সূফি বরষণ
ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে গরু কোরবানী করা নিষিদ্ধ। হয়ত এমনও হতে পারে যে সারা ভারতে একদিন গরু কোরবানী নিষিদ্ধ করবে উগ্র সাম্প্রদায়িক মোদী সরকার । কিন্ত হিন্দুরা কি আসলেই গরু কোরবানীর বিপক্ষে, এরা কি আসলেই গরুর গোশত খায়না নাকি মুসলমানদের উপর হিংসার কারনে এরা ভারতে গরু কোরবানী নিষিদ্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছে!চাইলে :
হিন্দু ধর্মে গো হত্যা মহাপাপ। গোমাংস ভক্ষণ সেটাও হারাম এবং মহাপাপ। যদিও কতিপয় হিন্দু ধর্মীয় কাহিনীতে গোমেধ যজ্ঞের কথা বর্ণনা করা আছে। অশ্বেমেধ যজ্ঞের কথাও আছে। তবে সেই ত্রেতা-দ্বাপরে মানুষ গরু-ঘোড়া খেত কিনা সেটা নিয়ে সাধারণের মনে তেমন কোন প্রশ্ন নেই। কিন্তু এই ঘোর কলিযুগেও হিন্দুরা গরু মহিষের মাংস খায়!! গরু আর মহিষের মাংসের মধ্যে তেমন পার্থক্য যে আছে এটা বাংলাদেশ বা ভারতের হিন্দুসম্প্রদায়ের পক্ষে চিন্তা করাও কষ্টের। চুরি করে দু’একজন দুষ্ট লোকে গরু বা মহিষের মাংস খেলে ধর্মের তেমন ক্ষতি হয়তো হয় না। কিন্তু যদি গোমেধ যজ্ঞের মতো মহিষমেধ যজ্ঞ করে মহোৎসাহে হাজার হাজার গরু মহিষ বলী দিয়ে সেই গরু মহিষের মাংস উৎসবমূখর পরিবেশে ভক্ষণ করা হয় তখন??
আসুন দেখি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিসর্জন নাটকে কি বলেন, ""
গুণবতী। এ বৎসর
পূজার বলির পশু আমি নিজে দিব।
করিনু মানত, মা যদি সন্তান দেন
বর্ষে বর্ষে দিব তাঁরে এক-শো মহিষ,
তিন শত ছাগ।
রঘুপতি। পূজার সময় হল।
[ উভয়ের প্রস্থান"""
এখানে মহিষের কথা পরিষ্কার উল্লেখ আছে প্রিয় পাঠক আপনারাই গরু আর মহিষের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য কোথায় ???? মুসলমানদের ধর্মীয় বিধান কোরবানী পালন নিষিদ্ধ করা মানে কি দাঁড়ায় ??? উগ্র সাম্প্রদায়িক হিন্দুদের শুধুই শুধুই মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানো নয় কি???
হ্যা, এই একবিংশ শতকেও হিন্দুরা গরু ও মহিষের মাংস খায়। তবে আমাদের দেশে নয়। পাশের দেশ ভারত ও নেপালে। নেপালের নিউয়া (Newa) গোত্রের মানুষরাই মূলতঃ মহিষের মাংষ বেশি পছন্দ করে। সারা বছরই তারা মহিষ বলীর ব্যবস্থা রাখে। তবে গাধিমাই উৎসবের (Gadhimai festival) মুসলমানদের কোরবানী ঈদের মতো হাজার হাজার গরু ও মহিষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে রীতিমতো প্রদীপ জ্বালীয়ে ঢাক বাজিয়ে বলী দেয়া হয়। নিউয়া ছাড়াও জনজাতি, মাগার, গুরং, তামাং, রাই, লিম্বু ইত্যাদি গোত্রের লোকেরাও গরু ও মহিষের মাংসকে একটি উপাদেয় মাংস হিসাবেই ভক্ষণ করে। এই সমস্ত গোত্রের লোকেরা কাঠমুন্ডু এবং পোখরা অঞ্চলে বেশি বসবাস করে। আর এই কারণে কাঠমুন্ডু এবং পোখরা শহরে বহু রেস্টুরেন্ট-হোটেলে মহিষের মাংসের বিভিন্ন ডিস জনপ্রিয়। তবে তারা গরুর পূজা যেমন করেন তেমনি গরুর মাংস খাওয়াও মহাপাপ মনে করেন। শুধু মহিষ খান।
কিন্তু অপর দিকে একই নেপালে, প্রতি বছর ভারত এবং নেপালের হিন্দুরা “ গাধিমাই” নামে একটি উৎসব পালন করে। আর এই উৎসবের মুল আকর্ষন হচ্ছে যে, এরা একটি খোলা ময়দানে ২০-৩০ হাজার গরু ছেড়ে দিয়ে গরু দাড়ানো অবস্থায় একের পর এক গরুর মাথা কাটে। আর মাথা কাটার পর এরা সেই গরুর গোশত এবং চামড়া বিক্রি করে দেয়। প্রতি বছর হিন্দুরা এই উৎসবটি অতি জাকজমকের সাথে উৎযাপন করে কিন্তু এই কিন্তু গরুকে তাদের মা মা কলে চিৎকার করে।আর ঠিকই তারা প্রতি বছর ঘটা করে ২০-৩০ হাজার গরুর মাথা কাটে। তাহলে ভারতে গরু কোরবানীর নিষিদ্ধের নেপথ্যে কি শুরু মুসলমানদের সাথে শত্রুতার তাগিদে! শুধুই মুসলিম বিদ্বেষ শুধুই কি মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিংস্র সাম্প্রদায়িক আচরণ ????
