বাংলাদেশের হিন্দুদের সাম্প্রদায়ীকতা...
-------------------------------------------------------------লিখেছেনঃ মুনশি বিশ্বজিৎ
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে গুপ্তহত্যা বাড়ছে, দেশজুড়ে হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা বাইড়া চলতেছে।
এই ধরনের হত্যাকান্ডে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিচলিত। গত কয়েক দিনে,দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। এতে করে হিন্দুরা তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকন্ঠিত এবং শঙ্কিত। ফলে গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাড়াইছে-- এই ধরনের হত্যাকান্ড বন্ধ আর সাধারন মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হিন্দুদের করনীয় কি? সোজা কথায় বললে, বাংলাদেশে হিন্দুদের বাইচা থাকার উপায় নিয়া দেশের হিন্দুরা কি ভাবতেছে ?
বাংলাদেশের হিন্দুরা তাঁদের উপর নাইমা আসা সহিংসতা রুখতে কি কি পদক্ষেপ লইতে চান, নিজদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে, তাঁরা কিভাবে লড়তে চান... এইটা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে কি কি কাজ, তাঁরা জীবনে কখনও করবেন না, কোন রাস্তায় তাঁরা কখনও হাটবেন না... বাংলাদেশের হিন্দুরা তা ইতিমধ্যেই সবার কাছে স্পষ্ট করছেন।
বাস্তবতা হইলো, বাংলাদেশে যদি সহিংসতা বাড়তে থাকে, মানুষ যদি প্রতিদিন গুম হয়া উধাও হয়া যাইতে থাকে, বিচারের আগেই বিচারাধীন যে কোন ব্যক্তি যদি আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে খুন হইতে থাকে--, বাংলাদেশের হিন্দুদের এতদিন তাইতে কোন ধরনের নুন্যতম দুশ্চিন্তা দেখা দেয় নাই। বরং অনেক ক্ষেত্রেই দেশের বিরোধী রাজনীতির কর্মীদের এই বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড আর গুম হয়া যাওয়াতে তাঁদের মদদ যোগাইতে দেখা গেছে। ইন্ডিয়ার আশির্বাদপুষ্ট বর্তমান শেখ হাসিনার সরকারের কোলে উইঠা বাংলাদেশের হিন্দুরা নিজদের নিরাপদ ভাবতে চাইছেন,আর বর্তমান সরকারের বিরোধী যে কাউকে সরকারের বিনাবিচারে খুন করাকে সরবে উৎসাহ যুগায়ে গেছেন।
রাষ্ট্র যদি তার নাগরিকদের এক অংশের প্রতি এই ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ বিচার চালাইতে থাকে,তাতে রাষ্ট্রের সামগ্রিক বিচার ব্যবস্থার উপর তার খারাপ আছর পড়ে কিনা, বাংলাদেশের হিন্দুদের এই সব বিষয় নিয়া দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হইতে দেখা যায় নাই। বরং অ-সেকুলার মুসলমান কুপানির উন্মত্ত উল্লাশে তাঁদের সাধারন বিচারবুদ্ধি ঝাপসা হয়া গেছে। রাষ্ট্রের এই সব গনবিরোধী আচরনকে তাঁরা বিচার করতে গেছেন, নিজদের স্বার্থের দাড়িপাল্লায়। তাঁদের ভাবখানা হইলো, রাষ্ট্রের এই ধরনের তুঘলঘিতে যদি আমার ফায়দা হয়, তবে আমি চুপ কইরা থাইকা বরং রাষ্ট্রকে এই সব তুঘলঘি কাজ করার জন্য আরও তাল দিব। এতে যদি রাষ্ট্র আর তার বিচার ব্যবস্থা জাহান্নামে যায়, তো তাতেই সই, আমার কি!
আসলেই তো, তাঁদের কী?
বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের কোন মানুষ আজ নিজকে নিরাপদ ভাবতে পারে না। এই মুহুর্তে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সারা দেশের প্রত্যেকটা মানুষ রইছে অত্যাচারিত হওয়ার, গুম হওয়ার, কিংবা খুন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে। অথচ যখনই যে অবস্থায় বাংলাদেশের কোন হিন্দু নাগরিক যদি কোন ধরনের সহিংসতার শিকার হইছেন, তাহলে এইটাকে বাংলাদেশের হিন্দুরা বিনা বাক্য ব্যয়ে সাম্প্রদায়ীকতা হিসাবে চিহ্নিত করছেন। মজার ব্যাপার হইলো, অন্য আর কোন ধরনের সহিংসতাকে তাঁরা সাম্প্রদায়ীকতা হিসাবে বিবেচনা করেন না। সাম্প্রদায়ীকতা নিয়া তাঁদের বক্তব্য এবং ভাষ্য খুব পরিস্কার-- বাংলাদেশে যখনই কোন হিন্দু, যে কোন ধরনের ক্ষতিগ্রস্ততার মুখে পড়ুক, এইটা অবশ্যই বিবেচ্য হবে সাম্প্রদায়ীক আক্রমন হিসাবে। আর তার জন্য দায়ী থাকবে বাংলাদেশের শতকরা ৯৫ জন মুসলমান, মানে মুসলমান মাত্রই সব নাগরিককে। তাঁদের বয়ান সোজা বাংলায় বলতে গেলে, এ দেশের একশভাগ মুসলমানরাই, বাংলাদেশের হিন্দুদের যাবতীয় দুর্ভোগের জন্য দায়ী। আর বাংলাদেশের মুসলমানরাও কেন অত্যাচারের শিকার হচ্ছে, গুম খুন হচ্ছে- এটার পিছনে সাম্প্রদায়ীকতা নাই, কিন্তু অন্য কি কারন আছে-- সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের হিন্দুদের চিন্তা অতদুর পর্যন্ত্য আর যাইতে চায় না। হাজার হাজার বিরোধী দলের কর্মী খুন হইলে, সেইটা তাঁদের কাছে হইলো চেতনার বাস্তবায়ন। বস্তুতঃ জনগনের মানবাধিকার আর জান-মালের নিরাপত্তা নিয়া বাংলাদেশের হিন্দুদের এতদিন কোন ন্যুনতম মাথাব্যাথাও কিন্তু দেখা যায় নাই। এখন নিজদের ঘাড়ে যখন দুই চারটা কোপ আইসা পড়ছে, শুধু মাত্র তখনই তাঁরা চিৎকার শুরু করছে বটে, তবে তাও এই রাষ্ট্রে কেবল হিন্দুদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কথা তুইলা। এতদিন পরে আইসা এইটুকুতে তাঁদের মুখ খুলছে। সাধারণভাবে জনগনের অধিকার নিয়া তাঁদের কোন মাথাব্যাথা নাই, এই বিষয়ে সোচ্চার হওয়াটা তাঁরা এখনও জরুরত মনে করে না।
কথা এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের হিন্দুরা তাঁদের দুর্ভোগের প্রতিকারের জন্য কোন মুসলমানের সাথে মিইলা কথা বলতে, তাঁদের কাছে যাইতেও রাজী না। ক্যান? কারণ আসল কথা হইলো, তাঁরা মুসলমানদের সাথে একত্রে কোন সমাজ কম্যুনিটিও বানাইতে রাজী না। কারন বাংলাদেশের একশভাগ মুসলমানদের সে দেখে শক্র হিসাবে। এদেশের হিন্দুদের দুর্ভোগের কারন হিসাবে, সে মুসলমানদের একক ভাবে দায়ী করে, ফলে তার সাথে মিলে মিশে কোন সমাজ বানানো আর সেখানে মুসলমানদের সাথে একত্রে কোন সক্রিয়তায় অংশ নেওয়ার কথা সে ভাবতেই পারে না। যদি প্রেজেন্ট রেজিম তাকে হতাশ করে, তাকে সুরক্ষা না দিতে পারে, সে বরং খুঁজতে চাইবে বিজেপি কিংবা ইন্ডিয়ান সরকারের আশির্বাদ। তবুও সে মুসলমানদের কাছে তার ভরসার জন্য যাইতে রাজী না।
