স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে ১৩ জন সাংবাদিক খুন আহত ৭৭২ জন॥
বাংলাদেশ সাংবাদিকদের জন্যে বিপদজনক স্থান ??
সূফি বরষণ
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কণ্ঠরোধ করা হয়েছের॥ দেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, বিনা বাধায় তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে চলমান অবস্থার পরিবর্তন ঘটে না। দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলাটি সাংবাদিকদের ওপর রাষ্ট্রের দমন পীড়নের উদাহরণ। স্বেচ্ছাচারিতার সঙ্গে তাকে দুবছরেরও বেশি সময় ধরে আটক রাখা হয়েছে। ৬৮টি বানোয়াট মামলায় তিনি বিচারের সম্মুখীন। সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনীর হত্যার বিচার হয়নি ॥ আর অধিকার- এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৩ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৭৭২ জন, হামলার শিকার হয়েছেন ৭৬ জন, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৮ জনকে, অপহরণের শিকার হয়েছেন তিনজন, হুমকি দেওয়া হয়েছে ২৯৩ জনকে, চারজনকে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছে, মামলা দায়ের করা হয়েছে ১৫৫ জনের বিরুদ্ধে এবং বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৫৫ জন সাংবাদিক। সরকার বন্ধ করে দিয়েছে দৈনিক আমারদেশ পত্রিকা ॥ আরও বন্ধ করেছে চারটি টিভি চ্যানেল : চ্যানেল ওয়ান , একুশে টিভি , দিগন্ত টিভি , ইসলামীক টিভি ॥
আর দেশে প্রতিদিনই ঘটছে সাংবাদিকের ওপরে হামলা মামলা নির্যাতনের ঘটনা ॥ আর সংবাদমাধ্যমের অফিসে তল্লাশি এবং গোয়েন্দা সংস্হা সদস্যের উপস্হিতি সাংবাদিকদের স্বাধীন ভাবে কাজ করতে ভীষণ আতংকিত করে তুলছে॥ কর্মক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাংবাদিকদরা জন্যে বিপদজনক
অবস্থায় কাজ করছে ॥ প্রতি মুহুর্তের মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে সাংবাদিকদের কাজ করতে হয়॥
চিরন্তন প্রশ্নটি হলো: বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম কি স্বাধীন? এ প্রশ্নের উত্তরগুলো হয় মোটা দাগে দুই ধরনের। সরকারি কর্তৃপক্ষ দাবি করে, সংবাদমাধ্যম সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন। সব সরকারের আমলেই এমন দাবি করা হয়। কখনো কখনো অতি উৎসাহী কোনো মন্ত্রী এমন কথাও বলেন যে তাঁর সরকারের আমলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার রেকর্ড আগের যেকোনো সময়ের থেকে ভালো। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের বক্তব্য হয় ঠিক বিপরীত—স্বাধীনতার ঘাটতির অভিযোগ সব সময় উচ্চারিত হয় সাংবাদিকদের কণ্ঠে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্যারিসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ২০১৪ সালের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বৈশ্বিক সূচক প্রকাশ করে। ওই সূচকে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দেখা যায় ১৪৬। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে ভুটান, মালদ্বীপ, ভারত ও নেপালের অবস্থানও আমাদের ওপরে। আমাদের ২০১৪ সালের সূচকের ভিত্তিতে সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ দেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অবস্থা আগের দুই বছরের তুলনায় দৃশ্যত পরিবর্তিত হয়নি। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে নির্যাতন, হয়রানি ও হুমকির শিকার হয়েছেন ১১ জন সাংবাদিক। সরকারি দল ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা, সন্ত্রাসী ও পরিচয় গোপনকারীদের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পেয়েছেন নয়জন সাংবাদিক। সংবাদ প্রকাশের জন্য মামলা হয়েছে তিনটি। সন্ত্রাসীদের দ্বারা নির্যাতন, আক্রমণ, হুমকি, হয়রানি ও বোমা নিক্ষেপের শিকার হয়েছেন ১৫ জন। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের দ্বারা হামলা, নির্যাতন, হুমকি ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৭ জন। ককটেল হামলার শিকার হয়েছেন সাতজন এবং বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মেয়রদের কাছ থেকে হুমকি পেয়েছেন ৩০ জন সাংবাদিক।
স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিকদের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন মহলের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে সদ্য সমাপ্ত তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলাকালে। সেদিন সরকার-সমর্থিত প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকেরা অন্তত ছয়জন সাংবাদিককে শারীরিকভাবে আক্রমণ করেছেন, ভয়ভীতি দেখিয়ে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রেখেছেন আরও ১৫ জনকে। সাংবাদিক পেটানোর দৃশ্যগুলো চেয়ে চেয়ে দেখেছেন পুলিশের সদস্যরা। আমার এক সহকর্মী যখন মার খাচ্ছিলেন, তখন তিনি পুলিশের সাহায্য চেয়েও পাইনি ॥ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের এমন বেপরোয়া নিষ্ঠুর আচরণ ও তার দায়মুক্তির ফলে পেশাদার সমাজ বিভাজিত হয়ে পড়েছে। অনেকে চুপ থাকাটাই শ্রেয় মনে করছেন। অনেকে সরকারের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। অবশিষ্টরা সাংবাদিক হিসেবে রয়ে গিয়ে, নিজেদের জীবনের ওপর ঝুঁকি বৃদ্ধি করার সাহস দেখিয়েছেন।
পেশাদারিত্বে স্বাধীনতার অনুপস্থিতি বাংলাদেশের পেশাদার ব্যক্তিদের মধ্যে অনৈক্য
সৃষ্টি করেছে। এটি বিদ্যমান গণতন্ত্রের ঘাটতিতেও মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ
No comments:
Post a Comment