাহ,ইরগুন, স্টানগেন্গ এর লোক।

১৯৫৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে ২৮তম কম্যুনিস্ট সম্মেলনে যখন নিকিটা ক্রুশ্চেভ এক গোপন মিটিংয়ে স্টালিনকে অভিযুক্ত ও অস্বীকার করে নিজেই প্রেসিডেন্ট বলে ঘোষনা করে, ঐ বক্তব্যের এক কপি মোসাদ সিআইএর হাতে দিয়ে দেয়। এই প্রথম সিআইএ মোসাদের কার্যক্রম উপলব্দি করে যাতে সিআইএ অবিভূত হয়। কারন সিআইএর মত সংস্হাটি ও এই রকম একটা সেন্সেটিভ সংবাদ সংগ্রহে ব্যর্থ। পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মোসাদকে সাহায্য করার জন্য অগনিত ভলেন্টিয়ার,এরা সবাই জন্মগত ইহুদি এবং জায়োনিস্টের সমর্থক। এরা সবসময় তৈরী থাকে শত্রুর তথ্য জানানো বা গোয়েন্দাগিরী করা সন্দেহবাজনদের উপর।

গুপ্ত হত্যায় দক্ষ এই মোসাদ বেশীরভাগই সময়েই হামলার জায়গায় থাকেনা। বেশীরভাগ সময়েই এরা চেষ্টা করে স্হানীয় মাফিয়া বা সন্ত্রাসীদের দ্বারা নিজেদের কাজ করে নিতে, যদি মাফিয়াদের দ্বারা সম্ভব না হয়, তাহলে শুধুমাত্র ওখানেই মোসাদের ডেথ স্কোয়াড কাজ করে।

আট টা ডিপার্টমেন্টের উপর মোসাদ কাজ করে , যার মধ্যে ৫ হতে ৬ টা ডিপার্টমেন্ট অনেকেই জানলেও বাকী দুই ডিপার্টমেন্টের কথা কেউই জানে না।

১. কালেকশান ডিপার্টমেন্টঃ এটি সবচেয়ে বড় ডিপার্টমেন্ট , যারা বহির্বিশ্বে ডিপ্লোমেট, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক সহ অন্যান্য ছদ্মবেশে কাজ করে।

২.পলিটিক্যাল একশ্যান এবং লাইয়াশন ডিপার্টম্যান্টঃ এই গ্রুপটা বন্ধুত্বপুর্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্হা এবং যাদের সাথে সম্পর্ক নেই ওদের মাঝে সমন্বয় করে।

৩.স্পেশাল অপারেশান ডিপার্টমেন্টঃ এই গ্রুপ স্পর্শকাতর গুপ্ত হত্যায় জড়িত।

৪.ল্যাপ ডিপার্টম্যান্টঃ এই গ্রুপ মনস্তাত্বিক যুদ্বের জন্য দায়ী, যাদের কাজ প্রপাগান্ডা ও ধোঁকার কাজ করা।

৫.রিসার্চ ডিপার্টম্যান্টঃ যাবতীয় গোয়েন্দা গবেষনার জন্য হলো এই গ্রুপ। (বিস্তারিত জানতে উপরের লিংকে ক্লিক করে দেখে নিন)

ওলফগ্যান্গ লোটয মোসাদের সেলিব্রেটি গোয়েন্দাদের একজন।জার্মানী ইহুদি,১৯৩৩ সালে মাইগ্রেট হয়ে ফিলিস্তিনে চলে আসে। হিব্রু,আরবী ও ইংলিশে পারঙ্গম হয়ে ব্রিটিস বাহিনীর হয়ে যুদ্ব করে দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্বে। যুদ্বশেষে সন্ত্রাসী সংঘঠন হাগানাতে যোগ দেয় এবং পরে মোসাদে। মিশরে গোয়েন্দাগিরীর জন্য তাকেই সিলেক্ট করা হয়। সে মিশেরের এলিট ঘোড়ার রেইস খেলায় যোগ দেয় আর মিশরের বড় বড় কর্তাব্যাক্তিদের সাথে খাতির যুগিয়ে ফেলে। চেহারা সুরত জার্মানি হওয়া এবং সে বলত বিশ্বযুদ্বের সময় সে হিটলারের জেনারেল রোমেলের পক্ষ হতে যুদ্ব করেছে। রেডিও সিগনালের মাধ্যমে সে মিশর হতে তাদের মিলিটারির স্পর্শকাতর তথ্য পাঠাতো। মিশর তার পাঠানো রেডিও সিগন্যাল ট্রাকিং করে ধরে ফেলে তাকে। পরে ৬৭ এর যুদ্বে বন্দী হওয়া ৯ জন মিশরীয় জেনারেলের বিনিময়ে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

১৯৬৭ সালের যুদ্বে মোসাদের সপিস্টিকেটেড যন্ত্রের সাহায্য মিশরের গতিবিধি নজরে রাখতো, পরে একদিন সকালে সাতটা হতে আট টার মধ্যে, যে সময় মিশরের এয়ার ফোর্সের বেশীর ভাগই নাস্তা খায় এবং শিফট চেন্জ হয়, ঐ সময় ইসরাইল এট্যাক করে বসে। যুদ্বে রজন্য তৈরী থাকা ৩০০ এর ও বেশী বিমান ধংস হয়ে যায়। মাত্র ৬ দিন যুদ্ব করতে পারে আরবরা, যুদ্বের পুরো কৃতিত্বই গোয়েন্দা সংস্হার।

জর্ডানে ব্লাক সেপ্টেমবরের হত্যার পর এক নয়া গ্রুপ গড়ে উঠে ব্লাক সেপ্টেম্বর নামে । জার্মানির মিউনিখে অলিম্পিক গেমস চলাকালে এরা ৯ জন ইসরাইলী এথলেটকে কিডনাপ করে। ২০০ ফিলিস্তিনির মুক্তি ও নিজেদের সেইফ পেসেজ দেওয়া ছিলো ওদের দাবী, জার্মান সরকার মেনে নেয় এবং চুক্তির জন্য মিলিটারি এয়ারপোর্টে আসতে বলে। মিলিটারি এয়ারপোর্টে জার্মান স্পেশাল ফোর্স আগে হতেই প্রস্তুত ছিলো। অপহরনকারীরা যখনই বুঝতে পারে ওদের ট্রাপে ফেলা হয়েছে, তখনি সব বন্দী এথলেটদের হত্যা করা হয়। পুলিশের পাল্টাগুলিতে ৫ জন অপহরনকারী নিহত ও তিন জন বন্দী হয়।

ঘটনাটি ছিলো অতি ভয়াবহ, মোসাদ স্পেশাল টিম গঠন করে অপারেশান রথ অফ গড ঘোষনা করে। পুরো ইউরোপ জুড়ে ব্লাক সেপ্টেমবারগ্রুপকে খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হয়। ৭২ হতে ৭৩ পর্যন্ত এই গুপ্তহত্যার কাজ চলতে থাকে। পিএলওর নেতারা প্রায় দিশা হারাবার উপক্রম। ইউরোপ জুড়ে মোসাদের এই হান্টিং ডাউনে ভুলক্রমে নরওয়েতে এক নিরীহ মরোক্কান ওয়েটারকে হত্যা করে ফেলে মোসাদ। নরওয়ের পুলিশ ৬ মোসাদ এজেন্টকে গ্রেফতার করে।

১৯৭৬ এর জুনে ফ্রান্স হয়ে ইসরাইলগামী এক বিমান কে ফিলিস্তিনিরা হাইজ্যাক করে উগান্ডায় নিয়ে যায়। ওরা বিভিন্ন দাবী দাওয়া পেশ করতে থাকে। ইসরাইলী ও হোস্টেজকে উদ্বার করতে মোসাদ ইসরাইলী কমান্ডো সাথে নিয়ে চালায় অপারেশান থান্ডারবোল্ড
ঐ অভিযানের ক্ষিপ্রতা এতই ছিলো যে মাত্র ৯০ মিনিটে প্রায় সব বন্দীদের উদ্বার করা হয়। বিস্তারিত সংক্ষিপ্ত ভিড্যুতে দেখুন,

জনাথন পোলারড আমেরিকার নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন, মূলত সে মোসাদের হয়ে আমেরিকায় কাজ করতো। আমেরিকার মিলিটারির অনেক গোপন দলিলপত্র চুরি করে ইসরাইলে পাচার করে দিতো। ইসরাইল ঐ দলিল সোভিয়েত রাশিয়াকে দিয়ে সামরিক সরন্জামের অনেক কিছুই হাসিল করে নিত। পোলারড একদিন ধরা খেয়ে যায়, এবং সারা জিবনের জন্য কারাদন্ড দেওয়া হয়। শুধু পোলারডের কাহিনী নয়, এই রকম অনেক আমেরিকান(ইহুদী) ইসরাইলের হয়ে গুপ্তচরের কাজ করতো আমেরিকার স্পর্শকাতর মিলিটারি রিসার্চ সেন্টারে।
মনিকা লিউনেস্কি ও ক্লিনটনের ফোনে আড়িপাতার কাজও ওরাই করেছিলো।

আশির দশকে অনেক ইরাকি নিউক্লিয়ার সাইন্টিস্টকে ইউরোপে এরাই হত্যা করেছে। ইসরাইলের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী যিপি লিবনি ছিলেন ঐ সময়কার লেডি স্পাই ফর মোসাদ এই সেই যিপি লিবনি, উনি টেরোরিস্ট!!!!! হামাস উৎখাতে বদ্বপরিকর, তার পিতা আইতান লিবনি ছিলেন ইহুদী টেরোরিস্ট গ্রুপ ইরগুন এর চীফ।
২০০৩ এর ইরাক যুদ্বের পর মোসাদ ইরাকের অনেক সাইন্টিস্ট ও একাডেমিয়ানকে হত্যা করেছে

