সূফি বরষণ
অখন্ড ভারতের স্বপ্নদ্রষ্টা পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু বলেছেন, “ভারত অবশ্যম্ভাবীভাবে তার আধিপত্য বিস্তার করবে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারত হবে সব রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র। ছোট জাতি রাষ্ট্রগুলোর সর্বনাশ ঘটবে। তার সাংস্কৃতিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে থাকবে, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন থাকবে না।” থাকবে ভারত মাতার অধীনে।
মোটামুটি এটাই ছিল ভারতের স্বাধীনতার অন্যতম স্থপতি পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর বহুল প্রচলিত ‘ইন্ডিয়া ডকট্রিন’, যা নেহেরু ডকট্রিন নামেও পরিচিত। ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত তার ‘ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া’ বইয়ে এর প্রথম আভাস পাওয়া যায়। মূলত ‘অখন্ড ভারত’ ধারণা থেকেই এর উদ্ভব, এবং একে একে কাশ্মীর, হায়দ্রাবাদ, সিকিম এবং নেপালের মাওবাদ, শ্রীলংকার তামিল টাইগার বিদ্রোহ এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের ১৯৭১ এর যুদ্ধ । এবং তার পর থেকে বাংলাদেশে অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ইন্ডিয়া ডকট্রিন তার স্বরূপ উন্মোচন করছে সবার সামনে; বছর কয়েক আগে নেপালের তরাই অঞ্চলের গণভোট এবং এর পরবর্তী জ্বালানী অবরোধও এর বাইরে নয়।
প্রাচীণ ভারতবর্ষের মহামতি সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধাণ অমাত্য কৌটিল্য, যিনি চানক্য নামেই সুপরিচিত, তার একটি শিক্ষা ছিল উগ্র সাম্প্রদায়িক উচ্চবর্ণ হিন্দু ব্রাহ্মণদের জন্য – “ক্ষমতা অর্জনের লোভ ও অন্য দেশ বিজয়ের আকাঙ্ক্ষা কখনও মন থেকে মুছে ফেল না। সব সীমান্তবর্তী রাজাকে শত্রু বলে মনে করবে।” হাজার বছর পর এসেও কি এই মূলনীতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত ? এখন সবার মনে একই প্রশ্ন?।
তার আগে আমাদেরকে জেনে নেয়া অতিজরুরী ব্রাহ্মণবাদকি? করা সুপিরিয়র উচ্চবর্ণ ব্রাহ্মণ? “শোষণের জন্যই শাসন-এই সনাতন মূলনীতির মূলাধার ব্রাহ্মণ্যবাদ ।শোষণকে প্রচ্ছন্ন করতে হলে শাসনকে একটা আদর্শের নামে খাড়া করতে হয়”। –শিবরাম চক্রবর্তী।
এই শোষণের আদর্শের নামই ব্রাহ্মণধর্ম। তাই ব্রাহ্মণধর্ম কোন ধর্ম নয়, ব্রাহ্মণধর্ম হল আসলে একটি অপরাধের নাম, মানুষকে শোষণের হাতিয়ারের নাম। মানুষে মানুষে বিভাজন জাতপ্রথা বর্ণপ্রথা তৈরী করে মানুষদের শোষণের নাম, ব্রাহ্মণদের উচ্চ ভোগ বিলাসী জীবন যাপন করার নাম। প্রশ্ন হলো যারা নিজের ধর্মের মানুষদেরকে জাতপ্রথা তৈরী করে শোষণ নির্যাতন অত্যাচার করে। তারা কিভাবে মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ এবং জৈন ধর্মের মানুষকে আপন মনে করে বুকে জড়িয়ে নিবে? যারা নিজের ধর্মের মানুষকে ভাই হিসেবে বুকে জড়িয়ে নিতে পারে না?। ছুঁলেই জাত যায়!?
