Sunday, 30 August 2015

পর্ব পাঁচ ক_স্বাধীনতার পর বাঙালীর প্রথম বুদ্ধিভিত্তিক দৈন্যদশা শুরু হয় জাতীয় সংগীত ও রবীন্দ্র পূজার মধ্য দিয়ে ॥বিতর্কিত রবীন্দ্রনাথের অধিকাংশ গান ভাঙাগান বা নকল_চুরি করা ॥

পর্ব  পাঁচ  ক_ এবং শেষ পর্ব
স্বাধীনতার পর বাঙালীর প্রথম বুদ্ধিভিত্তিক দৈন্যদশা শুরু হয় জাতীয় সংগীত ও রবীন্দ্র পূজার মধ্য দিয়ে ॥
বিতর্কিত রবীন্দ্রনাথের অধিকাংশ    গান ভাঙাগান বা নকল_চুরি
করা  ॥

সূফি বরষণ
রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বাঙালিত্ব অসম্পূর্ণ ইত্যাদি উচ্ছ্বাসভরা কথাবার্তা রবীন্দ্র ভক্তদের কাছে  খুবই স্বাভাবিক ঘটনা?! । তবে, তাঁর গান নিয়ে যা হয় সেটাকে ঠিক মাতামাতি শব্দটা দিয়ে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। কারণ সেটাকে বলতে হয় রবীন্দ্র অন্ধ ভক্তদের রীতিমতো উন্মাদনা॥ রবীন্দ্রনাথের গানকে একরকম প্রার্থনা সংগীত বানিয়ে ফেলেছেন তাঁর পূজারীর দল। যে ভাবগম্ভীর পবিত্রতা নিয়ে রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করা হয় বা শোনা হয়, তা দেখলেই যে কেউই একে পূজোর আচার আচরণ ভেবে ভুল করে বসে থাকতে পারেন। ভেবে বসে থাকতে পারেন যে, একদল পূজারী গভীর ভক্তিভরে তাঁদের কোনো প্রাণপ্রিয় দেবতার উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য পরিবেশন করে চলেছেন। এর পূজারীর দল রবীন্দ্র সংগীত ছাড়া পৃথিবীতে যে অন্য কোনো সংগীত থাকতে পারে, আর সেগুলো যে এর থেকেও ভাল হতে পারে সেটা কোনোভাবে মেনে নিতে রাজি নন। অনেকেই খুব ‘গৌরবের সাথে’  নির্দ্বিধায় বলে দেন যে, রবীন্দ্র সংগীত ছাড়া অন্য কোনো সংগীতই শোনেন না। বাংলা গান শোনার ক্ষেত্রে কিছু বাঙালি এমন  একপেশে আচরণ করে যা রীতিমতো সংকীর্ণমনতার পর্যায়ে চলে গেছে ॥
ভক্তি এবং ভাবে গদগদ ভক্তদের এক্ষেত্রে অবশ্য এককভাবে দোষ দেওয়াটাও অনুচিত। রবীন্দ্রনাথই একমাত্র বিরল ব্যক্তিত্ব, যাঁর তিনটি  গান তিনটি স্বাধীন  সার্বভৌম রাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত।
তবে এই তিন দেশের মধ্যে শ্রীলংকার জাতীয় সংগীতটি রচনা করেন শান্তি নিকেতনের ছাত্র আনন্দ সামারাকুন॥ সংগীতটির রচয়িতা ও সুরকার সে দেশের প্রখ্যাত সংগীতকার আনন্দ সামারাকুন ।
রবীন্দ্রনাথের নিজেরও তাঁর গান সম্পর্কে অত্যন্ত উচ্চ ধারণা ছিল। তাঁর অন্য কোনো সাহিত্যকর্ম দীর্ঘস্থায়ী না হলেও গান যে হবে সে বিষয়ে তিনি নিঃসন্দেহ ছিলেন। তাই তো তিনি বলেছিলেন, “জীবনের আশি বছর অবধি চাষ করেছি অনেক। সব ফসলই যে মরাইতে জমা হবে তা বলতে পারি না। কিছু ইঁদুরে খাবে, তবু বাকি থাকবে কিছু। জোর করে বলা যায় না, যুগ বদলায়, তার সঙ্গে তো সবকিছু বদলায়। তবে সবচেয়ে স্থায়ী আমার গান, এটা জোর করে বলতে পারি। বিশেষ করে বাঙালীরা, শোকে দুঃখে সুখে আনন্দে আমার গান না গেয়ে তাদের উপায় নেই। যুগে যুগে এ গান তাদের গাইতেই হবে।” [লেখক সমাবেশ, ৫ম বর্ষ সংখ্যা–১৩, প্রথম পক্ষ মে ১৯৮৫, পরেশ ধর – উদ্ধৃত]॥
