পর্ব দশ ক
উপমহাদের রাজনীতিতে রক্ত দেয়া নেয়ার খেলা চলছে এবং ভবিষ্যতেও কি চলবে ???? শেখ মুজিবের যেভাবে মৃত্যু হয়॥
উপমহাদের রাজনীতিতে রক্ত দেয়া নেয়ার খেলা চলছে এবং ভবিষ্যতেও কি চলবে ???? শেখ মুজিবের যেভাবে মৃত্যু হয়॥
সূফি বরষণ
রাজনীতির সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক চিরকালের। এমনকি ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের তিন মহা কলাকৌশলীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি ॥ এই তিন জনের অন্যতম একজন হলেন শেখ মুজিব ॥ অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ হিসেবে আমি শুধু মনে করি তারা গণহত্যার সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে??!! শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে সাধারণ মানুষের মাঝে রক্তের বণ্যা বয়ে দিয়েছে॥ আমি যদি কোনো প্রসঙ্গ ছাড়া বলি যে শেখ মুজিব একজন খুনী এবং তাঁর মৃত্যু পাপের ফল তবে সবাই আমাকে গালাগালি
করবেন ॥
ব্রিটিশ পাকিস্তান আমল থেকে যে কয়েকজন মহান নেতা এই অঞ্চলে খুবই প্রভাবশালী ছিলেন তার অন্যতম হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। খুব কম কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত বাঙালি মুসলমান নেতা। অন্য বহু নেতার সঙ্গে তার একটা বড় পার্থক্য এই যে, তিনি কখনোই অন্যদের মতো ন্যাশলান কংগ্রেস বা বাম সংগঠনের সদস্য ছিলেন না। এই বৈশিষ্ট্যতাকে অন্য নেতাদের সঙ্গে আলাদা করেছে। প্রকাশিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। এই থেকেই উল্লেখ করবো তাঁরই লেখা কিছু উদ্ধৃতি ॥
কোর্ট দারোগা ... আমাকে দেখে বলেন, “মজিবর খুব ভয়ানক ছেলে। ছোরা মেরে ছিল রমাপদকে। কিছুতেই জামিন দেওয়া যেতে পারে না।” (পৃঃ ১৩)। ১৯৪১ সাল তখন রাজনীতি শুরু করেছি ভীষণভাবে। সভা করি, বক্তৃতা করি। খেলার দিকে আর নজর নাই। শুধু মুসলিম লীগ আর ছাত্রলীগ। পাকিস্তান আনতেই হবে, নতুবা মুসলমানদের বাঁচানোর উপায় নাই।”(পৃঃ ১৫)। “আমরাও কলকাতা (মুসলিম লীগ) অফিসের হোল টাইম ওয়ার্কার হয়ে যাই। যদিও (ইসলামীয়া কলেজ) হোস্টেলে আমার রুম থাকত, তবু আমরা প্রায়ই লীগ অফিসে কাটাতাম। ... পাকিস্তান না আনতে পারলে লেখাপড়া শিখে কি করব?”(পৃঃ ৩২)।
“অখ- ভারতে যে মুসলমানদের অস্তিত্ব থাকবে না এটা আমি মনপ্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করতাম।” (পৃঃ ৩৬)। “এখন আর মুসলমান ছেলেদের মধ্যে মতবিরোধ নাই। পাকিস্তান আনতে হবে এই একটাই শ্লোগান সকল জায়গায়।”
“২৯ জুলাই জিন্নাহ সাহেব অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ কাউন্সিল সভা বোম্বে শহরে আহ্বান করলেন। অর্থের অভাবের জন্য আমি যেতে পারলাম না। জিন্নাহ সাহেব ১৬ আগস্ট তারিখে ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে ঘোষণা করলেন। তিনি বিবৃতির মারফত ঘোষণা করেছিলেন, শান্তিপূর্ণভাবে এই দিবস পালন করতে। ... কিন্তু হিন্দু মহাসভা ও কংগ্রেসের প্রপাগান্ডার কাছে তারা অর্থাৎ (মুসলিম লীগের অতিনমনীয় ফরোয়ার্ড ব্লক) টিকতে পারল না। হিন্দু সম্প্রদায়কে বুঝিয়ে দিল এটা হিন্দুদের বিরুদ্ধে।” (পৃঃ ৬৩)।
“আর যদি আধা ঘণ্টা দেরি করে আমরা বউবাজার হয়ে আসতাম তবে আমার ও নুরুদ্দিনের লাশও আর কেউ খুঁজে পেত না।” (পৃঃ ৬৩)।“মুসলমানরা মোটেই দাঙ্গার জন্য প্রস্তুত ছিল না, একথা আমি বলতে পারি।” (পৃঃ ৬৫)।
