একাত্তর একটি মাত্র শব্দ দিয়ে আওয়ামী লীগ যুগ যুগ ধরে দেশে ঘৃণার বারুদ ছড়াচ্ছে ॥ আজ জাতি বিভক্তি
সূফি বরষণ
আগুনের উত্তাপ আর কয়লার কালো রং কখনোই আলাদা করা যায় না। আরেকটা আওয়ামী লীগ থেকেও তেমনি আলাদা করা যায় না তার হিংস্র চরিত্র, ঐতিহ্য ও দলীয় সংস্কৃতি। সেটি যেমন গণতন্ত্র ধ্বংসের, তেমনি অটল ভারত-প্রেম এবং রাজনৈতিক সন্ত্রাসের। এবং সেটি দলটির জন্ম থেকেই রক্তের সাথে মিশে আছে । প্রত্যেক দেশে প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই একটি আদর্শ থাকে। মানুষ সে আদর্শ বাস্তবায়নে দলবদ্ধ হয়,সে লক্ষ্যে শ্রম দেয়,মেধা দেয়,অর্থ দেয় এবং প্রয়োজনে প্রাণও দেয়। সে লক্ষ্যে সমাজতন্ত্রীদের রয়েছে যেমন সমাজতান্ত্রিক দল, তেমনি ইসলামপন্থীদের রয়েছে ইসলামী দল। কিন্তু আওয়ামী লীগের আদর্শ কোনটি? দলের আদর্শ ধরা পড়ে দলের নীতি,কর্ম ও আচরণে। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বহুকাল আগে,দলটি কয়েকবার ক্ষমতায়ও গেছে। ফলে গোপন থাকেনি তার নীতি,কর্ম ও আচরণ। আর তাতে প্রকাশ পেয়েছে আদর্শ। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও আওয়ামী লীগের ইতিহাস,বহুদলীয় গণতন্ত্রকে কবরে পাঠানোর। রহিত করেছিলেন মত প্রকাশের স্বাধীনতা। ক্ষমতায় বসেই শেখ মুজিব দেশবাসীর জন্য আইনসিদ্ধ মতবাদের একটি তালিকা বেঁধে দিয়েছিলেন,সেটি ছিল জাতীয়তাবাদ,সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষবাদ। এর বাইরে কোন আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করা বা ভিন্ন দল গড়াকে শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ ঘোষিত করেছিলেন। এমনকি আল্লাহর বেঁধে দেয়া একমাত্র আদর্শ ইসলামকে নিয়েও নয়। ফলে তার বাংলাদেশে কোন ইসলামী দল ছিল না।
ডাকাতদের অপরাধ, তারা অন্যের সম্পদ দখলে বা লুণ্ঠনে সন্ত্রাস করে এবং সে সন্ত্রাসে অস্ত্র ব্যবহার করে। তাদের ডাকাতি ব্যক্তির বিরুদ্ধে। আর ফ্যাসিবাদের ডাকাতি হল দেশ এবং সমগ্র দেশবাসীর বিরুদ্ধে। তারা সন্ত্রাসে নামে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলে। ডাকাতের সন্ত্রাসে রাজনীতি নাই, ভণ্ডামীও নাই। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাদখলের সন্ত্রাসের রাজনীতি হল মূল হাতিয়ার। সন্ত্রাসের সাথে সেখানে রাজনীতি যেমন আছে তেমনি প্রতারণাও আছে। সে কারণেই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিব আট আনা সের চাউল খাওয়ানার ওয়াদা করেছিলেন। ১৯৭২-৭৩-এ তলাহীন ঝুড়ি এবং ১৯৭৪-এ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ উপহার দিলে কি হবে,সত্তরের নির্বাচনে তিনি সোনার বাংলা গড়ার প্রতিশ্রুতি শুনিয়েছিলেন।
