Saturday 22 April 2017

আমাদের রবীন্দ্রনাথ কেমন ছিলেন ??



আমাদের রবীন্দ্রনাথ কেমন ছিলেন ??

 "... আমার নিন্দা আমি রবীন্দ্রনাথের দোষ খুঁজে বেড়াই। কিন্তু আমিই যে কেবল পাকিস্তান আমলে লিখিতভাবে রবীন্দ্রনাথকে পাকিস্তানে তথা পূর্ববঙ্গে স্মরণীয় বরণীয় প্রয়োজনীয় ও আমাদের অস্তিত্বের অপরিহার্য অংশ হিসেবে জানাতে, বোঝাতে ও মানাতে চেয়েছি, যখন ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ থেকে ছোট-বড়-মাঝারি লেখকরাও নতুন কিছু লিখতে সাহসী ছিলেন না, [ সাক্ষ্য-প্রমাণ মিলবে ডক্টর আনিসুজ্জামান-সংকলিত ১৯৬১ সনের রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকীর স্মারকগ্রন্থে কিছুটা ] সে সময়েই আমি লিখেছি, আমি রবীন্দ্রনাথের ভাষায় কথা বলি, আমার ভাষায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, আমার এ সৌভাগ্যের তুলনা নেই।

রবীন্দ্রনাথ যদি শুধু কবি হতেন তা হলে তার বিভিন্ন কবিতাকে ভালো-মন্দ-মাঝারি বলে বিচার ও আস্বাদন করার কথা বলাতে শেষ হত বক্তব্য। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ শুধু নিছক রোমান্টিক কবি নন। তিনি একজন বাস্তবের কঠিন মর্ত্যজীবনের অভিজ্ঞ, জ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান, জীবন-জীবিকা, সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি, সামান্ত-বেণে-বুর্জোয়া সংস্কৃতি সচেতন [ রবীন্দ্রনাথ রূপোর থালাবাসন-চামচে-গ্লাসে খেতেন ] অনন্য, অসামান্য, অসাধারণ শক্তিমান সর্বোতমুখী প্রতিভাবান ও সৃষ্টিশীল লেখক, চিন্তক, প্রচারক, উদ্ভাবক ও দেশিক। তাতে গোটা ভারতের ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন আছে, আছে আচন্ডাল ব্রাহ্মণ, আছে নানা গোত্রের ও মতবাদের হিন্দু-বৌদ্ধ-রাজপুত্র, মারাঠা-শিখ সবাই আছে, নেই মুসলমান। তাই আমার ধারণা হয়েছে যে তার সৃষ্টির জগতে ও মনোজগতে ইসলাম ও মুসলিম সম্বন্ধে একটা অবজ্ঞার-দ্বেষণার ভাব বদ্ধমূল ছিল। তাই তিনি ছয়শ বছরের মুসলিম রাজত্বকে উপদ্রব এবং মুসলিমদের অভারতীয় বলে অন্তরে জানতেন।

রূঢ়বাস্তবের তাগিদেই কেবল বাস্তব রাজনীতি-ক্ষেত্রে মুসলিম জনসংখ্যা-প্রধান বাঙলায় হিন্দুর স্বার্থেই ভাবী বিপদ-মুক্তির লক্ষ্যেই মুসলিমদের প্রতি উদার হতে, তাদের চাকরি বেশি দিয়ে তাদের তুষ্ট করতে বলেছেন হিন্দুদের। যেমন বর্ণহিন্দুর স্বার্থে তাদেরও সতর্ক করে দিয়েছেন 'অপমান ও অপমানিত' কবিতায়।

আমার অভিযোগ-অনুযোগ-নালিশ-সালিশ হচ্ছে প্রবন্ধকার রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে যেখানে তার গোড়ার দিকের প্রবন্ধে [ ১৯০৩-৪ থেকে ১৯১৬ সন অবধি অন্তত ] কেবল হিন্দু চেতনাই প্রবল ও প্রধান। বিশ্ববন্দ্য হয়েও তিনি কখনো ভুলতে পারেননি যে তিনি ব্রাহ্ম-পুরোহিত। মানুষের ধর্ম বা Religion of Man বক্তৃতা রচনা করেও কিন্তু তিনি ওই স্তরের মন-মনন নিজের জন্যে তৈরি করতে পারেননি। তার সমাজ ও রাষ্ট্রচেতনাও ছিল না সুষ্ঠ। রাষ্ট্রিক-দৈশিক জাতীয়তাবোধ তিনি পছন্দ করেননি। স্বাধীনতাও তার কাম্য ছিল না বটে। তবে তিনি যে হিন্দু ও ব্রাহ্ম তা কখনো ভুলতে পারেননি তার বাস্তবজীবনের কথায় ও কাজে। তিনি কবি-লেখক-স্রষ্টা হিসেবে সর্বতোমুখিতায় বিশ্বে অনন্য, কিন্তু ব্যক্তিমানুষ হিসেবে তিনি তুলনায় বড় মনের ও বড় মাপের ছিলেন না - তুলনায় কোন কোন ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম, বিবেকানন্দও বড়মনের ও বড় মাপের চিন্তক ছিলেন বলে মনে হয়।

