Saturday 24 October 2015

ডিফেন্স আইনজীবী শিশির মনিরকে হয়রানি কেন ?? স্বৈরাচার খুনী হাসিনার ফাঁসি দেয়া যেহেতু লক্ষ্য তা দিয়ে দিলেই হয়, ট্রাইব্যুনাল নামক প্রহসন মূলক বিচারের কি দরকার?

ডিফেন্স আইনজীবী শিশির মনিরকে হয়রানি কেন ??

স্বৈরাচার খুনী হাসিনার
ফাঁসি দেয়া যেহেতু লক্ষ্য তা  দিয়ে দিলেই হয়, ট্রাইব্যুনাল নামক প্রহসন মূলক বিচারের কি দরকার?

সূফি বরষণ
অবৈধ খুনী হাসিনা সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পাই বলেই আইনজীবীদের হয়রানী করছে॥
কারণ তার প্রতিহিংসা চারিতার্থ করতেই কথিত বিচারের নাটক ॥
এইভাবে হাসিনা ডিক্টেটর শাসন পুরোপুরি ভাবে কায়েম করেছে ॥
কিন্তু তার হিংস্র শা�সন বেশি দিন স্থায়ী হবে না॥
সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ ব্যতীত অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিনকে আটক করায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডিফেন্স টিমের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অতিসত্ত্বর তাকে মুক্তি প্রদানের দাবী জানাচ্ছি।

এদিকে ডিফেন্স টিমের প্রধান আইনজীবী শিশির মুহম্মদ মনিরের বাসায় কয়েক দফায় গোয়েন্দা পুলিশ হানা দিয়েছে গ্রেপ্তার করার জন্য ॥ তিনি পলায়ন করে আছেন ॥
� মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় আটক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর নিজামী ও সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিনকে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে যাওয়ার পথে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ের কড্ডার মোড় থেকে গত বৃহস্পতিবার (২২/১০/২০১৫)বেলা ২.০০ ঘটিকার সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে। রাজশাহী গামী ন্যাশনাল ট্রাভেলস্ এর একটি গাড়ি (গাড়ি নং- ৮০৩২) থেকে তাকে তুলে নেয়া হয়।আসাদ উদ্দিন এর ছোট ভাই মাহমুদুর রহমান উক্ত পরিবহনের সুপারভাইজার এর সাথে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান যে, ডিবি-পুলিশ রাতেই আসাদ উদ্দিনকে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে এবং বর্তমানে তিনি ডিবি হেফাজতে রয়েছেন।

আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের মামলায় আপিল বিভাগে রিভিউ শুনানীর কয়েকদিন পূর্বে তার আইনজীবী আসাদ উদ্দিনকে আটক ও আরেক আইনজীবী শিশির মনিরের বাসায় পুলিশি তল্লাশী ডিফেন্স আইনজীবীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার শামিল।

উল্লেখ্য যে, ২৩/১০/২০১২ ও ২৯/১১/২০১২ ইং তারিখের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশে ডিফেন্স আইনজীবীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান থেকে আইন-শৃখলা বাহিনীকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
কথিত ট্রাইব্যুনাল বা আদালত থাকলে আইনজীবী থাকবে এটাই স্বাভাবিক ঘটনা । কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলে তাঁকে আইনের আশ্রয় পাবার অধিকার দিতে হবে এটা মানুষের মানবাধিকার  । দুই পক্ষের আইনজীবী ছাড়া ট্রাইব্যুনাল বা আদালত চলতে পারে না কিংবা ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয় না । বিচার ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়॥ এটা বুঝার জন্য আইনের  বই পড়ার বা ডিগ্রীর দরকার হয় না। সাধারণ  জ্ঞান যার আছে এমন সবাই এটি বুঝেন।

তাহলে কেন ট্রাইব্যুনালের আইনজীবীদের হয়রানী করা হচ্ছে? আওয়ামিলীগ কি তাহলে আইনজীবীদের উপস্থাপিত যুক্তি ও তথ্য কে ভয় পাচ্ছে?

পৃথিবীর কোথাও মামলার আইনজীবীকে গুম, গ্রেপ্তার বা হয়রানীর নজীর আছে? 
আছে বাংলাদেশে। 
এবং সেটা জামায়াত নেতাদের আইনজীবীদের ক্ষেত্রে ।
আওয়ামী লীগ একটি কথিত প্রহসন মূলক বিচার কে অনেক আগেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে ॥ আর এখন আইনজীবীদের হয়রানী করার মাধ্যমে অবৈধ সরকার আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে ॥

মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ

Thursday 22 October 2015

পূজার শুভেচ্ছা নিন আর জেনে নিন কিভাবে দূর্গা পূজার প্রচলন হলো??

পূজার শুভেচ্ছা নিন আর জেনে নিন কিভাবে দূর্গা পূজার প্রচলন হলো??