দেশ ও দেশবাসীর উপর ডাকাতিতে নির্বাচন,রাজপথের জনসভা এবং মিছিলও পরিণত হয় সন্ত্রাসের শিকার। নির্বাচনের আগেই রাজপথের দখল নেওয়ার এটাই ফ্যাসিবাদী সনাতন কৌশল। হিটলার সেটি জার্মানীতে করেছিল। আর আওয়ামী লীগ সে কৌশলের প্রয়োগ করেছে অতীতের প্রতিটি নির্বাচনে। এ নিবন্ধে সে সন্ত্রাসের কিছু উদাহরণ দেয়া হবে। মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে শেখ মুজিব যেমন একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করেছিল, তেমনি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের কথা বলে তিনি ইতিহাস গড়েছিলেন ভারতের সাথে ২৫ সালা দাসচুক্তির। উন্নয়নের ওয়াদা দিয়ে ডেকে এনেছিলেন দেশীয় শিল্পে ধ্বংস, অর্থনৈতিক দুর্গতি ও ভয়ানক দুর্ভিক্ষ। ক্ষুধার্ত মানুষ তখন উচ্ছিষ্টের খোঁজে কুকুরের সাথে আস্তাকুঁড়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। মহিলারা তখন লজ্জা নিবারণে মাছ ধরা জাল পড়তে বাধ্য হয়েছিল। নবাব শায়েস্তা খানের আমলের "ধন-ধান্যে পুষ্পে ভরা" বাংলা তখন বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত পেয়েছিল ‘তলাহীন ভিক্ষার ঝুড়ি রূপে।‘ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই হল মুজিবামল। হাজার বছরের ইতিহাসে আর কোন আমলেই আন্তর্জাতিক অঙ্গণে দেশটির এত অপমান জুটেনি। কিন্তু তিনি কিভাবে সর্ব কালের সেরা বাঙালী হয় তা আমার বুঝে না আসলেও দেশের জনগণ ঠিকই বুঝতে
পেরেছে ॥
বাংলাদেশের রাষ্ট্র, রাজনীতি, আইন ও বিচারব্যবস্থার গোড়ার গলদ হচ্ছে শুরু থেকে ॥ বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলা ও গঠন করা যায় নি। তার জন্য অনেকাংশে দায়ী সন্ত্রাসী দল আওয়ামী লীগ॥ মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু ও সংঘটিত হয়েছিল একাত্তরের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে -- যার ঘোষিত ও লিখিত মূল উদ্দেশ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার বা ইনসাফ কায়েম ও চর্চার উপযোগী গণমানুষের রাষ্ট্র গড়ে তোলা। কিন্তু ডান কি বাম প্রতিটি রাজনৈতিক দল বা ধারা মুক্তিযুদ্ধ ও গণমানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। গণশক্তির বিকাশ ও বিজয় ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক বিপ্লবই অসমাপ্ত যুদ্ধ সম্পন্ন করতে পারে, এটাই এখনকার রাজনৈতিক কাজ। এদেশের সকল মানুষের ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, লোকায়ত জ্ঞান ও ভাবুকতা সবই রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে গড়ে ওঠার আন্তরিক ও ঐতিহাসিক উপাদান। কিন্তু গণ ঐক্য ও গণশক্তি বিকাশ বাধাগ্রস্ত করার জন্য যারা ধর্মের নামে, ধর্ম বিরোধিতার নামে কিম্বা বাস্তবতা বিবর্জিত নানান বস্তুবাদী মতাদর্শের দোহাই দিয়ে জনগণকে বিভক্ত ও আশু রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন ও কর্তব্য পূরণের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করছে তারাই -- আওয়ামী কিংবা বাম --এরা জনগণের শত্রু। এরাই একাত্তরের কথা বলে বার বার দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে ॥