অতএব, বাস্তব জীবনে, সমাজে, শিক্ষায়, বিশ্বাসে নীতিতে, আদর্শে, শাস্ত্রে, আচারে, লক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ভিন্ন মনের, মতের, পথের ও লক্ষ্যের নাগরিক। নামত বাহ্যত বাঙালী ও বাঙলাভাষী হলেও কার্যত তিনি বাঙলার কোন অভিন্ন জাতিত্বের, সংস্কৃতির, আদর্শের, নীতির ও লক্ষ্যের প্রতীক, প্র্তিম ও প্রতিভূ ছিলেন না। এ তাৎপর্যে তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণ্য বা হিন্দু স্বার্থের রক্ষক, হিন্দু সংস্কৃৃতির ও শাস্ত্রের প্রতিনিধি, হিন্দু অতীত ও ঐতিহ্যের গুণ-গৌরব-গর্বের প্রচারক, উৎকর্ষসাধক ও প্রসারক। সুতরাং মুসলিমরা বাহ্য, ব্যবহারিক, বৈষয়িক ও ঐতিহ্যিক আর সাংস্কৃতিক, আচারিক জীবনে রবীন্দ্রনাথের অবদানে উপকৃৃত হয়নি প্রত্যক্ষভাবে, যদিও তার প্রতিভা ও উঁচু মানের চিন্তার প্রভাবে হয়তো কিছু উন্নত হয়েছে মুসলিম পাঠকের চিন্তা-চেতনা, মন-মনন॥" - ২১/০২/১৯৯৯

- আহমদ শরীফ / আহমদ শরীফের ডায়েরি : ভাব-বুদ্বুদ ॥ [ জাগৃতি প্রকাশনী - ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ । পৃ: ২০৩-২০৪ ]

 #০২
 "... রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি হইয়াও পাক-বাঙলার জাতীয় কবি নন। বাংলাদেশ ভাগ হওয়ার পর এটা রাষ্ট্রীয় সত্য হইয়াছে নিশ্চয়ই। কিন্তু বিভাগ পূর্ব বাংলাদেশেও এটা সাহিত্যিক সত্য ছিল। পাকিস্তান হওয়ার তিন বছর আগে ১৯৪৪ সালে কলিকাতার বুকে দাঁড়াইয়া এক সভাপতির ভাষণে আমি বলিয়াছিলাম : " বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের বিশ্ব ভারতীয় বিশ্বে কতবার শারদীয়া পূজায় 'আনন্দময়ী মা' এসেছে গিয়েছে, কিন্তু একদিনের তরেও সে বিশ্বের আকাশে মোহরমের চাঁদ উঠেনি।"

এটা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের প্রতি অশ্রদ্ধা-অপমানের কথা নয়। রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি হইয়াও বাংলার জাতীয় কবি নন। বাংলার জাতীয় কবি নন তিনি এই সহজ কারণে যে বাংলায় কোনও 'জাতি' নাই। আছে শুধু হিন্দু-মুসলমান দুইটা সম্প্রদায়। তিনি বাংলার জাতীয় কৃষ্টির প্রতীক নন এই সহজ কারণে যে, এখানে কোনও জাতীয় কৃষ্টিই নাই। এখানে আছে দুইটা কৃষ্টি : একটা বাংগালী হিন্দু-কৃষ্টি অপরটি বাংগালী মুসলিম-কৃষ্টি। সমগ্র বাংলায় মেজরিটি ছিল মুসলমান। মেজরিটি দেশবাসীর সাথে নাড়ীর যোগ না থাকিলে কেউ জাতীয় কবি হইতে পারেন না। বিশ্বের কাছে তিনি য্ত বড়ই হউন। এটা পশ্চিম-বাংলার কৃষ্টি সাহিত্যের প্রতি অবজ্ঞাও নয়। রবীন্দ্রনাথ বিশ্ব-কবি হিসাবে আমাদের নমস্য। সর্ব অবস্থায় তা থাকিবেন। যুদ্ধেও থাকিবেন, শান্তিতেও থাকিবেন। এই খানেই সীমারেখার সূক্ষ্ম জ্ঞানের প্রয়োজন। ভারতের সংগে যুদ্ধ বাধিলেই রবীন্দ্রনাথের গান-কবিতা নিষিদ্ধ হইবে এটা যেমন দোষণীয়, শান্তি হইলেই রবীন্দ্র-পূজা শুরু হইবে এটাও তেমনি দূষণীয়।