রবীন্দ্রনাথের কথা আপাত সত্য। তবে, আজীবনের জন্য সত্য নয়। কোনো জিনিসই চিরস্থায়ী হয় না, তা সে সেই সময়ের জন্য যতই উৎকৃষ্ট হোক না কেন। এর জ্বলন্ত প্রমাণ মধুসূদন। এরকম একজন অসাধারণ মেধাবী কবি এখন শুধু টিকে আছেন পাঠ্য বইয়ে। কাল সবকিছুকেই গ্রাস করে নেয়। রবীন্দ্রনাথও একসময় প্রাচীন কবি হবেন, তাঁর অধিকাংশ রচনা মূল্য হারাবে–রবীন্দ্র-মহিমাও হবে ম্লান থেকে ম্লানতর। তাঁর উপন্যাস কিংবা গল্পের অনেক কিছুতেই ‘সেকেলের ছাপ’ লেগে গেছে ইতোমধ্যেই, এমনকি বহু আধুনিক মেধাবী কবিদের কবিতা কিংবা গীতিকারদের গান রবীন্দ্ররচনার সঙ্গে সমানে পাল্লা দিচ্ছে, কখনো বা উৎরে গেছে রবীন্দ্র সংগীতকে পিছনে ফেলে দিয়ে।
রবীন্দ্রনাথ বাইশ শ’-র উপরে গান লিখেছেন। বাঙালিরা গভীর ভক্তিভরে, সশ্রদ্ধ চিত্তে এগুলোকে শুনে থাকে, গেয়ে থাকে। এর ভাবসম্পদকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করে। পরম পূজনীয় ভেবে এর বিশুদ্ধতা রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু এরাই জানে না যে, রবীন্দ্রনাথের এই বাইশ শ’ গানের অনেকগুলোই বিশুদ্ধ নয়, রবীন্দ্রনাথের মৌলিক গান নয়। অন্য কোনো গানের সুর থেকে সরাসরি নকল করা বা সেগুলোকে ভেঙেচুরে রবীন্দ্রনাথ নিজের মত করে নিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য গান আছে বিদেশী সুর থেকে নেয়া, অনেক গান আছে লোকসংগীত থেকে নেয়া, অনেক গান আছে বাউল সুর থেকে নেয়া। নিচে একটা বিদেশী গান দিচ্ছি। একটা খুব জনপ্রিয় রবীন্দ্র গানের সুর নেয়া হয়েছে এই গানটা থেকে। যাঁরা রবীন্দ্র সংগীত শোনেন, খুব বেশি দেরি হবে না তাঁদের সুরটাকে শনাক্ত করতে। যাঁরা পারবেন না তাঁদের জন্য রবীন্দ্রনাথের গানটাও দিয়ে দেওয়া হচ্ছে তার নিচেই।
১. পুরানো সেই দিনের কথা
এই গানটা  স্কটিস লোকসংগীত থেকে নেয়া॥
https://m.youtube.com/watch?feature=youtu.be&v=jGIHuqUnEm8
আর এটি হলো রবীন্দ্রনাথের নকল করা
https://m.youtube.com/watch?v=AJjDVCgp0Ao
২. এই গানটিও স্কটিস লোকগীতি থেকে নেয়া https://m.youtube.com/watch?feature=youtu.be&v=OzWsxv0Uae8
আর এটি নকল করা
https://m.youtube.com/watch?v=y57FdECaQss
৩. এই গানটির  রচয়িতা ও সুরকার বাউল শিল্পী গগণ হরকরা দাস
https://m.youtube.com/watch?v=jQOLkeHbyyE
আর রবীন্দ্রনাথ চুরি করে
লেখে জাতীয় সংগীত
https://m.youtube.com/watch?v=zVjbVPFeo2o
৪. বাউল গান দেখেছি রূপ সাগরে মনের মানুষ https://m.youtube.com/watch?v=mL8OGpvQ9_s
আর রবীন্দ্রনাথ নকল করে লিখে কিন্তু সুর ঠিকই থাকে https://m.youtube.com/watch?v=F5hfAlwFc4c
এই রকম আরও অসংখ্য গান আছে Shazam সফটওয়্যারের মাধ্যমে আপনারা বের করতে পারবেন যেগুলোর রবীন্দ্রনাথ সুর নকল এবং গানের কথাও নকল করেছে ॥