কোন জাতি বা দেশ ভূমিকম্প, ঘুর্নিঝড়, জলোচ্ছ্বাস বা মহামারিতে ধ্বংস হয় না। ধ্বংসের বীজ থাকে তার নিজ ইতিহাসের মাঝে। আত্মহননের সে বীজ থেকে জন্ম নেয় জনগণের মাঝে আত্মঘাতী ঘৃণা; এবং সে ঘৃণা থেকে জন্ম নেয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও হানাহানি।যতই সে বিষপূর্ণ ইতিহাস পা|ঠ করা হয় ততই বাড়ে জনগণের মাঝে আত্মবিনাশী যুদ্ধের নেশা। এবং বাড়ে সত্যবিচ্যুতি ও পথভ্রষ্টতা।
আর সেই ঘৃণা ছড়িয়ে দিচ্ছে জনগণের মাঝে আওয়ামী লীগ ॥ জাতিকে ধ্বংস করতে আওয়ামী ঘৃণা সফলতার সাথে ছড়িয়ে যাচ্ছে ॥
বাংলাদেশের ইতিহাসে একাত্তরের ঘটনাবলি নিয়ে মিথ্যাচার হয়েছে প্রচুর।লেখা হয়েছে অসত্যে ভরপুর অসংখ্য গ্রন্থ,গল্প,উপন্যাস ও নাটক। নির্মিত হয়েছে বহু ছায়াছবি।এখনও সে বিকৃত ইতিহাস রচনার কাজটি জোরে শোরে চলছে। মিথ্যাকে বাঁচিয়ে রাখার কাজে দেশের সাহিত্য,সংস্কৃতি ও মিডিয়া ব্যবহৃত হচ্ছে হাতিয়ার রূপে।যুদ্ধ প্রতি দেশেই ধ্বংস ও মৃত্যু ডেকে আনে, হিংসাত্মক ঘৃনাও জন্ম নেয়। যুদ্ধশেষ হওয়ার পরও হিংসাকে বাঁচিয়ে রাখা এবং সে ঘৃনার ভিত্তিতে দেশে যুদ্ধাবস্থা বছরের পর বাঁচিয়ে রাখা কোন সভ্যদেশের কাজ নয়। এমন কাজ তো শত্রুপক্ষের। কিন্তু সংখ্যায় ষোল কোটি হওয়ায় বাঙালী মুসলিমদের বিরুদ্ধে শত্রুর অভাব নেই। কোন দেশে ষোল কোটি মানুষ ইসলাম নিয়ে খাড়া হলে তাদের পাশে মহান আল্লাহতায়ালার ফেরেশতারাও দল বেঁধে হাজির হয়। তখন তারা শক্তিতে পরিণত হয়। সে সম্ভাবনা তো বাংলাদেশেরও আছে। যে আরবগণ ১৪শত বছর পূর্বে বিশ্বশক্তির জন্ম দিয়েছিল তারা আজকের বাঙালী মুসলিমদের চেয়ে বেশী স্বচ্ছল ছিল না। ইসলামের শত্রুপক্ষ সে ইতিহাস জানে। ফলে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের ভয়ও কম নয়। তাই বাঙালী মুসলিমদের এ বিশাল শক্তিকে তারা আত্মবিনাশে লাগাতে চায়। এজন্য ইসলামের শত্রুপক্ষের বিনিয়োগটি অতি বিশাল। এজন্যই তারা নিজেদের সৃষ্ট একাত্তরের ঘৃণাকে শত শত বছর বাঁচিয়ে রাখতে চায়।
তাই যুদ্ধ শেষে অন্যান্য দেশে যেমন শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হয়,বাংলাদেশে ইসলামের শত্রুপক্ষ সেটি হতে দিতে রাজী নয়। বাঙালী মুসলিমগণ চাইলেও প্রতিবেশী ভারত সেটি হতে দিবে না। তাদের বাংলাদেশী তাঁবেদারগণ এজন্যই নির্মূলমুখি। একাত্তরে তাদের লড়াইটি ছিল ইসলামপন্থিদের নির্মূলে। তারা এখনো তাদের নির্মূল চায়। সংঘাতের পথই তাদের একমাত্র পথ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ৫ কোটির বেশী মানুষ নিহত হয়েছে। মানব ইতিহাসে এতবড় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ কোন কালেই হয়নি। জাপানের দুটি শহরের উপর মার্কিনীরা আনবিক বোমা নিক্ষেপ করেছে এবং বহু লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন মিত্রবাহিনী জার্মানের বহু শহরকে প্রায় পুরাপুরি বিধ্বস্ত করেছে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে জাপান ও জার্মানী উভয়ই মার্কিনীদের মিত্রে পরিণত হয়।অপর দিকে দাবী করা হয়,জার্মানীরা ৬০ লক্ষ ইহুদীকে গ্যাস চ্যাম্বারে ঢুকিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে। কিন্তু আজ জার্মানীরাই ইসরাইলের ঘনিষ্ট মিত্র।
