এক
জাতীয় পতাকা অবমাননা ও জায়নামাজ, জয়শ্রী এবং সাম্প্রদায়িক উসকানী দাতা কুখ্যাত খুনী বসু কে নিয়ে কিছু কথা ॥
সূফি বরষণ
জননী জন্মভূমি জাতীয় পতাকা আমার কাছে মহা পবিত্র ॥ যেখানে হাদীসে উল্লেখ আছে দেশ প্রেম ইমানের অঙ্গ॥ এইসব মহা পবিত্র বস্তুর অপমান কেউ মেনে দিতে প্রস্তুত নয় আমি তো নয় ॥
কারণ যেখানে নিজের অস্তিত্ব ও আত্মামর্যাদা জড়িত॥
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সবুজ আয়তন ক্ষেত্রের মধ্যে লাল বৃত্ত। সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক, বৃত্তের লাল রং উদীয়মান সূর্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার এই রূপটি ১৯৭২ সালের ১৭জানুয়ারি সরকারী ভাবে গৃহীত হয়। জাতীয় পতাকার অনুপাত৫:৩॥
শিল্পী কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত হয়ে বর্তমানে জাতীয় পতাকা তৈরী হয়েছে ॥
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেরসময় প্রায় একই রকম দেখতে একটি পতাকা ব্যবহার করা হতো, যেখানে মাঝের লাল বৃত্তের ভেতর হলুদ রংয়ের একটি মানচিত্র ছিল। ১২ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখে বাংলাদেশের পতাকা থেকে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলা হয়॥ পতাকার উভয় পাশে সঠিকভাবে মানচিত্রটি ফুটিয়ে তোলার অসুবিধা পতাকা থেকে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলার অন্যতম কারণ॥
পতাকার মাপঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২ অনুযায়ী জাতীয় পতাকা মাপের সুনির্দিষ্ট বিবরণ॥ নিম্নলিখিত:
‘জাতীয় পতাকা’ গাঢ় সবুজ রঙের হবে এবং পতাকার সবুজ পটভূমি হবে প্রতি হাজারে প্রোসিয়ন ব্রিলিয়ান্ট গ্রীন এইচ-২ আর এস ৫০ পার্টস এবং লাল বৃত্তাকার অংশ হবে প্রতি হাজারে প্রোসিয়ন ব্রিলিয়ান্ট অরেঞ্জ এইচ-২ আর এস ৬০ পার্টস॥
বাংলাদেশের পতাকা আয়তাকার। এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০:৬ এবং মাঝের লাল বর্ণের বৃত্তটির ব্যাসার্ধ দৈর্ঘ্যের পাঁচ ভাগের এক ভাগ, পতাকার দৈর্ঘ্যের কুড়ি ভাগের বাম দিকের নয় ভাগের শেষ বিন্দুর ওপর অঙ্কিত লম্ব এবং প্রস্থের দিকে মাঝখান বরাবর অঙ্কিত সরল রেখার ছেদ বিন্দু হলো বৃত্তের কেন্দ্র। পতাকার দৈর্ঘ্য ১০ ফুট হলে প্রস্থ হবে ৬ ফুট, লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে ২ ফুট, পতাকার দৈর্ঘ্যের সাড়ে ৪ ফুট ওপরে প্রস্থের মাঝ বরাবর অঙ্কিত আনুপাতিক রেখার ছেদ বিন্দু হবে লাল বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু।
ভবনে ব্যবহারের জন্য পতাকার বিভিন্ন মাপ হলো—১০ ফুট ৬ ফুট, ৫ ফুট ৩ ফুট, ২.৫ ফুট ১.৫ ফুট। মোটরগাড়িতে ব্যবহারের জন্য পতাকার বিভিন্ন মাপ হলো—১৫ ইঞ্চি ৯ ইঞ্চি, ১০ ইঞ্চি ৬ ইঞ্চি।
পতাকার ব্যবহারবিধিঃ
১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কলা ভবনের সামনের পশ্চিম গেটেই বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উত্তোলিত হয়॥
