Thursday 18 August 2016

মহেঞ্জো দারো' মুভির রিভিউ (Mohenjo Daro): ইতিহাস বিকৃতি



মহেঞ্জো দারো' মুভির  রিভিউ (Mohenjo Daro): ইতিহাস বিকৃতি

সূফি বরষণ
'ব্যাং ব্যাং'-এর পর দুই বছর বিরতি দিয়ে 'মহেঞ্জো দারো'র মাধ্যমে পর্দায় ফিরেন অভিনেতা হৃত্বিক রোশান। তবে সিনেমাটির ট্রেইলার ভক্তদের হতাশ তো করেছেই, সেইসঙ্গে উঠেছে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগও।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে সিনেমা নির্মাণের জন্য পরিচিত আশুতোশ গোয়ারিকার পুরো ৬ বছর পর ফিরছেন পরিচালকের আসনে। তার সর্বশেষ কাজ ছিল ২০১০ সালে নির্মিত সিনেমা 'খেলে হাম জি জান সে', যা বক্স অফিসে পায়নি সাফল্যের ছিঁটেফোঁটাও। ১৯২২ সালে ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের আধিকারিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় একজন বিখ্যাত বাঙালি ইতিহাসবিদ মহেঞ্জোদারো পুনরাবিষ্কার করেন। কিন্তু মুভিতে তাঁর নাম সম্মানার্থে উল্লেখ করা হয়নি।

মুভিতে ঐতিহাসিক ভুল তো অনেক ছিল । সেই সময় মানুষ নীল চাষ করতো কি না বা এমন ধরনের পোশাক পড়তো কি না যথেষ্ট প্রশ্ন আছে।  কারণ মুভিটি হরপ্পা সভ্যতা নিয়ে সবচেয়ে বড় বিশেষজ্ঞ ড: কেনোয়ারের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞকে হোটেলের রুমেই আটকায় রাখা হয়েছে বলে মনে হয়।

গত সোমবার মুক্তি পাওয়া 'মহেঞ্জো দারো'র ট্রেইলার দেখেও তেমন একটা খুশি হননি দর্শক। মহেঞ্জো দারো’র ট্রেইলার: টুইটারে নিন্দার ঝড়।

মুভির দুনিয়া খুবই নিষ্ঠুর। কারো মাথায় দুর্দান্ত এক মুভির চিন্তা এলেও সেটি বাস্তবায়ন করা বিরাট কষ্টসাধ্য হয়ে উঠতে পারে। বুঝলাম বাস্তবায়ন করা কঠিন কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যদি বাস্তবায়নের তেমন কোন চেষ্টা দেখা না যায় তাহলে ব্যাপারটা হজম করাও কঠিন। ঠিক সেরকমই এক মুভি “মোহেনজো দারো”। হেন করবো, তেন করবো করতে গিয়ে কিছুই করতে পারেননি বিখ্যাত নির্মাতা আশুতোষ গোয়ারিকার।

কাহিনী জানা যাক। মুভিটির পটভূমি খ্রীস্টপূর্ব ২০১৬! তারিখ দেখেই চোখে ভেসে ওঠে এক গঞ্জিকাসেবী পরিচালক দর্শকদের দিকে তাকায় বলতেসে “দেখসোস? আমি কত বস?”।

সারমান (হৃতিক রোশান) নামক এক নীলচাষির স্বপ্ন বিরাট শহর মোহেনজো-দারো তে যাওয়া। অবশেষে সেই আশাপূরণ হয়। হৃতিক খুবই সাধাসাধি একটি ছেলে। শহরের রাজপুত্র অন্য মেয়েদের দিকে নজর দিলে তার মনে কষ্ট লাগে। এই দিকে রাজপুত্রের হবু-বউয়ের লগে টাংকিবাজি করতে তার কোনই অসুবিধা নাই।

