Monday, 16 November 2015

বই রিভিউ ... ব্লগার অভিজিতের “বিশ্বাসের ভাইরাস” বইয়ে আল কুরআনের আয়াতকে পাল্টে দেয়া হয়েছিল !!!???


বই রিভিউ ...
ব্লগার অভিজিতের “বিশ্বাসের ভাইরাস” বইয়ে আল কুরআনের আয়াতকে পাল্টে দেয়া হয়েছিল !!!???

সূফি বরষণ
তথাকথিত মুক্তমনা ব্লগার অভিজিৎ রায়  সাহেব একজন অখ্যাত লেখক হলেও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বির্তকিত মন্তব্য করে অল্প সময়ে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন। অল্প সময়ে সল্প মেধা ব্যয়ে ও কম পরিশ্রমে মানুষের কাছে পরিচিত হওয়ার এর থেকে সহজ উপায় পৃথিবীর আর কোথাও নেই। যেটা বাংলাদেশে খুবই সহজে করা যায়॥ আর করতে পারলেই আপনি হয়ে যাবেন রাতারাতি বিখ্যাত মুক্তমনা বিজ্ঞানমনস্ক  সৃজনশীল প্রগতীশীল সহ এমন অসংখ্য উপাধিদারী একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ॥ একদল ব্লগার সম্পর্কে গণমাধ্যমে অনেকবারই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে কেবল ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমানোর জন্যও অনেকে ইসলাম ধর্ম ও আল কোরআনকে বির্তকিত করার চেষ্টা করেছেন। আমেরিকা প্রবাসী অভিজিৎ রায়ের সেই প্রয়োজন ছিল না। তাহলে তিনি কেন আল কোরআনের আয়াত পরিবর্তন করে, আয়াতের অর্থ বিকৃত করে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হজরত মোহাম্মদকে (সা.) বির্তকিত করার চেষ্টা করলেন বিষয়টি বোধগম্য নয়। আর অবৈধ  প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্যমতে ব্লগার হত্যার পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের হাত রয়েছে তা সত্য হিসেবে ধরি, তাহলে ওই চক্রের সাথে আমেরিকা প্রবাসী অভিজিতের কোনো যোগসূত্র নেই তো? যে কারণে হয়তো বা তাকে হত্যা করা হয় ?? মানে কাজ শেষ প্রমাণ শেষ ॥ আমার এই প্রশ্ন অনেকের কাছে অবান্তর মনে হলেও এ প্রশ্ন থেকেই যায় মুক্তবুদ্ধির নাম দিয়ে তিনি কেন আল কোরআনের আয়াতকে পরিবর্তন বা বিকৃত করতে উদ্যোগী হলেন? এখানে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলে নাই কারণ কোনো ব্লগার হত্যার তদন্ত রিপোর্ট
সংবাদপত্রে আজ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি ??!!! বিষয়টি এখনও রহস্যের মধ্যেই রয়ে গেছে ॥ এই রহস্যের জাল ভেদ না করতে পারবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষা  নিয় বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়তে হবে ॥

মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানসহ এদেশের সব মানুষই জানে রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক দল গুলো॥ এই ব্যবহারের পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কেউ পক্ষে বলে ব্যবহার করে আবার কেউ বিপক্ষে বলে ব্যবহার করে॥ সবাই একটি উদ্দেশ্য নিজের ব্যক্তি স্বার্থচারিতার্থ করা ॥ আবার কেউ নিজেকে খ্যাতিমান হিসেবে প্রকাশ করতে ধর্মকে মানে ইসলামকে ব্যবহার করছে , যেমন তথাকথিত নাস্তিক নামধারী কিছু ব্লগার ॥ কেউ আবার  নিজেদের রক্ষা করার জন্য ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।  বাংলাদেশের মানুষ কঠিন সময় পার করছে। ঠিক সেই সময়ে আল কোরআননের আয়াত বিকৃত ও পরিবর্তন করে মুসলমানদের  হাতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অস্ত্র তুলে দেয়ার কি খুব দরকার ছিল?
যে কাজটি করছে একটি দেশ বিরোধী ইসলাম বিরোধী সংঘটিত চক্র ॥

