পর্ব এক। ম্যারা ভারত মহান!?
উগ্র সাম্প্রদায়িক হিন্দুদের হাতে ১৯৮৪ সালে শিখ নিধন বিরোধী দাঙ্গা
২০ হাজার শিখ ধর্মের অনুসারীকে হত্যা ও কয়েক লাখ শিখকে আহত করা হয়।
২৫ হাজারের উপরে শিখদের বাড়ি ঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
পাঞ্জাবে শিখদের পবিত্র তীর্থস্থান অমরিতস্বরে স্বর্ণ মন্দিরে স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলনের সমর্থনকারীদের অপারেশন ব্লু স্টারের মাধ্যমে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়।
জেল, সাবজেল ও লকআপ তিন দিন পর্যন্ত খুলে দিয়ে বন্দীদের শিখিয়ে দেয়া হয়েছে শিখদের হত্যা করার জন্য ‘টিচ দ্য শিখ অ্যা লেসন"।
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন গোয়েন্দা সংস্হা র এর সাবেক অফিসার বি রমনের লেখা বই র এর কাওবয়েজরা।
সূফি বরষণ।।
যুগে যুগে উগ্র সাম্প্রদায়িক হিন্দুদের হাতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয় মুসলিম শিখ খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষ এই হলো মহান ভারতের হিংস্র চরিত্র?? স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলনের সমর্থনকারীদের নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। ভারতে ১৯৮৪ সালের শিখ বিরোধী দাঙ্গা নতুনভাবে তদন্ত করবে বিশেষ তদন্তকারী দল। কেন্দ্র সরকার নিযুক্ত একটি কমিটি দাঙ্গার তদন্তে নতুন করে বিশেষ তদন্ত কমিটি বা ‘সিট’ গঠন করার সুপারিশ করেছে। সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি জেপিমাথুরের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কাছে এসংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছিল। এতে নতুনভাবে বিশেষ তদন্তকারী দল বা এসআইটি গঠন করার সুপারিশ করেছে। এর আগে এসংক্রান্ত মামলার সিবিআই তদন্ত করা হয়।
১৯৮৪ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার নিজের শিখ দেহরক্ষীদের হাতে নিহত হন। এর পরেই শিখ বিরোধী দাঙ্গা শুরু হয় দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে। উগ্র সাম্প্রদায়িক হিন্দুদের হাতে ১৯৮৪ সালে শিখ নিধন বিরোধী দাঙ্গা ২০ হাজার শিখ ধর্মের অনুসারীকে হত্যা ও কয়েক লাখ শিখকে আহত করা হয় এবং ২৫ হাজারের উপরে শিখদের বাড়ি ঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয় উগ্র হিন্দুরা । অন্যরা নিহত হয় উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রসহ বিভিন্ন স্থানে। ১৯৮৪ সালে শিখ বিরোধী দাঙ্গার ৪৯টি মামলা পুনরায় শুরু করবে জানিয়েছে বিশেষ তদন্তকারী দল(SIT)। ২৯ জুলাই ২০১৬ থেকে শিখ বিরোধী ৬৫০ টি মামলার মধ্যে ৪৯ টা মামলা পুনরায় তদন্ত করবে বিশেষ তদন্তকারী দল(SIT)।
বিচারপতি নানাবতি কমিশন পুলিশের বন্ধ করে দেয়া ২৪১ টি মামলার মধ্যে কেবল ৪ টি মামলা চালু করার সুপারিশ করে। কিন্তু বিজেপি অন্য ২৩৭ টি মামলাও চালু করতে চাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার গত ১০ ডিসেম্বর ১৯৮৪তে শিখ বিরোধী দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা করে। কেন্দ্র সরকার ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারপতি জে পি মাথুরের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে। এই কমিটির কাজ ছিল শিখ বিরোধী দাঙ্গার তদন্তে নতুনভাবে 'সিট' গঠনের প্রয়োজনীয়তা খতিয়ে দেখা। কমিটির রিপোর্টে বিশেষ তদন্তকারী দল বা এসআইটি গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে।
১৯৮৪ সালে শিখবিরোধী দাঙ্গা চলায় শিখবিরোধী ভারতীয় জনতা। শিখ ধর্মাবলম্বী দেহরক্ষী ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করার পর এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ দাঙ্গা বাধে। প্রাথমিক হিসেবে এক হিসেবে এ দাঙ্গায় আট হাজারের মতো লোক নিহত হয়। শুধু দিল্লিতেই নিহত হয় তিন হাজার। দাঙ্গা চলে ৩১ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। দফায় দফায় চলে এ দাঙ্গা। ভারতের মূল গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইর অভিমত (সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো) দিল্লি পুলিশের সহায়তায় এই রায়ট চলে। কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু কমকর্তাও এ কাজে সহায়তা জোগায়। মায়ের মৃত্যুর পর রাজিব গান্ধী হন ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই তিনি বলেছিলেন বড় গাছ যখন পড়ে, তখন মাটি কাঁপে।
১৯৭০-এর দশকে ইন্দিরা গান্ধী ভারতে জরুরি অবস্থা জারি করেন। তখন স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত হাজার হাজার শিখকে আটক করে কারাগারে রাখা হয়। তখন স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলনের সমর্থনকারীদের সশস্ত্র শিখেরা মাঝে মধ্যেই সন্ত্রাসী হামলা চালাত। ভারতীয় সরকারের কাছে এরা ছিল সন্ত্রাসী। ১৯৮৪ সালে জুনে ইন্দিরা গান্ধী আদেশ দেন শিখদের স্বর্ণমন্দিরে সামরিক অভিযান চালিয়ে এই মন্দিরকে বিচ্ছিন্নতাবাদীমুক্ত করতে। কারণ বলা হচ্ছিল, এই স্বাধীন খিলিস্তান আন্দোলনের সমর্থনকারী শিখেরা স্বর্ণমন্দিরে অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলছে। এই সামরিক অভিযানের নাম ‘অপারেশন ব্লু স্টার’। পরবর্তী সময়ে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনী নামানো হয় পাঞ্জাবের গ্রামাঞ্চলকে বিচ্ছিন্নতাবাদমুক্ত করতে।
এ দ্বন্দ্বে সরকারি রিপোর্ট মতে, দুই হাজার ৭০০ জন নিহত হয়। রায়টের পর ভারত সরকার বলে এ রায়টে দিল্লি থেকে ২০ হাজার লোক বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। তবে পিপলস ইউনিয়ন ফর লিবারটিজের রিপোর্ট মতে, এ সংখ্যা ‘কমপক্ষে’ এক হাজার জন বাস্ত্চু্যুত হয়। উল্লেখ্য, এই পিপলস ইউনিয়ন একটি মানবাধিকার সংস্থা। এটি সমাজবাদী নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ ১৯৭৬ সালে পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ অ্যান্ড ডেমোক্র্যাটিক রাইটস (পিইউসিএলডিআর) নামে প্রতিষ্ঠা করেন। সে যা-ই হোক এ রায়টের সবচেয়ে বেশি শিকার হয় দিল্লির শিখ অধ্যুষিত এলাকা। সারা ভারতের মানবাধিকার সংস্থাগুলো ও পত্রপত্রিকার বিশ্বাস এই হত্যাযজ্ঞ ছিল সংগঠিত। এই হত্যাযজ্ঞ নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের দ্বান্দ্বিক অবস্থান এবং কিলারের বিচারিক শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে সাধারণ শিখদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়। বেড়ে যায় খালিস্তান আন্দোলনের প্রতি সমর্থন। ‘আকালি তখত’ নামের শিখবাদের ধর্মীয় গভর্নিং বডি এই হত্যাকাণ্ডকে জেনোসাইড বা গণহত্যা বলে মনে করে।