পুরো ইরাক জুড়েই মোসাদ জাল বিছিয়ে রেখেছে ২০০৩ এর পর। আবু গরিব কারাগারের ইন চার্জ বিবিসির এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্হা আবু গরিব কারাগারের বন্দীদের ইনটারোগেশান করতো।

কানাডার এক সাইন্টিস্ট নতুন ধরনের অগ্নোয়াস্র তৈরী করে,নাম তার সুপারগান , তার এই প্রযুক্তি কেউই সাড়া দেয় নাই প্রথমে। পরে ইরাকের সাদ্দাম হোসেন ঐ প্রজেক্টের দিকে নজর দেয়। যা প্রজেক্ট ব্যবিলুন নামে পরিচিত। ঐ সুপারগানের আক্রমন ইসরাইল পর্যন্ত যাবে যা ইসরাইলের জন্য হুমকি। অতঃপর কানাডার সেই সাইন্টিস্ট গেরাল্ড বুলকে ব্রাসেলসে তার এপার্টমেন্টে পাঁচটা গুলি করে হত্যা করা হয়। কেউ সেই গুলির আওয়াজ ও শুনেনি, কেউ ধরা ও খায়নি।

১৯৮২ সালে ইসরাইল লেবাননে যুদ্বের পর সোভিয়েত তৈরী অনেক যুদ্বাস্র নিজেদের অধিকারে নিয়ে নেয়। পরে সিআইএ,মোসাদ ও পাকিস্তানের আইএসআই মিলে ঐ অস্রগুলো আফগানিস্তানে যুদ্বরত জঙ্গীদের দেয়। ভারতের “র” এর সাথে মোসাদের গোপন কাজ চললেও ওটা প্রকাশ হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর। মোসাদের সাথে পাকিস্তানের আইএসআইয়ের কাজ শুরু হয় জিয়াউল হকের আমলে।

৯/১১ এর পর সিআইএ, এফবিআই, মোসাদ ও আইএস আই একাকার হয়ে যায় ওয়ার অন টেররে। এই গোয়েন্দা গ্রুপগুলোর শত্রু এক ও অভিন্ন হয়ে যায় তালেবান ও আল কয়েদার বিরুদ্বে। ওয়ার অন টেররে বড় বড় আল কায়েদা ও তালিবান নেতাদের পাকিস্তানের আই এস আই গ্রেফতার করেছে, সি এই এ নয়,যেমন খালিদ শেখ মোহাম্মদ,লিব্বি,মোল্লা ব্রাদার। এর জন্য সবচেয়ে বেশী খেসারত ও দিতে হয়েছে আইএসআইকে। লাহোর থেকে ইসলামাবাদ হয়ে পেশোয়ার পর্যন্ত আইএসআইয়ের হেডকোয়ার্টার, অফিস, ওদের বহনকারী বাসের উপর অত্যন্ত ভয়ংকর হামলা চালিয়ে জানমালের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি করে জঙ্গীরা।

“র” এবং মোসাদ উভয়েই নিজেদের এক্সপিরিয়েন্স বিনিময় করে। ইসরাইল ফিলিস্তিনি গেরিলাদের দমাতে যেসব কৌশল অবলম্বন করে , ভারত ওদের কাছ হতে সবগুলোই শিখে নেয়।যেমন, এক কাশ্মিরী গেরিলা একটা ঘর হতে ইন্ডিয়ান সৈন্যদের লক্ষ করে গুলি চুড়লো, ঐ জন্যে ঐ ঘর সহ আশেপাশের সব ঘরগুলো বুলডেজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। যাতে গেরিলারা ফিউচার এট্যাকে তিনবার ভাবে।

বর্তমান বিশ্বে কে কার শত্রু না মিত্র তা বুঝা বড় দায়। গত আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্বে ইরান সরকার আমেরিকাকে অনেকভাবে সাহায্য করেছে, তা সাবেক ইরানি প্রেসিডেন্ট খাতামির মুখ হতে শুনুন।

কিল খালিদঃ দ্যা ফেইলড এসেসাইনেশান অফ মোসাদ এন্ড দ্যা রাইস অফ হামাস বই হতে সংক্ষিপ্ত আকারে ঐ অপারেশানটা তুলে ধরছি। ১৯৮০ হতে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত মোসাদ দুর্দান্ত আকারে পিএলও এর নেতাদের হত্যা করে একেবারে কোমর ভেঙ্গে দেয়। পিএলও ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যায় স্বাধীনতা সংগ্রাম হতে। উল্টা পথে হামাসের উত্থান হতে থাকে। খালিদ মিশাল অনেক বড় হুমকি হিসেবে দেখা দেয়। ১৯৯৭ সালে খালিদ তার গাড়ি হতে নেমেই মাত্র হামাস অফিসে ঢুকবে এ সময়েই হাতে ব্যান্ডেজ লাগানো তিন জন কানাডিয়ান টুরিস্ট তার গাড়ির পাশেই ছিলো। একজন টুরিষ্ট(মোসাদ স্পাই) হটাৎ খালিদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে তার কানে কিছু একটা পুশ করতে চায়, বিষ ঢেলে দিয়েছে তার শরীরে। চুম্বকটানের মত খালিদের দেহরক্ষী টুরিস্টের উপর পুরো শরীরের চাপ দিয়ে বসিয়ে দেয়। খালিদ ছিটকে দুরে সরে যায়। আক্রমনকারীদের একজন পালিয়ে গিয়ে ইসরাইলী এমব্যাসীতে লুকায়। বাকী দুজনকে খালিদের দেহরক্ষী আবু সইয়াফ ধাওয়া করে। নিজের এতোদিনের ট্রেনিং কাজে লাগায় সাইয়াফ। মল্লযুদ্বের মত কুস্টাকুস্তি হয় স্পাই ও সাইয়াফের মাঝে, স্পাইদের ধারালো যন্ত্রের সাহায্যে আহত হয়ে যায় সাইয়াফ, সাইয়াফের পাল্টা হেভি ঘুষিতে এক স্পাই মাটিতে পড়ে যায়। পরে সাইয়াফ হাসপাতালে এবং স্পাইদের পুলিশের কাছে পাঠানো হয়।

খালিদের অবস্হা ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সে মারা যাবে। হাসপাতালে ভর্তি করা হলো তাকে। জর্ডানের বাদশাহ হোসাইন এবার সরাসরি ফোন দেয় নেতানিয়াহুকে। যদি খালিদ মিশাল মারা যায়, তিন মোসাদ স্পাইকে হত্যা করা হবে, এবং ইসরাইলের সাথে শান্তি চুক্তি বাতিল হবে। এবার মোসাদের টনক নড়ে, মোসাদের চীফ নিজেই ল্যাবরেটরীতে মডিফাই করা বিষের প্রতিষোধক নিয়ে আম্মানে আসেন। খালিদ মিশাল সুস্হ হয়ে উঠেন।
এই ব্যার্থ হামলার ফলাফল এমনই করুন ছিলো যে মোসাদের চীফকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। খালিদ মিশালের উপর এই হামলায় কানাডার গোয়েন্দা সংস্হা (csis) ও জড়িত আছে।

মোসাদ আসলে কি?

আগেই বলেছি যারা জানেন তারা তো জানেন।যারা জানেন না তাদের জন্য বলি,একবার মোসাদের নজরে পড়লে বিশ্বের কোনো কোণেই লুকিয়ে নিস্তার পায় না সেই 'টার্গেট'।মোসাদের বেশীরভাগ লোকই সাবেক সন্ত্রাসী সংগঠন হাগানাহ,ইরগুন,স্টানগ্যাং এর লোক।

ইহুদীরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ইহুদী, খ্রীস্টান ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র ভূমি বলে পরিচিত বৃহত্তর ফিলিস্তিনকেই বেছে নিয়েছিল নতুন বাসভূমি হিসেবে।কিন্তু আরব ভূখণ্ডে ঘেরা এই শিশুরাষ্ট্রকে রক্ষা করা মোটেই সহজসাধ্য ছিল না।আর সেই ঐতিহাসিক চাহিদা মেটাতেই রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার ১৯ মাসের মাথায় ১৯৪৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডাভিড বেন গুরিয়ন গোয়েন্দাসংস্হা মোসাদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন,কালে কালে যা পরিণত হয় এক দুর্দান্ত গোয়েন্দাসংস্হায়।হিব্রূ ভাষায় মোসাদ শব্দের অর্থ 'প্রতিষ্ঠান'। আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের এই বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থার নাম হয় 'দ্য ইনস্টিটিউট অব ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অপারেশনস'।

ইসরাইলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং মোসাদ:

হিটলারের নাৎসি বাহিনীর হাতে প্রায় ৬০ লাখ ইহুদীর মৃত্যুর পর গোটা দুনিয়ার ইহুদীদের একটি প্রভাবশালী অংশ নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের "স্বপ্নের কর্মসূচি"তে শামিল হয়।১৯৪৮ সালে জাহাজে করে ইহুদীদের পবিত্রভূমি প্যালেস্টাইনে আগমন।

