Sunday, 18 October 2015

ক পর্ব দুই ... চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ নিয়ে সাংবাদিক সূফি বরষণের কিছু কথা...

ক পর্ব দুই ...
চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ নিয়ে সাংবাদিক সূফি বরষণের কিছু কথা...

সূফি বরষণ
১৯৮২ সালে বিখ্যাত জীবাশ্মবিদ নাইলস এলড্রেজ লেখেন যে, গত বিশ বছরে বিবর্তনবাদের সুরক্ষিত ঘরে যে সন্দেহের দানা বেঁধেছিল তা বর্ধিত হয়েছে। তিনি বলেন যে , বৈজ্ঞানিক দল- উপদলসমূহের মধ্যেও মতামতের কোন মিল নেই, বিষয়টি আজকাল আরো জটিল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন যে , দেখে শুনে মনে হয় যত জীববিজ্ঞানী রয়েছেন তত প্রকারের বিবর্তনবাদ রয়েছে। (সূত্রঃ ন্যাচারাল হিস্টরি নাইলসএলড্রেজের বিন্ধ ইভোলুসনারি হাইজকিনিং ফেব্রুয়ারী, ১৯৮২,পৃষ্ঠা ৭৮-৮১)

লন্ডন টাইমস -এর লেখক ক্রিস্টোফার বুকার (যিনি বিবর্তনবাদ মান্য করেন) বলেন যে, বিবর্তনবাদে রয়েছে বড় বড় ফাঁক, যা ডারউইন পর্যন্ত কিছুটা অবহিত ছিলেন। তিনি আরো বলেন যে, এটি একটি ব্যাঙ্গাত্মক ব্যাপার যে, যে বইটি বিভিন্ন জন্তু-জানোয়ার প্রজাতির মূলের ব্যাখ্যার জন্য বিখ্যাত হয়েছে আসলে এ ব্যাপারে কিছুই করে নাই। বুকার বলেন যে, ডারউইনের মৃত্যুর একশত বছর পরেও আমাদের প্রদর্শনযোগ্য বিন্দুমাত্র অথবা আপাতত সুন্দর ধারণা নেই কিভাবে বিবর্তন হয়েছিল, আর এই বিষয় নিয়ে হালে বহু লড়াই ফাসাদ হয়েছে। তিনি বলেন, বিবর্তনবাদীদের ভিতর প্রায় খোলামেলা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে,আর প্রত্যেক বিবর্তনবাদীদের ভিতর প্রায় খোলামেলা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, প্রত্যেক বিবর্তনবাদী উপদল বিবর্তনবাদে নতুন মতামত সংযোজন করেছেন। তিনি বলেন , কিভাবে আর কেন বিবর্তন হয়েছিল, এ সম্পর্কে আমাদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই, আর কোন সময় হবে না।

(সূত্রঃ দি স্টার , জোহানেসবার্গ, ক্রিস্টোফার বুকার এর নিবন্ধ দি ইভোলুসন অব এ থিওরি ,২০ এপ্রিল, ১৯৮২,পৃষ্ঠা ১৯)

যেদিন থেকে ডারউইনের বই প্রকাশ সেইদিন থেকেই বিতর্ক শুরু ??!!!
লন্ডন ১৮৫৯, ২৪ নভেম্বর।
সেদিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয় ডারউইনের যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘প্রজাতির উতপত্তি' (Origin of Species)। মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে প্রথম সংস্করণের ১ হাজার ২৫০টি বই বিক্রি হয়ে যায়। প্রচণ্ড বিতর্কের ঝড় ওঠে এ বইটিক ঘিরে। কোনো বইকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা এর আগে দেখা যায়নি।

Finch পাখির ঠোঁট: ডারউইন এগুলোকে গালাপ্যাগোস দ্বীপপুঞ্জে দেখেছিলেন এবং তার তত্ত্বের প্রমাণ হিসেবে ধরেছিলেন। আসলে, পাখির ঠোঁটের এ বিভিন্নতার কারণ হলো Genetic Variation, কোন Macro-evolution নয়।

“ব্যাপারটা স্পষ্ট। বিবর্তন তত্ত্বটি বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন কর্তৃক প্রস্তাবিত একটা ধারণা বা মতবাদ। কিন্তু এই মতবাদটি ডারউইনের বইয়ে যখন প্রথম অবতারণা করা হয় এরপর থেকে গত ১৫০ বছর যাবৎ তত্ত্বটিকে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ধারণাটি এখনও হাইপোথিসিস হিসেবেই রয়ে গেছে। বরং অনুসন্ধানের ফলে এর বিপরীতে যত প্রমাণ বের হয়ে এসেছে তা এর পক্ষে উপস্থাপিত প্রমাণের চেয়ে অনেক বেশি। এরপরও পশ্চিমা বিজ্ঞানজগতের বিভিন্ন প্রকাশনা, ডকুমেন্টারি দেখলে মনে হয় বিবর্তনকে একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছে। বিবর্তনবাদকে বুঝতে হলে আমাদের জানা দরকার- বিজ্ঞানী ডারউইনের বই Origion of Species-এ বিবর্তন সম্পর্কে যে ধারণাটি পেশ করা হয়েছে তা কী? সেটি হল, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রজাতির উৎপত্তি বা অস্তিত্বের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যোগ্যতমের উর্দ্ধতন। তার তত্ত্বের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো হলো-