একাত্তরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল। এক পক্ষ যেমন পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চেয়েছিল,তেমনি আরেক পক্ষ ১৯৪৬ সালের গণভোটে শতকরা ৯৬ ভাগ বাঙালী মুসলমানের পাকিস্তানভূক্তির সিদ্ধান্তকে সঠিক মনে করে অখণ্ড পাকিস্তানের সাথে থাকাকেই নিজেদের স্বাধীনতার জন্য শ্রেয় মনে করেছিল।পাকিস্তান থেকে বিচ্ছন্ন হওয়ার মধ্যে তারা ভারতীয় আধিপত্যের হাতে চিরকালের জন্য পদদলিত হওয়ার ভয় দেখেছিল। একাত্তরে এ নিয়েই যুদ্ধ হয়েছিল। পাকিস্তানী পক্ষের পরাজয়ের পর এখন আর কেউই বাংলাদেশকে পাকিস্তানভুক্ত করার লক্ষ্যে যুদ্ধ করছে না। কিন্তু যুদ্ধ থামলেও মিথ্যাচার থামেনি। সে মিথ্যাচার ঢুকেছে দেশের ইতিহাসেও। দিন দিন সেটি আরো হিংসাত্মক রূপ নিচ্ছে। পরিকল্পিত এ মিথ্যাচারের লক্ষ্য একটিই। আর তা হলো,দেশ-বিদেশের মানুষ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম থেকে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করা। এবং যারা একাত্তরের লড়াইয়ে বিজয়ী,তাদের কৃত অপরাধগুলো লুকিয়ে ফেরেশতাতুল্য রূপে জাহির করা। সে সাথে যারা সেদিন অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল তাদেরকে জনগণের শত্রু ও দানব রূপে চিত্রিত করা। যারা ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ অবধি শাসনকালে দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভিক্ষার ঝুলিতে পরিণত করলো, একদলীয় বাকশালী শাসন প্রতিষ্ঠা করে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠালো, ডেকে আনলো ভয়ানক দুর্ভিক্ষ এবং মানুষকে পাঠালো ডাস্টবিনের পাশে কুকুরের সাথে উচ্ছিষ্ঠ খোঁজের লড়াইয়ে এবং নারীদের বাধ্য করলো মাছধরা জাল পড়তে -তাদেরকে আজ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বলা হচ্ছে বস্তুত সে পরিকল্পনারই অংশ রূপে।
এ মিথ্যাচারের আরেকটি বড় উদ্দেশ্য, একাত্তরে বাংলার মুসলামানদের মাঝে যে রক্তক্ষয়ী বিভক্তি সৃষ্টি হলো, সেটিকে স্থায়ী রূপ দেয়া। বিভক্তিকে স্থায়ী রূপ দেয়ার জন্যই পরিকল্পিত ভাবে ঘৃণা ছড়ানো হচেছ। প্রশ্ন হলো, একাত্তরে যারা বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করলো তাদেরকে কি বাংলাদেশের দালাল বলা যায়? তেমনি অখণ্ড পাকিস্তানের জন্য যারা লড়াই করলো বা প্রাণ দিল তাদেরকেও কি পাকিস্তানের দালাল বলা যায়? অথচ জেনে বুঝে তাদের বিরুদ্ধে“দালাল” শব্দটির মত ঘৃনাপূর্ণ শব্দের প্রয়োগ বাড়ানো হয়েছে। অথচ ঘৃনা একটি সমাজে বারুদের কাজ করে। সেটি ছড়ানো হলে যে কোন সময়ে সে সমাজে সহজেই বিস্ফোরন শুরু হয়।