Wednesday, 23 September 2015

বাংলাদেশ_ভারত সম্পর্কিয় একটি উচ্চতর গরু বিষয়ক রচনা..

বাংলাদেশ_ভারত সম্পর্কিয় একটি  উচ্চতর গরু বিষয়ক রচনা..

সূফি বরষণ
গো হত্যা পাপ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশে গরু রপ্তানি বন্ধ রাখলেও গোমাংস রপ্তানিতে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই ভারত। এমনকি গরুর মাংস রপ্তানিতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শীর্ষস্থানীয় দেশ হিসেবে এ বছরও নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশের প্রতিবেশী এ দেশটি।
কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে ভারত এখন বাংলাদেশে অবৈধ ভাবে হাজার হাজার গরু সীমান্ত দিতে পাঠাচ্ছে॥ আর যে কারণে বাংলাদেশের  বিক্রির জন্য   গরু লালন পালন কৃষকদের ব্যবসা এবার লাঠে উঠেছে ??!!
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি সংস্থা (ইউএসডিএ) প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়, এ বছরও ব্রাজিলকে দ্বিতীয় স্থানে রেখে গরুর মাংস রপ্তানিতে শীর্ষ স্থানটি নিজের জন্যই রেখে দিল ভারত। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ জরিপে মহিষের মাংসকেও গরুর মাংস হিসেবে ধরা হয়েছে।
প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫ অর্থবছরে ভারত ২৪ লাখ টন গরুর মাংস রপ্তানি করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিল রপ্তানি করেছে ২০ লাখ টন এবং তৃতীয় স্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়া রপ্তানি করেছে ১৫ লাখ টন। বিশ্বের গোমাংস রপ্তানির ৫৮.৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে এ তিন দেশ। এর মধ্যে একা ভারত নিয়ন্ত্রণ করে মোট বৈশ্বিক রপ্তানির ২৩.৫ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ২০.৮ শতাংশ। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি (সিএমআইই) কর্তৃক প্রকাশিত আরেক পরিসংখ্যানে বলা হয়, ভারতের বেশির ভাগ গরুর মাংস রপ্তানি হয় এশিয়ার দেশগুলোতে। দেশটির রপ্তানি মাংসের ৮০ শতাংশ যায় এশিয়ার দেশগুলোতে, আফ্রিকায় যায় ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে এশিয়ার ভিয়েতনামেই যায় মোট রপ্তানির ৪৫ শতাংশ।
২০১১ সাল থেকেই ১৪ শতাংশ হারে বাড়ছে ভারতের গরুর মাংস রপ্তানি। ২০১৪ সালে দেশটির এ বাজার ছিল ৪.৮ বিলিয়ন ডলারের। গত বছর দেশটি বাসমতি চাল রপ্তানি করে যে আয় করে তার চেয়ে বেশি আয় করে গরুর মাংস রপ্তানি থেকে। বাংলাদেশে গরু পাচার পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় তাহলে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে ভারত। যার পরিমাণ ৩১ হাজার কোটি রুপি বা ৩৯ হাজার কোটি টাকা।  টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য দেওয়া আছে,
http://m.timesofindia.com/india/Starving-Bangladesh-of-beef-would-cost-India-Rs-31000-crore/articleshow/46790339.cms
হিন্দু ধর্ম গ্রন্থগুলো কি বলে:
হিন্দুদের ধর্মে যে গরুর মাংস খাওয়ার বৈধতা দেওয়া আছে॥ এ বিষয়ে প্রমাণ এখানে তুলে ধরা হলো..
ক . মনুষমৃত্রী অধ্যায় ৫ শ্লোক নম্বর যথাক্রমে ৩০; ৩১; ৩৯; ৪০
খ. ঋগ্ববেদ অধ্যায় ৮৫ শ্লোক নম্বর ১৩
গ. মহাভারত আনুষাণ পর্ব শ্লোক নম্বর ৮৮
ঘ. ---গরু-বৃষের মাংস [বেদ:১/১৬৪/৪৩],
ঙ. ---মহিষের মাংস [বেদ: ৫/২৯/৮],
চ. ---অজের মাংস [বেদ:১/১৬২/৩] খাওয়া হত।
আরও বলা হয়েছে পরস্বিনী গাভী মানুষের ভজনীয় [বেদ:৪/১/৬]।
---গো-হত্যা স্থানে গাভীগণ হত্যা হত [বেদ:১০/৮৯/১৪]।
---ইন্দ্রের জন্য গোবৎস উৎসর্গ করা হয়েছে।
[ঋগ্ববেদ: ১০: ৮৬: ১৪]।
---এমনকি উপনিষদ বলছে: ‘বেদজ্ঞান লাভ করতে হলে, স্বাস্থ্যবান সন্তান লাভ করতে হলে ষাঁড়ের মাংস খাওয়া জরুরি।” [সূত্র: বেদ; ২য় প্রকাশ, পৃ: ১৩, ৬৭; হরফ প্রকাশনী , কলিকাতা]
আরও আছে উদ্বৃতি ঃ
১। Rigveda (10/85/13) declares, “On the occasion of a girl’s marriage oxen and cows are slaughtered.”
