Sunday, 18 October 2015

ক পর্ব এক... চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ নিয়ে সাংবাদিক সূফি বরষণের কিছু কথা...


পর্ব এক...
চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ নিয়ে সাংবাদিক সূফি বরষণের কিছু কথা...

সূফি বরষণ
গতকাল শনিবার চার্লস ডারউইনের বাড়ি ঘুরে আসার পথে বন্ধুবর ছোটো ভাই হারুন ও মনিরের অনুপ্রেরণায় এই লেখায় উৎসাহিত হলাম ॥ কারণ যে জন মানবহীন জঙ্গলের একটি বাড়িতে বসবার করতেন তার পক্ষে এমন কুচিন্তা মূলক ভ্রান্ত অবৈজ্ঞানিক মতবাদ বানানো সম্ভব ॥ তাই মহান আল্লাহ নামে মহা গ্রন্থ আল কোরআনের বাণী দিয়ে শুরু করলাম ॥
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

13 হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।
সুরা আল-হুজজাত আয়াত : ১৩
বিবর্তনবাদ তত্ত্ব অনুযায়ী যেখানে প্রাণ স্রষ্ট্রার ভুমিকা ছাড়াই স্বতস্ফূর্তভাবে হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা সেখানে স্রষ্টাকে আনাটা বাহুল্যতাই। স্রষ্টা বিষয়ে বিবর্তনবাদের সাথে ইসলামের যে বিরোধ অন্য প্রায় সব প্রধান ধর্মগুলোর সাথেই সে বিরোধ থাকার কথা! বিবর্তনবাদ মানুষকে পশুর একটি উন্নত রূপ হিসেবেই দেখে থাকে। অপরদিকে ইসলাম ধর্মীয় বিশ্বাস মতে উপরে উল্লিখিত আয়াত হতে বুঝা যায়,   প্রথম মানুষ আদম (আঃ) স্রষ্টার সরাসরি সৃষ্টি। কিছু মুসলিম বিবর্তনবাদীকেও পাওয়া যায় যারা আদম (আঃ) এর সৃষ্টিকে বিবর্তনের প্রক্রিয়া বলেই চালাতে চায়। কিন্তু এ ধরণের বিশ্বাস বিবর্তনবাদ ও ইসলাম উভয়ের সাথেই সাংঘর্ষিক। বিবর্তনবাদ অনুসারে যে প্রাইমেট থেকে মানুষ এর সৃষ্টি তা একক কোন ব্যক্তি বা প্রাণী নয়, বিবর্তন ঘটার কথা একটি প্রাণীসমষ্টিতে। কিন্তু কুরআনের ভাষ্যমতে প্রাণীসমষ্টিকে পাওয়া যায় না॥

এছাড়া আদম (আঃ)-কে মাটি থেকে সরাসরি তৈরীর কথাই পাওয়া যায়, কিন্তু কোন চক্রের কথা পাওয়া যায় নাঃ
إِنَّ مَثَلَ عِيسَى عِندَ اللّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ ثِمَّ قَالَ لَهُ كُن فَيَكُونُ

59 নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তাকে মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন এবং তারপর তাকে বলেছিলেন হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন। সুরা আল ইমরান আয়াত :৫৯
প্রিয় পাঠক এবার বলি বিবর্তনবাদ তত্ত্বের সম্পর্কে ॥
Science এর বই গুলোতে মানুষের আদি উৎসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ডারউইনের বিবর্তনবাদের theory উপস্থাপিত হয়েছে। চার্লস ডারউইন তার The Origin of Species (১৮৫৯) বইয়ে প্রানী জগতের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই theory এর অবতারণা করেন। এই তত্ব মতে মানুষের উৎপত্তি হয়েছে বানর জাতীয় মানুষ (Ape) থেকে, পর্যায় ক্রমে মিলিয়ন বছরের মাধ্যমে। পরিবর্তিত রূপে ডারউইনের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ছিল জীববিজ্ঞানের একত্রীকরণ তত্ত্ব, যা জীববৈচিত্রের ব্যাখ্যা প্রদান করে।