“বেঙ্গল মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটি এক ফর্মুলা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে। যত দূর আমার মনে আছে, তাতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ একটা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে। ... শরৎ বসু নিজে লিখে গেছেন যে, জিন্নাহ তাকে বলেছিলেন মুসলিম লীগের কোনো আপত্তি নেই, যদি কংগ্রেস রাজি হয়। ... শরৎ বাবু কংগ্রেসের নেতাদের সাথে দেখা করতে যেয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে এসেছিলেন। ... মিস্টার প্যাটেল শরৎ বাবুকে খুব কঠিন কথা বলে বিদায় দিয়েছিলেন। কলকাতা ফিরে এসে শরৎ বাবু খবরের কাগজে বিবৃতির মাধ্যমে একথা বলেছিলেন এবং জিন্নাহ যে রাজি হয়েছিলেন একথা স্বীকার করেছিলেন।” (পৃঃ ৭৩-৭৪)।
“গোপালগঞ্জে আওয়ামী মুসলিম লীগ সংগঠন হয়ে গেছে। পুরানা মুসলিম লীগ কমিটিকেই আওয়ামী লীগ কমিটিতে পরিণত করে ফেলা হয়েছিল।” (পৃঃ ১২৩)।
“আজ দুইশত বৎসর পরে আমরা স্বাধীন হয়েছি। সামান্য হলেও কিছুটা আন্দোলনও করেছি স্বাধীনতার জন্য। ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস আজ আমাকে ও আমার সহকর্মীদের বছরের পর বছর জেল খাটতে হচ্ছে। ... যে পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেছিলাম সেই পাকিস্তানই করতে হবে, মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম। ... পাকিস্তান খারাপ না, পাকিস্তান তো আমাদের দেশ। যাদের হাতে ইংরেজ ক্ষমতা দিয়ে গেছে তারা জনগণের স্বার্থের চেয়ে নিজেদের স্বার্থই বেশি দেখেছে।” (পৃঃ ২০৯)।
“পাকিস্তান আন্দোলনে যে সমস্ত নেতা ও কর্মী মুসলিম লীগ ও পাকিস্তানের জন্য কাজ করেছে তারাই আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠান গড়েছে তা আমি প্রমাণ করতে পেরেছিলাম।” (পৃঃ ২১৭-২১৮)।
“আমরা স্বাধীন হয়েছি ১৯৪৭ সালে আর চীন স্বাধীন হয়েছে ১৯৪৯ সালে। যে মনোভাব পাকিস্তানের জনগণের ছিল, স্বাধীনতা পাওয়ার সাথে সাথে আজ যেন তা ঝিমিয়ে গেছে।” (পৃঃ-২৩৪)।
“অতিপ্রগতিবাদীদের কথা আলাদা। তারা মুখে চায় ঐক্য। কিন্তু দেশের জাতীয় নেতাদের জনগণের সামনে হেয় প্রতিপন্ন করতে এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলে, চেষ্টা করে সেজন্য। তাহলেই ভবিষ্যতে জনগণকে বলতে পারে যে, এ নেতাদের ও তাদের দলগুলো দ্বারা কোনো কাজ হবে না।
এরা ঘোলা পানিতে মাছ ধরবার চেষ্টা করতে চায়।” (পৃঃ ২৪৫)।
উপরে শেখ সাহেবের বক্তব্যে তার মন-মানসিকতার পরিচয় স্পষ্ট।
এখানে আর নতুন করে বলার কোনো দরকার নাই মুজির পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় সমর্থন করেনি ॥ কারণ মুজিবও বুঝতে পেরে ছিলেন ৪৭এ বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে না গেলে পূর্ব বাংলার অবস্থা হায়দ্রাবাদ ও সিকিমের মতো হতো॥ কিন্তু মুজিব কেন পাকিস্তান ভাঙ্গল এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া জরুরি ॥ কেনই বা ৭১ সালে যুদ্ধ লাগিয়ে ৩ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করলেন এবং দশ মিলিয়ন মানুষকে শরণার্থী বানালেন ॥ সেই আলোচনা যাওয়ার আগে জেনে নেই ৪৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে কি ছিল এবং এর পর পাকিস্তান আমলের ২৫ বছরে বাংলাদেশে কি হয়েছে ॥
