Sunday, 13 September 2015

পর্ব এক.. জামায়াতের রাজনীতিতে ৭৫ বছর ধরে লাল বাতি জ্বলছে এখন সবুজ বাতি জ্বালানোর প্রয়োজন ॥

পর্ব এক..
জামায়াতের রাজনীতিতে ৭৫ বছর ধরে লাল বাতি জ্বলছে এখন সবুজ বাতি জ্বালানোর প্রয়োজন ॥

সূফি বরষণ 
সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রসঙ্গটি যতটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে, তা এর আগে আমরা কখনোই সেইভাবে প্রত্যক্ষ করিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে তো নয়ই, এমনকি সম্ভবত গত প্রায় এক শ বছরেও আমরা এই ধরনের  প্রশ্নের মুখোমুখি হইনি। এর কারণ কী? এই পরিস্থিতিকে আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করব? রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের করণীয় কী? আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথরেখায় তার কী প্রভাব পড়বে? এ ধরনের প্রশ্ন আমাদের সবার মনের ভেতরেই যে কেবল ঘুরপাক খাচ্ছে তা নয়, আমরা সবাই কমবেশি এ নিয়ে আলোচনাও করছি।

আমরা এ বিষয়ে বেশি করে উৎসাহী হয়েছি সাম্প্রতিক কালে জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও হেফাজতে ইসলাম বলে একটি সংগঠনের উত্থানের কারণে। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর বিষয়ে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর আপসমুখী অবস্থান, এই সব দলকে আশু স্বার্থে ব্যবহারের জন্য মরিয়া ভাব॥ এবং এই মরিয়া ভাব শুধুমাত্র দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই নয় বরং আন্তর্জাতিক ইসলাম বিরোধী  পরাশক্তি আমেরিকা ফ্রান্স জার্মানী রাশিয়া ভারত ইসরাঈল গত দেড়শত বছর ধরে বিভিন্ন দেশের ইসলামী দল বা গ্রুপকে ব্যবহার করেছে এবং করছে, সেই সাথে সৃষ্টি করেছে ইসলামের নামে নতুন দল গ্রুপ এবং ভ্রান্ত মতবাদ ॥

জামায়াত এমনই এক রাজনৈতিক দল যারা ১৯৪১ সালের পর হতে বর্তমান পর্যন্ত কোনো না কোন শক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ্য ভাবে ব্যবহার  হয়ে আসছে॥  কিন্তু নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারেনি এখনও ??!! আর সিদ্ধান্ত নিতেও পারছে না আগামী দিনে বাংলাদেশের এবং বিশ্ব রাজনীতিতে জামায়াতের অবস্থান কি হবে॥ তাঁরা আগামী দিনের বাংলাদেশের জন্য কল্যাণ মুখি কি পরিকল্পনা দিতে চাই তাও পরিষ্কার নয়॥ মানে সামাজিক ন্যায় বিচার, সামাজিক নিরাপত্তা, আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, পররাষ্ট্র নীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা, বেকারত্ব, প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা, ক্ষুধা দারিদ্রসহ এইসব বিষয়ে জামায়াতের কোনো বাস্তব পরিকল্পনা দেশবাসী কাছে পরিষ্কার নয়॥ এইসব বিষয়ে জামায়াত মনে করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে অটোমেটিক সমাধান হয়ে যাবে !!??

এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যদি অটোমেটিক হয়ে যায় তবে পুরানো রাজনৈতিক মিত্র আওয়ামী লীগের কাছে নিজেরা নাজেহাল কেন?? রাজনৈতিক সংকটময় অবস্থার কেন পরিবর্তন করতে পারছে না বরং জালে আরও বন্দী হচ্ছে তাঁরা ॥ যে কারণে জামায়াত শুধুমাত্র ইসলামের কথা বলে ভোটের রাজনীতিতে দেশের  দশ ভাগ সমর্থন অর্জন করেছে কিন্তু শতভাগ নয়॥ জামায়াতের সবুজ বাতি জ্বালাতে হলে বুঝতে হবে কোনো জিনিস অটোমেটিক হয় না দীর্ঘ মেয়াদী জনকল্যাণ মূলক  পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হয়॥ যে কারণে জামায়াত আজকের করুণ দশার সম্মুখীন হয়েছে ॥ 