এছাড়া চুটায় ব্যবসাও চলছে। যদিও বেশিরভাগ সময় তাকে শহরের অলি-গলিতে খালি ঘুরাঘুরি করতেই দেখা যায়। কিছু বুঝতে না পারলেই প্রশ্ন, এদিকে শহরের পুলিশের একমাত্র কাজ হৃতিকের প্রশ্নের উত্তর দেয়া। উত্তর দিতে দিতে হৃতিককে বলতেই ভুলে যায় :”বাপধন! কতদিন ধরে গোসল করো নাই?” মুভির নায়িকার ( পুজা হেগড়ে) একমাত্র কাজ হলো ফাক-ফোকড় ওয়ালা জামা পরিধান করে পুরা শহরে ক্যাটওয়াক করে বেড়ানো। চুটায় প্রেম করার পর শেষে বলে :”আমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে আছে, ভাই!!”। হৃতিকের ‘ভাই’ শব্দ শুনে জসিমের মত মনে খুব কষ্ট হয়। অবশেষে বিয়ের দিন নায়িকাকে নিয়ে পালাতে চেষ্টা করে। তারপর আলিঝালি লিয়াকত আলি –মার্কা কাহিনী চলতেই থাকে।

মুভিটির ভালো দিক নিয়ে কিছু বলি। মুভিটি সিন্ধু উপত্যাকার হরপ্পা সভ্যতা নিয়ে সর্বপ্রথম মুভি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই সভ্যতার নিয়ে বেশি কিছু জানা যায়নি। আশুতোষ গোয়ারিকার চেষ্টা করেছেন এই মহান সভ্যতা সম্পর্কে সবাইকে জানাতে। মুভিতে সেট ডিজাইন মোটামুটি ভালো হয়েছে। এছাড়া বাণিজ্য মেলায় মেসপটেমিয়া, কাজাকিস্তান, মিশর থেকে আনা বিভিন্ন পণ্য দেখানো হয় যেটা বেশ রোমাঞ্চকর লাগে। এমন এক সময়ের কাহিনী যেখানে লোহার ব্যবহার নেই, ঘোড়া কেউ চোখে দেখেনি, স্বর্ণ একটি হলুদ পাথর ছাড়া কিছুই না- এসব ব্যপার বেশ মজাই লেগেছে। এছাড়া মুভিতে মোহেনজো দারো ধ্বংসের মূল কাহিনী কিছুটা ফারাক্কা বাধের সমস্যার সাথে সম্পৃক্ত। বাঁধের কারণে একটি সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেছে এই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে কিন্তু ছবির শেষের দৃশ্যে পাকিস্তানের সিন্ধু নদের পরিবর্তন হঠাৎ করে গঙ্গা নদীর কথা দিয়ে মিলিয়ে কি বুঝাতে চাইলে তা প্রষ্ট নয়।

মুভিটির সবচেয়ে খারাপদিক হলো মুভির চিত্রনাট্য। পুরোপুরি প্রাণহীন এবং বোরিং। এমন কোন দৃশ্য নেই যেটা মনে দাগ কাটে। বেশিরভাগ সংলাপ শুদ্ধ হিন্দী হবার কারণে বোঝা কঠিন। এছাড়া বুঝলেও মনে হয় না বুঝলেই ভালো হতো। কাহিনী ভুয়া এবং সামঞ্জস্যহীন। মনে হচ্ছিল নির্মাতার যখন যেটা মনে হচ্ছে সেটাই দৃশ্যে রুপান্তরিত করে ফেলছে।

সবার অভিনয় চরম খারাপ হয়েছে। হৃতিক রোশান মাঝে মাঝে কোই মিল গ্যায়ার রোহিত, আবার কখনও যোধা-আকবরের আকবর, আবার কখনো অগ্নিপথের বিজয়। কোনই নতুনত্ব নেই। চান্স পাইলেই খালি মুখ কাপাইতে শুরু করে। নায়িকা তো অভিনয় পারেই না আবার তাকে কিছুটা স্কিন-শো এর জন্যই ব্যবহার করা হয়েছে যেটা দুঃখজনক। ভিলেন চরিত্রে কবীর বেদীর অভিনয় যাত্রাপালা থেকে নকল করা বলে মনে হয়েছে।