যেমন-লেখাপড়া করার কারণে শূদ্রের জিহ্বা কেটে ফেলা হতো -একটি অপরাধের নাম ?। ব্রাহ্মণধর্ম হল একটি অধর্ম বা অধার্মিকের ধর্ম(অস্পৃশ্যতা অধর্ম নয় কি?) বা আরও ব্যাপকভাবে বলতে গেলে- ব্রাহ্মণধর্ম হল মিথ্যেবাদী, ধূর্ত, ভন্ড ও শোষকের ধর্ম( ব্রাহ্মণরাই দেবতা’-এটা একটা ধূর্ত,ভন্ড,মিথ্যেকথা নয় কি?
ব্রাহ্মণধর্মমতে ব্রাহ্মণরাই হল জগতের শ্রেষ্ঠতম জীব আর সবাই হল তাদের থেকে হীন ও নিকৃষ্ট-এদের মধ্যে আবার কেউ একটু কম নিকৃষ্ট, কেউ একটু বেশি নিকৃষ্ট, কেউ আরো বেশি নিকৃষ্ট, কেউ আবার একেবারে ঘৃণ্যতম জঘণ্য নিকৃষ্ট অর্থাৎ অস্পৃশ্য। এই ঘৃণাই হল ব্রাহ্মণধর্মের বন্ধন। ঘৃণার বন্ধনে ব্রাহ্মণধর্ম মানুষকে একেবারে গরুছাগল-তুল্য করে বেঁধে রেখেছে। ব্রাহ্মণধর্ম মানুষের মধ্যে ঘৃণার অভ্যাস ও মনোবৃত্তিও গড়ে তুলেছে।যাই হোক, ব্রাহ্মণধর্ম মতে- ব্রাহ্মণরাই এই ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট লোকগুলোকে নিজেদের থেকে ছোট ও নিকৃষ্ট বলে মনে করবে এবং ঘৃণা করবে।
আর তার পরিবর্তে এই নিকৃষ্ট লোকগুলো ব্রাহ্মণদেরকে দেবতা মনে করে পূজা ও শ্রদ্ধা করতে বাধ্য থাকবে এবং ব্রাহ্মণদের উচ্ছিষ্টকে পবিত্র প্রসাদ মনে করে গলাধঃকরণ করবে।(‘প্রভুর উচ্ছিষ্ট অন্ন হবে শূদ্রের ভোজন| মনুসংহিতা,দশম,১২৫)। এই-ই হলো ব্রাহ্মণধর্ম আসল স্বরূপ।
এবার বলি ব্রাহ্মণ কারা? ব্রাহ্মণ তারা, যারা সমাজে অসাম্য,ঘৃণা,বর্ণবাদ ও জাতপাতের বীজ বপন করে সমাজের সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি,ঐক্য, সংহতি, ভ্রাতৃত্ব নষ্ট করেছে, সমাজে জাতপাতের বিষবৃক্ষ তৈরি করে ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজকে নোংরা, কলুষিত ও দুনিয়ার নিকৃষ্টতম সমাজে পরিণত করেছে,ভারতের সমাজকে সহস্র খন্ডে বিভক্ত করেছে,জগতব্যাপী হাজার হাজার বছরের ভারতীয় ঐতিহ্যকে ধ্বংস করেছে, এটা শুরু হয়েছে ভারতে বহির্গত আর্যদের মাধ্যমে ব্রাহ্মণ্য দর্শন বা বৈদিক দর্শন আগমনের মাধ্যমে। সারা ভারতীয় উপমহাদেশে অশান্তি আর গোলযোগের কারণ এই ব্রাহ্মণ্য ধর্ম বা দর্শন ।
ভারতীয় সভ্যতা-সংস্কৃতিকে ক্ষয়িষ্ণুতার পথে নিয়ে গেছে ব্রাহ্মণ্য দর্শন বা বৈদিক দর্শন এবং রাজনৈতিক ভাবে ভারতকে দূর্বল ও খন্ড খন্ড করেছে। ব্রাহ্মণ হ’ল তারা, যারা জোঁকের মত সমগ্র জাতির ঘাড়ের উপর বসে রক্ত শোষণ ক’রে নিজেদের পুষ্ট করছে এবং সমগ্র জাতিকে রক্তশূণ্য ক’রে তুলছে। ব্রাহ্মণ হ’ল তারা, যাদের কাছে নিজ সম্প্রদায়ের স্বার্থই বড়। ব্রাহ্মণ হ’ল তারা, যারা একটি অভিন্ন ঐক্যবদ্ধ “জাতি”কে টুকরো টুকরো করে সহস্র “জাতে” পরিণত করেছে। আর এসবই তারা করতে পেরেছে নিজেদের লেখা মনগড়া শাস্ত্রের সাহায্যে। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের দোহাই দিয়ে।
