Friday 22 July 2016

সূফি সাহেব কেন অস্থিরতার মধ্যে আছেন ।

সূফি সাহেব কেন অস্থিরতার মধ্যে আছেন ।
সূফি বরষণ

সূফি সাহেব আজকাল অস্থির সময় পার করছেন । অস্থির পৃথিবীর অস্থির রক্তপাত আর ক্রমাগত হত্যাযজ্ঞ দেখে সূফি অস্থির না হয়ে কি পারে?? সেটা জার্মান  ফ্রান্স কিংবা বাংলাদেশ হোক, কোনো অস্বাভাবিক মৃত্যু আমি মেনে নিতে পারিনা । হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। কারণ যার হারায় সেই জানে হারানোর কতো ব্যথা  বেদনার। এখন আর বৃষ্টিতে ধরিত্রী সিক্ত হওয়ার সুযোগ পাইনা কারণ তার আগেই মানুষের রক্তে ভিজিয়ে দেয় মাটিকে। এতো রক্ত এতো খুন ধরিত্রী আর নিতে পারছে না, নিশ্চয়ই একদিন রাগে ক্ষোভে অভিশাপ দিয়ে কেঁপে উঠবে।

 আজ রাতে পূর্ব লন্ডন থেকে দক্ষিণ লন্ডনে আমার বাসায় আসার সময় নির্ধারিত রেল মিস করায় অনেকটা পথ বাসে করে আসতে হয়। দেরি হওয়ার কারণ গুলেন আন্দোলনের উপরে পাঠচক্র শেষ করে আসা । তুর্কির গুলেন আন্দোলন সম্পর্কে আর একদিন একটি সম্পূর্ণ লেখা লিখবো ।  আসার সময় উইকেন্ড ফাইডে তরুণ তরুণীদের রক এন্ড রোল অর্ধ উলঙ্গ সফেদ বা  কালো হাতে পলিশ আপেল ভটকা এবং কারো হাতে টাকিলা চুমুক দেয়ার তালে তালে সঙ্গীকে আলিঙ্গন চুম্বন এইসব রাতের লন্ডনের স্বাভাবিক ঘটনা । আমি সূফি হলেও এইসব দৃশ্য দেখতে হয় কারণ চোখের সামনে ঘটে বলে।

এইবার আর এক দুনিয়ার কথা বলি। কামবার ওয়েল নামক স্থানে একজন বৃদ্ধ ভিক্ষুককে দেখলাম  the dark side of love নামক একটি বিখ্যাত উপন্যাস পড়ছেন । উপন্যাসের পট ভূমি দুটো সিরিয়ার পরিবারের ভালোবাসার গল্প নিয়ে। বৃদ্ধ কায়েসের সাথে অনেক কথা জমে উঠলো। কায়েস বলেন আমি সিরিয়ার ধনী সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান । কিন্তু পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে একটি জাতিকে কবরস্থান বানিয়ে ফেলেছে । আমি পরিবার সম্পত্তি খ্যাতি সব কিছু ফেলে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি জীবন বিনাশী যুদ্ধ থেকে । কেউ বেঁচে নেই আমার পরিবারের বোমার আঘাতে কেড়ে নিয়েছে আমার সব কিছুই । সাগরের পানিতে ভাসতে ভাসতে কিভাবে লন্ডন চলে আসলাম কিছুই মনে নেই । এখন আমাকে রাস্তায় রাত্রিযাপন করতে হয় বলে বৃদ্ধ কায়েসের চোখ দিয়ে ক্রমাগত অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো। বৃদ্ধের কন্ঠ ভারী হয়ে উঠলো??

 বৃদ্ধ বলেন আমার চেয়েও সাত বছরের ফাতিমার গল্প আরও করুণ । ফাতিমা নামে এক সাত বছরের মেয়েকে দেখেছি তার ছোট ভাইকে কোলে নিয়ে দীর্ঘ পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে বাবা মাকে কিন্তু সে হয়তো জানেই না তাঁর বাবা মা আর বেঁচে নেই!? তাঁর খোঁজার পথ কোনো দিনই শেষ হবে না হয়তো ??  আজকের সময়ে বৃদ্ধ কায়েস আর শিশু ফাতেমার মতো প্রত্যেক সিরিয়ার মানুষের জীবন যুদ্ধের গল্পটা একই রকমের । সেটা ইরাক হোক ফিলিস্তিন হোক কিংবা লিবিয়া। কিন্তু এইসব মানুষের তো কোনো দোষ ছিল না কেন তাদের এমন কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে ?? যারা এইসবের জন্য দায়ী তারা কি আল্লাহ গজব থেকে বাঁচতে পারবে?? পৃথিবীর এইসব অস্থির ঘটনা দেখে সূফি সাহেব নিজেকে আর স্থির রাখতে পারছিনা  ।।

No comments:

Post a Comment