গুরুত্বপূর্ণ সরকারী ভবন এবং অফিসসমূহ, যেমন-রাষ্ট্রপতির বাসভবন, সংসদ ভবন প্রভৃতি, সকল মন্ত্রণালয় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সচিবালয় ভবনসমূহ, হাইকোর্টের অফিসসমূহ, জেলা ও দায়রা জজ আদালতসমূহ, বিভাগীয় কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার/কালেক্টর, চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের অফিসসমূহ, কেন্দ্রীয় এবং জেলা কারাগারসমূহ, পুলিশ স্টেশন, শুল্ক পোস্টসমূহ, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এইরূপ অন্যান্য ভবন এবং সরকার কর্তৃক সময় সময় নির্ধারিত ভবনসমূহে সকল কর্মদিবসে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ উত্তোলিত হয়। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী তাঁদের মোটরযান, জলযান এবং উড়োজাহাজে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ উত্তোলন করতে পারেন। এছাড়া প্রতিমন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ, উপমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ রাজধানীর বাহিরে দেশের অভ্যন্তরে অথবা বিদেশে ভ্রমণকালীন সময়ে তাঁদের মোটরযান এবং জলযানে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ উত্তোলন করতে পারেন॥ এই হলো মোটামুটি ভাবে আমাদের প্রিয় জাতীয় পতাকার বর্ণনা ॥
দুই
জায়নামাজ হিসেবে কি ব্যবহার করা যাবে তার সুস্পষ্ট বিধান ইসলামে থাকলেও বিষয়টি নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে।
জাতীয় পতাকা একটি দেশের পরিচিতি এবং অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশেও জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিধি রয়েছে। সেই বিধি অনুযায়ী জাতীয় পতাকাকে পদদলিত করা যায় না। সেই বিষয়ে আমি বিস্তারিত বর্ণনা করেছি ॥ আলোচিত যে ছবিতে ব্যক্তি নামাজ পড়েছেন জাতীয় পতাকা বিছিয়ে সেটা কিন্তু দেখতে পতাকার মতো হলেও আসলে সেটা কোনো ভাবেই জাতীয় পতাকার মাপের মধ্যে পড়ে না ॥ কেউ বুঝে হোক আর না বুঝে হোক অথবা কোনো উপায় না দেখে যদি জাতীয় পতাকার মতো কোনো কাপড়ে, বা অন্য কোনো বস্তুর উপরে নামাজ পড়ে সেটার বিধান কি হবে ??ঐ ব্যক্তি নামাজ পড়ে কি পতাকা সম্মান বাড়িয়েছেন না অপমানিত করেছেন তা দীর্ঘ আলোচনার পর্যালোচনার বিষয় ॥ কিন্তু আপাতত দৃষ্টিতে দেখে মনে হয়
না তিনি অপমান করেছেন ॥
সে হিসেবে জাতীয় পতাকাকে জায়নামাজ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে কি না তা নিয়েই মূলত বিতর্কের সূত্রপাত করেছে বসু ।
কিন্তু এর মধ্যে ধর্মকে টেনে এনে অশ্লীল অশোভন উসকানী মূলক বক্তব্য দেয়া সেটা কতটা যুক্তি সংগত ?? আবার আলোচিত নামাজী ব্যক্তিকে কুত্তাবাচ্চা বলে গালাগালি করে ধরে এনে ফাঁসি দেয়ার দাবি করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানো কুখ্যাত খুনী বুসরা
কি চাই॥
এরা কি এইভাবে বলেই যাবে? দেশের আইনকে দৃষ্টতা
দেখিয়ে ?॥
ফেসবুকের এক পোস্টে আলোচিত ছাত্রনেতা কুখ্যাত খুনী বাপ্পাদিত্য বসু’র একটি মন্তব্য নিয়ে কেউ কেউ সমালোচনা করছেন। অনেকেই অবশ্য বাপ্পাকে সমর্থনও করেছেন। বাপ্পাদিত্য বসু তার ফেবু আইডিতে পোস্ট করে লিখে ছিল ‘বিসিবি এন্ড পুলিশ, ফাইন্ড দিস কুত্তারবাচ্চা … এন্ড হ্যাং হিম’।’ এদিকে জাতীয় পতাকাকে জায়নামাজ বানানোর এই ছবি নিয়ে অনেকেই প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে কট্টর মন্তব্য করেন; যা প্রকারান্তরে ধর্মীয় মৌলবাদীত্বকেই উসকে দেয়।
কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন নামাজীকে কুত্তার বাচ্চা বলে গালি দিয়ে ফাঁসির দাবি কারী বসু তার ফেবুর পোষ্টটি ডিলিট করে দিয়েছে ??!!!! কিন্তু সেটা ধর্মীয় উসকানী দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে রণে ভঙ্গ দিয়েছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কারী উগ্র সাম্প্রদায়িক বসু ॥
কিন্তু এসব কি শুধুই দাঙ্গা লাগানোর জন্য নয় কি ??॥
এই বসুরা কি যুগ যুগ ধরে অবৈধ স্বৈরাচারদের সাথে থেকে মানুষ মেরে লাশের উপরে নৃত্য ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে যাবে ???! ॥
তবে ফেসবুকের বিভিন্ন মন্তব্যে অনেকেই কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোকে কড়া ভাষায় জবাবও দিয়েছেন। ধর্ম ও দেশকে এক না করারও আহ্বান এসেছে তাদের বক্তব্যে। ’
ফেসবুকে আরেকজন মন্তব্য করেছেন, দীর্ঘ সংগ্রামের পর অনেক রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে জন্ম নিয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পেয়েছে হিজল-তমাল, তরুলতা আর সবুজ-শ্যামলতায় ঘেরা রূপস বাংলাদেশ। বিশ্বের মানচিত্রে আমাদের আত্মপরিচয় ঘটেছে স্বাধীন জাতি হিসেবে॥
তিন
জাতীয় পতাকা দিয়ে মোড়ানো কুকুরের একটি ছবি নিয়ে এক সময় তোলপাড় চলেছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ধানমন্ডির একটি আর্ট গ্যালারিতে এফডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পীযুষ বন্ধোপাধ্যায়ের স্ত্রী জয়শ্রীকে জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো কুকুর কে নিয়ে এভাবে ক্যামেরার সামনে পোজ দিতে দেখা গিয়ে ছিল ॥
ফেসবুক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা একটি কুকুরের গায়ে জড়িয়ে তিনি ছবিতে পোজ দিয়েছেন। ছবিটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয় সাধারণদের মাঝেও। অনেককেই ফেসবুকে লিখতে দেখা যায়- ‘আর কী করলে জাতীয় পতাকার অবমাননা হবে?’
কেউ কেউ আবার জাতীয় পতাকার এমন অবমাননানর জন্য পীযুষ বন্ধোপাধ্যায়ের স্ত্রী জয়শ্রীর বিচার দাবি করেন। কেউবা সমগ্র জাতির কাছে জয়শ্রীকে ক্ষমা চাইতে বলেন॥
কিন্তু সেই সময় কি জয়শ্রীকে কুত্তার বাচ্চা বলে গালাগালি করে বা তাকে গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দেয়ার দাবি তুলেনি ॥ বা ফেবুতে পোস্টও করেনি উগ্র সাম্প্রদায়িক বসু॥ সেটা শুধুমাত্র একজন হিন্দু ভদ্র মহিলা বলো পার পেয়ে যাবে ??? একজন তার কুকুরকে জাতীয় পতাকা পড়িয়ে হাসিমুখে পোস্ট করছে॥ আর অন্য একজন পতাকা বিছিয়ে নামাজ পড়েছে এখন সিদ্ধান্ত আপনার কোনটা ভালো ??
চার
১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩সালে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় এই লগি বৈঠার খুনি বাপ্পাদিত্য বসু শাহবাগের নেতৃত্বে শিরোনামে নিউজ হয় ॥ পাঠকের বুঝায় সুবিধার জন্য সেই নিউজ তুলে ধরছি॥ কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ঐ নিউজের পর থেকেই আমার দেশ পত্রিকা স্বৈরাচার হাসিনার রোষানলে পড়ে এবং পত্রিকা জোর করে হাসিনা বন্ধ করে দেয়॥ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এখনও বিনা বিচারে জেলে বন্দি ॥
৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালের শুক্রবার শাহবাগে ব্লগার পরিচয়ের ছদ্মাবরণে গণমাধ্যম বন্ধের হুমকিদাতা সেই বাপ্পাদিত্য বসুর পরিচয় পাওয়া গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাওয়া বাপ্পাদিত্য ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ভয়ঙ্কর খুনি। সেদিন লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ মারার পর লাশের ওপর নৃত্য করেছিলেন তিনি। বর্তমানে ওয়ার্কার্স পার্টির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। অভিযোগ, যশোরের বাম-চরমপন্থীদের নিয়ে একটি বিশাল জঙ্গি গ্রুপ রয়েছে তার। যশোর অঞ্চলে খুন-লুটপাটের সঙ্গে জড়িত এরা। তার মামা জীবন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) দুর্ধর্ষ ক্যাডার। বর্তমানে তিনি ভারতে আশ্রিত বলে জানা যায়।
এই বাপ্পাদিত্যই এখন মিডিয়ার কল্যাণে মস্ত বড় ব্লগার ও শুদ্ধ তরুণ বনে গেছেন। তার সহপাঠী কয়েকজন জানান, বাপ্পা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই মাদকাসক্ত ছিল। ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাওয়ার পর প্রকাশ্য রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে শুরু করেন। যশোরে চরমপন্থীদের একটি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন তিনি। ২৮ অক্টোবর জামায়াতের ডাকা সমাবেশের প্রস্তুুতিকালে একদল সন্ত্রাসী তার নেতৃত্বে হামলা চালায়।
তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বাপ্পাদিত্য বলেন, সেদিন সবকিছু করা হয়েছিল গণতন্ত্র রক্ষার জন্য। বাপ্পার দাবি, সেদিন রাজপথে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিরোধ করা গিয়েছিল বলেই আজ দেশে গণতন্ত্র আছে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ২৮ অক্টোবর আমরা লগি-বৈঠা নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম। লগি-বৈঠা কিন্তু কোনো অস্ত্র না। আজ যেমন আমরা শাহবাগে বাঁশের লাঠির কথা বলছি, এটাও কোনো অস্ত্র না। বাঁশের লাঠি স্বাধীনতা রক্ষার প্রতীক। আর লগি-লগি বৈঠা গণতন্ত্র রক্ষার। আমরা সেদিন আঘাত করিনি, লগি-বৈঠা দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের মতো অপশক্তিকে প্রতিরোধ করেছিলাম মাত্র। এদিকে এই খুনির পরিচয় প্রকাশ হওয়ার পর তাকে ব্লগার পরিচয় দেয়ায় মিডিয়ার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিভিন্ন ব্লগাররা। তারা শাহবাগের আন্দোলনকে সরকারের সাজানো নাটক আখ্যা দিয়ে এর সঙ্গে তরুণ প্রজন্ম তথা ব্লগারদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেন। বাপ্পাদিত্যের পরিচয় : এই খুনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ২০০২-২০০৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়। ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করায় দ্বিতীয়বর্ষে পড়ার সময় ২০০৫ সালে ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যায় তার। তবে ২০১১ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পাসকোর্সে ডিগ্রি পাস করেন বাপ্পা। ছাত্রত্ব বাতিলের পর চরমপন্থীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বেড়ে যায়। ২০০৫-২০০৬ সালে ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ছিলেন বাপ্পা। ২০০৬-২০০৭ সেশনে ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। গত দু’মেয়াদে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
১৯৮৩ সালের ২১ আগস্ট যশোর জেলার সদর উপজেলার রুপদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন বাপ্পাদিত্য বসু। তার পিতার নাম দুলাল চন্দ্র বসু (মৃত)। তিনি রুপদিয়া স্কুলে পড়াশোনা করেন। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালে বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়ান। এ সময় ধীরে ধীরে চরমপন্থীদের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। একই সময়ে বামপন্থী সংগঠন অরুণোদয় সাংস্কৃতিক সংস্থায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেন তিনি। রুপদিয়া স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন বসু। যশোরের সিঙ্গিয়া আদর্শ ডিগ্রি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর ঢাকায় চলে আসেন। তারা তিন ভাই এক বোন। একমাত্র বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। ভাইদের মধ্যে বাপ্পা বড়। তার এক ভাই একটি কম্পিউটার দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। বসুর বাবা দুলাল চন্দ্র বসুরা তিন ভাই। এক ভাই সপরিবারে ভারতে থাকেন। অপর ভাই মারা গেছেন। এলাকায় বসুর পরিচিতি তেমন নেই। তবে ২৮ অক্টোবর পল্টনে লগি-বৈঠার তাণ্ডবের পর এলাকার মানুষ তাকে চিনতে শুরু করেন। বেশিরভাগ মানুষই তাকে চেনেন ২৮ অক্টোবরের খুনি হিসেবে।
যশোরের স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, যশোর অঞ্চলে এখন আর আগের মতো সুবিধা করতে পারছে না চরমপন্থীরা। তাই বাপ্পাদিত্যের মতো দুষ্কৃতিকারীরা অন্যান্য অঞ্চলের চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। তার মামা জীবন চরমপন্থী সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) সক্রিয় ক্যাডার। বর্তমানে তিনি ভারতে আশ্রিত আছে বলে জানা যায়। ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে সরকারের আহ্বানে সাড়া
পাঁচ
দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন জীবন। পরে আবার সশস্ত্র আন্দোলনে ফিরে যান।
তিনি জানান, প্রতিবছর ২৮ অক্টোবর জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে যেসব পোস্টার বের হয় সেখানে বাপ্পার ছবি থাকে। আমাদের এলাকায় প্রচুর পোস্টার সাঁটানো হয়। সেই পোস্টার দেখেই মানুষ তাকে চিনে। ঢাকায় রাজনীতি করলেও এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তবে আন্ডারগ্রাউন্ড কিছু সংগঠনের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রয়েছে বলে শোনা যায়।
ছাত্রত্ব বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, ছাত্রদলের হামলায় ক্যাম্পাসে এসে পরীক্ষা দিতে না পারায় আমার ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যায়। পরে টিএন্ডটি কলেজ থেকে পাসকোর্সে ডিগ্রি পাস করি।
সেদিন বাপ্পাদিত্য বসু ব্লগার পরিচয়ে মঞ্চ থেকে দৈনিক আমার দেশসহ কয়েকটি গণমাধ্যম বন্ধের হুমকি দেন। তিনি বেশ কয়েকটি ইসলামী প্রতিষ্ঠান বন্ধেরও দাবি জানান। তার এমন ঔদ্ধত্য দেখানো নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। পাঠক জানতে চান কে এই ব্লগারবেশী প্রতিক্রিয়াশীল বাপ্পাদিত্য বসু। পরে আমার দেশ-এর এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বাপ্পাদিত্যের আসল পরিচয়। সে ব্লগার বেশ ধারণ করা এক ভয়ঙ্কর খুনি। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টনে জামায়াত-শিবির কর্মীদের লগি-বৈঠা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যার পর তাদের লাশের ওপর নৃত্য করেছিলেন এ বাপ্পাদিত্য বসু ।
ছয়
সেই তথাকথিত ব্লগারদের আন্দোলন যে সাড়ানো নাটক ছিল ॥ তা আপনারা বুঝতে পারবেন নিচে ভুইফুর বায়োবীয় কথিত সংগঠনের নাম দেখে॥ এরা আসলে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশে ধর্মীয় দাঙ্গা লাগাতে চাই॥ তার প্রমাণ দেশবাসী ইতিমধ্যেই পেয়েছে ॥ কুখ্যাত খুনী কথিত ব্লগার বসুদের ষড়যন্ত্র মূলক সংগঠনের তালিকা ( গণজাগরণ মন্জ) নিচে তুলে ধরলাম ॥
১. বাংলাদেশ ছাত্র সমিতি (আহবায়ক: জাহিদুর রহমান খান)
২. বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) (যোগ দেয়ার সময় সভাপতি: হোসাইন আহমেদ তফছির, সাধারণ সম্পাদক: সামছুল ইসলাম সুমন, পরবর্তীতে – সভাপতি: সামছুল ইসলাম সুমন, সাধারণ সম্পাদক: শাহজাহান আলী সাজু)
৩. বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (সভাপতি: এস এম শুভ, সাধারণ সম্পাদক: হাসান তারেক)
৪. ছাত্রমৈত্রী
