Friday, 17 June 2016

ভারতের মন্দিরে মন্দিরে যৌনতা বা সেক্স দর্শন । ব্রাহ্মণ্য দর্শন হলো যৌনতার দর্শন।


সূফি বরষণ
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সমকামী সম্প্রদায়ের ওপর বড় ধরণের আঘাত আসে। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট সমকামিতাকে অপরাধ বলে রায় দেয়। এ বছরের আগস্টে ভারত সরকার ৮ শতাধিক পর্নো ওয়েবসাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে কয়েকদিন পরই ওই নিষেধাজ্ঞা শর্তস্বাপেক্ষে প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু ভারত এমনটি ছিল না আগে। ১৩ শতাব্দীর আগেও ভারত ছিল অবাধ যৌনতার উর্বরভূমি।

১৩ শতাব্দীর আগেও আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভূক্ত ছিল যৌনতা। পড়ানো হতো কামসূত্র, যেটি বিশ্বের সর্বপ্রথম যৌনতা বিষয়ক গ্রন্থ। প্রাচীন ভারতে অর্থাৎ ৪০০-২০০ খ্রিস্টপূর্বে গ্রন্থটি লেখা হয়। দেশটির বহু জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অবাধ যৌনতার নিদর্শন। এমনই একটি মন্দির পূর্ব ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের কোনার্কের সূর্য মন্দির। ১৩ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত মন্দিরটির দেওয়ালে ও সর্বত্র খাঁজ কেটে দেখানো হয়েছে বিভিন্ন যৌন প্রবৃত্তি। মহারাষ্ট্রের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মন্দির অজন্তা (দ্বিতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ও এলোরার (পঞ্চম ও দশম শতাব্দীর) বিভিন্ন চিত্রকলা ও মূর্তিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ব্যাপক নগ্নতা।

তবে যৌন শিল্পের সবচেয়ে বেশি উদাহরণ পাওয়া যায় ভারতের মধ্যাঞ্চলের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ছোট্ট শহর খাজুরাহোতে। এখানে বহু হিন্দু মন্দির অবস্থিত, যেগুলোকে ১৯৮৬ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করে ইউনেস্কো। চান্দেলা বংশ এ মন্দিরগুলো নির্মান করে ৯৫০ থেকে ১০৫০ খ্রিস্টাব্দে। তবে মূল ৮৫টি মন্দিরের মধ্যে মাত্র ২২টি এখনও অবশিষ্ট রয়েছে। বিবিসি’র একটি ভ্রমণ-প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে মন্দিরগুলোর বিস্তারিত দিক। http://www.bbc.co.uk/news/magazine-26873149

৬ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত মন্দির এলাকা। মন্দিরে প্রতিদিন স্থানীয় নারীরা ফুল দিয়ে প্রার্থনা করে। দর্শণার্থীদের প্রায়ই দেখা যায় করিডোর ধরে ঘুরে বেড়াতে। জটিল ও খোলামেলা মূর্তিগুলোর দিকে তাকিয়ে অনেকে জুবুথুবু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। মন্দিরগুলোর প্রতিটি ইঞ্চি জুড়ে খোদাই করা রয়েছে বিভিন্নভাবে যৌনমিলনরত অজস্র মূর্তি। মূর্তির মধ্যে রয়েছে দেব-দেবী, যোদ্ধা, গায়ক, প্রাণী, পাখি, ইত্যাদি। কিছু কিছু মূর্তি প্রগাঢ় যৌনতাবিশিষ্ট। পশু কিংবা দুইয়ের অধিক সঙ্গি বিশিষ্ট যৌনতাও অঙ্কন করা হয়েছে সেখানে।