ফলে তার সংগঠন হইলো হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। খেয়াল করেন, এইখানে মুসলমানদের আপনি পাইবেন না। কারন সে মনে প্রানে বিশ্বাস করে, তার লড়াইটা বাংলাদেশের শতভাগ মুসলমানদের বিরুদ্ধে। ফলে তার সংগঠনে কোন মুসলমান থাকতে পারে না। এই 'হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ' সংগঠন বানানোর ভিতর দিয়া, বাংলাদেশের হিন্দুরা প্রমান করছে, সে এমন কোন সমাজ কিংবা কম্যুনিটিতে বিশ্বাস করে না, যেইটা কোন ধর্মীয় পরিচয়ের উপর দাড়ায়া নাই। অর্থাৎ বাংলাদেশের হিন্দুরা বাংলাদেশে এমন একটা সমাজে বসবাস করতে চায়, যেইটা পরিস্কারভাবে একটা ধর্মীয় আইডেন্টিটির উপর দাড়ায়া আছে। বাংলাদেশের হিন্দুদের কাছে তাই, সেইটাই হলো সমাজ, যেখানে হিন্দু মুসলমান সুস্পষ্ট আলাদা আলাদা পরিচয়ে বসবাস করে। হিন্দু মুসলমান ধর্ম বর্ন নির্বিশেষ সব পরিচয়ের মানুষ, এক সাথে একত্রে যে সমাজে বাস করে, বাংলাদেশের হিন্দুরা সেই সমাজ তাদের কোন কাজে আসবে বইলা বিশ্বাস করে না। তাঁরা যেই সমাজ চায় সেখান থিকা মুসলমানদের বাদ দিতেই হবে। তাই মুসলমানদের এক্সক্লুড কইরা তাঁরা এক খন্ডিত পরিচয় নিয়া সমাজে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ হিসাবে থাকতে চান। অথচ তামাশা এখন দ্যাখেন, উনারা দাবী করেন, এই হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ সংগঠন উনারা বানাইছেন, এইটা নাকি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। উনারা মুখে বলেন, উনারা নাকি লড়তে চান সাম্প্রদায়ীকতার বিরুদ্ধে, অথচ একটা অল ইনক্লুসিভ সমাজ, যেখানে হিন্দু মুসলমান সবাই একত্রে বসবাস করে, কমন দাবী আদায়ের পক্ষে লড়ে, একটা গনতান্ত্রিক সমাজ, রাজনৈতিক পরিসর বিনির্মানের কথা বলে--- সেই সমাজ বাংলাদেশের হিন্দুরা চান না। তাঁরা মুসলমানদের সাথে একত্রে পথ চলতে সমাজ কমিউনিটি গড়তে অপছন্দ করেন, বেঠিক মনে করেন!!!
মুসলমানদের সাথে মিইলা এদেশের হিন্দুরা যে একত্রে কোন সমাজ কিংবা কম্যুনিটিও বানাইতে রাজী হইলো না, তার নীট ফলাফলটা হইলো-- হিন্দুদের উপর যে সহিংসতা হইছে, যেইটার বিরুদ্ধে জনগনের একটা সংগঠিত লড়াই, যাবতীয় সাম্প্রদায়ীকতা আর অগনতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে একটা প্রতিরোধ হিসাবে দাঁড়াইতে পারলো না। হিন্দু মুসলমান সকলের মিলিত এই প্রতিরোধ লড়াই দিয়েই এই রাষ্ট্রের সব গাফিলতি,নষ্টামি তার বেইনসাফি আর তার গনবিরোধী ভুমিকার বিরুদ্ধে একটা সম্মিলিত প্রতিবাদ সুসংগঠিত হইতে পারতো। অথচ বিগত কয়েক বছরের বাংলাদেশের হিন্দুদের রাজনৈতিক পরিসরের ভুমিকার কথা যদি ধরেন-- একটা গণতান্ত্রিক শক্তিশালী রাষ্ট্র যা সংখ্যালঘুদের প্রটেক্ট করতে পারে, সেই গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই দূরে থাক-- বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক কাঠামো তার লিবারেল ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চাম্পিয়ন যে বর্তমান রেজিম, বাংলাদেশের হিন্দুরা হইলো সেই গনবিরোধী সরকারের সব চাইতে বড় আর প্রধান পার্টনার। ডাকাতের সবচেয়ে বড় স্যঙাৎ।
