Monday 27 June 2016

শেষ পর্ব ।। ঐতিহাসিক পলাশীর ষড়যন্ত্র এখনও চলছে । বর্ণ হিন্দু ব্রাহ্মণদের ষড়যন্ত্রে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়।

পলাশীর বিশ্বাসঘাতক  ষড়যন্ত্রকারীদের করুণ পরিণতি। 


সূফি বরষণ
আজও আন্তর্জাতিক লুটেরা চক্র নিরীহ কল্যাণকামীর ভূমিকায় অভিনয় করে যাচ্ছে। বিভিন্ন ভূমি ও খনিজসম্পদ কিনে নিচ্ছে। এনজিও ও সুশীল সমাজের নামে-বেনামে বহু পোষ্য তারা পেলে যাচ্ছে। বিভিন্ন মতাদর্শ ও কর্মসূচির নামে জাতির মধ্যে বিভাজনের প্রাচীর নির্মাণ করছে। পলাশীর কালো ছায়া আজও আমাদের মাথার ওপর বিরাজ করছে। শাসকরূপী দানব ঝেঁকে বসেছে আমাদের ওপর। এই দানবের নৃশংস থাবায় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে এদেশের বিশ্বাসদীপ্ত মানুষেরা। নিজ দেশে পরবাসী হয়ে আছেন এখানকার তৌহিদী জনতা। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ প্রয়োজন। আর এই উত্তরণে পলাশীর চেতনা হতে পারে আমাদের জন্য আলোকর্তিকা।

প্রতি বছর জুন মাস এলে পলাশীর কথা স্মরণ করে আমরা মায়াকান্না করি। কিন্তু পলাশীর আম বাগানে থেকেও আমাদের বোধোদয় নেই। পলাশীপূর্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে শাহ ওয়ালীউল্লাহ, নূর কুতবুুল আলমদের সতর্ক সাইরেন ছিল, কিন্তু আজকের পলাশীর কালো ছায়া থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে নেই কোনো নকীবের হাতছানি। তাই আরেকটি পলাশীর নির্মম ভাগ্যবরণের পূর্বেই আমাদের সতর্ক হতে হবে। বিদেশী প্রভুদের এবং দেশীয় প্রেতাত্মাদের গতিবিধি নজরে রেখে পথচলা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বাসী মানুষদের মহা ঐক্যই পারে পলাশীর মতো করুণ পরিণতি থেকে এই জাতিকে রক্ষা করতে।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন উপমহাদেশের ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় এ কথা কারো অজানা নয়। এইদিন এদেশের কিছু ক্ষমতালোভী বিশ্বাসঘাতকের কারণে বাংলা বিহার উড়িষ্যার স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলাহ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে এক প্রহসনমূলক যুদ্ধে পরাজিত হন। এই পরাজয়ের চোরাগলি ধরেই ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী দিল্লির মসনদ দখল করার মধ্যদিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ দখলদারিত্ব কায়েম করে। উপমহাদেশের মুসলমান ও নিম্ন বর্ণের হিন্দু ও স্বাধীনচেতা শাসকদের দুর্দিনের সূচনা হয়।

পলাশীর দিনটিকে স্মরণ করলে কোন দেশপ্রেমিক ক্ষমতার লোভে বিদেশী শক্তির সাথে হাত মিলানোর কথা চিন্তা করতে পারেন না। ষড়যন্ত্র আর বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে ঐদিন যারা পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধ যুদ্ধ নাটক মঞ্চস্থ করে নবাব সিরাজদ্দৌলাহকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজের জন্মভূমিকে বিদেশী শত্রুর হাতে তুলে দিয়েছিল তাদের পরিণতি ভালো হয়নি। এ ঘটনা থেকে এই শিক্ষাই পাওয়া যায় দেশ উম্মাহর সাথে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করলে শুধু আদালতে আখিরাতে নয় এই দুনিয়াতেও শাস্তি পেতে হয়। কয়েকজন বিশ্বাসঘাতকের পরিণতি তুলে ধরা হলো। এ যুগের বিশ্বাসঘাতকরা তাদের  পরিণতি থেকে শিক্ষা নিলে আমাদের জাতীয় জীবনে অনেক সঙ্কটই কেটে যাবে।