পৃথিবীর প্রায় সব বিখ্যাত সাহিত্যিক বা সংগীত স্রষ্টাই অন্যের সৃষ্টি দিয়ে অনুপ্রাণিত হয়। এতে দোষের কিছু নেই। রবীন্দ্রনাথও তাঁর ভক্তদের ভাষায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তবে, হুবহু অন্যের সৃষ্টিকে নকল করা অর্থাৎ সরাসরি কুম্ভীলকতা বা চৌর্যবৃত্তি কীভাবে ‘অনুপ্ররেণাযোগ্য’ হয় সেটা অবশ্য আমরা জানি না॥ রবীন্দ্রনাথ একদিনে পাঁচটি কবিতা এমনকি দশটা গান পর্যন্ত লিখেছেন !!?? এতে আমার যথেষ্ট  সন্দেহ হয় তিনি কি চুরি করেছেন নাকি নিজে লিখেছেন ?? নাকি জমিদার হিসেবে পয়সা দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন না জোর করে জমিদার বাবু গরীব প্রজার লেখা নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন ??? সন্দেহ শুধুই সন্দেহ জাগে ॥ রবীন্দ্রনাথের এই সমস্ত ‘অনুপ্রাণিত’ গানকে ভাঙা গান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবী রবীন্দ্রনাথের ভাঙা গানের একটা তালিকা করেছিলেন। সেখানে তিনি ২৩৪টি গানকে ভাঙা গান হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। ইন্দিরা দেবীর বক্তব্যকে যদি সত্যি বলে ধরে নেই, তাহলেও দেখা যাচ্ছে যে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্ট গানের এক দশমাংশেরও বেশি অন্যের সৃষ্ট সুর থেকে ‘অনুপ্রাণিত’। যে রবীন্দ্রনাথে নিজেই অন্যদের সুরকে ভেঙেচুরে বা অবিকল ভাবে নকল করেছেন, সেই রবীন্দ্রনাথের অনুসারীদের তাঁর গানকে অবিকৃত রাখা বা বিধিনিষেধের বেড়াজাল দিয়ে বিশুদ্ধ রাখার প্রচেষ্টা যে অনুচিত এবং অভব্য কাজ, সেটা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না।
শুধু কি তাই
রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের অনেক কিছুই মৌলিক নয়, বরং বলা যায় বিদেশী সাহিত্যের ছায়া-অবলম্বনে লেখা। যেমন, গবেষক প্রতাপনারায়ণ বিশ্বাস তার লেখা ‘রবীন্দ্রনাথের রহস্য গল্প ও অন্যান্য প্রবন্ধ’ নামের একটি বইয়ে বলেছেন, রবীন্দ্রনাথের চারটি অতি পরিচিত গল্প–যেমন ‘মহামায়া’, ‘গুপ্তধন’, ‘নিশীথে’, এবং ‘সম্পত্তি সমর্পণ’–বিখ্যাত মার্কিন রহস্য গল্পলেখক এডগার অ্যালান পো’র সে সময়কার চারটি গল্প থেকে ‘অনুপ্রাণিত’। ফরাসি লেখক তেওফিল গতিয়ের লেখা­ Le Pied de Mome (১৮৬৬) গল্পের প্রভাব আছে তার বিখ্যাত গল্প ‘ক্ষুধিত পাষাণে’র ওপর; আর রক্তকরবীর ওপর আছে সুইডিশ নাট্যকার অগাস্ট স্ট্রিন্ডবার্গের ‘A Dream Play’-এর ছাপ [প্রতাপনারায়ণ বিশ্বাস, ‘রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী : তত্ত্ব ও তথ্য’, অনুষ্টুপ, ১৯৮৯]। রবীন্দ্রনাথের আরও একটি বিষয় আছে ছোটো গল্প ॥ আরবী সাহিত্যের ছোটো গল্পের জনক মুস্তফা লূৎফী মানফালুতির থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ ছোটো গল্প লেখা শুরু করেন ॥