এসব মন্দির স্থাপনের কারণ সপর্কে মতভেদ রয়েছে। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য থিওরি হলো, চান্দেলা বংশের রাজারা তান্ত্রিক নীতির অনুসারী ছিলেন। তাদের বিশ্বাসের মধ্যে নারী ও পুরুষ শক্তির মধ্যকার ভারসাম্যের কথা বলা আছে। তাদের বিশ্বাসের প্রতিফলনই তারা ঘটিয়েছে নিজেদের নির্মিত মন্দিরগুলোতে। অনেকের ধারণা, যৌনকর্মের চিত্রাঙ্কনকে শুভ লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কেননা, এর মাধ্যমে নতুন সূচনা ও নতুন জীবনের আরম্ভকে বোঝানো হতো। অনেকের মতে, এ মন্দিরগুলো ছিল প্রার্থণা ও শিক্ষার স্থল। এর বাইরেও, হিন্দুমতে, ঐতিহ্যগতভাবেই যৌনতা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ধারণা করা হয়, এ মন্দিরগুলোতে যৌনতাকে আড়াল করার কোন চেষ্টা করা হয়নি। এর প্রতিষ্ঠাতারা চেয়েছিলেন সবাই এসব দেখুক।

কিন্তু এ মন্দিরগুলো খাজুরাহোতেই কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা কারোই জানা নেই। আদৌ এ অঞ্চলে কোন রাজ্য ছিল কিনা, তার পরিষ্কার বর্ণনাও কোথাও নেই। কিন্তু হাজার বছর ধরে এ মন্দিরগুলো টিকে রয়েছে কীভাবে? ধারণা করা হচ্ছে, এ এলাকায় খুবই গভীর বনাঞ্চলের কারণে মন্দিরগুলো বহুবছর ছিল লোকচক্ষুর আড়ালে। এ কারণেই এসব টিকে ছিল এতদিন। ১৮৩৮ সালে বৃটিশ ক্যাপ্টেন টিএস বার্ট সর্বপ্রথম এসব আবিষ্কার করেন। এমনকি বার্ট নিজেও গভীর জঙ্গলের ভেতর অভিযান চালানো নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেননি, এর ভেতর উল্লেখযোগ্য কিছু পাওয়া যাবে। তবে তার ভারতীয় সঙ্গীরাই তাকে বুঝিয়ে রাজি করায়।

আশ্চর্য্যজনক হলেও, ভারতের ‘নৈতিকতা’ বাহিনীর রোষাণলের মুখে কখনও পড়েনি মন্দিরগুলো। যদিও সালমান রুশদির বইয়ে ও এমএফ হুসেনের চিত্রকলায় হিন্দু দেবীকে যৌনরূপে চিত্রায়িত করার জন্য তাদের দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। সবচেয়ে আগ্রহোদ্দীপক বিষয় হলো, মন্দিরে ভারতীয় অনেক পরিবার দর্শণার্থী হিসেবে আসে। গাইড তাদেরকে এ মন্দিরের ইতিহাস জানায় ও মূর্তিগুলোর অর্থ ব্যাখ্যা করে। কিন্তু সবাই নীরবে সেসব হজম করে। কারও চোখেমুখে ভ্রকুটি দেখা যায় না। কেউ বিব্রত হয়ে একে-অপরের দিকে তাকায় না। কারও মুখে নেই মুচকি হাসি। সবাই গম্ভীর হয়ে সব শুনে যায়। কেন? কারণ, ধর্মীয় দিক থেকে এসব যৌনতায় হয়তো কারও আপত্তি নেই।

হিন্দু ধর্ম এবং এই ধর্মের অনুসারীরা ধর্মের বৈশিষ্ট্য অনুসারেই চরম নোংরা, অশ্লীল, লম্পট, ধর্ষনপ্রিয় হয়ে থাকে। দুই উরুর সন্ধিস্থলে এদের সকল আরাধনা বা পুজা নিহিত। হিন্দুদের তথাকথিত দেব দেবীরাই এ অশ্লীলতা বা লম্পট্যের পথ প্রদর্শক।