পাকিস্তান আমলের ২৫ বছরে পূর্ব বাংলার অগ্রগতি যদিও এ কথা সত্য যে তৎকালীন পাকিস্তানে তথা পূর্ব পাকিস্তানে শিল্প-বিপ্লব শৈশবকালীন অবস্থায় ছিল, তবুও স্বীকার করতেই হবে যে এখানকার বুর্জোয়ারা তাদের সাম্রাজ্যবাদী মাতা-পিতার হাত ধরে হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে পা ফেলতে ফেলতে এগোচ্ছিল। ১৯৪৭ সালে পূর্ববঙ্গে (পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান, বর্তমান বাংলাদেশ) একটি পাটকলও ছিল না অথচ ১৯৭০ সালের মধ্যে ২৪,৩৩৪টি লুম সম্বলিত ৬৮টি পাটকল স্থাপিত হল; ১৯৪৭ সালে যেখানে ২৬০০ লুম ও ১,১২,০০০ স্পিন্ডল সম্বলিত মাত্র ৭টি কাপড়ের কল ছিল সেখানে ১৯৭০ সালের মধ্যে তা ৭,০০০ লুম ও ৭,৫০,০০০ স্পিন্ডল সম্বলিত ৪৪টি কাপড়ের কলে উন্নীত হয়; চিনিকল ছিল ৫টি, তা ১৯৭০ সালের মধ্যে ১৫টিতে উন্নীত হল; ম্যাচ ফ্যাক্টরীর উৎপাদন ক্ষমতা যেখানে সমগ্র পাকিস্তানে ১৯৪৭ সালে ছিল ৮০ লক্ষ গ্রুস বাক্স শুধুমাত্র পূর্ব পাকিস্তানেই ১৯৭০ সালে উৎপাদন হল ১১৩ লক্ষ গ্রুস বাক্স; রেলওয়ে ওয়ার্কসপ (উন্নত মানের) তৈরি হল দুইটি, খুলনায় তৈরী হল শিপইয়ার্ড, নারায়ণগঞ্জে ডক ইয়ার্ড নির্মিত হল; স্টিল মিল হল একটি, গালফ্রা হাবিব নামে জুট মিল স্পেয়ারস তৈরির কারখানা হল; ক্যাবল ফ্যাক্টরী হল, রসায়ন শিল্প হল, অক্সিজেন তৈরির কারখানা হল, অ্যরড্ন্যানস ফ্যাক্টরী হল; দুইটি কাগজ কল, একটি নিউজপ্রিন্ট মিল ও একটি হার্ডবোর্ড মিল হল; বৃহৎ মুদ্রণ শিল্প স্থাপিত হল; সার কারখানা হল; গাড়ী সংযোজন কারখানা হল, মেশিন টুলস ফ্যাক্টরী হল, ইলেক্ট্রিকাল ইকুইপমেন্ট তৈরির কারখানা হল; বাই-সাইকেল সংযোজন-তৈরি কারখানা হল; তৈল শোধনাগার হল; যেখানে কোন সিগারেট ফ্যাক্টরী ছিল না সেখানে সিগারেট ফ্যাক্টরীর উৎপাদন ১৯৬৯-৭০ সালে এক হাজার সাত শত কোটি সিগারেট-এ উন্নীত হল; ১৯৬৯-৭০ সালে কস্টিক সোডা উৎপাদন হল ৩,৩৫০ টন, সালফিউরিক এসিড উৎপাদন হল ৬,৪৫০ টন, ক্লোরিন উৎপাদন হল ২,৯০০ টন, বাস, ট্রাক, কার ও জীপ এসেম্লিং হল ৪৫৫টি, ইউরিয়া ফার্টিলাইজার উৎপাদন হল ৯৬,০০০ টন; চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দরের মাধ্যমে ১৯৬৭-৬৮ সালে রপ্তানী হয়েছিল ১৪ লক্ষ টনের উপর এবং আমদানী হয়েছিল ৪২ লক্ষ টনের উপর মালামাল; ১৯৪৭ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ৭,২৮৬ কিলোওয়াট তা ১৯৭০ সালের মধ্যে ৫,৪৮,০০০ কিলোওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্বলিত উৎপাদন কেন্দ্রে উন্নীত হল; ১৯৪৭ সালে সমগ্র পাকিস্তানে কার, জীপ, ট্যাক্সী, বাস, ট্রাক, ব্যাবিট্যাক্সী, মোটর সাইকেল প্রভৃতি রাস্তায় চালিত যানের সংখ্যা ছিল ২৫,৪৩৫ তা ১৯৭০ সালের মধ্যে শুধু পূর্ব পাকিস্তানের ৭০,০৮৬টিতে উন্নতি হয়েছিল; ১৯৪৭ সালে সমগ্র পাকিস্তানে টেলিফোনের সংখ্যা ছিল ৩৫ হাজার, তা ১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে দাঁড়িয়েছিল ৪৫,৬৫৭টিতে; নতুন রেলপথ নির্মিত হল ১৫৭ মাইল; ১৯৫২ সালে যেখানে উন্নতমানের পাকা রাস্তা ছিল ৫৯৪ মাইল ও নিম্নমানের পাকা রাস্তা ছিল ১,০২৮ মাইল, সেখানে ১৯৬৯-৭০ সালের মধ্যে তা উচ্চামান সম্পন্ন পাকা রাস্তা হল ৪,৪৮১ মাইল আর নিম্নমানের পাকা রাস্তা হল ১৮৭৪ মাইল। ১৯৬৯-৭০ সালে কৃষিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার হল ২,৭৭,০০০ টন; পাওয়ার পাম্প ও নলকূপের সাহায্যে জল সেচের ব্যবহার হল ঐ বছর ৮ লক্ষ একরেরও বেশী জমিতে।