ষড়যন্ত্রকারীদের পরিণতি:
নিউটনের তৃতীয় সূত্রে বলা হয়েছে, প্রত্যেক ক্রিয়ার সমমুখী ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এটা শুধু মাত্র বস্তুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এমনটি নয়। রাজনীতি অর্থনীতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে সমান প্রতিক্রিয়া, তা না হলে গাদ্দারদের এমন মর্মান্তিক পরিণতি হবে কেন? সিরাজ উৎখাতে পলাশী ষড়যন্ত্রে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল ইতিহাসে অমোঘ নিয়মে তাদেরও হয়েছিল মর্মান্তিক পরিণতি। কাউকে পাগল হতে হয়েছিল, কারো হয়েছিল অপঘাতে মৃত্যু। কাউকে নির্মম অপমৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়েছিল। সবার ভাগ্যে জুটেছিল কোন না কোন ভয়াবহ পরিণতি। নীচে কতিপয় মুখচেনা মুখ্য ষড়যন্ত্রকারীদের পরিণতি তুলে ধরা হল।

মিরন:
 মীর জাফরের পুত্র মীরন।মিরন ছিলেন পলাশী ষড়যন্ত্রের অন্যতম নায়ক। তার পুরো নাম মীর মুহাম্মদ সাদেক আলি খান। তিনি মীরজাফরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। আলীবর্দী খানের ভগ্নী শাহ খানমের গর্ভে তাঁর জন্ম হয়েছিল। এই সূত্রে মিরন ছিলেন আলিবর্দীর বোনপো। অত্যন্ত দুর্বৃত্ত, নৃশংস ও হীনচেতা এবং সিরাজ হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক মিরন। আমিনা বেগম, ঘষেটি বেগম হত্যার নায়কও তিনি। লুৎফুন্নিসার লাঞ্ছনার কারণও মিরন। মীর্জা মেহেদীকেও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিলেন তিনি। এই মিরনকে হত্যা করে ইংরেজদের নির্দেশে মেজর ওয়ালস। তবে তার এই মৃত্যু ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্যে ইংরেজরা মিথ্যা গল্প বানিয়েছিল। তারা বলেছে, মিরন বিহারে শাহজাদা আলি গওহারের (পরে বাদশাহ শাহ আলম) সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে পথের মধ্যে বজ্রাঘাতে নিহত হন। ইংরেজরা বলেছে, বজ্রপাতের ফলে তাঁবুতে আগুন ধরে যায় এবং তাতেই তিনি নিহত হন। ফরাসী সেনাপতি লরিস্টনের ঔবধহ-খধি ঘটনাকে অস্বীকার করেছেন। বরং এই মত পোষণ করেন যে, মিরনকে আততায়ীর দ্বারা হত্যা করা হয়েছিল। তার নির্দেশেই মোহাম্মাদী  বেগ নির্মমভাবে নবাব সিরাজুদ্দৌলাকে হত্যা করে।

মুহাম্মদীবেগ:
মুহাম্মদীবেগ ৩ জুলাই বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। নবাব সিরাজ এ সময় তার কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাননি। তিনি কেবল তার কাছে থেকে দু’রাকাত নামাজ পড়ার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু কুখ্যাত মুহাম্মদীবেগ নবাব সিরাজকে সে সুযোগ প্রত্যাখ্যান করার পরপরই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরবর্তী পর্যায়ে মুহাম্মদী বেগের মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটে, এমতবস্থায় সে বিনা কারণে কূপে ঝাঁপিয়ে পড়ে মৃত্যুবরণ করেছিল। এই মুহাম্মদীবেগ সিরাজউদ্দৌলার পিতা ও মাতামহীর অন্নে প্রতিপালিত হয়। আলীবর্দীর বেগম একটি অনাথ কুমারীর সাথে তার বিয়ে দিয়েছিলেন।

মীরজাফর:
পলাশী ষড়যন্ত্রের অন্যতম প্রধান নায়ক ছিলেন মীরজাফর আলি খান। তিনি পবিত্র কোরআন মাথায় রেখে নবাব সিরাজের সামনে তাঁর পাশে থাকবেন বলে অঙ্গীকার করার পরও বেঈমানী করেছিলেন। প্রকৃত পক্ষে ষড়যন্ত্রের মধ্যমণি ছিলেন জগৎশেঠ মীর জাফর নয়। তিনি ছিলেন ষড়যন্ত্রের শিখণ্ডি। নবাবী চলে যাওয়ার পর সে দারুণ অর্থ কষ্টে পরে। মীরজাফরের মৃত্যু হয় অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে। তিনি দুরারোগ্য কুষ্ঠব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। নিখিলনাথ রায় লিখেছেন, ক্রমে অন্তিম সময় উপস্থিত হইলে, হিজরী ১১৭৮ অব্দের ১৪ই শাবান (১৭৬৫ সালের জানুয়ারী মাসে) বৃহস্পতিবার তিনি কুষ্ঠরোগে ৭৪ বৎসর বয়সে পরলোকগত হন। তাঁহার মৃত্যুর পূর্বে নন্দকুমার কিরীটেশ্বরীর চরণামৃত আনাইয়া তাহার মুখে প্রদান করাইয়াছিলেন এবং তাহার তাহাই শেষ জলপান।