এই শাস্ত্রের সাহায্যেই এরা নিজেদের মনের মতো দেবদেবী ও ভগবান তৈরী করেছে ও এদের মুখ দিয়ে নিজেদের সুবিধেমতো বাণী বলিয়ে নিয়েছে এবং সেই বাণীকে ধর্মবাণী বা দৈববাণী বলে প্রচার ক’রে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে যথেচ্ছভাবে সাধারণ মানুষের মগজধোলাইয়ের ব্যবস্থা ক’রে ছলেবলে কৌশলে যুগ যুগ ধরে নানা অজুহাতে তাদের সর্বস্ব লুটেপুটে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে ও বিভিন্নভাবে তাদের জুলুম, অত্যাচার করেছে।
কলকাতার বর্ণহিন্দু সাম্প্রদায়িক পত্রিকা সানন্দা বাংলাদেশকে এখনও পূর্ববঙ্গ! বলে কোন সাহসে? হোয়াট ইজ পূর্ব বঙ্গ? যে পূর্ববঙ্গ আজ থেকে ৬৮ আগে ছিল এখন এর কোনো অস্তিত্ব নেই । আর এখন তা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রিয় বাংলাদেশ। সানন্দার দেখি জিয়োগ্রাফিক্যাল আর হিস্ট্রিক্যাল নলেজ শূন্য? নাকি তাদের সাম্প্রদায়িক গুরু নেহেরু এবং চানক্যের সুরে আগ্রাসী ও আধিপত্ত্যবাদী দৃষ্টি থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশকে পূর্ববঙ্গ বলছে?।
ভারতের কলকাতার বিতর্কিত লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন পাক্ষিক ‘সানন্দা’ বাংলাদেশকে পূর্ববঙ্গ হিসেবে অভিহিত করেছে!!??। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত সংখ্যায় বাংলাদেশের বিক্রমপুর, বরিশাল ও সিলেটের ঐতিহ্যবাহী রান্নাগুলো নিয়ে ‘পূর্ববঙ্গের নানা জেলার রান্না’ শিরোনামে বিশেষ ফিচার প্রকাশ করে সানন্দা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কয়েকদিন ধরেই সমালোচনা চলছে। https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=937583179650614&substory_index=0&id=367069936701944পূর্ববঙ্গ? এটা কোথায়? O_O
দেশের প্রগতিশীল বুদ্ধিবেশ্যারা মুখে কুলুপ এটেঁছে কেন!? আসলে বাংলাদেশের তথাকথিত এক শ্রেণির প্রগতিশীল কথিত বুদ্ধিজীবীরা? ব্রাহ্মণ্য দর্শনের ধারক বাহক। তাই তারা ১৯২২ সালে সাম্প্রদায়ির দাঙ্গা লাগানোর মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত আনন্দবাজার পত্রিকা গ্রুপের একটি বিতর্কিত অশ্লীল পণ্য সানন্দা পত্রিকা বাংলাদেশকে পূর্ববঙ্গ বলার পরও কোনো প্রতিবাদ করেনি।
বাংলাদেশের তথাকথিত প্রগতিশীল সুশীল? সমাজ যারা এপার বাংলা- অপার বাংলা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। তাদের কাছে জানতে চাইছি, সানন্দা নামের এই ম্যাগাজিনের সাহস কিভাবে হয় স্বাধীন বাংলাদেশকে পূর্ববঙ্গ বানিয়ে ফেলতে? নাকি উনারা ভেবেই নিয়েছে আমরা ভারতের অঙ্গরাজ্য??? নাকি এখনো উনারা "বাংলাদেশ" স্বাধীন দেশ মেনে নিতে পারেনি??? হে মূর্খ সানন্দা! এটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ বাংলাদেশ।
পরাধীন পশ্চিমবঙ্গের সাথে নাম মিলিয়ে একে পূর্ববঙ্গ বলার মতো আহম্মকী বা অপচেষ্টা না করলে ভালো হয়, তোমাদের দেশ পত্রিকা যেমন আশির দশকে নিষিদ্ধ করার পর বিলীন হয়ে গেছে তেমনি সানন্দা ও আনন্দআলো বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলে দেশ পত্রিকার মতো হারিয়ে যাবে অতএব সাধু সাবধান? এই পত্রিকায় বাংলাদেশের কোম্পানি গুলো বিজ্ঞাপন দেয়াও বন্ধ হয়ে যাবে। বেশী বেশী ভুগোল আর ইতিহাস পড়ো।