বাংলাদেশের মুসলমানরা তাঁদের মতো কইরা লড়তেছে,এই অবৈধ সরকার, তাঁদের যাবতীয় রাষ্ট্রীয় অনাচার আর গুম খুনের নির্মমতার বিরুদ্ধে। জনগন তাঁদের টিইকা থাকার স্বার্থে, তাঁদের লড়াই এর একটা পথ নিজের মত কইরা তাঁরা বার কইরা নিতেছে। কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুরা এই গনদুষমন হিসাবে চিহ্নিত সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হওয়ার ঐতিহাসিক গুরুত্বটাই বুঝতে অক্ষম। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের হিন্দুদের মুক্তিদাতা নন, একটা অল ইনক্লুসিভ, মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান, পাহাড়ি, সমতলী, সব আদিবাসী-- সবাইকে নিয়ে গঠিত পলিটিক্যাল কম্যুনিটি যখন একটা শক্তিশালি গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পক্ষে দাঁড়ায়-- ক্ষমতা দখল করে, একমাত্র সেই লিবারাল শাসন ব্যবস্থাই সংখ্যালঘুদের জান মালের গ্যারান্টি দিতে পারে। বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য সেইটাই সব চাইতে সম্মানের আর গর্বের ঘটনা হবে। বাংলাদেশের মাটিতে তাঁদের নিরাপত্তা দেয়া এইটা ইণ্ডিয়ান হাইকমিশনের কর্মচারীদের কিংবা তাঁদের উচ্ছিষ্ট খেয়ে ক্ষমতায় টিকা থাকা কোন সরকারের কাম না।
এই সত্য বাংলাদেশের হিন্দুরা কবে বুঝবেন...?লেখক কানাডা প্রবাসী চিন্তক, লেখাটি তার ফেইসবুক থেকে নেয়া। বিশ্বজিৎ কে ফেইসবুকে ফলো করতে ক্লিক
-------------------------------------------------------------লিখেছেনঃ মুনশি বিশ্বজিৎ
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে গুপ্তহত্যা বাড়ছে, দেশজুড়ে হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা বাইড়া চলতেছে।
এই ধরনের হত্যাকান্ডে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিচলিত। গত কয়েক দিনে,দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। এতে করে হিন্দুরা তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকন্ঠিত এবং শঙ্কিত। ফলে গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাড়াইছে-- এই ধরনের হত্যাকান্ড বন্ধ আর সাধারন মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হিন্দুদের করনীয় কি? সোজা কথায় বললে, বাংলাদেশে হিন্দুদের বাইচা থাকার উপায় নিয়া দেশের হিন্দুরা কি ভাবতেছে ?
বাংলাদেশের হিন্দুরা তাঁদের উপর নাইমা আসা সহিংসতা রুখতে কি কি পদক্ষেপ লইতে চান, নিজদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে, তাঁরা কিভাবে লড়তে চান... এইটা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে কি কি কাজ, তাঁরা জীবনে কখনও করবেন না, কোন রাস্তায় তাঁরা কখনও হাটবেন না... বাংলাদেশের হিন্দুরা তা ইতিমধ্যেই সবার কাছে স্পষ্ট করছেন।