মূল আলোচনার শুরুতেই হিন্দুদের দেবতাদের সম্পর্কে একটু ধারনা থাকা দরকার। এবার আসুন হিন্দুদের প্রধান দেবতা শিব সম্পর্কে কিঞ্চিৎ তথ্য উপস্থাপন করি।

“চিরাচরিত নিয়ম অনুযাই একদিন শিব তার পত্নী পার্বতীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। পার্বতী হলো দূর্গার অপর নাম। যখন শিবের প্রমত্ত যৌন উত্তেজনার ফলে পার্বতী মরনাপন্ন হয়ে পড়ে, তখন পার্বতী প্রান রক্ষার জন্য কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে প্রার্থণা করতে থাকে। এ অবস্থায় কৃষ্ণ তার সুদর্শন চক্রের দ্বারা উভয় লিঙ্গ কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে পার্বতীর প্রান রক্ষা করে। আর এই স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য প্রবর্তন হয় এই যুক্তলিঙ্গ পূজা। (ভগবত, নবম স্কন্ধঃ৫৯৮)

এর পর পার্বতী নিজ যৌন চাহিদা মিটাতো তার পেছনের রাস্তা অর্থাত্ …. দিয়ে। আর মাহাদেব যেহেতু লিঙ্গ কাটার পর পার্বতীর যৌন চাহিদা পুরা করতে পারত না। তাই পার্বতী অন্যান্য ভগবানদের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হত। একদিনের ঘটনা। পার্বতী ভগবান বিষ্ণুর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছে। ঠিক এমন সময় সেখানে গনেশ এসে হাজির। গনেশ ছিল পার্বতীর আপন ছেলে। তখন পার্বতী গনেশের থেকে নিজেকে লুকানোর জন্য নিজ চেহারা তুলশীর চেহারায়
পরিবর্তন করে ফেলে। তুলশীর সাথে গনেশের পূর্ব থেকে যৌন সম্পর্ক ছিল। তখন গনেশ নিজ মা পার্বতীকে তুলশী ভেবে তার
সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। পরবর্তীতে এই ঘটনা শিব জানতে পেরে অভিশাপ দিয়ে নিজ ছেলে গনেশের মাথা হাতির মাথায় পরিবর্তন করে দেয়। (স্কন্ধ পুরাণ, নাগর খন্ডম ৪৪৪১, পৃঃ১-১৬)

এই হলো শিব এবং শিবলিঙ্গের ইতিহাস। আর রামের কৃষ্ণের কথা সবাই কমবেশি জানে। কৃষ্ণ তার আপন মামী রাধাকে গভীর রাতে একা পেয়ে ধর্ষন করে, অতপর রাধাও ধর্ষন উপভোগ করে। পরিশেষে উভয়ে বিয়ে করে। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী কৃষ্ণ ১৬১০০ গোপীনি বা রক্ষীতা পালন করতো। অর্থাৎ সারাটি জীবন হিন্দুদের এই প্রিয় দেবতা যৌনলীলা বা কৃষ্ণলীলা করে কাটিয়ে দিয়েছে।

এরকম প্রায় প্রতিটি তথাকথিত দেব দেবীর জীবনে রয়েছে অজস্র নোংরা  অশ্লীলতায় পরিপূর্ণ। যেই ছাপ তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মন্দির গুলোতেও আজও বিদ্যমান। https://en.m.wikipedia.org/wiki/History_of_sex_in_India

এই সব মন্দিরের ভাস্কর্য তাক লেগে যাওয়ার মতো। এক দিকে যেমন আধ্যাত্মিক, অন্য দিকে তেমন যৌনতার অপরূপ শিল্পকলা। এই সব বহু প্রাচীন মন্দিরগুলি পর্যটকদের আকর্ষণ করেছে বহু বছর ধরে। দেখে নিন ভারতের সেই সব অনবদ্য সেক্স টেম্পলগুলো:

http://www.anandabazar.com/photogallery/these-are-the-sex-temples-of-india-dgtl-1.361185