এই জায়নিস্ট আন্দোলনেরই ফলশ্রুতি ইসরায়েল৷প্রথমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি,তারপর সম্মিলিত আরব শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে নতুন রাষ্ট্রের ভিত্তিকে ক্রমশঃ আরও শক্তিশালী করে তুলেছে ইসরায়েল৷ ইউরোপে ইহুদী নিধনযজ্ঞ বা ‘শোয়া'র দুঃস্বপ্ন ভুলতে পারে নি সেদেশের মানুষ৷ফলে আরও একবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দূর করতে যে কোন পদক্ষেপ নিতে শুরু থেকেই প্রস্তুত ছোট্ট এই ইহুদী রাষ্ট্র৷কিন্তু নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা করতে ইসরায়েল যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করে এসেছে তাকে ঘিরে বিতর্কের কোন শেষ নেই৷

রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার ১৯ মাসের মাথায় দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডাভিড বেন গুরিয়ন ১৯৪৯ সালে মোসাদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷তবে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার আগেই যেসব ইহুদী নিষিদ্ধ সংগঠন সংগ্রাম চালাচ্ছিল তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে যে কাঠামো গড়ে উঠেছিল,তাকে মোসাদের পূর্বসূরি মানা হয়৷

১৯৪৯ সালে মোসাদের জন্ম হলেও ১৯৯৬ পর্যন্ত কেউই জানতোনা এই সংস্হাটার প্রধান কে। ১৯৯৬ সালে যখন সাবতাই কে অপসারন করে ডেনি ইয়াতমকে নিয়োগ দেওয়া হয় এক ঘোষনার মাধ্যমে, তখন প্রথমবারের মত বিশ্ববাসী জানতে পারে এই সংস্হাটার প্রধান কে।ডেভিড বেনগুরিয়ান মুলত এই সংস্হার প্রতিষ্ঠাতা।

১৯৫৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে ২৮তম কম্যুনিস্ট সম্মেলনে যখন নিকিটা ক্রুশ্চেভ এক গোপন মিটিংয়ে স্টালিনকে অভিযুক্ত ও অস্বীকার করে নিজেই প্রেসিডেন্ট বলে ঘোষনা করে, ঐ বক্তব্যের এক কপি মোসাদ সিআইএর হাতে দিয়ে দেয়।এই প্রথম সিআইএ মোসাদের কার্যক্রম উপলব্ধি করে যাতে সিআইএ অবিভূত হয়।কারন সিআইএর মত সংস্হাটিও এই রকম একটা সেন্সেটিভ সংবাদ সংগ্রহে ব্যর্থ।

পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মোসাদকে সাহায্য করার জন্য অগনিত ভলান্টিয়ার।এরা সবাই জন্মগত ইহুদী এবং জায়োনিস্টের সমর্থক।এরা সবসময় তৈরী থাকে শত্রুর তথ্য জানানো বা সন্দেহবাজনদের উপর গোয়েন্দাগিরী করা।

কার্যক্রম:

চরম গোপনীয়তার ঘেরাটোপে থাকা মোসাদের কীর্তিকলাপ সম্পর্কে নানা কাহিনী প্রচারিত থাকলেও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা যায় না। ইসরায়েলের আইন অনুযায়ী শুধু সংস্থাপ্রধানের নাম প্রকাশ করা যায়। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই পরিচালিত হয় মোসাদের কার্যকলাপ।মোসাদের ওয়েবসাইটে সংগঠনের 'লক্ষ্য' এবং 'কার্যকলাপ' সম্পর্কে সামান্য কিছু তথ্য রয়েছে।তবে মোসাদের হয়ে কাজ করতে ইচ্ছুকদের জন্য একটি 'ফরম' রয়েছে ওয়েবসাইটটিতে।

এটিই হল মোসাদের ওয়েবসাইট।তবে এ ওয়েবসাইটে নিজ দায়িত্বে ঢুকবেন।কথিত আছে মোসাদের ওয়েবসাইটে ক্লিক করলেই সংস্হায় সংরক্ষিত সার্ভারে মুহুর্তেই আইপি ট্রেস করে লোকেশন ডিটেক্ট করা হয়।

মোসাদ হামলার জায়গায় থাকেনা।বেশীরভাগ সময়েই চেষ্টা করে স্হানীয় মাফিয়া বা সন্ত্রাসীদের দ্বারা নিজেদের কাজ করে নিতে।যদি মাফিয়াদের দ্বারা সম্ভব না হয় তাহলেই শুধুমাত্র মোসাদের ডেথ স্কোয়াড কাজ করে।

ইসরায়েলি সরকারের জন্য কৌশলগত, রাজনৈতিক ও ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করার মতো কাজের বাইরেও মোসাদের কাজের পরিধি যথেষ্ট বিস্তৃত।সংগঠনটির ঘোষিত উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের সীমানার বাইরে গোপনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা, শত্রুভাবাপন্ন দেশগুলো যাতে বিশেষ ধরনের অস্ত্র তৈরি বা সংগ্রহ করতে না পারে তা নিশ্চিত করা এবং দেশে-বিদেশে ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুর ওপর হামলার ষড়যন্ত্র আগাম প্রতিরোধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।

অন্যান্য বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থার তুলনায় মোসাদের দায়িত্ব বা কাজের পরিধির বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়৷যেসব দেশে ইসরায়েলের অভিবাসন সংস্থা আইনত সক্রিয় হতে পারে না সেই সব দেশ থেকে ইহুদীদের ইসরায়েলে নিয়ে আসার দায়িত্বও পালন করে মোসাদ৷বিশ্বের যে কোন ইহুদী ব্যক্তির জন্য ইসরায়েলের দ্বার খোলা রয়েছে যেন তারা সেখানেই পাকাপাকি বসবাস করতে পারে৷ইসরায়েলের সীমানার বাইরে বিশেষ অভিযানের পরিকল্পনা ও কার্যকর করার বিশেষ দায়িত্বও পালন করে মোসাদ৷

http://www.globalsecurity.org/ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি সামরিক ও অসামরিক গোয়েন্দা বিভাগের বাছাই করা কর্মকর্তাদের দিয়ে পরিচালিত মোসাদের মোট আটটি বিভাগ রয়েছে।এর মধ্যে পাঁচটি ডিপার্টমেন্টের কিছু তথ্য জানা যাচ্ছে :

কালেকশন ডিপার্টমেন্ট: এটি মোসাদের সবচেয়ে বড় বিভাগ। বহির্বিশ্বে ডিপ্লোম্যাট, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ অন্যান্য ছদ্মবেশে কাজ করেন এই বিভাগের এজেন্টরা।

পলিটিক্যাল অ্যাকশন এবং লিয়াজোঁ ডিপার্টমেন্ট: এ গ্রুপের কাজ প্রতিটি বন্ধুভাবাপন্ন দেশের গোয়েন্দা ও গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করা।

১।১৯৬৭ সালের যুদ্ধে মোসাদ সপিস্টিকেটেড যন্ত্রের সাহায্যে মিশরের গতিবিধি নজরে রাখতো।একদিন সকালে সাতটা হতে আট টার মধ্যে যে সময় মিশরের এয়ার ফোর্সের বেশীর ভাগই নাস্তা খায় এবং শিফট চেন্জ হয় ঐ সময় ইসরাইল এট্যাক করে বসে।যুদ্ধের জন্য তৈরী থাকা ৩০০ এরও বেশী বিমান ধংস হয়ে যায়।মাত্র ৬ দিন যুদ্ধ করতে পারে আরবরা। যুদ্ধের পুরো কৃতিত্বই মোসাদের।

২।১৯৭০ সালে ফিলিস্তিনে এক নয়া গ্রুপ গড়ে উঠে ব্লাক সেপ্টেম্বর নামে । জার্মানির মিউনিখে অলিম্পিক গেমস চলাকালে এরা ১১ জন ইসরাইলী এথলেটকে কিডন্যাপ করে।২০০ ফিলিস্তিনির মুক্তি ও নিজেদের সেইফ পেসেজ দেওয়া ছিলো ওদের দাবী, জার্মান সরকার মেনে নেয় এবং চুক্তির জন্য মিলিটারি এয়ারপোর্টে আসতে বলে।মিলিটারি এয়ারপোর্টে জার্মান এয়ারফোর্সকমান্ডোরা আগে হতেই প্রস্তুত ছিলো।অপহরনকারীরা যখনই বুঝতে পারে ওদের ট্রাপে ফেলা হয়েছে তখনই সব বন্দী এথলেটদের হত্যা করা হয়।পুলিশের পাল্টাগুলিতে ৫ জন অপহরনকারী নিহত ও তিন জন বন্দী হয়।

ঘটনাটি ছিলো অতি ভয়াবহ।মোসাদ স্পেশাল টিম গঠন করে অপারেশান রথ অফ গড ঘোষনা করে।পুরো ইউরোপ জুড়ে ব্লাক সেপ্টেমবারগ্রুপকে খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হয়।৭২ হতে ৭৩ পর্যন্ত এই গুপ্তহত্যার কাজ চলতে থাকে।পিএলওর নেতারা প্রায় দিশা হারাবার উপক্রম।ইউরোপ জুড়ে মোসাদের এই হান্টিং ডাউনে ভুলক্রমে নরওয়েতে এক নিরীহ মরোক্কান ওয়েটারকে হত্যা করে ফেলে মোসাদ।নরওয়ের পুলিশ ৬ মোসাদ এজেন্টকে গ্রেফতার করে।

৩।১৯৭৬ এর জুনে ফ্রান্স হয়ে ইসরাইলগামী এক বিমান কে ফিলিস্তিনিরা হাইজ্যাক করে উগান্ডায় নিয়ে যায়।ওরা বিভিন্ন দাবী দাওয়া পেশ করতে থাকে। ইসরাইলী ও হোস্টেজকে উদ্বার করতে মোসাদ ইসরাইলী কমান্ডো সাথে নিয়ে চালায় অপারেশান থান্ডারবোল্ড।ঐ অভিযানের ক্ষিপ্রতা এতই ছিলো যে মাত্র ৯০ মিনিটে প্রায় সব বন্দীদের উদ্ধার করা হয়।