বাস্তবতা হইলো, বাংলাদেশে যদি সহিংসতা বাড়তে থাকে, মানুষ যদি প্রতিদিন গুম হয়া উধাও হয়া যাইতে থাকে, বিচারের আগেই বিচারাধীন যে কোন ব্যক্তি যদি আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে খুন হইতে থাকে--, বাংলাদেশের হিন্দুদের এতদিন তাইতে কোন ধরনের নুন্যতম দুশ্চিন্তা দেখা দেয় নাই। বরং অনেক ক্ষেত্রেই দেশের বিরোধী রাজনীতির কর্মীদের এই বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড আর গুম হয়া যাওয়াতে তাঁদের মদদ যোগাইতে দেখা গেছে। ইন্ডিয়ার আশির্বাদপুষ্ট বর্তমান শেখ হাসিনার সরকারের কোলে উইঠা বাংলাদেশের হিন্দুরা নিজদের নিরাপদ ভাবতে চাইছেন,আর বর্তমান সরকারের বিরোধী যে কাউকে সরকারের বিনাবিচারে খুন করাকে সরবে উৎসাহ যুগায়ে গেছেন।
রাষ্ট্র যদি তার নাগরিকদের এক অংশের প্রতি এই ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ বিচার চালাইতে থাকে,তাতে রাষ্ট্রের সামগ্রিক বিচার ব্যবস্থার উপর তার খারাপ আছর পড়ে কিনা, বাংলাদেশের হিন্দুদের এই সব বিষয় নিয়া দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হইতে দেখা যায় নাই। বরং অ-সেকুলার মুসলমান কুপানির উন্মত্ত উল্লাশে তাঁদের সাধারন বিচারবুদ্ধি ঝাপসা হয়া গেছে। রাষ্ট্রের এই সব গনবিরোধী আচরনকে তাঁরা বিচার করতে গেছেন, নিজদের স্বার্থের দাড়িপাল্লায়। তাঁদের ভাবখানা হইলো, রাষ্ট্রের এই ধরনের তুঘলঘিতে যদি আমার ফায়দা হয়, তবে আমি চুপ কইরা থাইকা বরং রাষ্ট্রকে এই সব তুঘলঘি কাজ করার জন্য আরও তাল দিব। এতে যদি রাষ্ট্র আর তার বিচার ব্যবস্থা জাহান্নামে যায়, তো তাতেই সই, আমার কি!
আসলেই তো, তাঁদের কী?
বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের কোন মানুষ আজ নিজকে নিরাপদ ভাবতে পারে না। এই মুহুর্তে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সারা দেশের প্রত্যেকটা মানুষ রইছে অত্যাচারিত হওয়ার, গুম হওয়ার, কিংবা খুন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে। অথচ যখনই যে অবস্থায় বাংলাদেশের কোন হিন্দু নাগরিক যদি কোন ধরনের সহিংসতার শিকার হইছেন, তাহলে এইটাকে বাংলাদেশের হিন্দুরা বিনা বাক্য ব্যয়ে সাম্প্রদায়ীকতা হিসাবে চিহ্নিত করছেন। মজার ব্যাপার হইলো, অন্য আর কোন ধরনের সহিংসতাকে তাঁরা সাম্প্রদায়ীকতা হিসাবে বিবেচনা করেন না। সাম্প্রদায়ীকতা নিয়া তাঁদের বক্তব্য এবং ভাষ্য খুব পরিস্কার-- বাংলাদেশে যখনই কোন হিন্দু, যে কোন ধরনের ক্ষতিগ্রস্ততার মুখে পড়ুক, এইটা অবশ্যই বিবেচ্য হবে সাম্প্রদায়ীক আক্রমন হিসাবে। আর তার জন্য দায়ী থাকবে বাংলাদেশের শতকরা ৯৫ জন মুসলমান, মানে মুসলমান মাত্রই সব নাগরিককে। তাঁদের বয়ান সোজা বাংলায় বলতে গেলে, এ দেশের একশভাগ মুসলমানরাই, বাংলাদেশের হিন্দুদের যাবতীয় দুর্ভোগের জন্য দায়ী। আর বাংলাদেশের মুসলমানরাও কেন অত্যাচারের শিকার হচ্ছে, গুম খুন হচ্ছে- এটার পিছনে সাম্প্রদায়ীকতা নাই, কিন্তু অন্য কি কারন আছে-- সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের হিন্দুদের চিন্তা অতদুর পর্যন্ত্য আর যাইতে চায় না। হাজার হাজার বিরোধী দলের কর্মী খুন হইলে, সেইটা তাঁদের কাছে হইলো চেতনার বাস্তবায়ন। বস্তুতঃ জনগনের মানবাধিকার আর জান-মালের নিরাপত্তা নিয়া বাংলাদেশের হিন্দুদের এতদিন কোন ন্যুনতম মাথাব্যাথাও কিন্তু দেখা যায় নাই। এখন নিজদের ঘাড়ে যখন দুই চারটা কোপ আইসা পড়ছে, শুধু মাত্র তখনই তাঁরা চিৎকার শুরু করছে বটে, তবে তাও এই রাষ্ট্রে কেবল হিন্দুদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কথা তুইলা। এতদিন পরে আইসা এইটুকুতে তাঁদের মুখ খুলছে। সাধারণভাবে জনগনের অধিকার নিয়া তাঁদের কোন মাথাব্যাথা নাই, এই বিষয়ে সোচ্চার হওয়াটা তাঁরা এখনও জরুরত মনে করে না।
