Saturday 22 April 2017

পদ্মার গতিপথ কৌশলে ঘুরানো হচ্ছে ভারতে, রূপ নিচ্ছে যৌথ নদীতে


পদ্মার গতিপথ কৌশলে ঘুরানো হচ্ছে ভারতে, রূপ নিচ্ছে যৌথ নদীতে

গত কয়েক বছর ধরে প্রমত্তা পদ্মার গতিপথ কৌশলে পরিবর্তন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভারতীয় সীমান্তে। ফলে পদ্মা রূপ নিচ্ছে যৌথ নদীতে। ভারতের মরণবাঁধ ফারাক্কার দ্বারা ভারতীয়রা কৌশলে একাজটি করছে। ভারতীয়রা ফারাক্কার পানি বর্ষাকালে এমনভাবে ছাড়ে যেন বাংলাদেশের চরাঞ্চলে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়ে নদী ভারতের দিকে ঢুকে যাচ্ছে। এতে রাজশাহী সীমান্তে ভূ-খণ্ড হারাচ্ছে বাংলাদেশ।

 ফলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে রাজশাহী সীমান্তের পদ্মা চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের। বংলাদেশী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষায় এবার নদীর ভাঙন ঠেকানো না গেলে ভূ-খ- হারানোর পাশাপাশি পদ্মার একক আধিপত্য হারাতে হবে বাংলাদেশকে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আগামী বছর থেকে নিয়মিত ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ ফিরিয়ে স্বাভাবিক করতে বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে।

বছর দশেক আগে শুষ্ক মৌসুমেও পদ্মায় থৈ থৈ করতো পানি। কিন্তু এখন সে চিত্র বদলে গেছে। শহররক্ষা বাঁধ থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে চলে গেছে নদীর গতি প্রবাহ। ফারাক্কা গেট খুলে দেয়ায় বর্ষা মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তখন প্রমত্তা এই নদীর বিপুল স্রোতে কখনও শহর রক্ষা বাঁধ কখনও বা ভাঙ্গন ধরে দক্ষিণ চরাঞ্চলে।

ফারাক্কার পানি ছাড়ার কৌশলের কারণে গত কয়েক বছরের অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে এখন মূল শহর থেকে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে বিপরীত দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দক্ষিণ চরাঞ্চল খানপুর, খিদিরপুর ও চর মাজারদিয়া সংলগ্ন সীমান্তরেখা অতিক্রম করে কোন কোন জায়গায় নদীর গতি প্রবাহ ভারতীয় সীমান্তরেখার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। ওই অংশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলে ও চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলেন, নদীটা আগে ছিল শহরের কেন্দ্রস্থলে আমাদের চরের দিকে চলে আসছে। আবার অনেক সময় ভেঙ্গে ভারতের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে। আমাদের নদীর যে গতি তাতে ভারতের মধ্যে দিয়ে ঢুকতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে নিজেদের ভূ-খ- হারানোর পাশাপাশি পদ্মার একক আধিপত্যও হারাতে হবে বাংলাদেশকে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু বলেন, ‘যদি নদী সম্পূর্ণভাবে ভারতের সীমানার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, ভৌগোলিকভাবে আমরা সীমানা রেখা অতিক্রম করতে পারবো না। আমাদের আধিপত্য খর্ব হবে। রিভার ড্রেজিং করতে পারলে আমরা নদীকে এখনো আমাদের দিকে রাখতে পারবো।’ তবে সঙ্কট উত্তরণে আগামী বছর থেকে নদীতে নিয়মিত ড্রেজিং করার কথা জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘আপাতত আমরা ওই খানে যাচ্ছি না। আমরা বাম পার্শে ড্রেজিং করে সুদৃঢ় করতে চাই। যেন আর ডান পার্শে না ভাঙ্গে।’ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বর্ষায় ফারাক্কা দিয়ে আসা দেড় বিলিয়ন টন পলি মাটি জমে শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুকে জাগে বিশাল চর।

No comments:

Post a Comment