একাত্তরে যারা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল তাদের অনেকেই বয়সের ভারে দুনিয়া থেকে ইতিমধ্যে বিদায় নিয়েছে। তবে মানুষ বিদায় নিলেও ঘৃণা বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকে চেতনার সংঘাতও । যারা ঘৃণা ছড়াচ্ছে তারা মূলত সে সংঘাতকেই বাঁচিয়ে রাখতে চায়। লক্ষ্য,বাংলাদেশকে অশান্ত ও দুর্বল করা। আর বাংলাদেশ দুর্বল হলে প্রচুর আনন্দ বাড়ে প্রতিবেশী ভারতের। কারণ তারা বাংলাদেশে নিজেদের বাজার চায়।আর বাংলাদেশ দুর্বল হলে সে বাজারটি ধরে রাখাটিও সহজ হয়। একই লক্ষ্যে দালাল বলে তাদের বিরুদ্ধেও তীব্র ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে যাদের জন্ম বাংলাদেশ সৃষ্টির পর এবং যারা দেশে ইসলামি চেতনার বিজয় চায়।এ নিয়ে বিবাদ নাই, দেশে দেশে যারা ইসলামের বিজয় চায় তারাই একাত্তরে অখণ্ড পাকিস্তানে পক্ষ নিয়েছিল। পাকিস্তান ভেঙ্গে গেলেও ইসলামপন্থিদের নির্মূল করার বিষয়টি ভারত ও ভারতপন্থি সেক্যুলারিস্টদের এজেণ্ডা থেকে বাদ পড়েনি। এবং সেটি তাদের কাছে বাদ পড়ার বিষয়ও নয়। ফলে বাংলাদেশের বুকে ইসলামের বিজয় ঠ্যাকাতেই ঘৃণা ছড়ানোর এ বিপুল আয়োজন। আর ধ্বংসাত্মক আয়োজনের অগ্রভাগে রয়েছে বাংলাদেশের ভারতপন্থি সেক্যুলারিস্টগণ। এমন ঘৃণা ছড়ানোর পিছনে শুরু থেকেই অন্য যে উদ্দেশ্যটি কাজ করেছিল তা হলো,পাকিস্তানপন্থি বাঙালী ও অবাঙালীদের বিরুদ্ধে তাদের কৃত ভয়ানক অপরাধগুলোকে জায়েজ রূপে গ্রহণযোগ্য করা।
মিথ্যা রটনা অব্যাহত
ইতিহাস রচনার নামে বাংলাদেশে সরকারি অর্থে যে মিথ্যা রটনা করা হয়েছে সেটি কোন সভ্যদেশে ঘটে না। কারণ ইতিহাস রচনার দায়িত্বটি সরকারি অর্থেপালিত ব্যক্তিদের কাজ নয়। দেশের সরকার স্বভাবতই একটি দলের এবং তাদের থাকে দলীয় এজেন্ডা।ফলে নিরপেক্ষ ইতিহাস রচনায় তাদের আগ্রহ থাকার কথা নয়। অথচ ইতিহাসকে গ্রহণযোগ্য হতে হলে নিরপেক্ষ হওয়া জরুরী। এজন্যই অপরিহার্য হলো, আদালতের বিচারকদের ন্যায় ইতিহাস রচনাকারিদেরও নিরপেক্ষ হওয়া।পক্ষপাতদুষ্ট ইতিহাস পড়ে অনেকে মিথ্যার ভক্ত ও প্রচারকে পরিণত হলেও বিবেকমান ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সেটি ঘটে না। সে মিথ্যাকে তারা ত্বরিৎ সনাক্ত করে ফেলে;এবং হতভম্ব হয়ে যায় মিথ্যার সে বিশাল চেহারাটি দেখে। মেঘের আড়ালে সূর্য ঢাকা পড়লেও সেটি স্বল্প সময়ের জন্য,অচিরেই সেটি প্রজ্বলিত রূপ নিয়ে প্রকাশ পায়। তেমনি মিথ্যা ভেদ করে সত্যেরও প্রবল প্রকাশ ঘটে। শর্মিলা বোস তাঁর “Dead Reckoning” বইতে বিশাল আকারের সে সব মিথ্যার কিছু উদাহরণ তুলে ধরেছেন,এবং সে সাথে তুলে ধরেছেন তার নিজের মনের কিছু প্রতিক্রিয়া।
এই অবস্থায় দেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী এবং বামপন্থী নাস্তিকদের ষড়যন্ত্রের সম্পর্কে সচেতন হয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে॥
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ
No comments:
Post a Comment