সূফি বরষণ
দুর্গাপূজার কথা হিন্দুদের প্রধান শাস্ত্রীয় গ্রন্থ বেদেও নেই। আধিপত্যবাদী ও প্রদর্শনমূলক মনোভাব থেকেই দুর্গাপূজার প্রচলন হয়েছিলো ব্যাপক ভাবে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন  বাংলার  মুসলমানদের পরাজয়ের পর॥ কলকাতা কেন্দ্রীক এই পূজায়  যুক্ত হয়েছিলো অশ্লীলতা ও ব্রিটিশ তোষণ। আগে এই পূজা ছিল চৈত্র মাসের শেষের দিকে পালিত পূজা কিন্তু ১৭৫৭ সালে মুসলমানদের পরাজয়ের পর কলকাতার হিন্দু মহাজনেরা ও ধনাট্য এবং জমিদারা ইংরেজদের সংবর্ধনা দিয়ে চৈত্র কালের দূর্গা  পূজা কে এগিয়ে এনে শারদীয় দূর্গা পূজার প্রচলন করে॥ মূলত ইংরেজদের খুশি করতে এটা করেছে হিন্দুরা ॥ আর সেই থেকে চালু হয়ে গেলো শারদীয় দূর্গা পূজা ॥
বর্তমানেও দুর্গাপূজার নামে বাংলাদেশের মুসলমান তোষণ ও অশ্লীলতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে । বাংলাদেশে দুর্গাপূজা কখনোই জাতীয় ও সার্বজনীন উৎসব ছিল না এমনকি ভারতেও দূর্গা পূজা সার্বজনীন নয়॥  প্রকৃতপক্ষে এটা হিন্দু ভাই বোনদের পূজা উৎসব মাত্র। বাংলাদেশের পাঁচ ভাগ হিন্দুদের পূজা জাতীয় ও সার্বজনীন উৎসব হয় কি করে যেখানে ভারতেই জাতীয় বা সার্বজনীন উৎসব নয়??? ভারতেও দুর্গাপূজা বাংলাদেশের মতো এতো বাড়াবাড়ির সাথে হয় না।

দুর্গাপূজার কথা বেদেও নেই এবং ভারতেও দুর্গাপূজা বাংলাদেশের মতো এতো আড়ম্বরের সাথে হয় না। বাংলাদেশে দুর্গাপূজা কখনই জাতীয় ও সার্বজনীন উৎসব হতে পারে না এবং বিশেষ  ছুটিও ঘোষিত হতে পারে শুধুমাত্র হিন্দুদের জন্য ।  কোন মুসলমানের জন্যই পূজাকে সমর্থন করা, তাতে শরীক হওয়া, প্রসাদ খাওয়া ঠিক নয়॥

দুর্গাপূজা বেদসম্মত নয়। বৈদিক পূজার ছাপ দেয়ার জন্য বেদের দেবী সূক্তটির ব্যবহার করা হয় কিন্তু বেদের দেবীসূক্তে যে হৈমবতী উমার উল্লেখ আছে তার সঙ্গে দুর্গার কোনো সম্পর্ক নেই।
বাল্মীকির রামায়ন যে সময়কার রচনা মার্কণ্ডেয় পুরাণ সে সময় জন্মায়নি, কথিত দেবী দুর্গার আখ্যায়িকাও তখনও আসেনি।
মার্কণ্ডেয় পুরাণ যুগের ভিত্তিতে ‘শ্রীশ্রীচণ্ডী’ লিখিত হয়েছে। পৌরাণিক শাক্তাচারের শক্তির আদিমতম অবস্থাকে সংস্কৃতিতে বলা হয় আদ্যাশক্তি। এই আদ্যাশক্তির চণ্ডরূপই চণ্ড শক্তি বা চণ্ডী। তেরশ বছর আগের মার্কণ্ডেয় পুরাণ যার সংক্ষিপ্ত নাম চণ্ডী যাতে দুর্গার কথা রয়েছে, সুরথ রাজার গল্প রয়েছে, তাতেও রামের কথা লেখা নেই, আর রাম যে দুর্গার পূজা করেছিলো সে গল্পও নেই।

, মোঘল যুগের কবি তুলসী দাসের ‘রামচিতমানস্থ। সেখানেও রাম কর্তৃক দুর্গাপূজার কোন উল্লেখ নেই। তাহলে দুর্গাপূজার প্রচলন হলো কিভাবে?