খাজুরাহো মন্দির
মধ্যপ্রদেশের এক ছোট শহরে এই মন্দিরটি রয়েছে। অনেকগুলো ছোট বড় মন্দির নিয়ে খাজুরাহো গঠিত।
এটা বিশ্বাস, প্রাচীন কালে শিব এবং অন্য দেব দেবীরা এই স্থানে খেলা করতে এসেছিলেন।
তাঁদের সম্মানার্থেই এই মন্দির।

কোনারকের সূর্য মন্দির
সেক্স আর্ট খোদাইকার্যে ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় কোনারকের সূর্য মন্দির। পাথর খোদাই করে এই ভাস্কর্যগুলি তৈরি করা হয়েছিল।
তবে মন্দিরটি আজ ধ্বংস প্রায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগই এর কারণ।

জগন্নাথ মন্দির
রাজা মহারানা জগৎ সিংহের আমলে মন্দিরটি গঠিত হয়।
উদয়পুরে অবস্থিত তিন তলা এই মন্দিরের দেওয়াল জুড়ে রয়েছে অসাধারণ সব শিল্প।


মার্কণ্ডেশ্বর
মহারাষ্ট্রে রয়েছে এই মন্দিরটি। ভারতের অন্যান্য মন্দিরের থেকে এই মন্দিরটির ভাস্কর্য অনেকটাই আলাদা।
এটা নাকি রহস্যজনক ভাবে এক রাতের মধ্যে তৈরি করা হয়েছিল।


পদাওয়ালি
মধ্যপ্রদেশের চম্বল নদীর তীরে অবস্থিত ভাস্কর্যে পরিপূর্ণ মন্দিরটি এখন প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত।
তা সত্ত্বেও মন্দিরের দেওয়ালে অবশিষ্ট ভাস্কর্য এখনও সবাইকে অবাক করে।

গুজরাটের সূর্য মন্দির
গুজরাটের মধেরাতে অবস্থিত। এই মন্দিরে এখন আর পুজো হয় না। তা সত্ত্বেও এটি পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।
মন্দিরের দেওয়ালে বিভিন্ন সেক্স আর্ট-র সঙ্গে সমুদ্রমন্থনের কাহিনি ফুটে উঠেছে।


ওসিয়ান মন্দির
শেষ তীর্থঙ্কর মহাবীরের জীবনী প্রকাশ পেয়েছে এই মন্দিরে। সঙ্গে রয়েছে তাক লাগানো ভাস্কর্য।

বীরুপক্ষ
কর্নাটকের হাম্পিতে অবস্থিত এই মন্দিরটিকে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে তুঙ্গভদ্রা নদী।
যার একটি অংশ মন্দিরের রান্নাঘরের ভিতর দিয়ে আজও বয়ে চলেছে।

ত্রিপুরাণটক মন্দির
ভাস্কর্যে পরিপূর্ণ এই মন্দিরটিও রয়েছে কর্নাটকে।

ইলোরার কৈলাস মন্দির
ইলোরা গুহার মধ্যে একটি ছোট্ট মন্দির। নাম কৈলাস। কৈলাস পর্বতের আকারেই মন্দিরটি গঠিত।

রনকপুর
উদয়পুরের খুব কাছে রাজস্থানের এই মন্দিরটি রয়েছে। সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি এই মন্দিরটি শেষ হতে সময় লেগেছিল ৬৫ বছর।
মন্দিরের প্রতিটা ভাস্কর্য একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

লিঙ্গরাজ মন্দির
ভগবান শিবের আরাধনায় গঠিত মন্দির। কারুকার্যে মন্দিরটি এতটাই জনপ্রিয় যে রোজ গড়ে ৬০০০ পর্যটক আসেন মন্দির দর্শনে।
মন্দিরের দেওয়ালে দেওয়ালে ফুটে উঠেছে নানা সেক্স স্টোরি।

1 comment: