আজ ১৪ আগস্ট বর্ণ হিন্দু জমিদারদের অত্যাচার থেকে বাঙালী মুসলমানদের মুক্তির দিবস।
মুহাম্মদ নূরে আলম।
আজ ইতিহাসের ঘটনাবহুল ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট, মুসলমানদের ঐতিহাসিক পাকিস্তান দিবস। একটি কথা পরিষ্কার ভাবে জানা দরকার সেই দিন ১৪ আগস্ট পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্ম না হলে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ আমরা পেতাম না। আর সেটা সম্ভব হয়েছে জিন্নাহ নেতৃত্বে চলমান পাকিস্তান আন্দোলনে বাঙালী মুসলমানদের অংশ গ্রহণের মাধ্যমে । সেই দিন ৯৭ % বাঙালী মুসলমান পাকিস্তান আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিল । জিন্নাহ সাথে সোহওয়ার্দী কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তান আন্দোলনের নেতৃত্বে দিয়েছিল । তরুণ বয়সী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন । তবে যারা ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হতে পারেনি যেমন কাশ্মির আসামসহ ভারতের স্বাধীনতাকামী অন্যান্য জাতি তারা আজও স্বাধীন হতে পারেনি ।
১৯৪৭ সালে দুই বাংলা মিলে তৃতীয় একটি রাষ্ট্র করার পরিকল্পনা থাকলেও হিন্দুদের আন্দোলনের মুখে বাংলা ভাগ হয়ে যায়। ফলে পূর্ব বাংলার জনগণ নিজেদের অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং নিরাপত্তা জনিত কারণে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পূর্ব বাংলার তৎকালীন সময়ে একটা বিরাট ধান ক্ষেত নদী নালা, হাওড় বিল ছাড়া আর কিছুই ছিলনা । তেমন কোনো শহর বা সমুদ্র বন্দর ছিলনা । ফলে বাঙালী মুসলমান নেতৃ্বৃন্দ হোসেন শহীদ সোহওয়ার্দীর নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তানে সাথে যোগ দেওয়া সিদ্ধান্ত নেয়। যদি সেই দিন পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত না নেওয়া হতো তাহলে বাংলাদেশকে হায়দ্রাবাদের ভাগ্য বরণ করতে হতো।
পাকিস্তান আন্দোলনের সফলতার কারণে বাংলাদেশ ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ব্রিটিশ দুঃশাসন ও বর্ণ হিন্দু জমিদারদের অত্যাচার থেকে মুক্তি পায়। পরবর্তীতে ১৯৭১সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা আসে।
আজ বাংলাদেশের নিজস্ব পরিচয় আছে অর্থনৈতিক ভাবে অনেক এগিয়ে । অন্য দিকে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের বাঙালীরা আজও দিল্লির দাসত্ব করে যাচ্ছে , অর্থনৈতিক ভাবে বাংলাদেশের তুলনায় অনেক পিছনে , রাজনৈতিক ভাবে দুনিয়ার বুকে তাদের কোনো পরিচয় নাই; কারণ তারা এখনও স্বাধীন জাতি হয়ে উঠতে পারেনি ।
যারা দুই বাংলা বা যুক্ত বাংলার কথা বলে তারা অজ্ঞ জ্ঞানপাপী। কারণ সেই দিন বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে না গেলে আজকে বাংলাদেশের অবস্থা হায়দ্রাবাদ সিকিম কাশ্মির আসাম আর পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের অবস্থা থেকে বেশি ভালো হতো না। কেন হতো না? তার জন্য দুটি উদাহরণ দিচ্ছি, এক. ১৯৪৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৭০ বছর সময় অতিবাহিত হয়েছে আসাম পশ্চিমবঙ্গ ত্রিপুরায় এই রাজ্যে লাখ লাখ বাংলা ভাষী মুসলমান আছে আপনি কি কোনো বিখ্যাত কয়েকজন কবি সাহিত্যিকের নাম বলতে পারবেন? না পারবেন না, কারণ হিসেবে আপনি কি বলবেন যে সেখানে মুসলমানদের মধ্যে কোনো মেধাবী প্রতিভাধরের জন্ম হয়নি ! দীর্ঘ ৭০ বছরে ভারতে দুইজন মোটামুটি পরিচয় সম্পন্ন বাংলা ভাষী লেখকের জন্ম হয়েছে একজন সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ অপরজন আবুল বাসার ? আর কেন হয়নি আপনার মনে প্রশ্ন জাগে না ? বাংলাদেশের মুসলমানদের অবস্থাও তাই হতো যদি পূর্ব বাংলা ভারতের সাথে এক থাকতো।
পাকিস্তানের সাথে না গেলে আজকে বাংলাদেশ নামক রাষ্টের কোনো অস্তিত্ব বিশ্বে থাকতো না আর আমাদের থাকতো না নিজেদের নিজস্ব পরিচয় । দুই. একজন ভারতীয় বাঙালী মুসলিম বিখ্যাত সাংবাদিকের নাম কি কেউ বলতে পারেন ? আশা করি পারবেন ? গত ৭০ বছরে মাত্র একজন ভালো মুসলিম সাংবাদিকের জন্ম হয়েছে তিনি আহমেদ হাসান ইমরান। মানে কি আর কোনো যোগ্যতা সম্পন্ন ভারতীয় বাঙালী মুসলিম নাই যে সাংবাদিক হতে পারে? আছে কিন্তু হতে দেয়া হয়নি?। যেমনটা হতে দেয়া হয়নি ৪৭ এর আগে বাংলার মুসলমানদেরকে সর্ব দিক দিয়ে বর্ণ হিন্দু জমিদারেরা জুলুম অত্যাচার নির্যাতন করেছে, শুধুমাত্র এই দুই পেশায় নয় ডাক্তার প্রকৌশলী সেনা পুলিশ অধ্যাপক কোনো পেশায় মুসলমানদের সুযোগ দেখা হয়নি গত ৭০ বছরে ভারতে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সরকারি চাকুরিতে মুসলমানদের পরিমাণ মাত্র ২% কিন্তু জনসংখ্যা ৩০% এর উপরে । এটাই সত্য আপনি মানেন আর না মানেন। তাইলে মানে কি দাঁড়ালো বাংলাদেশের মুসলিমরা সবদিক দিয়ে যোগ্য আর ভারতীয় বাংলা ভাষী মুসলিমরা যোগ্য নয় এটা কি কোনো পাগলে বিশ্বাস করবে? না এটা বিশ্বাস যোগ্য নয় কারণ যোগ্য মুসলিম আছে তাদেরকে সুযোগ দেয়া হয়নি বা হতে দেয়া হয়নি ।
আজকের ভারতীয় বাঙালী মুসলমানদের যে অবস্থা ঠিক একই অবস্থা হতো বাংলাদেশের মুসলমানদের, যদি ৪৭ এ ১৪ আগস্ট পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলে পাকিস্তান নামক রাষ্টের জন্ম না হতো। আর স্বাধীনতা ৭১ বা ৫২ এসব তো পরের বিষয় ছিল, ভুলে যেতেন হায়দ্রাবাদের মুসলমানদের মতো চিরদিনের জন্য স্বাধীনতা কথা । ১৯৪৭ এর পর ভারতের ভিতরে হায়দ্রাবাদও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল হিন্দুদের আগ্রাসনে সেই রাষ্ট্র ছয় মাসও টিকতে পারেনি ভারত জবরদখল করে নেয়। আর ঐ সময় মুসলমানদের উপরে হিন্দুরা চালায় নিরব গুপ্ত হত্যা। যত দ্রুত আমরা ৪৭ কিংবা ভারতের মুসলমানদের প্রকৃত সঠিক ইতিহাস জানতে পারবো তো বেশি আমাদের জন্য মঙ্গলকর হবে এবং আমরা ততো বেশি দেশপ্রেমিক হয়ে ভারতীয় আগ্রাসন থেকে আমাদের প্রিয় জন্ম ভূমি বাংলাদেশ কে রক্ষা করতে পারবো।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট মুসলমানদের বিজয়কে কলঙ্কিত করতে এবং আমাদের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ঘোরাতেই ভারত বাংলাদেশে ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ড ঘটায়। এবং ভারত সব সময় অপপ্রচার করে মুসলমানরা ভারত ভাগ করে আর এটা বলার বড় কারণ দুশত বছরের মুসলমানদের উপরে হিন্দু জমিদারদের নির্যাতন অত্যাচার আর জুলুমের ঘটনা আড়াল করতে। এবং ১৯৪৭ সালে ১.৫ মিলিয়ন মানুষ হত্যার নির্মম ইতিহাস চাপা দিতে আজও ভারত ইতিহাস বিকৃত করে যাচ্ছে ।
No comments:
Post a Comment