এই বিশ্বাসঘাতকের স্বপ্ন ছিল সে বাংলা বিহার ঊড়িষ্যার নবাব হবে। এই ইচ্ছা পূরণ করতে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় মীর জাফর। তার এ ইচ্ছা পূরণ করতেই পলাশীর প্রান্তরে সে পঞ্চাশ হাজার সৈন্য নিয়ে পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। লর্ড ক্লাইভের তিন হাজার সদস্যের সেনাবাহিনীর কাছে মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে পরাজিত হয় নবাব সিরাজুদ্দৌলার এ বিশাল বাহিনী। সুচতুর ক্লাইভ যুদ্ধের পর মীর জাফরকে সিংহাসনে বসায় কিন্তু ক্ষমতা রাখে নিজের হাতে। কিছুদিন পর তার ইংরেজ প্রভুরা এ বিশ্বাসঘাতককে বিশ্বাস করতে পারে না। এ বিশ্বাসঘাতককে তারা ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়। ইংরেজরা ভাবে  যে ব্যক্তি সামান্য ক্ষমতার লোভে তার দেশ ও জাতির সাথে  বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে তারা সাতসাগর তের নদীর ওপার থেকে এসে তাকে বিশ্বাস করবে কোন ভরসায়।

জগৎশেঠ মহাতাপচাঁদ এবং মহারাজা স্বরূপচাঁদ:
কাশিমবাজার কুঠির ষড়যন্ত্রের প্রধানতম নায়ক এই জগৎ শেঠ। এই কুঠিরে বসেই আঁকা হয় পলাশী ষড়যন্ত্রের নীলনকশা। দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ফল তাকে হাড়ে হাড়ে ভোগ করতে হয়। পলাশীর যুদ্ধের পর ষড়যন্ত্রকারীরা মেতে উঠে স্বার্থের দ্বন্দ্বে।  তিনি- আলীবর্দী খাঁর শাসনামলেই জগৎশেঠের সাথে ইংরেজদের সম্পর্ক গভীর ছিল। নবাব সিরাজ ক্ষমতায় এলে এই গভীরতা আরো বৃদ্ধি পেলো এবং তা ষড়যন্ত্রে রূপ নিলো। পলাশী বিপর্যয়ের পর জগৎশেঠ রাজকোষ লুণ্ঠনে অংশ নেন। নিখিলনাথ রায় লিখেছেন- ইহার পর ক্রমে ইংরেজদিগের সহিত মীর কাসেমের বিবাদ গুরুতর হইয়া উঠিলে, নবাব কাটোয়া গিরিয়া, উধুয়ানালা প্রভৃতি স্থানে পরাজিত হইয়া মুঙ্গেরে জগৎশেঠ মহাতাপচাঁদকে অত্যুচ্চ দুর্গশিখর হইতে গঙ্গারগর্ভে নিক্ষেপ কর হয়। মহারাজা স্বরূপচাঁদও ঐ সাথে ইহজীবনের লীলা শেষ করিতে বাধ্য হন।  মীর কাসিমের নির্দেশে বিহারের মুঙ্গের দুর্গ থেকে বস্তা বন্দী করে তাকে নদীতে ফেলে হত্যা করা হয়। নবাবী আমলের এ ধনকুবে আরো সম্পদের লোভে ইংরেজদের পক্ষ নিয়েছিলেন। তার পাপের শাস্তি তাকে পেতে হয় পানিতে ডুবে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুর স্বাদ পাওয়ার মাধ্যমে।