২। Rigveda (6/17/1) states that “Indra used to eat the meat of cow, calf, horse and buffalo.”
৩। Vashistha Dharmasutra (11/34) writes, “If a Brahmin refuses to eat the meat offered to him on the occasion of ‘Shraddha’ or worship, he goes to hell.”
৪। Swami Vivekanand said thus: “You will be surprised to know that according to ancient Hindu rites and rituals, a man cannot be a good Hindu who does not eat beef”. (The Complete Works of Swami Vivekanand, vol.3, p. 536)
হিন্দু ধর্মে গরুকে 'পবিত্র গোমাতা' বলা হয়ে থাকে। গরু নানাভাবে মানুষের উপকার করে বলে হিন্দু ধর্মে গো-হত্যা নিষিদ্ধ। তবে আজব হলেও সত্য- গরুর চামড়া দিয়ে যে জুতো তৈরী করে তা ব্যবহার করা কিন্তু হিন্দু ধর্মে নিষিদ্ধ নয় ! তাইলে ভারতের সব মানুষকে জুতা বিহীন চলতে হবে॥ গো মাতার চামড়ার জুতা পড়েই পূজা করছে বা গোমাতার পূজা করে??!!!
গরু মানুষের অনেক উপকারে আসে এটা অস্বীকার করার কিছুই নেই। কিন্তু গরুই একমাত্র প্রাণী নয় যা মানুষের উপকারে আসে। প্রশ্ন ওঠে- গরু কি গাছের চেয়েও বেশি উপকারী? গাছ মানুষের কি কি উপকারে আসে তা বর্ণনা করার প্রয়োজন পড়ে না। গরু না থাকলেও মানুষের জীবন ধারনে কোন অসুবিধা হবে না। কিন্তু গাছ না থাকলে ১ মিনিট বেঁচে  থাকা দুরুহ। সেই গাছ কাটতে হিন্দুদের কোন আপত্তি নেই। অথচ শুধু গরুর বেলাতেই তাদের যত আপত্তি। আসলে এই ধর্মটির যত নিয়ম কানুন, রীতিনীতি আছে তার  সবই সংস্কার থেকে সৃষ্ট। কুসংস্কার ও গোড়ামী হল এই ধর্মের মূলভিত্তি।
বৌদ্ধ যুগের আগে গো মাংস খেতো হিন্দুরা ?
জেনে রাখা ভাল- বৌদ্ধ যুগের আগ পর্যন্ত হিন্দুরা প্রচুর গোমাংস ভক্ষণ করতো। ব্যাসঋষী স্বয়ং বলেছেন, 'রন্তিদেবীর যজ্ঞে একদিন পাচক ব্রাক্ষ্মণগণ চিৎকার করে ভোজনকারীদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন,মহাশয়গণ! অদ্য অধিক মাংস ভক্ষণ করবেন না, কারণ অদ্য অতি অল্পই গো-হত্যা করা হয়েছে; কেবলমাত্র ২১ হাজার গোহত্যা করা হয়েছে। (সাহিত্য সংহিতা-৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা-৪৭৬)
বৌদ্ধযুগের পূর্ব পর্যন্ত হিন্দুরা যে প্রচুর গরু গোশত খেতেন ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ প্রণীত Beef in Ancient India গ্রন্থে, স্বামী ভুমানন্দ প্রণীত 'সোহংগীত', 'সোহং সংহিতা, 'সোহং স্বামী' গ্রন্থগুলোতে, আচার্য্য প্রফুলস্ন চন্দ্র রায়ের 'জাতি গঠনে বাধা' গ্রন্থে উল্লেখ  আছে। এসব গ্রন্থ থেকে জানা যায়, বৌদ্ধযুগের আগ পর্যনত্দ গো-হত্যা, গো-ভক্ষণ মোটেই নিষিদ্ধ ছিল না।  ভারত বর্ষে বেদিক ধর্মের অনুসরণকারীদের বৌদ্ধ পূর্ব যুগে রেওয়াজ ছিল, মধু ও গো-মাংস না খাওয়ালে তখন অতিথি আপ্যায়নই অপূর্ন থেকে যেতো।
এখন প্রশ্ন হলো-ধর্মীয় গ্রন্থে গো-মাংস ভক্ষণের প্রমাণাদি থাকার পরও হিন্দুরা গো-মাংস ভক্ষণ করে না কেন? কেবল মুসলমানরা গরুর গোশত খায় বলে? নাকি শুধুমাত্র বিরোধীতা করার খাতিরে বিরোধীতা করা ।আসলে  মূল কারন আমি আগেই বলেছি- কুসংস্কার। হিন্দু ধর্ম  কুসংস্কারে ভরপুর । কারণ তারা নিজেরা নিজেদের ধর্ম গ্রন্থ পড়ে না ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের কথা শুনে??॥ তাইলে প্রশ্ন হলো বিশ্বের এক নম্বর গরুর মাংস রপ্তানিকারক দেশ হয়েও কেন মুসলমানদের ধর্মীয় বিধান গরু কোরবানি করা নিষিদ্ধ করছে ??? তবে কেন তারা ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র দাবী করে॥ আবার মুসলমানদের সাথে বা ইসলামের সাথে কেন এই স্ববিরোধী আচরণ?? ॥ যেখানে তাদের ধর্ম গ্রন্থে গো মাংস খাওয়ার কথা বলা হয়েছে ???॥
ইন্ডিয়ান টাইমের নিউজ লিংক
http://m.timesofindia.com/business/india-business/Beef-exporter-confidence-returns-in-India/articleshow/39279183.cms
X ভারতের ইংরেজি দৈনিক হিন্দুর নিউজ লিংক
http://m.thehindu.com/news/national/india-on-top-in-exporting-beef/article7519487.ece
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ

No comments:

Post a Comment