Tuesday 7 June 2016

বাংলাদেশ নিয়ে তিন গোয়েন্দার গল্প পর্ব এক। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র হালখাতা ।

বাংলাদেশ নিয়ে তিন গোয়েন্দার গল্প পর্ব এক।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র হালখাতা ।

সূফি বরষণ
এক.
বাংলাদেশের রাজনীতিতে হঠাৎ করেই মোসাদ বিতর্ক শুরু হয়েছে। মোসাদ হলো পৃথিবীর একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র- ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, সামরিক প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বহুমুখী তৎপরতা সম্পর্কে বেশি কিছু জানে না। ফলে আমরা অনেক সময় অনেক কিছু নিয়ে এমনভাবে খেল-তামাশা করি, যে রূপ করে থাকে অবোধ শিশুরা, পাগল অথবা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী লোকেরা।

গত ৬৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম মোসাদের কোনো ‘এজেন্ট’ গ্রেফতার হলো। পৃথিবীর সর্বকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, সবচেয়ে দুর্ধর্ষ, সবচেয়ে শক্তিশালী এবং অত্যন্ত দক্ষ একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টকে চ্যাংদোলা করে গ্রেফতার করার মাধ্যমে দুটো জিনিস প্রমাণ হয়ে গেল- এক. মোসাদ নামক গোয়েন্দা সংস্থাটির সব কিছুর মান এতই নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, গত ৬৮ বছরের মধ্যে সর্বপ্রথম অধঃপতনটি তাদের কপালে জুটল বাংলাদেশের মতো একটি রাষ্ট্রে! দুই. বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা ইদানীংকালে মোসাদকেও ছাড়িয়ে গেছে!
আর বাংলাদেশের মন্ত্রী বলছে দেশের হত্যাকান্ডের পিছনে মোসাদ জড়িত এবং ইসরায়েলের সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মূখপাত্র বিবিসিকে বলেছে বাংলাদেশের মন্ত্রী বাজে কথা বলেছে। তাই আজকের এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা ।

পিছনের কিছু কথা, ২০০৯ সালের  ১ ফেব্রুয়ারী কলকাতা কনফারেন্স  নামে কলকাতার সুবাস ইন্সটিটিউটে বাংলাদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের কটি অংগ সংগঠনের ৪র্থ বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষন ছিল, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির প্রযোজিত ডকুমেন্টারী “মানুষ না মালাউন”? (দেখুন, YouTube.com এ)। ডকুমেন্টারীর ধারা বিবরনীতে বলা হয় বাংলাদেশে সংঘটিত সকল নির্যাতন নিপিড়নের জন্য দায়ী হচ্ছে, বর্বর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, সেনাবাহিনী । ইসলাম ও সেনাবাহিনীকে উতখাত করতে না পারলে এ সংকটের সমাধা হবে না। এ ব্যপারে ভারতসহ সকল আন্তর্জাতিক শক্তির সহযোগিতা চাওয়া হয়। ঐ কনফারেন্সে বাংলাদেশ থেকে উপস্থিত ছিলেন চরম ইসলাম, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত কথিত সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম আকাশ ও সুমি খান।

কার্লেকারের পাচ শর্ত। হিরয়ন্ময় কার্লেকার ভারতের ইংলিশ দৈনিক দি পাইওনিয়ারের (Daily Pioneer) নিয়মিত কলামিষ্ট। বাংলাদেশ পরবর্তী আফগানিস্থান হবে এমন আশা করে লিখেছিলেন, Bangladesh: Next Afghanistan?(বাংলাদেশ কি পরবর্তি আফগানিস্থান হচ্ছে?) নামক বাংলাদেশ বিরোধী একটি বই (দেখুন, Bangladesh: Next Afghanistan?, Sage Publications, New Delhi, 2005)। সেই বাবু কার্লেকার বাংলাদেশের মইন-ফখরুদ্ধিন সরকারের মুল কর্তাব্যক্তি জেনারেল মইন ২০০৮ এর শুরুতে ভারত সফর করতে গেলে পাচটি শর্ত পেশ করেছিলেন। লিখেছিলেন, জেনারেল মইনকে ভারতের সমর্থন ও স্বীকৃতি পেতে হলে, পাচটী কাজ করতে হবে। তার মধ্যে গুরুত্বপুর্ণ হচ্ছে জামায়াতকে শায়েস্তা (curb) করতে হবে, জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে এবং তাদের তথা মৌলবাদীদের অর্থনীতি ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে হবে। A message for Gen Moeen শীর্ষক কলামে কার্লেকার লিখেছে, Before gifting legitimacy to Gen Ahmed, India must ensure that he closes the camps Bangladesh maintains for North-Eastern insurgents, hands over ULFA's Paresh Baruah (Anup Chetia alone is not enough), tries war criminals and curbs the JeIB (Jamaat-e-Islami Bangladesh). (Source: Daily Pioneer, 28 February 2008)