কলকাতা নাম থাকা সত্বেও ভারত সেটাকে 'পশ্চিমবঙ্গ' বলে। পশ্চিমবঙ্গ থাকলে, পূর্ববঙ্গ কই! উত্তর কোরিয়ার বিপরীতে দক্ষিণ কোরিয়াকে পাবেন। পশ্চিম জার্মানিরর বিপরীতেও পূর্ব জার্মানি পাবেন। তাহলে পূর্ববঙ্গটি কোথায়? যারা এখনও ভারতকে বন্ধু বলে বসে আছেন, বোকার স্বর্গে আছেন। সূদুরপ্রসারী স্বপ্ন নিয়ে তারা বাংলাদেশকে নিয়ে এগুচ্ছে। তাই তাদের চোখে বাংলাদেশ এখনো পূর্ববঙ্গ! ১. পশ্চিম বঙ্গ প্রদেশের নাম, কলকাতা রাজধানীর নাম। ২. ১৯৪৭ সালের পূর্বে আমাদের অঞ্চল পূর্ব বঙ্গ নামে পরিচিত ছিল। তারপর পাকিস্তান আন্দোলনের সফলতার ফলে পূর্ববঙ্গ এবং আসামের কিছু অংশ নিয়ে (সিলেট) পূর্ব পাকিস্তান হয়, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সফলতার পর পূর্ব পাকিস্তান নাম পরিবর্তিত হয়ে বাংলাদেশ হয়। এখন কেউ আমাদেরকে পূর্ববঙ্গ বলার অর্থ হচ্ছে তিনি ৪৭ এবং ৭১ কে অস্বিকার করতেছেন। সানন্দা পত্রিকা খুব ভালোভাবেই জানে পূর্ববঙ্গ নামে এখন কোনো অঞ্চল নাই, তারপরও বাংলাদেশকে তাচ্ছিল্য করে সানন্দা বাংলাদেশকে পূর্ববঙ্গ লিখেছে।
সানন্দা একটি বাংলা পাক্ষিক পত্রিকা। এটি একটি নারী বিষয়ক পত্রিকা। আনন্দবাজার পত্রিকা প্রাইভেট লিমিটেড এটি কলকাতা থেকে প্রতি মাসের ১৫ ও ৩০ তারিখে প্রকাশ করে। ১৯৮০-এর দশকের মধ্যভাগে চালু হওয়া এই পত্রিকাটির প্রাক্তন সম্পাদন ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী ও চিত্র পরিচালক অপর্ণা সেন।
একবার এক ভারতীয় বন্ধু'কে জিজ্ঞেস করলাম, কত বছর ছিলেন সিকিমে আপনি? ৩ বছর ছিলাম। সিকিম যে একটা আলাদা স্বাধীন দেশ ছিল জানেন? বন্ধু' আকাশ থেকে পড়ছে মনে হয়! কেয়া বলরাহে ইয়ার! তারপর জিজ্ঞেস করলাম, সিকিম কবে থেকে ভারতের অংশ জানেন? কেন? ভারতের জন্ম থেকেইতো বলে, সে আমার দিকে এমন ভাবে তাকানো শুরু করছে, মনে হয় আমি ভিনগ্রহের প্রাণী।এই বন্ধু অশিক্ষিত হইলে এক কথা ছিল, পড়ালেখা অনেক করেছে। এম. কম করা, ভাল একটা প্রতিষ্ঠানের কাজ করে । ভারত তাদের সুবিধামত ইতিহাস পড়ায়, যেমনি বাংলাদেশে এখন চেতনার ইতিহাস পড়ানো হয়। সিকিম যে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল, এই ইতিহাস তারা বিলুপ্ত করে দিয়েছে। ভারতের বর্তমান প্রজন্ম জানে, ৭১ এ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছিল, বাংলাদেশের নাম-গন্ধ সেখানে নাই, অল্প বয়স্ক ভারতীয়দের ৭১ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ বললে, তারা আকাশ থেকে পড়ে। আর এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের গত বিজয় দিবস ভারত ঘটা করে ভারত_পাকিস্তান যুদ্ধ বিজয় দিবস পালন করে!?