২০১১ সালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ভারত সরকারকে জানায়, এখনো এই ‘মাস কিলিং’-এর বিচার হয়নি। ২০১১ সালে উইকিলিকস ক্যাবল লিকস জানায়, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস পরিচালিত সরকার এই দুষ্কর্মে সহযোগিতা জুগিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ কাজকে অভিহিত করে ভারত সরকারের শিখবিরোধী ‘অপরচুনিজম’ ও ‘হ্যাট্রিড’ নামে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ রায়টকে গণহত্যা বলতে অস্বীকার করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলে এটি ছিল ‘ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন’। এ ছাড়া ২০১১ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রতিবেদনে বলে, ভারতের হরিয়ানায় ব্যাপক শিখবিরোধী হামলার ঘটনা ঘটে বড় ধরনের প্রতিশোধপরায়ণতার অংশ হিসেবে।
১৯৭৩ সালে শিকদের রাজনৈতিক দল ‘শিরোমনি আকালি দল’ ও অন্যান্য শিখ গ্রুপ ঘোষণা করে ‘আনন্দপুর সাহিব রেজুলেশন’ নামের বিবৃতি। এতে অন্যান্য দাবিদাওয়ার মধ্যে পাঞ্জাব ও শিখদের জন্য ‘বিশেষ মর্যাদা’ দাবি করা হয়। ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে পাঞ্জাবের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে রাজ্যপর্যায়ে। এর ফলে রাজ্য সরকারকে বাতিল করা হয়। জার্নাল সিং বিন্দ্রাওয়ালের নেতৃত্বে পাঞ্জাবে বিদ্রোহ সৃষ্টি হয়। কিছু বিদ্রোহী শিখ গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত নেয় সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পাঞ্জাবে খালিস্তান নামে আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। তারা লড়বে ভারত সরকার ও ভরতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। অন্যরা চাইল আনন্দপুর সাহিব রেজুলেশনের ওপর ভিত্তি করে ভারতের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত পাঞ্জাব। বিপুলসংখ্যক শিখ সশস্ত্র আন্দোলনের নিন্দা জানায়।
১৯৮৩ সালে পাঞ্জাবের অবস্থা খুবই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সে বছরের অক্টোবরে কিছু শিখ বিদ্রোহী একটি বাস থামিয়ে বাসের ছয়জন হিন্দু যাত্রীকে হত্যা করে। একই দিনে অন্য একটি চরমপন্থী গোষ্ঠী একটি ট্রেনে দুইজন কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এ প্রেক্ষাপটে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কংগ্রেস সরকার পাঞ্জাবে কংগ্রেসের রাজ্য সরকার বাতিল করে সেখানে প্রেসিডেন্টের শাসন চালু করেন। অপারেশন ব্লু স্টার চলে ১৯৮৪ সালের ৩ জুন থেকে ৮ জুন পর্যন্ত। এর আগের চার মাস সময়ে গোটা পাঞ্জাবে বিভিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনায় ২৯৮ জন লোক নিহত হয়। ব্লু স্টার অপারেশনের পাঁচ দিনে নিহত হয় ৪৮ জন। তখন সশস্ত্র শিখদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য বিভিন্ন মহল থেকে আহ্বান জানানো হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অপারেশন পরিচালনার আদেশ দেন। আর স্বর্ণমন্দির থেকে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সরিয়ে দেয়ার আদেশ দেন জুনের প্রথম দিকে। বিদ্রোহীদের সরিয়ে দিয়ে পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরের হরমন্দির সাহিব কমপ্লেক্সের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ এবং মন্দির কমপ্লেক্স ভবন থেকে জার্নেইল সিং বিন্দ্রাওয়ালে ও তার অনুসারীদের সরিয়ে দেয়ার আদেশও দেয়া হয়। বিন্দ্রাওয়ালে আগেই অবস্থান নিয়েছিলেন হরমন্দির সাহিবে এবং ১৯৮০ সালের এপ্রিল থেকে এটিকে ব্যবহার করে আসছিলেন তার সদর দফতর হিসেবে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি গুরুদুয়ারায় অস্ত্র মজুদ করে আসছিলেন পরবর্তী সময়ে বড় ধরনের সশস্ত্র অভিযান পরিচালনার জন্য।