পাঠান যুগের গোড়ার দিকে বরেন্দ্রভূমিতে- মানে, উত্তর বাংলার রাজশাহী জেলার তাহেরপুরে কংস নারায়ণ রায় নামে একজন রাজা ছিলো। গৌড় রাজ্যের শাসকদের জায়গীরদার তাহের খাঁর নামানুসারে ‘তাহেরপুর’ নামকরণ হয়েছিলো। এর পূর্ব নাম ছিলো সাপরুল। তাহের খাঁকে পরাজিত করে কংস নারায়ণ তাহেরপুর দখল করে এবং লুটপাট চালিয়ে অকল্পনীয় ধন-সম্পদ হস্তগত করে। অতঃপর নিজের শক্তি ও মহিমা সর্বজনে প্রকাশ করতে অশ্বমেধ যজ্ঞ করার সংকল্প করে। সে তার সময়ের পণ্ডিতদের ডেকে বললো, ‘আমি রাজসূয় কিংবা অশ্বমেধ যজ্ঞ করতে চাই। মানুষে জানুক আমার ধন ঐশ্বর্য কি রকম আছে, আর দু’হাতে ফেলে ছড়িয়ে দান করবো।’ শুনে পণ্ডিতেরা বলেছিলো, ‘এই কলিযুগে রাজসূয় বা অশ্বমেধ যজ্ঞ হয় না, তাই মার্কণ্ডেয় পুরাণে যে দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসবের কথা আছে, তাতেও খুব খরচ করা যায়, জাঁকজমক দেখানো যায়, নিজের ঐশ্বর্য দেখানো যায়। আপনি মার্কণ্ডেয় পুরাণ মতে এই দুর্গোৎসব করুন।’ তখন রাজা কংস নারায়ণ রায় তৎকালীন সাতলক্ষ স্বর্ণমুদ্রা (বর্তমান বাজার মূল্যে ছয়শ’ কোটি টাকা প্রায়) ব্যয় করে প্রথম দুর্গাপূজা করে। তার দেখাদেখি একটাকিয়ার (একটাকিয়া সম্ভবত রংপুর জেলায়) রাজা জগৎবল্লভ সাড়ে আটলক্ষ স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করে আরো জাঁকজমক করে দুর্গাপূজা করলো। তাদের দেখাদখি অন্যান্য জমিদাররা ভাবলো, ‘আমরাইবা কম কিসে, আমরাও টাকার খেলা দেখাতে পারি।’ তারাও জাঁকজমক করে দুর্গাপূজা শুরু করলো। প্রতি হিন্দু জমিদার বাড়িতে শুরু হয়ে গেলো দুর্গাপূজা। সেই সময় পূজায় নিচু জাতের হিন্দু লোকদের অঞ্জলি দেবার অধিকার থাকতো না??
কালের আবর্তনে
এক সময় হুগলী জেলার বলাগড় থানার গুপ্তিপাড়ার (জায়গাটার আসল নাম গুপ্তবৃন্দাবন) বারোজন বন্ধু ভাবলো যে আমরা এককভাবে পারবো না, কিন্তু বারোজন মিলে তো পূজার আয়োজন করতে পারি। উর্দুভাষায় বন্ধুকে ইয়ার বলে, তাই বারোজন ইয়ারে মিলে যে দুর্গাপূজা করলো সেটা হলো বারো ইয়ারী পূজা বা বারোয়ারী পূজা। আর এই বারোয়ারী পূজায় যেহেতু অন্ত্যজ লোকদের অঞ্জলি দেবার অধিকার থাকে না, তাই সবার অধিকার যাতে থাকে সেজন্য আধুনিককালে বারোয়ারী পূজা বিবর্তিত হয়ে তাদের ভাষায় হলো সার্বজনীন পূজা।

, ঊনিশ শতক থেকে আস্তে আস্তে কলকাতার পূজার রেশ ছড়িয়ে পড়েছিলো বাংলাদেশে এবং কলকাতায় অবস্থানরত অনুপস্থিত ভূস্বামী ও ধনাঢ্যরা কলকাতায় আমোদ ফুর্তি তামাসার একটি অংশ আবার শুরু করতে চাইলো বাংলাদেশের নিজ নিজ অঞ্চলে। এ ছাড়া মধ্যবিত্ত, ধনাঢ্য পেশাজীবীরা যারা প্রধানত থাকতো কলকাতা বা ঢাকায় তারাও আসতো পূজার ছুটিতে গ্রামে। মূল উদ্দেশ্য সবার ছিলো একই, ঐশ্বর্য (আধিপত্য) ও প্রজাদের প্রতি ক্ষমতা প্রদর্শন।

বর্ণহিন্দু ছাড়া তথাকথিত নিম্নবর্ণের হিন্দুদের মধ্যে যারা ছিলো বিত্তশালী তারাও দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিজেদের ‘সম্মান’ বাড়ানোর চেষ্টা করতো। তারা অবিকল অনুকরণের চেষ্টা করতো বর্ণ হিন্দুদের, যা বর্ণহিন্দু বিশেষ করে ব্রাহ্মণেরা মোটেই পছন্দ করতো না। এমনকি নিম্নবর্ণের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত প্রতিমা প্রণামও ছিলো নিষিদ্ধ।

, বাঙালি হিন্দুর দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে ষোড়শ শতাব্দী থেকে। এ ঐতিহ্য একান্তভাবেই বাঙালি হিন্দুর। উপমহাদেশের অন্য অঞ্চলের হিন্দুদের মধ্যে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রচলন নেই।

এরপর ঊনবিংশ শতাব্দীতে কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে যে নব্যধনীদের উদ্ভব ঘটে, তারা দুর্গাপূজার নামে অশ্লীলতাকে আরো বিস্তার করে। অশ্লীল কদর্য নৃত্যগীত, মদ্যপান ও বেশ্যাগমনকে তাদের দুর্গাপূজার অপরিহার্য অনুষঙ্গ তারা করে নেয়।

দুর্গাপূজা প্রবল উৎসবে পরিণত হয়েছিলো প্রথমে কলকাতায়। শুধু নিছক উৎসবের জন্য নয়, প্রভু ইংরেজদের মনোরঞ্জন ও যোগাযোগের জন্যও উচ্চবর্গ ও মধ্যবিত্ত ব্যবহার করতো দুর্গাপূজা। এর প্রচুর বিবরণ ছড়িয়ে আছে সমসাময়িক বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়, নকশা, উপন্যাসে। এখানে একটি পুস্তিকার সামান্য উদ্ধৃতি দেয়া হলো, ‘...মহামায়ার শুভ আগমনে যে কেবল হিন্দুরা আহ্লাদে ফুটিফাটা হলো তা নয়, ইংরেজ ফিরিঙ্গিরাও এ সময়ে আমোদ করতে ছাড়েন না। সম্বতসরের মধ্যে বঙ্গদেশে এই একটি বিশেষ সময়।...