কোলকাতার দাদারা বাংলাদেশকে পূর্ববঙ্গ নামে তাদের ম্যাগাজিনে অভিহিত করেছে (২৯/০২/২০১৬, পাক্ষিক সানন্দা)। তারা তাদের নতুন প্রজন্মকে শিখাচ্ছে বিক্রমপুর, বরিশাল, সিলেট, ঢাকা এইসব পূর্ববঙ্গ। নূন্যতম আত্মাসম্মানবোধ থাকলে পরের সম্পদে মানুষ নজর দেয়না। কোলকাতাবাসীর সেই আত্মাসম্মান নাই বলেই তারা একটি স্বাধীন দেশকে পূর্ববঙ্গ নামে সম্বোধন করে। আর থাকবেই না কেন যাদের রক্তে দালালী মিশে আছে, আর পরধনের প্রতি লোভ লালসার দৃষ্টি এদের আর গেল না।
বাংলাদেশের টিভি, মিডিয়া সবই ভারতে ব্যান্ড। সুতরাং তারা যা শিখাবে, তাই শিখবে তাদের বংশধররা। বলার এই সাহসটুকু পাওয়ার পিছনে বাংলাদেশের চেতনাজীবীদের অবদান রয়েছে অনেক। পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে ভারতের প্রতি আমাদের অনেক ভালোবাসা আছে এবং আজীবনই ভালোবাসতে চাই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে একতরফা ভালোবাসার কী কোন মূল্য আছে ? আমাদের তিতাস হত্যা, সীমান্তে আমাদের হত্যা, ফাঁরাক্কা বাঁধ, তিস্তা বাঁধ, টিপাইমুখ বাঁধ দিয়ে আমাদের নদী গুলো মেরে ফেলার প্রাগৈতিহাসিক ষড়যন্ত্র, প্রয়োজনীয় পানির চুক্তি করা হলেও সেক্ষেত্রে দাদাগীরির পরিচয়, বারবার আলোচনার আর অভয় দিলেও সীমান্তে যখন-তখন বাংলাদেশীদেরকে হত্যা করা, আমাদের টিভি চ্যানেল ভারতে চলতে না দিয়ে বাংলাদেশে তাদের মিডিয়ার রাজত্ব করা, এভাবে লিস্ট করলে অনেক লম্বা হয়ে যাবে । আমরা শুধু দিয়েই যাবো কিন্তু আমাদের অর্জন শূন্যই থেকে যাবে । এটা তো কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমার এক স্যার বলেছিলেন - আমি তোমাকে চাউল দিবো না কিন্তু আমাকে ভাত দিতে হবে !!! ভারত বাংলাদেশের অবস্থাও তাই হয়েছে।
প্রতিবাদ করার জন্য রাস্তায় যেয়ে দাঁড়াতে না পারলেও বাংলাদেশী হিসাবে অন্তত এইটুকু করা আপনাদের পক্ষে সম্ভব । আশা করি আমরা সবাই যদি তাদের পণ্য বর্জন করি তাহলে তাদের প্রতিষ্ঠান গুলোর যে ক্ষতি হবে তাতে একসময় তারাই তাদের সরকারকে চাপ দেবে যে টিপাইমুখ বাঁধ লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি করে ফেলছে । এটা বন্ধ করা উচিত। অনেকেই ইরাকে মার্কিন হামলার পর ইহুদি ও মার্কিন মালিকানাধিন কোম্পানির পণ্য বর্জন করেছিলেন । তাহলে আমাদের নিজের দেশের জন্য ভারতের পণ্য বর্জন করা তো আমাদের সবার দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়! একটা তথ্যঃ Daily Star এর একটা রিপোর্ট অনুযায়ি আমরা প্রতিবছর ভারতীয় channel গুলো দেখার জন্য ২০০০ কোটি টাকা (দুই হাজার কোটি টাকা) দিয়ে থাকি। আরেকটা তথ্য হলঃ এত বড় দেশ ভারতের সর্বমোট রফতানি আয়ের শতকরা সাত (৭%) ভাগ বাংলাদেশ থেকে যায়। আমাদের ভারতীয় পণ্য বর্জন নিশ্চিত ভাবেই তাদের দেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রভাব ফেলবে।
