Tuesday, 18 August 2015

মানুষ লোকাইলো কোন শহরে

মানুষ লোকাইলো কোন শহরে

সূফি বরষণ
মহাপুরুষ গুরু লালন সাঁইজীর গান দিয়ে এই লেখা শুরু করছি,
" এবার মানুষ খোঁজে পাই না তারে, মানুষ লোকাইলো কোন শহরে, ন ছেড়ে ন দে এলো...., কোথায় গেলো যে জানো বলো মোরে,  মানুষ লোকাইলো কোন শহরে" ॥ লালন যে মানুষের সন্ধান করছেন সারা জীবন, সেই মানুষের সন্ধান করা আমাদের সমাজের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে ॥  বিবেক সম্পন্ন মানুষকে যে প্রকৃত মানুষ বলে সে মানুষের বিবেক নিয়েও আলোচনা করা অতি জরুরি ॥

আমরা প্রথমে বিবেকের প্রতিশব্দ
গুলো জেনে নেয়,ন্যায়পরতা, সুনীতি নীতি, অন্তঃকরণ চৈতন্য, সাধুতা, বিচারবুদ্ধি, ধর্মবুদ্ধি, ন্যায়বোধ, নীতিবোধ ইত্যাদি ॥
এক কথায় বলতে গেলে সুস্থ  বিবেক বা ন্যায়নীতি সম্পন্ন মানুষ ॥
ন্যায়নীতি সম্পূর্ণ মানুষের অবক্ষয় আর দেশের বর্তমান অবস্থার সম্পর্কে আমার ফেবুর বন্ধু টাঙ্গাইলের এক বোন ফোন করে আমাকে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বরষণ ভাই কাঁচা মরিচের কেজি দুইশত টাকা,  এক লিটার তেলের  দাম ৫০৫ টাকা হলে কিভাবে সংসার চালায় বলেন ??? প্রতি মাসে হিসেবে মিলে না, শুধু মাত্র ফেব্রুয়ারি মাস দুই দিন কম থাকে বলে বছরে  ঐ মাসের দুইদিন ভালো থাকা যায়॥ বোন বলেন, জিনিসপত্রের দাম দিন দিন বাড়লেও মানুষের দাম ততোই
কমছে ॥

আলু পটলের দাম আছে কিন্তু মানুষের জীবনের কোনো দাম নেই॥ আজ দেশের কোনো মানুষেরই জীবনের নিশ্চিয়তা নেই যে, সে নিরাপদে ঘরে ফিরে আসতে পারবে ??? বোন বললেন, দেশের   বাতাস পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে গেছে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় আমার ॥ ঘরের ভেতরে আতঙ্কিত অবস্থায় বন্দী জীবন যাপন করছি সন্তানদের নিয়ে ॥ বাহিরে যাওয়ার সাহস করতে পারি না ইজ্জতহানি হওয়ার ভয়ে॥ মেয়ের জন্য স্কুলের সামনে অপেক্ষার সময়  পরকীয়া প্রেমের প্রস্তাব দেয়!!?? রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়ে কাপড়ে ধরে টান মারে?!! বাসে যাতায়াত করার সময় শরীরে ধাক্কা মারে, পাছায় হাত মারে, চিমটি মারে, বুকে হাত মারে, একই অবস্থা হয় নিউ মার্কেটে শপিং করতে গেলেও কাপড়ে টান মারা তো এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে
গেছে ? !!

এই যদি হয় আমাদের সমাজের অবস্থা তাইলে চলাফেরা করি কিভাবে বলেন ??!!! তারপর আছে ছোট্ট বাচ্চাদের কে ধর্ষণের মতো ঘটনা॥ নিজের ছোটো মেয়েকে নিয়ে আতঙ্কের থাকি সব সময় ॥
বিভিন্ন জায়গায় সদ্য ভুমিষ্ট বাচ্চা ময়লা আবর্জনায় ব্যাগের মধ্যে জীবিত মৃত পাওয়ায় ??॥ আবার মায়ের পেটের ভিতরেও শিশু নিরাপদ নয়?!! এ কোন সমাজের চিত্র আমরা দেখছি ॥
'বিবিসির সূত্রে চলিত বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই: ২৮০ শিশু ধর্ষণের শিকার'॥ আড়াইশোর বেশি মানবাধিকার সংগঠনের জোট শিশু অধিকার ফোরামে বলছে, গত ৭ মাসে বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৮০ টি।
গতবছর এই সংখ্যা ছিল ১৯৯টি। আর ২০১৩ সালে ১৭০টি এবং ২০১২ সালে ছিল ৮৬টি। এই সংখ্যা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এর বাইরেও থাকতে পারে।

এখন প্রশ্ন হলো আমরা কি আদিম যুগের মানুষের চেয়ে 
বেশি সভ্য না অসভ্য ?॥ আমরা আজ নিজেদের কে আধুনিক সভ্যতা প্রগতির জীব বলে দাবী করি॥ কিন্তু আমাদেরকে এই আধুনিকতা কতটা সভ্য করতে পেরেছে? আমরা কি নারীর প্রতি লুলুপ দৃষ্টিতে তাকায় না? এখন তো আর তাকানোর সীমাবদ্ধ নয় বরং ধর্ষণ না করতে পারলে যেন  নিজের বিকৃত চিন্তার কুপ্রভৃতিকে  বাস্তবায়ন করা হচ্ছে !!? একবারও কি বিবেককে প্রশ্ন করেছি এরা কি আমার মা বোন বা স্ত্রী_ কন্যার মতো নয়? ॥

অর্থ আর সম্পত্তির লোভে ভাই বোন পিতা মাতা পুত্র কন্যা স্বামী স্ত্রীসহ মানুষকে মানুষ হত্যা করছে ! বন্ধু_ ভাই বা প্রতিবেশীর স্ত্রী কন্যা কে আমাদের বিকৃত যৌন লালসার বস্তু বানাচ্ছি॥ আর এই ঘৃণ্য লালসা থেকে ছোট্ট কাজের মেয়ে বা প্রতিবেশীর শিশু বাচ্চাটিও রেহাই পাচ্ছে না?!!

