কারবালার শিক্ষা– মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রহঃ) [বই রিভিউ – ৪৬২ , রিভিউ লেখক : Ashikul Alam Sajeeb]
MARCH 31, 2017
বইয়ের নাম: কারবালার শিক্ষা
লেখক: মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রহঃ)
সাবেক প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদিস
জামিয়া কোআনিয়া আরাবিয়া,লালবাগ,ঢাকা।
প্রকাশনী: নাদিয়াতুল কুরআন প্রকাশনী
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১১৬
মূল্য: ৮০ টাকা
বিষয়বস্তু : রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নয়নমনি ও প্রিয় নাতি হযরত হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের হৃদয় বিদারক ঘটনা নিয়ে বইটি লেখা।
পর্যালোচনা :
কিছু কিছু অতীত থাকে,যার কারণে ইতিহাস হয়ে উঠে সমৃদ্ধ ও ঘটনাবহুল। সে সবের মাঝে কারবালার ঘটনাও সেই বিশেষত্বেরর সত্যিকার দাবীদার। কারবালার ইতিহাস আজ মুসলিম জাহানের প্রতিটি ঘরে ঘরে মানুষের মুখে মুখে চর্চিত হলেও সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে অনেক নামীদামী জনেরাও এ ক্ষেত্রে মারাত্মক ভ্রান্তির বেড়াজালে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছেন। আজ আলেম সমাজের প্রয়োজন সঠিক ইতিহাস মানুষের সামনে উপযোগ্য করে তুলে ধরা। সময়ের এই তীব্র অনুভূতিতেই বইটি লেখা ।
“কারবালার শিক্ষা ” বইটি প্রকৃত পক্ষে লেখকের ১৯৮৭ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর লালবাগ মাদ্রাসাতে ছাত্রদের উদ্দেশ্য পবিত্র আশুরা উপলক্ষে করা আলোচনার লিখিত রূপ। তারপরেও বইটিতে কুরআন,হাদিস,ইতিহাসগ্রন্থের প্রয়োজনীয় রেফারেন্স সংযোজন করা হয়েছে।
হজরত হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের ঘটনায় শুধু বিশ্ব মুসলিমই নয়,অমুসলিম সম্প্রদায়ের পাথরসম হৃদয়কোণেও সমবেদনার কম্পন জাগিয়েছে। আকাশের ফেরেশতা থেকে শুরু করে জান্নাতের হুর-পরীসহ পৃথিবীর প্রাণী জগতের প্রতিটি সদস্যের পক্ষে অশ্রু সংবরণ করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
ইসলামী ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ভাষায় ঐতিহাসিকগণ বহু পুস্তক রচনা করেছেন। বাংলা ভাষায়ও এ ঘটনার উপর কলম চালিয়েছেন অনেক স্বনামধন্য লেখক ও সাহিত্যিক। কিন্তু পরিতাপের বিষয়,অধিকাংশ লেখক এ ঘটনাকে ইতিহাসের নীরিখে রচনা না করে আজবগল্প ও রূপকথার কাহিনীর মত সাজাতে গিয়ে ভাষা ও সাহিত্যের ধুম্রজাল সৃষ্টি করে প্রকৃত ইতিহাসের বিকৃতি সাধনের অপপ্রয়াস চালিয়েছেন বড় চাতুরতার সাথে। আর এ ঘৃণ্য প্রচেষ্টার উদ্ভব নতুন করে নয়,বরং শুরু হয়েছে ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই।
কারবালার হৃদয় বিদারক,মর্মস্পর্শী ঘটনা সংঘটিত হওয়ার মূল কারণ কি ছিল,এ সম্পর্কে মুফতীয়ে আজম হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহঃ) বলেন,
” হজরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর শহীদি আত্মা এখনও চিরন্তন সত্যের কণ্ঠ নিয়ে পৃথিবীর বুকে গর্জে উঠছে,বিশ্ব মুসলিমকে আহবান জানাচ্ছে এ পথের সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য। কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ পথে অগ্রসর হলেন হযরত হুসাইন (রাঃ)? কিসের তাড়নায় প্রথমে মদিনা থেকে মক্কা,তারপর মক্কা থেকে কূফা হিযরত করলেন তিনি? কেনই বা নিজেকে স্বপরিবারে আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করার মানসিকতা তাঁর মাঝে জেগে উঠেছিল? নির্দ্বিধায় বলা যায় যে,হযরত হুসাইস (রাঃ)র ত্যাগ ও কুরানীর একমাত্র উদ্দেশ্য নিন্মোক্ত বিষয় সমূহই ছিল-
১. কুরআন- সুন্নাহর সংবিধান সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠা করা।
২. ইসলামী দন্ডবিধি নতুন করে পূর্ণাঙ্গভাবে সু- প্রতিষ্ঠিত করা।
৩. রাজতন্ত্রের মুলোৎপাটন করে খেলাফত আলা মিনহাযিন নবুয়্যুতের ভিতকে মজবুত ও শক্তিশালী করে গড়ে তোলা।
৪.সত্যের সংগ্রামে স্বীয় জীবন,ঐশ্বর্য্য এবং ছেলে সন্তানদের মায়া- মমতা কাটিয়ে জীবন উৎসর্গ করা।
৫. ক্ষমতার দাপটের মুখে সত্যের পথে চির সংগ্রামী বীর মুজাহিদগণ যেন নিষ্প্রভ হয়ে না যায়,তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।
৬. কারো হুংকারে ভীত সন্ত্রস্ত না হয়ে দুঃখে কষ্টে আল্লাহকে স্মরণ রাখা এবং তার উপর পরিপূর্ণ আস্থা স্থাপন করে সর্বাবস্থায় তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
অতঃপর মুসলিম বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে অতি আবেগঝরা ভাষায় তিনি বলেন,
” আমাদের সমাজে কি এমন কোন ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটবে না যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নয়নমনি,কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হয়ে শাহাদাতের শরাব পানকারী হযরত হুসাইন (রাঃ) এর আহবানে সাড়া দিবে,আর তাঁর উত্তম চরিত্র ও সৎকর্মকে স্বীয় জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে নিবে?”