রবার্ট ক্লাইভ:
নবাব সিরাজ বিরোধী ষড়যন্ত্রের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন রবার্ট ক্লাইভ। ক্লাইভ খুব অল্প বয়সে ভারতে আসেন। প্রথমে তিনি একটি ইংরেজ বাণিজ্য কেন্দ্রের গুদামের দায়িত্বে নিযুক্ত হন। বিরক্তিকর এই কাজটিতে ক্লাইভ মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন না। এ সময় জীবনের প্রতি তার বিতৃষ্ণা ও হতাশা জন্মে। তিনি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। তিনি রিভলভার দিয়ে নিজের কপালের দিকে লক্ষ্য করে পর পর তিনটি গুলী ছোঁড়েন। কিন্তু গুলী থাকা অবস্থাতেই গুলী রিভলবার থেকে বের হয়নি। পরে তিনি ভাবলেন ঈশ্বর হয়ত তাকে দিয়ে বড় কোন কাজ সম্পাদন করবেন বলেই এভাবে তিনি তাঁকে বাঁচালেন। পরবর্তীতে দ্রুত তিনি ক্ষমতার শিখরে উঠতে শুরু করেন। পরিশেষে পলাশী ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি কোটি টাকার মালিক হন। ইংরেজেরা তাকে ‘প্লাসি হিরো’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি দেশে ফিরে গিয়ে একদিন বিনা কারণে বাথরুমে ঢুকে নিজের গলায় নিজের হাতেই ক্ষুর চালিয়ে আত্মহত্যা করেন।

বাংলায় ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির দোর্দণ্ড প্রতাপশালী প্রধান ছিলেন লর্ড ক্লাইভ। সে পলাশীর যুদ্ধের আগে একটি স্বাধীন দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশটির স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হরণের প্রধান খলনায়ক। তার লুটেরা বাহিনী যুদ্ধপরবর্তী সময়ে হত্যা, ধর্ষণ, সম্পদ-লুটতরাজসহ বিবিধ অপকর্মে লিপ্ত হয়। নবাব পরিবারের সাথে তার নিষ্ঠুর আচরণে আজো কেঁপে উঠে যে কেনো বিবেকবান মানুষের হৃদয়। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, এই দোর্দণ্ড প্রতাপশালী  লুটেরার শেষ জীবন কাটে অর্থকষ্টে। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ মিডিয়ায় হত্যা, ধর্ষণ, সম্পদ-লুটতরাজ ও কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। ব্রিটিশ হউস-অব-কমন্স’এর সদস্যরাও তার অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠেন।

অব্যাহত প্রতিবাদের মুখে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে হউস-অব-লর্ডস। দীর্ঘদিন এই তদন্ত কমিটির শুনানিতে তাকে অংশ নিতে হয় এবং আনীত অভিযোগ মোকাবেলায় আইনি খরচ মেটাতে লুটকৃত বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকার তার সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। শেষ জীবনে সর্বস্ব খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন ক্লাইভ এবং তার পরিবারের সদস্যরাও তাকে ত্যাগ করে চলে যায়। ক্লাইভ হতদরিদ্র অবস্থায় চরম হতাশায় আত্মহত্যা  করে।

ইয়ার লতিফ খান:
পলাশী ষড়যন্ত্রের শুরুতে ষড়যন্ত্রকারীরা ইয়ার লতিফ খানকে ক্ষমতার মসনদে বসাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এক্ষেত্রে মীর জাফরের নাম উচ্চারিত হয়। ইয়ার লতিফ খান ছিলেন নবাব সিরাজের একজন সেনাপতি। তিনি এই ষড়যন্ত্রের সাথে গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন এবং যুদ্ধের মাঠে তার বাহিনী মীর জাফর, রায় দুর্লভের বাহিনীর ন্যায় ছবির মতো দাঁড়িয়েছিলো। তার সম্পর্কে জানা যায়, তিনি যুদ্ধের পর অকস্মাৎ নিরুদ্দিষ্ট হয়ে যান। অনেকের ধারণা, তাকে কে বা কারা গোপনে হত্যা করেছিল। (মুসলিম আমলে বাংলার শাসনকর্তা, আসকার ইবনে শাইখ, পরিশিষ্ট)

