মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর করতেই মানবতার বাণী নিয়ে লালনের আবির্ভাব হয়েছিল॥
সূফি বরষণ
মহাপুরুষ গুরু লালন সাঁইজীর গান দিয়ে এই লেখা শুরু করছি,
" এবার মানুষ খোঁজে পাই না তারে, মানুষ লোকাইলো কোন শহরে, ন ছেড়ে ন দে এলো...., কোথায় গেলো যে জানো বলো মোরে, মানুষ লোকাইলো কোন শহরে" ॥ লালন যে মানুষের সন্ধান করছেন সারা জীবন, সেই মানুষের সন্ধান করা আমাদের সমাজের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে ॥ লালন যে বলেছিলেন
মানুষ ভজলে তুই সোনার মানুষ হবি॥ আজ সমাজে মানুষ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মানবোধ ভালোবাসা না থাকার কারণে সমাজে এতো অনাচারে আর নোংরামিতে ভরপুর হয়ে গেছে ॥
তাই আমাদের কে লালনের মানবতাবাদের দীক্ষা গ্রহণ করা আজ জরুরি হয়ে পড়েছে ॥
লালনের জন্ম ১৭৭২- ১৭ অক্টোবর॥
হিন্দু কী যবন এ-প্রশ্ন অনেক গবেষকের কাছেই দীর্ঘদিনের॥ কিন্তু সাধারণ জনগণের কাছে লালন অতীতেও মানুষ ছিলেন বর্তমানেও মানুষ আছেন। লালনকে নিয়ে সমস্যা বাঁধিয়েছেই বিড়াল তপস্বী উচ্চ শিক্ষিত পণ্ডিতেরা আর সাম্প্রদায়িক উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা।
সাম্প্রদায়িক ভেদমুক্ত বস্তুবাদে সমৃদ্ধ লালনের গান বাংলার শ্রমিক - কৃষকের কাছে আজো জনপ্রিয়। লালনকে একজন বস্তুবাদীরূপে বিবেচনা করা কঠিনও নয়। লালন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বাইরে গিয়ে সারা জীবন জনগণের বস্তুবাদকে জীবনে অনুশীলন করেছেন।
জাতিভেদ বিরোধি ঐতিহ্যটি বাঙলায় এক মহান ধারা হিসেবে চিরদিনই টিকে ছিল। প্রাচীনকালে এ অঞ্চলে জাতিভেদ বিরোধী ছিলেন বৌদ্ধ, জৈন, বস্তুবাদী, চার্বাক, আজীবিক, আদিম জনজাতিগণ, লৌকিক তন্ত্রীরা। মধ্যযুগের তাবৎ ভক্তি আন্দোলন ধর্ম, লিঙ্গ, জাতিকে অগ্রাহ্য করেছে। বিশ শতকের পূর্বেই কর্তাভজা, সাহেবধনী, খুশী বিশ্বাসী, মতুয়া, সহজিয়া বৈষ্ণব প্রভৃতি লোকায়ত গোষ্ঠী জাতিভেদ বিরোধী আন্দোলন চালিয়েছেন।
বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহের ১২৫তম ‘তিরোধান দিবস’ উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়া আখড়াবাড়ীতে ১৬ অক্টোবর শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী ‘লালন স্মরণ উৎসব’।
উৎসবকে ঘিরে ছেঁউড়িয়ার মরা কালি নদীর তীরে লালনের আখড়াবাড়ীতে বসছে বাউল, সাধু আর ভক্তদের হাট। ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের হাজারও বাউল ও তাদের অনুসারীরা এসে জড়ো হতে শুরু করেছেন লালনের আখড়াবাড়ীতে।
পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব আগামী ২০ অক্টোবর শেষ হবে। তবে গ্রামীণ মেলা চলবে মাসব্যাপী।
লালন জীবনী:
ব্রিটিশ শাসকদের অত্যাচারে গ্রামীণ মানুষ যখন অতিষ্ঠ, কুমারখালির ছেঁউড়িয়ায় মানবধর্মের পথ প্রদর্শক হিসেবে তখন আবির্ভূত হন বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ।
আজও অজানায় রয়ে গেছে তার জন্মরহস্য। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। ছিলেন স্বশিক্ষিত। যৌবনে তীর্থস্থানগুলো ভ্রমণকালে তার ভাবনান্তর ঘটে, সাধনায় প্রবেশ করেন তিনি। তীর্থবাসের এক পর্যায়ে বসন্ত রোগ হলে সঙ্গীরা তাকে ছেড়ে যায়। মলম শাহের আশ্রয়ে জীবন ফিরে পেয়ে সাধক সিরাজ সাঁইয়ের সান্নিধ্যে তিনি সাধক ফকিরি লাভ করেন।
পরে ভক্ত মলম শাহের দানকৃত ১৬ বিঘা জমিতে ১৮২৩ সালে গড়ে ওঠে লালনের আখড়া। সেখানে বাউল সম্রাটের বসবাস ও সাধনার জন্য খড়ের বড় ঘর তৈরি হয়। ওই ঘরেই চলত সাধন-ভজন।
ছেঁউড়িয়ার আখড়া স্থাপনের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিষ্য-ভক্তপরিবৃত হয়ে থেকেছেন লালন শাহ। তিনি প্রায় এক হাজার গান রচনা করেছেন।
বাংলা ১২৯৭ এর ১ কার্তিক ও ইংরেজি ১৬ অক্টোবর ১৮৯০-এর ভোরে এই মরমী সাধক দেহত্যাগ করেন। সাধন-ভজনের ঘরটিতেই তাকে সমাহিত করা হয়।
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ
No comments:
Post a Comment