৪।জনাথন পোলারড আমেরিকার নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন।মূলত তিনি মোসাদের হয়ে আমেরিকায় কাজ করতেন।আমেরিকার সেনাবাহিনীর অনেক গোপন দলিলপত্র চুরি করে ইসরাইলে পাচার করে দিতো।ইসরাইল ঐ দলিল সোভিয়েত রাশিয়াকে দিয়ে সামরিক সরন্জামের অনেক কিছুই হাসিল করে নিত।পোলারড একদিন ধরা খেয়ে যায় এবং সারা জীবনের জন্য কারাদন্ড দেওয়া হয়।শুধু পোলারডের কাহিনী নয়,এই রকম অনেক আমেরিকান(সবাই ইহুদী) ইসরাইলের হয়ে গুপ্তচরের কাজ করতো আমেরিকার স্পর্শকাতর মিলিটারি রিসার্চ সেন্টারে।

৫।মনিকা লিউনেস্কি ও ক্লিনটনের ফোনে আড়িপাতার কাজও ওরাই করেছিলো।

৬।২০১০ এ জানুয়ারিতে হামাস লিডার মাহমুদ আল মাবুহকে দুবাইতে রোটানা হোটেলের ভিতরে হত্যা করে মোসাদ।এজেন্টরা বিভিন্ন দেশ হতে দুবাইতে আসে।দুবাই পুলিশ জানিয়েছে এই হত্যায় ২৭ জন মোসাদ স্পাই অংশগ্রহন করে।মাহমুদ কে দুবাই এয়ারপোর্ট হতে অনুসরন করে মোসাদ।
সিসিটিভিতে ধরা খাওয়া পুরো ঘটনায় দেখা যায় এয়ারপোর্ট হতে হোটেল, শপিং মল,লবি হতে লিফট পর্যন্ত এবং পরবর্তীতে হোটেল রুমে গিয়ে যেভাবে ওরা মাহমুদকে হত্যা করে:

৭।এছাড়াও আশির দশকে আততায়ীর হাতে নিহত ইরাকী নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্টদের হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে মোসাদের বিরুদ্ধে।সেই সাথে ২০০৩ এর পর সাদ্দাম হোসেনের প্রশাসনের নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্টদের হত্যা করার অভিযোগের তীরটা মোসাদের দিকেই ছোড়া হয়।আজকের দিনেও যেসকল ইরানী নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্ট নিহত হচ্ছেন তাদেরকে হত্যার পেছনেও মোসাদের জড়িত থাকার কথা বারবার বলে আসছে ইরান।

৮। ইসরাইলের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী যিপি লিবনি ছিলেন ঐ সময়কার মোসাদের লেডি স্পাই।হামাস উৎখাতে বদ্বপরিকর লিবনির পিতা আইতান লিবনি ছিলেন ইহুদী টেরোরিস্ট গ্রুপ ইরগুন এর চীফ।

৯। আবু গরিব কারাগারের ইন চার্জ বিবিসির এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্হা আবু গরিব কারাগারের বন্দীদের ইনটারোগেশান করতো।

১০। কানাডার এক সায়েন্টিস্ট সুপারগাননামে নতুন এক ধরনের অগ্নোয়াস্র তৈরী করেন।তার এই প্রযুক্তি কেউই সাড়া দেয় নি প্রথমে।পরে চীন এবং ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ঐ প্রোজেক্টের দিকে নজর দেন যা প্রোজেক্ট ব্যবিলন নামে পরিচিত।মোসাদ তদন্ত করে নিশ্চিত হয় ঐ সুপারগানের আক্রমন চীন হতে ইজরাইলের রাজধানী তেলআবিব পর্যন্ত যাওয়ার একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে চীনের সামরিক গোয়েন্দাসংস্হা এমএসএস যা ইসরাইল পর্যন্ত যাবে।স্বাভাবিকভাবেই তা ইসরাইলের জন্য বড়ধরণের হুমকি।তৎখনাত চীনের সাংহাইতে অবস্হিত মোসাদ এজেন্ট গ্যারিত মুলাখ কোনভাবে সেই হামলার আগাম রিপোর্ট এমএসএসের কাছ থেকে চুরি করে মোসাদের হাতে তুলে দেন।ধারণা করা হয় স্হানীয় কারো সহায়তায় তিনি এসব করেছেন।অতঃপর কানাডার সেই সায়েন্টিস্ট গেরাল্ড বুলকেব্রাসেলসে তাঁর এপার্টমেন্টে পাঁচটা গুলি করে হত্যা করা হয়।সেই থেকে শুরু হয়ে যায় ইসরাইল-চীন দন্দ্ব।
http://world.std.com/~jlr/doom/bull.htm

১১।১৯৮২ সালে ইসরাইল লেবাননে যুদ্বের পর সোভিয়েত তৈরী অনেক যুদ্ধাস্ত্র নিজেদের অধিকারে নিয়ে নেয়।পরে সিআইএ,মোসাদ ও পাকিস্তানের আইএসআই মিলে ঐ অস্ত্রগুলো আফগানিস্তানে যুদ্ধরত জঙ্গীদের দেয়। ভারতের "র" এর সাথে মোসাদের গোপন কাজ চললেও ওটা প্রকাশ হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর।মোসাদের সাথে পাকিস্তানের আইএসআইয়ের কাজ শুরু হয় জিয়াউল হকের আমলে।৯/১১ এর পর সিআইএ, এফবিআই, মোসাদ ও আইএসআই একসাথে কাজ করে ওয়ার অন টেররে তালেবান ও আল কয়েদার বিরুদ্ধে।

ব্যর্থতা:
কিল খালিদঃ দ্যা ফেইলড এসেসাইনেশান অফ মোসাদ এন্ড দ্যা রাইস অফ হামাসবইয়ে অপারেশানটার কথা আছে।১৯৮০ হতে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত মোসাদ দুর্দান্ত আকারে পিএলও এর নেতাদের হত্যা করে একেবারে কোমর ভেঙ্গে দেয়।পিএলও ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যায় স্বাধীনতা সংগ্রাম হতে।উল্টা পথে হামাসের উত্থান হতে থাকে।খালিদ মিশাল অনেক বড় হুমকি হিসেবে দেখা দেন।১৯৯৭ সালে খালিদ তার গাড়ি হতে নেমেই মাত্র হামাস অফিসে ঢুকবে এ সময়েই হাতে ব্যান্ডেজ লাগানো তিন জন কানাডিয়ান টুরিস্ট তার গাড়ির অপেক্ষা করছিলো।একজন টুরিষ্ট(মূলত মোসাদের লোক)হঠাৎ খালিদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে তার কানে কিছু একটা পুশ করতে চায় এবং বিষ ঢেলে দেয় তার শরীরে।খালিদ ছিটকে দুরে সরে যায়।আক্রমনকারীদের একজন পালিয়ে গিয়ে ইসরাইলী এমব্যাসীতে লুকায়।বাকী দুজনকে খালিদের দেহরক্ষী আবু সইয়াফ ধাওয়া করে।স্পাইদের ধারালো যন্ত্রের সাহায্যে আহত হয়ে যায় সাইয়াফ।সাইয়াফের পাল্টা ঘুষিতে এক স্পাই মাটিতে পড়ে যায়।পরে সাইয়াফ হাসপাতালে এবং স্পাইদের পুলিশের কাছে পাঠানো হয়।

খালিদের অবস্হা ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে।হাসপাতালে ভর্তি করা হলো তাকে।জর্ডানের বাদশাহ হোসাইন এবার সরাসরি ফোন দেয় নেতানিয়াহুকে।যদি খালিদ মিশাল মারা যায়,তিন মোসাদ স্পাইকে হত্যা করা হবে এবং ইসরাইলের সাথে শান্তি চুক্তি বাতিল হবে।এরপর মোসাদের চীফ নিজেই ল্যাবরেটরীতে মডিফাই করা বিষের প্রতিষোধক নিয়ে আম্মানে আসেন।খালিদ মিশাল সুস্হ হয়ে উঠেন।

এই ব্যার্থ হামলার পর মোসাদের চীফকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। খালিদ মিশালের উপর এই হামলায় কানাডার গোয়েন্দা সংস্হা (csis) ও জড়িত আছে বলে সন্দেহ করা হয়।

মিশরীয় বন্দর।এই বন্দর দিয়ে প্রবেশ করে ইসরাইল ভূল করে একবার একটি মার্কিন জাহাজে হামলা করে বসে।

এই সেই মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস লিবার্টি যেখানে ইসরাইল ভুল করে হামলা করে বসে।এতে ৩৪ জন মার্কিন নৌসেনা নিহত এবং ৭৩ জন আহত হয়।এ হামলাকে মোসাদের ইতিহাসের অন্যতম ব্যর্থ গোয়েন্দাতথ্যের ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বাংলাদেশে কেন এত আলোচিত এবং কারা সন্দেহের পাত্র:

বাংলাদেশে সাধারণত ইসলামবিদ্বেষী কোন কার্যকলাপ হলেই "র",সিআইএ এর সাথে মোসাদের নামটিও ছোট্ট করে শোনা যায়।আসলেই কি তারা বাংলাদেশে ইসলামবিরোধীতৎপরতার সাথে জড়িত?তা হয়ত জানা হবে না কখনই । নিরপেক্ষ সুশীল সমাজের সন্দেহের তীরটা যায় কিছু উগ্রমৌলবাদী সংগঠনের বিপক্ষে।তবে এর কোনটাই কোনদাবীকারীরা প্রমাণ করতে পারেন নি।তবে এমন একজন রয়েছেন যার বিরুদ্ধে অনেক ধরণের অভিযোগ শোনা যায়।তিনি হলেন সালাঊদ্দীন শোয়েব চৌধুরী।