মহারাজা নন্দকুমার :
আরেক বিশ্বাসঘাতক নন্দকুমারকেও উমিচাঁদের পরিণতি বরণ করতে হয়। মহারাজা নন্দকুমার এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। মুর্শিদাবাদ কাহিনী গ্রন্থে নিখিলনাথ রায় লিখেছেন- নন্দকুমার অনেক বিবেচনার পর সিরাজের ভবিষ্যৎ বাস্তবিকই ঘোরতর অন্ধকার দেখিয়া, ইংরেজদিগের সহিত বন্ধুত্ব স্থাপনের ইচ্ছা করিলেন। ইংরেজ ঐতিহাসিকগণ বলিয়া থাকেন যে, ইংরেজরা সেই সময়ে উমিচাঁদকে দিয়া নন্দকুমারকে ১২ হাজার টাকা প্রদান করিয়াছিলেন। পলাশী ষড়যন্ত্রের পর নন্দকুমারকে মীরজাফর স্বীয় দেওয়ান নিযুক্ত করে সব সময় তাকে নিজের কাছে রাখতেন। মীরজাফর তার শেষ জীবনে যাবতীয় কাজকর্ম নন্দকুমারের পরামর্শানুসারে করতেন। তার অন্তিম শয্যায় নন্দকুমারই তার মুখে কিরীটেশ্বরীর চরণামৃত তুলে দিয়েছিলেন। তহবিল তছরূপ ও অন্যান্য অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালত মহারাজা নন্দকুমারের প্রাণ দণ্ডের আদেশ প্রদান করে। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

রায় দুর্লভ:
রায় দুর্লভ ছিলেন নবাবের একজন সেনাপতি। তিনিও মীরজাফরের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। যুদ্ধকালে তিনি এবং তার বাহিনী মীরজাফররের সাথে যুক্ত হন এবং সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে।

উমিচাঁদ :
কাশিমবাজার ষড়যন্ত্রের আরেক নায়ক উমিচাঁদ। দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে উমিচাঁদ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে যোগ দিয়েছিল। সেই ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানিই তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনে। কোম্পানি উমিচাঁদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত  করে।
ক্লাইভ কর্তৃক উমিচাঁদ প্রতারিত হয়েছিলেন। ইয়ার লতিফ খান ছিলেন উমিচাঁদের মনোনীত প্রার্থী। কিন্তু যখন অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীরা এ ক্ষেত্রে মীরজাফরের নাম ঘোষণা করলেন, তখন উমিচাঁদ বেঁকে বসলেন এবং বললেন, আপনাদের প্রস্তাব মানতে পারি এক শর্তে, তা হলো যুদ্ধের পর নবাবের রাজকোষের ৫ ভাগ সম্পদ আমাকে দিতে হবে। ক্লাইভ তার প্রস্তাব মানলেন বটে কিন্তু যুদ্ধের পরে তাকে তা দেয়া হয়নি। যদিও এ ব্যাপারে একটি মিথ্যা চুক্তি হয়েছিল। ওয়াটস রমণী সেজে মীর জাফরের বাড়িতে গিয়ে লাল ও সাদা কাগজে দুটি চুক্তিতে তার সই করান। লাল কাগজের চুক্তিতে বলা হয়েছে, নবাবের কোষাগারের পাঁচ শতাংশ উমিচাঁদের প্রাপ্য হবে। এটি ছিল নিছক প্রবঞ্চনামাত্র। যাতে করে উমিচাঁদের মুখ বন্ধ থাকে। যুদ্ধের পর ক্লাইভ তাকে সরাসরি বলেন, আপনাকে কিছু দিতে পারবো না। এ কথা শুনে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এবং স্মৃতিভ্রংশ উন্মাদ অবস্থায় রাস্তায় রাস্তায় নিঃস্ব হয়ে  ঘুরতে ঘুরতে তার মৃত্যু ঘটে।

রাজা রাজবল্লভ:
ষড়যন্ত্রকারী রাজা রাজবল্লভের মৃত্যুও মর্মান্তিকভাবে ঘটেছিল। জানা যায়, রাজা রাজবল্লভের কীর্তিনাশ করেই পদ্মা হয় কীর্তিনাশা।

দানিশ শাহ বা দানা শাহ:
দানিশ শাহ সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে। অনেকে বলেছেন, এই দানেশ শাহ নবাব সিরাজকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় লিখেছেন, দানিশাহ ফকির মোটেই জীবিত ছিলেন না। আসকার ইবনে শাইখ তাঁর মুসলিম আমলে বাংলার শাসন কর্তা গ্রন্থে লিখেছেন’ বিষাক্ত সর্প দংশনে দানিশ শাহর মৃত্যু ঘটেছিল।

ওয়াটস:
ওয়াটস এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি রমণী সেজে মীর জাফরের বাড়িতে গিয়ে চুক্তিতে মীরজাফরের স্বাক্ষর এনেছিল। যুদ্ধের পর কোম্পানীর কাজ থেকে বরখাস্ত হয়ে মনের দুঃখে ও অনুশোচনায় বিলাতেই অকস্মাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হন।