গাধিমাই উৎসব নেপালের কয়েক হাজার বছর ধরে চলমান এক পশু হত্যা উৎসব। শক্তির দেবী রুপে খ্যাত “গাধিমাই’কে পূজা করতে এ পশু হত্যা উৎসব করে হাজার হাজার অন্ধভক্ত প্রতি পাচঁ বছর অন্তর অন্তর। গাধিমাই উৎসবটি অনুষ্ঠিক হয় নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর প্রায় ৭০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমের বারা জেলার নিজগড়ের কাছে গাধিমাই নামক স্থানে।
সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২০ শে নভেম্ব্র শুরুর মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে গেল। সর্ব শেষ উৎসব হবার পূর্বে এবার অনেকে এর প্রতিবাদ করেছে। তার মধ্যে ফরাসী অভিনেত্রী ব্রিজিত বাদো, ভারতের প্রখ্যাত পশু অধিকার সক্রিয়তাবাদী মানেকা গান্ধী, এনিম্যাল ওয়েলফেয়ার নেটয়াক নেপাল ও এন্টি-এনিম্যাল স্যাক্রিফাইস এলায়েন্স প্রধান পুরোহিত মঙ্গল চৌধুরী।
ফ্রাসী অভিনেত্রী ব্রিজিত বাদো নেপালের রাস্ত্রপতি ড.রাম বরণ যাদবকে লিখিত অনুরোধ পত্রে বলেন, আপনি দেশের প্রধান হয়ে এটির সম্পূণ দায়দায়িত্ব আপনার আমার ব্যাক্তিগতভাবে এটি কল্পনা করতেও কষ্ঠ হচ্ছে যে, আপনার হৃদয় এই জাতীয় নিষ্ঠুরতা সহ্য করতে পারে।
কিন্তু অনেকের আবেদন, অনেকের অনুরোধ সত্বেও নেপাল সরকার এ অমানবিক প্রথা বন্ধে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করেনি। স্থানীয় এক রেডিও কবরে জানায়, এবারের উৎসবে মহিষ, শুকর, ছাগল, মুরগী ও কবুতর সহ প্রায় ৩ থেকে ৫ লাখ পশু বলি দেয়া হয়। ধর্মের গড়ামিতে এতগুল পশুর জীবন হরণ করা মানুষের বিবেক কি একটুও নাড়া দেয় না?