পশ্চিম বাংলার সাহিত্য উন্নত সাহিত্য হিসাবে নিশ্চয়ই আমাদের অনুকরণীয়। কিন্তু তা আমাদের নিজের সাহিত্য নয়। অমন মোহ যদি থাকে তবে তা ঝাড়িয়া ফেলিতে হইবে। আমাদিগকে অবিলম্বে আমাদের নিজস্ব জাতীয় ঐতিহ্য ও কৃষ্টির রিডিসকভারি করিতে হইবে নতুন জাতির মন লইয়া। সে রিডিসকভারি রূপায়ণেই আমাদের জাতীয় সাহিত্য রচিত হইবে নয়া যিন্দিগীর বাণী বহন করিয়া। বাংগালী হিন্দুর রেনেসাঁ যুগের মতো আমাদের মধ্যেও বাংগালী মুসলিম রেনেসা্ঁর বংকিম-রবীন্দ্র ও রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের জন্ম হইতে হইবে।

তরুণরা ভুল বুঝিবেন না। এটা পিছন ডাক নয়। এটা সামনে চলার আহ্বান। রিভাইভাল নয়, রেনেসাঁ। এটা বাদশাহি আমলে বা খিলাফত যুগে ফিরিয়া যাওয়ার পরামর্শ নয়। ওটা হইবে অবাস্তব। ভ্রান্ত মরিচীকা। দুনিয়া আজ প্রগতি ও সাধনার পথে অনেক অনেক দূর আগাইয়া গিয়াছে। আমাদেরও সে প্রগতির নাগাল ধরিতে হইবে। তার শরিক হইতে হইবে। কাজেই গতি হইবে আমাদের অতি দ্রুত। আমাদের কালচারকেও আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক হইতে হইবে। এটা ফিউডাল যুগ নয়, গণতন্ত্রের যুগ। আমাদের কালচারকেও তাই গণ-ভিত্তিক হইতে হইবে। এটা কৃষি-যুগ নয়, এটা এটা শিল্প-যুগ। কাজেই জনগণও আজ আর শুধু কৃষক নয়, তারা মিল-মজুরও বটে। শিল্পও আর শুধু আর্বান ইন্ডাষ্ট্রী নয়, রুরাল ইন্ডাষ্ট্রীও তার শক্তিশালী শরিক। কালচারের ধারক যে পল্লীগ্রাম, তাও আর আগের পল্লী নাই। শহর ও পল্লীর ব্যবধান দ্রুত সংকীর্ণ হইতেছে। কালচার ও সিভিলিযেশনের মধ্যে তাই নতুন করিয়া সমঝোতা হইতেছে।

পাক-বাংলার কৃষ্টিক রেনেসাঁ হইবে এই পরিবেশে। সে কৃষ্টি-সাহিত্যের ইমারত গড়িয়া উঠিবে আধুনিক মাল-মসলাতেই। তার বুনিয়াদ হইবে পাক-বাংলার মাটিতে, রূপ-রস-গন্ধে হইবে তা অপূর্ব। সে কৃষ্টি-সাহিত্য রূপে হইবে বাংগালী, রসে হইবে তা মুসলিম, আর গন্ধে হইবে তা বিশ্বজনীন।

... পূর্ব-পাকিস্তান অর্থাৎ বাঙলা ও আসামের সাহিত্য বলতে আজ আমরা যা বুঝি তা বিদ্যাসাগর-বঙ্কিমচন্দ্র থেকে রবীন্দ্র-শরৎচন্দ্র যুগের সাহিত্যিকদের সাহিত্য। এটা খুবই উন্নত সাহিত্য। বিশেষত: রবীন্দ্রনাথ এ সাহিত্যকে বিশ্ব-সাহিত্যের দরবারে স্থান দিয়ে গেছেন।