স্ক্রাফটন:
ষড়যন্ত্রের পিছনে স্ক্রাফটনও বিশেষভাবে কাজ করেছিলেন। জানা যায়, বাংলার বিপুল সম্পদ লুণ্ঠন করে বিলেতে যাওয়ার সময় জাহাজডুবিতে তার অকালমৃত্যু ঘটে।

ওয়াটসন:
যড়যন্ত্রকারী ওয়াটসন ক্রমাগত ভগ্নস্বাস্থ্য হলে কোন ওষুধেই ফল না পেয়ে কলকাতাতেই করুণ মৃত্যুর মুখোমুখি হন।

মীর কাশিম:
মীরজাফরের ভাই রাজমহলের ফৌজদার মীর দাউদের নির্দেশে মীর কাশিম নবাব সিরাজের খবর পেয়ে ভগবানগোলার ঘাট থেকে তাকে বেঁধে এনেছিলেন মুর্শিদাবাদে। পরে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তিনি নবাব হন এবং এ সময় ইংরেজদের সাথে তার বিরোধ বাঁধে ও কয়েকটি যুদ্ধে পরাজিত হন। পরে ইংরেজদের ভয়ে হীনবেশে পালিয়ে যান এবং রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান।। অর্থ কষ্টে পথে পথে ঘুরতে থাকেন। তার নাবালক দুই সন্তান দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে তার জন্য খাবার সংগ্রহ করতো। তারা এক সন্ধ্যায় ভিক্ষা করে ফিরার সময় ইংরেজ সৈনিকদের গুলিতে নিহত হয়। নাবালক কিশোর কিশোরীকে হত্যার দায় এড়াতে ইংরেজরা প্রচার করে অন্ধকারে বাঘ ভেবে ভুল করে তাদের গুলি করেছে সিপাহিরা। মীর কাসিম অর্থ কষ্টে অনাহারে  দিল্লি জামে মসজিদের নিকট মৃত্যুবরণ করেন।  মৃতের শিয়রে পড়ে থাকা একটা পোটলায় পাওয়া যায় নবাব হিসেবে ব্যবহৃত মীর কাশেমের চাপকান। এ থেকেই জানা যায় মৃত ব্যক্তি বাংলার ভূতপূর্ব নবাব মীর কাশিম আলী খান।

পলাশীর  বিশ্বাসঘাতক মীর কাসিম। ব্রিটিশদের তাঁবেদারী করে মীর জাফরের পর নবাব হতে পারলেও এক পর্যায়ে তাকেও আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে ইস্ট-ইন্ডিয়া  কোম্পানি। মীর কাসিম আলী খান নবাব হওয়ার পর ইংরেজদের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারে। তার সাথে তাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।  মীর কাসিমের সাথে ইস্ট-ইন্ডিয়া  কোম্পানির যুদ্ধ হয় যা ইতিহাসে “বক্সারের যুদ্ধ” নামে পরিচিত।

এই ভাবেই বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা পলাশী যুদ্ধের কিছুকালের মধ্যেই বিভিন্ন পন্থায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুমুখে পতিত হন। পলাশী ষড়যন্ত্রকারীদের ওপরে আল্লাহর গজব নাজিল হয়েছিল বলেই অনেকের ধারণা। আসলে এইসব ঘটনা থেকেই আমাদের অনেক কিছু শেখার বিষয় রয়েছে। (লেখাটি ডঃ মুহাম্মদ ফজলুল হক রচিত ‘বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ’ প্রকাশিতব্য গ্রন্থ থেকে)

ঘসেটি বেগম :
ঘষেটি বেগম ছিলেন নবাব সিরাজুদ্দৌলার আপন খালা। তার স্বপ্ন ছিল পিতা আলীবর্দী খাঁর ইন্তিকালের পর তিনি হবেন বাংলার প্রথম মহিলা নবাব। এই ইচ্ছা পূরণের জন্য তিনিও হাত মেলান ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে। প্রাসাদের সকল গোপনীয় তথ্য ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পাচার করতেন এই উচ্চভিলাষী বিশ্বাসঘাতক নবাব নন্দিনী। পলাশী’র যুদ্ধের পর মীরজাফর পুত্র মীরন বুঝতে পারে তার পিতার নবাব হবার পথে সবচেয়ে বড় বাধা ঘষেটি বেগম। তাই মীরন চক্রান্ত করে ধলেশ্বরী নদীতে নৌকা ডুবিয়ে ঘসেটি বেগম’কে হত্যা করে।