কথা এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের হিন্দুরা তাঁদের দুর্ভোগের প্রতিকারের জন্য কোন মুসলমানের সাথে মিইলা কথা বলতে, তাঁদের কাছে যাইতেও রাজী না। ক্যান? কারণ আসল কথা হইলো, তাঁরা মুসলমানদের সাথে একত্রে কোন সমাজ কম্যুনিটিও বানাইতে রাজী না। কারন বাংলাদেশের একশভাগ মুসলমানদের সে দেখে শক্র হিসাবে। এদেশের হিন্দুদের দুর্ভোগের কারন হিসাবে, সে মুসলমানদের একক ভাবে দায়ী করে, ফলে তার সাথে মিলে মিশে কোন সমাজ বানানো আর সেখানে মুসলমানদের সাথে একত্রে কোন সক্রিয়তায় অংশ নেওয়ার কথা সে ভাবতেই পারে না। যদি প্রেজেন্ট রেজিম তাকে হতাশ করে, তাকে সুরক্ষা না দিতে পারে, সে বরং খুঁজতে চাইবে বিজেপি কিংবা ইন্ডিয়ান সরকারের আশির্বাদ। তবুও সে মুসলমানদের কাছে তার ভরসার জন্য যাইতে রাজী না।
ফলে তার সংগঠন হইলো হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। খেয়াল করেন, এইখানে মুসলমানদের আপনি পাইবেন না। কারন সে মনে প্রানে বিশ্বাস করে, তার লড়াইটা বাংলাদেশের শতভাগ মুসলমানদের বিরুদ্ধে। ফলে তার সংগঠনে কোন মুসলমান থাকতে পারে না। এই 'হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ' সংগঠন বানানোর ভিতর দিয়া, বাংলাদেশের হিন্দুরা প্রমান করছে, সে এমন কোন সমাজ কিংবা কম্যুনিটিতে বিশ্বাস করে না, যেইটা কোন ধর্মীয় পরিচয়ের উপর দাড়ায়া নাই। অর্থাৎ বাংলাদেশের হিন্দুরা বাংলাদেশে এমন একটা সমাজে বসবাস করতে চায়, যেইটা পরিস্কারভাবে একটা ধর্মীয় আইডেন্টিটির উপর দাড়ায়া আছে। বাংলাদেশের হিন্দুদের কাছে তাই, সেইটাই হলো সমাজ, যেখানে হিন্দু মুসলমান সুস্পষ্ট আলাদা আলাদা পরিচয়ে বসবাস করে। হিন্দু মুসলমান ধর্ম বর্ন নির্বিশেষ সব পরিচয়ের মানুষ, এক সাথে একত্রে যে সমাজে বাস করে, বাংলাদেশের হিন্দুরা সেই সমাজ তাদের কোন কাজে আসবে বইলা বিশ্বাস করে না। তাঁরা যেই সমাজ চায় সেখান থিকা মুসলমানদের বাদ দিতেই হবে। তাই মুসলমানদের এক্সক্লুড কইরা তাঁরা এক খন্ডিত পরিচয় নিয়া সমাজে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ হিসাবে থাকতে চান। অথচ তামাশা এখন দ্যাখেন, উনারা দাবী করেন, এই হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ সংগঠন উনারা বানাইছেন, এইটা নাকি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। উনারা মুখে বলেন, উনারা নাকি লড়তে চান সাম্প্রদায়ীকতার বিরুদ্ধে, অথচ একটা অল ইনক্লুসিভ সমাজ, যেখানে হিন্দু মুসলমান সবাই একত্রে বসবাস করে, কমন দাবী আদায়ের পক্ষে লড়ে, একটা গনতান্ত্রিক সমাজ, রাজনৈতিক পরিসর বিনির্মানের কথা বলে--- সেই সমাজ বাংলাদেশের হিন্দুরা চান না। তাঁরা মুসলমানদের সাথে একত্রে পথ চলতে সমাজ কমিউনিটি গড়তে অপছন্দ করেন, বেঠিক মনে করেন!!!