” গচ্ছিত আমানত তোমার এই যৌবন,সারা পৃথিবীর
হে ক্ষীণ দূর্বল! সৃষ্টি কর জগত তরে শান্তির নীড়।”
আলোচ্য বইটিতে মোট ২৬ টি শিরোনামে কারবালার প্রকৃত ইতিহাস,এর প্রেক্ষাপট,এর ধারাবাহিক ঘটনাগুলো বর্ণিত হয়েছে। এবং প্রয়োজনীয় রেফারেন্সগুলো সঠিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বইটির শেষের দিকে লেখকের কারবালা শহর সরেজমিনে সফরের একটা বিবরণ দেওয়া হয়েছে খুব সাবলীল ভাষায়।
বইটির সর্বশেষে ” আশুরা সম্পর্কিত মাসায়েল” নামে একটি অধ্যায় রচনা করা হয়েছে। সেখানে আশুরার নামে প্রচলিত বিদাতী কাজসমূহ,
শিয়া সম্প্রদায়ের ভ্রান্ত বিশ্বাস,ইসলামে শোক পালনের বিধান,আশুরা সম্পর্কে মনিষীদের অভিমত ইত্যাদি আলোচিত হয়েছে।
কারবালার প্রকৃত ইতিহাস ও সঠিক শিক্ষা জানার জন্য বইটি সবাইকে পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি।
MARCH 31, 2017
বইয়ের নাম: কারবালার শিক্ষা
লেখক: মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রহঃ)
সাবেক প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদিস
জামিয়া কোআনিয়া আরাবিয়া,লালবাগ,ঢাকা।
প্রকাশনী: নাদিয়াতুল কুরআন প্রকাশনী
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১১৬
মূল্য: ৮০ টাকা
বিষয়বস্তু : রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নয়নমনি ও প্রিয় নাতি হযরত হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের হৃদয় বিদারক ঘটনা নিয়ে বইটি লেখা।
পর্যালোচনা :
কিছু কিছু অতীত থাকে,যার কারণে ইতিহাস হয়ে উঠে সমৃদ্ধ ও ঘটনাবহুল। সে সবের মাঝে কারবালার ঘটনাও সেই বিশেষত্বেরর সত্যিকার দাবীদার। কারবালার ইতিহাস আজ মুসলিম জাহানের প্রতিটি ঘরে ঘরে মানুষের মুখে মুখে চর্চিত হলেও সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে অনেক নামীদামী জনেরাও এ ক্ষেত্রে মারাত্মক ভ্রান্তির বেড়াজালে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছেন। আজ আলেম সমাজের প্রয়োজন সঠিক ইতিহাস মানুষের সামনে উপযোগ্য করে তুলে ধরা। সময়ের এই তীব্র অনুভূতিতেই বইটি লেখা ।
“কারবালার শিক্ষা ” বইটি প্রকৃত পক্ষে লেখকের ১৯৮৭ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর লালবাগ মাদ্রাসাতে ছাত্রদের উদ্দেশ্য পবিত্র আশুরা উপলক্ষে করা আলোচনার লিখিত রূপ। তারপরেও বইটিতে কুরআন,হাদিস,ইতিহাসগ্রন্থের প্রয়োজনীয় রেফারেন্স সংযোজন করা হয়েছে।
হজরত হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের ঘটনায় শুধু বিশ্ব মুসলিমই নয়,অমুসলিম সম্প্রদায়ের পাথরসম হৃদয়কোণেও সমবেদনার কম্পন জাগিয়েছে। আকাশের ফেরেশতা থেকে শুরু করে জান্নাতের হুর-পরীসহ পৃথিবীর প্রাণী জগতের প্রতিটি সদস্যের পক্ষে অশ্রু সংবরণ করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
ইসলামী ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ভাষায় ঐতিহাসিকগণ বহু পুস্তক রচনা করেছেন। বাংলা ভাষায়ও এ ঘটনার উপর কলম চালিয়েছেন অনেক স্বনামধন্য লেখক ও সাহিত্যিক। কিন্তু পরিতাপের বিষয়,অধিকাংশ লেখক এ ঘটনাকে ইতিহাসের নীরিখে রচনা না করে আজবগল্প ও রূপকথার কাহিনীর মত সাজাতে গিয়ে ভাষা ও সাহিত্যের ধুম্রজাল সৃষ্টি করে প্রকৃত ইতিহাসের বিকৃতি সাধনের অপপ্রয়াস চালিয়েছেন বড় চাতুরতার সাথে। আর এ ঘৃণ্য প্রচেষ্টার উদ্ভব নতুন করে নয়,বরং শুরু হয়েছে ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই।
