আমাদের রবীন্দ্রনাথ কেমন ছিলেন ???
"... শরৎচন্দ্রের বিখ্যাত 'পথের দাবী' যখন বাজেয়াপ্ত হয় তখন তিনি রবীন্দ্রনাথের সহযোগিতা চেয়ে একটি পত্র দিয়েছিলেন। চিঠির উত্তরে রবীন্দ্রনাথ যা লিখেছিলেন তাকে স্বাগত জানানো সকলের পক্ষে সম্ভব নয় :
'কল্যাণীয়েষু, তোমার 'পথের দাবী' পড়া শেষ করেছি। বইখানি উত্তেজক অর্থাৎ ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে পাঠকের মনকে অপ্রসন্ন করে তোলে। ... আমি নানা দেশে ঘুরে এলাম - আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে এই দেখলাম - একমাত্র ইংরেজ গভর্ণমেন্ট ছাড়া স্বদেশী প্রচার বাক্যে বা ব্যবহারে বিরুদ্ধতা আর কোন গভর্ণমেন্ট এতটা ধৈর্য্যের সঙ্গে সহ্য করে না ... ইতি ২৭শে মার্চ ১৩৩৩ - তোমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।'
এই পত্রে আমরা ইংরেজ সরকারের প্রতি কবি রবীন্দ্রনাথের আনুগত্য অস্বীকার করি বা না করি তা বাদ দিয়ে শরৎচন্দ্র ঐ চিঠির জন্য নিজে কী লিখেছিলেন তার একটু অংশ তুলে দিচ্ছি -
'সে কি উত্তেজনা ! কি বিক্ষোভ ! রবীন্দ্রনাথ নাকি 'পথের দাবী' পড়ে ইংরেজের সহিষ্ণুতার প্রশংসা করেছেন ! এ বইতে নাকি ইংরেজদের প্রতি বিদ্বেষের ভাব আছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। আমার 'পথের দাবী' পড়ে আমার দেশের কবির কাছে যদি এই দিকটাই বড় হয়ে থাকে, তাহলে স্বাধীনতার জন্যে আর আন্দোলন কেন? সবাই মিলে তো ইংরেজদের কাঁধে করে নেচে বেড়ান উচিত। হায় কবি, তুমি যদি জানতে আমাদের কত বড় আশা-কত বড় গর্ব, তাহলে নিশ্চয় এমন কথা বলতে পারতে না। কবির কাছে আমার 'পথের দাবী'র যে এত বড় লাঞ্ছনা হবে, আমার স্বপ্নের অতীত ছিল। কি মন নিয়েই যে আমি এই বইখানি লিখেছিলাম, তা আমি কারুকে বুঝিয়ে বলতে পারব না।' (নিষিদ্ধ বাংলা / শ্রী শিশির কর । পৃ: ২৪, ৩২ ; দরদী শরৎচন্দ্র / মণীন্দ্র চক্রবর্তী ; শরৎচন্দ্রের টুকরো কথা / অবিনাশচন্দ্র ঘোষাল দ্রষ্টব্য )॥"
- গোলাম আহমাদ মোর্তজা / চেপে রাখা ইতিহাস ॥ [ দি স্কাই পাবলিশার্স - ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ । পৃ: ৩৫৪-৩৫৫ ]
#০২
"... চারিদিকে নিষ্ঠুরতার এবং দূর্নামের প্রতিকূল বাতাসকে অনুকূল করতে রবীন্দ্রনাথের প্রাইভেট সেক্রেটারী অমিয় চক্রবর্তী একবার বিশাল জমিদারীর একটি ক্ষুদ্র অংশ প্রজা সাধারণের জন্য দান করার প্রস্তাব করেছিলেন। ঠাকুর মশাই ইজি চেয়ারে আধশোয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসে বলেছিলেন, 'বল কি হে অমিয়, আমার রথীন (কবির একমাত্র পুত্র) তাহলে খাবে কী?" - অন্নদাশঙ্কর রায় (দৈনিক বাংলাবাজার - ০১/০৫/১৯৯৭)
- জাতির উত্থান ও পতন সূত্র / এস. এম. নজরুল ইসলাম ॥ [ ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ - ফেব্রুয়ারী, ২০০৬ । পৃ: ৮১ ]
#০৩
"... অর্থাৎ সাম্প্রদায়িকতা, এবং এর একটি উদাহরণ রবীন্দ্রনাথকে 'জাতীয় কবি' হিসেবে স্বীকার না করে নজরুলকে স্বীকার করা। আমাদের উচিত এ দাবী করা যে, জাতীয় কবি অভিধা বাতিল করা হোক আর তা যদি না হয় তা' হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেই জাতীয় কবি অভিধায় ভূষিত করা হোক নজরুলের সঙ্গে। সংস্কৃতি সেবীদের উচিত, সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে এ ধরণের সূক্ষ সাম্প্রদায়িকতার বীজকে উৎপাটিত করা ও এর যারা প্রবক্তা তাদের সমাজে, রাজনীতিতে, সংস্কৃতিতে প্রতিহত করা॥"
