পর্ব আট
উপমহাদের রাজনীতিতে রক্ত দেয়া নেয়ার খেলা চলছে এবং ভবিষ্যতেও কি চলবে ???? জুলফিকার আলী খান ভুট্টোর যেভাবে মৃত্যু হয়॥
উপমহাদের রাজনীতিতে রক্ত দেয়া নেয়ার খেলা চলছে এবং ভবিষ্যতেও কি চলবে ???? জুলফিকার আলী খান ভুট্টোর যেভাবে মৃত্যু হয়॥
সূফি বরষণ
লিয়াকত আলী খানের হত্যাকাণ্ডের প্রায় পাঁচ দশক পর পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রতিষ্ঠাতা জুলফিকার আলী খান ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ড ঘটান ভুট্টোরই একসময়ের প্রিয় পাত্র ও পরে ভুট্টোকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল জিয়াউল হক। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার জন্য বর্তমান পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জুলফিকার আলী ভুট্টোর একগুঁয়েমি ও গোয়ার্তুমিকেই অনেকাংশে দায়ী করে থাকেন। সে জন্য তার ওপর সেনাবাহিনীর যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে বলে অনেক সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন। ১৯৭১ সালের পর ভুট্টোর হাতেই পাকিস্তানের ক্ষমতা ছেড়ে দেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। ভুট্টো তার ওপর সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষোভের কথা জানতেন। সে জন্য তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর পর্যায়ক্রমে অনেক সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাকে অবসর প্রদান করেন। ১৯৭৩ সালে ভুট্টো তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে ৫৯ জন সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেন। পরে তাদের কোর্ট মার্শালে বিচার করা হয়। ভুট্টো ওই কোর্টের চেয়ারম্যান করেছিলেন ওই সময়ের ব্রিগেডিয়ার জিয়াউল হককে। পরে তাকে দ্রুত পদোন্নতি দেয়া হয় এবং ১৯৭৬ সালে ৫ জন সিনিয়র জেনারেলকে ডিঙিয়ে জিয়াউল হককে সেনাপ্রধান করেন ভুট্টো। জিয়াউল হক সেনাপ্রধান জেনারেল টিক্কা খানের স্থলাভিষিক্ত হন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এটাই যে, এই জিয়াউল হকই ১৯৭৭ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে গ্রেফতার করেন। পরে একটি হত্যা মামলায় প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।
জুলফিকার আলী ভুট্টো জেলখানায় বসে ‘আমাকে হত্যা করা হলে’ নামে যে বইটি লিখেছেন তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করার জন্য তাকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বারবার চাপ দেয়া হয়েছে। হেনরি কিসিঞ্জার ১৯৭৬ সালে ভুট্টোকে এই বলে হুমকি দিয়েছিলেন, পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ না করলে তাকে চরম মূল্য দিতে হবে। ভুট্টোর এই তথ্য প্রকাশ থেকে অনেকেই ধারণা করে থাকেন, ভুট্টোর বিচার প্রক্রিয়া ফাঁসির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের হাত থাকতে পারে। উল্লেখ্য, ভুট্টোর আমলের প্রথম দিকে ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে পারমাণবিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। জেনারেল টিক্কা খানকে এ কর্মসূচি এগিয়ে নেয়ার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন ভুট্টো।
জুলফিকার আলী ভুট্টোর হত্যাকাণ্ডের পর অনেকেই এই মত প্রকাশ করেছিলেন, জেনারেল জিয়াউল হকেরও একইভাবে মৃত্যু হবে। ১৯৮৮ সালে এক রহস্যময় বিমান দুর্ঘটনায় জেনারেল জিয়াউল হক নিহত হন। তার সাথে ওই বিমানে বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সেনাকর্মকর্তা, মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ কয়েকজন কূটনীতিক ছিলেন। রহস্যময় সেই বিমান দুর্ঘটনার কারণ আজো জানা যায়নি।