এ সময় পলাশীর ইতিহাস নিয়ে জন জেপানিয়াহ হলওয়েল নামের এক ধূর্ত ইংরেজ 'কোলকাতার অন্ধকূপ হত্যা' নামের একটি আষাঢ়ে গল্প বানিয়ে নবাবকে গণহত্যাকারী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে। এই গাঁজাখুরি কাহিনীতে বলা হয় যে, ১৪৬ জন ইংরেজকে ১৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থের একটি গর্তে রাখায় তারা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছে। হলওয়েল নিজে ওই ঘটনায় বেঁচে যায় বলে দাবি করে।

গবেষক ও ঐতিহাসিকরা এই কাহিনীকে একটি পুরোপুরি মিথ্যা কাহিনী হিসেবে অস্বীকার করে আসছেন। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার তার লেখা "An Advanced History of India" শীর্ষক বইয়ে অন্ধকূপ হত্যা বা 'ব্ল্যাক হোল স্টোরি'-কে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন।

ব্রিটিশ পণ্ডিত ও গবেষক জে.এইচ লিটলও "The 'Black Hole'—The Question of Holwell's Veracity" বা 'অন্ধকূপ হত্যা- হলওয়েলের বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্ন' শীর্ষক প্রবন্ধে হলওয়েলের বর্ণিত এই কাহিনীকে 'বড় ধরনের ধোঁকা' বলে মন্তব্য করেছেন। ভারতবর্ষে সামরিক হস্তক্ষেপের অজুহাত তৈরি করতে ও এই লক্ষ্যে ব্রিটেনের লোকদের ক্ষেপিয়ে তোলার উদ্দেশ্যেই এই কাহিনী রচনা করা হয়েছিল বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
বাংলার ইতিহাস একটু অন্যরকম। মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা সম্বন্ধে সচেতন হলেও ওটাকে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভাবতে অনেকে অভ্যস্ত। অতি অল্পসংখ্যক লোকই ভাবে যে, বিশ্বাসঘাতকতার বহু রূপ থাকতে পারে। একটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-তা সে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা তমদ্দুনিক স্বাধীনতা হোক না কেন, যারা বিকিয়ে দিতে চায় তারাই বিশ্বাসঘাতক। দেশের প্রতি, নিজের সমাজের প্রতি তাদের আনুগত্য নেই।

এ ধরনের বিশ্বাসঘাতকতার কারণ নানা প্রকারের। কেউ রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের আশায় বিদেশী শক্তিকে দেশে কায়েম করে তার ছত্রচ্ছায়ায় কৃত্রিম ক্ষমতা ভোগকে সত্যিকার স্বাধীনতা মনে করে। কেউ ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশী করে মুনাফা অর্জনের লোভে দেশ ও জাতিকে পরাধীন করতে দ্বিধা করে না। আবার কেউ ভূয়া আদর্শবাদের দোহাই দিয়ে নিজেদের সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা বিসর্জন দিতে এগিয়ে আসে। এসবই বিশ্বাসঘাতকতা।

বিশ্বাসঘাতকতা বিভিন্ন রকমের ছদ্মবেশ ধারণ করে হাজির হয়- বিশেষতঃ আজকালকার যুগে। কারণ, মীরজাফর বা কুইজলিং- এর বিশ্বাসঘাতকতার মত স্থূল বিশ্বাসঘাতকতা আজকালও বিরল না হলেও তার আবেদন সংকুচিত হয়ে গেছে। বর্তমান যুগের বিশ্বাসঘাতকদের তাই সূক্ষ্ণ ছদ্মবেশ ধারণ করে লোক সমক্ষে উপস্থিত হতে দেখা যায়। আদর্শবাদের ছদ্মবেশই এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্নক। কারণ আদর্শবাদের পিছনে বিশ্বাসঘাতকতা লুকিয়ে থাকতে পারে। এ সন্দেহ সহজে কোনো মনে উদিত হয় না। যাঁরা এ ধরনের বিশ্বাসঘাতকতায় লিপ্ত তাঁরা কস্মিনকালেও দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে কোন শব্দ উচ্চারণ করেন না। সমাজে তাঁরা দেশপ্রেমিক হিসাবে পরিচিত। কিন্তু তাঁরা অনবরত এমন সব কর্মে সমাজকে উৎসাহিত করছেন, যার অনিবার্য পরিণতি হবে দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা লুপ্তি।