বিদ্যুৎ, রাস্তা, যোগাযোগ, পরিবহণ, সেচ, বন্দর প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের পাশাপাশি প্রায় ১৫০টি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল। তা ছাড়া রেল, নৌ ও সড়ক পরিবহণ শিল্পের উন্নতি নিশ্চয়ই সামন্ততান্ত্রিক কায়দায় শোষণের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৬৯-৭০ সালে শুধুমাত্র রেলওয়েতে চালান দেওয়া মালের ওজন ছিল ৪৮ লক্ষ টন।
রাজনীতির সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক চিরকালের। এমনকি ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের তিন মহা কলাকৌশলীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি ॥ এই তিন জনের অন্যতম একজন হলেন শেখ মুজিব ॥ অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ হিসেবে আমি শুধু মনে করি তারা গণহত্যার সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে??!! শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে সাধারণ মানুষের মাঝে রক্তের বণ্যা বয়ে দিয়েছে॥ আমি যদি কোনো প্রসঙ্গ ছাড়া বলি যে শেখ মুজিব একজন খুনী এবং তাঁর মৃত্যু পাপের ফল তবে সবাই আমাকে গালাগালি
করবেন ॥
ব্রিটিশ পাকিস্তান আমল থেকে যে কয়েকজন মহান নেতা এই অঞ্চলে খুবই প্রভাবশালী ছিলেন তার অন্যতম হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। খুব কম কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত বাঙালি মুসলমান নেতা। অন্য বহু নেতার সঙ্গে তার একটা বড় পার্থক্য এই যে, তিনি কখনোই অন্যদের মতো ন্যাশলান কংগ্রেস বা বাম সংগঠনের সদস্য ছিলেন না। এই বৈশিষ্ট্যতাকে অন্য নেতাদের সঙ্গে আলাদা করেছে। প্রকাশিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। এই থেকেই উল্লেখ করবো তাঁরই লেখা কিছু উদ্ধৃতি ॥
কোর্ট দারোগা ... আমাকে দেখে বলেন, “মজিবর খুব ভয়ানক ছেলে। ছোরা মেরে ছিল রমাপদকে। কিছুতেই জামিন দেওয়া যেতে পারে না।” (পৃঃ ১৩)। ১৯৪১ সাল তখন রাজনীতি শুরু করেছি ভীষণভাবে। সভা করি, বক্তৃতা করি। খেলার দিকে আর নজর নাই। শুধু মুসলিম লীগ আর ছাত্রলীগ। পাকিস্তান আনতেই হবে, নতুবা মুসলমানদের বাঁচানোর উপায় নাই।”(পৃঃ ১৫)। “আমরাও কলকাতা (মুসলিম লীগ) অফিসের হোল টাইম ওয়ার্কার হয়ে যাই। যদিও (ইসলামীয়া কলেজ) হোস্টেলে আমার রুম থাকত, তবু আমরা প্রায়ই লীগ অফিসে কাটাতাম। ... পাকিস্তান না আনতে পারলে লেখাপড়া শিখে কি করব?”(পৃঃ ৩২)।
“অখ- ভারতে যে মুসলমানদের অস্তিত্ব থাকবে না এটা আমি মনপ্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করতাম।” (পৃঃ ৩৬)। “এখন আর মুসলমান ছেলেদের মধ্যে মতবিরোধ নাই। পাকিস্তান আনতে হবে এই একটাই শ্লোগান সকল জায়গায়।”
“২৯ জুলাই জিন্নাহ সাহেব অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ কাউন্সিল সভা বোম্বে শহরে আহ্বান করলেন। অর্থের অভাবের জন্য আমি যেতে পারলাম না। জিন্নাহ সাহেব ১৬ আগস্ট তারিখে ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে ঘোষণা করলেন। তিনি বিবৃতির মারফত ঘোষণা করেছিলেন, শান্তিপূর্ণভাবে এই দিবস পালন করতে। ... কিন্তু হিন্দু মহাসভা ও কংগ্রেসের প্রপাগান্ডার কাছে তারা অর্থাৎ (মুসলিম লীগের অতিনমনীয় ফরোয়ার্ড ব্লক) টিকতে পারল না। হিন্দু সম্প্রদায়কে বুঝিয়ে দিল এটা হিন্দুদের বিরুদ্ধে।” (পৃঃ ৬৩)।