বিবর্তনবাদ কি?
তিনিই সর্বপ্রথম অনুধাবন করেন যে সকল প্রকার প্রজাতিই কিছু সাধারণ পূর্বপুরুষ হতে উদ্ভূত হয়েছে এবং তার এ পর্যবেক্ষণটি সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন। বিবর্তনের এই নানান শাখা-প্রশাখায় ভাগ হবার বিন্যাসকে তিনি প্রাকৃতিক নির্বাচন হিসাবে অভিহিত করেন।
বিবর্তনবাদকে বুঝতে হলে আমাদের যেটা জানতে হবে- বিজ্ঞানী ডারউইনের The origin of Species এ বিবর্তনবাদ সম্পর্কে কি লিখেছেন?
তিনি যেটা লিখেছেন সেটি হল, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রজাতির উৎপত্তি বা অস্তিত্বের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যোগ্যতমের উর্ধতন।
তার তত্ত্বের গুরুত্বপুর্ণ উপাদানগুলো হলোঃ
১. দৈবাৎ স্বয়ংক্রিয় ঘটনার মধ্য দিয়ে জীবের উৎপত্তি।
২. প্রাকৃতিক নির্বাচন এবং
৩. বেঁচে থাকার সংগ্রাম।

এবার পরিষ্কার বুঝা যায় ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব আল কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক॥ তাঁর এই উদ্ভট কল্পনা  প্রষূত কথা কোনো মুসলমান কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারে না ॥
আরও কিছু কোরআনের আয়াত উল্লেখ করছি॥
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيرًا وَنِسَاء وَاتَّقُواْ اللّهَ الَّذِي تَسَاءلُونَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا

01 হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞ্ঝা করে থাক এবং আত্নীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন। সূরা নিসা আয়াত : 0১ ॥


وَاللّهُ أَخْرَجَكُم مِّن بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لاَ تَعْلَمُونَ شَيْئًا وَجَعَلَ لَكُمُ الْسَّمْعَ وَالأَبْصَارَ وَالأَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

78 আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে বের করেছেন। তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর দিয়েছেন, যাতে তোমরা অনুগ্রহ স্বীকার কর। সূরা নাহল আয়াত:  ৭৮ ॥
এই আয়াতেও বুঝা যায় আল্লাহ মানুষকে একটা শুদ্ধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন ॥
وَمَا مِن دَآبَّةٍ فِي الأَرْضِ وَلا طَائِرٍ يَطِيرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلاَّ أُمَمٌ أَمْثَالُكُم مَّا فَرَّطْنَا فِي الكِتَابِ مِن شَيْءٍ ثُمَّ إِلَى رَبِّهِمْ يُحْشَرُونَ

38 আর যত প্রকার প্রাণী পৃথিবীতে বিচরণশীল রয়েছে এবং যত প্রকার পাখী দু’ ডানাযোগে উড়ে বেড়ায় তারা সবাই তোমাদের মতই একেকটি শ্রেণী। আমি কোন কিছু লিখতে ছাড়িনি। অতঃপর সবাই স্বীয় প্রতিপালকের কাছে সমবেত হবে।  সূরা আল আনআম আয়াত: ৩৮॥
এই আয়াতে বুঝা যায় প্রত্যেক প্রাণী ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত ॥

أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاء كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ

30 কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?
সূরা আম্বিয়া আয়াত ৩০
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلاَئِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ

28

আর আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদেরকে বললেনঃ আমি পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্ট একটি মানব জাতির পত্তন করব।  فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُواْ لَهُ سَاجِدِينَ