- মুনতাসীর মামুন / বাংলাদেশে ফেরা ॥ [ সময় প্রকাশন - ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৬ । পৃ: ১২ ]
#০৪
"... রবীন্দ্রনাথের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে বাংলার মানুষের পিঠের ছাল এবং কপালের চামড়া দু’টোই ছিঁলে গেছে, তাঁকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নষ্ট হয়েছে পারিবারিক ১৩ প্রতিভা, পরবর্তীতে সাহিত্যের জায়গা দখল করে রাখার কারণে দুই বাংলার প্রতিভাবানদের মূল্যায়ন যে ঠিকভাবে হচ্ছে না, সুনীল গাঙ্গুলির কথায় স্পষ্ট। উপমহাদেশের বিখ্যাত লেখক সুনীল গঙ্গোপধ্যায় এক সাক্ষাৎকারে রবীন্দ্রনাথের বিশ্বকবিত্বকে পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত করে বলেছেন, “অন্টারিওয়েতে ১২ লেখককে জিজ্ঞেস করলে মাত্র ১ জন বললেন রবীন্দ্রনাথের নাম শুনেছেন কিন্তু লেখা পড়েননি। পশ্চিমের পাঠকেরা তাঁকে চেনে না, তেমন কোন বই অনুবাদ হয়নি। স্পেনিশ লেখক ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো সম্পর্কে বললেন, তিনি রবীন্দ্র সান্নিধ্য পছন্দ করেছেন তবে, এই লেখক যেমন ভালো ইংরেজি জানতেন না তেমনই রবীন্দ্রনাথের তেমন কোন বই তখন অনুবাদ হয়নি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ওকাম্পোর বাসায় তিনি দু’তিন মাস কাটিয়েছিলেন। তিনি বললেন রবীন্দ্রনাথকেই তো লোকেরা ভুলে গেছে। সুইডেন বা জাপানে দু’চার জন যারা তাঁর নাম জানে, সংখ্যা কতো? আমরা যতোই গর্ব করে বিশ্ব কবি বলি, এখন সেসব ব্যাপার নেই।”
নোবেলে রবীন্দ্রনাথ সর্ট লিস্টেট। সাইটেশন পত্রটি দেখেছি সেখানে কোথাও বিশ্বকবি বলে উল্লেখ করেনি নোবেল কমিটি। প্রশ্ন, তাহলে বিশ্বকবি শব্দটার জন্ম হলো কোত্থেকে? সুনীলদার কথা সত্য হলে বিশ্বকবি শব্দটি মিথস্ কিংবা উচ্চাভিলাষীদের কাজ। তাঁর কবিতা কখনোই সেক্সপিয়ার বা ডেভিড ফ্রস্টের মতো বিশ্বজুড়ে চর্চা হয় না। অপ্রিয় সত্য হলেও রবীন্দ্রনাথকে বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি ও নাট্যকারদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে কারণ তিনি যদি বিশ্বকবিই হতেন তাহলে একখানা রক্তকরবী বা চিত্রাঙ্গদা কেন ন্যূনতম ‘হেমলেট’-এর মতো সারাবিশ্বের দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠলো না। বিশ্বকবির গল্প নিয়ে বাংলা ছবির বাইরে ক’টা ছবি হয়েছে? ‘তিনকন্যা’ আর ‘চারুলতা’ দিয়েই বুঝতে চাই না বিশ্বসাহিত্যের এটাই শেষ গন্তব্যস্থল। তারপরেও এটাই ‘কঠিনেরে ভালোবাসিলাম’-এর মতো সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এইসব অতি আবেগ আর রবীন্দ্র পূঁজা থেকে বেরিয়ে না এলে দেশে বেকার সংখ্যা আরো বাড়বে। ২০১০ সনে পশ্চিমবঙ্গের এক মন্ত্রী সুভাস চক্রবর্তীর মন্তব্য শুনে ক্ষুব্ধ হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেছেন, “রবীন্দ্রনাথ নোবেল পেয়েছেন তাঁর উচ্চমার্গের যোগাযোগের কারণে।”
