Wednesday, 26 August 2015

পর্ব দুই ক_স্বাধীনতার পর বাঙালীর প্রথম বুদ্ধিভিত্তিক দৈন্যদশা শুরু হয় জাতীয় সংগীত ও রবীন্দ্র পূজার মধ্য দিয়ে ॥বিতর্কিত রবি বাবু কারো সমালোচনা সহ্য করতেন না!!?

পর্ব  দুই   ক
স্বাধীনতার পর বাঙালীর প্রথম বুদ্ধিভিত্তিক দৈন্যদশা শুরু হয় জাতীয় সংগীত ও রবীন্দ্র পূজার মধ্য দিয়ে ॥
বিতর্কিত রবি বাবু  কারো সমালোচনা সহ্য করতেন না!!?
সূফি বরষণ 
রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলতেন ৪০ বছর পর কারো কবিতা লেখা উচিত নয়॥ কারণ কবির  যৌবনের কবিতা আর বৃদ্ধ বয়সের কবিতার মধ্যে মিল থাকে না॥
রবীন্দ্রনাথ তাঁর শেষের কবিতার নায়ক অমিতের মুখ দিয়ে  বলিয়েছিলেন যে, কবি মাত্রেরই পাঁচ বছরের জন্য কবিত্ব করা উচিত। তা না হলে শেষকালটায় অনুকরণের দল চারি দিকে ব্যূহ বেঁধে তাদেরকে মুখ ভ্যাংচাতে থাকে। তাদের লেখার চরিত্র বিগড়ে যায়, পূর্বের লেখা থেকে চুরি শুরু করে হয়ে পড়ে পূর্বের লেখার ‘রিসীভর্স্ অফ স্টোল্‌ন্‌ প্রপার্টি’।
কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন রবীন্দ্রনাথ নিজেই লিখেছেন অন্যদের নিষেধ করে?! এটা কি এক ধরনের প্রতারণা নয়? আর তিনি  কি শুধুই  লিখেছেন!  শেষে জীবনে একদিনে পাঁচটি কবিতা এমনকি দশটি গান পর্যন্ত রচনা করেছেন ??!!
আপনারা  প্রমাণ স্বরূপ তাঁর রচনাবলী থেকে তারিখ পরীক্ষা করে দেখতে পারেন॥ মনে বিস্ময় জাগে এটা কিভাবে সম্ভব ?? । শুধু লিখে গিয়েছেন বললে ভুল হবে, উৎকর্ষের দিক দিয়ে এই শেষের বছরগুলো বরং ছাড়িয়ে গিয়েছে আগের রবীন্দ্রনাথকে। এ বিষয়ে নীরদ চৌধুরী লিখেছেন:
ওয়ার্ডসওয়ার্থ, টেনিসন, ব্রাউনিং কেহই পরবর্তী জীবনে আগের রচনার তুলনায় উৎকৃষ্টতর কবিতা লেখেন নাই –ইঁহাদের কবিকীর্তি চল্লিশ বৎসরের আগে রচিত কাব্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। একমাত্র রবীন্দ্রনাথ ও হুগো শেষ জীবনে যাহা লিখিয়াছিলেন তাহা আগের জীবনে যাহা লিখিয়াছিলেন তাহার সমানতো বটেই, কোনো কোনো রচনায় উচ্চতর।
আজকের যুগে অনেক বাঙালিই রবীন্দ্রনাথকে প্রায় দেবতার আসনে বসিয়ে ফেলেছেন। তাঁকে নিয়ে ভক্তিতে  গদ্গদ হয়ে পুজোর আসর বসিয়ে, তাঁর গানকে উপাসনার ভক্তিসংগীত বানিয়ে ফেলেছে । রবীন্দ্রনাথের সামান্যতম সমালোচনা, ক্ষীণতম ত্রুটি-বিচ্যুতির উল্লেখ তাঁদেরকে ক্ষিপ্ত করে তোলে।
উন্মাতালের মত ঝাপিয়ে পড়তে চান সমালোচনাকারীর উপরে॥ আর এই শ্রেণীটি হলো সংকীর্ণমনা শিক্ষিত  মধ্যবিত্ত বাঙালী মুসলিম পরিবারের সন্তান, সাথে আছে হিন্দুরাও ॥ ধর্মনিরপেক্ষতার নামধারী একটি  জ্ঞানপাপী চক্র ॥ এদের হীনমন্যতা আর নিজের আত্মা পরিচয় ভুলে যাওয়া দেখে লজ্জায় ঘৃণায় আমার মুখ ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছে করে॥ এই শ্রেণীর বুদ্ধি ভিত্তিক দৈন্যদশার জন্য আজও বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে ॥ রবীন্দ্রনাথ আমাদের মতোই রক্তে মাংসে গড়া মানুষ তিনি কিছুতেই দেবতা হতে পারেন না॥ তাঁরও অনেক ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে॥