29

অতঃপর যখন তাকে ঠিকঠাক করে নেব এবং তাতে আমার রূহ থেকে ফঁুক দেব, তখন তোমরা তার সামনে সেজদায় পড়ে যেয়ো। সূরা হিজর আয়াত:২৮;২৯॥
  هَلْ أَتَى عَلَى الْإِنسَانِ حِينٌ مِّنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُن شَيْئًا مَّذْكُورًا

01

মানুষের উপর এমন কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না।  إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا

02

আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। সূরা আদ দাহর আয়াত : ১ ও ২॥
প্রিয় পাঠক আশা করি উপরে উল্লিখিত আল কোরআনের আয়াত সমূহ হতে আপনার কিছুটা হলেও ধারণা করেছেন যে আমরা মানুষ মহান আল্লাহ সৃষ্টির সেরা জীব বানর বা অন্য কোনো প্রাণীর জৈবিক গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের বিবর্তন হয়নি ॥ কোরআনের আলোকে ডারউইনের ভ্রান্ত মত কোনো ভাবেই গ্রহণ করা যায় না ॥ এই মতবাদের মতো পৃথিবীতে আরও অসংখ্য ভ্রান্ত মতবাদ সৃষ্টি করা হয়েছে শুধুমাত্র মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য॥
এখন বিবর্তনবাদ তত্ত্ব নিয়ে একটু বলি, ডারউইনবাদীরা সহ মোটামুটি সকলেই ইংল্যান্ডের জীববিজ্ঞানী  চার্লস ডারউইনের মতবাদকে “The theory of evolution” তথা “বিবর্তনবাদ তত্ত্ব” বলে অভিহিত করে থাকেন। বিশ্বের বিজ্ঞানী , দার্শনিক, সমাজতত্ত্ববিদ, অর্থনীতিবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আরো অনেককে এই তত্ত্ব নাড়া দিয়েছে। সবাই তাদের নিজস্ব মতবাদের সমর্থনে ডারউইনের বিবর্তনবাদকে নিজের মত করে ব্যাখ্যা করেছেন। ফলে, এমনকি ডারউইন যা বলেন নাই, তাও তাঁরা এতে যোগ করেছেন নিজেদের মতবাদ প্রমাণ করার জন্য। ডারউইনের মতবাদই সঠিকভাবে প্রমাণিত হয় নাই, সেখানে ডারউইনের ওপর ভিত্তি করে অন্যান্য বিষয়ের মতবাদ কিভাবে প্রমাণিত ধরা যায়? সাধারণ জ্ঞানী মানুষেরা ধারনা করেন যে, ডারউইনের বিবর্তনবাদ বলতে চায় যে, মানুষ এর অর্থাr বানর জাতীয় জন্তু থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে, মানুষকে সরাসরি পাওয়া যায় নাই। অর্থা মানুষ সৃষ্ট নয় , বিবর্তনের ফল । তাই স্রষ্টা নেই। মানুষ যদি সৃষ্ট না হয় , বিবর্তনের ফলাফল হয়, তাহলে কিভাবে বলা যাবে, স্রষ্টা নেই? সরাসরি সৃষ্ট ও বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট, সর্বপ্রকারের সৃষ্টিই তো সার্বভৌম স্রষ্টার পক্ষে সম্ভব। কিন্তু এখানে স্মরণ রাখতে হবে যে, ডারউইনের প্রস্তাবিত এই তত্ত্ব কিন্তু পদার্থবিদ্যার কোন তত্ত্বের মতো নয়। অর্থাৎ পদার্থবিদ্যার তত্ত্ব যেমন গাণিতিক মডেলের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত – বিবর্তনবাদ তত্ত্ব মোটেও সেরকম কিছু নয়। ফলে “বিবর্তনবাদ তত্ত্ব” নামকরণ অনেকের কাছেই বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে। যাহোক, বিবর্তনবাদ তত্ত্ব আর বিজ্ঞানের কোন তত্ত্ব যে এক নয় এটা মোটামুটি পরিষ্কার ॥

No comments:

Post a Comment