Wednesday 25 October 2017

আজানের জবাবের গুরুত্ব

FB_IMG_1502477883614

আজানের জবাবের গুরুত্ব

মাওলানা মাহমূদুল হাসান
আজানের জবাব দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি এবাদত। আজান যখন হয় তখন কোরআন তেলাওয়াত বন্ধেরও নির্দেশ এসেছে।

হাদিস শরিফে এসেছে, যে ব্যক্তি প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত আজানের জবাব দেবে, আজানের পর দুরূদ ও দোয়া পড়বে, আল্লাহপাক তাকে দুনিয়ার জীবনে পরিশুদ্ধ করবেন এবং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাল কেয়ামতের ময়দানে সুপারিশ করে তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। একজন মুসলমানের জন্য এর চেয়ে সৌভাগ্যের বস্তু আর কিছুই নেই। দুনিয়ার জীবন এক দিন শেষ হবেই কিন্তু আখেরাতের জীবন চিরস্থায়ী। এই জীবনের সফলতার জন্য আজানের পর জবাব দেওয়া খুবই সহজ বিষয়। দ্বীন ইসলাম খুবই সহজ বিষয়, কিন্তু শয়তান আমাদের এ কাজ করতে দেয় না। অনেক মসজিদে দেখা যায়, মানুষ দল বেঁধে আলাপ করছে, কিন্তু আজানের জবাব দেয় না। হাদিস শরিফে এসেছে, মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে যখন আজানের ধ্বনি 'আল্লাহু আকবার' উচ্চারিত হয় তখন শয়তান পেছনের রাস্তা দিয়ে পালানোর জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। আজান শেষ হওয়ার পর যখন নামাজের সময় হয় তখন আবার শয়তান চলে আসে। এ জন্যই হাদিসে বলা হয়েছে, যখন নামাজের জন্য দাঁড়াও তখন একজন অপরজনের গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়াও, যাতে দুজনের ফাঁকে শয়তান দাঁড়াতে না পারে।

হাদিসের মর্ম না বোঝার কারণে অনেকে প্রশ্ন করে যে, শয়তানকে তো দেখা যায় না, তাহলে শয়তান যে ফাঁকে দাঁড়ায় তা বোঝা গেল কীভাবে? যারা এমন প্রশ্ন করেন তারা আসলে হাদিস বুঝতে পারেননি। হাদিসের মর্ম হলো, শয়তান বাস্তবিকই পা রেখে উভয়ের মধ্যখানে দাঁড়ায় না, তবে সে ওই দুই ব্যক্তির অন্তরের খুশুখুযু বিনষ্ট করে দিতে সক্ষম হয়, যারা দাঁড়ানো অবস্থায় মাঝখানে ফাঁক রাখে। জায়গা ফাঁক রেখে দাঁড়ানো গুনাহের কাজ। আর এই গোনাহের কারণেই শয়তান প্রশ্রয় পেয়ে মানুষের অন্তরে বাইরের চিন্তা ঢুকিয়ে দেয়। আজান শুনলে শয়তান পালায় আর নামাজের সময় হলে শয়তান আসে, এর দ্বারা বাহ্যিকভাবে বুঝা যায় যে, নামাজের চেয়ে আজানের মর্যাদা বেশি। আসলে অনেক সময় ছোট জিনিস স্থান-কালের ভিন্নতায় দামি হয়ে যায়। যেমন লবণের কথা চিন্তা করুন। এটি অতি অল্প মূল্যের জিনিস, অথচ তাকে ছাড়া হাজার হাজার টাকা দামের পাকানো গোশতেরও কোনো মর্যাদা থাকে না। তবে আজান না দিলেও নামাজ হয়ে যায়, কিন্তু আজান দ্বারা যে মহা ফায়দা ও ফজিলত অর্জন করা যায় তা থেকে বঞ্চিত হতে হয়।
আল্লাহপাক আজানের জবাব দেওয়া বান্দার জন্য সুন্নত করেছেন। তার কারণ হলো- জবাব দিলে বান্দার উপকারে আসে। মুয়াজ্জিনের আজানের আওয়াজ যতদূর যাবে ততদূরের সবকিছুই কাল কেয়ামতের ময়দানে মুয়াজ্জিনের জন্য সাক্ষ্য দেবে। মুয়াজ্জিনের আজানে সাড়া দিয়ে যে ব্যক্তি নামাজ পড়তে আসবে এবং তার যত সওয়াব হবে মুয়াজ্জিনেরও সেই পরিমাণ সওয়াব হবে। মুয়াজ্জিন আল্লাহর প্রতিনিধি। আল্লাহর ডাকের জবাব দেওয়া অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু মানুষ যেহেতু দুনিয়ার নানা কাজে মশগুল থাকে তাই আল্লাহপাক আজানের জবাব দেওয়াকে ওয়াজিব বা ফরজ করেননি। বস্তুত সাক্ষ্য দেওয়া সবারই কাজ নয়। অবিশ্বস্ত ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হয় না। যার ব্যাপারে সাক্ষ্য দেবে তার প্রিয় হতে হবে আর যিনি দেবেন তাকেও প্রিয় হতে হবে। যদি উভয়েই প্রিয় হয় তাহলে আল্লাহপাকও তাদের সাক্ষ্য প্রিয় হিসেবে গ্রহণ করবেন। আর যদি প্রিয় না হয় তাহলে তাদের সাক্ষ্যও আল্লাহপাকের দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে না। যে ব্যক্তি নিয়মিত আজানের জবাব দিতে থাকবে সে ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বমহূর্তে হলেও গুনাহমুক্ত হবে এবং মৃত্যুর পর আল্লাহপাক তার সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন।
লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

No comments:

Post a Comment