সেনাবাহিনীর সূত্র মতে, এ অভিযানে বেসামরিক লোক মারা গেছে ৪৯২ জন। আর সামরিক বাহিনীর লোক মারা গেছে ১৩৬ জন, আহত হয়েছেন ২২০ জন। বেসরকারি সূত্র মতে, লোকক্ষয় ঘটেছে আরো অনেক বেশি। কারো কারো মতে, নিহতের সংখ্যা ২০ হাজারের মতো। মার্ক টালি ও সতীশ জ্যাকব উল্লেখ করেছেন, যেসব বেসামরিক শিখ মার্চ করে অমৃতসরের দিকে যাচ্ছিল, তাদের ওপর দিয়ে সুলতানউইন্ড এলাকায় সেনাবাহিনী ট্যাঙ্ক চালিয়ে দিয়েছিল। হত্যার শিকার হয়েছিলেন বিন্দ্রাওয়ালে ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী সাবেক সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল সাবেগ সিং। এই অপারেশন মন্দির কমপ্লেক্সের কাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। আকাল তখত মন্দির সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এর প্রতিবাদ আসে সারা ভারত থেকে। এমনকি ভারতের বাইরে থেকেও। এর প্রতিশোধের পথ ধরেই ঘটে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ড। তার শিখ প্রহরীর হাতে তিনি পাণ হারান। আর হত্যাকাণ্ডের ফলে চলে শিখবিরোধী রায়ট।
ইন্দিরা গান্ধী নিহত হন ৩১ অক্টোবর। রায়ট শুরু হয় ১ নভেম্বর থেকে। কিছু কিছু এলাকায় তা চলে কয়েক দিন ধরে। রায়টে দিল্লিতে মারা যায় তিন হাজার শিখ, আর সারা দেশের আরো ৪০টি শহরে মারা যায় আরো আট হাজার। সুলতানপুরি, মঙ্গলপুরি, ত্রিলকপুরি ও দিল্লিই ছিল সবচেয়ে বেশি হারে দাঙ্গার শিকার। জনতা রড, ছোরা ও কেরোসিনসহ আরো দাহ্য পদার্থ নিয়ে শিখ অধ্যুষিত এলাকায় হামলা চালায়। তারা যে শিখদেরই সামনে পেয়েছে নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে হত্যা করেছে। শিখদের বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়, আগুন ধরিয়ে দেয়া দেয়। জনতা বাস-ট্রেন থামিয়ে শিখদের টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে হয় কুপিয়ে মেরেছে, নয়তো কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। অনেককে বাড়িঘর থেকে বের করে এনে হত্যা করা হয়েছে। শিখ নারীরাও ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
এ ধরনের দাঙ্গা পুলিশের সহায়তা ছাড়া ঘটতে পারে না। দিল্লি পুলিশের সর্বোচ্চ দায়িত্ব ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে নির্দোষ-নিরপরাধ শিখদের রক্ষা করা। এর বদলে পুলিশ পূর্ণ সহায়তা করেছে দাঙ্গাবাজদের। এসব দাঙ্গাবাজেরা কাজ করছিল নীতিবোধ বিবর্জিত নেতা জগদীশ টিটলার ও এইচ কে এল ভগবতের নেতৃত্বে। এটা সবার জানা, অনেক জেল, সাবজেল ও লকআপ তিন দিন পর্যন্ত খুলে দিয়ে বন্দীদের শিখিয়ে দেয়া হয়েছে ‘টিচ দ্য শিখ অ্যা লেসন’। তবে এটাও বলা ঠিক হবে না, দিল্লি পুলিশ কিছুই করেনি। যেখানে শিখেরা তাদের নিজেদের বাঁচাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, সেখানে পুলিশ শিখদের বিরুদ্ধে কড়া অ্যাকশন নিয়েছিল। যেসব শিখ নিজেদের জানমাল বাঁচাতে গুলি করেছিল, তাদের দাঙ্গার পর বহু দিন কারাগারে কাটানোর ব্যবস্থাটি করে দিয়েছিল দিল্লি পুলিশ।