“আর যদি আধা ঘণ্টা দেরি করে আমরা বউবাজার হয়ে আসতাম তবে আমার ও নুরুদ্দিনের লাশও আর কেউ খুঁজে পেত না।” (পৃঃ ৬৩)।“মুসলমানরা মোটেই দাঙ্গার জন্য প্রস্তুত ছিল না, একথা আমি বলতে পারি।” (পৃঃ ৬৫)।
“বেঙ্গল মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটি এক ফর্মুলা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে। যত দূর আমার মনে আছে, তাতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ একটা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে। ... শরৎ বসু নিজে লিখে গেছেন যে, জিন্নাহ তাকে বলেছিলেন মুসলিম লীগের কোনো আপত্তি নেই, যদি কংগ্রেস রাজি হয়। ... শরৎ বাবু কংগ্রেসের নেতাদের সাথে দেখা করতে যেয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে এসেছিলেন। ... মিস্টার প্যাটেল শরৎ বাবুকে খুব কঠিন কথা বলে বিদায় দিয়েছিলেন। কলকাতা ফিরে এসে শরৎ বাবু খবরের কাগজে বিবৃতির মাধ্যমে একথা বলেছিলেন এবং জিন্নাহ যে রাজি হয়েছিলেন একথা স্বীকার করেছিলেন।” (পৃঃ ৭৩-৭৪)।
“গোপালগঞ্জে আওয়ামী মুসলিম লীগ সংগঠন হয়ে গেছে। পুরানা মুসলিম লীগ কমিটিকেই আওয়ামী লীগ কমিটিতে পরিণত করে ফেলা হয়েছিল।” (পৃঃ ১২৩)।
“আজ দুইশত বৎসর পরে আমরা স্বাধীন হয়েছি। সামান্য হলেও কিছুটা আন্দোলনও করেছি স্বাধীনতার জন্য। ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস আজ আমাকে ও আমার সহকর্মীদের বছরের পর বছর জেল খাটতে হচ্ছে। ... যে পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেছিলাম সেই পাকিস্তানই করতে হবে, মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম। ... পাকিস্তান খারাপ না, পাকিস্তান তো আমাদের দেশ। যাদের হাতে ইংরেজ ক্ষমতা দিয়ে গেছে তারা জনগণের স্বার্থের চেয়ে নিজেদের স্বার্থই বেশি দেখেছে।” (পৃঃ ২০৯)।
“পাকিস্তান আন্দোলনে যে সমস্ত নেতা ও কর্মী মুসলিম লীগ ও পাকিস্তানের জন্য কাজ করেছে তারাই আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠান গড়েছে তা আমি প্রমাণ করতে পেরেছিলাম।” (পৃঃ ২১৭-২১৮)।
“আমরা স্বাধীন হয়েছি ১৯৪৭ সালে আর চীন স্বাধীন হয়েছে ১৯৪৯ সালে। যে মনোভাব পাকিস্তানের জনগণের ছিল, স্বাধীনতা পাওয়ার সাথে সাথে আজ যেন তা ঝিমিয়ে গেছে।” (পৃঃ-২৩৪)।
“অতিপ্রগতিবাদীদের কথা আলাদা। তারা মুখে চায় ঐক্য। কিন্তু দেশের জাতীয় নেতাদের জনগণের সামনে হেয় প্রতিপন্ন করতে এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলে, চেষ্টা করে সেজন্য। তাহলেই ভবিষ্যতে জনগণকে বলতে পারে যে, এ নেতাদের ও তাদের দলগুলো দ্বারা কোনো কাজ হবে না।
এরা ঘোলা পানিতে মাছ ধরবার চেষ্টা করতে চায়।” (পৃঃ ২৪৫)।
উপরে শেখ সাহেবের বক্তব্যে তার মন-মানসিকতার পরিচয় স্পষ্ট।
এখানে আর নতুন করে বলার কোনো দরকার নাই মুজির পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় সমর্থন করেনি ॥ কারণ মুজিবও বুঝতে পেরে ছিলেন ৪৭এ বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে না গেলে পূর্ব বাংলার অবস্থা হায়দ্রাবাদ ও সিকিমের মতো হতো॥ কিন্তু মুজিব কেন পাকিস্তান ভাঙ্গল এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া জরুরি ॥ কেনই বা ৭১ সালে যুদ্ধ লাগিয়ে ৩ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করলেন এবং দশ মিলিয়ন মানুষকে শরণার্থী বানালেন ॥ সেই আলোচনা যাওয়ার আগে জেনে নেই ৪৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে কি ছিল এবং এর পর পাকিস্তান আমলের ২৫ বছরে বাংলাদেশে কি হয়েছে ॥