কিন্তু এগুলোর ক্ষেত্রে কেবল ‘বিদেশী গল্পের ছায়া’ থাকায় সরাসরি প্লেইজারিজমের অভিযোগ থেকে না হয় তাকে অব্যাহতি দেয়া যায়, কিন্তু হতদরিদ্র গগন হরকরার সাথে জমিদারবাবু যা করেছিলেন তার কোনো তুলনা নেই। ২০০৬ সালে বিবিসি সর্বকালের সেরা বাংলা গান কোনটি তাঁর একটি জরিপ চালিয়েছিল। সেই জরিপে বিপুল ভোট পেয়ে সেরা গান হয়েছিল ‘আমার সোনার বাংলা’। অথচ কী আশ্চর্য! সর্বকালের সেরা গানের সুরস্রষ্টা গগন হরকরাকে আমরা চিনি-ই না, চিনি একজন কুম্ভীলক রবীন্দ্রনাথকে। এর চেয়ে দুঃখজনক বিষয় আর কী হতে পারে। এই গানটা আবার আমাদের জাতীয় সংগীতও। শত শত বছর ধরে এটা গাওয়া হবে, অনাগত দিনের বাংলাদেশীরা সকৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে রবীন্দ্রনাথ নামের একজন মহান কবি এবং সংগীতকারকে, এরকম একটি অসাধারণ শ্রুতিমধুর গানকে সৃষ্টি করার জন্য। এর পিছনের বঞ্চনার ইতিহাস, চুরির ইতিহাস ঢাকা পড়ে যাবে অন্ধ পূজারীদের পরম মিথ্যায় এবং রবির কিরণের তীব্র কষাঘাতে। বেচারা গগন হরকরা। তাঁর সৃষ্ট সম্পদ অন্যে চুরি করেছে বলে যে হতাশামাখানো দীর্ঘশ্বাসটুকু ফেলবেন, তাঁর সুযোগও নেই। জানতেই পারেন নি যে, নিজের অজান্তেই সর্বকালের সেরা বাংলা গানের সুর সৃষ্টি করে ফেলেছিলেন তিনি। আর সেই অনন্য সুরটাকে নির্দ্বিধায় মেরে দিয়েছিল, তাঁর গানের কথাকে অনুকরণ করে কবিতা লিখেছিল, তাঁদেরই গান পাগলা জমিদারবাবু ঠাকুরমশাই॥ এভাবেই রবীন্দ্রনাথের মতো জমিদার বাবুরা এবং কুম্ভীলক প্রতারকরা চুরি করে গগণ হরকরার মতো প্রমথনাথের মতো  সাধারণ লেখকদের ঠকিয়েছেন॥
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ
এই লেখার সবগুলো পর্বের তথ্য সূত্র :

আহমদ শরীফ : বাঙালির চিন্তা-চেতনার বিবর্তনধারা ॥
আহমদ শরীফরচনাবলী ০১ ॥
আহমদ ছফা:  বাঙালী মুসলমানের মন  ॥
আহমদ ছফার বই সাম্প্রতিক বিবেচনা  বুদ্ধিবৃত্তির নতুন  বিন্যাস ॥
 নীরদ সি চৌধুরীর বই  আত্মঘাতী বাঙালী গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ড ‘আত্মঘাতী রবীন্দ্রনাথ’॥
ইব্রাহিম হোসেন   : ফেলে আসা দিনগুলো ॥
আবুল আসাদ:  একশ' বছরের রাজনীতি॥
http://www.amarboi.com/2008/12/blog-post_4110.html?m=1
https://humannewspaper.wordpress.com/2011/05/07/
http://www.amardeshonline.com/pages/printnews/2010/05/16/145175
https://m.facebook.com/lalon.shai/posts/10153211584749706
http://www.somewhereinblog.net/blog/deshpremik13/29590713
http://www.sachalayatan.com/node/41311
http://bloggermamun.blogspot.co.uk/2011/03/blog-post_02.html?m=1
http://arts.bdnews24.com/?p=3955
https://blog.mukto-mona.com/2011/08/25/18310/
http://www.shodalap.org/munim/20070/
http://www.istishon.com/node/7420
http://www.shapludu.com/1418/07/article_details.php?article_serial=104
http://vubangram.blogspot.co.uk/2010/09/blog-post_549.html?m=1
http://satkahan.weebly.com/245324762495-2451-245324762495246824942480-24552482250924743.html


No comments:

Post a Comment