তবু এ সাহিত্য পূর্ব-পাকিস্তানের সাহিত্য নয়। কারণ এটা বাঙলার মুসলমানের সাহিত্য নয়। এ-সাহিত্যে মুসলমানদের উল্লেখযোগ্য কোন দান নাই। অর্থাৎ এ-সাহিত্য থেকে মুসলিম সমাজ কোনো প্রেরণা পায়নি এবং পাচ্ছে না। এর কারণ আছে। সে কারণ এই যে এ-সাহিত্যের স্রষ্টাও মুসলমান নয়, এর বিষয়বস্তুও মুসলমান নয়। এর স্পিরিটও মুসলমান নয়, এর ভাষাও মুসলমানের ভাষা নয়।

প্রথমত: এ সাহিত্যের স্পিরিটের কথাই ধরা যাক। এ সাহিত্য হিন্দু-মনীষির সৃষ্টি। সুতরাং স্বভাবতই হিন্দু সংস্কৃতিকে বুনিয়াদ করেই তারা সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন। ঠিকই করেছেন তারা। নইলে ওটা জীবন্ত সাহিত্য হতো না। হিন্দু ধর্মেরই সন্তান। হিন্দু ধর্ম ত্যাগ, বৈরাগ্য ও মুনি ঋষির ধর্ম। হিন্দুর সংস্কৃতিও তাই ত্যাগ, প্রেম ও ভক্তিবাদের সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতির বুনিয়াদ প্রতীক পূজা। কাজেই হিন্দুর শিল্পী মন সুন্দরের পূজারী। এতে করে এই বাঙলা সাহিত্যের প্রাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সত্যম শিবম সুন্দরমের সাধনা। সে সাধনার কামনা হচ্ছে "আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণ-ধুলার তলে।" সুন্দর ও প্রতীক-পূজারী এই রসিক মন স্বচ্ছন্দে "আর্টের জন্যই আর্ট" এই মতবাদ প্রচার করেছে। প্রতীক পূজারী নিত্যানন্দ রস-পিপাসু মন স্পন্দিত হয়েছে পরকীয়া প্রেমে। আত্মার তসল্লির জন্য ভক্তিবাদ ও আর্ট বাদের মিল ঘটাইবার উদ্দেশ্যে রাধা-কৃষ্ণ প্রেমের সৃষ্টি হয়েছে। এইভাবে বাঙলা সাহিত্য গড়ে উঠেছে নারী-প্রেমকে কেন্দ্র করে। নারী এখানে সৌন্দর্যের প্রতীক। নারী-প্রেমের সাধনা করতে গিয়ে নারী-মনকে করে তোলা হয়েছে গভীর রহস্যপুরী। সে দূজ্ঞেয় রহস্যপুরীর ঘুমন্ত নারী প্রেমকে জাগাবার সোনার কাঠির সন্ধানে গোটা তরুণ-বৃদ্ধ জাতীয় মনকে তোলা হয়েছে ক্ষেপিয়ে। ক্রমে শিল্পীর তুলিতে বৈরাগ্য ভক্তি-প্রেম প্রভৃতি হিন্দু সংস্কৃতির বড় বড় মহান মূল সূত্রগুলিও শিল্পিত হয়ে উঠেছে নারী-প্রেমকে কেন্দ্র করেই। ত্যাগের আদর্শ, বৈরাগ্যের আদর্শ, ভক্তিবাদের আদর্শ, প্রেমের আদর্শ সমস্তই উঁচু দরের আদর্শ। এইসব আদর্শকে বুনিয়াদ করে নারী-প্রেমকে কেন্দ্র করে হিন্দু শিল্প-মনীষা যে সাহিত্য রচনা করেছে, সে সবই হযেছে উচ্চাঙ্গের সাহিত্য এবং তা পড়ে অপর সকলের মতই মুসলমান রস-পিপাসীরাও পিপাসা নিবারণ করে থাকে।