উগ্র সাম্প্রদায়িক হিন্দুদের হাতে ১৯৮৪ সালে শিখ নিধন বিরোধী দাঙ্গা
২০ হাজার শিখ ধর্মের অনুসারীকে হত্যা ও কয়েক লাখ শিখকে আহত করা হয়।
২৫ হাজারের উপরে শিখদের বাড়ি ঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
পাঞ্জাবে শিখদের পবিত্র তীর্থস্থান অমরিতস্বরে স্বর্ণ মন্দিরে স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলনের সমর্থনকারীদের অপারেশন ব্লু স্টারের মাধ্যমে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়।
জেল, সাবজেল ও লকআপ তিন দিন পর্যন্ত খুলে দিয়ে বন্দীদের শিখিয়ে দেয়া হয়েছে শিখদের হত্যা করার জন্য ‘টিচ দ্য শিখ অ্যা লেসন"।
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন গোয়েন্দা সংস্হা র এর সাবেক অফিসার বি রমনের লেখা বই র এর কাওবয়েজরা।
সূফি বরষণ।।
যুগে যুগে উগ্র সাম্প্রদায়িক হিন্দুদের হাতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয় মুসলিম শিখ খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষ এই হলো মহান ভারতের হিংস্র চরিত্র?? স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলনের সমর্থনকারীদের নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। ভারতে ১৯৮৪ সালের শিখ বিরোধী দাঙ্গা নতুনভাবে তদন্ত করবে বিশেষ তদন্তকারী দল। কেন্দ্র সরকার নিযুক্ত একটি কমিটি দাঙ্গার তদন্তে নতুন করে বিশেষ তদন্ত কমিটি বা ‘সিট’ গঠন করার সুপারিশ করেছে। সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি জেপিমাথুরের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কাছে এসংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছিল। এতে নতুনভাবে বিশেষ তদন্তকারী দল বা এসআইটি গঠন করার সুপারিশ করেছে। এর আগে এসংক্রান্ত মামলার সিবিআই তদন্ত করা হয়।
১৯৮৪ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার নিজের শিখ দেহরক্ষীদের হাতে নিহত হন। এর পরেই শিখ বিরোধী দাঙ্গা শুরু হয় দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে। উগ্র সাম্প্রদায়িক হিন্দুদের হাতে ১৯৮৪ সালে শিখ নিধন বিরোধী দাঙ্গা ২০ হাজার শিখ ধর্মের অনুসারীকে হত্যা ও কয়েক লাখ শিখকে আহত করা হয় এবং ২৫ হাজারের উপরে শিখদের বাড়ি ঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয় উগ্র হিন্দুরা । অন্যরা নিহত হয় উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রসহ বিভিন্ন স্থানে। ১৯৮৪ সালে শিখ বিরোধী দাঙ্গার ৪৯টি মামলা পুনরায় শুরু করবে জানিয়েছে বিশেষ তদন্তকারী দল(SIT)। ২৯ জুলাই ২০১৬ থেকে শিখ বিরোধী ৬৫০ টি মামলার মধ্যে ৪৯ টা মামলা পুনরায় তদন্ত করবে বিশেষ তদন্তকারী দল(SIT)।
বিচারপতি নানাবতি কমিশন পুলিশের বন্ধ করে দেয়া ২৪১ টি মামলার মধ্যে কেবল ৪ টি মামলা চালু করার সুপারিশ করে। কিন্তু বিজেপি অন্য ২৩৭ টি মামলাও চালু করতে চাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার গত ১০ ডিসেম্বর ১৯৮৪তে শিখ বিরোধী দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা করে। কেন্দ্র সরকার ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারপতি জে পি মাথুরের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে। এই কমিটির কাজ ছিল শিখ বিরোধী দাঙ্গার তদন্তে নতুনভাবে 'সিট' গঠনের প্রয়োজনীয়তা খতিয়ে দেখা। কমিটির রিপোর্টে বিশেষ তদন্তকারী দল বা এসআইটি গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে।