দুর্গাপূজা নিয়ে বর্তমানে যে মচ্ছব হচ্ছে তা অতীতে যখন কম ছিলো তখন থেকেই খোদ হিন্দুদের মধ্যেই অনেকে সমালোচনা করে আসছে। উদাহরণত, ‘...পূর্বের দুর্গোৎসবে আর এখনকার দুর্গোৎসবে অনেক প্রভেদ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। পূর্বের পূজা মানসিক ছিলো, আর এখনকার পূজা তামসিক হইয়া দাঁড়াইয়াছে। নাচ, তামাসা লইয়া এখন লোকের পূজা ...।’

ষোড়শ শতক থেকে ঊনিশ শতক পর্যন্ত ধনিকরা দুর্গাপূজাকে তাদের মতো করে দুর্গোৎসবে রূপান্তরিত করতে চেয়েছে। তাতে তাদের উৎসবের ক্রমাগত অশ্লীলতার বিস্তার ঘটেছে। পূজার সময় ‘ধনীর দুয়ারে কাঙালিনী মেয়েরা চোখের পানি ফেলেছে, আর মুষ্টিমেয় ধনীর দুলাল-দুলালীরা নানা ধরনের পৈশাচিক আনন্দে মেতেছে। ধনিকদের পারিবারিক দুর্গাপূজা অনুষ্ঠান উপলক্ষে ঊনিশ শতকের কলকাতায় যেমনটি ঘটতো, এখন তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি দুর্গাপূজার নামে অশ্লীল ও বিকৃত দুর্গোৎসবে পরিণত হতে দেখে অনেক হিন্দু ধর্মবিশ্বাসী মানুষও বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে।

অতীতে ইংরেজদের আকৃষ্ট করতে হিন্দু জমিদাররা যেমন দুর্গাপূজায় অবাধ অশ্লীলতার ব্যবস্থা করতো বর্তমানে মুসলমানদেরকে দুর্গাপূজায় আকৃষ্ট করতে অতীতের চেয়ে বহুগুণ বেশি অশ্লীলতার অবাধ সুযোগ করে দিচ্ছে।

হিন্দুরা এদেশে আমাদের আপনজন প্রতিবেশী  । একসঙ্গে পড়াশোনা সময়ের বন্ধু ॥ তবে দেশের শতকরা মাত্র ৫ ভাগ থেকেও কম হিন্দুরা ইদানীং পূজার নামে যেভাবে বাড়াবাড়ি করছে॥ তেমনটা ভারতেও হয় না পূজার নামে॥ এই দেশ সব ধর্মের মানুষের সবাই তার ধর্ম নিরাপদে আনন্দের সাথে পালন করবে এতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়॥ কিন্তু বাড়াবাড়ি করে দূর্ঘটনা ঘটানো কারো কাম্য নয়॥

হিন্দুরা তাদের  শারদীয় পূজার নামে সার্বজনীন শব্দ যোগ করে প্রচার করে যাচ্ছে। কারণ সেটা তাদের  সার্বজনীন উৎসব অন্য �ধর্মের অনুসরণকারীদের নয়॥ অন্য ধর্মের কেউ তাদের উৎসব দেখতে যেতে পারে বা শুভেচ্ছা জানাতে পারে এটা সামাজিকতা সুন্দর ॥

বিশেষভাবে স্মরণীয়,  মুসলমানরা পূজা যদিও যায়ও কিন্তু সতর্কতার সাথে  থাকতে হবে দেবীর নামে উৎসর্গ কৃত কোনো প্রসাদ খাওয়া যাবে না।
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ

Wednesday 21 October 2015

ক.. হাসিনা আওয়ামী ওলামা লীগের মাধ্যমে জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সৃষ্টি করে??!!

ক..
হাসিনা আওয়ামী ওলামা লীগের মাধ্যমে জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সৃষ্টি করে??!!

সূফি বরষণ
অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাশ  ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পরপরই দায়িত্ব স্বীকার করে বার্তা প্রচার করেছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামের জঙ্গী সংগঠনটি। বিবিসি নিউজ লিংক
http://www.bbc.com/bengali/news/2015/05/150504_sa_avijit_ansarullah_alqueda
সমকাল লিংক
http://www.samakal.net/2015/10/05/165674
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে গণমাধ্যমে আসা ই-মেইলটি ওলামা লীগের একাংশের নেতারাই পাঠিয়েছেন বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির আরেক অংশের নেতারা। সংগঠনটির ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী ও দেলোয়ার হোসেন নেতৃত্বাধীন অংশটি বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করে। 
মানবজমিন লিংক
http://www.m.mzamin.com/details.php?mzamin=97932&news=
জংগী শেখ আব্দুর রহমান আওয়ামী লীগের (নানকও জড়িত) এমপি  মির্জা আজম বোনের জামাই সেটা সবাই জানে । পিলখানায় কর্নেল গুলজারের চোখ তুলে ফেলা হয়েছিলো এবং  চেহারা বিকৃত করে হত্যা করা হয়েছিলো নানক ও মির্জা আজমের নির্দেশে, সেটা অনেকেই বলেন ॥
এই সব পুরনো কথা ...
নতুন কথা হলঃ  আওয়ামীলীগ-ই জঙ্গী নাটকের গুরু অনেকে-ই বলে থাকেন। ওলামা লীগের মাধ্যমে তা আবারও নতুন করে আওয়ামীদের জঙ্গী লালন পালনের মুখোশ উন্মোচিত হলো॥