মুক্তমনার ব্লগার অভিজিৎয়ের “বিশ্বাসের ভাইরাস” বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে এবং ২০১৫ সালের বইমেলায় আরও একটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়॥ এই বইটি  পড়তে গিয়ে আমি কোনো হিসাব মিলাতে পারিনি। কারণ মানুষ এতো অজ্ঞ মূর্খ হয় কি করে!!??? একটা বিষয় সম্পর্কে ভালো করে না জেনে বই প্রকাশ করে কোন সাহসে ??? আমার নিজের যে লেখা গুলো আছে সেগুলো দিয়ে অন্তত সাত সাতটা বই প্রকাশ করা যাবে ॥ আর যেসব লেখাগুলো শুধুমাত্র গুগল ব্লগ পর্টের পাঠকের সংখ্যা ২ হাজার ৫ শতের উপরে তারপরেও বই প্রকাশের সাহস এখনও করতে পারি নাই॥
কিন্তু অভিজিৎ সাহেব কি করে করলেন আমার মাথায় আসে না॥
আমার বারবার মনে হয়েছে,  দেশকে জঙ্গী রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র যখন চারিদিকে ঠিক সেই সময় আল কোরআনের আয়াত বিকৃত ও পরিবর্তন করে প্রতিপক্ষের হাতে ধর্ম অবমাননার অস্ত্র তুলে দেয়া হলো ফাঁকা মাঠে গোল দেয়া যাবে ? কিন্তু দুঃখের বিষয় এইযে মাঝখানে বেটা ব্লগার অভিজিৎ ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে প্রাণ দিলো ॥ একেবারেই হিন্দি মুভির মতো লোভে পড়ে ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে কাজ শুরু করলে কাজ শেষ হওয়ার পর জীবনটা দিতে হয়॥ এই মূর্খ অজ্ঞান ব্লগাররা শুধু শুধু বলিরপাঠা হলো॥
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বের স্বার্থে এই সব প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজে বের করা দরকার কারণ কেন আমরা সামান্য স্বার্থের জন্য বিদেশীর হাতে দেশের ক্ষতিসাধন করি॥

অভিজিৎ রায় তার “বিশ্বাসের ভাইরাস” বইয়ে কোরআনের কিছু আয়াত ব্যবহার করে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন যে, আল কোরআন একদিকে যেমন সন্ত্রাসবাদ উস্কে দিচ্ছে অন্যদিকে নারীদের আল কোরআনে হেয় করা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। মজার বিষয় হচ্ছে, অভিজিৎ রায় আল কোরআনের যে আয়াতগুলো ব্যবহার করেছেন তার প্রত্যেক আয়াতই তিনি নিজের মতো করে উপস্থাপন করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উক্ত আয়াতগুলোর পুরো অর্থই পাল্টে ফেলেছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে তিনি আল কোরআনের আয়াত হিসেবে যা উল্লেখ করেছেন তা আল কোরআনে নেই। মুক্তবুদ্ধি চর্চার নামে নিজের মতকে প্রতিষ্ঠিত করতে আল কোরআনের আয়াত পাল্টে ফেলা-বিকৃত করার নতুন যে পদ্ধতি অভিজিৎ আবিষ্কার করছেন তা ইসলামের শত্রুদের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেও প্রগতিশীল কোনো মানুষের কাছে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে বলে বিশ্বাস হয় না।

বিশ্বাসের ভাইরাস গ্রন্থে উল্লিখিত আল-কুরআনের অনেক আয়াতের মধ্যে দুই’টি আয়াত এবং প্রকৃত আল কোরআনের আয়াত পাশাপাশি তুলে ধরছি। আর এ থেকে যে কেউই সহজে বুঝতে পারবেন অভিজিৎ আল কোরআনের আয়াতের বিকৃত ঘটিয়েছেন ও পরিবর্তন করেছেন সেই বিষয়টি-

১. অভিজিৎ: ‘তার যদি স্বামী থেকে থাকে, বন্দি হওয়ার পর সে বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে।’ (কোরআন-৪: ২৪) সূরা নিসা: আয়াত ২৪ [বিশ্বাসের ভাইরাস, পৃ. ১৬১]

প্রকৃত আয়াত: “
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاء إِلاَّ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ كِتَابَ اللّهِ عَلَيْكُمْ وَأُحِلَّ لَكُم مَّا وَرَاء ذَلِكُمْ أَن تَبْتَغُواْ بِأَمْوَالِكُم مُّحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً وَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا

24

এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়-এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ।
(সূরা নিসা; ২৪)

২. অভিজিৎ: এর বইয়ে লেখা “নারীকে কোনোদিন নবী-রসুল করা হবে না।” সূরা নাহল- আয়াত ৪৩ (১৬: ৪৩) এবং সূরা হজ্ব আয়াত ৭৫ (২২:৭৫) [বিশ্বাসের ভাইরাস, পৃ. ১৫৩]