১৯৮৪ সালে শিখবিরোধী দাঙ্গা চলায় শিখবিরোধী ভারতীয় জনতা। শিখ ধর্মাবলম্বী দেহরক্ষী ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করার পর এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ দাঙ্গা বাধে। প্রাথমিক হিসেবে এক হিসেবে এ দাঙ্গায় আট হাজারের মতো লোক নিহত হয়। শুধু দিল্লিতেই নিহত হয় তিন হাজার। দাঙ্গা চলে ৩১ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। দফায় দফায় চলে এ দাঙ্গা। ভারতের মূল গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইর অভিমত (সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো) দিল্লি পুলিশের সহায়তায় এই রায়ট চলে। কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু কমকর্তাও এ কাজে সহায়তা জোগায়। মায়ের মৃত্যুর পর রাজিব গান্ধী হন ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই তিনি বলেছিলেন বড় গাছ যখন পড়ে, তখন মাটি কাঁপে।
১৯৭০-এর দশকে ইন্দিরা গান্ধী ভারতে জরুরি অবস্থা জারি করেন। তখন স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত হাজার হাজার শিখকে আটক করে কারাগারে রাখা হয়। তখন স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলনের সমর্থনকারীদের সশস্ত্র শিখেরা মাঝে মধ্যেই সন্ত্রাসী হামলা চালাত। ভারতীয় সরকারের কাছে এরা ছিল সন্ত্রাসী। ১৯৮৪ সালে জুনে ইন্দিরা গান্ধী আদেশ দেন শিখদের স্বর্ণমন্দিরে সামরিক অভিযান চালিয়ে এই মন্দিরকে বিচ্ছিন্নতাবাদীমুক্ত করতে। কারণ বলা হচ্ছিল, এই স্বাধীন খিলিস্তান আন্দোলনের সমর্থনকারী শিখেরা স্বর্ণমন্দিরে অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলছে। এই সামরিক অভিযানের নাম ‘অপারেশন ব্লু স্টার’। পরবর্তী সময়ে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনী নামানো হয় পাঞ্জাবের গ্রামাঞ্চলকে বিচ্ছিন্নতাবাদমুক্ত করতে।
এ দ্বন্দ্বে সরকারি রিপোর্ট মতে, দুই হাজার ৭০০ জন নিহত হয়। রায়টের পর ভারত সরকার বলে এ রায়টে দিল্লি থেকে ২০ হাজার লোক বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। তবে পিপলস ইউনিয়ন ফর লিবারটিজের রিপোর্ট মতে, এ সংখ্যা ‘কমপক্ষে’ এক হাজার জন বাস্ত্চু্যুত হয়। উল্লেখ্য, এই পিপলস ইউনিয়ন একটি মানবাধিকার সংস্থা। এটি সমাজবাদী নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ ১৯৭৬ সালে পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ অ্যান্ড ডেমোক্র্যাটিক রাইটস (পিইউসিএলডিআর) নামে প্রতিষ্ঠা করেন। সে যা-ই হোক এ রায়টের সবচেয়ে বেশি শিকার হয় দিল্লির শিখ অধ্যুষিত এলাকা। সারা ভারতের মানবাধিকার সংস্থাগুলো ও পত্রপত্রিকার বিশ্বাস এই হত্যাযজ্ঞ ছিল সংগঠিত। এই হত্যাযজ্ঞ নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের দ্বান্দ্বিক অবস্থান এবং কিলারের বিচারিক শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে সাধারণ শিখদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়। বেড়ে যায় খালিস্তান আন্দোলনের প্রতি সমর্থন। ‘আকালি তখত’ নামের শিখবাদের ধর্মীয় গভর্নিং বডি এই হত্যাকাণ্ডকে জেনোসাইড বা গণহত্যা বলে মনে করে।