২১ আগস্ট ঘটিয়ে ছিল ওদেরই কেউ যা আমরা রমনা বোমা হামলা ও ২১ই আগস্ট গ্রনেড হামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী হাফেজ সেলিমের (৭ই নভেম্বর,২০১৪ তারিখের প্রথম আলোর রিপোর্ট) জবানবন্দীতে বলেছিল যে ২১ ই আগস্ট ও তারা আওয়ামীলীগের সমাবেশে ( হুজি মুখশেই সবাই জানলেও আসলে তারা ছিল ওলামা লীগ)
ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী বলেন, “ওলামা লীগের একটি অংশ জঙ্গী  আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য ??!!!!
সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে একটি ই-মেইল ঠিকানা থেকে যে বার্তা এসেছে, আমাদের ধারণা এই বার্তাটি ওলামা লীগের নামধারী সেই নেতারা পাঠিয়েছেন। এই নেতাদের রিমান্ডে নিলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। ভয়েস অফ আমেরিকা লিংক
http://m.voabangla.com/a/email-threat-bd-20oct15/3015805.html

উল্লেখ্য যে, জেহাদবিরোধী’ সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকা ,নারীদের ঘরের বাইরে চাকরি করা ইসলামী শরীয়াহ মতে ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ সংবাদ মাধ্যমের নারী কর্মীদের চাকরি থেকে অব্যাহতি সহ গণমাধ্যমকে ছয় দফা ‘নির্দেশনা’ দিয়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে সোমবার একটি ই-মেইল গণমাধ্যমে আসে। ঐ আনসারুল্লাহ বাংলা হতে॥

গত শনিবার প্রেস ক্লাবের সামনে দুই পক্ষের সংঘর্ষের এখন জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও বিরুদ্ধপক্ষের বিরুদ্ধে তুললেন হেলালী। তিনি বলেন “ওলামা লীগের নামে আক্তার হোসেন ও আবুল হাসান প্রেস ক্লাবের সামনে ১৩ দফা দাবি দিয়ে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমকে শক্তিশালী করতে চায়।
ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী ও দেলোয়ার হোসেন নেতৃত্বাধীন অংশটি গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করে।

আর সব ঘটনায় আওয়ামিলীগ দায় চাপায় বিরোধীদের উপর। জঙ্গী ইস্যু, সংখ্যালঘু ইস্যু প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে আওয়ামিলীগ ইস্যু তৈরি করে আর রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চায়।
নওগাঁ জেলা কৃষকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মহাদেবপুর উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে জাফরান-আল-হাসান ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’র সক্রিয় সদস্য ও ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলায় র‌্যাবের হাতে আটক হওয়ার অভিযোগে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।শীর্ষনিউজ লিংক
http://www.sheershanewsbd.com/2015/09/14/96539
বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ ২৫ জন বিশিষ্ট নাগরিককে চিঠির মাধ্যমে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। বিবিসির লিংক  http://www.bbc.com/bengali/news/2015/06/150616_wr_ansarullah13_death_threat_inu_arefin
রেডিও তেহরান http://bangla.irib.ir/%E0%

ব্লগার অভিজিৎ রায় ও অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ‘বর্তমান প্রধান’ মো. আবুল বাশারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব।
গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন- নিষিদ্ধ এই জঙ্গি সংগঠনের গণমাধ্যম শাখার সদস্য জুলহাস বিশ্বাস ও জাফরান আল হাসান।
র‌্যাবের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাশার আনসাররুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিম উদ্দিন রাহমানীর ভাই। রাহমানী কারাগারে থাকায় বাশারই দলটি পরিচালনা করছিলেন। জুলহাস ও জাফরান মিডিয়া সেলের দায়িত্ব পালন করতেন। বিডি নিউজ লিংক http://m.bdnews24.com/bn/detail/bangladesh/1024631
কয়েক মাস আমি একটি লেখায় বলেছিলাম আওয়ামী লীগই জঙ্গীদের মদত দাতা ও লালন পালনকারী এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য দেশে জঙ্গী সৃষ্টি করছে॥নিউজ লিংক http://newsbd7.com/main/detail/2612