কারবালার হৃদয় বিদারক,মর্মস্পর্শী ঘটনা সংঘটিত হওয়ার মূল কারণ কি ছিল,এ সম্পর্কে মুফতীয়ে আজম হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহঃ) বলেন,
” হজরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর শহীদি আত্মা এখনও চিরন্তন সত্যের কণ্ঠ নিয়ে পৃথিবীর বুকে গর্জে উঠছে,বিশ্ব মুসলিমকে আহবান জানাচ্ছে এ পথের সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য। কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ পথে অগ্রসর হলেন হযরত হুসাইন (রাঃ)? কিসের তাড়নায় প্রথমে মদিনা থেকে মক্কা,তারপর মক্কা থেকে কূফা হিযরত করলেন তিনি? কেনই বা নিজেকে স্বপরিবারে আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করার মানসিকতা তাঁর মাঝে জেগে উঠেছিল? নির্দ্বিধায় বলা যায় যে,হযরত হুসাইস (রাঃ)র ত্যাগ ও কুরানীর একমাত্র উদ্দেশ্য নিন্মোক্ত বিষয় সমূহই ছিল-
১. কুরআন- সুন্নাহর সংবিধান সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠা করা।
২. ইসলামী দন্ডবিধি নতুন করে পূর্ণাঙ্গভাবে সু- প্রতিষ্ঠিত করা।
৩. রাজতন্ত্রের মুলোৎপাটন করে খেলাফত আলা মিনহাযিন নবুয়্যুতের ভিতকে মজবুত ও শক্তিশালী করে গড়ে তোলা।
৪.সত্যের সংগ্রামে স্বীয় জীবন,ঐশ্বর্য্য এবং ছেলে সন্তানদের মায়া- মমতা কাটিয়ে জীবন উৎসর্গ করা।
৫. ক্ষমতার দাপটের মুখে সত্যের পথে চির সংগ্রামী বীর মুজাহিদগণ যেন নিষ্প্রভ হয়ে না যায়,তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।
৬. কারো হুংকারে ভীত সন্ত্রস্ত না হয়ে দুঃখে কষ্টে আল্লাহকে স্মরণ রাখা এবং তার উপর পরিপূর্ণ আস্থা স্থাপন করে সর্বাবস্থায় তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
অতঃপর মুসলিম বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে অতি আবেগঝরা ভাষায় তিনি বলেন,
” আমাদের সমাজে কি এমন কোন ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটবে না যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নয়নমনি,কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হয়ে শাহাদাতের শরাব পানকারী হযরত হুসাইন (রাঃ) এর আহবানে সাড়া দিবে,আর তাঁর উত্তম চরিত্র ও সৎকর্মকে স্বীয় জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে নিবে?”
” গচ্ছিত আমানত তোমার এই যৌবন,সারা পৃথিবীর
হে ক্ষীণ দূর্বল! সৃষ্টি কর জগত তরে শান্তির নীড়।”
আলোচ্য বইটিতে মোট ২৬ টি শিরোনামে কারবালার প্রকৃত ইতিহাস,এর প্রেক্ষাপট,এর ধারাবাহিক ঘটনাগুলো বর্ণিত হয়েছে। এবং প্রয়োজনীয় রেফারেন্সগুলো সঠিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বইটির শেষের দিকে লেখকের কারবালা শহর সরেজমিনে সফরের একটা বিবরণ দেওয়া হয়েছে খুব সাবলীল ভাষায়।
বইটির সর্বশেষে ” আশুরা সম্পর্কিত মাসায়েল” নামে একটি অধ্যায় রচনা করা হয়েছে। সেখানে আশুরার নামে প্রচলিত বিদাতী কাজসমূহ,
শিয়া সম্প্রদায়ের ভ্রান্ত বিশ্বাস,ইসলামে শোক পালনের বিধান,আশুরা সম্পর্কে মনিষীদের অভিমত ইত্যাদি আলোচিত হয়েছে।
কারবালার প্রকৃত ইতিহাস ও সঠিক শিক্ষা জানার জন্য বইটি সবাইকে পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি।
No comments:
Post a Comment