স্পেশাল এফেক্ট পুরাই হাস্যকর। এছাড়া কস্টিউম ডিজাইন, মেকআপ একেবারেই পছন্দ হয় নাই। মুভির গ্লাডিয়েটর যুদ্ধের সময় চিন্তা করছিলাম:”হায়রে কপাল! এইটা কী হচ্ছে?”। এছাড়ার মুভির সমাপ্তির সময় মনে হচ্ছিল:”মর তোরা। অযথা সময় নষ্ট করলাম ।

এই মুভি বানাতে ৩ বছর সময় লেগেছে। আরো একবছর যদি চিত্রনাট্যের উন্নতির কাজে ব্যয় হতো তবে হয়তো একটি ভালো মুভি পেতাম। সব মিলিয়ে খুবই হতাশাজনক একটি মুভি।

সিনেমাটির নায়ক হিসেবে হৃত্বিকের রূপসজ্জা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পোস্টার প্রকাশের পরপরই। কিন্তু ট্রেইলার বের হওয়ার পর শোনা যাচ্ছে হতাশার জোর গুঞ্জন। টুইটারে চলছে একের পর এক সমালোচনার জোয়ার।

একজন লেখেন, “গোয়ারিকারের 'মোহেনজো দারো' প্রাচ্যের ইতিহাসকে চকচকে মোড়কে উপস্থাপন করতে গিয়ে পুরোই মার খেয়ে গেছেন।”

একজন প্রশ্ন তোলেন সিনেমার নাম ‘মহেঞ্জো দারো’ রাখা নিয়েও।

আপুর্ভা আশ্রানি নামের ওই টুইটার ব্যবহারকারী আরও লেখেন, “সিন্ধি ভাষায় মহেঞ্জো দারো মানে হলো ‘লাশের স্তুপ’। ১৯২০ সালে যখন ওই স্থানটিতে প্রত্নতাত্ত্বিক খোড়াখুড়ি শুরু হয়েছিল, তখন এই নাম দেওয়া হয়।”

আরেকজন লেখেন, “আশুতোশ গোয়ারিকারের কি এটা জানা উচিৎ নয় যে, ওই স্থানের সত্যিকারের অধিবাসীরা কখনোই এটাকে ‘লাশের স্তুপ’ বলবে না?”

আরেকজন টুইটার ব্যবহারকারীর ভাষ্যে, ''মহেঞ্জো দারো' দেখে মনে হচ্ছে 'কোয়ি মিল গ্যায়া', 'কৃশ', 'গ্ল্যাডিয়েটর', 'এক পাহেলি লিলা' এবং 'লাগান'-এর জগাখিচুড়ি।”

একজন তো বলেই ফেললেন, ''মহেঞ্জো দারো'কে 'বাহুবালি'র লো বাজেট সংস্করণ মনে হচ্ছে। সিনেমাটি দেখবো না, তবে এ আর রহমান সুর করা গানগুলো কিনবো। এবং 'বাহুবালি টু' দেখব।”

সিনেমাটির কলাকুশলীদের নিয়ে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ট্রল বানানো। সিনেমার একটি দৃশ্যের ছবি তুলে একজন টুইট করেন, “এই দুই মার্কিন নাগরিক কী করছেন মহেঞ্জো দারোতে?”

এতে হৃত্বিকের বিপরীতে অভিনয় করেছেন নবাগতা পুজা হেগড়ে। পুজার সাজসজ্জা নিয়েও উঠেছে বিতর্ক। দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন তোলেন, কোথায় লেখা আছে যে হরপ্পার নারীরা মাথায় পাখির পালক পড়তেন?    

রুচিকা শর্মা নামের এই শিক্ষার্থী টুইট করেন, “এটা কোন ধরণের অসুস্থ প্রাচ্যনীতি? তাদের কে বলেছে হরপ্পার অধিবাসীরা মাথায় পাখির পালক পড়তেন?”