খ.
দেশে একজন ব্লগার হত্যা মামলার তদন্ত ফাইলের কোনো গতি নাই বরং তদন্ত বন্ধ আছে॥ কারণ অবৈধ সরকারই ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য নিজেদের পালিত জঙ্গীদের দিয়ে এসব ঘটনা ঘটিয়েছে ॥ নিউজ লিংক http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2015/03/07/195772
সমকাল
http://www.samakal.net/2015/10/05/165674
এসব ঘটনা ঘটিয়ে সরকার যখন বিদেশীদের বুঝাতে শতভাগ সফল হলো যে দেশে জঙ্গী আছে আর এই ইসলাম ধর্মীয় জঙ্গীদের নির্মূল করতে তাদের ক্ষমতায় থাকা অতি জরুরী !!?? এরপর হঠাৎ করে  গণেশ উল্টে যায় ইতিমধ্যে ঘটে যায় দেশে পরপর দুজন বিদেশী নাগরিকের হত্যা মাধ্যমে   ॥ ঘটনার পর যখন বিদেশী সব রাষ্ট্র দূতরা বলা শুরু করলো দেশে জঙ্গী আছে॥ আর সরকার বলছে দেশে জঙ্গী নাই??!!! আসলে আওয়ামী লীগই দেশে জঙ্গী সৃষ্টি করছে অবৈধ ক্ষমতাকে আরও দীর্ঘ করতে॥ ওলামা লীগ মানুষের সামনে নতুন করে আবারও প্রকাশ করে
দিলো ॥ নির্ভরশীল সূত্র জানায়, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কর্যক্রম ও  ব্লগারদের হত্যা করার পরিকল্পনা মূলক কয়েক দফা নৈশ ভোজনের নামে বৈঠক হয় অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের বাসায়॥ ঐ বৈঠকে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, ওলামা লীগের ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী ও দেলোয়ার হোসেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিম উদ্দিন রাহমানী ও তার ভাই আবুল বাশার॥ বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে মেইল পাঠানো পরামর্শ দেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এর মধ্যে তার অন্যতম পরামর্শ হলো দেশের ২৫ ব্যক্তির নামে মেইল প্রেরণ ??!!॥ দেশের গোয়েন্দা বাহিনীর দক্ষতার কারণে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিম উদ্দিন রাহমানী ও তার ভাই আবুল বাশার আরও দুজন জঙ্গীসহ ব্লগার হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেও সরকারের চাপে এই সব জঙ্গীদের তদন্ত ফাইল চাপা পড়ে আছে॥ দেশে জঙ্গীবাদের প্রসার ঘটাতে সরকারের সাথে এবং  গোপনে বিভিন্ন এনজিও ও বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে একযোগে কাজ করছে মোসাদ র সিআইএ ॥ এখন শুধুমাত্র আনসারুল্লাহ বাংলা টিমই নয় বরং ছোটো বড় ৩৯টি জঙ্গী সংগঠন সারাদেশে জালের মতো বিস্তার করে আছে॥ দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা যদি এদের নির্মূল করতে এখনই তৎপর না হয় তবে বাংলাদেশের অবস্হা সিরিয়ার থেকে ভালো হবে না?? দেশে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি হবে এবং বাংলাদেশ হবে বিশ্বে সবচেয়ে বড় শরণার্থী দেশ॥
দেশের গোয়েন্দাদের প্রতি আকুল আবেদন দল মত ভুলে গিয়ে দেশকে বাঁচাতে জঙ্গীদের নির্মূলে তৎপর হোন॥ কারণ দেশ সুস্থ  থাকলে আমি আপনি  সুস্থ থাকবো এরপর রাজনৈতিক দল॥
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নাটক ফ্লপ করার পর এখন অবৈধ সরকারই বলছে এদের নিষিদ্ধ করার জন্য ??!! এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কয়েকদিন আগে তো সরকার বলছিল দেশে জঙ্গী নাই??!! যদি জঙ্গী নাই থেকে থাকে তাহলে এখন নিষিদ্ধ করার ঘোষণা আসছে কেন?? নিউজ লিংক http://www.samakal.net/2015/05/25/139289

মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ

Sunday 18 October 2015

কবি ফররুখ আহমদের কি অপরাধ ??

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/06/17/204628#.ViR9iohwYwg কবি ফররুখ আহমদের কি অপরাধ?
আহমদ ছফা