পাকিস্তান আমলের ২৫ বছরে পূর্ব বাংলার অগ্রগতি যদিও এ কথা সত্য যে তৎকালীন পাকিস্তানে তথা পূর্ব পাকিস্তানে শিল্প-বিপ্লব শৈশবকালীন অবস্থায় ছিল, তবুও স্বীকার করতেই হবে যে এখানকার বুর্জোয়ারা তাদের সাম্রাজ্যবাদী মাতা-পিতার হাত ধরে হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে পা ফেলতে ফেলতে এগোচ্ছিল। ১৯৪৭ সালে পূর্ববঙ্গে (পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান, বর্তমান বাংলাদেশ) একটি পাটকলও ছিল না অথচ ১৯৭০ সালের মধ্যে ২৪,৩৩৪টি লুম সম্বলিত ৬৮টি পাটকল স্থাপিত হল; ১৯৪৭ সালে যেখানে ২৬০০ লুম ও ১,১২,০০০ স্পিন্ডল সম্বলিত মাত্র ৭টি কাপড়ের কল ছিল সেখানে ১৯৭০ সালের মধ্যে তা ৭,০০০ লুম ও ৭,৫০,০০০ স্পিন্ডল সম্বলিত ৪৪টি কাপড়ের কলে উন্নীত হয়; চিনিকল ছিল ৫টি, তা ১৯৭০ সালের মধ্যে ১৫টিতে উন্নীত হল; ম্যাচ ফ্যাক্টরীর উৎপাদন ক্ষমতা যেখানে সমগ্র পাকিস্তানে ১৯৪৭ সালে ছিল ৮০ লক্ষ গ্রুস বাক্স শুধুমাত্র পূর্ব পাকিস্তানেই ১৯৭০ সালে উৎপাদন হল ১১৩ লক্ষ গ্রুস বাক্স; রেলওয়ে ওয়ার্কসপ (উন্নত মানের) তৈরি হল দুইটি, খুলনায় তৈরী হল শিপইয়ার্ড, নারায়ণগঞ্জে ডক ইয়ার্ড নির্মিত হল; স্টিল মিল হল একটি, গালফ্রা হাবিব নামে জুট মিল স্পেয়ারস তৈরির কারখানা হল; ক্যাবল ফ্যাক্টরী হল, রসায়ন শিল্প হল, অক্সিজেন তৈরির কারখানা হল, অ্যরড্ন্যানস ফ্যাক্টরী হল; দুইটি কাগজ কল, একটি নিউজপ্রিন্ট মিল ও একটি হার্ডবোর্ড মিল হল; বৃহৎ মুদ্রণ শিল্প স্থাপিত হল; সার কারখানা হল; গাড়ী সংযোজন কারখানা হল, মেশিন টুলস ফ্যাক্টরী হল, ইলেক্ট্রিকাল ইকুইপমেন্ট তৈরির কারখানা হল; বাই-সাইকেল সংযোজন-তৈরি কারখানা হল; তৈল শোধনাগার হল; যেখানে কোন সিগারেট ফ্যাক্টরী ছিল না সেখানে সিগারেট ফ্যাক্টরীর উৎপাদন ১৯৬৯-৭০ সালে এক হাজার সাত শত কোটি সিগারেট-এ উন্নীত হল; ১৯৬৯-৭০ সালে কস্টিক সোডা উৎপাদন হল ৩,৩৫০ টন, সালফিউরিক এসিড উৎপাদন হল ৬,৪৫০ টন, ক্লোরিন উৎপাদন হল ২,৯০০ টন, বাস, ট্রাক, কার ও জীপ এসেম্লিং হল ৪৫৫টি, ইউরিয়া ফার্টিলাইজার উৎপাদন হল ৯৬,০০০ টন; চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দরের মাধ্যমে ১৯৬৭-৬৮ সালে রপ্তানী হয়েছিল ১৪ লক্ষ টনের উপর এবং আমদানী হয়েছিল ৪২ লক্ষ টনের উপর মালামাল; ১৯৪৭ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ৭,২৮৬ কিলোওয়াট তা ১৯৭০ সালের মধ্যে ৫,৪৮,০০০ কিলোওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্বলিত উৎপাদন কেন্দ্রে উন্নীত হল; ১৯৪৭ সালে সমগ্র পাকিস্তানে কার, জীপ, ট্যাক্সী, বাস, ট্রাক, ব্যাবিট্যাক্সী, মোটর সাইকেল প্রভৃতি রাস্তায় চালিত যানের সংখ্যা ছিল ২৫,৪৩৫ তা ১৯৭০ সালের মধ্যে শুধু পূর্ব পাকিস্তানের ৭০,০৮৬টিতে উন্নতি হয়েছিল; ১৯৪৭ সালে সমগ্র পাকিস্তানে টেলিফোনের সংখ্যা ছিল ৩৫ হাজার, তা ১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে দাঁড়িয়েছিল ৪৫,৬৫৭টিতে; নতুন রেলপথ নির্মিত হল ১৫৭ মাইল; ১৯৫২ সালে যেখানে উন্নতমানের পাকা রাস্তা ছিল ৫৯৪ মাইল ও নিম্নমানের পাকা রাস্তা ছিল ১,০২৮ মাইল, সেখানে ১৯৬৯-৭০ সালের মধ্যে তা উচ্চামান সম্পন্ন পাকা রাস্তা হল ৪,৪৮১ মাইল আর নিম্নমানের পাকা রাস্তা হল ১৮৭৪ মাইল। ১৯৬৯-৭০ সালে কৃষিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার হল ২,৭৭,০০০ টন; পাওয়ার পাম্প ও নলকূপের সাহায্যে জল সেচের ব্যবহার হল ঐ বছর ৮ লক্ষ একরেরও বেশী জমিতে।