জুলফিকার আলী ভুট্টোর ছোট ছেলে শাহনেওয়াজ ভুট্টো ফ্রান্সে থাকতেন। জেনারেল জিয়াউল হক ১৯৭৯ সালে যখন জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেন তখন শাহনেওয়াজ অক্সফোর্ডের ছাত্র ছিলেন। ওই সময় তিনি ও তার বড় ভাই মুর্তজা ভুট্টো পিতার প্রাণ রক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার কাজ চালান। কিন্তু তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১৯৮৫ সালের ১৮ জুলাই ফ্রান্সের অ্যাপার্টমেন্টে শাহনেওয়াজকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয় বলে ভুট্টো পরিবার তখন অভিযোগ তুলেছিল। ১৯৯৬ সালে বেনজির ভুট্টো যখন প্রধানমন্ত্রী তখন তারই আরেক ভাই মুর্তজা ভুট্টো করাচিতে রহস্যজনকভাবে গুলিতে প্রাণ হারান। বেনজির তখন এই হত্যাকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে দায়ী করেছিলেন। কিন্তু সেনাবাহিনী এ অভিযোগ নাকচ করে দেয়। এই হত্যাকাণ্ডের কোনো কিনারা হয়নি আজ পর্যন্ত। ফাতিমা ভুট্রো তাঁর সংস অব ব্লাড আ্যান্ড সোর্ড বইয়ে তিনি লেখেন চাচা শাহনাওয়াজ ভুট্রো যাকে হত্যা করা হয় ১৯৮৫ তে, পিতা মীর মুর্তজা ভুট্রোকে আততায়ীরা হত্যা করে ১৯৯৬ এ॥ আর ফুপু বেনজির ঘাতকের হাতে প্রাণদেন ২০০৭ সালে॥
বিশেষ দ্রষ্টব্যে: এ কথা বলা যায়
৭১ সালে বাংলাদেশের জনগনের উপরে পরিচালিত ইতিহাসের বর্বরচিত ঘৃণিত গণহত্যার নায়ক এই নরপশু ঘাতক জুলফিকার আলী ভুট্টো॥ যে কারণে তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি এমনকি তাঁর পরিবারের কোনো সদস্যের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি ॥
লিয়াকত আলী খানের হত্যাকাণ্ডের প্রায় পাঁচ দশক পর পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রতিষ্ঠাতা জুলফিকার আলী খান ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ড ঘটান ভুট্টোরই একসময়ের প্রিয় পাত্র ও পরে ভুট্টোকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল জিয়াউল হক। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার জন্য বর্তমান পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জুলফিকার আলী ভুট্টোর একগুঁয়েমি ও গোয়ার্তুমিকেই অনেকাংশে দায়ী করে থাকেন। সে জন্য তার ওপর সেনাবাহিনীর যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে বলে অনেক সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন। ১৯৭১ সালের পর ভুট্টোর হাতেই পাকিস্তানের ক্ষমতা ছেড়ে দেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। ভুট্টো তার ওপর সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষোভের কথা জানতেন। সে জন্য তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর পর্যায়ক্রমে অনেক সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাকে অবসর প্রদান করেন। ১৯৭৩ সালে ভুট্টো তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে ৫৯ জন সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেন। পরে তাদের কোর্ট মার্শালে বিচার করা হয়। ভুট্টো ওই কোর্টের চেয়ারম্যান করেছিলেন ওই সময়ের ব্রিগেডিয়ার জিয়াউল হককে। পরে তাকে দ্রুত পদোন্নতি দেয়া হয় এবং ১৯৭৬ সালে ৫ জন সিনিয়র জেনারেলকে ডিঙিয়ে জিয়াউল হককে সেনাপ্রধান করেন ভুট্টো। জিয়াউল হক সেনাপ্রধান জেনারেল টিক্কা খানের স্থলাভিষিক্ত হন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এটাই যে, এই জিয়াউল হকই ১৯৭৭ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে গ্রেফতার করেন। পরে একটি হত্যা মামলায় প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।