জামায়াতের আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বন্ধুহীন হয়ে কোনঠাসা ও একলা চলো নীতি গ্রহণ করে টেকসই রাজনীতি করা বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নয় । নীতি ও আদর্শের সাথে আপস না করেও কৌশলগত কারণে উদারনীতি অনুসরন করে সমর্থনের পরিধি বৃদ্ধির দৃষ্টিভঙ্গি জামায়াতের নেই।
বা আছে বলেও দেখা যাচ্ছে না॥
পরাশক্তি মোড়লদের কাছে জামায়াত যেমন শিশু , তেমনি আওয়ামী লীগের মতো পাকা খিলাড়ীর কাছে জামায়াত এখন শিশুই নয় বরং নাজেহাল অবস্থায়
আছে॥ 

জামায়াতের সংস্কারপন্থীদের এক বৈঠকে ‘রাজনৈতিক সংস্কার কৌশল’ শীর্ষক একটি কী নোট পেপার উত্থাপন করা হয়েছিল। মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক সম্পাদিত ‘ কামারুজ্জামানের চিঠি এবং জামায়াতের সংস্কার প্রসঙ্গ’ শীর্ষক গ্রন্থে ওই কী নোট পেপারটি মুদ্রিত হয়েছে। ওই কী নোট পেপারে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশে গত তিন-চার দশকের ইসলামী রাজনীতি প্রত্যাশিত সুফল বয়ে আনতে পারেনি। সেক্যুলার আওয়ামী লীগ, জাতীয়তাবাদী বিএনপি ও সুবিধাবাদী জাতীয় পার্টি ঘুরেফিরে বিভিন্ন মেয়াদে ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু এ তিনটি দলের বৈশিষ্ট কম-বেশি একই। মূলত ক্ষমতার মোহ, বস্তুগত স্বার্থলিপ্সা, অসততা ও অদক্ষতা, প্রতিহিংসা পরায়ণতা ইত্যাদি কারণে জাতি খুব বেশি আগাতে পারেনি। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্যান্য দলগুলোর সাংগঠনিক ও জনভিত্তি উল্লেখ করার মতো নয়।
বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে জামায়াতের ইসলামীর কোনো বিকল্প আপাতত দেখা যাচ্ছে না।

কিন্তু সবচেয়ে পুরানো রাজনৈতিক দল হওয়া সত্বেও জামায়াত নির্বাচনী দৌঁড়ে বেশ পেছনে পড়ে আছে। বাস্তবতা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সততার সুনাম থাকা সত্বেও বর্তমান নেতৃত্ব নিয়ে জামায়াতের পক্ষে ভবিষ্যতে এককভাবে সরকার গঠনের মত জনপ্রিয়তা অর্জন করা আদৌ সম্ভব নয় বলে কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করেন।
কারণ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার মতো রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল পূর্ববাংলার প্রধান ইসলামী দল ‘জামায়াতে ইসলাম’ ও প্রধান ইসলামী ছাত্রসগংঠন ‘ইসলামী ছাত্রসংঘ’। স্বাধীনতার পরে জামায়াত ‘ইসলামী ডেমোক্রেটিক লীগ’ (আইডিএল) ও ছাত্রসংঘ ‘ ইসলামী ছাত্রশিবির’ নামে প্রকাশ্যে আসে।

শিবির নামে প্রকাশ্যে আসার পর সংগঠনটি দ্রুতই জনপ্রিয়তা লাভ করে। আইডিএল নামে আসার পরে জামায়াতও জনপ্রিয়তা পায় এবং তৃতীয় সংসদে ২০টি আসন লাভ করে। পরবর্তীতে স্বনামে ফিরলে আইডিএলের সমান জনপ্রিয়তা ও সংসদীয় আসন কখনোই লাভ করতে পারেনি জামায়াত। বরং জামায়াত নামে ফেরার পর দলটি মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সাথে বড় বিরোধে জড়িয়ে যায়, যার জের ধরে দলটির দুইজন শীর্ষ নেতা আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি হয়েছে। এ দুজনই ছাত্রসংঘের সাবেক নেতা ছিলেন। কামারুজ্জামান শিবিরেরও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।

মূলতঃ জামায়াতের সিদ্ধান্তে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করতে গিয়ে পাকিস্তানী সেনাদের অপরাধের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল ছাত্রসংঘ। তাই সংগঠনটি ছাত্রশিবির নামে পুনর্গঠিত হওয়ার পর থেকেই জামায়াতের প্রভাবমুক্ত হওয়ার ও মুক্তিযুদ্ধকালীন দায় ঝেরে ফেলতে সচেষ্ট ছিল। অন্যদিকে জামায়াতও সব সময় শিবিরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছে। এই নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে শিবিরের মধ্যে প্রথম সমস্যা  হয় ১৯৮২ সালে। পরের পর্বে আসছে জামায়াতের বৃটিশ আমলে ভূমিকা নিয়ে ॥

মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ


No comments:

Post a Comment