খবর পেয়েছি বিনা চিকিত্সায় কবি ফররুখ আহমদের মেয়ে মারা গেছে। এই প্রতিভাধর কবি যাঁর দানে আমাদের সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে—পয়সার অভাবে তাঁর মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে পারেননি, ওষুধ কিনতে পারেননি। কবি এখন বেকার। তাঁর মৃত মেয়ের জামাই, যিনি এখন কবির সঙ্গে থাকছেন বলে খবর পেয়েছি তাঁরও চাকুরি নেই।
মেয়ে তো মারাই গেছে। যারা বেঁচে আছেন, কি অভাবে, কোন অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে দিনগুলো অতিবাহিত করছেন, সে খবর আমরা কেউ রাখিনি। হয়ত একদিন সংবাদ পাব কবি মারা গেছেন, অথবা আত্মহত্যা করেছেন। খবরটা শোনার পর আমাদের কবিতাপ্রেমিক মানুষের কি প্রতিক্রিয়া হবে? ফররুখ আহমদের মৃত্যু সংবাদে আমরা কি খুশি হব, নাকি ব্যথিত হব? হয়ত ব্যথিতই হব এ কারণে যে, আজকের সমগ্র বাংলা-সাহিত্যে ফররুখ আহমদের মত একজনও শক্তিশালী স্রষ্টা নেই। এমন একজন স্রষ্টাকে অনাহারে রেখে তিলে তিলে মরতে বাধ্য করেছি আমরা। ভবিষ্যত্ বংশধর আমাদের ক্ষমা করবে না, অথচ কবি ফররুখ আহমদের মরার সমস্ত ব্যবস্থা আমরাই পাকাপোক্ত করে ফেলেছি। আমরা তাঁর চাকুরি কেড়ে নিয়েছি, তাঁর জামাই এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের সত্ভাবে পরিশ্রম করে বাঁচবার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি। রাস্তা-ঘাটে কবির বেরোবার পথ বন্ধ করে দিয়েছি। প্রয়োজনীয় সবগুলো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা ত্রুটি রাখিনি।
কবি ফররুখ আহমদকে আমরা এতসব লাঞ্ছনার মধ্যে ফেলেছি তার কারণ তো একমাত্র কবিতাই। ফররুখ আহমদের একমাত্র অপরাধ তিনি একদা পাকিস্তানের সপক্ষে কবিতা লিখেছেন। তাঁর কবিতার একটি বিশেষ জীবনাদর্শ দুষ্টলোকের ভাষায় ইসলামি জীবনাদর্শ। এখন কথা হল, তখন কি পাকিস্তানের সপক্ষে কবিতা লেখা অপরাধ ছিল? আমরা যতটুকু জানি পাকিস্তান এবং ইসলাম নিয়ে আজকের বাংলাদেশে লেখেননি এমন কোন কবি-সাহিত্যিক নেই বললেই চলে। অন্য অনেককে বাদ দিয়েও কবি সুফিয়া কামালের পাকিস্তান এবং জিন্নাহর ওপর নানা সমযে লেখা কবিতাগুলো জড়ো করে প্রকাশ করলে ‘সঞ্চয়িতা’র মত একখানা গ্রন্থ দাঁড়াবে বলেই আমাদের ধারণা। অথচ ভাগ্যের কি পরিহাস কবি সুফিয়া কামাল বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি হয়ে মস্কো-ভারত ইত্যাদি দেশ সফর করে বেড়াচ্ছেন, আর ফররুখ আহমদ রুদ্ধদ্বার কক্ষে বসে অপমানের লাঞ্ছনায় মৃত্যুর দিন গুনছেন। ফররুখ আহমদের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার করে বাংলাভাষার সতীত্ব হানি করেছেন। কিন্তু কবি ফররুখ আহমদ নিজে বলেছেন, তিনি শব্দ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, কবিতার ক্ষেত্রে তা নিশ্চয়ই দোষনীয় নয়। বিশেষত বাংলাদশে এমন একটা সময় ছিল, কবি-সাহিত্যিকেরা উর্দু, ফারসি ঘেঁষা দেখাতে পারলে বর্তে যেতেন। তাদের অনেকেই এখন বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন রয়েছেন। তাছাড়া ইংরেজি, জার্মান, সংস্কৃত ইত্যাদি ভাষা নিয়ে যাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কবিতা, গল্প লিখতে চেষ্টা করেছেন, তাঁদেরকে সে সকল রচনার জন্য পুরস্কৃত করতেও আমাদের বাধছে না। ও সমস্তের ফলে যে বাংলাভাষা সমৃদ্ধ হচ্ছে সত্যিকার অর্থে সে বিচার কে করবে? অথচ অন্য কবি-সাহিত্যিক সকলে বাইরে রয়েছেন। কিন্তু শাস্তি ভোগ করছেন একা ফররুখ আহমদ—এ কেমন ধারা বিচার? ফররুখ আহমদের বিরুদ্ধে যে দু’টি উল্লেখযোগ্য নালিশ রয়েছে, সেগুলো হল—তিনি রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে চল্লিশজন স্বাক্ষরকারীর একজন। তিনি স্বশ্রদ্ধভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু স্বাক্ষরদানকারী চল্লিশজনের অনেকেই তো এখনো বাংলাদেশ সরকারের বড় বড় পদগুলো অলংকৃত করে রয়েছেন। কিন্তু ফররুখ আহমদকে একা কেন শাস্তি ভোগ করতে হবে? পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন না কে? আজকের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী (শেখ মুজিব) স্বয়ং তো এক সময়ে পাকিস্তান আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। সাতই মার্চের পূর্ব পর্যন্ত তিনি পাশাপাশি জয়-বাংলা এবং জয়-পাকিস্তান শব্দ দু’টো উচ্চারণ করেছিলেন, তাহলে ফররুখ আহমদের অপরাধটা কোথায়? বলা হয়ে থাকে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ে তিনি অনেকবেশি সাম্প্রদায়িক বিষোদগার করেছিলেন। সেপ্টেম্বরের যুদ্ধের সমস্ত প্রমাণ এখনো নষ্ট হয়ে যায়নি। বাংলাদেশের সমস্ত লেখক-কবি-সাহিত্যিক সাম্প্রদায়িকতার প্রচাওে কে কার চাইতে বেশি যেতে পারেন সে প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। কেউ যদি চ্যালেঞ্জ করেন আমরা দেখিয়ে দিতে পারি। মানুষের স্মৃতি এত দুর্বল নয় যে, হিং টিং ছট ইত্যাদি প্রোগামগুলো ভুলে গেছে। ঐ সমস্ত প্রোগ্রাম যারা করেছে সংস্কৃতির সে সকল কলমধারী গুন্ডারা বাংলাদেশে বুক চিতিয়ে শিক্ষা-সংস্কৃতির আসন দখল করে আছে—কি আশ্চর্য। চাকুরি হারাবেন, না-খেতে পেয়ে মারা যাবেন এক ফররুখ আহমদ।