কিন্তু সত্য কথা এই যে, ঐ সাহিত্যকে মুসলমানরা তাদের জাতীয় সাহিত্য মনে করতে পারে না। কারণ ত্যাগ-বৈরাগ্য-ভক্তি-প্রেম যতই উঁচুদরের আদর্শ হোক, মুসলমানের জীবনাদর্শ তা নয়। হিন্দুর ধর্ম যেমন ত্যাগ বৈরাগ্য মুনি-ঋষির ধর্ম, মুসলমানের ধর্মও তেমনি হক-ইনসাফ ও জেহাদ-শহীদের ধর্ম। প্রতীকবাদী সুন্দর-পূজারী আর্টবাদী হিন্দু সংস্কৃতি যেমন ব্যক্তি-কেন্দ্রিক, মুসলিম সংস্কৃতি তেমন ব্যক্তি-কেন্দ্রিক নয়। হক-ইনসাফবাদী কল্যাণমুখী মুসলিম সংস্কৃতি তাই সমাজ-কেন্দ্রিক। মুসলমানের বিচারে তাই আর্টের জন্য আর্ট নয়, আর্ট সমাজের জন্য। এই সমবেত কল্যাণমুখীতার ফলে মুসলমান মূলত: কর্মবাদী, ভক্তিবাদী নয়। এই জন্যই মুসলমানের সমাজ-ব্যবস্থা ত্যাগের বা বৈরাগ্যের বা দান-দক্ষিণার উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। মুসলিম সমাজ-ব্যবস্থা হক ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। নারী মুসলমানের নজরে দেবী নয়, রহস্য-পুরীর রাক্ষসীও নয়। সে মানবী। বিধবা ও 'সতী' হিসেবে ত্যাগের মূর্তিমান দেবী রূপে তার যতই পূজা-অর্চনা করা হোক, তার ওয়ারিশী সম্পত্তি এবং দেনমোহরের টাকা আদায় না করা পর্যন্ত তার উপর ন্যায় বিচার করা হল না বলে মুসলমান মনে করে। হক ও ইনসাফের দ্বারা, অধিকার ও সাম্যের দ্বারা সমাজের অপর সব মেম্বরের মতোই নারীরও মন পাওয়া যেতে পারে। অভিসারের ঘোড়ায় চড়ে, 'দেহি পদ-পল্লব-মুদারমে'র সোনার কাঠি নিয়ে তার অন্তরের রহস্যপুরীতে প্রবেশ করে কান্নাকাটির বাণে রাক্ষস-খুক্ষস মারবার কোনো দরকার করেনা।

মুসলিম সমাজ-মনের রায় এই যে, নিষ্কর্মা অলস ও নিদ্রাহীন হতভাগ্য অভিজাতেরাই নারী-হৃদয়কে রহস্যময় ও নারী-প্রেমকে সমস্যাপূর্ণ করে তুলেছে। বড় লোকের অনর্জিত অর্থ-রাশি ব্যয়ের অবসর-প্রচুর জীবন অতিবাহিত করবার জন্য ইনডোর খেলা হিসেবে রহস্যপূর্ণ নারী-হৃদয় খুবই চিত্তাকর্ষক। তা ছাড়া তাদের আদর নিষ্ঠাহীন জীবনে নারী-প্রেম সত্যই দুর্লভ বস্তু। তাদের বহুভোগী চঞ্চল চপল মনের কাছে নারী-হৃদয় সত্যই রহস্যপুরী। বাঙলার মুসলমান অনর্জিত বিত্তশালী অবসর-প্রচুর শ্রমকুন্ঠ অভিজাত শ্রেণী নয়। কাজেই নারী-প্রেম তাদের দুর্লভও নয়, নারী-মন তাদের কাছে রহস্যপুরীও নয়। এই জন্যই বর্তমান বাঙলা সাহিত্য মুসলিম সমাজ মনে কোনো প্রেরণার স্পন্দন জাগাতে পারেনি। তাই রাধা কৃষ্ণের প্রেমে প্রতিবেশী হিন্দু ভাইকে আনন্দে নৃত্য করতে দেখেও মুসলিম সমাজ-মনের একটা তারও ঝনাৎ করে উঠেনি। তাই বিশ্ব কবির 'মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণ-ধুলার তলে'র অত বড় আবেদনে একটি মুসলমানেরও মাথা এক ইঞ্চি হেঁট হলো না।

তার বদলে বরঞ্চ যেদিন এক অচেনা অজানা বালক হঠাৎ জিকির দিয়ে উঠলো : "বল বীর উন্নত মম শির", সেদিন রিক্ত ক্লান্ত ঘুমন্ত ও জীবন্মৃত মুসলমান ধচমচ করে জেগে উঠে চোখ রগড়াতে রগড়াতে হুঙ্কার দিয়ে উঠলো : "উন্নত মম শির"। কারণ এ যে তারই অন্তরের ঘুমন্ত শিশুর চীৎকার। এ যে তারই জীবনের কথা। তাই নজরুল ইসলামের আকস্মিক আবির্ভাব মুসলিম সমাজ-মনকে এমন করে আলোড়িত করতে পেরেছে। মুসলমানের বিবেচনায় মানব-জীবনের সুখ-দু:খ আলো-আঁধার হাসি-কান্না, তাদের দেবত্ব-পশুত্ব, তাদের হীনতা-ক্ষুদ্রতা, তাদের সংগ্রাম সাধনা, এ সবই সাহিত্যের বুনিয়াদ এবং নজরুল ইসলাম এই জীবনকে কেন্দ্র করেই সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন। শুধু এই কারণেই নজরুল ইসলাম পূর্ব-পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় কবি॥"

