Friday 14 August 2015

পর্ব নয় কউপমহাদের রাজনীতিতে রক্ত দেয়া নেয়ার খেলা চলছে এবং ভবিষ্যতেও কি চলবে ????বেনজির ভুট্টোর যেভাবে মৃত্যু

পর্ব  নয় ক
উপমহাদের রাজনীতিতে রক্ত দেয়া নেয়ার খেলা চলছে এবং ভবিষ্যতেও কি চলবে ???? বেনজির ভুট্টোর  যেভাবে মৃত্যু হয়॥
সূফি বরষণ
২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর বেনজির ভুট্টো আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারালেন রাওয়ালপিন্ডিতে। স্থানীয় সময় ১৮:১৬ (জিএমটি ১৩:১৬)-তে রাওয়ালপিন্ডি জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার সময় বেনজীরকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে  দলের কর্মীসহ মোট ২২ জন নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঘাড়ে গুলি লাগার কারণে বেনজীরের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, যে আততায়ী গুলি করেছিল সে-ই নিরাপত্তা রক্ষীদের হাত থেকে বাঁচতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মারা যান পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী৷ একই স্থানে নিহত হয়েছিল পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান॥ গত বছর ১৮ অক্টোবর নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে করাচিতে আত্মঘাতী হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও দ্বিতীয় হামলা থেকে আর রক্ষা পেলেন না। এখন তার ছেলে বিলাওয়াল জারদারি ভুট্টো পিপিপি’র নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন। বেনজির ভুট্টোর জন্ম ২১শে  জুন ১৯৫৩, করাচিতে৷ বেনজিরের বাবা ছিলেন জুলফিকার আলি ভুট্টো৷ জুলফিকার আলি ভুট্টো ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন৷ তাঁর রাজনৈতিক দলের নাম ‘পিপল্স পার্টি অফ পাকিস্তান' বা সংক্ষেপে পিপিপি৷ ১৯৮৮ সালে বেনজির ভুট্টো সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হন এবং মাত্র ৩৫ বছর বয়সে পাকিস্তানের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷    
পাকিস্তানে পড়াশোনা শেষ করার পর বেনজির আমেরিকায় যান উচ্চশিক্ষার জন্য৷ এরপর ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তিনি ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক আইন এবং কূটনীতি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেন৷

১৯৭৭ সালে বেনজির ফিরে যান পাকিস্তানে৷ এবং এর পরপরই ‘হাউজ অ্যারেস্ট' করা হয় তাঁকে৷ সে সময় জেনারেল জিয়াউল হক সামরিক ক্যু-এর মাধ্যমে জুলফিকার আলি ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যুত করেন৷ এর এক বছর পর, জিয়াউল হক প্রেসিডেন্ট হন পাকিস্তানের এবং ১৯৭৯ সালে জুলফিকার আলি ভুট্টোকে ফাঁসি দেয়া হয়৷ প্রচণ্ডভাবে ভেঙ্গে পড়েন বেনজির৷ ১৯৮০ সালে আসে আরেক পারিবারিক দুর্ঘটনা৷ প্যারিসের একটি ফ্ল্যাটে বেনজিরের ভাই শাহনেওয়াজ ভুট্টোকে হত্যা করা হয়৷ ভু্ট্টো পরিবার থেকে দাবি ওঠে যে, তাঁকে বিষপ্রয়োগ করে মারা হয়েছে৷ অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ জানান না তাঁরা৷ এরপর আরেক ভাই মূর্তজা ভুট্টো ১৯৯৬ সালে করাচিতে একটি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন৷ সেসময় বেনজির ভুট্টো ক্ষমতায়৷ তিনিই তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী৷
গত ( ২০০৬) বছর দুবাইতে ভারতের আউটলুক পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বেনজির ভুট্টো বলেছিলেন, তিনি আশা করেন তার সন্তানরা জীবনে ভিন্ন পথে হাঁটবে, রাজনীতিতে না এসে ভিন্ন জীবন বেছে নেবে। বেনজির আরো বলেন, ‘যদিও আমি রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছি এবং দেশের প্রতি আমার দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে, কিন্তু আমি আমার সন্তানদের পরামর্শ দেবো রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে। অন্যভাবেও দেশের জন্য কাজ করার পথ খোলা রয়েছে। ডাক্তার, সমাজকর্মী বা অন্য যেকোনোভাবেই দেশ সেবা করা যায়। আমার সন্তানরা আমাকে বলেছে, তারা আমার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। আমি তাদের সেই আশঙ্কাকে বুঝতে পারি। কিন্তু তারা পরিবারের রক্ত বহন করছে, জীবনে যাই ঘটুক না কেন, তা আমাদের সাহসের সাথেই মোকাবেলা করতে হবে।’ বেনজির না চাইলে কী হবে, তার ছেলে বিলাওয়ালই শেষ পর্যন্ত পিপিপি’র নেতৃত্ব পেয়েছেন। তার ভাগ্যে কী আছে তা নিয়তিই কেবল বলতে পারেন।
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ

No comments:

Post a Comment