তিনি ২০০৩ সালে ২৯ নভেম্বর ইসরাইল যাওয়ার পথে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইসরাইলী পাসপোর্ট সহ আটক হন।উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে কোন নাগরিক ইসরাইল ভ্রমন করতে পারেন না।সেই সময় ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।

আটকের পূর্বে তিনি দৈনিক ইনকিলাবের একজন নিয়মিত কলামিস্ট ছিলেন।তৎকালীন সময়ে ইসলামী-জাতীয়তাবাদের একনিষ্ঠ সেবক ছিলেন। তবে ২০০৭ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারী যুক্তরাষ্ট্রের হাউস রেজ্যুলিউশন উনার পক্ষে ইঊনাইটেড স্টেটস হাঊস কমিটি অন ফরেইন অ্যাফেয়ার্স বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় একটা বিল পাশ করেছিল যেখানে বাংলাদেশ সরকারকে তার বিরুদ্বে আনিত সকল অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছিল।সবচেয়ে বড় কথা হলো এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার মৃত্যুদন্ড হতে পারত।

যাই হউক ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার আটকের খবর প্রকাশ করে জেরুজালেম পোস্টে এবং অন্য একটি ইসরাইলী পত্রিকায়খুব গুরুত্বের সাথে ছাপা হয় যা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

উনার উপস্হিতিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গীবাদী ইসলামী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী-(হুজি) ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি-(আইডিপি) নামে প্রকাশ্য রাজনীতি শুরু করে।

উনার বিরুদ্ধে আনীত সবচেয়ে স্পর্শকাতর অভিযোগটি হল বহির্বিশ্বের কাছে তিনি অভিযোগ করেন যে বাংলাদেশের মসজিদগুলোতে ইহুদী ও খ্রীস্টানদের হত্যা করার জন্য ব্যাপকভাবে আহবান করা হয়।তার লেখা একটি আর্টিকেলপড়ুন।
এছাড়াও তিনি যে ইসরাইলের বন্ধু তা তিনি একটি স্বাক্ষারনামায়স্বাক্ষর করে দেখান।

http://www.reborn-by-design.com এই ওয়েবসাইটটিতে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।আপনি কি ইসরাইলের বন্ধু?(I am a proud friend of Israel, Are you?) শিরোনামের এই সাইটটির ৩য় পেজের ২৭১ নম্বরটিতে দেখবেন সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধূরীর নাম।তিনি ইসরাইল ইন্সাইডার (Israel Insider) নামক একটি ইসরাইলী দৈনিকের অনিয়মিত কলাম লেখক। গত ০৬ জুন ২০০৬ তারিখে Israel Insider পত্রিকায় বাংলাদেশে অগ্রগতির লক্ষণ (Bangladesh: signs of progress) শিরোনামে একটি কলামে তিনি লিখেছেন,
Previously, the people of Bangladesh received only anti-Israeli news, and certainly nothing about the tiny openings of interfaith dialogue between Jews and Muslims. That began to change recently with the appearance of such pieces in the pages of Dhaka daily Amader Shomoy. Amader Shomoy is published in Bangladesh's vernacular language of Bangla, and now to a limited extent in English as well
(বাংলাদেশের মানুষ এতদিন শুধুমাত্র ইসরাইল বিরোধী সংবাদগূলোই পেত, ইয়াহুদী-মুসলমানদের আন্তধর্মীয় সংলাপের কোন খবরই পেতনা।কিন্তু সম্প্রতি এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু করে ঢাকার দৈনিক আমাদের সময়ে এ সম্পর্কিত কিছু সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে।)

উল্লেখ্য, সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী দৈনিক আমাদের সময়ের বিশেষ সংবাদদাতা।

২০০০ সালে বিবিসির প্রখ্যাত সাংবাদিক আসামের অধিবাসী ভারতের পূর্বাঞ্চলের সংবাদদাতা সুবির ভৌমিক দি উইক পত্রিকায় aborted mission: did Mossad attempt to infiltrate Islamic radical outfits in south Asia? (ব্যর্থ মিশন: মোসাদ কি দক্ষিন এশিয়ার ইসলামী উগ্রবাদীদের মাঝে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে?)শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে লিখেছেন,২০০০ সালের ১২ জানুয়ারি ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কলকাতায় ঢাকা-অভিমুখী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে ১১ বিদেশী নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেন।বাংলাদেশী বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করছিল সন্দেহে বিমান চড়ার একটু আগে তাদের আটক করা হয়।তারা কলকাতা থেকে ঢাকা আসছিল।তবে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান,‘আমরা যখন বুঝতে পারি তারা তাবলীগের লোক, তাদের ছেড়ে দেই।’টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।কিন্তু বাংলাদেশ তাদের ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।পরে ইসরাইলি চাপের মুখে ভারত তাদের নিয়ে ঘাটাঘাটি না করে তেল-আবিব ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়।

দিল্লীতে বাংলাদেশী হাইকমিশনের এক কূটনীতিক তখন জানান,‘তাদের ঢাকায় অবতরণের অনুমতি ছিল,অথচ ভিসা ছিল না।আমরা তাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই,কারণ আমরা এ সুযোগ দিতে পারি না।সেই ১১ জনের কাছে ইসরাইলি পাসপোর্ট ছিল।ধারণা করা হচ্ছিল,তারা আফগান নাগরিক।কিছু সময় ইরানে ছিল।তাদের কাছে ঢাকায় অবতরণের অনুমতি ছিল এবং দিল্লী ভিত্তিক একটি ট্রাভেল এজেন্সি তাদের বাংলাদেশ বিমানের কলকাতা-দিল্লী রুটের টিকিট দেয়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ বিমানের এক কর্মকর্তা জানান কারো কাছে বৈধ টিকিট থাকলেও নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না দেয়ার অধিকার আমাদের আছে।বাংলাদেশ বিমান কর্মকর্তাদের কাছে সেই ১১ জনের সবাইকে বেশ রহস্যজনক মনে হয়।

সেই ১১ জনের জাতীয়তা তথ্য নিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা হতবাক।সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্সের এক কর্মকর্তা বলেন,‘নিশ্চিতভাবে তারা মুসলিম।তারা বলেছে,দুইমাস ধরে তারা তাবলীগের কাজে ভারতে আছে। অথচ তারা ইসরাইলি নাগরিক।পশ্চিমতীরে বসবাস।’তিনি বলেন, তেল-আবিব তাদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করে।মনে হচ্ছে,তারা ইসরাইলের একটি স্পর্শকাতর সংগঠনের হয়ে কাজ করছে এবং একটি মিশনে তারা বাংলাদেশ যাচ্ছিল।‘মোসাদ’ নামে এই ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মৌলবাদী নেটওয়ার্কগুলোকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করতে শিয়া মুসলিমদের "ই ইসলামি" নেটওয়ার্কগুলোতে প্রবেশ করায়।ভারতের গোয়েন্দা বিশ্লেষক অশোক দেববর্ম বলেন,বিন লাদেনের মতো একটি নেটওয়ার্ককে ভেঙে দেয়ার জন্য ইরানে ১১ আফগানকে নিয়োগ দিয়ে তাদের ইসরাইলি নাগরিকত্ব দিতে পারে মোসাদ।এটি অসম্ভব কিছু নয়। বাংলাদেশে একটি ইসলামি সংগঠনে অনুপ্রবেশ করে মিশন শুরু করত তারা।তাদের মুক্তির ব্যাপারে ইসরাইল চাপ দেয় এবং ব্যর্থ অভিযান থেকে তাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেয়া হয়।মোসাদের গোয়েন্দারা বলেছে,একটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশেরঅনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপেরকারণে অপারেশনটি নিষ্ফল হয়ে পড়ে এবং তাদের দ্রুত প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ভারতের ব্যুরো অব সিভিল এভিয়েশন সিকিউরিটি(বিসিএএস) ১১ জানুয়ারি একটি অতিগোপনীয় সার্কুলার জারি করে(NO. ER/BCAS/PIC/CIRCULAR/99)।সেখানে ভারত থেকে ছেড়ে যাওয়া বাংলাদেশ বিমানের একটি এয়ারক্রাফটের সম্ভাব্য ছিনতাইয়ের চেষ্টার ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়।রিজিওনাল ডেপুটি কমিশনার অব সিকিউরিটি(কোলকাতা এয়ারপোর্ট)স্বাক্ষরিত এই সার্কুলারের কপি পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট ভারতীয় এজেন্সিগুলোতে এবং কলকাতায় বাংলাদেশ বিমানের স্টেশন ম্যানেজার মোঃ শাহজাহানের কাছে।এতে বলা হয়,এ উদ্দেশে আটজন পশতুভাষী মুজাহিদ ভারতে ঢুকে পড়েছে।তারা চেয়েছিলেন বিমান ছিনতাইকারী ধরতে।কিন্তু ধরা পড়ে গিয়েছিল মোসাদের প্রশিক্ষিত লোক। পরে তড়িঘড়ি করে ছেড়ে দেয়া হয় তাদের।

উল্লেখ্য,২০০৮ এর জানুয়ারীতে বিশ্ব এজতেমায় ইসরাইলী নাগরিকদের অংশগ্রহণের অনুমতি দিয়েছিল সরকার।দৈনিক নয়া দিগন্ত ২৫ জানুয়ারী ২০০৮ সংখ্যায় এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট করে।