বিদ্যুৎ, রাস্তা, যোগাযোগ, পরিবহণ, সেচ, বন্দর প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের পাশাপাশি প্রায় ১৫০টি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল। তা ছাড়া রেল, নৌ ও সড়ক পরিবহণ শিল্পের উন্নতি নিশ্চয়ই সামন্ততান্ত্রিক কায়দায় শোষণের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৬৯-৭০ সালে শুধুমাত্র রেলওয়েতে চালান দেওয়া মালের ওজন ছিল ৪৮ লক্ষ টন।
এর পাশাপাশি ১৯৪৭ সালে মাত্র, ৭,৭০০ একরের চা বাগান শিল্প উন্নীত হয়ে ১৯৬৯ সালের মধ্যে এক লক্ষ একরে দাঁড়িয়েছিল; জুট প্রেসও প্রায় ৭০টিতে উন্নীত হয়েছিল। এ ছাড়া গড়ে উঠেছিল মাঝারি ও ছোট আকারের অনেক রি-রোলিং মিল, ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা, মুদ্রণ, প্রকাশনা ও প্যাকেজিং শিল্প, সংবাদপত্র শিল্প, ঔষধ প্রস্তুত শিল্প, চামড়া শিল্প, পাদুকা উৎপাদন কারখানা কাঁচের দ্রব্যাদি প্রস্তুত শিল্প, লৌহ কারখানা, ঢালাই কারখানা, এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরী, মেরামত কারখানা ও ডকইয়ার্ড, ইট তৈরি শিল্প, ফার্নিচার তৈরি শিল্প, স-মিল, আটা-চাল- তৈল-ডাল ভাঙ্গান কল, ময়দা শিল্প, লবণ তৈরি কারখানা, বিস্কুট ও বেকারী শিল্প, প্লাষ্টিক ও রাবার শিল্প, টায়ার উৎপাদন শিল্প, হোসিয়ারী শিল্প, ইলেক্ট্রিক তার, বাল্ব, পাখা ইত্যাদি তৈরি শিল্প; মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও আলু হিমায়িতকরণ শিল্প, প্রসাধনী সামগ্রী প্রস্তুত শিল্প, ব্যাটারি উৎপাদন শিল্প, সাবান কারখানা, পিচবোর্ড ও কাগজের দ্রব্য প্রস্তুত কারখানা, বিভিন্ন ধরনের সংযোজন ও মেরামত কারখানা, পোশাক তৈরি শিল্প প্রভৃতি কয়েক হাজার শিল্প- যার মধ্যে ১৯৭০ সালে সরকারীভাবে রেজিস্ট্রিকৃত ছিল সাড়ে তিন হাজারের উপর, আর চীফ ইনসপেক্টর অব ফ্যাক্টরীজ এন্ড এষ্ট্যাবলিশমেন্টস-এর ১৯৬৯ সালের রেকর্ড অনুযায়ী ছিল ৫,৫৪১টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। ১৯৭০ সালে চলচ্চিত্র গৃহের সংখ্যা ছিল ১৬৬টি।
আরও ছিল অগণিত হস্তচালিত তাঁত (সরকারীভাবে স্বীকৃত হ্যান্ডমুল ফ্যাক্টরী ছিল প্রায় সাড়ে সাত শত) শিল্প ও বিভিন্ন কুটির শিল্প, অলংকার প্রস্তুত শিল্প, বিড়ি তৈরি কারখানা, নির্মাণ শিল্প, টেইলারিং সপ, বই বাঁধাই কারখানা ইত্যাদি। যাতে নিযুক্ত ছিল লক্ষ লক্ষ শ্রমিক। এর পাশাপাশি ছিল হাজার হাজার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও দোকান। ছিল ইম্পোর্ট-এক্সপোর্ট ব্যবসা, ক্লিয়ারিং-ফরোয়ার্ডিং ব্যবসা, ক্যারিং ব্যবসা, কনসাল্টিং ফার্ম, ব্যাংক ও বীমা শিল্প ইত্যাদি। ১৯৬৯-৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আমদানী ও রপ্তানী বাণিজ্যের টাকার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৮১ কোটি ও ১৬৭ কোটি টাকা। সে সময়ে এক টন পাটজাত দ্রব্যের গড় রপ্তানী মূল্য ছিল ১,৫৫৫৩.০০ টাকা ও এক টন কাঁচা পাটের গড় রপ্তানী মূল্য ছিল ১,২২৩.০০ টাকা এবং এক পাউন্ড চা-র গড় রপ্তানী মূল্য ছিল এক টাকা পঞ্চাশ পয়সার মত। প্রশ্ন হচ্ছে, পুঁজির বিকাশ ছাড়া এসব হল কী করে? আর এর থেকে কি পূর্ববতী সামাজিক অবস্থার কোন পরিবর্তন ঘটেনি?