২০১১ সালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ভারত সরকারকে জানায়, এখনো এই ‘মাস কিলিং’-এর বিচার হয়নি। ২০১১ সালে উইকিলিকস ক্যাবল লিকস জানায়, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস পরিচালিত সরকার এই দুষ্কর্মে সহযোগিতা জুগিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ কাজকে অভিহিত করে ভারত সরকারের শিখবিরোধী ‘অপরচুনিজম’ ও ‘হ্যাট্রিড’ নামে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ রায়টকে গণহত্যা বলতে অস্বীকার করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলে এটি ছিল ‘ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন’। এ ছাড়া ২০১১ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রতিবেদনে বলে, ভারতের হরিয়ানায় ব্যাপক শিখবিরোধী হামলার ঘটনা ঘটে বড় ধরনের প্রতিশোধপরায়ণতার অংশ হিসেবে।
১৯৭৩ সালে শিকদের রাজনৈতিক দল ‘শিরোমনি আকালি দল’ ও অন্যান্য শিখ গ্রুপ ঘোষণা করে ‘আনন্দপুর সাহিব রেজুলেশন’ নামের বিবৃতি। এতে অন্যান্য দাবিদাওয়ার মধ্যে পাঞ্জাব ও শিখদের জন্য ‘বিশেষ মর্যাদা’ দাবি করা হয়। ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে পাঞ্জাবের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে রাজ্যপর্যায়ে। এর ফলে রাজ্য সরকারকে বাতিল করা হয়। জার্নাল সিং বিন্দ্রাওয়ালের নেতৃত্বে পাঞ্জাবে বিদ্রোহ সৃষ্টি হয়। কিছু বিদ্রোহী শিখ গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত নেয় সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পাঞ্জাবে খালিস্তান নামে আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। তারা লড়বে ভারত সরকার ও ভরতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। অন্যরা চাইল আনন্দপুর সাহিব রেজুলেশনের ওপর ভিত্তি করে ভারতের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত পাঞ্জাব। বিপুলসংখ্যক শিখ সশস্ত্র আন্দোলনের নিন্দা জানায়।
১৯৮৩ সালে পাঞ্জাবের অবস্থা খুবই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সে বছরের অক্টোবরে কিছু শিখ বিদ্রোহী একটি বাস থামিয়ে বাসের ছয়জন হিন্দু যাত্রীকে হত্যা করে। একই দিনে অন্য একটি চরমপন্থী গোষ্ঠী একটি ট্রেনে দুইজন কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এ প্রেক্ষাপটে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কংগ্রেস সরকার পাঞ্জাবে কংগ্রেসের রাজ্য সরকার বাতিল করে সেখানে প্রেসিডেন্টের শাসন চালু করেন। অপারেশন ব্লু স্টার চলে ১৯৮৪ সালের ৩ জুন থেকে ৮ জুন পর্যন্ত। এর আগের চার মাস সময়ে গোটা পাঞ্জাবে বিভিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনায় ২৯৮ জন লোক নিহত হয়। ব্লু স্টার অপারেশনের পাঁচ দিনে নিহত হয় ৪৮ জন। তখন সশস্ত্র শিখদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য বিভিন্ন মহল থেকে আহ্বান জানানো হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অপারেশন পরিচালনার আদেশ দেন। আর স্বর্ণমন্দির থেকে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সরিয়ে দেয়ার আদেশ দেন জুনের প্রথম দিকে। বিদ্রোহীদের সরিয়ে দিয়ে পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরের হরমন্দির সাহিব কমপ্লেক্সের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ এবং মন্দির কমপ্লেক্স ভবন থেকে জার্নেইল সিং বিন্দ্রাওয়ালে ও তার অনুসারীদের সরিয়ে দেয়ার আদেশও দেয়া হয়। বিন্দ্রাওয়ালে আগেই অবস্থান নিয়েছিলেন হরমন্দির সাহিবে এবং ১৯৮০ সালের এপ্রিল থেকে এটিকে ব্যবহার করে আসছিলেন তার সদর দফতর হিসেবে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি গুরুদুয়ারায় অস্ত্র মজুদ করে আসছিলেন পরবর্তী সময়ে বড় ধরনের সশস্ত্র অভিযান পরিচালনার জন্য।