বারা জেলার বরিইয়ারপুর মন্দিরে দেবী গাঁধীমাইয়ের উদ্দেশে পশু বলিদানের রেওয়াজ চলে আসছে কয়েক শতক ধরে। প্রতি বছর পাঁচ বছর অন্তর মন্দিরটির সামনে লাখ লাখ মহিষ, পাঁঠাসহ বিভিন্ন পশু হত্যা করা হয়।http://www.bbc.com/bengali/news/2014/11/141120_pg_india_nepal_sacrificial_animal_smuggling
আজ থেকে ২৫০ বছর আগে এক পুরোহিত প্রচার করেন, তিনি স্বপ্নে দেখেছেন শক্তির দেবী গাঁধীমাই তাকে রক্ত উৎসর্গ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে বন্দীদশা থেকে মুক্ত হবেন ওই পুরোহিত। এরপর থেকেই নেপালের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এ প্রথাটি পালিত হয়ে আসছে। তবে দেবীর জন্য উৎসর্গের নামে লাখ লাখ পশু হত্যার এ উৎসবের বিরোধিতা করে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। | প্রতি পাঁচ বছর অন্তর এই উৎসবে প্রায় পাঁচ লক্ষ পশু বলি দেওয়়া হয়| আর এটি-ই পৃথিবীর সবথেকে বড় পশু বলিদান বলে মনে করা হয়়। প্রায় আড়াইশো বছর ধরে বলিদানের এই প্রথা চলছে। কথিত আছে প্রথমে মানুষের রক্ত দেওয়়ারই প্রথা ছিল। কিন্তু তা পরে পশু বলিদানে পরিণত হয়়। আর বয়়স্ক পশু নয়়, বলি দেওয়়া হয়় কমবয়়সী পশুদেরই। http://www.b24news.com/singlepost.php?id=4168
সনাতন (হিন্দু) ধর্মে উৎসর্গ:দাতাকর্ণের নাম আমরা অনেকেই জানি।হিন্দু পুরাণ (মহাভারত, রামায়ণ ও কর্ণবেদ) থেকে জানা যায়, সূর্য দেবতার ঔরসে ও কুন্তী দেবীর গর্ভে কর্ণের জন্ম।তিনি খুব বড় একজন দাতা ছিলেন, সবসময় কথা দিয়ে কথা রাখতেন।মানুষের প্রতি ছিল তার পগার মমতা, ভালবাসা।তিনি ছিলেন খুব ধার্মিক, সবসময় ভগবানকে খুশি রাখার চেষ্টা করতেন।তিনি মানুষকে খাবার খাওয়াতে ভালবাসতেন।কর্ণের দানশীলতা পরীক্ষা করার জন্য একদা ভগবান কৃষ্ণ ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে অতিথি হয়ে আসেন কর্ণের বাড়ীতে।অতিথি ব্রাহ্মণ জাতের হওয়ায় ধার্মিক কর্ণের কাছ থেকে পান অতিরিক্ত সমাদর।ভগবান এসে আহার করার জন্য কর্ণের কাছে তার ছেলে বৃষকেতুর মাংস চান যা কর্ণের স্ত্রী পদ্মাবতীর নিজ হাতে রান্না করা অর্থাৎ মায়ের হাতে ছেলের রান্না করা মাংস হতে হবে।অগত্যা কি আর করা, কর্ণ তাঁর পুত্র বৃষকেতুকে হত্যা করে তার মাংস রান্না করে ব্রাহ্মণকে আহার করতে দেন।ভগবান কর্ণের এই ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে পুনরায় তার সন্তানের জীবন দান করে আবার জীবিত করে তাদের উপহার দেন।নেপালে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর গাধীমাই উৎসব নামে গাধীমাই দেবীর প্রতি লক্ষ লক্ষ পশু বলি দেওয়া হয়। প্রায় ৯০০ বছর আগে ভগবান চৌধুরী নামক বারিয়াপুরের এক বাসিন্দাকে স্বপ্নযোগে গাধীমাই দেবী ৫ টি নরবলির নির্দেশ দেন, তিনি এতে অপারগ হয়ে প্রতি ৫ বছর অন্তর একটি ইঁদুর, একটি শুকর, একটি মোরগ, একটি ছাগল এবং একটি মহিষ বলি দেওয়া শুরু করেন। সেই থেকে এই প্রথা চলে আসছে।
ধর্মের গোড়ামি ত্যাগ করে আমাদের দরকার সত্য ও বাস্তবতাকে অনুধাবন করা দরকার। ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অতীতে মানসভ্যতার উন্নতির ক্ষেত্রে ধরমের গোড়ামি (অন্ধ বিশ্বাস) সমস্যা ও প্রতিবন্ধক হিসাবে আবিভূত হয়েছিল। আরও কিছু লিংক পশু হত্যা ।
http://www.dailymail.co.uk/news/article-2852739/Nepal-devotees-sacrifice-thousands-animals-Hindu-ritual.html
https://www.theguardian.com/world/2015/jul/28/nepal-temple-bans-mass-animal-slaughter-festival
http://www.bbc.co.uk/news/world-asia-33699136
No comments:
Post a Comment