অবশ্য মি. কার্লেকারের এই কাজটি বেশ সহজ করে দিয়েছিলেন ড. আবুল বারাকাত। তিনি তার গবেষণায়(?) কোন তথ্যসুত্র ছাড়াই প্রমাণ করে দেখিয়েছেন জামায়াত তথা মৌলবাদীরা বছরে পনের শত কোটি টাকারও বেশী নিট মুনাফা করছে। কার্লেকার তার লেখায় ড. বারাকাত গবেষণাকেই(?) মুল সুত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ড. বারাকাত অবশ্য সেই বিখ্যাত গবেষণার (?) পুরস্কার স্বরুপ পেযেছেন বাংলাদেশের অন্যতম বড় ব্যাংক, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদটি।

গুপ্তচরবৃত্তি পৃথিবীর নতুন কোনো বিষয় নয়। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, পত্রপত্রিকা প্রকাশের দ্বার অবারিত থাকে সেখানে বৈরী শক্তির তৎপরতাও চলে গণতান্ত্রিক উদারতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে। তাই রাষ্ট্রকে নিরাপদ রাখার জন্য প্রয়োজন হয় শক্তিশালী গুপ্তচর সংগঠনের। আবার অনেক রাষ্ট্র সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্যও পরিচালনা করে গুপ্তচরবৃত্তি।

ভারত দক্ষিণ এশিয়ার একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশও এটি। রিসার্স অ্যান্ড এনালাইসিস উইং বা র হচ্ছে দেশটির বৈদেশিক গুপ্তচর সংস্থার নাম। ১৯৬৮ সালে ২১ সেপ্টেম্বর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সংস্থাটি গঠন করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় বড় ধরনের সফলতাও পায় সংস্থাটি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ সৃষ্টিতে র ব্যাপক ভূমিকা পালন করে সফল হয়। চার বছরের মাথায় আর এক সফলতার মুখ দেখে সিকিম দখলের মাধ্যমে। এই বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা জানতে পড়ুন বি রমনের লেখা বই  র এর কাওবয়েজরা।

 প্রতিষ্ঠার পটভূমি: র-এর প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন রমেশ্বর নাথ কাও। যিনি আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে রামজি এবং জুনিয়র কলিগদের কাছে স্যার বলে পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন র-এর প্রতিষ্ঠাতা। কাওকে ইন্দিরা গান্ধী ও তার পিতা জওহরলাল নেহেরু ভালোভাবে চিনতেন। পেশাগত সততার ব্যাপারে অবহিত ছিলেন বলে তাকে এ সম্মানজনক পদের জন্য বেছে নেয়া হয়েছিল। এর পেছনে আরো কারণ ছিল। তিনি আইবি’র বৈদেশিক গোয়েন্দা শাখার প্রধান ছিলেন এবং ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব সিকিউরিটির (ডিজিএস) প্রতিষ্ঠাতাদের একজন হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন। আর এই ডিজিএস সৃষ্টি করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সহায়তায় সংঘটিত ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের পর। ওই যুদ্ধে ভারতীয় গোয়েন্দাদের মধ্যে দক্ষতার যে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল সেটা পূরণ করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছিল রিসার্স অ্যান্ড এনালাইসিস উইং। সংক্ষেপে আরঅ্যান্ডএডব্লিউ বা র।

র কোনো তথ্য প্রকাশ করে না: অনেকের সন্দেহ ভারতের ক্ষমতাসীন দলের অনেক নীতিনির্ধারকও র-এর প্রকৃত তৎপরতা সম্পর্কে জানেন না। ভারতীয় জনগণ তো নয়ই। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এর বার্ষিক বাজেট গোপন রাখা হয়েছে। এমনকি সংসদেও সংস্থাটির আয়-ব্যয় নিয়ে কোনো আলোচনা করা যায় না। অবশ্য সংস্থাটি সম্পর্কে জানার ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে ভারতের জনগণের মধ্যে।