পুরষ্কার পেতে যে লবিসহ অন্য মালমশলা লাগে যারা পেয়েছেন কিংবা চেষ্টা করছেন তারা ভালো করেই জানেন। সামান্য বাংলা একাডেমির জন্য যেসকল ভয়ংকর গল্প শুনি তার মধ্যে প্রবাসের এক লেখক এই বাংলা নোবেল পেয়ে যথেষ্ট উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিলেন, অর্থাৎ তার নামই নাকি কেউ শোনেননি। নোবেল পেতে লবি অবশ্যই লাগে যার অন্যতম উদাহরণ রবীন্দ্রনাথ। বেশ কয়েকবার নমিনেশনে ব্যর্থ হলে অমর্ত্য সেনকে পর্যন্ত কেমব্রিজ-হার্ভার্ড-অক্সফোর্ডে দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে হয়েছে। ড. ইউনুস কেন এর বাইরে হবেন? প্রশ্ন, জিমি কার্টারের শান্তি পুরষ্কারের সঙ্গে মাদার তেরেসার পুরষ্কারের পার্থক্য। জিমি কার্টারের একমাত্র যোগ্যতা কোন যুদ্ধ বন্ধ না করে বরং অশান্তির কিসিঞ্জারি (ইরানে বন্দী ক্রাইসিস থেকে শুরু করে ২০০১-এর নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ সফর) আর মাদার তেরেসা যুদ্ধ করেছেন অবাঞ্ছিতদের পক্ষে, যা ঘটা করে বলার যোগ্যতা আমার নেই। এদিকে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে আগাম নোবেল দেওয়া হয়েছে কি জন্য সেই বিতর্ক করলে বই লিখতে হবে। তবে একথা সত্য যে নোবেল পাওয়ার পর গভীর রাতে মনুষ্যবিহীন ড্রোন বিমান দিয়ে আরো কতো বেশি মানুষ হত্যা করছেন তার কোন হিসেব হয়নি। তবে সচেতন মানুষেরা আফগানিস্তানে তার এই গণহত্যার বিরুদ্ধে যথেষ্ট হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন। সমালোচকেরা তার নোবেল নিয়ে গঠনমূলক বিতর্ক করছেন। স্বতন্ত্র মিডিয়ার খবর, লাদেন বধের বর্ষপূর্তিতে আফগানে গিয়ে যে চুক্তিটি করলেন তার গোপন ভাষা ২০২৪ সন পর্যন্ত আফগানিস্তানে বেশকিছু মার্কিন সৈন্য থাকবে যাদের অন্যতম কাজ হবে আফগানিস্তান থেকে বয়ে যাওয়া তেলের পাইপ সংরক্ষণ, এর অন্যতম বেনিফিসিয়ারি ভারত। অতীতের পরিকল্পনা মাফিক বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রি হবে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি অক্সিডেন্টাল পেট্রোলিয়ামের মাধ্যমে ভারতে। বর্তমান প্রেক্ষিতে আবহাওয়া আরো অনুকুল।
রবীন্দ্রনাথ হলেই যে তাঁর সমালোচনা করা যাবে না সেটা নয় কিন্তু কোনক্রমেই তাঁকে রাবিশ বলা যাবে না। যেমন বলা যাবে না আলগোর কিংবা ড. ইউনুসকেও। একমাত্র যুদ্ধ ও শান্তির জন্য যে নোবেল নয়, তার প্রমাণ বিশেষ ক্ষেত্রে এই দু’জনের পরোক্ষ যুদ্ধ এবং শান্তি বিপ্লব। সমালোচনা হতেই পারে কিন্তু ভাষা হতে হবে অবশ্যই পরিশীলিত। বর্তমানকালে যারা নোবেল বিতর্কে লিপ্ত হয়েছেন তাদেরকে সতর্ক করবো, গালাগাল সামাল দেওয়ার মতো তথ্য ছাড়া এসব বিতর্কে না জড়ানোই ভালো, কারণ এতে করে নতুন প্রজন্মের মনমানসিকতার যথেষ্ট ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তার দলীয় সঙ্গীরা ড. ইউনুস ধোলাই দিতে দিতে এমন পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন যে, এরপর আমরা কেউ আর কোন গুণী ব্যক্তিকেই সম্মান করবো না। পর্যায়ক্রমে যত্রতত্র দিগম্বর করতেও পিছপা হবো না। এটাই কি আমরা চাই?