তিনি আরও লিখেন, “সবাই জানে, আর‌্যদের গায়ের রং ছিল ফর্সা, হরপ্পার অধিবাসীদের না। কিন্তু বলিউডে গায়ের রং ফর্সা না দেখালে চলে না। খুবই বিরক্তিকর।”

পুজার রূপসজ্জা নিয়ে ট্রল করতে ছাড়েননি টুইটারবাসী। হলিউড অভিনেত্রী আঞ্জেলিনা জোলির অস্কারের সেই বিখ্যাত দেহভঙ্গীর ছবির সঙ্গে পুজার ছবিটির তুলনা করে একজন লেখেন, “দেখে মনে হচ্ছে হরপ্পার নারীরা এই ভঙ্গি আঞ্জেলিনা জোলির আগেই আবিষ্কার করেছেন।”

হৃত্বিকের সঙ্গে এর আগে গোয়ারিকার দর্শককে উপহার দিয়েছেন 'যোধা আকবর'-এর মত ঐতিহাসিক সিনেমা। আমির খান অভিনীত 'লাগান'ও নির্মাণ করেছিলেন তিনি।

মুভি নিয়ে ছিল ৩টি নিবিড় চুম্বনদৃশ্য, অভিযোগ ছিল ইতিহাস বিকৃতিরও। তবে এগুলোকে থোরাই কেয়ার করে হৃত্বিকের ‘মহেঞ্জো দারো’ চলচ্চিত্র।

ছবিটিতে একটুও কাচি চালায়নি ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। ওই দৃশ্যগুলো হুবহু রেখে চলচ্চিত্রটি মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি নিউজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস- ডিএনএ।

একই খবর অন্যান্য ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে হিন্দুস্থান টাইমস জানিয়েছে, ডিএনএর কাছে পাওয়া তথ্য আদতেও তাদের কিনা, তা নিশ্চিত হতে পারেনি তারা।

৩টি চুম্বনদৃশ্যসহ কী করে ‘মহেঞ্জো দারো’ মুক্তি পেল তা বিষ্মিত করেছে অনেককে। কেননা অতীতে একই ধরনের দৃশ্যের কারণে স্পেকট্রা কিংবা সবশেষ সংস্কারি জেমস বন্ডের মতো চলচ্চিত্রকে পড়তে হয়েছে বাধার মুখে। পড়তে হয়েছে সেন্সরশিপের কাচির মুখে। একই ধরনের কারণ দেখিয়ে কাচি চালানো হয় রণবীর-দীপিকার ‘তামাশা’ চলচ্চিত্রটিতেও।

‘মহেঞ্জো দারো’র চুম্বনদৃশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে ছবির অভিনেত্রী পূজা বলেন, ‘আমি সবসময়ই চুম্বন দৃশ্য চাই। কেননা স্ক্রিনে সেটা দেখতে ভালো লাগে। আমার মনে হয়, অন্যতম শ্রেষ্ঠ চুম্বনদৃশ্যে অভিনয় করলাম আমি।’

উল্লেখ্য, সিন্ধু সভ্যতার প্রেক্ষাপটে একটি প্রেমকাহিনিকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে ‘মহেঞ্জো দারো’ সিনেমার গল্প। আশুতোষ গোয়াড়িকর পরিচালিত সিনেমাটি মুক্তি পায় গত ১২ আগস্ট।


 মহেঞ্জোদারো:
মহেঞ্জোদারো ছিল প্রাচীন ভারতেরসিন্ধু সভ্যতার বৃহত্তম নগর-বসতিগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি অধুনা পাকিস্তান রাষ্ট্রের সিন্ধু প্রদেশেরলারকানা জেলায় অবস্থিত। ২৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ নির্মিত এই শহরটি ছিল বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলির অন্যতম এবং প্রাচীন মিশর, মেসোপটেমিয়া
ও ক্রিটেরসভ্যতার সমসাময়িক। এই শহরের পুরাতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ বর্তমানে একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটিকে "একটি প্রাচীন সিন্ধু মহানগর" নামেও অভিহিত করা হয়।