 প্রতিবেশী দেশে একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্য: র পার্শ্ববর্তী সব দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক ঘটনাবলি ও অবস্থান যা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার সাথে জড়িত এবং ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতিতে যার প্রভাব অবশ্যম্ভাবী সেদিকে লক্ষ রাখে। সংস্থাটি পাশের দেশগুলোতে ভারতের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য এসব অঞ্চলে প্রকাশ্য বা পরোক্ষ কোনোরূপ ভারতবিরোধী সম্ভাবনা সৃষ্টির সুযোগ দিতে চায় না। এ জন্য সংস্থাটি পণ্ডিত নেহেরুর ‘অখণ্ড ভারত মাতা’র কল্পনাবিলাসকে বাস্তবে রূপ দেয়ার চেষ্টা করছে। র ভারত মহাসাগরসহ সমগ্র উপমহাদেশে ভারতীয় সামরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে কাজ করছে। এটা পণ্ডিত নেহেরুর ডক্টিন নামেও পরিচিত।

একনজরে র: প্রতিষ্ঠা ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৮। হেডকোয়ার্টার
নয়াদিল্লি, ভারত। নিয়ন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সহযোগী সংস্থা, দ্য এভিয়েশন রিসার্স সেন্টার, দ্য রেডিও রিসার্চ সেন্টার, ইলেকট্রনিক ও টেকনিক্যাল সার্ভিসেস, ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ফেসিলিটিস অর্গানাইজেশন, স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স। আরও আজ জেনে নিন প্রভাবশালী এ গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ কিছু তথ্য-

১. ‘র’ এর মূলমন্ত্র হল ‘ধর্ম রক্ষতি রক্ষিত’ অর্থাৎ যে ধর্ম রক্ষা করে সে সব সময় সুরক্ষিত থাকে।

২. ১৯৬২ সালের ইন্দো-চীন যুদ্ধ এবং ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর ১৯৬৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ‘র’ এর জন্ম।

৩. ভারতকে সুরক্ষিত রাখতেই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও তার সরকার এই গোয়েন্দা সংস্থা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন।

৪. ‘র’ এর প্রথম ডিরেক্টর রামেশ্বর নাথ কাও।

৫. আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র আদলে একে গড়ে তোলা হয়েছে।

৬. ‘র’ এর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয় আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ইসরাইলে।

৭. কঠিন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি করা হয় এক একজন কর্মকর্তাকে।  কঠিন পরিস্থিতিতে কীভাবে নিজেদের রক্ষা করবে তা শেখানো হয়।  বিশেষ করে ‘ক্রব মাগা’ এবং গুপ্তচরবৃত্তির জন্য টেকনিক্যাল ডিভাইস কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা শেখানো হয়।

৮. ফিন্যান্সিয়াল, ইকনমিক অ্যানালিসিস, স্পেস টেকনোলজি, ইনফর্মেশন সিকিউরিটি, এনার্জি সিকিউরিটি এবং সায়েন্টিফিক নলেজের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয় কর্মকর্তাদের।

৯. ১৯৮৪ সালে ভারতীয় সেনাকে সতর্ক করে ‘র’ জানায় যে, পাকিস্তান সিয়াচেন দখল করার জন্য অপারেশন আবাবিল’র প্রস্তুতি নিচ্ছে।  ’র’ এর গোপন তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই পাক সেনাদের পরিকল্পনা ভেস্তে দেয় ভারতীয় সেনা।

১০. প্রথম দিকে আইবি, ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসেস, ইন্ডিয়ান মিলিটারি এবং রেভিনিউ ডিপার্টমেন্ট থেকে কর্মকর্তাদেরকে নিয়োগ করা হতো ‘র’ এ।  তবে এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রদের এখানে নিয়োগ করা হচ্ছে।

১১. কোনো বিষয়েই সংসদকে জবাবদিহি করতে বাধ্য নয় ‘র’।  শুধু প্রধানমন্ত্রী এবং জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স কমিটিকেই জবাবদিহি করবে।  ’র’ এর প্রধানকে সেক্রেটারি বলা হয়।

১২. মাত্র দুই বছরের ট্রেনিং হয় ‘র’ এর।  তার মধ্যে রয়েছে বেসিক ট্রেনিং এবং অ্যাডভান্সড ট্রেনিং। বেসিক ট্রেনিং ১০ দিন মতো চলে।  এই সময় ট্রেনিদের ইন্টেলিজেন্স এবং গুপ্তচর জগতের সঙ্গে পরিচয় ঘটানো হয়।

১৩. বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীকে সাহায্যের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল ‘র’।

১৪. অপারেশন কাহুটা-তে ব্যাপক ভূমিকা ছিল ‘র’ এর।  এই অপারেশনের মাধ্যমে পাকিস্তানের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রর প্রোগ্রাম সম্পর্কে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করেছিল ‘র’ কর্মকর্তারা।

১৫. পাকিস্তান ও চীন সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ হন ‘র’ এর প্রধানরা। এই উইংয়ের বর্তমান প্রধান রাজেন্দ্র খন্না।