শান্তির জন্য গান্ধীকে ৫ বার নমিনেশন দেওয়া হলেও নোবেল কমিটি তাঁকে যোগ্য মনে করেননি কেন সেই বিতর্ক তাদের। কিন্তু তাঁর কারণে দেশবিভাগের যে বারোটা বেজেছে সেকথা আমি বলতে পারি। গান্ধীর বদলে অন্য কেউ হলে হয়তো হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে এতো রক্তক্ষরণ এড়ানো যেতো। কিন্তু অহিংস এবং অসহযোগ আন্দোলনের কারণে পাক-ভারতের স্বাধীনতা যেদিকে মোচড় নিলো তা কোনক্রমেই মেনে নেওয়া যায় না। ’৪৭-এর মধ্যরাত থেকে কতোগুলো গণহত্যা, দাঙ্গা, যুদ্ধ হয়েছে মানুষ কি তা ভুলে গেছে? রিফিউজিদের কান্না! তবে গান্ধী সমালোচকেরাও বসে নেই। অহরহ বই লেখা হচ্ছে যা ভারত সরকার ক্রমাগত নিষিদ্ধ করে চলেছে, কিন্তু তারপরেও কি সত্য ঠেকানো গেছে? তাঁরই আদর্শের ছাত্র নেলসন মেন্ডেলা, ড. কিং, দালাইলামা এদের সকলেই শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। নোবেল মঞ্চে দাঁড়িয়ে দালাইলামা বলেছেন গান্ধীর অহিংসবাদে দীক্ষিত তিনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর কন্যা যদি শান্তির জন্য নোবেল না পেয়ে থাকেন, যুদ্ধ বন্ধে যদি তাদের ভূমিকা গ্রাহ্য না হয়, তাহলে ড. ইউনুসের করার কি আছে? বাংলাদেশের এক বিজ্ঞ সমালোচক কেন বললেন, ড. ইউনুস রাজনীতিতে আসতে চেয়ে ভুল করেছেন? এইসব তাবেদারদের কারণেই রাজনীতিতে আজ এই মন্দা। ব্রিটিশ-ভারতে রবীন্দ্রনাথ যতোখানি কবি ততোখানি রাজনীতিবিদ। তিনি তো গান্ধীর সঙ্গে সর্বক্ষণ রাজনীতিতে জড়িয়ে ছিলেন। সুতরাং বাংলাদেশের কেউ যদি মনে করেন তারা তৃতীয় শক্তি হবেন হউক। আলোচনা চলছে ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা এবং গ্রেফতারের কথা। তাকে শুধু অপমান আর পদচ্যুত করেই শেষ হয়নি এখন চলছে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত। এর কারণ আমরা বুঝি। ড. ইউনুসও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ জীবন থাকতে তিনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে লুটেরাদের হাতে যেতে দেবেন না। সারাবিশ্ব ক্ষুদ্র ঋণের মডেল গ্রহণ করেছে, ড. ইউনুস বিশ্বের সেই ৭ জনের একজন যারা বিশেষভাবে পুরষ্কৃত, এ নিয়ে গাত্রদাহে লাভ হবে না। সরকার যতোই তার বিরুদ্ধে যাবেন বিশ্বে তিনি ততোই জনপ্রিয়তা পাবেন।
এবার ফিরি অমর্ত্য সেনের কথায়। মাটির টানে তিনি আসবেন এটাই স্বাভাবিক। কেন আসবেন না? ঢাকাতে রয়েছে তার স্কুল সেন্ট গ্রেগরি, ওয়ারিতে পৈত্রিক নিবাসসহ অনেক বন্ধুবান্ধব। এরকম অনেকেই আসেন যারা দেশান্তরী। অপ্রাসঙ্গিক হলেও সত্য অনেকেরই জন্ম পূর্ব পাকিস্তান হলেও ভারতীয় পাসপোর্টে তাদের অদ্ভুত জন্মস্থান মেদিনীপুর বা জলপাইগুড়ি। বাবা বলতেন দেশ ছেড়ে কোথায় যাবো, এই দেশে আমার নাড়ি পোতা। আমার একটি প্রশ্ন, সেনবাবুদের কি লাজলজ্জা বলে কিছুই নেই? একজন সাধারণ মানুষও বুঝবে আমি কি বলতে চাইছি। নোবেল গোষ্ঠির একটি নিজস্ব এলিট সার্কেল থাকে এবং একে অপরকে সম্মান করেন। সেই অর্থে ড. ইউনুস একজন নোবেল প্রাপ্ত, সরকার যাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, অর্থমন্ত্রী ভাষায় রাবিশ, কৃষিমন্ত্রীর ভাষায় সুদখোর, কোন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ডাকা হয় না। শিক্ষিত মানুষদের ডিকশনারিতে এতো বড় মাপের এলিট হয়েও কেন হীনমন্যদের আমন্ত্রণে বারবার এসে আমাদেরকে এভাবে লজ্জা দিয়ে নিজের স্থূল মন-মানসিকতার পরিচয় দেন? বিদেশীরা হলে কখনোই যা করতো না। ভালো করেই জানতেন হাসিনা সরকারের সাথে ঠান্ডা যুদ্ধের কথা। কবিগুরুর কথাই ঠিক, সাতকোটি বাঙালিরে তিনি মানুষ করেননি। যখনই তিনি প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেন কিন্তু ড. ইউনুস সেখানে নেই অন্য কারো কষ্ট জানি না এই দৃশ্য আমাকে ১২ হাজার মাইল দূরে থেকে দারুণ ব্যাথিত করে। সেই সঙ্গে আরেকটি কথা, জাতীয় কবি নজরুলের বেলায় রবীন্দ্রনাথের মতো অনেককিছুই সহজলভ্য ছিলো না কিন্তু তার আছে ৩ হাজারের অধিক সঙ্গীত যার পদে পদে প্রেম, ধর্ম, মানবতা এবং মুক্তি।
অমর্ত্য সেনের যদি বোধদয় না ঘটে না ঘটুক কিন্তু ‘আমার সোনার বাংলা’ কেন জাতীয় সঙ্গীত হবে? খালেদা জিয়ার আমলে কথাটি উঠলেও সাম্প্রদায়িকতার বিবেচনায় আমলে নেওয়া হয়নি। আমার সোনার বাংলাকে জাতীয় সঙ্গীত করে রবি ঠাকুরকে যতোটা উচুতে তোলা হয়েছে ঠিক ততোখানি অবমূল্যায়ন করা হয়েছে জাতীয় কবির গানে দেশপ্রেম খুঁজে না পেয়ে। এইভাবে চলতে দিলে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের হাতে আমাদের সবকিছুই বিলীন হয়ে যাবে। বছরজুড়ে প্রত্যেকদিন জন্মদিবস পালন, ১ মাসব্যাপী মোট ৬ মাস উৎসব পালন, এই দিবস, সেই দিবস … ভেজা গামছা নিংড়ে ফেলার মতো অতি আবেগে জর্জরিত আমাদের স্নায়ুবিক বৈদ্ধিক অবাস্তবতা নিংড়ে ফেলে স্বার্থপর হওয়ার বিকল্প নেই। আমার প্রিয় দার্শনিক এ্যান রেন্ডের বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস ‘ফাউন্টেনহেড’-এর নায়ক প্রচণ্ড স্বার্থপর রোর্কের একটি উক্তি “স্বার্থপর না হলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা সম্ভব না। আমি এতোটুকু ছাড় দিতে রাজী নই।”
পাদটীকা: ৪০ বছর দেরি হলেও আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা ভারতীয় না বাংলাদেশী।
- মিনা ফারাহ, নিউইয়র্ক (লেখিকা এবং কলামিস্ট) / ১৪ই জুন, ২০১২ (সংগৃহীত)
Kai Kaus
No comments:
Post a Comment