৫. বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (সভাপতি: প্রবীর সাহা, সাধারণ সম্পাদক: সৈকত মল্লিক)
৬. সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (যোগ দেওয়ার সময় সভাপতি: সাইফুজ্জামান সাকন, সাধারণ সম্পাদক: মেহেদী হাসান তমাল, পরে এটি দুই ভাগে বিভক্ত হয় – একাংশ সভাপতি: সাইফুজ্জামান সাকন, সাধারণ সম্পাদক: স্নেহার্দী চক্রবর্তী রিন্টু (এরা এখন আন্দোলনে নেই), আরেকাংশ – সভাপতি: জনার্দন দত্ত নান্টু, সাধারণ সম্পাদক: ইমরান হাবিব রুমন)
৭. বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী (যোগদানের সময় সভাপতি: আব্দুর রউফ, সাধারণ সম্পাদক: হিল্লোল রায়, পরবর্তীতে আহবায়ক: ফয়সাল ফারুক অভীক, যুগ্ম আহবায়ক: সবুজ সরকার)
৮. বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন (সভাপতি: মঞ্জুর রহমান মিঠু, সাধারণ সম্পাদক: নজরুল শিকদার)
৯. ছাত্র সংহতি
১০. বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (এখন নেই, সভাপতি: এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক: সিদ্দিকী নাজমুল আলম)
১১. ছাত্র ঐক্য ফোরাম (আহবায়ক: সোহান সোবহান)
১২. ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি
১৩. ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফিল্ম সোসাইটি
১৪. ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি
১৫. উদিচী
১৬. সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট
১৭. আবৃতি সমন্বয় পরিষদ
১৮. খেলাঘর
১৯. মুক্তির উদ্যোগ
২০. জাতীয় সঞ্চালন পরিষদ
২১. বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
২২. যুব ইউনিয়ন
২৩. যুব জোট (জাসদ)
২৪. স্বাচিপ
২৫. এফবিসিসিআই
২৬. বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সংগঠন
২৭. জাতীয় স্বার্থে ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট
২৮. ছায়ানট
২৯. তরিকত ফেডারেশন
৩০. পেশাজীবি সমন্বয় পরিষদ
৩১. বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ
৩২. একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি
৩৩. বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী (সভাপতি: বাপ্পাদিত্য বসু, সাধারণ সম্পাদক: তানভীর রুসমত)
৩৪. জাগরণের সাংস্কৃতিক মঞ্চ
৩৫. ব্লগার এণ্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক
এর মধ্যে জাগরণের সাংস্কৃতিক মঞ্চ আসলে শাহবাগ আন্দোলনের জন্যই গণজাগরণ মঞ্চের পরিপূরক হিসেবে তৈরি হয়েছে। এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সংখ্যা ২৫। এর পর আর বেড়েছে কিনা জানতে পারিনি। সংগঠনগুলি হল (হিসেবের সুবিধার জন্য আমি ক্রমিক নম্বর আগের তালিকা থেকেই শুরু করেছি):
৩৬. সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন
৩৭. সংস্কৃতির নয়াসেতু
৩৮. গণশিল্পি
৩৯. স্লোগান ৭১
৪০. তীরোন্দাজ
৪১. প্রজন্মের গান
৪২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ
৪৩. সাংস্কৃতিক মৈত্রী
৪৪. সেক্টর ৩৩
৪৫. জানাহারা ইমাম স্কোয়াড
৪৬. শাহবাগের সাইবারযুদ্ধ
৪৭. রুটস
৪৮. রুমি স্কোয়াড
৪৯. তারুণ্য ১৩
৫০. মুভ্যিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি
৫১. ফাঁসির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৫২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ
৫৩. সার্কেল শাহবাগ
৫৪. ক্র্যাক প্লাটুন
তথ্যসূত্রে বাকি ৬টি সংগঠনের নাম ছিল না। খুবই দু:খজনক।
এই সংগঠনগুলোর সবই যে সব সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণের মিটিংয়ে ছিল তা নয়। মঞ্চের মূল সিদ্ধান্তগুলো আসলে সবসময়ই ( এখন পর্যন্ত) এসেছে বোয়ান আর ছাত্র সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে। কোন সংগঠন সমাবেশে নিয়মিত হলেও মিটিংয়ে আসেনি। আবার উল্টোটি হয়েছে। আমাদের প্রজন্মের প্রথম গণআন্দোলন এই ব্যাপারটি মাথায় রাখলে এটি খুবই স্বাভাবিক। ছাত্রলীগ ছাড়া বাকি সব ছাত্র সংগঠন এখনও একই সঙ্গে বোয়ানের পাশাপাশি সক্রিয়ভাবে আছে। এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবে কিনা তা নিয়ে বিতর্কের কারণে ছাত্রফ্রন্ট ভেঙে দুই টুকরা হয়েছে।
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ
No comments:
Post a Comment