বিদেশে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য সংস্থাটি ভারতীয় দূতাবাসের ছদ্মাবরণ ও কূটনৈতিক সুবিধাকে কাজে লাগায়। যাকে দিয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হয় তিনি সরকারি কর্মকর্তা কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের পদস্থ কর্মকর্তা হলেও তাকে ইন্টেলিজেন্স কর্মকর্তা বলা হয়। এসব কর্মকর্তা হতে পারেন রাষ্ট্রদূত, অ্যাটাশে (সামরিক, নৌ, বিমান), সিভিল এভিয়েশন, বাণিজ্যিক, পেট্রোলিয়াম অথবা কৃষিসহ যেকোনো ক্ষেত্রে কর্মরত। এমনকি দূতাবাসের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীই ইন্টেলিজেন্সের সাথে জড়িত থাকতে পারেন। কেন্দ্রে তথ্য পাঠানোর জন্য সংস্থাটি ভারতীয় দূতাবাসের এন্টেনার সহায়তা নেয় ।

সংস্থাটি বিভিন্ন আকর্ষণীয় মহিলাকে ইন্টেলিজেন্সে নিয়োগ করে দেশে বা বিদেশের টার্গেটকে তাদের মাধ্যমে ব্লাকমেইল করে। এ ছাড়া একজন ছাত্র, পর্যটক, সাংবাদিক, বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ী অথবা একজন শিল্পীকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দানের পর পার্শ্ববর্তী দেশে বিশেষ সময়ে বা স্থায়ীভাবে পাঠায় এই র। সীমান্তে বিএসএফ’র সাথে মিলিতভাবে গুপ্তচরবৃত্তি পরিচালনা করে। টার্গেট দেশের প্রতিভাবান তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের আড়ালে ভারতীয় চেতনার অনুপ্রবেশ ঘটানোয় তৎপর সংস্থাটি। এ ছাড়াও ভিডিও ফিল্ম, সাময়িকী, পর্নো পত্রপত্রিকা, স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল, রেডিওর মাধ্যমে সাংস্কৃতিক নৈরাজ্য সৃষ্টি করা সংস্থাটির নিয়মিত কাজের অংশ।

সংস্থাটি ‘বিশেষ কার্যক্রম বিভাগের’ অপারেটিভদের মাধ্যমে ভারতের সীমান্তবাসীদের ছোটখাটো যুদ্ধাস্ত্র ও যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়। যাতে কোনো দেশ ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে নিজেদের রক্ষা করতে সমর্থ হয় এবং অপারেটরদের সাথে সীমান্ত অতিক্রম করে শত্রুর পশ্চাতে সক্রিয় থাকতে পারে। এ ছাড়া বিচ্ছিন্নতাবাদী ও নাশকতামূলক কাজে টার্গেট দেশের এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেয়া ও প্রয়োজনে নিজ অপারেটিভদের কাজে লাগানো র-এর অন্যতম কাজ। এ জন্য অল ইন্ডিয়া রেডিও, দূরদর্শন ও পত্রপত্রিকার মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা পরিচালনা করা হয়।

সংস্থাটির কৌশলের একটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি হলো রেডিও, টিভি, পত্রপত্রিকা, গুজব সৃষ্টি, সহযোগী রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ, আন্দোলনের মাধ্যমে ভুল তথ্য উপস্থাপন করা। যার উদ্দেশ্য হচ্ছে টার্গেট দেশের মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করা, জনমতকে হতবুদ্ধি, বিশৃঙ্খল ও প্রজ্বলিত করা। এ ক্ষেত্রে টার্গেট দেশে ভুল তথ্য অনুপ্রবেশ করানো হয় যাতে সে দেশের স্বার্থহানি ঘটে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে শত্রু দেশের মানুষকে নিজ দেশের ইচ্ছানুযায়ী কোনো বিশেষ কিছুতে বিশ্বাস করানো। এ জন্য টার্গেট দেশে ভুল গোয়েন্দা রিপোর্ট সংবাদমাধ্যম, কূটনৈতিক চ্যানেল, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও অন্য পেশাজীবীদের মাধ্যমে অনুপ্রবেশ করানো হয়।

অন্য দিকে সংস্থাটি বিভিন্ন নাশকতামূলক বা অন্তর্ঘাতমূলক কাজ সময়ানুযায়ী টার্গেট দেশে নিজ অপারেটিভ ও এজেন্টদের (টার্গেট দেশের নাগরিক) মাধ্যমে করা হয়। এ ক্ষেত্রে বিশেষ অপারেশন বিভাগ বিশেষ অপারেশনে প্রচুর নোংরা কাজে জড়িত হয়ে পড়ে। অবশ্য কাজগুলো একজনের কাছে নোংরা কৌশল আবার অন্য জনের কাছে আইনসিদ্ধ ও বৈধ হতে পারে।