সিরাজউদ্দৌলাকে স্মরণ তখনই অর্থবহ হবে যখন আমরা বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে যে সমস্ত সূক্ষ্ণ ষড়যন্ত্র বর্তমানে দানা বেঁধে উঠছে, সে সম্বন্ধে আমরা সতর্ক হতে পারি। অনেক তরুণ যারা ভালো করে সমাজের ইতিহাস জানে না, তারা অজ্ঞাতসারে এই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। তরুণরা স্বভাবতই আদর্শবাদী। তাদের আদর্শবাদিতার সুযোগ নিয়েই তাদের মনে অনেক বিশ্বাস সঞ্চার করা হচ্ছে, যার একমাত্র অর্থ হচ্ছে যে, বাংলাদেশের আলাদা কোন শিল্পকলা নেই। যাঁরা আবহমানকাল থেকে পূর্ব বাংলার জনসমাজকে ঘৃণা এবং অবজ্ঞা করে এসেছেন, সে সমস্ত ব্যক্তিকে বাংলাদেশের জাতীর বীর হিসাবে আমাদের সামনে দাঁড় করানো হচ্ছে। আশ্চর্য হয়ে শুনছি যে, এঁরাই না-কি পূর্ব বাংলার সত্যিকারের মঙ্গলাকাংখী।

এ রকমের প্রচারণা সম্ভব হচ্ছে এই কারণে যে, সমাজের তরুণদের মধ্যে ইতিহাস-চেতনা নেই, তারা অতীত সম্বন্ধে বিভ্রান্ত। এই বিভ্রান্তি দূর না হওয়া পর্যন্ত সিরাজউদ্দৌলা দিবস উদযাপন সত্যিকার অর্থে সার্থক হবে না।

তবে অনেক দিন পর সিরাজউদ্দৌলাকে স্মরণ করার কথা মনে হয়েছে, এটা অবশ্যই একটা সুলক্ষণ। চল্লিশের দশকে যেমন তিনি লুপ্ত স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে অভিনন্দিত হয়েছিলেন, তেমনই আজও তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রতীকী তাৎপর্য নিঃশেষিত হয়নি। মীরজাফরের দলও নির্মূল হয়নি। দেশের, সমাজের স্বকীয়তা রক্ষা করতে হলে ১৭৫৭ সালের সেই দুর্যোগের কারণ এবং তার ভয়াবহ পরিণতির কথা সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে।

সহায়ক গ্রন্থ
লেখাটি ডঃ মুহাম্মদ ফজলুল হক রচিত ‘বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ’ প্রকাশিতব্য গ্রন্থ থেকে।
সুপ্রকাশ রায়_  ভারতের কৃষক বিদ্রোহ ও গনতান্ত্রিক সংগ্রাম, পৃষ্ঠা ১৮৬-১৮৯।

শিকদার আবদুল হাই, ভ্রমণ সমগ্র (পলাশী ভ্রমণ পর্ব), ঢাকা, অনন্যা প্রকাশনী, ২০০৬
গোলাম হুসেন সালীম, বাংলার ইতিহাস (রিয়াজ-উস-সালাতিন), ঢাকা, দিব্য প্রকাশ, ২০০৫
গোলাম হোসাইন, সিয়ারউল মুতাফাখিরিন, ঢাকা, বাংলা একাডেমী
এমাউদ্দীন আহমদ, নির্বাচিত প্রবন্ধ, ঢাকা, গতিধারা প্রকাশনী, ২০০৯
মৈত্রেয়, অক্ষয় কুমার, সিরাজউদ্দৌলা, কলিকাতা, ১৮৯৮
ইত্রাত-ই-আরবার-ই-বসর
গোলাম হুসেন সালীম, বাংলার ইতিহাস (রিয়াজ-উস-সালাতিন, নতুন সংস্করণ), ঢাকা, অবসর প্রকাশনা সংস্থা, ২০০৮।
উইকিপিডিয়া।
Blockman, Geography and history of Bengal, Calcatha
Journal of the Asiatic Society, Part-1. No. 11, 1867

দুই পলাশী দুই মীর জাফর ।
 বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস ।
আমাদের জাতিসত্ত্বার বিকাশধারা ।
যদুনাথ সরকার _ বাংলার ইতিহাস : ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামো, বাংলা একাডেমী, ১৯৮৯।

পলাশী ট্রাজেডীর ২৪০তম বার্ষিকী স্মারক।

No comments:

Post a Comment