এটা এই শ্রেণী মানতে নারাজ, এরাই রবীন্দ্রনাথকে সাম্প্রদায়িকতার জালে বন্দী করে ফেলেছে ॥ যে জাল থেকে রবীন্দ্রনাথকে বের করে আনা আজও সম্ভব হয়নি ॥ এরা রবীন্দ্রনাথের অন্ধকার দিকগুলো নিয়ে কোনো প্রকার আলোচনা করতে নারাজ॥ যে কারণে রবীন্দ্রনাথের জীবিত অবস্থায় যে সমস্ত সমালোচনা হয়েছিল তা আর এখন খুঁজে পাওয়া যায় না॥ কারণ নীরদ সি চৌধুরীর ভাষায় : রবীন্দ্রনাথের জীবিতকালে প্রশংসার তুলনায় তাঁর সমালোচনায় বেশি
হয়েছিল ॥
আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দুজন সম্মানিত শিক্ষক ড. আহমদ শরীফ ও ড. হুমায়ুন আজাদ স্যারদ্বয় খুবই গঠন মূলক ভাবে তীক্ষ্ণ তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথের॥ আহমদ শরীফ তাঁর রবীন্দ্রোত্তর তৃতীয় প্রজন্মে রবীন্দ্র মূল্যায়ন প্রবন্ধে লিখেছেন:
তাঁর লঘু-গুরু ত্রুটি-বিচ্যুতি, মন-মননের সীমাবদ্ধতা বিমুগ্ধ-বিমূঢ় ভক্ত-অনুরক্তেরা এতো কাল চেপে রেখেছেন, অন্য কেউ উচ্চারণ করতে চাইলেও মারমুখো হয়ে উঠেছেন। প্রমাণ ষাটের দশকে বুদ্ধদেব বসুকে এবং ইদানীং সুশোভন সরকারকে ও সুভোঠাকুরকে গালমন্দ শুনতে হয়েছে। আর পঞ্চাশের দশকে কম্যুনিস্টরাও হয়েছিল নিন্দিত রবীন্দ্র বিরোধিতার জন্যে।
বার বুঝতেই পারছেন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে সমালোচনা করা খুবই বিপদজনক কাজ ॥ যেখানে রবীন্দ্রনাথ নিজেই তাঁর সমালোচনা সহ্য করতে পারতেন না ॥আর তাঁর ভক্তরা কতটা উগ্র হবে তা সহজেই বুঝা যায়॥ ।
—————————————————————-
রবীন্দ্রনাথ যে দোষেগুণে মিলিয়ে আমাদের মতো এক রক্তমাংসের মানুষই ছিলেন তার প্রমাণ আছে তাঁর নিজের জীবনেই। তাঁর ভক্তদের মত রবীন্দ্রনাথ নিজেও নিজের বিরূপ সমালোচনা সইতে পারতেন না। সমালোচনায় উদ্বেলিত হয়ে, উৎকণ্ঠিত হয়ে তা খণ্ডনের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়তেন তিনি। তাঁর হয়ে কেউ প্রতিবাদ করুক, সেই আশায় বসে থাকতেন তিনি। সেরকম কাউকে পাওয়া না গেলে নিজেই ছদ্ম কোনো নাম নিয়ে প্রতিবাদ, প্রতিকারে নেমে পড়তেন।
পর্ব দুই খ
এ প্রসঙ্গে আহমদ শরীফ বলেন:
রবীন্দ্রনাথ বিরূপ সমালোচনা সহ্য করতে পারতেন না, প্রতিবাদ করার লোক পাওয়া না গেলে বেনামে লিখে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করতেন। রবীন্দ্রানুরাগী ও রবীন্দ্রস্নেহভাজন অন্নদাশংকর রায় বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ তাঁর ত্রুটি-নিন্দা-কলঙ্কের সাক্ষ্য প্রমাণ সতর্ক প্রয়াসে অপসারিত বা বিনষ্ট করতেন। তা সত্ত্বেও তাঁর ঘনিষ্ঠ সুশোভন সরকার তাঁর প্রণাম-প্রীতিরূপ দুর্বলতার কথা বলে গেছেন। তাঁর সেজো ভাইয়ের পৌত্র সুভোঠাকুর [সুভগেন্দ্রনাথ ঠাকুর] জমিদার পরিচালনায় তাঁর স্বার্থবুদ্ধির কথা বর্ণনা করেছেন।
প্রিয় পাঠক আপনারা ইতিমধ্যে বুঝতে পারেছেন যে, প্রতারক রবীন্দ্রনাথ যেমন সমালোচনা সহ্য করতে পারতেন না তেমনি তাঁর ভক্তরাও পারেনা সমালোচনা সহ্য করতে ॥
আর এই হলো যাদের অবস্থা আমি তাদেরকে জ্ঞানপাপী সংকীর্ণমনা গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত করেছি ॥ পরের পর্বে আসছে প্রতারক রবীন্দ্রনাথ কিভাবে আর একজনের বই জোর করে নিজের নামে ছাপিয়ে ছিলেন ॥
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ

No comments:

Post a Comment