সেনাবাহিনীর সূত্র মতে, এ অভিযানে বেসামরিক লোক মারা গেছে ৪৯২ জন। আর সামরিক বাহিনীর লোক মারা গেছে ১৩৬ জন, আহত হয়েছেন ২২০ জন। বেসরকারি সূত্র মতে, লোকক্ষয় ঘটেছে আরো অনেক বেশি। কারো কারো মতে, নিহতের সংখ্যা ২০ হাজারের মতো। মার্ক টালি ও সতীশ জ্যাকব উল্লেখ করেছেন, যেসব বেসামরিক শিখ মার্চ করে অমৃতসরের দিকে যাচ্ছিল, তাদের ওপর দিয়ে সুলতানউইন্ড এলাকায় সেনাবাহিনী ট্যাঙ্ক চালিয়ে দিয়েছিল। হত্যার শিকার হয়েছিলেন বিন্দ্রাওয়ালে ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী সাবেক সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল সাবেগ সিং। এই অপারেশন মন্দির কমপ্লেক্সের কাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। আকাল তখত মন্দির সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এর প্রতিবাদ আসে সারা ভারত থেকে। এমনকি ভারতের বাইরে থেকেও। এর প্রতিশোধের পথ ধরেই ঘটে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ড। তার শিখ প্রহরীর হাতে তিনি পাণ হারান। আর হত্যাকাণ্ডের ফলে চলে শিখবিরোধী রায়ট।
ইন্দিরা গান্ধী নিহত হন ৩১ অক্টোবর। রায়ট শুরু হয় ১ নভেম্বর থেকে। কিছু কিছু এলাকায় তা চলে কয়েক দিন ধরে। রায়টে দিল্লিতে মারা যায় তিন হাজার শিখ, আর সারা দেশের আরো ৪০টি শহরে মারা যায় আরো আট হাজার। সুলতানপুরি, মঙ্গলপুরি, ত্রিলকপুরি ও দিল্লিই ছিল সবচেয়ে বেশি হারে দাঙ্গার শিকার। জনতা রড, ছোরা ও কেরোসিনসহ আরো দাহ্য পদার্থ নিয়ে শিখ অধ্যুষিত এলাকায় হামলা চালায়। তারা যে শিখদেরই সামনে পেয়েছে নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে হত্যা করেছে। শিখদের বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়, আগুন ধরিয়ে দেয়া দেয়। জনতা বাস-ট্রেন থামিয়ে শিখদের টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে হয় কুপিয়ে মেরেছে, নয়তো কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। অনেককে বাড়িঘর থেকে বের করে এনে হত্যা করা হয়েছে। শিখ নারীরাও ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
এ ধরনের দাঙ্গা পুলিশের সহায়তা ছাড়া ঘটতে পারে না। দিল্লি পুলিশের সর্বোচ্চ দায়িত্ব ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে নির্দোষ-নিরপরাধ শিখদের রক্ষা করা। এর বদলে পুলিশ পূর্ণ সহায়তা করেছে দাঙ্গাবাজদের। এসব দাঙ্গাবাজেরা কাজ করছিল নীতিবোধ বিবর্জিত নেতা জগদীশ টিটলার ও এইচ কে এল ভগবতের নেতৃত্বে। এটা সবার জানা, অনেক জেল, সাবজেল ও লকআপ তিন দিন পর্যন্ত খুলে দিয়ে বন্দীদের শিখিয়ে দেয়া হয়েছে ‘টিচ দ্য শিখ অ্যা লেসন’। তবে এটাও বলা ঠিক হবে না, দিল্লি পুলিশ কিছুই করেনি। যেখানে শিখেরা তাদের নিজেদের বাঁচাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, সেখানে পুলিশ শিখদের বিরুদ্ধে কড়া অ্যাকশন নিয়েছিল। যেসব শিখ নিজেদের জানমাল বাঁচাতে গুলি করেছিল, তাদের দাঙ্গার পর বহু দিন কারাগারে কাটানোর ব্যবস্থাটি করে দিয়েছিল দিল্লি পুলিশ।