প্রকৃত আয়াত: যথাক্রমে
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلاَّ رِجَالاً نُّوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُواْ أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ

43

আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে;
(সূরা নাহল; ৪৩)

প্রকৃত আয়াত, “
اللَّهُ يَصْطَفِي مِنَ الْمَلَائِكَةِ رُسُلًا وَمِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ

75

আল্লাহ ফেরেশতা ও মানুষের মধ্য থেকে রাসূল মনোনীত করেন। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্ব দ্রষ্টা!  (সূরা হজ্ব: ৭৫)
অভিজিত লিখেছে : জনপদ বাসীদের মধ্যে হতে যতজন ইতিপূর্বে রাসুল পাঠিয়েছি সবাই পুরুষ ছিল এবং ওহী পাঠিয়েছি॥
প্রকৃত আয়াত হলো:
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلاَّ رِجَالاً نُّوحِي إِلَيْهِم مِّنْ أَهْلِ الْقُرَى أَفَلَمْ يَسِيرُواْ فِي الأَرْضِ فَيَنظُرُواْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَدَارُ الآخِرَةِ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ اتَّقَواْ أَفَلاَ تَعْقِلُونَ

109

আপনার পূর্বে আমি যতজনকে রসূল করে পাঠিয়েছি, তারা সবাই পুরুষই ছিল জনপদবাসীদের মধ্য থেকে। আমি তাঁদের কাছে ওহী প্রেরণ করতাম। তারা কি দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে না, যাতে দেখে নিত কিরূপ পরিণতি হয়েছে তাদের যারা পূর্বে
ছিল ? সংযমকারীদের জন্যে পরকালের আবাসই উত্তম। তারা কি এখনও বোঝে না? এমনই ভাবে সে সুরা বারাকাহর ২৮২ নম্বর আয়াত এবং সুরা নিসার ১৪ নম্বর আয়াতের বিকৃত অনুবাদ করেছে যাতে মূল অর্থ গোপন করে নিজের মতো করে বিভ্রান্তি মূলক কথা লিখে দিয়েছে॥

বইয়ের উদ্বৃত্তি দেয়া অন্য আয়াতগুলোরও একই অবস্থা ভুল আর আল কুরআনের আয়াত বিকৃত অনুবাদ করা হয়েছে যা কুরআনে নাই তাকে কুরআন বলে চালিয়ে দিয়েছে ।

পরিশেষে, অভিজিৎ রায়ের বইকে যারা মুক্তচিন্তার কাণ্ডারী হিসেবে মনে করেন আমার সেই সব প্রগতিশীল ব্লগার বন্ধুদের কাছে প্রশ্ন আপনারা কি এই বইটি পড়েছেন? আপনারা কি আল কোরআনের সাথে অভিজিৎ এর বক্তব্যকে মিলিয়ে দেখেছেন? না, না পড়েই ধর্মান্ধদের মতো আপনারাও কেবল শুনেই অভিজিৎকে প্রগতিশীল লেখক হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছেন? অন্য ধর্ম গ্রন্থকে শুধু বিকৃতভাবে উপস্থাপন নয়, বক্তব্য পরিবর্তন করাই কি প্রগতিশীলতা আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে?
আমি নিজে কত চেষ্টা করছি আল কুরআনকে ভালো ভাবে বুঝার জন্য কিন্তু এখনও বিশাল কুরআনের দুই একটি আয়াতও ভালো করে বুঝতে পারি নাই বা শিখতে পারি নাই?? আর ব্লগার  অভিজিৎ সাহেব কুরআনে এই এই আয়াতে ভুল আছে বলে একটি বই প্রকাশ করে ফেলেছেন ???!!!!!!! হায় আমার মুক্তমনা তাইলে আমি কি??? আমিও একজন ব্লগার কই আমি তো কোনো ধর্মের ধর্ম গ্রন্হাদির উপরে আঘাত করে উল্টা পাল্টা লিখে বিখ্যাত হতে চাই না ॥ আর আমি প্রতিদিন আল্লাহ কাছে এই দোয়া করি.... رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ ( 8 ) হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা। আমি যে সত্যের পক্ষে সামান্য কিছু চেষ্টা করতে পারি আল্লাহর সাহায্য চাই॥

মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ

লেখক: সাংবাদিক-গবেষক (লন্ডন প্রবাসী)

No comments:

Post a Comment