মহেঞ্জোদারো খ্রিস্টপূর্ব ২৬ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল।এটা প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার বৃহত্তম শহরগুলোর একটি, যেখানে আরেকটি প্রাগৈতিহাসিক শহর হরপ্পা গড়ে ওঠেছিল। সিন্ধু সভ্যতা বর্তমান পাকিস্তান ও উত্তর ভারতে ছিল, যার বিস্তৃতি ছিলইরান সীমান্ত, দক্ষিনে ভারতের গুজরাট, উত্তরেবাক্ট্রিয়া পর্যন্ত, যার প্রধান প্রধান শহর ছিল হরপ্পা, মহেঞ্জোদাড়ো, লোথাল, কালিবাঙ্গান, ধলাবিরা এবং রাখিগাড়ি। এদের মধ্যে মহেঞ্জোদাড়ো ঐ সময়ে পুরকৌশল ও নগর পরিকল্পনায় শ্রেষ্ঠ ছিল।[৪]খ্রিস্টপূর্ব ১৯ শতাব্দীতে সিন্ধু সভ্যতার প্রায় আকস্মিক পতন ঘটে এবং মহেঞ্জোদাড়ো পরিত্যক্ত হয়।

সম্ভবত মহেঞ্জোদারো ছিল সিন্ধু সভ্যতার একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র। উন্নতির মধ্যগগনে মহেঞ্জোদারো ছিল দক্ষিণ এশিয়ার উন্নততম নগরী। এই শহরের নগর পরিকল্পনা ও উন্নত ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবস্থাই প্রমাণ করে যে সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের নিকট এই শহর ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ।এই শহরের গণভবনগুলি উচ্চমানের সামাজিক সংগঠনের পরিচায়ক। স্যার মর্টিমার হুইলারের মতে, মহেঞ্জোদারোর তথাকথিত মহাশস্যাগারটিতে গ্রামাঞ্চল থেকে গোরুর গাড়িতে আনীত শস্য জমা রাখা হত। শস্য শুকিয়ে রাখারও ব্যবস্থা ছিল এখানে। যদিও জোনাথান মার্ক কেনোয়ার এটিকে শস্যাগার বলতে রাজি হননি। তাঁর মতে এখানে শস্য জমা রাখার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি এটিকে "মহাকক্ষ" বা "গ্রেট হল" নামে অভিহিত করেন।

পুনরুদ্ধার এবং খনন:
১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ এই শহর পরিত্যক্ত হয়। ১৯২২ সালে ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণেরআধিকারিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় মহেঞ্জোদারো পুনরাবিষ্কার করেন। ১৯৩০-এর দশকে স্যার জন মার্শাল, কে. এন. দীক্ষিত, আর্নেস্ট ম্যাককি ও অন্যান্যদের অধীনে এখানে ব্যাপক খননকার্য চালানো হয়। ১৯৪৫ সালে আহমদ হাসান দানি ও মর্টিমার হুইলারও এখানে খননকার্য চালান। মহেঞ্জোদাড়োয় শেষ বড়ো খননকার্য চলে ১৯৬৪-৬৫ সালে ড. জি. এফ. ডেলসের অধীনে। এরপর উন্মুক্ত স্থাপনাগুলি আবহাওয়াজনিত ক্ষয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেখে এখানে খননকার্য নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে এখানে কেবলমাত্র রক্ষণমূলক খননকার্য, উপরিতল সমীক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পেরই অনুমোদন দেওয়া হত। ১৯৮০-এর দশকে ড. মাইকেল জ্যানসেন ও ড. মরিজিও তোসির নেতৃত্বে একট যৌথ জার্মান-ইতালিয়ান সমীক্ষা দল আর্কিটেকচারাল ডকুমেন্টেশন, উপরিতল সমীক্ষা, সারফেস স্ক্র্যাপিং ও প্রোবিং-এর উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে প্রাচীন সভ্যতার বেশ কিছু সূত্র আবিষ্কার করেন।

অনেক  শিল্পকর্ম পাওয়া যায় খননের সময়। যেমন বসা ও দাঁড়ানো মূর্তি, তামা ও পাথর সরঞ্জাম, উত্কীর্ণ করুক, দাঁড়িপাল্লা এবং ওজন, স্বর্ণ ও জ্যাসপার গয়না, এবং শিশুদের খেলনা।এখানে প্রাপ্ত অনেক প্রত্নতত্ব ভারত ও পাকিস্তানের জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষন করা আছে। ১৯৩৯ সালে, খননে প্রাপ্ত শিল্পকর্ম-এর নমুনা সংগ্রহ করে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ মহাপরিচালকব্রিটিশ মিউজিয়ামে স্থানান্তর করে।


No comments:

Post a Comment