ভারত থেকে চাল, ডাল, রশুন, পেয়াজ, মসলা, কাপড়, বস্ত্র, কিটনাশক, সার, বইপত্র, মেসিন, যন্ত্রাংশ, কম্পিউটার, সফটওয়্যার, গাড়ি আমদানি না করলেই হয়। তাতে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে যাবে। স্বদেশী পণ্য আমাদের ব্যবহার বাড়াতে হবে আর ভারতীয় পণ্য বর্জন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ভারত তাদের স্বার্থে এবং আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে প্রথমে বাংলাদেশের
কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, ব্যবসায়ী, কূটনীতিক পর্যায়ের প্রভাব সৃষ্টিকারী ব্যক্তিবর্গের মগজগুলো কিনে নিয়েছে অনেক আগেই। তারপরও আশা আর বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে প্রথমেই নিজে থেকে এবং আজ থেকেই ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন । আনন্দবাজার গোষ্ঠীর লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন পাক্ষিক সানন্দার সম্পাদক অপর্না সেন এক সম্পাদকীয়তে লিখেছিলেন, সানন্দা ম্যাগাজিন মূলত অনেকাংশেই বাংলাদেশের পাঠক নির্ভর। সেই সানন্দা পত্রিকা গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় বাংলাদেশকে পূর্ববঙ্গ লেখা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে কারো কোনো রা শোনা গেলো না। নব্বই দশকের গোড়ার দিকে আনন্দবাজার পত্রিকার সাহিত্যা ম্যাগাজিন দেশ পত্রিকায় নীরদ চন্দ্র চৌধুরীর একটি লেখায় বাংলাদেশকে ‘তথাকথিত বাংলাদেশ’ ছাপায়।“এ নিয়ে বেশ উত্তেজনা ছিল কলকাতায়। ম্যাক্সমুলার ভবনে আয়োজিত আলোচনা সভার প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন শ্রোতা এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে। তিনি উত্তর দেন, “আমার দেশকে যে অবৈধ বা বেজন্মা বলবে, আমার বাপ হলেও, তাঁকে গুলি করবো।”(সাযযাদ কাদির)। সেসময় বিএনপি সরকার দেশ পত্রিকা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করায় দেশ পত্রিকা পাঠক হারিয়ে টিকে থাকতে সাপ্তাহিক থেকে পাক্ষিক হয়ে যায়।
সেই বাংলাদেশ আজ আর নেই। আনন্দবাজার গ্রুপ বাংলা একাডেমিকে আনন্দবাজার পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিলে বাংলা একাডেমি সে পুরস্কার না নেয়ায় বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে সে পুরস্কার দিয়ে বাংলা একাডেমি ও তসলিমা নাসরিনকে এককাতারে নামিয়েছিল। অমর একুশে বই মেলায় ভারতীয় প্রকাশকদের বই বিশেষ করে আনন্দাবাজার গ্রুপের আনন্দ পাবলিশার্সের বই ঢোকার বিরুদ্ধে প্রবল বাধা সৃষ্টি করেছিলেন গুণী লেখক আহমদ ছফা।