১. দৈবাৎ স্বয়ংক্রিয় ঘটনার মধ্য দিয়ে জীবের উৎপত্তি।

২. প্রাকৃতিক নির্বাচন।

৩. বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম।

আরেকটু বিস্তারিত বললে- প্রথমত, বিবর্তনবাদ তত্ত্ব অনুসারে জীবন্ত বস্তু অস্তিত্বে এসেছে দৈবাৎ কাকতালীয়ভাবে এবং পরবর্তীতে উন্নত হয়েছে আরও কিছু কাকতালীয় ঘটনার প্রভাবে। প্রায় ৩৮ বিলিয়ন বছর আগে, যখন পৃথিবীতে কোন জীবন্ত বস্তুর অস্তিত্ব ছিল না, তখন প্রথম সরল এককোষী জীবের (আদিকোষ) উদ্ভব হয়। সময়ের পরিক্রমায় আরও জটিল এককোষী এবং বহুকোষী জীব অস্তিত্বে আসে। অন্য কথায় ডারউইনের তত্ত্বানুসারে প্রাকৃতিক শক্তি সরল প্রাণহীন উপাদানকে অত্যন্ত জটিল এবং খুঁতহীন পরিকল্পনাতে পরিণত করেছে! [১]

দ্বিতীয়ত, ডারউইনবাদের মূলে ছিল প্রাকৃতিক নির্বাচনের ধারণা।… প্রাকৃতিক নির্বাচন এই ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত যে, প্রকৃতিতে বেঁচে থাকার জন্য একটি সার্বক্ষণিক সংগ্রাম বিদ্যমান। এটা সে সকল জীবকে অগ্রাধিকার দেয় যাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে সবচেয়ে শক্তিশালী, ফলে প্রাকৃতিক অবস্থার সাথে সবচেয়ে বেশি খাপ খাওয়ানো প্রজাতিটি বেঁচে থাকে। যে সকল হরিণ সবচেয়ে বেশি দ্রুতগামী তারাই শিকারী পশুর হাত থেকে রক্ষা পাবে।


তৃতীয়ত, প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের প্রয়োজনীয় ধারণা অনুযায়ী প্রকৃতিতে বেঁচে থাকার জন্য একটি ভয়ানক সংগ্রাম চলছে এবং প্রতিটি জীব শুধু নিজেকে নিয়েই চিন্তা করে। ডারউইন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ থমাস ম্যালথাসের মত (idea) দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। ম্যালথাস মনে করতেন যে, মানবজাতিতে সন্দেহাতীতভাবে একটি সার্বক্ষণিক সংগ্রাম চলছে। তার চিন্তাভাবনার ভিত্তি ছিল এই যে, জনসংখ্যা এবং সেই সাথে খাদ্যের প্রয়োজন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে, অন্যদিকে খাদ্যর ভাণ্ডার বাড়ছে গাণিতিক হারে। এর ফলে জনসংখ্যার আকৃতি অপরিহার্যভাবে প্রাকৃতিক নিয়ামক, যেমন ক্ষুধা ও রোগ, দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ডারউইন মানবজাতিতে ‘বাঁচার জন্য প্রচণ্ড সংগ্রাম’ সংক্রান্ত ম্যালথাসের দৃষ্টিভঙ্গিকে বড় আকারে একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করেন এবং বলেন যে, ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ এ লড়াইয়ের ফল।

যদিও পরবর্তীতে অনুসন্ধানে প্রকাশিত হয় যে, প্রকৃতিতে জীবনের জন্য সেরকম কোন লড়াই সংঘটিত হচ্ছে না যেরূপ ডারউইন স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নিয়েছিলেন।

১৯৬০ এবং ১৯৭০ সালে একজন ব্রিটিশ প্রাণিবিজ্ঞানী ভি.সি. উইনে অ্যাডওয়ার্ডস এ উপসংহার টানেন যে, জীবজগৎ একটি কৌতুহলোদ্দীপক পন্থায় তাদের জনসংখ্যার ভারসাম্য রক্ষা করে। “…. প্রাণীরা তাদের সংখ্যা কোন প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নয় বরং প্রজনন কমিয়ে দেয়ার মাধ্যমে করে।

অতএব সম্মানিত পাঠক বন্ধুগণ  আশা করি আপনারা এবার একটি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন ॥ ডারউইনের তত্ত্ব নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক হয় এবং বর্তমানেও হচ্ছে আর ভবিষ্যতেও হবে ??!! কারণ পৃথিবীর মানুষ  বিতর্কিত  নিষিদ্ধ বস্তু নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করে মজা পাই॥ আর ইংল্যান্ডের মতো চতুর্ দেশগুলো কিছু ভ্রান্ত মানুষকে স্টার বানিয়ে পূজা করে আর বিশ্ববাসীর কাছে ভ্রান্ত মতবাদ প্রচারের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যুগ যুগ ধরে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে ॥
অতএব সাধু সাবধান ॥

মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ

No comments:

Post a Comment