২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮ ইসরাইলের স্বঘোষিত বন্ধু সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরীর উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে মাঠে নামে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হরকাতুল জিহাদ,ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি বা আইডিপি নাম নিয়ে।১ ডিসেম্বর ২০০৩ ডেইলী স্টার লিখে,বিমানবন্দরে তাকে গ্রেফতার করার সময় তার কাছে একটি প্রোজেক্ট প্রোফাইল পাওয়া যায়।যাতে তিনি ইসরাইলের কাছে তিনটি দৈনিক পত্রিকা যথা দৈনিক সোনালী দিন,দৈনিক রূপান্তর,দৈনিক পরিবর্তন প্রকাশের জন্য ১২ কোটি টাকা সাহায্যের আবেদন করেছিলেন।তিনি তার আবেদনে ইসরাইলী বন্ধুদের মুসলিম প্রধান দেশে মিডিয়া গড়ে তোলার জন্য আহবান জানিয়ে বলেন,কোটি কোটি ডলার খরচ করে যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চেয়ে মিডিয়া সৃষ্টি করুন,এতে ইসরাইল বেশি লাভবান হবে।

সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের ১৫ অক্টোবর ২০০৬ এর কলামে বলা হয় মি. চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয় মূলত ইসরাইলের পক্ষাবলম্বন এবং পাসপোর্টে অনুমতি না থাকার পরেও ইসরাইল ভ্রমনের চেষ্টা করার জন্য।পত্রিকাটি মি. চৌধুরীর উদ্বৃতি দিয়ে লিখে,
When I began my newspaper [the Weekly Blitz] in 2003 I decided to make an end to the well-orchestrated propaganda campaign against Jews and Christians and especially against Israel. In Bangladesh and especially during Friday prayers, the clerics propagate jihad and encourage the killing of Jews and Christians
(আমি যখন প্রথম সাপ্তাহিক ব্লিতস (weekly blitz) প্রকাশ করি তখন সিদ্ধান্ত নেই ইহুদী খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে বিশেষত ইসরাইলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে যে সংঘবদ্ধ প্রচারনা চলছে তার অবসান ঘটাতে। বাংলাদেশে শুক্রবারের খুতবায় মোল্লারা মূলত জিহাদের বাণী প্রচার করে এবং ইহুদী খ্রীস্টানদের হত্যা করতে উদ্বুদ্ধ করে)

তিনি ইসরাইল ভিত্তিক সংগঠন ইফলাক (IFLAC, international forum for literature and culture for peace)এর সদস্য এবং ইসরাইল-ইসলাম বন্ধুত্বের একজন উপদেষ্টা।তার জেলমুক্তির জন্য জোর লবিং চালাতে এগিয়ে আসেন স্বঘোষিত ইহুদী মানবাধিকার কর্মী ড. রিচার্ড বেনকিন। তিনি দৈনিক আমাদের সময়ের আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা ।ড.বেনকিন সালাউদ্দীন শোয়েব চৌধুরী মিলে http://www.interfaithstrength.com এই ওয়েবসাইটটি চালান । উক্ত ওয়েবসাইটটির বিষয়বস্তু বিশ্লেষন করলে কথিত ইহুদী মানবাধিকার কর্মী ও তার এদেশীয় সাগরেদের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে আর সন্দেহের অবকাশ থাকেনা।এখানে বাংলাদেশকে মূলত একটি মৌলবাদী রাষ্ট্র এবং ইসলামী উগ্রপন্থী জঙ্গিবাদীদের অভয়ারন্য হিসেবে দেখানো হয়েছে।উপস্থাপন করা হয়েছে বহু মিথ্যা,আধাসত্য বিকৃত তথ্য।টার্গেট একটাই,বাংলাদেশকে বিশ্ববাসীর সামনে সন্ত্রাসী,মৌলবাদী, তালেবানী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করানো।


ওয়েবসাইটটির কয়েকটি সংবাদ শিরোনাম এরকম:

ইসলামী সন্ত্রাসীদের নতুন আখড়াবাংলাদেশ কি ইসলামী সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাচ্ছে?ইসলামী উগ্রবাদীদের কবলে বাংলাদেশ।বাংলাদেশ কি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের অভয়ারন্য?ইরান বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছে বাংলাদেশ কি মৌলবাদী রাষ্ট্র হছে? ইত্যাদি ।

২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৮ প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়,ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি-আইডিপি নামে প্রকাশ্য রাজনীতি শুরু করল হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী-হুজি।রাজধানীতে এক ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করে সাবেক আফগান মুজাহিদদের এই সংগঠন আইডিপি।

অবশ্য সংগঠনের আহবায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেছেন,তাঁদের সংগঠন এ দেশে ১৯৯২ সালেই আত্মপ্রকাশ করে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ নামে।এরপর ১৯৯৮ সালে তা বিলুপ্তি ঘোষণার পর ‘ইসলামী গণ-আন্দোলন’ নামে সংগঠন করেছিলাম।সেই সংগঠন থেকে এখন আইডিপি নামে কাজ করছি।

মোসাদ মূলত ইসরাইলের স্বার্থরক্ষাকারী গোয়েন্দা সংস্হা যা মধ্যপ্রাচ্যের ঐ ইসরাইল নামক জায়গায় ইহুদীদের সামান্য একটু মাথাগোজার ঠাই করে দিতে যে কোন কিছু করতে প্রস্তুত।যতদিন মোসাদ আছে ততদিন ইসরাইল এবং ইহুদী সম্প্রদায় থাকবে নিরাপদ।অধিকাংশ মুসলিম দেশগুলোর সাথে চিরবৈরী স্বভাবের হওয়ায় বাংলাদেশের সাথেও এর সম্পর্ক বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।সিআইএর মত পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই মোসাদের এজেন্ট রয়েছে।এমনও হতে পারে আপনার পাশে বসে থাকা লোকটিও মোসাদের হয়ে কাজ করে তথা ইসরাইলের স্বার্থ দেখে।

কার্টেসী :

১। জালিম, কুখ্যাত সন্ত্রাসী সংস্থা মোসাদ এবং এর কিছু কুকর্ম
২। গোয়েন্দাসংগঠন মোসাদ এবং বাংলাদেশ বনাম ইসরাইল তত্ব

বাংলাদেশে যারা মোসাদ নিয়ে রাজনীতি করছেন, তাদের উচিত সংগঠনটির হালনাগাদ সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা। কেন ইউরোপের সব দেশ মোসাদ-আতঙ্কে থরথর করে কাঁপে, কেনই বা সিআইএ পর্যন্ত মোসাদের কথামতো কাজ করে এবং কেজিবি অথবা র-এর মতো সংগঠনগুলো মোসাদের সাথে সর্বোচ্চ পর্যায়ের বন্ধুত্ব বজায় রেখে চলে? তাদের আরো জানা উচিত, কী করে এবং কোন সাহসে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন কাম কার্যালয়ে ঢুকে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সামনে পায়ের ওপর পা তুলে সব কূটনৈতিক প্রটোকল ভেঙে, যাচ্ছে তাই বলে যাওয়ার এখতিয়ার অর্জন করেছেন। কেন তারা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, এশিয়া আর অস্ট্রেলিয়াতে খবরদারি করার পরও আফ্রিকা এবং ট্রান্স অক্সিয়ানায় খবরদারি চালাচ্ছে? তাদের কী এমন ক্ষমতা, দক্ষতা ও প্রভাব রয়েছে যার কারণে মার্কিন মুলুকে বসে এফবিআই এজেন্ট, জার্মানি, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বসনিয়া হার্জেগোভিনা, সাইপ্রাস, ফ্রান্স, গ্রিস, ইটালি, মাল্টা, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, রাশিয়া, ইউক্রেন প্রভৃতি দেশে বসে তাদের টার্গেটকে হত্যাসহ অপহরণ করে অন্য দেশে অনায়াসে নিয়ে যাওয়ার স্পর্ধা অর্জন করতে পারল এবং ওইসব দেশগুলো কেন মোসাদ এজেন্টের টিকিটি তো দূরের কথা, আজ অবধি একটি পশমও স্পর্শ করতে পারল না?
বাংলাদেশের বুদ্ধিযুক্ত জিহ্বাধারীরা নিশ্চয়ই মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের ওপর গুলিবর্ষণ, ইরান কন্ট্রা অস্ত্র কেলেঙ্কারি, আরব-ইসরাইল যুদ্ধ, ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি, সৌদি বাদশাহ ফয়সলের হত্যাকাণ্ড, মিসরীয় প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের হত্যাকাণ্ড এবং সর্বশেষ মিসরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে উৎখাত করার নেপথ্য কারণগুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রয়েছেন। পৃথিবীবাসী জানে, মধ্যপ্রাচ্যে আইএস নামক জঙ্গি গোষ্ঠীকে পয়দা করেছে মোসাদ এবং সিআইএ মিলে। এ ক্ষেত্রে মার্কিন স্বার্থরক্ষার জন্য মোসাদ প্রিন্সিপাল ফ্যাক্টর এবং সিআইএ অক্সিলিয়ারি ফ্যাক্টর হিসেবে সমন্বিত উদ্যোগে আইএস গড়ে তুলেছে। ইরাক সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর সেখানে রাতারাতি শিয়ারা প্রভাবশালী হয়ে ওঠে পার্শ্ববর্তী ইরানের মদদে। মার্কিনিদের চিরশত্রু ইরানের প্রভাব যেন ইরাকে ভর না করে, এ জন্য তারা মোসাদের সাহায্য প্রার্থী হয় এবং সর্বশক্তি নিয়োগ করে আইএস গড়ে তোলে।

আইএস গঠিত হওয়ার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তারা ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল ভূখণ্ড দখল করে নতুন এক রাষ্ট্র গড়ে তোলে যা মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম রাষ্ট্রগুলোর। আইএস নিজেদের রাষ্ট্রে যেমন প্রচণ্ড শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তেমনি সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক প্রভাব এবং জনমনে ভয়ভীতি সৃষ্টি করতে সমর্থ হওয়ার পর সমগ্র বিশ্বে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে। কার্যত এ কাজে তারা বেশ সফলতাও অর্জন করেছে। আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ, মার্কিন মুলুকসহ তামাম দুনিয়ার মুসলিম উগ্রবাদীদের অনেক সংগঠন আইএসের সাথে হাত মেলায় এবং আনুগত্য প্রকাশ করে। এতে করে মার্কিন প্রশাসন এবং সিআইয়ের টনক নড়ে যায়। তারা বুঝতে পারেÑ আইএস সৃষ্টি তাদের আরেকটি বড় ভুল। তারা আইএস সম্পর্কে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এবং আইএস নির্মূলে সরাসরি যুদ্ধে নেমে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে মোসাদ বেঁকে বসেছে। তারা আইএস ইস্যুতে সিআইয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায় এবং মার্কিনবিরোধী যুদ্ধে আইএসকে মদদ দিতে থাকে। ফলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দুনিয়ার আইএস-বিরোধী বিমান হামলা এবং রুশ বিমান হামলা শতভাগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো।

আইএসের সাথে মোসাদের মাখামাখি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের পশ্চিমা মিত্ররা মোসাদের বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দ উচ্চারণ করতে সাহস পায় না। সিরিয়ার আসাদ সরকার, রাশিয়ার পুতিন সরকার, ইরাক, তুরস্ক, ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশই মোসাদের বিরুদ্ধে ১৯৭০ সালের পর একটি বিবৃতি দিয়েছে, এমন তথ্য আমি জানি না। তবে ১৯৭০ সালের আগে আরব-ইসরাইল যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মুসলিম দুনিয়ায় ইসরাইলবিরোধী একটি গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে আরো অনেক মুসলিম দেশের মতো তৎকালীন পাকিস্তান রাষ্ট্রও ইসরাইলের সাথে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখার কথা চিন্তা করেনি। কালের বিবর্তনে কোনো কোনো মুসলিম রাষ্ট্র ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছেÑ এমনকি ফিলিস্তিনিরাও এখন ইসরাইল ভ্রমণ করতে পারে এবং করেও। আমরা হলাম খাঁটি মুসলিম দেশ, যাদের জনগণের পাসপোর্টে ইসরাইল ভ্রমণ নিষিদ্ধ।
এখন প্রশ্ন হলোÑ কেন মোসাদের এত ক্ষমতা এবং এত বৈভব? আর কেনই বা আইএসকে দমন করা যাচ্ছে না? মোসাদ সম্পর্কে বলার আগে আইএস সম্পর্কে কিছু বলে নেই। মোসাদ আইএসকে মদদ দিচ্ছে; কিন্তু আইএস কারা চালাচ্ছে? পাঠকদের নিশ্চয়ই সাদ্দাম জমানার ইরাকি সেনাবাহিনীর দুর্ধর্ষ ইউনিট রিপাবলিকান গার্ডের কথা মনে আছে। এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে সাদ্দাম হোসেনের ইরাকি সেনাবাহিনী ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। অন্য দিকে রিপাবলিকান গার্ডকে সাদ্দাম দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ও কষ্টসহিষ্ণু, যোদ্ধা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ চৌকস সেনা এবং ইউনিট হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন; অনেকটা অটোমান সাম্রাজ্যের জেনিসারি বাহিনীর মতো। এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্য সাদ্দাম হোসেনের জন্মভূমি তিকরিতের বাসিন্দা এবং ধর্মমতে ছিলেন সুন্নি। দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধে রিপাবলিকান গার্ডের সদস্যরা সার্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেনি সত্য কিন্তু তাদের দক্ষতা শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর শিয়া আধিপত্য রুখে দেয়ার জন্য মোসাদ এবং সিআইএ রিপাবলিকান গার্ডের সদস্যদের একত্র করে আইএস গঠন করে বলে জানা গেছে।

গত কয়েক বছরে আইএস ওরফে রিপাবলিকান গার্ড তাদের মদদদাতা সিআইএকে যুদ্ধক্ষেত্রে চরম শিক্ষা দিলে এবং উপসাগরীয় যুদ্ধের পরাজয়ের অপমান কড়ায়-গণ্ডায় পরিশোধ করলেও তারা মোসাদকে এখনো হাতে রেখেছে সফলতার সাথে। কাজেই যেখানে মোসাদ, সেখানেই আইএস অথবা যেখানে আইএস সেখানেই মোসাদ।

এবার মোসাদ সম্পর্কে কিছু বলি। এই সংগঠনটি তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার মতো নিজ দেশের অভ্যন্তরে কোনো তৎপরতা চালাতে পারেনি। তারা ইসরাইল রাষ্ট্রের কোনো নাগরিককে হয়রানি তো দূরের কথা- সে দেশের একটি ব্যাঙ অথবা চামচিকাকেও স্পর্শ করার ক্ষমতা রাখে না। তাদের যত বাহাদুরি, জারিজুরি এবং কারিশমা তার সবই তারা প্রদর্শন করে বহির্বিশ্বে- বিশেষ করে শক্তিশালী দেশগুলোতে। পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ইহুদি ব্যবসায়ীদের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে মোসাদ তাদের প্রতিটি কর্মে নিপুণ সফলতা দেখিয়ে আসছে।
মার্কিন মুলুক এবং ইউরোপ-আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সিনেমা, মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বেশির ভাগ লেনদেন ইহুদিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তাদের মতামত অগ্রাহ্য করে ওসব দেশে কোনো রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারে না। আবার তাদের অবহেলা করে কেউ রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকতেও পারে না। তারা গণতান্ত্রিক ও কমিউনিস্ট দেশগুলো এবং রাজতন্ত্র দ্বারা চালিত রাষ্ট্রগুলোয় সমানভাবে প্রভাব বিস্তার করে আসছে। বার্মিংহাম প্যালেস থেকে রিয়াদের শাহী প্রাসাদ কিংবা হোয়াইট হাউজ থেকে হোয়াইট হল অথবা ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে চীনের প্রধানমন্ত্রী-প্রেসিডেন্ট কার্যালয়, সর্বত্রই তাদের অবাধ বিচরণ এবং প্রভাব-প্রতিপত্তি রয়েছে।

বিশ্বরাজনীতিতে এ কথা একেবারেই ওপেন সিক্রেট যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একমাত্র ভারতের সাথে মোসাদের রয়েছে কৌশলগত অংশীদারিত্বমূলক বন্ধুত্বের সম্পর্ক। এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থ ছাড়া মোসাদের অন্য কোনো লক্ষ্য আছে বলে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী মনে করে না। ভারতের শিল্প-বাণিজ্যের এক বিরাট অংশই ইহুদি অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণে। পত্রপত্রিকায় খবর এসেছিল, ভারতের গত জাতীয় নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য সেই দেশের ব্যবসায়ী সমাজ তথা করপোরেট হাউজগুলো মোট বাইশ হাজার কোটি রুপি খরচ করেছিল। আর এই টাকার জোগানদার যে ছিল মোসাদ, তা নতুন করে ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। কাজেই ভারতের সাথে মোসাদের সম্পর্কের গভীরতার বিষয়টি এবার হয়তো সবাই আন্দাজ করতে পেরেছেন।
রাজনৈতিক অঙ্ক, ব্যবসা-বাণিজ্য অথবা কৌশলগত সামরিক প্রয়োজনে বাংলাদেশের মতো একটি রাষ্ট্রে আইএসের প্রভাব সৃষ্টির আদৌ প্রয়োজন ছিল না। আইএসের নীতি-আদর্শ, চলার পথ এবং রাজনীতি- কোনোটার জন্যই বাংলাদেশ না সাহায্যকারী আর না বাধাদানকারী। ফলে তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো খোঁজখবর রাখারই প্রয়োজন মনে করেনি। আইএস বাংলাদেশ সম্পর্কে না ভাবলেও আমাদের দেশের শক্তিমান ও বুদ্ধিমান জিহ্বাধারীরা বলতে আরম্ভ করলেন, এ দেশের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ইত্যাদির সাথে আইএস জড়িত। তারা প্রতিনিয়ত শত শত লোককে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার করিয়ে বলতে আরম্ভ করলেন- ওরা আইএস জঙ্গি। এ কাজ তারা করেছিল মূলত পশ্চিমা দুনিয়ার সহানুভূতি অর্জনের জন্য। ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের পর পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্কের যে অবনতি শুরু হয়, তা মিটিয়ে ফেলার জন্য পশ্চিমাদের আইএসবিরোধী প্রচারণায় শামিল হয়ে ক্ষমতাসীনেরা যে আইএস-বিরোধী কর্মকাণ্ড শুরু করেছিল, তা কিছুকাল পর তাদের জন্য বুমেরাং হয়ে। ফলে তারা এখন দিনরাত বলছেন, এ দেশে আইএস নেই, ছিল না ইত্যাদি; কিন্তু এতে কোনো কাজ হচ্ছে নাÑ সর্বনাশ যা হওয়ার তা ইতোমধ্যে হয়ে গেছে।