এ কথা জানতে পেরে আনন্দবাজারের বাদল বসু ছফাকে গালি দিয়েছিল। সেসময় শওকত ওসমান এক লেখায় ছফাকে বাজে লোক আখ্যা দিয়েছিল। এ লেখা পড়ার পর ছফা শওকত ওসমানকে নিয়ে নিউমার্কেটে গিয়ে বিভিন্ন বইয়ের দোকানে গিয়ে শওকত ওসমানের লেখা বই চাইলে দোকানদাররা জানান, তারা এই লেখকের নামই শোনেননি।এসময় ছফা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা বই চাইলে দোকানদাররা তার সামনে বিপুল পরিমাণ বই হাজির করেন। তা দেখিয়ে ছফা শওকত ওসমানের কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “ দেশটাকে কি তাহলে আমরা বাল ছেড়ার জন্য স্বাধীন করেছিলাম...।”
এবার ব্রাহ্মণ্যবাদীদের অখন্ড ভারত' প্রতিষ্ঠার লালসা নিয়ে কিছু কথা: আমরা যদি গত চার হাজার বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব সব সময় ব্রাহ্মনরা বৌদ্ধদের জৈনদের নানা অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে আর্য-ব্রাহ্মনরা ভারতীয় উপমহাদেশে আসে এবং হিন্দুধর্ম চালু করে। হিন্দুধর্ম চালু করলেও কর্তিত্বটা আর্য-ব্রাহ্মণদের হাতে রেখে দেয়া হয়, নিয়ম করা হয় স্বর্গে যেতে হলে ব্রাহ্মণদের আনুগত্য করতে হবে। বৌদ্ধরা এবং জৈনরা আর্যদের তৈরী করা এই ধর্মের সমালোচনা শুরু করে, নতুন ধর্ম গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। শুরু হয় বৌদ্ধদের-জৈনদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন, লাখ লাখ বৌদ্ধ এবং জৈনকে হত্যা করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের ক্ষমতা গ্রহনের আগ পর্যন্ত বৌদ্ধ ধর্মের লোকদের উপর জৈন ধর্মের লোকদের উপর এই অত্যাচার-নির্যাতন চলতে থাকে।
রাজা অশোক উড়িষ্যাতে এক লাখ (মিলিয়ন নয়) বৌদ্ধকে হত্যা করেছিল, পরবর্তিতে রাজা অশোক এই অনুশোচনায় বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে। রাজা শশাঙ্ক তার শাসনামলে ঘোষণা করেছিল যেখানে বৌদ্ধ পাবে সেখানেই হত্যা করবে। সেন শাসনামলে বৌদ্ধদের উপর আবার অত্যাচার-নির্যাতন নেমে আসে। সেন শাসনামলের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে বৌদ্ধরা মুসলমানদের সাহায্য চায় ফলে বখতিয়ার খিলজি বাংলা বিজয়ে এগিয়ে আসে। উত্তর ভারতীয় অঞ্চল, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা যেখানেই মুসলমানরা ক্ষমতা গ্রহণ করেছে বৌদ্ধরা এবং জৈনরা মুসলমানদেরকে সহযোগিতা করেছে। মুসলমানদের ক্ষমতা গ্রহনের মধ্য দিয়ে আর্য-ব্রাহ্মনদের অত্যাচার-নির্যাতন, জোর করে বৌদ্ধদেরকে হিন্দু বানানোর প্রচেষ্টা বন্ধ হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের আগমনে যেভাবে বৌদ্ধরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, তেমনিভাবে ব্রিটিশদের আগমনে ব্রাহ্মণরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। নদীয়ার