স্বৈরাচার এরশাদের পথেই হাঁটছে স্বৈরাচারীনি হাসিনা ॥
এরশাদের মতো তৈরী করা হচ্ছে উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ??!!
সূফি বরষণ
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। আর স্বৈরাচার হাসিনাও বিনা ভোটে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখে॥ রাজনৈতিক দলগুলো এরশাদের এভাবে ক্ষমতা দখলকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা না করে অনেকটাই নীরবে মিলিটারি স্বৈরশাসন মেনে নিতে বাধ্য হয়। রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নিলেও ছাত্ররা মেনে নেননি এই সামরিক অভ্যুত্থান। সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতায় ছিল আট বছর ২৫৬ দিন। এ সময় দেশের হাজার হাজার মানুষ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবরণ করেছে। হত্যা-গুমের শিকার হয়েছে অসংখ্য নারী-পুরুষ। আর অপরদিকে হাসিনার দুঃশাসের প্রতিবাদ করে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৩০ হাজার বিরোধী দলের নেতা কর্মী ॥ জেলে বন্দী আছে কয়েক লাখ॥ আর স্বৈরাচার হাসিনার জন্যও আট বছর ২৫৬ দিন শেষ দেখার পালা॥ কারণ পাপের বোঝা স্বৈরাচার হাসিনা অনেক বেশি জমিয়ে ফেলেছে যেটা এরশাদের চেয়ে অনেক বেশি ॥ আর আজ হোক কাল হোক দেনা তো সুদ করতেই হবে॥
সেই সময় শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ছিল উপ প্রধানমন্ত্রী( ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বর হতে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার এরশাদের পতনের দিন পর্যন্ত )॥ আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য দপ্তর হারানো মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি উপপ্রধানমন্ত্রী করে হঠাৎ সৃষ্ট সংকট সমাধানের কথা আলোচনা হচ্ছে সরকারি দল আওয়ামী লীগে। তবে সরকার ব্যবস্থায় নতুন করে উপপ্রধানমন্ত্রী পদ সৃষ্টি করে তাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে॥
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সৈয়দ আশরাফকে ডেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথা বলেছেন। ওই বৈঠকের বিষয়ে সরকার বা আওয়ামী লীগের কেউ কিছু না বললেও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তার লন্ডনযাত্রা আপাতত পিছিয়েছেন। গত বুধবারই তার লন্ডন যাওয়ার কথা ছিলো।
সরকার এবং আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, দু’টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের যে কোনো একটি বেছে নিতে বলার পাশাপাশি সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দলের মতো সরকারেও এমন অবস্থানের কথা বলা হয়েছে । যেখানে প্রধানমন্ত্রীর পরেই হবে তার অবস্থান।
সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন ইঙ্গিতে উপপ্রধানমন্ত্রী পদ সৃষ্টি নিয়ে যে আলোচনা তাতে বিশ্লেষকরা ইতিবাচক বলে শুনা যাচ্ছে ॥ উপপ্রধানমন্ত্রী নামে কোনো পদ সংবিধানে নেই। এমন কোনো মন্ত্রিত্বের উল্লেখও নেই সংবিধানে। তবে সরকার চাইলে নিশ্চয়ই সেটা করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সেক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সেটা নিশ্চয়ই খুব জটিল কিছু হবে না স্বৈরাচার হাসিনার কাছে॥
এরশাদ সরকারের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিশেষত ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মিছিলে পুলিশের গুলিতে ছাত্র নিহত হওয়ার পর থেকেই দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে ওঠে॥
এরশাদের সামরিক শাসন জারির প্রথম দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেন। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে এ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে পোস্টার লাগাতে গিয়ে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর তিন সদস্য গ্রেফতার হন। এই ছাত্রনেতারা হলেন শিবলী কাইয়ুম, হাবিবুর রহমান ও আব্দুল আলী। পরে সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতে তাঁদের সাত বছরের কারাদণ্ড হয়। সেই থেকে শুরু হয় সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আপসহীন লড়াইয়ের দিনগুলো।
ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবসে সাভারের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে গিয়ে শহীদ বেদিতেই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। মিছিলের খবর শুনে সাভার সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনী চলে আসে, স্মৃতিসৌধে ছাত্রদের ওপর চলে নির্মম নির্যাতন।
সরকারি ফরমান ও তৎপরতার কারণে সে সময় সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়লেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে লাল-কালো অক্ষরে এরশাদের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে দেয়াল লিখন অব্যাহত থাকে। ছাত্রদের দেয়াল লিখন সমানে মুছতে থাকে সামরিক সরকারের তল্পিবাহক পুলিশ বাহিনী। পুলিশ যত দেয়াল সাদা চুন টেনে মুছে ফেলে, ছাত্ররা ততই দেয়াল লিখন চালিয়ে যেতে থাকে। এভাবেই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে চলছিল দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রামের প্রাথমিক প্রস্তুতি। বর্তমানে দেয়াল লিখনের ধরন পাল্টেছে এখন ফেইস বুকের দেয়ালে প্রতিদিন স্বৈরাচার হাসিনার বিরুদ্ধে লেখা হচ্ছে ॥ প্রতিবাদও কিন্তু সেটা কুখ্যাত খুনী হাসিনার মারমুখি অবস্থার কারণে বিদেশের মাটিতে হচ্ছে ॥ বাংলাদেশের সমাজেও কোনো পরিবর্তন হঠাৎ করে আসবে না ॥ সমাজে প্রথমে আসে আবর্তন এর পর আসে বিবর্তন তার পর হয় পরিবর্তন ॥ আর সেই পরিবর্তন দেখার অপেক্ষা ॥
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ
No comments:
Post a Comment