- আবুল মনসুর আহমদ / বাংলাদেশের কালচার ॥ [ আহমদ পাবলিশিং হাউস - ফেব্রুয়ারি, ২০০৪ (পঞ্চম মুদ্রণ) । পৃ: ৩৯-৪০/১০০-১০২ ]

 #০৩
"... আমাদের আশঙ্কা হয়, পূর্ব পাকিস্তানেও যারা এখনও উভয় সংস্কৃতির সমন্বয়ে বিশ্বাসী এবং উভয় বঙ্গের সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক ও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে রামমোহন-রবীন্দ্রনাথ প্রমুখের নামোচ্চারণে ভক্তি গদগদ হন, তাদেরও এ রূঢ় সত্যটি মনপুত: হবে না। কিন্তু সত্য সত্যই। বহু বহু শতাব্দী হিন্দু-মুসলমান এদেশে পাশাপাশি বাস করেছে এবং একই আকাশের তলে, একই মাটির ফলে ও পানিতে এবং পানির জীব মৎস্যে উদরপুর্তি করে জীবনধারণ করেছে, কিন্তু কখনো তাদের মধ্যে হাঁড়ির ও নাড়ির সম্পর্ক জন্মায়নি। অথচ জৈবিক নীতি অনুসারে এ দুটির মাধ্যমেই হার্দিক সম্পর্ক সহজেই স্থাপিত হয়; আর এ দুটিই হলো সমাজবিজ্ঞানীর চোখে সামাজিক একত্ব স্থাপনের প্রধান হাতিয়ার।

... মুসলমানদের পূর্বে গ্রিক, শক, পহব, কুশান, হুণ প্রভৃতি বহু বিদেশি জাতি ভারতের বুকে হানা দিয়ে এদেশে বাস করেছে এবং কালপ্রবাহে বিরাট হিন্দু সমাজদেহে লীন হয়ে গেছে। আজ তাদের একটিরও পৃথক সত্তার চিহ্নমাত্র নেই। তার কারণ এই যে, এসব বহিরাগত জাতির না ছিল বলিষ্ঠ ধর্মবিশ্বাস, না ছিল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিরাট ঐশ্বর্য। কিন্তু মুসলমানরা যখন এদেশে আগমন করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করল, তখন সঙ্গে নিয়ে এলো পৃথক একটি বলিষ্ঠ ও প্রাণ-সঞ্জীবনি ধর্মবিশ্বাস এবং একটি জীবন্ত আত্মচেতনালব্ধ পৃথক সংস্কৃতি ও সমাজের ঐতিহ্য। অতএব হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতি এবং মুসলমান ধর্ম ও সংস্কৃতি দুটি পৃথক ও স্বতন্ত্র নিয়েই পাশাপাশি অবস্থান করেছে - দুটির সংঘাতের ফলে একে অপরকে কিচু দান করেছে, কিছু গ্রহণ করেছে; কিন্তু কখনো দুটিতে সঙ্গম ঘটেনি, সমন্বয় হয় নি - বরাবরই পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে স্ব স্ব পার্থক্য ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে চলেছে দুটি সমান্তরাল রেখার মতো।

... প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখযোগ্য, যে মারাঠা বর্গীর অমানুষিক নিষ্ঠুরতা ও দানবীয় লুন্ঠনকর্মে বাংলাদেশের আপামর বাসিন্দা ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল, সেই মারাঠা জাতির স্রষ্টা শিবাজীর উদ্দেশ্যে 'শিবাজি-উৎসব' কবিতা লিখে বাংলা ভাষার প্রখ্যাত কবি স্মৃতিতর্পণ করেছিলেন :

তব রাজকর লয়ে আটকোটি বঙ্গের নন্দন
দাঁড়াইব আজ।

নব্য 'জাতীয়তাবাদের' উগ্রপূজারী কবি সেদিন বিস্মৃত হয়েছিলেন, এই 'শিবাজী মহারাজের' চেলাচামুন্ডারা তার পিতৃপিতামহের সর্বাঙ্গে লাঞ্ছনা ও কলঙ্কের মসিলেপন করে 'খাজনা' আদায় করে নিয়েছিল এবং সে বিভীষিকার স্মৃতি সোয়া দু'শ বছর পরে আজও প্রতিটি বঙ্গমাতা স্মরণ করে আতঙ্কে শিহরিত হয়ে শিশুকর্ণে গুঞ্জণ তোলে :

খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো, বর্গী এলো দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে, খাজনা দেবো কিসে॥"

- জাস্টিস আবদুল মওদুদ / মধ্যবিত্ত সমাজের বিকাশ : সংস্কৃতির রূপান্তর ॥ [ মাওলা ব্রাদার্স (পুন: মুদ্রণ) - ফেব্রুয়ারি, ২০১১ । পৃ: ৩১/৩৭-৩৮ ]

#০৪
"... বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর তার বেশভুষা ও ধনদৌলতের জন্য কোলকাতার সমাজে ঽপ্রিন্সঽ বলে পরিচিত ছিলেন। তিনি কারঠাকুর এন্ড কোম্পানী বলে লবণের ব্যবসার প্রতিষ্ঠা করে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেন। বলাবাহুল্য কারঠাকুর এন্ড কোম্পানীর টাকা সদ্ পথে উপার্জিত হয়নি। তার সম্পত্তিও কালোবাজ্রে উপার্জিত। অথচ কালোবাজারী তথাকথিত প্রিন্সের জ্যেষ্ঠ ছেলে চরিত্র গৌরবে হলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তারই কনিষ্ঠ পুত্র বিশ্বকবি পরমশ্রদ্ধেয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এভাবে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে আমাদের দেশের যারা অভিজাত বা যারা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোক, তাদের অধিকাংশের পূর্বপুরুষ ছিলেন অসৎ পথে উপার্জনে দক্ষ॥"

- দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ / অতীত জীবনের স্মৃতি ॥ [ নওরোজ কিতাবিস্তান - জুন, ১৯৮৭ । পৃ: ২০৪ ]

#০৫
"... হিন্দু ধর্মের পুনরুজ্জীবনের শুভচিন্তায় কারো আপত্তি থাকতে পারে না। কিন্তু শুভচিন্তার কালে সাম্প্রদায়িকতার যে অশুভ চিন্তায় মত্ত হয়েছিলেন তৎকালীন শিক্ষিত হিন্দু সমাজ এবং সাহিত্যের ক্ষেত্রেও যে কদর্য ও গ্লানিকর পঙ্কের আবর্ত সৃষ্টি করেছিলেন, সেটাই ছিল সবচেয়ে বেদনার দিক। উনিশ শতকের শেষের দিকে বঙ্কিমচন্দ্র প্রমুখ চিন্তাবিদরা এই কদর্য ঘূর্ণাবর্তের স্রষ্টা এবং আজাদি-উত্তরকাল পর্যন্ত ছিল তার মলিনতা-আবিলতার প্রাধান্য। চোখের দৃষ্টিকে খর্ব করার ফলে এই স্বদেশীর উগ্রভক্তরা কী পরিমাণে চিন্তাশক্তিরও অধোগতি ও অসঙ্গতি দেখিয়েছেন্, 'ঋষি'-আখ্যাত বঙ্কিমচন্দ্রের এই ধর্মচিন্তাতেই তা সুপরিস্ফুট :

"... মুসলমানের পর ইংরেজ রাজা হইল, হিন্দুপ্রজা তাহাতে কথা কহিল না। বরং হিন্দুরাই ইংরেজকে ডাকিয়া রাজ্যে বসাইল। হিন্দু সিপাহী, ইংরেজের হইয়া লড়িয়া, হিন্দুর রাজ্য জয় করিয়া ইংরেজকে দিল। কেননা, হিন্দুর ইংরেজের উপর ভিন্ন জাতীয় বলিয়া কোন দ্বেষ নাই। আজিও ইংরেজের অধীনে ভারতবর্ষ অত্যন্ত প্রভুভক্ত। ইংরেজ ইহার কারণ না বুঝিয়া মনে করে হিন্দু দূর্বল বলিয়া কৃত্রিম প্রভুভক্ত।"