রাজা কৃষ্ণদেব নবাব সিরাজ উদ দৌলা থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল। তারপর ক্রমান্বয়ে সমগ্র ভারতবর্ষই মুসলমানদের থেকে ব্রিটিশদের হাতে চলে যায়। শুরু হয় গোলামির জীবন, বৌদ্ধদের মুক্তিদাতা মুসলমানরা এবার নির্যাতিত হতে থাকে। একদিকে ব্রিটিশ একদিকে ব্রাহ্মণ দুয়ে মিলে মুসলমানদের উপর যে অবর্ণনীয় অত্যাচার-নির্যাতন চলে সেটা থেকে আজাদী আসে ১৯৪৭ সালে। কিন্তু মুসলমানরা বৌদ্ধদের মত হারিয়ে যায়নি, ধর্মও পরিবর্তন করেনি কিংবা অন্য দেশেও চলে যায়নি- বরং প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, একশত বছর ভারতীয় উপমহাদের বীর মুসলিমরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রাখে। ১৯৪৭ আগে পাকিস্তান আন্দোলনের সফলতার মাধ্যমে মুসলমানরা নিজেদের অধিকার আদায় করে নেয়। সেই পরাজয়ের ব্যাথায় আর মুসলমানদের শোষণ করা নেশায় এখনও শুকুনের বাংলাদেশের উপরে নজর দিয়ে রেখেছে।
ভারত মূলত কোনো দেশের নাম নয়, এরা কোনো একক জাতিও নয়. ভারত হচ্ছে একটা উপমহাদেশের নাম। নানান ধর্মের নানান জাতের নানা ভাষা-ভাষী মানুষের অঞ্চল, বৃটিশরাই সর্বপ্রথম ভারতীয় উপমহাদেশকে একসাথে করে, তবে সে সময়ও হায়দ্রাবাদ, কাশ্মীরসহ অনেক স্বাধীন রাজ্য ছিল। অর্থাত আক্ষরিক অর্থে ব্রিটিশ ইন্ডিয়াও অখন্ড ছিল না। মুসলিম শাসনামলে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যাতে স্বাধীন সুলতানি শাসন ছিল।
মুঘলদের শাসনটা ছিল মূলত উত্তর ভারত ও পাকিস্তান কেন্দ্রিক। টিপু সুলতান দক্ষিন ভারত শাসন করেছে। গুজরাটে, আসামে আলাদা মুসলিম রাজ্য ছিল। মুসলমানদের আগমনের আগেও ভারতীয় উপমহাদেশ নানা অঞ্চলে বিভক্ত ছিল এবং আলাদা আলাদা রাজা দ্বারা শাসিত হত। মহারাষ্ট্র স্বাধীন দেশ ছিল তারা বাংলাতে লুটপাট করতে আসত। যেমন সেই লুটপাটের কাহিনী নিয়ে ছড়া আছে, খোকা ঘুমালো পাড়া জোরালো বর্গী এলো দেশে। এই বর্গী হলো অত্যাচারী হিন্দু ডাকাত সেনরা।
কেরালা-তামিল নাড়ু সবসময়ই স্বাধীন ছিল। মনিপুর-মিজোরাম এরাও স্বাধীন রাজ্য ছিল। মূলত অখন্ড ভারতের স্লোগান হচ্ছে প্রতিবেশী ছোট ছোট দেশগুলোকে গ্রাস করার স্লোগান। আর ভারতের যেসব অঞ্চল স্বাধীন হতে চায় তাদেরকে ধরে রাখার একটা চেষ্টা। ঐতিহাসিকভাবে হাজার বছরের অখন্ড ভারত বলে কিছু নাই। ব্রিটিশদের অধীনস্ত ইন্ডিয়ার কথা বাদ দিলে অখন্ড ভারতের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। ভবিষ্যতেও অখন্ড ভারত বলে কিছু হবে না, মানুষ স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায় ব্রাহ্মণ্যবাদের দাসত্ব করতে চায় না।
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ
No comments:
Post a Comment