আবার মোসাদ প্রসঙ্গে আসি। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির কোনো বিষয়েই তাদের মাথা ঘামানোর দরকার ছিল না। প্রথমত, এ দেশে তাদের কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ নেই। তাদের যে সামান্য অর্থনৈতিক স্বার্থ ছিল তা-ও শতভাগ অর্জিত হয়ে গেছে সেই সত্তরের দশকেই। আমাদের দেশে বর্তমানে সব বড় ব্যবসা ইহুদি অর্থনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
সব বৈদেশিক বাণিজ্য, ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, প্রভাবশালী গণমাধ্যম, রাষ্ট্রীয় সংস্থার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য, ভোগ্যপণ্য, প্রযুক্তি, খাদ্যপণ্য ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই রয়েছে ইহুদিদের মালিকানা, প্রভাব আর প্রতিপত্তি। কোনো তৎপরতা ছাড়াই তারা এসব হাসিল করেছে। ফলে বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের কোনো অভিযোগ থাকা অস্বাভাবিক। অন্য দিকে, ভারতের সাথে তাদের গভীর বন্ধুত্বের কারণে তারা ক্ষমতাসীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন, এটাই স্বাভাবিক। এ অবস্থায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মোসাদকে টেনে এনে প্রকাশ্যে তাদের নিয়ে রাজনীতি করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা রাজনীতিবিদেরাই ভালো বলতে পারবেন।

They are brutal... as simple as that... মোসাদ'কে বলা হয় "the most effective killing machine out there". তখন চলতেছে স্নায়ু যুদ্ধ। সোভিয়েত পলিতব্যুরোতে ভাষণ দিচ্ছে নিকিতা ক্রুসচেভ। স্তালিন মরার পর তিনি ক্ষমতায় এসেছেন। স্তালিন বেঁচে থাকতে তাঁর নামে একটা নেগেটিভ কথা বলার সাহস সোভিয়েত ইউনিয়নে কেউ পেতো না। আর বললে  অবস্থা হত ভয়াবহ। কিন্তু ক্রুসচেভ সেদিন ভাষণে একেএকে তুলে ধরে স্তালিনের নানান অন্যায়, অত্যাচারের লোমহর্ষক কাহিনী। যার অনেকগুলো আবার খোদ ক্রুসচেভ স্তালিনের আদেশে করতে বাধ্য হয়েছিলো। কোনো সাংবাদিক ছিলো না পলিতব্যুরোতে।  শুধুমাত্র কমিউনিস্ট পার্টির অনুষ্ঠানে দেয়া সেই ভাষণে।  কিন্তু এই ভাষণের audio কপি somehow হাতে পেয়ে যায় মোসাদ। তুলে দেয় সিআইএর হাতে। সিআইএ রীতিমত আমাবস্যার চাঁদ পেয়েছিলো সেদিন। এটা রেডিও ফ্রি ইউরোপের মাধ্যমে তাঁরা প্রচার করে সমগ্র ইউরোপে। এটা ছিলো CIA এর জন্য অন্যতম প্রোপাগান্ডার লড়াইয়ের হাতিয়ার।

গায়ের জোরে ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, কৌশলে ইসরাইলি দখলদারিত্ব বজায় রাখা, তিনটা আরব ইসরাইল যুদ্ধে জয়ে অভুতপূর্ব অবদান রাখা, এসব মোসাদের অন্যতম success story... ১৯৬৭ সালের ৬ দিনের যুদ্ধে ইসরাইল যে চোখের নিমেষেই অধিক শক্তিশালী সম্মিলিত আরব দেশগুলোকে হারিয়ে দিয়েছিলো, এর পেছনে ছিলো মোসাদ... মোসাদের আরেকটি বিশেষ দিক হল স্টানবাজি। তাঁরা প্রচার করতে, প্রচারিত হতে ভালোবাসে। তাঁরা নিজেদের website বানিয়েছে অসাধারণ ভাবে। এবং তাতে একরকম কম্পিটিশনের ব্যবস্থা করে রেখেছে। online recruitment পর্যন্ত হয়। এবং তাঁরা উৎসাহিত করে এটা। বিশ্বের যে প্রান্তেই ইহুদি আছে, সেখানেই মোসাদ আছে। আর ইসরাইলের স্বার্থ বিরোধী কেউ কিছু করলে মোসাদ তাঁকে খুঁজে বের করবে। এবং খুন করে আসবে। তা সে দুনিয়ার যে প্রান্তেই থাকুক না কেন।

এক জার্মান বিজ্ঞানী একবার সাদ্দামকে শক্তিশালী স্কাড মিসাইলের উন্নয়নে সহযোগিতা করছিলো। ফলাফল, মোসাদ তাঁকে ইউরোপে গিয়ে মেরে আসে। আবার কিছুদিন আগে এক অস্ত্র ব্যবসায়ী, যে কিনা হামাসকে অস্ত্র দিচ্ছিলো, তাঁকে মোসাদ দুবাইএর বিখ্যাত সাত তারকা হোটেল ব্রুজ আল খলিফাতে গিয়ে মেরে আসে। মোসাদ ভালো করেই জানে, এটা ক্যামেরাতে ধরা পড়বে। কিন্তু তাঁরা এসেছিলো সেখানেই। উদ্দেশ্য, একে তো মেরে যাওয়া। সেইসাথে মোসাদ চায় যে এটা দুনিয়াতে প্রচার হোক। fear factor তৈরি হোক। মিউনিক ম্যাসাকারের পর এরসাথে যুক্ত ব্যক্তিদের মোসাদ দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে খুঁজে বের করে মারে। আবার  জীবিত Nazi criminal দের খুঁজে খুঁজে বের করে। false flag অপারেশন, স্যাবোটাজ, খুন খারাপী রীতিমত নিত্যনতুন আর ইনোভেটিভ সব উপায়ে করে যাচ্ছে মোসাদ। মোসাদের অনেক অপারেশন নিয়ে চলচিত্র বানানো হয়েছে। বই লিখা হয়েছে। দুনিয়ার অনেক দেশের গোয়েন্দাসংস্থার যেখানে website ই নেই । সেখানে মোসাদেই website দেখার মত। মোসাদের website এ লিখা থাকে, History is not written, history is created.  এবং মোসাদ আর shin bet এটা করে যাচ্ছে অনরবরত।

শেষ কথা বললে, গোয়েন্দা সংস্থার কাজ অন্তত মুভি সিরিয়ালে যতটা thrilling মনে হয়, বাস্তবে ততটা না। অন্তত MI6 বা CIA এর মত সাবেক গোয়েন্দা সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত লোকেরা এমনই বলে মিডিয়াতে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একজনের পেছনে লেগে সার্ভিলেন্স চালানো, ঘণ্টার পর ঘণ্টা desk work করতে হয়। গোয়েন্দা সংস্থা মানেই যে অস্ত্র নিয়ে শত্রু পেছনে ছোটা জেমস বন্ড, তেমনটি মোটই না। এবং দুনিয়ার সেরাসেরা সব স্পাই দেখতেও মুভি বা সিরিয়ালের সেই মাসকুলার গুড লুকিং স্পাই এর মত না  ... একটা মোটা বেটে লোক, তাঁকে স্পাই হিসেবে সন্দেহ করার সম্ভাবনা কিন্তু কম। নিজেই একটু চিন্তা করে দেখেন (lolz)  স্পাই হিসেবে এমন লোকরাই সবচেয়ে ভালো ফলাফল দেয়। রেকর্ড তেমনই বলে। গায়ের জোরের চেয়ে মাথার বুদ্ধি এতে বেশি লাগে। সব গোয়েন্দা সংস্থাতে স্পাই থাকে, তবে গোয়েন্দা সংস্থা মানেই কেবল স্পাই না।

টাকা অনেক বড় ফ্যাক্টর। অনুন্নত গরিব দেশে বা অভ্যন্তরীণ ঝামেলায় জর্জরিত দেশে ভালো স্পাই এজেন্সি তৈরি হয় না সাধারণত মুলত এই কারনেই। হলেও দেখা যায়, সেটা যতটা না স্পাই বা ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, তাঁর চেয়েও বেশি পুলিশ। অর্থাৎ নিজ দেশে পুলিশি কর্মকান্ড চালাতেই তাঁদের সব শ্রম ও সময় ব্যয় হয়। যেমন মিশরের গোয়েন্দাসংস্থা আদেও নামে একটা গোয়েন্দাসংস্থা হলেও  সেটা একটা পুলিশ ছাড়া আর কিছু না। দেশের স্বার্থ নয়, বরং জেনারেল সিসি'কে ক্ষমতায় রাখতে পারবে কি পারবে না, এটা নিয়েই তাঁর সব শ্রম ব্যয় হয়। আগে যেমন মোবাররকের জন্য করতো।

যাই হোক, it's a dirty business... সাপ হয়ে দংশন করে, ওঝা হয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। লাঠিকে সাপ, আর সাপকে লাঠি বানাতে হয়। তবে সবচেয়ে ভালো স্পাই সেইই হয়, যে নিজেকে খুব ভালো স্পাই বা গোয়েন্দা হিসেবে মনে করে না।  আর সবচেয়ে সেরা স্পাই দেখতে জেমস বন্ডের মতও হয় না। যাকে স্পাই এর মত দেখতে লাগে, সে কিভাবে স্পাই হবে বলুন !!

যাই হোক, পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

*Credit: ইন্টারনেট ও ফেসবুক(ফেসবুক আইডি প্রকাশ করছি না প্রাইভেসির কারনে) থেকে সংগৃহীত ও কপিকৃত।

No comments:

Post a Comment