এই অনুক্ত কারণটি অত্যন্ত প্রকটিত এবং বঙ্কিম-গান্ধী-রবীন্দ্রনাথ থেকে ক্ষুদ্রতম হিন্দুর মানসে সে কারণটি এভাবে প্রতিক্রিয়া করেছে : ভারতীয় জাতীয়তার চিন্তায় মুসলমানের স্থান নেই, 'একধর্ম রাজ্যপাশে' [শিবাজী উৎসব/রবীন্দ্রনাথ - K.K] যে ভারতকে বেঁধে দেওয়ার স্বপ্ন জাগ্রত হয়েছে, সে ভারতে ইসলাম নিতান্তই অস্তিত্বহীন, অস্বীকৃত। মুসলমানকে ভাইরূপে, প্রতিবেশীরূপে চিন্তা করা দূরে থাক; মুসলমানকে বিদেশি আক্রমণকারী ব্যতীত অন্যকিছু ভাবতেই প্রস্তুত হয় নি হিন্দু মানস। সবচেয়ে হাস্যকর উক্তি 'হিন্দুর ইংরেজের উপর ভিন্ন জাতীয় বলিয়া কোনো দ্বেষ নাই' - যত দ্বেষ, যত হিংসা, যত শত্রুতা হাজার বছরের প্রতিবেশী এদেশের মাটিতে জাত, সর্বাংশেই ভারতীয় উপমহাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা মুসলমানের প্রতি। সাম্প্রদায়িকতার এমন উন্মত্ত ও দাম্ভিক প্রকাশ জগতের ইতিহাসে খুবই দুর্লভ॥"

- জাস্টিস আবদুল মওদুদ / মধ্যবিত্ত সমাজের বিকাশ : সংস্কৃতির রূপান্তর ॥ [ মাওলা ব্রাদার্স (পুন: মুদ্রণ) - ফেব্রুয়ারি, ২০১১ । পৃ: ২৫০ ]

#০৬
"... বাংলা ১৩৪৩ জ্যেষ্ঠ সংখ্যায় মোহাম্মদী পত্রিকায় জনৈক লেখক প্রবেশিকায় বাংলা বিষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। তাতে রবীন্দ্রনাথের 'বিচারক' কবিতায় "চলেছি করিতে যবন নিপাত, যোগাতে যমের খাদ্য" পংক্তি ও 'মানি' কবিতায় "ঔরঙ্গজেব ভারত যবে, করিতেছিলেন খান খান" পংক্তি শুধু আপত্তিকর নয়, বাদ দেয়ার কথা বলেন। রবীন্দ্রনাথ ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিলেন যে, এরপর হয়তো মুসলমানরা প্যারাডাইজ লস্ট এর আর্চফিল্ড ও শেক্সপিয়ারের লেডি ম্যাকবেথের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবেন। মার্চেন্ট অব ভেনিস-এ ইহুদিদের কুকুর বলা হয়েছে বলে কি তাকে ত্যাগ করতে হবে?"

- সুখরঞ্জন রায় / রবীন্দ্রনাথের শিবাজী উৎসব : পটভূমি ও প্রতিক্রিয়া ॥ [ ভারত বিচিত্রা - অক্টোবর, ২০০৫ । প: ২১ ]

#০৭
"... ভক্ত, অভক্ত না অতিভক্ত - নির্ধারণ করা মুশকিল। প্রচুর বাঙালী দর্শক এসে প্রতীক্ষা করছেন তার মরদেহ দেখার। জয়ধ্বনি হচ্ছিল জোরে জোরে। ভক্তির প্রাবল্যে ঠাকুরবাড়ির কোলাপসিবল গেট ভেঙ্গে ফেলল জনতা। ভক্তরা কবির মরদেহ সাজানো খাট থেকে তুলে নিয়ে চলে গেলেন জনস্রোতের মাঝখানে। কবি নিষেধ করে গিয়েছিলেন তবুও 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি জয়' 'বন্দেমাতরম' ধ্বনিত হতে লাগলো বারে বারে। বাঙালী রবি ভক্তদের এতই ভক্তির আধিক্য যে, কবির স্মৃতি বাড়িতে রাখার জন্য প্রায় সারাজীবন ধরে তার সযত্নে সংরক্ষিত মাথাভর্তি শুভ্র কেশ, চিত্তাকর্ষক দাড়ি অনেকে ছিঁড়ে নিয়ে যেতে লাগলেন। শেষে দেখা গেল, শ্মশানে যাওয়ার পূর্বে কবির চেহারাই বদলে দিয়েছেন অতি ভক্তের দল।

যখন মুখাগ্নি করা হয়, তখন রবীন্দ্রনাথের মুখমন্ডল বিকৃত। জনতার এতই রবি অনুরাগ যে, স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে তার মাথার চুল ও মুখের দাড়ি সব উপড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই হলো গিয়ে কবির প্রয়াণের শেষ দৃশ্য॥"

- অমিতাভ চৌধুরী / ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ॥ [ ঘোষ এন্ড মিত্র। পৃ: ১৩৬-১৩৭ ]

Kai Kaus

No comments:

Post a Comment