এতসব দোষের মধ্যেও ফররুখ আহমদের কতিপয় গুণের কথা আমরা না-উল্লেখ করে পারছিনে। সেপ্টেম্বর যুদ্ধের পরে কবি ফররুখ আহমদকে যখন প্রাইড অব পারফরমেন্স দেয়ার কথা ওঠে, তিনি অস্বীকার করেছিলেন। আমরা শুনেছিলম, তিনি বলেছিলেন, একজন কবির ক্ষমতাদর্পীর হাত থেকে নেয়ার কিছুই নেই। খবর পেয়েছিলাম, সে প্রাইড অব পারফরমেন্স এমন একজন সাহিত্যসেবীকে দেয়া হয়েছিল এখন যত্রতত্র তাঁর শোকসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি দলের সকলে তাঁর কথা মনে করে শোকাশ্রু বর্ষণ করছেন। মজার কথা হল, তিনিও দখলদার পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা বাধ্য হয়ে পাকিস্তানের সপক্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন। যাকে নিয়ে এত লাফালাফি তিনি যদি বেঁচে থাকতেন আজ হয়ত কারাগারেই থাকতেন। আমাদের কথা হল, ফররুখ আহমদের মত একজন শক্তিমান স্রষ্টার চাকুরি কেড়ে নেয়া, সপরিবারে তাঁকে মৃত্যু-যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করার পেছনে ন্যায়-নীতিসঙ্গত যুক্তিটা কি হতে পারে?
আমরা বাংলাদেশের আরো একজন খ্যাতনামা কবির কথা জানি (কবি শামসুর রাহমান)। যিনি পাকিস্তানি দখলদার সৈন্যদের তত্ত্বাবধানে সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিকটির (দৈনিক পাকিস্তান) সম্পাদকীয় রচনা করেছিলেন। ঐ পত্রিকার চাকুরি করেন আর একজন কবি সম্পর্কে কানা-ঘুষা শোনা যাচ্ছে যে, তিনি পাকিস্তানি মেজর ক্যাপটেনদের সাহায্যে নাম ভাঙ্গিয়ে লাহোর করাচি ছুটোছুটি করেছেন। কেউ যদি আমাদের বক্তব্যকে অসত্য মনে করেন, বাস্তব প্রমাণ দাখিল করতে পারব।
কত মুসলিম লীগ এবং জামাড়তে ইসলামের গুন্ডা, এনএসএফ-এর চর সরকারি আনুকূল্যে পুনর্বহাল হয়েছে, তাদের সংখ্যা হাজারকে হাজার। একজন দুজন নয়।
কিন্তু শাস্তিভোগ করবেন একজন আত্মমর্যাদাজ্ঞানসম্পন্ন কবি। এ ধরনের অবিচার আমাদের এ বাংলাদেশেই হওয়া সম্ভব। প্রসঙ্গত ভূতপূর্ব পাকিস্তান অবজার্ভার পত্রিকার কুখ্যাত বার্তা-সম্পাদক এবিএম মুসার নাম বলতে পারি। এই মুসা সাহেব মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কোলকাতায় যেয়ে হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ডে আওয়ামী লীগারদের বিরুদ্ধে যে বিষোদগার করেছিলেন, দেশপ্রেমিক নাগরিকদের মন থেকে সে স্মৃতি এত তাড়াতাড়ি মুছে যায়নি। মুছে যাওয়া সম্ভব নয়। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের দেশপ্রেমিক সম্মানটি দিতেও রাজি ছিলেন না।
হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ডে তাদেও রেবেল বলে অবহিত করেছিলেন। সেই মুসা সাহেব এখন বাংলাদেশের সংসদ-সদস্য (আওয়ামী লীগের)। ফররুখ আহমদের অপরাধ শেষ পর্যন্ত এই দাঁড়ায় যে, তিনি অন্যান্য বিশ্বাসঘাতকদের মত শ্লোগান বদল করতে পারেননি। সত্ কবিরা অনেক সময় ধরতাই বুলিতে গা ঢেলে দিতে পারেন না। সেটাই তাদের একমাত্র অপরাধ। কবি ফররুখ আহমদও এই একই অপরাধে অপরাধী।
অন্যান্য কবি-সাহিত্যিক যাদের কোন রকমের আদর্শবোধ নেই, চরিত্র নেই, সুবিধেটাই নীতি। আমরা জানি, তারা আজ ফররুখ আহমদের নামে দুটো সমবেদনার কথা কইতে কুণ্ঠাবোধ করেন। তারপরেও আমরা মনে করি ফররুখ আহমদ একজন বীরচরিত্রের পুরুষ। একজন শক্তিমন্ত কবি। ফররুখ আহমদের রুটি রোজগারের পথ খুলে দিতে আবদন করার কোন সার্থকতা নেই। কেননা, এবিএম মুসা সাহেবের মত মানুষেরা এই সরকারের সংসদ-সদস্য, হি টিং ছটের কলমধারী গুন্ডারা এই সরকারের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণাদাতা। তাদের যদি বিবেক থাকত, যদি সাহিত্যে এবং সাহিত্যিকদের প্রতি প্রেম থাকত কবি ফররুখ আহমদের মেয়ে বিনা চিকিত্সায় মারা যেত না। কবিকে বৃদ্ধ বয়সে উপোস করতে হত না। আমরা ফররুখ আহমদকে বাঁচাবার জন্য, তার পরিবারকে বাঁচাবার জন্য ‘ফররুখ আহমদ সাহায্য তহবিল’ গঠন করার জন্য কবির অনুরাগীজন এবং দেশপ্রেমিক, সংস্কৃতিপ্রেমিক জনগণের কাছে আবেদন রাখছি।
গণকণ্ঠ, ১৬ জুন, ১৯৭৩