রাশ ব্রুক উইলিয়াম ১৯৭১ সালে লিখেছেন- ‘আমার পর্যবেক্ষণ আমাকে এই উপসংহার টানতে বাধ্য করেছে যে, মাত্র শতাব্দীর এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ ২৫ বছরের মধ্যে পাকিস্তান যেভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে অগ্রগতির নতুন দিগন্ত রচনা করেছে অতীতের লম্বা ইতিহাসের কোন পর্যায়েই এমন অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। সফল স্থাপনা কাপতাইবাধ, চট্টগ্রামকে প্রধান সামুদ্রিক বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা, চন্দঘোনা পেপার মিল, ফেঞ্জুগঞ্জ সার কারখানা যা পাকিস্তানের যে কোন স্থানে নির্মিত হতে পারত। কিন্তু সেটা ছিলো কেন্দ্রের উদ্যোগ। কেন্দ্রের উদ্যোগে প্রাইভেট সেক্টরেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।’
১৯৬৭-৬৮ সাল নাগাদ ৯২৭টি বৃহৎ শিল্প ৬ শতাংশ জিডিপি অর্জন করে। (সি এম আই রিপোর্ট ইসলামাবাদ ১৯৬৯) ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আরো অগ্রগতি হয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এবং শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে পঞ্চম বাহিনীর নায়ক শেখ মুজিব যখন বিষোদগার করছেন তখন পর্যন্ত ৭৯টি জুট মিল, ৪২টি কটন মিল ২০টি চিনির মিল, তিনটি সার কারখানা, ২টি পেপার মিল, একটি নিউজ প্রিন্ট মিল, দুটো পেপার বোর্ড মিল, ২টি রেয়ন মিল, একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, একটি মেশিন টুলস ফ্যাক্টরী, একটি রিফাইনারী এবং অসংখ্য চামড়া ট্যানিং ফ্যাক্টরী প্রতিষ্ঠিত ছিল। তখন পর্যন্ত পিচঢালা সড়ক নির্মিত হয়েছিল ৩ হাজার মাইল। রেল পথ বর্ধিত হয়েছিল ১৮০০ মাইল পর্যন্ত এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১ লক্ষ কিলোয়াট। জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ হয়েছিল ১৯৫০ সালেই। উচ্চ বর্ণের হিন্দু সাংসদদের বিরোধিতা সত্ত্বেও মুসলিম বায়তদের মালিকানা স্বত্ব প্রদান করা হয়। স্থবির কৃষি সেক্টরে প্রাণ চাঞ্চল্যের সূচনা করা হয়েছিল এমন ভাবে যে, দুর্ভিক্ষ কোন দুর্ভিক্ষই তার কালো হাত বাড়াতে পারেনি। ষাটের দশকে পূর্ব বাংলা খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়।১৯৪৭ সাল নাগাদ যেখানে পুর্ব বাংলায় মাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় একটি ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল, অর্ধডজন ডিগ্রি কলেজ ছিল সেখানে পাকিস্তান যুক্ত করেছ ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় (তিনটি সাধারণ, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং একটি কৃষি)। এছাড়া এখানে ৩টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ৬টি ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল ১৭টি পলিটেকনিক এবং ৭টি মেডিক্যাল কলেজ, ৪টি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ’৭১ সালে। ১৯৪৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং ষাটের দশকের শুরুতে মোনয়েম খান যখন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ছিলেন তখন তিনি ৭টি মেডিকেল স্কুলকে কলেজ ঘোষণা করেন। পরে গভর্নর হয়ে এ ঘোষণা কার্যকর করেন।
১৯৬৭-৬৮ সাল নাগাদ ৯২৭টি বৃহৎ শিল্প ৬ শতাংশ জিডিপি অর্জন করে। (সি এম আই রিপোর্ট ইসলামাবাদ ১৯৬৯) ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আরো অগ্রগতি হয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এবং শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে পঞ্চম বাহিনীর নায়ক শেখ মুজিব যখন বিষোদগার করছেন তখন পর্যন্ত ৭৯টি জুট মিল, ৪২টি কটন মিল ২০টি চিনির মিল, তিনটি সার কারখানা, ২টি পেপার মিল, একটি নিউজ প্রিন্ট মিল, দুটো পেপার বোর্ড মিল, ২টি রেয়ন মিল, একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, একটি মেশিন টুলস ফ্যাক্টরী, একটি রিফাইনারী এবং অসংখ্য চামড়া ট্যানিং ফ্যাক্টরী প্রতিষ্ঠিত ছিল। তখন পর্যন্ত পিচঢালা সড়ক নির্মিত হয়েছিল ৩ হাজার মাইল। রেল পথ বর্ধিত হয়েছিল ১৮০০ মাইল পর্যন্ত এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১ লক্ষ কিলোয়াট। জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ হয়েছিল ১৯৫০ সালেই। উচ্চ বর্ণের হিন্দু সাংসদদের বিরোধিতা সত্ত্বেও মুসলিম বায়তদের মালিকানা স্বত্ব প্রদান করা হয়। স্থবির কৃষি সেক্টরে প্রাণ চাঞ্চল্যের সূচনা করা হয়েছিল এমন ভাবে যে, দুর্ভিক্ষ কোন দুর্ভিক্ষই তার কালো হাত বাড়াতে পারেনি। ষাটের দশকে পূর্ব বাংলা খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়।১৯৪৭ সাল নাগাদ যেখানে পুর্ব বাংলায় মাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় একটি ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল, অর্ধডজন ডিগ্রি কলেজ ছিল সেখানে পাকিস্তান যুক্ত করেছ ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় (তিনটি সাধারণ, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং একটি কৃষি)। এছাড়া এখানে ৩টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ৬টি ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল ১৭টি পলিটেকনিক এবং ৭টি মেডিক্যাল কলেজ, ৪টি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ’৭১ সালে। ১৯৪৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং ষাটের দশকের শুরুতে মোনয়েম খান যখন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ছিলেন তখন তিনি ৭টি মেডিকেল স্কুলকে কলেজ ঘোষণা করেন। পরে গভর্নর হয়ে এ ঘোষণা কার্যকর করেন।
No comments:
Post a Comment