মুসলমানদের সাথে মিইলা এদেশের হিন্দুরা যে একত্রে কোন সমাজ কিংবা কম্যুনিটিও বানাইতে রাজী হইলো না, তার নীট ফলাফলটা হইলো-- হিন্দুদের উপর যে সহিংসতা হইছে, যেইটার বিরুদ্ধে জনগনের একটা সংগঠিত লড়াই, যাবতীয় সাম্প্রদায়ীকতা আর অগনতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে একটা প্রতিরোধ হিসাবে দাঁড়াইতে পারলো না। হিন্দু মুসলমান সকলের মিলিত এই প্রতিরোধ লড়াই দিয়েই এই রাষ্ট্রের সব গাফিলতি,নষ্টামি তার বেইনসাফি আর তার গনবিরোধী ভুমিকার বিরুদ্ধে একটা সম্মিলিত প্রতিবাদ সুসংগঠিত হইতে পারতো। অথচ বিগত কয়েক বছরের বাংলাদেশের হিন্দুদের রাজনৈতিক পরিসরের ভুমিকার কথা যদি ধরেন-- একটা গণতান্ত্রিক শক্তিশালী রাষ্ট্র যা সংখ্যালঘুদের প্রটেক্ট করতে পারে, সেই গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই দূরে থাক-- বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক কাঠামো তার লিবারেল ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চাম্পিয়ন যে বর্তমান রেজিম, বাংলাদেশের হিন্দুরা হইলো সেই গনবিরোধী সরকারের সব চাইতে বড় আর প্রধান পার্টনার। ডাকাতের সবচেয়ে বড় স্যঙাৎ।
বাংলাদেশের মুসলমানরা তাঁদের মতো কইরা লড়তেছে,এই অবৈধ সরকার, তাঁদের যাবতীয় রাষ্ট্রীয় অনাচার আর গুম খুনের নির্মমতার বিরুদ্ধে। জনগন তাঁদের টিইকা থাকার স্বার্থে, তাঁদের লড়াই এর একটা পথ নিজের মত কইরা তাঁরা বার কইরা নিতেছে। কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুরা এই গনদুষমন হিসাবে চিহ্নিত সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হওয়ার ঐতিহাসিক গুরুত্বটাই বুঝতে অক্ষম। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের হিন্দুদের মুক্তিদাতা নন, একটা অল ইনক্লুসিভ, মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান, পাহাড়ি, সমতলী, সব আদিবাসী-- সবাইকে নিয়ে গঠিত পলিটিক্যাল কম্যুনিটি যখন একটা শক্তিশালি গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পক্ষে দাঁড়ায়-- ক্ষমতা দখল করে, একমাত্র সেই লিবারাল শাসন ব্যবস্থাই সংখ্যালঘুদের জান মালের গ্যারান্টি দিতে পারে। বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য সেইটাই সব চাইতে সম্মানের আর গর্বের ঘটনা হবে। বাংলাদেশের মাটিতে তাঁদের নিরাপত্তা দেয়া এইটা ইণ্ডিয়ান হাইকমিশনের কর্মচারীদের কিংবা তাঁদের উচ্ছিষ্ট খেয়ে ক্ষমতায় টিকা থাকা কোন সরকারের কাম না।
এই সত্য বাংলাদেশের হিন্দুরা কবে বুঝবেন...?লেখক কানাডা প্রবাসী চিন্তক, লেখাটি তার ফেইসবুক থেকে নেয়া। বিশ্বজিৎ কে ফেইসবুকে ফলো করতে ক্লিক
No comments:
Post a Comment