উল্লেখযোগ্য অপারেশন
চীনের বিরুদ্ধে সিআইএ’র সাথে হিমালয়ে ইএলআইএনটি অপারেশন (১৯৬৪)। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ (১৯৭১)। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা। অপারেশন স্মাইলিং যুদ্ধ (১৯৭৪)। সিকিম একত্রীকরণ। পাকিস্তানের প্রধান পারমাণবিক কেন্দ্রের ব্লুপ্রিন্ট সংগ্রহ। কানিশকা বোম্বিং কেস (১৯৮৫) ও বাংলাদেশে অপারেশন ক্যাকটাস (১৯৮৮)। শ্রীলঙ্কার তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এলটিটিইকে প্রশিক্ষণ প্রদান। কাশ্মীরে অপারেশন চানাকিয়া। পাকিস্তানে বিভিন্ন সহিংসতায় মদদদান। কারগিল যুদ্ধ (১৯৯৯)। আফগানিস্তানে মিলিটারি হাসপাতাল পরিচালনা। মিয়ানমারে অপারেশন লিচ। ওসামা বিন লাদেনসহ তালেবানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অংশগ্রহণ।
বাংলাদেশে এ “র” এর অপারেশন ও কার্যক্রমঃ

বাংলাদেশে কমপক্ষে ১ লক্ষ ‘র” কর্মী ও ইনফর্মার সক্রিয় আছে বলে জানা যায় এর মধ্যে ভারতীয় ৪,০০০ এর মত (স্পেকুলেশন) আর বাকিরা ইনফর্মার ,ধর্মীয় ও মতাদর্শগতভাবে 'র" এর প্রতি চরম সহানুভুতিশীল যাদের যেকোন কাজে লাগানো সম্ভব।

বাংলাদেশে যে সব বড় ঘটনার সাথে রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং এর সংশ্লিস্টতা নিয়ে আঙ্গুল তোলা হয়ঃ

বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি বাহিনী গঠন ও পরিচালনায় “র” জরিত আছে বলে ধারনা করা হয়।
১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান হত্যা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে র” এর সংশ্লিস্টতা ছিলো বলে ধরা হয়।
এরশাদের ক্ষমতায় আরোহন এ সহযোগীতা ও তাকে ডবল এজেন্ট সন্দেহে এরশাদের পতনে সহায়তা।

১৯৯৬ এর জেনারেল নাসিমের ব্যার্থ অভ্যুত্থান প্রচেস্টা।

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়া হত্যাকান্ড।

১/১১ বি্ডিআর বিদ্রোহ

ইলি্য়াস আলী নিরুদ্দেশ

এছাড়া বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতা তৈরীর জন্য রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং কে দায়ি করা হয়।

অসর্মথিত সুত্র
বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল,এন জিও,সরকারী প্রতিস্টান,বানিজ্য অ্যাসোসিয়েশন থেকে শুরু করে প্রতিটি সরকারী বেসরকারি গুরুত্বপুর্ন প্রতিস্টানের মধ্যে রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং এর কর্মীরা সক্রিয় আছেন। বাংলাদেশে তাদের প্রধানতম রিক্রুটিং মাধ্যম হচ্ছে "ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টার"। ঢাকা শহরের অন্তত দুইটি মসজিদ এর ইমাম অথবা সহকারি হিসাবে "র" কর্মকর্তা কাজ করছেন। চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, গোপালগঞ্জ ও সিলেটের একাধিক মাদ্রাসার শিক্ষক কভারে "র" অফিসার কর্মরত আছেন।বাংলাদেশের প্রতিটা গ্যারিসন শহরের প্রবেশ মুখে এবং আশেপাশে একাধিক "র" সার্ভেইলেন্স পোস্ট এ "র" অফিসাররা কর্মরত আছেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখামুখি হওয়া জামাতের একজন নেতা(এখনো চার্জ গঠন করা হয় নি) "র" এর পুরানো সক্রিয় কর্মী।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাথে রয়েছে র-এর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। সামরিক সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের চুক্তিও হয়েছে। পারমাণবিক বোমার শক্তিধর দেশ ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রেখেই পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে গোয়েন্দা তৎপরতা পরিচালনা করছে। স্বপ্ন দেখছে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠার। এগিয়েছেও অনেক দূর। সিকিম এখন ভারতের অঙ্গরাজ্য।

No comments:

Post a Comment