জুলফিকার আলী ভুট্টো জেলখানায় বসে ‘আমাকে হত্যা করা হলে’ নামে যে বইটি লিখেছেন তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করার জন্য তাকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বারবার চাপ দেয়া হয়েছে। হেনরি কিসিঞ্জার ১৯৭৬ সালে ভুট্টোকে এই বলে হুমকি দিয়েছিলেন, পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ না করলে তাকে চরম মূল্য দিতে হবে। ভুট্টোর এই তথ্য প্রকাশ থেকে অনেকেই ধারণা করে থাকেন, ভুট্টোর বিচার প্রক্রিয়া ফাঁসির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের হাত থাকতে পারে। উল্লেখ্য, ভুট্টোর আমলের প্রথম দিকে ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে পারমাণবিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। জেনারেল টিক্কা খানকে এ কর্মসূচি এগিয়ে নেয়ার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন ভুট্টো।
জুলফিকার আলী ভুট্টোর হত্যাকাণ্ডের পর অনেকেই এই মত প্রকাশ করেছিলেন, জেনারেল জিয়াউল হকেরও একইভাবে মৃত্যু হবে। ১৯৮৮ সালে এক রহস্যময় বিমান দুর্ঘটনায় জেনারেল জিয়াউল হক নিহত হন। তার সাথে ওই বিমানে বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সেনাকর্মকর্তা, মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ কয়েকজন কূটনীতিক ছিলেন। রহস্যময় সেই বিমান দুর্ঘটনার কারণ আজো জানা যায়নি।
জুলফিকার আলী ভুট্টোর ছোট ছেলে শাহনেওয়াজ ভুট্টো ফ্রান্সে থাকতেন। জেনারেল জিয়াউল হক ১৯৭৯ সালে যখন জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেন তখন শাহনেওয়াজ অক্সফোর্ডের ছাত্র ছিলেন। ওই সময় তিনি ও তার বড় ভাই মুর্তজা ভুট্টো পিতার প্রাণ রক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার কাজ চালান। কিন্তু তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১৯৮৫ সালের ১৮ জুলাই ফ্রান্সের অ্যাপার্টমেন্টে শাহনেওয়াজকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয় বলে ভুট্টো পরিবার তখন অভিযোগ তুলেছিল। ১৯৯৬ সালে বেনজির ভুট্টো যখন প্রধানমন্ত্রী তখন তারই আরেক ভাই মুর্তজা ভুট্টো করাচিতে রহস্যজনকভাবে গুলিতে প্রাণ হারান। বেনজির তখন এই হত্যাকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে দায়ী করেছিলেন। কিন্তু সেনাবাহিনী এ অভিযোগ নাকচ করে দেয়। এই হত্যাকাণ্ডের কোনো কিনারা হয়নি আজ পর্যন্ত। ফাতিমা ভুট্রো তাঁর সংস অব ব্লাড আ্যান্ড সোর্ড বইয়ে তিনি লেখেন চাচা শাহনাওয়াজ ভুট্রো যাকে হত্যা করা হয় ১৯৮৫ তে, পিতা মীর মুর্তজা ভুট্রোকে আততায়ীরা হত্যা করে ১৯৯৬ এ॥ আর ফুপু বেনজির ঘাতকের হাতে প্রাণদেন ২০০৭ সালে॥
বিশেষ দ্রষ্টব্যে: এ কথা বলা যায়
৭১ সালে বাংলাদেশের জনগনের উপরে পরিচালিত ইতিহাসের বর্বরচিত ঘৃণিত গণহত্যার নায়ক এই নরপশু ঘাতক জুলফিকার আলী ভুট্টো॥ যে কারণে তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি এমনকি তাঁর পরিবারের কোনো সদস্যের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি ॥
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ
সূফি বরষণ
No comments:
Post a Comment