মিথ্যা প্রতারণা শঠতা ও ঘুষ আমাদেরকে ঘিরে ধরেছে ॥ একবারও কি আমরা চিন্তা করেছি এসব আমার নিজের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে ॥ যে ক্ষতি আমি অন্যদের করছি॥ সে একই ক্ষতি আমার নিজের বেলায়ও ঘটতে পারে? একেই কি বলে আমরা সামাজিক সভ্য জীব ? এ কোন আধুনিক সভ্যতায় আমরা এসে পড়েছি ॥ সভ্যতা কি আমাদের বিবেককে পশু বানিয়ে  দিচ্ছে নয়ই কি ?? যাকে বলে মানসিক  বিকারগ্রস্ত এক মানুষের অদ্ভুত মানুষের সমাজ ॥

আজ আমরা আমাদের বিবেককে মানবিক মূল্যবোধের স্তর থেকে হিংস্র পশুর স্তরে নিয়ে এসেছি ॥ আমরা কি আদো মানুষ আছি??? দানব (পশুর ) আর মানুষের  মধ্যে আমি আজ আর কোনো পার্থক্য খুঁজে পাই না ?? আমরা নিজেরাই নিজেদের মানবীয় বিবেক কে গলা টিপে হত্যা করেছি অনেক আগেই আর গ্রহণ করেছি দানবত্ব আর পশুত্ব কে ??? কিন্তু কেন এমনটি তো হওয়ার কথা ছিলো না ?? যদি কবি নজরুলের ভাষায় বলি, যৌবনের মাতৃরূপ দেখিয়াছি—শব বহন করিয়া যখন সে যায় শ্মশানঘাটে, গোরস্থানে, অনাহারে থাকিয়া যখন সে অন্ন পরিবেশন করে দুর্ভিক্ষ বন্যা-পীড়িতদের মুখে, বন্ধুহীন রোগীর শয্যাপার্শ্বে যখন সে রাত্রির পর রাত্রি জাগিয়া পরিচর্যা করে, যখন সে পথে পথে গান গাহিয়া ভিখারী সাজিয়া দুর্দশাগ্রস্তদের জন্য ভিক্ষা করে, যখন দুর্বলের পাশে বল হইয়া দাঁড়ায়, হতাশের বুকে আশা জাগায়। এই কাজ যারা করে তারাই প্রকৃত মানুষ ॥ আল্লাহ তাদেরকেই জমিনের প্রতিনিধি এবং সৃষ্টির সেবা জীব বলেছেন আর যারা এর বিপরীত করে এদেরকে চতুষ্পদ জন্তু বা তার চেয়েও নিকৃষ্ট বলেছেন ॥

নিচে ভুপেন হাজারিকার গানটা তুলে ধরা হলো ॥ আর একটু নিজের বিবেককে প্রশ্ন করেন আমাদের দেশে রাজনীতির নামে ধর্মের নামে নিজেদের লোভের নামে কুপ্রভৃতির লালসার নামে 
যেসব কুকর্ম করছি এসব কে আর যাই হোক মানুষের কাজ বলা যায় না ॥॥ এই জন্যই সূফিবাদ জিন্দাবাদ বলি ॥
ভুপেন হাজারিকার গানটা তুলে ধরা
হলো ॥

মানুষ মানুষের জন্য
জীবন জীবনের জন্য
একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না
ও বন্ধু….
মানুষ মানুষকে পণ্য করে
মানুষ মানুষকে জীবিকা করে
পুরনো ইতিহাস ফিরে এলে লজ্জা কি তুমি পাবে না?
ও বন্ধু………..
বল কি তোমার ক্ষতি
জীবনের অথৈ নদী
পার হয় তোমাকে ধরে দূর্বল মানুষ যদি
মানুষ যদি সে না হয় মানুষ
দানব কখনো হয় না মানুষ
যদি দানব কখনো বা হয় মানুষ লজ্জা কি তুমি পাবে না?
ও বন্ধু……….
শিল্পী, সুরকার , গীতিকারঃ ভুপেন হাজারিকা ॥ 

ইসলাম ধর্মের বলা আছে কোন মানুষ আল্লাহর হক নষ্ট করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন॥ কিন্তু মানুষ যখন আল্লাহর কোনো বান্দার হক নষ্ট করে তখন আল্লাহ ক্ষমা করেন না ॥ যতক্ষণ না ঐ ক্ষতিগ্রস্থ বান্দা ক্ষমা করেন ॥
তাই নিজের বিবককে জাগ্রত করতে হবে॥ একমাত্র ধর্মীয় মূল্যবোধকে লালন পালন আর সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের বিবেককে চির জাগ্রত করতে পারি ॥ আর সামাজিক পারিবারিক জীবনকে সুন্দর করতে পারি॥ আসুন আমরা আমাদের বিবেককে পশুত্বে না নামিয়ে, বিবেককে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করি॥ এই জন্যেই আমি ফকির লালন শাহের বাণী মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি কে জীবনের মূল মন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করি  ॥ বিশ্বাস করেন মানুষের ভজনার মাধ্যমেই চিত্তের প্রশান্তি পাওয়া যায় ॥
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে 
সূফি বরষণ

No comments:

Post a Comment